১
প্রায়ান্ধকার ঘরে চুপ করে বসে আছি সেই দুপুরের পর থেকে। একদম চুপ। দূরের টেবিলের উপরে হালকা ডোমপরানো লাল আলোটা জ্বলছে, থ্রী-ডি মুভি ক্যামেরা যুক্ত আলট্রা-মাইক্রোস্কোপ সিস্টেমও সেই একইরকম সেট করা আছে। মাইক্রোস্কোপ-স্টেজের উপরে সেই স্লাইড, তাতেই সেই ভয়ানক স্যাম্পেল। সবচেয়ে আধুনিক অ্যানালাইজার যুক্ত আছে সিস্টেমে, স্ক্রীণে ত্রিমাত্রিক প্রোজেকশন করে করে সংখ্যাতালিকা দিয়ে দি...
তাঁর অনন্ত যাত্রা আছে। শুরুও নেই--শেষও নেই এই নিঃসঙ্গ যাত্রার--নির্বাসন কালের।
একটি গাড়ি বহর চলেছে। মাটি নিয়ে দুনিয়াদারি নেই। পদ্মাতীরের কাটালিয়া গ্রাম থেকে পোখরা। ক্যারাভন চলতে থাকে--বিলুটি গোবিন্দপুর, নবাবগঞ্জ, কুতুবগঞ্জ, খয়েরডাঙা, মৌলাহাট।
সাতখানা গাড়িতে এই ঠাই বদল। স্ত্রী সাঈদা, অশক্ত মা, দুটো ছেলে--মেঝটি প্রতিবন্দি মণি আর ছোটটি শফি। আরও আছে বাজা গরু মুন্নি, ধাড়ি ছাগল বাচ...
বইয়ের পোকা
সব বাবা-মায়েদের মধ্যেই একটা মজার ব্যাপার দেখা যায়। বাচ্চাটা এক্কেবারে মহা বদের বদ দি গ্রেট হলেও বাবা-মার ধারণা থাকে তাদের সন্তানের চেয়ে লক্ষী আর দুইটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিছু অভিভাবক আরো কয়েক ডিগ্রী বেশি। স্নেহের টানে তারা এমনই অন্ধ হয়ে যান যে তাদের পিচ্চি একটা মশা মারলেও মনে করতে থাকেন যে নিশ্চই ওর মধ্যে ভবিষ্যত আইনস্টাইন নাহয় কমপক্ষে মোহাম্মদ আলী লুকিয়ে ...
জীবনটা তো এই কফির মতোই বিটকেলে। ভালো লাগলে ভালো, না লাগলেও অনাগত স্বাদের আশায় চুমুক দিয়ে দেখি, ভালো তো লাগতেও পারে!
পনেরো বছর আগে মীরা, আমি কেউ-ই কফি খেতাম না। চা খেতাম। ঘোরলাগা বৃষ্টির বিকেলগুলোতে চায়ের বাহানাতেও দেখা হতো কত। কে জানে? হয়ত মীরা এখন আর চা খায় না, ইশকুলপড়ুয়া ছানাটির পড়া দেখতে দেখতে পুরোনো বইয়ের ...
এত উপরের বারান্দা থেকে উপত্যকা সুন্দর লাগছে, অচলায়তনের দরোজা খুলে পাহাড় উপত্যকা পেরিয়ে চলে যেতে থাকা সেই পঞ্চকের মতন খুব গাইতে ইচ্ছে করছে,
" তুমি ডাক দিয়েছ কোন্ সকালে কেউ তা জানেনা
আমার মন যে কাঁদে আপনমনে কেউ তা মানেনা
ফিরি আমি উদাস প্রাণে,তাকাই সবার মুখের পানে
তোমার মত এমন টানে কেউ তো টানেনা!"
ঐ যে সব প্রাচীর পার হয়ে সব দরোজা খুলে চলে যায়, কে সে? সে কি পঞ্চক? নাকি অমল? নাকি সেই ...
