১
মুনীর হক ভয় টয় একটু কমই পান। রাত বিরেতে একলা চলাফেরার অভ্যাস তাঁর আজকের নয়। ভয় থাকে শুধু ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়ার। ভূত প্রেত কথাগুলো তাঁর কাছে আজগুবি লাগে, হাসিও পায় বেশ। বয়সটা মনে হয় তিনি পেরিয়ে গেছেন অনেক আগেই। এইতো এই বছর পঞ্চান্ন পেরুলেন। তবে ভয় পেতেন একসময়, সেই ছোটবেলায়। শীতকালে গ্রামের বাড়িতে গেলে সব পিচ্চিকাচ্চি তাঁর মা'র কাছে এসে গল্প শুনতে চাইতো। যখন সবাই উঠানে গোল হয়ে খেজুরের রস জ্বাল দিতো, তখন তাঁর মাকে ঘিরে গল্পের বায়না আসতো। মা যখন ভূতের গল্প বলতেন তখন তিনি মায়ের কোলে একদম সেঁটে বসে শুনতেন সব গল্প। মা খুব সুন্দর গল্প বলতে পারতেন।
বাদশা মিয়ার হাঁপানির টান উঠেছে।
নিঃশ্বাস নিতে গেলে জীবন বেরিয়ে যাওয়ার মত কষ্ট হচ্ছে তার। চারিদিকে বাতাসের ছড়াছড়ি, কিন্তু তার মধ্যে একটু বাতাসও বাদশা মিয়ার জন্যে না। বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু দরকার, তার সবটুকুই যুদ্ধ করে আদায় করতে হয়। নিঃশ্বাস নেওয়ার লড়াই করে বাদশা মিয়ার সেটা বুঝে নিতে হচ্ছে। সে প্রানপণে শ্বাস টানে। তার বুক হাপরের মত ওঠা নামা করে। তাতে তেমন কোন লাভ হয় না। বায়ু শূন্য বুকে বাদশা মিয়া কিছুক্ষণের জন্য হাল ছেড়ে দেয়; পরক্ষণে আবার যুদ্ধ শুরু করে।
“...কেউ বলছে কিছু বলছে কেউ বলব বলব করছে
কেউ বলতে না পারা যন্ত্রনা নিয়ে গুমড়ে গুমড়ে মরছে...।“
ডেস্কটপের স্ক্রিনে নানান রঙের ঢেউ ভেসে বেড়াতে থাকে মিডিয়া প্লেয়ারের জানালায়, আর শ্রীকান্ত গাইতেই থাকেন, অবিরাম। কী-বোর্ডে হাত দিয়ে বসে থাকি কেবল- লেখার খোলা পাতা সাদাই থাকে, মাঝে মাঝে একটা দুটো শব্দ উঁকি দেয় আবার কিসের পিছুটানে ফিরে যায়, হয়ত সঙ্গী শব্দদের খুঁজে আনবে বলে।
মাসখানিক আগে ছোটভাইয়ের কল্যানে একটা কিন্ডল হাতে আসায় পড়ার নেশাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিন ধরে তাই অবসর সময়ে নিউক্লিয়ার অস্ত্র দিয়ে শহরজনপদ ধ্বংস করার আর ওয়াশিংটন ডিসিতে বায়োলজিকাল হামলার কাজ মুলতবি রেখে শুধুই পড়ছি। সিরিয়াস কিছু না, কমফোর্ট রিডিং যাকে বলে। পুরোনো সব সাইন্স ফিকশান আর ভূতের গপ্পো। তো এই গল্পটা পড়তে পড়তে মনে হলো এইটাকে কনটেমপরারি সময়ে ঢাকার পটভূমিতে এনে ফেলতে পারলে
(উৎসর্গ: জয়শ্রী সেন জয়া, আমার বৌদি।)
পথের দু’ধার ঘেষে শিমুল গাছের সারি। হালকা বাতাসে শিমুল তুলো উড়ে বেড়াচ্ছে এপাশ থেকে ওপাশ। যেন দোল খাচ্ছে। মেঠোপথে পড়ে থাকা তুলোগুলো পায়ের স্পর্শে সরে যাচ্ছে এধার ওধার। যেন পথ করে দিচ্ছে। পায়ে চলার পথ। শিমুল গাছের ছায়ায় অযত্নে বেড়ে ওঠা রক্ত জবার গাছগুলোতে প্রজাপতির মেলা। মনটা কেমন যেন হালকা হয়ে যায় অলোকের।
