দেখতে দেখতে লোকজনে ঘর ভরে উঠতে লাগলো, গোল করে পাকানো ডায়াগ্রামের তাড়া নিয়ে সেমিনার দিতে আসা ছাত্রছাত্রীরা, সঙ্গে তাদের গাইড শিক্ষকরা বা শিক্ষিকারা, তাছাড়া এমনি দর্শক, শ্রোতা, ছাত্রছাত্রীরাও আসছে। জাজেরাও শোনা গেল এসে গিয়েছেন, তবে তাঁরা তখন অন্য ঘরে বিশ্রাম করছেন আর টিফিন খাচ্ছেন।
অন্বেষার মুখ আরো খানিক ভয়-ভয় হয়ে গিয়েছে, আমি কিছু জোকস বলে খানিকটা হাসি হাসি করে দিলাম ওকে।
সেদিনটি ছিল বসন্তের শুরুর দিকের কোন একটি দিন। বাড়ি ফিরেছিলাম অন্য দিনের চেয়ে বেশ আগে। এখানে দীর্ঘ শীত কাটাতে হয় অন্তঃপুরে, তাই শীত চলে যাওয়ার ভাব হলেই বাইরে বেরিয়ে পড়বার ইচ্ছেটাকে আকাশে উড়িয়ে দেই। প্রতিদিন বাইরে ঘুরে ঘুরে শুকনো বাদামী পাতা আর ঘাসের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা নতুন সবুজ লতা পাতা, কাণ্ড এবং কুঁড়িদের দেখি আমি এসময়। চোখের সামনে শীতের ধুসর আর ছাই রঙা প্রকৃতি একটু একটু করে পেলব সবুজে ঢেকে যেতে দেখে আমার ক্লান্তি আসেনা কখনও। এই শীতের দেশে পত্রহীন চেরী, ফোরসাইথিয়া, ম্যাগনোলিয়া গাছের ডালপালা ফুলে ফুলে ছেয়ে যাওয়ার ঐশিক সৌন্দর্যের কথা বাদ-ই দিলাম, সারা শীত ছাই, সাদা আর বাদামী দেখবার পর, আগাছার কচি সবুজ পাতা দেখলেও মন ভরে যায়।
ক্লাস এইটে বদলি হয়ে বড় শহর থেকে একজন এসে আমাদের স্কুলে ভর্তি হলো। চন্দ্রাণী চট্টরাজ। খুব নামডাক তার, পড়াশোনায় নাকি দারুণ সে। বড় শহরের পালিশ তার, সবাই বলতে লাগলো, আমাদের মতন গাঁ-মফস্বলের মেয়েদের সে তুড়ি মেরে হারিয়ে দেবে। আমাদের সেকশানে এসে বিশেষ করে আমাদের সেই ক্লাস ফাইভ থেকে ব্যতিক্রমহীন ভাবে ফার্স্ট হয়ে আসা অন্বেষাকে কায়দা করে শুনিয়ে যেতে লাগলো অন্য সেকশনের মেয়েরা। চন্দ্রাণী বদলি হয়ে ভর্তি হয়েছিল
ইটা মারলে পাটকেল খাইতে হয়, এটাই জগতের নিয়ম। চার বছর আগে আরিফ জেবতিকের ছোড়া ইটের আধলার জবাবে এক্ষনে পাটকেলের এই মৃদু বর্ষণ। জার্মান ভাইয়েরা ছিল্লা কাইট্যা দিয়া গ্যাছে, অহন সেই কাটা ঘাওয়ে এট্টু লবন লাগায়া দেই! মু হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ ..........................
কইরে শালা কইরে শালী
আমায় ফেলে কই পালালি!
