আজকের দিনটা অনেক বড়, শেষ হচ্ছে না। সন্ধ্যার পর কোথাও দাওয়াত থাকলে ওর দিনটাকে আরও বড় মনে হয়। আজ ওর সবচেয়ে প্রিয় কলিগ লোরা আপুর মেয়ের জন্মদিন। না এসেও উপায় ছিল না। ঘরভর্তি মানুষ, সবাই কথা বলছে কেউ কারোটা শুনছে বলে মনে হচ্ছে না। ভিড়, হইচই ওর কোনকালেই পছন্দ না, ইদানীং তো একেবারেই সহ্য করতে পারে না। কথা যা বলে মনে মনে, নিজের সাথে।
আমাদের মফস্বলে ওই একটিই বাঁধাই ঘর ছিল।
বাঁধাইকর ছিল কালো একটা লোক। শুকনো, অথচ কেমন খানিকটা তেলতেলে লোকটা মোটা ফ্রেমের চশমা পরে সারাদিন মুখ গুঁজে বই সেলাই করে চলত! লোকটার সরু লম্বা আঙুল দেখে সেগুলোকে মায়াবী ভাবার কিছু ছিলনা! কিন্তু কীরকম মায়া করে লোকটা বইয়ের পুরনো মড়মড়ে পাতাও নরম মাংসের মতো সেলাই করে ফেলত! বই যেন না, পুরনো কাপড়! বইগুলোও যেন গলে পড়ে যেত লোকটার হাতে! সুলতা বৌদি আমার চুলে আঙুল দিয়ে বিলি কাটলে যেমন আমার অদ্ভুত আদর লাগত, সেরকম। অথবা সেইবার যখন আমি আর তনি ওদের পোড়ো ভিটের শুকনো ডোবায় পালিয়েছিলাম! তনি কেবল আমার হাত জাপটে ধরে আমার গায়ে হেলান দিয়ে পড়ে ছিল! আর আমি ওকে যতই ধাক্কাই উঠতে চাচ্ছিলোনা, সেরকম!
[justify]দিপু চুপচাপ ডক্টরস রুমে বসে আছে। রাত একটা বাজে। একটু আগে এক রোগী মারা গিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার রোগী। বয়স্ক পুরুষ, পঞ্চাশ থেকে ষাটের মধ্যে বয়স হবে। পরনে খাকি রঙের লুঙ্গি, সাদা পাঞ্জাবী। দিপু পরীক্ষা করার সময় খেয়াল করেছে ডান হাতার বগলের দিকে একটা ছোট ছিদ্র আছে। সাদা পাঞ্জাবীর জায়গায় জায়গায় ছোপ ছোপ রক্ত। মাথার দিকে একটা অংশ দেবে গেছে। কপালের অনেকটা জায়গা খুবলে গেছে।
- এটা কী হল ভাইয়া??
- কী হল?
- সব তো বলে দিলেন।
- বলে দিলাম মানে?
- আপনার 'গল্প' পড়লাম। সব বলে দিলেন?
- আরে ওটাতো একটা গল্পই শুধু, বলে দেয়ার কী আছে?
জিউস আমেরিকান ঈগল আলখেল্লাটাতে আরমানি পারফিউমে লাগাইতে লাগাইতে বাফেলো সোলজার গানটির সুর ভাজছিলেন।
হেরা মাছের সস্প্যান উল্টাইতে উল্টাইতে কিচেন থেকে গলা উচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এই ভরদুপুরে যাও কই তুমি? দুপুরে একটু ওপেন্টি বাইস্কোপ খেলমু ভাবছিলাম।
জিউস বগলদেশে স্প্রে করতে করতে বললেন, জব ইজ জব ইউ নো বেবি। দরবারে যাইতে হইব একটু; মক্কেল আইছে, যাইতাছি বাট সন্ধ্যার আগেই আয়া পড়ুম, প্রমিজ। বাই হানি।
১.
ক্রমে চারিদিকে রাষ্ট্র হইয়া গেল Bridgeমোহন অবশেষে গ্রামে আসিতেছেন।
তন্বী চা বানাবে আর জাহিদ ওর পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলবে।তন্বী তাকে সরতে বললেও সে ওখান থেকে একচুলও সরবে না।এটা ওদের নৈমিত্তিক রুটিন। শুধু দুজনের জায়গাটার পরিবর্তন হয়েছে।প্রথম দিকে জাহিদ চুলার পাশে থাকত আর তন্বী একটু দূরে দাঁড়িয়ে তার রন্ধন শৈলী দেখত। আর এখন তার উল্টো ।
তন্বী আবার বলল,কিভাবে ?
হ্যালো, সুমন কি করছিস?
- এইতো আছি একরকম। তোর কি খবর?
- ভালো। পরশুতো ঈদ। আমি বাসায় ফিরছি। খুব আড্ডা হবে।
- হা হা হা। ওকে, বস। তাহলে পরশু দেখা হচ্ছে।
- তোকে আবার দাওয়াত দিতে হবে নাকি।
- না না। কি যে বলিস। ওকে ব্রাদার মঙ্গলবার কনফার্ম।
- পাক্কা। ভাবিকে নিয়ে আসবি কিন্তু।
- শিওর।
১.
ভকভক করে বেরুনো কালো ধোঁয়ার পাহাড় সামনে থাকা হলুদ বাসটিকে প্রায় আড়াল করে দিল। ধোঁয়া বেরুচ্ছে ওই নচ্ছার হলুদ ময়লা বাসটা থেকেই। ভাগ্যিস জানালাগুলো বন্ধ ছিল, নইলে এই বিশ্রী ভারী ধোঁয়ার কবলে পড়ে ধোপদুরস্ত সাদা শার্টের তেরোটা বাজতো। তবে নতুন কেনা নিশান ব্লু বার্ডের সাদা শরীরের পালিশের বারোটা বেজে গেছে নিশ্চয়ই। এই গাড়িটা নিয়ে অতিরিক্ত আহলাদ আছে নকীবের। সিঙ্গাপুর থেকে আসা পালিশ দিয়ে প্রতিদিন মেকাপ করায় গাড়িকে।