শীতের দুপুরজাগা কমলা রঙের রোদ্দুরের মধ্যে মিশে থাকা প্রিয় শব্দমালা, "হরেএএএক মাল পাঁচসিকা"র ফেরিওয়ালা, শিল-খোটাও ওয়ালা, টিন আর লোহা ওয়ালা। আরও ছিলো কাগজকুড়ানি মেয়ে, নিঃশব্দ, ছেঁড়াখোঁড়া রঙ জ্বলে যাওয়া ফ্রক পরা, রুখু চুল লালচেবাদামী হয়ে গেছে রোদে রোদে। কোথায় তারা আজকে?
মার্চের ২৫। মধ্যরাত।
শেষরাত্রির কুয়াশার জালে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে নিশিজাগরণক্লান্ত সাদাটে চাঁদ, দিঘির আয়নাজলে তার ছবি কেঁপে উঠলো ঘুমভাঙা মাছের আঁকাবাঁকা জলকেলিতে। অক্ষয়বটের ছায়া ঘন হয়ে ছড়িয়ে আছে ঘাটে। সেখানে চুপ করে বসে আছে শ্রমণা, সে আজ জাগনরাত কাটিয়েছে ওখানেই, কেজানে কী ব্রত ছিলো!
স্বপ্নচিঠি ভর্তি করি মেঘের খামে
মুখ এঁটে দিই শক্ত করে ঠোঁটের ঘামে,
পাঠিয়ে দিয়ে মাঝআকাশে
চুপকথাদের দিঘির পাশে
: তুমি সীমানা লঙ্ঘন করছো। Simply।
: ভালবাসার কোন সীমানা থাকে না Mayabee।
: ভুল চিন্তা। Totally একটা wrong conception।
: বল তুমি আমাকে ভালবাসো না। আসলে আমি যে একা এটা বুঝে গেছি।
: তুমি বাসো?
: হ্যা বাসি।
: আবার মিথ্যে কথা।
: বাসি।
: কেন বারবার মিথ্যে কথা বলছো?
: মিথ্যে - বলছো কেন?
: ভালবাসলে এই ভাষায় কথা বলতে না।
: আমি কোন ভাষায় কথা বললাম?
: যে ভালবাসে সে কখনও নিজেকে ফাঁকি দেয় না।
Mayabee!!! তুমি!! এটা করতে পারলে?
: আমার ইচ্ছে ।
: মানলাম - এটা তোমার Liberty। স্বাধীনতা। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের কাছে জানতে তো চাইতে পারি - WHY? ? তুমি এটা করলে - কেন?
: না পারো না।
:তুমি এটাও বলতে পারো. কোন অসুবিধাে নই `I will not talk anymore with you.’ বলো। সমস্যা নেই। আমি শূধূ একটা কথাই বলবো -WHY?
ভোর হয়ে আসে পুবের দিগন্তে। একটা অতি হাল্কা সাদা আলোর চাদর এসে পড়ে মাটিতে, সেই ক্ষীণ নীহারশুভ্র আলোয় ঢেকে যায় নক্ষত্রমালা, হারিয়ে যায় সেই টলটলে নিবিড় রাত্রিনীল যার মধ্যে মণিকণার মতন টলমল দুলছিলো নক্ষত্রেরা, নীহারিকাসমূহ ছড়িয়ে ছিলো শুভ্র উর্ণাতন্তুর মতন!
: ...তারপরে?
: ঐ বৃদ্ধলোকটা জীবনের শেষ সায়াহ্নে এসে বলে ওঠে, নারে- কিছু একটা করতে হবে।
: তখন কি আর সময় আছে।
: সময়! কখনই ফুরোয় না সে।
: তা ফুরোয় না।
: কিন্তু সে যে বুঝতে পারলো না রসের কাছে জীবনের তাড়া মূল্যহীন। কেউ যখন কোন কিছুতে মজেছে - তখন কি আর সময়ের জ্ঞান আছে! না মজলে তো সময়ই ভার মনে হয়।
: তুমি কি সে মজলে?
: দেখা। দেখা জিনিষ দেখা।
: কি রকম বুঝলে?
: সে যে কি এক কেলেঙ্কারী।
নীলাভ সাদা রহস্যের ঠান্ডা আলো পার হয়ে সবুজ মেরুজ্যোতিতে মিলিয়ে যায় ভবিষ্যযান, যাত্রীরা স্মৃতি হয়ে যায়, রয়ে যায় শুধু আমাদের নিওলিথিক স্বপ্নে। বহু লক্ষ বছর পরে কখনো জেগে উঠবে বলে। লোনা হাওয়া ছুটে আসে সমুদ্র থেকে, পরাক্রান্ত সেই হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যায় আনাচে কানাচের জমা হওয়া ধূলিবসন।
আমার একটা পৃথিবী আছে। কিছু মানুষ, কিছু অতীত, কিছু ভবিষ্যতের সাথে আমার একটা যোগ আছে। এই যোগগুলো নিয়েই আমার এই পৃথিবী আমি কোথায় আছি- সেই মানুষ , স্মৃতি, ভবিষ্যত থেকে কত দূরে কিংবা কত দিনের ব্যবধান - এই যোগসূত্রে এটা কোন প্রভাব ফেলে না। দেনা পাওনার হিসেবের বাইরের এই যোগসূত্রগুলোর অস্তিত্ব আমাকে আমার পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিতে সাহায্য করে।
আর সবকিছুর সাথে - তুমিও আমাকে বাঁচিয়ে রাখো।