আয় দেখে যা কি করেছি
শিব ঠাকুরের আপন দেশে
আইন কানুন সর্বনেশে
কেউ যদি যায় পিছলে পড়ে
প্যায়দা এসে পাকড়ে ধরে
কাজির কাছে হয় বিচার
..... একুশ টাকা দন্ড তার
এই দেশটা শিব ঠাকুরের না হলেও এখানকার আইন কানুনও সর্বনেশে। সুকুমার রায় বহু আগে এই কবিতা লিখেছিলেন কিন্তু এতদিন পর ইংল্যান্ডে এসে আমি এই কবিতার সার্থকতা খুঁজে পেলাম। তেমনই কিছু মজার সর্বনাশা ঘটনা বর্ণনা করব এই লেখায়।
১
একদিন ভাবছিলাম আর লিখবো না । কী হবে লিখে? তার চেয়ে চোখ মেলে দিয়ে, কান পেতে রেখে, মনের দরজা খুলে চুপ করে বসে দেখাই ভালো। মানুষের হৃদয়ের আলোছায়ার খেলাও তো এই আকাশ বাতাস মেঘ রোদ বন নদীর উপরের আলোছায়ার খেলার মতনই। যারা সত্যিকারের অনুভবী লেখক, যারা সত্যিকারের সূক্ষ্ম স্পন্দনশীল হৃদয় নিয়ে পৃথিবী দেখেন-তারা হয়তো পারেন এই আলোছায়ার খেলা তুলে ধরতে। আমার পক্ষে চেষ্টা করাই মূঢ়তা।
১।
আজ গাড়িটা অনেক দূরে পার্ক করেছি, ইচ্ছে করেই। সাইড ওয়াকের পাশে প্রবল সবুজ ঘাসের মধ্যে মধ্যে বিচিত্র রঙের সব ঘাস-ফুল ফুটে থাকে এসময়, হেঁটে যাবার সময় ওদের দেখবো বলে। এখানে দেশী সব ঘাস ফুল গুলো নেই। থাকলেও অবশ্য ওদের নাম বলতে পারতাম না। তবে এখানে যে সব বিদেশী ফুলগুলো ফুটেছে, নিজেকে অবাক করে দিয়েই তাদের অনেকের নাম জানি। খুব বেশী দেখা যায় উজ্জ্বল হলুদ রঙা ড্যান্ডিলায়ন, সাথে আছে ম্লান সাদা আর হালকা গোলাপী রঙের ক্লোভার, আরো দেখা যায় ম্যাজেন্টা এবং গোলাপী রঙা ভেচ। এদের দেখে দেখেই হাঁটছিলাম আস্তে ধীরে। আজ কাজে অতো তাড়া নেই। হঠাত-ই একটা খুব পরিচিত ছোট্ট নীলচে বেগুনী রঙা ফুল নজরে এলো, আমি কাছে গিয়ে ভালো করে দেখবার চেষ্টা করবো কিনা, ভাবছি। কিন্তু পাশে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন পরিচিত সহকর্মী দের একজন, সে আবার কি না কি ভাববে! সেকারণে ঠিক হোয়ে উঠল না। ওকে এড়াতেই দ্রুত পথটা পেরিয়ে হাসপাতালে ঢুঁকে পড়লাম। ভেবেছিলাম যাবার পথে আবার খুঁজে দেখব। কিন্তু হাসপাতালে ঢোকার পর হঠাত করেই সব কেমন জানি ব্যস্ত হোয়ে গেল। ফিরবার পথে ফুলটি খুঁজবার কথা মনে থাকলেও ঠিক কোন জায়গায় দেখেছিলাম মনে করতে পারিনি, হাতে সময়ও ছিলনা। আমি নিজেকেই নিজে তাড়া দিচ্ছিলাম, তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল।
উপরে যে কড়িটা ছুঁড়ে দিয়েছি সেটা নেমে আসার আগেই যেগুলো মাটিতে পড়ে আছে তার থেকে দুটোকে মুঠোর মধ্যে নিয়ে নিতে হবে। উপরেরটাকেও মাটি ছুঁতে দেওয়া যাবে না, নিয়ে নিতে হবে সেটাকেও। এটা পারলে এর পর মাটিতে ছড়িয়ে থাকা গুলোর থেকে তিনটাকে নিয়ে মোট চারখানাকে মুঠোর মধ্যে নিতে হবে। সেইটা আমি হেরে যাবো বলেই মনে হয়। কিন্তু মেয়েরা যে কেউ সব কটা কড়ি-ই অনায়াসে মুঠোর মধ্যে নিয়ে নেবে। এইটা যদিও বা পারি, উপরে ছুঁড়ে দিয়ে হাতের উল্টোপিঠে ধরে নেওয়াটা আমি দুটোর বেশী কখনোই পারি না - সে কড়ি দিয়েই খেলি, কি খোয়ার টুকরো দিয়ে।
চলার পথে নিজ জীবন, নিজ দেশ কিংবা ভিনদেশে হওয়া কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়েই এই সিরিজ- তিন প্যারার তিনটি ছোট ছোট গল্প নিয়ে লেখা "তিন তিরিকে নয়"।
[justify]#১
১।
'রোগী আসিবার পূর্বেই ডাক্তার ক্লিনিকে পৌঁছাইল' 'র একটা রেকর্ড করেছি আজ। তাও আবার একটানা প্রায় দুই ঘণ্টা ড্রাইভ করে। রোগীর জন্য অপেক্ষা করা বেশ বিরক্তিকর কাজ, অন্যপক্ষের অপেক্ষাটাও যে খুব সুখকর নয় সেটাও জানা আছে। সময়ের মধ্যেই ক্লিনিক শেষও হোয়ে যাওয়ায়, জীনের আছর লাগল। প্রিয় একটা দোকান আছে এই ছোট্ট শহরে, সেটাতে একটু ঢুঁ মারার লোভ সামলাতে পারলাম না।