বেহালার ছড়ের টানে সন্ধ্যার রঙগুলো গড়িয়ে পড়তে থাকে পুরো আকাশজুড়ে।
জন্মনীড় ছেড়ে, চেনা মাঠ বন নদী পাহাড় ঝর্ণা সব কিছু ছেড়ে উড়াল দিয়েছিলাম, অচিন দেশের দিকে, জ্যোৎস্নাপালকের পাখিরা সেদিকে থাকে। জন্মজলের বিন্দুগুলো ঝরে পড়ে যাচ্ছিলো ডানা থেকে।
ক্যারিয়ার! আসলে ব্যাপারটা খুব গোলমেলে লাগে আমার কাছে। ক্যারিয়ার শুনলেই ক্যারিয়ারশূন্য মেয়েটার কথা মনে পড়ে। বিলবোর্ডে উঠতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল বেচারী। আমার এক বন্ধু ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
‘বড় হলে আমি এই নিষ্ঠুর শহরটা থেকে ঠিক পালিয়ে যাবো। তুমি কিন্তু কিচ্ছু বলতে পারবে না, মা।’
মাকে বলি আমি। মা হাসে। তারার আলো হয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
আর শহরটা স্টিল ক্যামেরায় তোলা একটা ছবি হয়ে চোখের উপর লেপ্টে থাকে।
আমার মনে হয়, আমরা প্রত্যেকেই এমন একজনকে ভালবাসি - যে কি না, আসলে এই পৃথিবীতেই থাকে না। আমাদের মনের মধ্যে ওরা কোথাও থাকে। বাইরের পৃথিবীতে ওদের ছায়া পড়ে। সেই ছায়ার আদল কারো মুখে খেলে গেলে আমরা তাদের প্রেমে পড়ি।
কোথাও কোন সাড়া নেই। নিরুদ্বেগ, নিঃসঙ্গতাপূর্ণ রহস্যময় এক শূন্যতা একটা মেঘের মত চারদিক ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোন আলোড়ন নেই। শান বাঁধানো উঠোনের মত শান্ত সবকিছু।
বড় হয়ে যাওয়া মানেই কি চলে যাওয়া?
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে জানা অজানা দেখা অদেখা সহস্র সীমানা পেরিয়ে অন্য সীমানায় পাড়ি জমানো...
কতভাবেইতো মানুষ চলে যাচ্ছে, সবসময়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। এক মন থেকে আরেক মনে। এক সত্য থেকে অন্য সত্যে।
বিনুদির কথা মনে পড়ে।
বাবা অসম্ভব মজা করে কথা বলে। যে শুনে সেই হাসে। হাসতে হাসতে পেট ফুলে যায়। আমাদের বাড়িতে যেই আসে সেই বলে, বাবার মতো মজার মানুষ কোনদিন সে দেখেনি। বাবা এতো চমৎকার সব কৌতুক জানে, মুখ এমন ভেংচি কাটতে পারে, না দেখলে না শুনলে কেউ সেটা বিশ্বাস করবে না কিংবা বুঝতে পারবে না।
যে শিউলিফুলগুলোকে হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না, তাদের স্মৃতির মাঠ থেকে খুঁজে খুঁজে শিশিরে ধুয়ে সাজিয়ে রাখি। আকাশে বাতাসে শরতের ছোঁয়া, রোদ্দুরে যাদু, এর ভিতরে কান পাতি, অনেক দূরের আমার শৈশবের প্রান্ত থেকে ভেসে আসে ঢাকের শব্দ, ডিং ডিডিং ডিডিং ডং। ঢাকীরা নানা রঙের পালক আর শুভ্র কাশফুল দিয়ে সাজ পরাতো ঢাকের। এখনও হয়তো পরায়।
: পৃথিবীর সাথে আমার সম্পর্কটা অভিমানের।
: তোমার নিজের কথা বলছো?
: হ্যা। আমারই।
: আগে অন্য কারো মুখে একথা শুনেছি বোধহয়।
: শুনতে পারো। আমার অনেক কথাই আমি অন্যের কাছে প্রথম শুনেছি।
বাজার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু এ বাজারে সওদা করার কিস্যু নেই...