অচেনা সঙ্গী বললো, "আরে, এক্ষুণি সব বুঝতে পারবে কেমন করে? তুমি এত অধৈর্য কেন রণি?" এর আগে ওর স্বর কখনো এত কঠিন লাগে নি, এই প্রথম লাগলো৷
আমি চুপ করে গেলাম৷ একদম চুপ, শুধু বহুদূর শীতের প্রান্ত থেকে বিষন্ন হাওয়ার সঙ্গে উড়ে উড়ে আসতে থাকলো নরম সাদা ফুল, শেষ হয়ে যাওয়ার আগের শ্বেত জারুলের গুচ্ছ, টালি ছাওয়া বিকেলের বারান্দায় অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা সাত বছরের বাচ্চা মেয়ে, ওর বড়...
[justify]
সুপ্তার বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে জীবনকে জীবনের হাতে সঁপে দেয়া! বিসিএস পরীক্ষার খাতায় রাগ করে শিক্ষা ব্যবস্থার সনাতনী মুখ এঁকে গোল্লায় যাওয়া, মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে ডাবলু বাসটাকে বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে হরতাল কীভাবে করে তা শিখিয়ে দেয়া; যে ছিলো সম্ভবনার খনি, অপসৃত রোদকে ডেকে নিয়ে গিয়ে সে পেটে মারলো, বুকে জাগিয়ে দিলো দামাল নদী আর অসংখ্য কুমির।
তবু-ও জুতোর ফিতে ঠিকই ...
মনে পড়ছে অনেকদিন আগের এককুচি নরম গোলাপ-পাপড়ির মতন স্মৃতি, এক সাদা বালির সমুদ্রবেলা, ঘন নীল সমুদ্র, দুধের মতন সাদা ফেনার মুকুট পরে অন্তহীন ঢেউ আসে, ঢেউ ভাঙে! আর কী প্রবল বাতাস, কী পরাক্রান্ত বাতাস! ছোট্টো মেয়েটার মাথাভর্তি কোমল চুলের রাশি এলোমেলো থেকে আরো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ওর বালিমাখা গোলাপি ফ্রকের প্রান্ত, গলার লালফুল আঁকা আকাশীনীল রেশমীস্কার্ফ হাওয়ায় ওড়ে, ওড়ে, ওড়ে! কে ঐ মেয়েটা?...
তাকে সনাক্ত করা গেলে, অন্তত একবার প্রমাণসহ দেখা মিললে, খুন করা হবে।
এ সিদ্ধান্তে কোনো দ্বিধা নেই, সংকোচ নেই। সিদ্ধান্ত যখন নেয়া হয়েই গেছে, তখন ফেরার পথও নেই। খুন করার পরে, নিজের কাছে অথবা অন্য কারো কাছে, কোনো কার্যকারণ কিংবা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যেতে হবে না। পৃথিবীতে সব কিছু সবাইকে জানতে হয় না, অনেক কিছু না জেনেই মানুষ বেঁচে থাকে এবং মরে যায়। তাই তাকে মরে যেতে হবে। তার মৃত্যুর কারণ প...
জহিরুল ইসলাম নাদিম
জায়গাটা সুখপ্রদ বা দৃষ্টিনন্দন কোনোটাই না।
সারফেস ড্রেনগুলো থেকে ময়লা ওঠাবার ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের কর্মীরা কর্মতৎপরতার স্বাক্ষর রাখলেও সেগুলো সরাবার বেলায় তাদের অনীহা হতাশাব্যঞ্জক। মাঝে মাঝে ময়লা ‘তোলা’ এবং ‘ফেলা’ কাজ দুটির মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান দিনকে পর্যন্ত ছুঁয়ে দেয়। ছোট্ট এই গলিটার দুপ্রান্তে তখন দাঁড়িয়ে থাকে গড়পড়তা কালো রঙের মিনি গম্বুজগুল...