প্লেনে উঠে যাই চোখ মুছতে মুছতে, আর দেখি অসহায়ের মত আমার বাবা মা তাকিয়ে আছেন আর হাত নাড়ছেন। এরপরে প্লেনে উঠে আবার নিজের স্বভাবসুলভ কাঠিন্য ফিরে পাই, একটু লজ্জার হাসি হেসে তাকাই আমার স্ত্রী আর শ্যালিকার দিকে। তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ, কারন দুজনেই এমন ভাব করল যেন, আসলে এই ঘটনাটা জীবনে ঘটেনি। আমিও ভাব ধরে জিজ্ঞেস করি আমার শ্যালিকাকে, টিভি কিভাবে চালায়, টাচ স্ক্রিন আগে কখনো দেখিন...
সন্ধ্যার আকাশ জুড়ে পাষাণ তারাদের মেলা দেখতে দেখতে একই আকাশের নীচে কোথায়, কোন দুরতম জানলায় অস্পষ্ট মুখের আদল বদলাতে বদলাতে কার চেহারায় স্থির, তার হদিস এই জন্মে আর নাই জানা হলেও, এইটুকু হাতড়ে হাতড়ে পাওয়াই যায়, সাইকেলের বয়স ছিলো ষোলো, দুই বেণীর তখন সবে মাত্র তেরো...মাথা পাগল হাওয়ায় হাওয়ায় সেই মাফলার উড়ে যাবার কিছুদিন আগে শেষবারের মতো গ্রামে এসেছিলো দুরদেশী যাত্রাদল...দুই বেণীর রজঃপা...
আমার পরিবর্তিত জীবন। বেকার জীবন। সপ্তাহ দুয়েক আগেও ছাত্রই ছিলাম বলা যায়। কোত্থেকে কি হয়ে গেলো, মাত্রতো সেদিন ট্রেনে করে ঢাকা আসলাম, ঘুমিয়ে না ঘুমিয়ে কয়টা ক্লাস করলাম, বন্ধুদের সাথে চা টা খেয়ে আড্ডা দিলাম, কয়দিন বাদে বাদে কয়টা পরীক্ষা দিলাম, শুনি যে পাশ করে গেছি, হাসিনা এসে সার্টিফিকেট দিয়ে গেলো আর আমি কিনা হয়ে গেলাম এক বেকার যুবক! চার চারটা বছর লাগলো ইঞ্জিনিয়ার হতে আর বেকার হতে কি...
আমাদের মা - আমাদের প্রথম ও প্রধান শিক্ষক - ৬
জোহরা ফেরদৌসী
পর্ব ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
পর্ব ৪
পর্ব ৫
জীবন যখন শুকায়ে যায় করুনাধারায় এসো....
দূঃখ সূখের দোল দোলানো জীবনে মা আনন্দ যেমন পেয়েছেন, শোকও পেয়েছেন। অপরিনত বয়সে প্রথম শোক পেয়েছেন তাঁর প্রথম সন্তানের অকাল মৃত্যুতে। কয়েক মা...
খন্ড চিত্র - ১
১৯৯৯ সালে একদিন বাবার কাছে শুনলাম বাংলাদেশ এ নাকি একজন অর্থনীতিবিদ আছেন যিনি পৃথিবী জয় (!) করে এসেছেন কি জানি এক থিওরী দিয়ে (তখন micro-credit কি জিনিস বুঝতাম না) । তিনি বাংলাদেশ নাকি এমন একটা ব্যাংক খুলেছেন যেখানে নাকি শুধু গরীবরা হিসাব খুলতে পারে। আমি তখন বোকার মতো বাবাকে বলেছিলাম তাহলে তো বাংলাদেশ এ কোন গরীব থাকবে না। বাবা শুধু মুচকি হেসেছিলো। তারমানে তখন বুঝি নি। অনেক পর...
দীর্ঘকায় এ লেখাটিকে যদি কেউ বিজ্ঞাপন ভেবে বসেন তাহলে বোধ করি খুব একটা অন্যায় হবে না। ব্যাপারটা আপাতদৃষ্টিতে তেমন মনে হলেও ভিন্ন কিছু বলতে চাই বলে লেখাটি খানিকটা বিজ্ঞাপনীয় অবয়ব পেয়ে থাকতে পারে। কিন্তু আমার বলার ছিলো যে, গল্প-ঔপন্যাসিকের জীবনও যে তাঁর গল্প-উপন্যাসের বিষয় নয় তা অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করতে চান না।
পাঠক কিংবা লেখক হিসেবে বলতে পারি যে, গল্প বা উপন্যাসের সবগুলোই কিন্...
প্রথম সিগারেটে টান দিয়েছিলাম ক্লাস ফাইভে থাকতে। লুকিয়ে না, অতো সাহস ছিল না। আগ্রহী দৃষ্টি দেখে একদিন বাবাই হাতেখড়ি করালেন। কাশতে কাশতে এক বিশ্রী অবস্থা হল। ছ্যা, এই জিনিস বড়রা এত মজা করে খায় কিভাবে? কখনই খাব না আর। এর চাইতে তো লাল হলুদ পানিও ভাল, ওটার হাতেখড়িও কিছুদিন আগে হয়েছিল কিনা। শিক্ষক অভিন্ন।
হাতেখড়ি নিজহাতে করালেও বাবার একটা শর্ত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার আগ পর্যন্ত স...
যেনতেন একটা চাকরী পেতেও কত যুদ্ধ, কতরকম নাকানিচুবানি খেতে হয় মানুষের। অথচ আমরা দুইবন্ধুতে মিলে সাড়ে তিনটাকা বাসভাড়া আর আড়াই টাকার কাগজ খামের খরচ দিয়ে চাকরী বাগিয়ে ফেলেছিলাম। শায়েস্তা খানের আমলে নয়, মাত্র সোয়াযুগ আগে নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে। তবে ছয়টাকা ব্যয় করে চাকরী পাওয়াও ব্যাপার ছিল না।
ব্যাপারটা হলো ওই চাকরীটা পেতে আমাদের আরো চুয়ান্ন টাকা খরচ করতে হয়েছিল। সেই বাড়তি চুয়া...
তরুণ বয়সটা খুবই খতরনাক্- মাথার ভেতরের দুনিয়াটা ভেঙেচুরে উলটপালট করে দেয়। বাইরের জিনিসগুলো তখনও আস্ত থাকে বলে মনে হয় সেগুলোর সবকিছু চুরমার করে ফেলি। মানুষ শেষ পর্যন্ত সৃষ্টিশীল বলে নতুন করে গড়ার ইচ্ছেটা ভাঙার সাথে সাথেই প্রবলতর হয়ে উঠে।
মানুষের জন্মের সময় মস্তিষ্কে সাম্য-অসাম্যের কোনো উপাদান থাকে কিনা জানি না, তবে শৈশবকালে অসাম্যের দিকগুলো খুব একটা ধরা দেয় না। আস্তে আস্তে ব...
আমাদের মা - আমাদের প্রথম ও প্রধান শিক্ষক - ৫
জোহরা ফেরদৌসী
[justify]
আমাদের পরশমনি
মা ছিলেন আমাদের পরিবারের চলন্তিকা। যে কোন কিছু না বুঝলেই মার কাছে যেতাম। শুধু যে আমরাই গিয়েছি তাঁর কাছে তাই নয়, আশেপাশের গুরুজনদেরকেও দেখেছি পরম শ্রদ্ধায় তাঁর কাছেই আসতেন। অনেক সময় আমর...