#
ভারী পা জোড়া বয়ে নিয়ে থেমে দাঁড়াই তিনতলা বাড়িটির সামনে। রাত জানান দিচ্ছে তার উপস্থিতি নির্জনতা নিয়ে। শহুরে ভবঘুরে কুকুরটি প্রতিদিনের মতো শুয়ে আছে গেট আগলে রেখে। একঘেয়ে চাকরি, একঘেয়ে দিনশেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবি আজ হয়ত ব্যতিক্রম কিছু দেখব। হয়ত কুকুরটা থাকবে না, হয়ত ফাঁকা রাস্তা পেয়ে সাঁই করে চলে আসব নিমিষে, হয়ত শৈশবের গৃহত্যাগী জোছনায় ছাদে বসে আয়েশ করে সিগারেট খাব, কেউ চা বানিয়ে এনে দিবে। ঘামে সিক্ত হয়ে সিটি বাসের ভিড়ে চিড়ে চ্যাপ্টা হতে হতে একবার ভ্রম ভাঙ্গে, কুকুরটিকে দেখে দ্বিতীয়বার আর শরীরটা যখন বিছানায় ছেড়ে দেয় তখন ব্যতিক্রম কিছু ঘটার সম্ভাবনা ঘুমের ভেতরে চুপচাপ মরে যায়। আজ কুকুরটিকে এক-ই ভাবে শুয়ে থাকতে দেখে কিছুটা ক্ষোভের উদগীরণ হলেও পাশ কাটিয়ে ঢুকে যাই ভেতরে। ক্ষোভ কখনো আমাকে কাবু করতে পারে না বরং আমি চিরকাল ক্ষোভের শিকার হই, অব্যর্থ শিকার; এফোঁড়-ওফোঁড় করে যায়, রক্ত বের হয় না।
শেষ পর্যন্ত এই মেয়েটাই ঝুলে গেলো আমার গলায়। আর প্রথমদিন থেকে বয়ে চলছে আমার শবদেহ...
আমি তোমার কে হই।
- জানিনা।
- কেন জানলেনা।
- আমার লজ্জা করে...
আজকের আকাশটাও সেদিনের মতোনই। সেই সকাল থেকেই রং বদলাচ্ছে আজো। সেদিন যেমন ঠিক সক্কাল বেলাটায় রোদ্দুর খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছিলো! ক্লান্ত দুপুর শেষে ধীরে ধীরে ধূসর মেঘরঙে ছেয়ে গিয়েছিলো প্রিয় আকাশটা। আর সন্ধ্যা না নামতেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি।
সেলিমকে ঐতিহাসিকতা দিতে হলে ইতিহাস তো দূরে থাক ঐতিহাসিকতার সংজ্ঞাকে যতদূর বদলাতে হবে তারচেয়ে একটা অনৈতিহাসিক গল্প ফেঁদে বসা সহজ। কিন্তু দাবি করি, এই গল্প ইতিহাসভিত্তিক। কারণ, ক. এই গল্প বহু বছর আগের; খ. এই গল্পে কতিপয় ঐতিহাসিক চরিত্রের আনাগোনা দেখা যায়।
বহুকাল আগের কথা।
রাত্রি বোধ হয় শেষ হবার পথে। ঠিক কটা বাজে তা বোঝা না গেলেও টিনের চালের ফাঁক দিয়ে পৌষের হিমেল হাওয়া সাংঘাতিক ভাবে ঢুকছিল। দু দিন ধরেই ঘুম নাই অসিতের। নিজের ঘর থেকে এত দূরের এই চিলেকোঠায় গত দশ বছরের সবচেয়ে অস্থির রাত্রি আজ। কারণ বলতে দুইটা আছে, এক পায়ের ঘা’টাতে প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। আর দ্বিতীয়র প্রচণ্ড মানসিক দোটানায় আছে সে। দুদিন আগের সেই ঘটনা তার সমাজ দেখার ভূগোল পাল্টে দিয়েছে। সে ভাবে রঙ নিয়ে। কোন