[justify]দক্ষিণের জানালায় দাঁড়ালে হিমেল হাওয়ার ঝাপটা লাগে। শীত এলো বলে। আগে এমন সময় শীত প্রায় চলেই আসতো। দূর্গা পূজার সময় থেকেই হালকা কুয়াশা আর শেষরাতে ঠান্ডা ভাবটা শুরু হতো। রাতে পূজো দেখার কিংবা পাড়া ঘুরার সময় সেটা টের পাওয়া যেতো। এখন আর সেরকম হয় না। মাঘ মাসেই শীত আসে কী আসে না।
“তোমাদের তুমি করেই বলি, নাকি?” করমর্দনের সময় টের পেয়েছি, ভদ্রলোকের কব্জিতে সেরকম জোর, কিন্তু তাঁর কণ্ঠটি বড় মোলায়েম আর সুরেলা। জমিদার বংশের লোক, আলিশান প্রাসাদের মতো বাড়ি হাঁকিয়ে থাকেন এই ধুধু পারাবারের মাঝে, হয়তো অবসরে মুগুর আর তানপুরা দুটোই কষে ভাঁজেন। গদোগদো গলায় প্রায় সায় দিয়ে ফেলছিলাম, কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগী দুলালটা সব সৌজন্যের দফা রফা করে দিয়ে ফোঁস করে উঠে বললো, “ক্যান, তুমি
নতুন বাসা এবং নতুন অতিথি
সকাল আটটা হবে। ফার্মেসির শাটার তুলে দোকানে সবে বসেছে মুনির। গামছাটা দিয়ে স্বযত্নে কাউন্টারের ধুলো মুছছে, এমন সময় রহমান সাহেব এসে হাজির। কাছে থাকেন, রিটায়ার্ড মানুষ। হাতে কাজটাজ তাই নেই তেমন। প্রতিদিন সকালে মর্নিং ওয়াক করে ফিরার পথে এসে মুনিরের সাথে একটু গল্পগুজব করেন। আজও ব্যাতিক্রম হলো না।
"কি মুনির, কেমন আছিস রে?"
"স্যার এই যে আছি আর কি। কি খবর কন।"
আমি একবার বুমেরাং বানিয়েছিলাম।
স্কুলে কী একটা প্রতিযোগিতায় জেতার পর দারুণ একটা বই দিয়েছিলো আমাকে। রাশান বই, সেই বইয়ে নানান রকম জিনিসের গল্প। একটা গল্প ছিলো বুমেরাং নিয়ে। লেখার শেষে ছোট্ট করে বলে দেওয়া কী ভাবে বুমেরাং বানাতে হয়- নিখুঁত বর্ণনা, একেবারে ধাপে ধাপে, মাপে মাপে।
প্রথমে বানালাম কার্ডবোর্ড দিয়ে। এটা মডেল, দেখতে চাই কাজ করে কিনা।
জুলমত আলির মন ভালো নেই। মনের আর কী দোষ! আয়না বানুর পাল্লায় একবার যে পড়েছে তার কি কোন উপায় আছে!
পেয়ারা গাছের শক্তপোক্ত একটি ডালে পা ঝুলিয়ে বসে হাতের দড়িটার দিকে তাকালো জুলমত আলি। কী সুন্দর দেখতে! ভারি নরম, যেন কাঠবিড়ালির ফোলা ফোলা লেজ। চারিদিকে আজকাল নাইলনের ছড়াছড়ি, সে দড়িতে গিঁট দিতে গেলে হয় পিছলে যায়, নয়তো খুলে আসে হালকা টানেই। আর নাইলন জিনিসটা খুব বাড়াবাড়ি রকমের রুক্ষও, টান লাগলে চামড়ায় দাগ রেখে যায়।
একই সমস্যা নারকেলের ছোবড়া দিয়ে বানানো দড়িতে। অনেক খুঁজে পেতে শেষটায় রায়েরবাজারের গুড়পট্টির পেছনে যে ঘুপচি ঘুপচি দোকান গুলো রয়েছে তারই একটা থেকে মেলা টাকা খরচ করে কিনে এনেছে এই দড়িটা। পাটের দড়ি, পনেরো ষোল হাত হলেই চলতো, কিন্তু দোকানদার গোছা থেকে কেটে দিতে রাজি হয়নি। কত কষ্টের টাকা, আহারে!
