[justify]রিকশাওয়ালা বলল, ‘ভাই এসে গেছি।’
রিকশাওয়ালার কথায় সহবত ফিরে পেলাম। মাথার মধ্যে চিন্তা এত বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে যে অন্য কোন কিছুই মাথায় ঢুকছে না। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কত?’
‘বিশ টাকা দ্যান।’
মানিব্যাগ থেকে দশ টাকার দুটো নোট ধরিয়ে দিলাম। অন্য সময় হলে পনের টাকার ভাড়া বিশ টাকা কেন এই নিয়ে তর্ক জুড়ে দিতাম। কিন্তু আজকে ব্যাপারটা অন্যরকম।
বিরাট এক স্পন্দনশীল অন্ধকার আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে ধরেছে, চারিদিকে কালো জল ছলছল করছে। ওর মধ্য দিয়ে সাঁতার কাটতে কাটতে বেরিয়ে আসতে চাইছি আলোয়। তখনও কালো বা আলোর কথা ঠিক বুঝতে পারি না, কিন্তু একটা অদ্ভুত তাড়না আমায় ঠেলা মারে, আমার সদ্য তৈরী হওয়া মগজে কোটি কোটি বছর আগের যে স্মৃতি খোদাই হয়ে আছে, সেই স্মৃতিই আমার পূর্বসংস্কার, সেই আমাকে জানায় আলো আর কালোর গল্প।
লামেহা অব্যয়বোঝাই ঝোলাটা কাঁধে তুলে নিয়ে রওনা দেয় সবুজ-জমি বালি-জমি পাথর-জমি পার হয়ে নীল পর্বতের দিকে। সে চলে, চলে আর চলে। ভোরবেলার কোমল টুকটুকে সূর্য ঝকঝকে রাগী হয়ে আকাশের কত উপরে উঠে গেছে, লামেহার চলা থামে না তখনো। অব্যয়গুলো তার ঝোলায় কোলাহল করে। আঁ আঁ আহ আহ ঈশ কিংবা সুতরাং এবং ইত্যাদিরা নানারকম সুরে গান ও কথা চালাতে থাকে। ঠিক দুপুরবেলায় ক্লান্ত লামেহা ঝোলা নামিয়ে শুয়ে পড়ে পান্থপাদপের ছায়ায়।
আলো আর ছায়ার খেলা অদ্ভুত একটা নকশা তৈরী করছে, সারাদিনের কাজের শেষের ক্লান্তি নিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছি সেই খেলা। কেন যেন মনে হয় আলোছায়ার ঐ অদ্ভুত রহস্যময় নকশা আমাকে কিছু বলতে চায়। কী বলতে চায়?
নিঃশব্দ নীল স্বপ্নের ভিতরে ঝরছিল কান্না, মোহনা-নিকটের নদীর মতন শান্ত। সন্ধ্যাবেলার তারা ফুটতে থাকা আকাশের মতন নীরব, গহীন রহস্যময়। সন্ধ্যাতারার ছায়া যখন নদীর শান্ত ঘুমেলা স্রোতের ভিতর কাঁপে, সেইরকম। সেই নীলস্বপ্নের মধ্যে ঘাই দিয়ে উঠলো একটা মাছ, একটা অদ্ভুত দ্রুতগতির মাছ, রুপোলী রঙ ঝলকাচ্ছে তার গায়ে। সে সাঁতরে চলেছে পাশে পাশে তার চঞ্চল ছায়াটিকে নিয়ে।
গ্রীক পুরাণ পড়তে গিয়ে একটা ব্যাপারে শান্তি পেয়েছি এই জেনে যে, শুধু আমরা বাংলাদেশীরাই ইতিহাসের ব্যাপারে গিট্টু লাগাতে ওস্তাদ নই। এই ব্যাপারে আরো বহু ওস্তাদ আছেন। সেই গ্রীক আমলেরই এমন এক ওস্তাদোকা ওস্তাদ হলেন ওভিড। ওভিড গ্রীক পুরাণ রচয়িতাদের মধ্যে সেরাদের কাতারেই পরেন কিন্তু তার কিছু কাহিনী অন্যদের কাহিনীর বিপরীত দাবী জানায়। এই ওভিড একাই মজার এক কাহিনী বর্ণনা করলেন যেখানে পার্সিয়াস সেরিফাসে ফেরার পথ
সন্ধ্যা আসে আশ্চর্য লাল আর কমলা মেঘের ডানা মেলে, কিন্তু সে রঙ থাকে না, সব রঙ হারিয়ে ধূসর হয়ে যায় মেঘডানা। কী যেন একটা কথা আমার শোনার ছিল কার কাছে? কিছুতেই মনে পড়ে না তার মুখ, তার চোখ, তার নাম। সেই বা কেন বলে নি সেই কথাটা? এমনই এক সন্ধ্যেবেলা ছিল কি সেটা? বলি-বলি করেও যখন সে না বলে চলে গেল?
কখন জানি জানালার পাশে বসে
কবিতার বই হাতে বিকেলের গন্ধমাতাল।
বুক ভরে বেখেয়ালি বাতাসের ঝড়,
আর চিবুকে তোমার কিছু এলোমেলো চুলের আলপনা।
বাহিরে বৃষ্টি, ভেজা পাতায় ভেজা পাখির ঘর;
উষ্ণ নিঃশ্বাসে ঝাপসা জানালার কাঁচ, অথবা ঝাপসা চোখ
অস্পষ্ট ধোঁয়াটে আকাশের টুকরো,
ঘরের বাহিরে আর এক ঘর। আর এদিকে-
আমরা, যুবক ও যুবতী, ছুয়ে দেবার সংকোচে বিলীন।
অনন্তকালের মুঠোয় কয়েকটি ভেজা মুহূর্ত!
আগের পর্বঃ গ্রীক পুরাণের মহানায়কেরা - পর্ব ০১
এরপর...
তুমি দারাও এসে জানালার পাশে, সার্শীতে
তোমার গরম নিঃশ্বাসের ছাপ
আমার কবিতা লিখবার খাতা- গভীর রাত্রিতে
তারা জেগে উঠবে, বাড়বে নিলয়-অলিন্দের উত্তাপ।
কুয়াশা ফেরত শিশির কণায় লিখছে চোখের ভাষা-
ওভিদের প্রাচীন গ্রীক মনের বিশ্বাস,
আমার চিন্তায় ঘোর ট্র্যাজিক পরিণতি, আর সর্বনাশা
তোমার চোখে অগণিত কবির সর্বনাশ।
যে লিখছে সে তুমি, আমি নই, আমি নই এই পৃথিবীর,
আমি শুধুই রাতের অন্ধকার-