এক বিষণ্ন বর্ষার সকালে আমরা কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছি বার্মার এক কারাগারের কনডেম সেলের সামনের খোলা জায়গাটায়। উঁচু পাঁচিলের উপর দিয়ে একপাশ থেকে আসছে সূর্যের মলিন হলুদ আলো। সামনের সারিবাঁধা সেলগুলো অনেকটা পশুর খাঁচার মতোই- একটা চৌকিখাট আর পানির পাত্র দিয়েই ভরে গেছে দশ ফুট বাই দশ ফুটের মেঝে। তারই কয়েকটার মধ্যে গায়ে কম্বল পেঁচিয়ে বসে আছে কয়েকজন মানুষ। এরা সবাই ফাঁসির আসামী, আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই ফাঁসি হয়ে যাবে এদের সবার।
লর্ড ক্লাইভকে ঘৃণা করলেও আমার নিজের জীবনের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ না করে পারি না। সে না থাকলে আমার এই পৃথিবী দেখা হতো না।
লর্ড ক্লাইভ যদি পলাশীর প্রান্তরে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে জয়লাভ না করতেন তাহলে ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হতো না। আর ভারতে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ১৯০ বছরের সংগ্রামের প্রয়োজন হতো না।
- তোমার চিঠি আছে।
- আমার চিঠি! কে পাঠালো? কৈ- দাও দেখি।
- এই যে!
- কই?
- এইযে আমার চোখে।
- তোমার চোখে আমার চিঠি!!
- হ্যা চোখ মেলে দেখ, আমার মধ্যেই সে তোমাকে অনেক কথা বলে পাঠিয়েছে।
- কে?
- প্রকৃতি। আমি হলাম তোমার কাছে প্রকৃতির চিঠি। তুমিও তাই। তুমি আমার কাছে প্রকৃতির চিঠি।
নিভে যাওয়া আগুনের শিখার ঘুষঘুষুনি উত্তাপটুকুও থেমে গেছে কখন, শুধু কালো কালো কয়লার মতো স্তূপ হয়ে পড়ে আছে কালকে পর্যন্ত যা ছিল চেয়ার, টেবিল, ঘরের বেড়া, দরজা, চৌকাঠ। এখন আর আলাদা করে চেনা যায় না কিছুই, কেবল আধপোড়া টিনগুলো একটু দূরে নিজেদের ক্ষয়িষ্ণু অস্তিত্ব জানান দিতে লালচে পোড়ামাটির দগদগে রঙ নিয়ে শুয়ে আছে মাটিতে।
গল্প-উপন্যাস এবং সিনেমায় ভুতের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তার অধিকাংশই ভুল। ভুত মানেই কঙ্কাল নয়। শরীরের জায়গায় জায়গায় ছোপ ছোপ রক্ত, আর ছেঁড়া ছেঁড়া পচা গলা মাংস নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ভয়ঙ্কর যে অবয়ব মানুষের সামনে তুলে ধরা হয় তার সর্বৈব মিথ্যে। ভুতেরা খোনা সুরে কথা বলেনা, তাদের চোখ ভাঁটার মতো গনগনে নয়, যখন তখন যে কোন রূপে আবির্ভুত হবার ক্ষমতাও তাদের নেই।
“কামনা হচ্ছে তোমার আত্মার ভেতরের
সেই ক্ষুধার্ত অন্ধ কুকুর
যে জেগে উঠলে তুমি বেহুশ হয়ে যাও।
তখন তুমি মানুষ থাকো না।
মানুষ কাকে বলে?
যার মান আছে আর হুশ আছে।
সেই কুকুরটা জেগে উঠলে
তোমার মান জ্ঞান হারিয়ে যায়।
পাখির মত ফুরুৎ করে উড়ে পালায়।
তুমি যে কী করলে তখন তা তুমি জানতেও পারো না।
...
এরপর কুকুরটা যখন ঘুমিয়ে পড়ে
তোমার হুশ আবার ফিরে আসে
বিবেক জেগে ওঠে
তখন আবার তুমি মানুষ হও
ট্রেনে শেষমেশ ঊঠতে পেরে মতিন মিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কাঁধের দুটো ঝোলা আর হাতে ধরা শাড়ির প্যাকেটটা নিয়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে সে তাল সামালাতে পারছিল না ভীড়ের মধ্যে । ট্রেন যখন চলতে শুরু করল তখন মরিয়া হয়ে সে দরজার হাতল লক্ষ্য করে ঝাঁপ দিল। একমুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল হাত ফসকে সে বুঝি পড়েই যাবে ট্রেনের চাকার নীচে। এমনকি মৃত্যুভয়ে কেঁপেও উঠেছিল সে। ভাগ্য ভাল যে কিছু হয়নি আর ঝোলাও অক্ষত আছে। এগুলো নষ্ট হলে ক
মানুষ সবসময় অবাক করে। যদি মানুষের গল্প পড়া যায়, পৃথিবীটা হয়ে ওঠে শেক্সপিয়রের মঞ্চ। এই মঞ্চটা ছিল থানায়। বিকেলবেলায় সেখানে এক হাসিখুশি চেহারার লোক হাজির হলো।
বললো, সে একটা খুন করবে। এখনও না করা খুনটার জন্য অগ্রীম তাকে গ্রেফতার করা হোক। তাকে যদি গ্রেফতার না করা হয়, তাহলে খুনটা হয়ে যাবে।
এমন কথা কেউ কখনও শোনে নি।
থানার অফিসার বুঝতে পারলেন না তিনি কী করবেন।
এক.
বাসার ঠিক পেছনেই পাইন হিকরির একটা জঙ্গল। যখন বাতাস আসে, যখন হাওয়ার দমকে কেঁপে কেঁপে ওঠে বুড়ো থুড়থুড়ে গাছ গুলোর পাতা, তখন বড় ভয় লাগে, মনে হয় কারা যেন কেঁদে কেঁদে কথা বলছে। বাতাস না থাকলে আবার শুনশান চারিদিক। হঠাৎ হয়তো দুরের কোন গাছের ডালে ডানা মেলে ডেকে ওঠে একটি পাখি, কখনো বা ভয়ার্ত গলায় খ্যা খ্যা করতে করতে বেরিয়ে পড়ে কোন কাঠবিড়ালির ছানা। জংগলটার দিকে চোখ পড়লেই মনে হয় কী যেন একটা গুঁড়ি মেরে বসে রয়েছে গাছগুলোর আড়ালে।
পথে দুজনে দেখা হলো।
যে দিকে দুচোখ যায় চলে যাবে বলে
মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছিল ওরা।
দুজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে
পৃথিবীর দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো,
একটিই পথ। চলে গেছে দূরে।
দিনের আলোর মত ঝকঝকে।
ওরা পাশাপাশি হেঁটে চলে যতক্ষণ না
সন্ধ্যের অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।
রাত নামলো,
ওরা মুখোমুখি বসে
পাশাপাশি বসে
দুজন।
দুজনের চোখের সামনে শুধু দুজনেই।
প্রেমময় অন্ধকার