কখনো তাকে দেখা যায় একটা আবছায়া হয়ে ভেসে বেড়াতে, কখনো ধোঁয়াশা, আবার কখনো কখনো সুস্পষ্ট দেখা যায় নিঝুম বিশাল হলওয়ে ধরে যেন শতাব্দী প্রাচীন গীর্জায় কোনো এক ধর্মসেবী ঈশ্বরের স্তুতি গাইতে গাইতে হাঁটছেন।
তার পদচারণা প্রায়শই ধীর স্থির শান্ত, মাঝে মাঝে মনে হয় একাকী বিষন্ন কেউ চলে যাচ্ছে সামনে দিয়ে।
তার নাম গ্রেস কিপারলী। শতবছর আগেই দেহ ত্যাগ করলেও আজো এমন শত শত মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে যারা বিশ্বাস করে তিনি আছেন। দেখা দেন মাঝে মাঝে। কখনও ছেড়ে যাননি ডিয়ারলেকের পাশে ‘ফেয়ারএকরস’ এ তার বিশাল প্রাসাদ ‘কিপারলী ম্যানসন’, হালের ‘বার্ণাবী আর্ট গ্যালারি’।
এক।।
বিয়ের পর এই প্রথম অরণিদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। গ্রামের নাম কাৎলাসেন। সেখানে থাকেন অরণির বড়মামা, তিনি অকৃতদার। কাৎলাসেন ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে নয় অথচ যাই যাই করেও যাওয়া হয়নি এতদিন। এবারে ঈদ, বড়দিন, আর অনিন্দ্যর স্কুলের ছুটি, সব একসাথে পড়ে যাওয়ায় বেশ লম্বা একটা সময় মিলে গিয়েছে হাতে। বছর জোড়া ট্রাফিকজ্যাম-অফিস-বাজার আর ড্রইংরুমের বৃত্তে আটকে থেকে আমিও হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। অরণির মামার চিঠি পেয়ে ভাবলাম, যাই তিনটা দিন কাটিয়ে আসি।
অনিন্দ্য কখনো গ্রাম দেখেনি। আমি ঢাকায় বড় হওয়া মানুষ, গ্রামের সাথে যেটুকু যোগাযোগ ছিল বাবার মৃত্যুর পরে তার সবটুকুই ঘুচে গিয়েছে। আমার আগ্রহ অনিন্দ্যের চেয়ে কম নয় কোন অংশেই। অরণি অবশ্য চেয়েছিল দেশের বাইরে বেড়াতে যাই, নেপাল, শিলং কিংবা ভুটান।
I see them dancing somewhere in the moonlight
চাঁদের আলোয় ওরা নেচে চলেছে।
ছেলেটা বলছিল, এই দৃশ্যটা ও দেখে ফেলেছিল। ‘আপনিই বলেন, আপনি দৃশ্যটা দেখে ফেলেন
Somewhere in Alaska, somewhere in the sun
I hear them singing a song for all lovers
A song for the two hearts beating only as one
আলাস্কার হিম তুষার শুভ্র প্রান্তর
সতর্কতাঃ গল্পটা ক্লান্তিকর ও দীর্ঘ। লেখকও লিখতে গিয়ে ক্লান্ত। কিন্তু বারেক ভাই এখনো অক্লান্ত বলে লিখে রাখতে হলো সত্য ঘটনাটি।
বারেক ভাইকে আমি আত্মীয়তা সুত্রে ৩২ বছর ধরে চিনি। তখন তিনি বাস ট্রাকের ব্যবসা করতেন। পড়াশোনায় এসএসসি হলেও ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে এমএসসির বাড়া। ব্যবসা শুরুর অল্পদিনের মধ্যে বারো চৌদ্দটা বাস ট্রাক লরির মালিক হয়ে গেলেন। বস্তা বস্তা টাকা ব্যাংকে জমা করেন। বস্তা কথাটা আক্ষরিক অর্থে সত্যি। আমি নিজের চোখে বাজারের থলেভর্তি টাকা নিয়ে ব্যাংকে যেতে দেখেছি। চোর ডাকাত ছিনতাইকারীদের চোখে না পড়ার জন্য এই ব্যবস্থা। তবে তাঁর চলাফেরা জামাকাপড় এতই মলিন থাকে যে তাঁর দিকে তাকালে বাস ট্রাকের হেলপার ছাড়া কিছু মনে হবে না। তাঁর ভাগ্যরাশিতে টাকার এতই ছড়াছড়ি যে তিনি যেখানে হাত দেন তাতে টাকা ফলে।