দাঁড়িয়ে আছি একটা মস্ত ঘরের মধ্যে, হা হা করছে ফাঁকা ঘর, কোনো জানালা নেই, শুধু অদ্ভুত সবুজ রঙের দেওয়াল ঘরের চারিদিকে। ছাদ অনেক উঁচুতে। ছাদ থেকে ঝুলছে একটা সোনালি শিকলি, তার ডগায় একটা অদ্ভুত আকৃতির পলকাটা ঝাড়বাতির মতন জিনিস, কিন্তু আলো জ্বলছে না সেখানে। শুধু কোথা থেকে লুকানো আলো এসে ওটার উপরে পড়ে চিকমিক করছে।
১।
সমুদ্রের তীর ধরে হেঁটে যাই, গভীর নীল ঢেউয়ে জ্বলজ্বল করে কীসের যেন দীপ্তি। আর, আবহসঙ্গীতের মতন অবিরল ঢেউপতনের শব্দ। আসে আর যায়, ওঠে আর পড়ে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মতন, বিরতি নেই, ক্লান্তি নেই, অনন্ত কাল উঠছে আর পড়ছে।
এরপর তৃতীয়দিন। সকালবেলা ভেনাস এসে সাইকির হাত ধরে টেনে নিয়ে যান প্রাসাদের সামনে। প্রাসাদের সম্মুখ দিয়ে পথ চলে গেছে পাহাড়ের দিকে। দূরে পাহাড়ের নীল চূড়া।
সাইকির হাতে একটা শূন্য ঘট ধরিয়ে দিয়ে দেবী বলেন, "ঐ যে পাহাড়চূড়া, ঐখানে স্টিক্স নদীর উৎস। ঐ উৎসের কাছ থেকে জল ভরে আনবি এই ঘটে। যা, রওনা হ। ফিরতে হবে সন্ধ্যার আগেই, মনে রাখিস।"
[justify]
[যাঁরা অকবিতার প্রশ্রয় দেন তাঁদের জন্য।]
…
ঋক ছিল একটা আধা আচ্ছন্নতার ভিতরে। কড়া সিডেটিভ দেওয়া হয়েছিল ওকে। তাই এখনও চোখ মেললে চারিদিক কুয়াশাকুয়াশা। একবার মাত্র চোখ মেলে আবার বুজে ফেলেছিল ঋক। এলিয়ে পড়ে থাকতেই ভালো লাগছে ওর।
শূন্য প্রাসাদে সাইকি এদিকে চায় ওদিকে চায়, যতদূর চোখ যায় চেয়ে চেয়ে দ্যাখে। না, নেই নেই কিউপিড নেই কোনোখানে। সে আসবে না। মনকে শক্ত করে সাইকিও বেরিয়ে পড়ে প্রাসাদ ছেড়ে। বাকী জীবনটা সে হারানো স্বামীকেই খুঁজবে। তাছাড়া তার জীবনের আর প্রয়োজন কী?
এরপরে সাইকির দিন কাটে ঐ আলিশন প্রাসাদে আর বাগানে ঘুরে ঘুরে, তার যখন যা দরকার হয় সবই সে পেয়ে যায়, শুধু কোনো মানুষের দেখা পায় না।
রাত্রে নৈশাহার সেরে শয্যাগৃহে গিয়ে দুরুদুরু অপেক্ষা শুরু হয়, একসময় আসে তার আঁধার রাতের রাজা। ওর মুখ দেখা যায় না, অন্ধকারে ঢাকা। সাইকি ভাবে, এ কি সত্যিই মহানাগ নাকি মানুষ? এত ভালো, এত বন্ধুত্বপূর্ণ এঁর ব্যবহার, অথচ কেন ওঁকে দেখতে দেয় না?
এক রাজার ঘরে ছিল তিনটি সুন্দরী কন্যা। তাদের মধ্যে বড়টি মেজোটি সুন্দরী আর গুণশীলা বটে কিন্তু ছোটোটি রূপেগুণে একেবারে অতুলনীয়া। সেই ছোটো রাজকন্যার নাম ছিল সাইকি।
কারা যেন কানের কাছে ফিসফিস করে ওঠে, শুনতে পাই অনেক গলার স্বর-- কোনোটা হাল্কা কচি স্বর, কোনোটা গম্ভীর জোরালো, কোনোটা মেয়েলী কোমল স্বর-প্রায় গানের মতন সুরেলা, কোনোটা দানা-দানা পুরুষালী স্বর, কোনোটা তীক্ষ্ণ চড়া স্বর, কোনোটা তরুপত্রে বাতাসের মর্মরের মতন নরম স্বর। ওরা বলে, "বলবে না আমাদের কথা?"