শরতের তাল পাকা গরম। ভ্যাপসা, অস্বস্তিকর। তবে তা শুধু বড়দের জন্য। আমাদের বয়েই গেছে শরৎকে কেয়ার করতে। ঘরকুনো হয়ে বসে থাকার দিব্যি তো কেউ দেয়নি! বিশেষ করে নানা বাড়িতে। মা-বাবার বারণ নেই, চাচার রক্তচক্ষু নেই, তাই অস্বস্তি¡র দুপুরে-ঘুমও নেই। নানা বাড়ির সাথেই বিশাল বাগান। আম, জাম, কাঁঠালের। বাগানের ঠিক মধ্যিখানে এক বিরাট তাল গাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে। সব গাছ ছাড়িয়ে আকাশে উঁকি মেরে। ধপাস করে একটা তার পড়ে। আমরা ছুটে যাই। কিন্তু কোথায় তাল! কে যেন কুড়িয়ে নিয়ে গেছে। ফিরে এসেছি। আবারও ধপাস! এবার ছুটে গিয়ে দেখি, তাল মুখে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন শিয়াল মামা।
-ঐ বাজার করে আন তো।
-কি আনব?
-ইস, বাজার কি আনবে সেইটাও জিগেস করছে। বোকা ক্যান রে তুই অ্যাতো? যা, ব্যাগ নিয়ে যা।
এমন একটা দিন যায় না যেদিন অন্তত একবার তাঁর গানের কোন কলি, কবিতার কোন ছত্র, নাটকের কোন সংলাপ বা কোন চিত্রকর্মের কথা স্মরণ করি নি। অথচ এমন ত নয়, তাঁর বিপুল সৃষ্টির এক কুচির বেশী কিছু সংগ্রহে এসেছে আমার! আবার তাঁকে বাদ দিয়ে আর কিছুই পড়িনি, শুনিনি, দেখিনি এমনও ত নয়! তবু তাঁর কাছে না এসে উপায় থাকে না।
ডিস্ক্লেইমার ১: আমি একজন অ্যালাম্নাস। কিন্তু যে কথাগুলো বলবো, সেগুলো ছাত্র থেকে অ্যালাম্নাস হওয়ার পরে মাথায় গজায় নাই। এই কথাগুলো আগে থেকেই ছিলো। ছাত্র থেকে অবস্থায় পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে ছিলাম না, এখনো নাই। কাজেই, যাদের ছাত্র-অ্যালাম্নাই নিয়ে চুলকানি আছে, তারা পোস্ট নাও পড়তে পারেন।
ডিস্ক্লেইমার ২: উপরের ডিস্ক্লেইমার দেখে আবার ভেবে বসবেন না আমি টিচার ফাইটার জাতীয় কিছু ছিলাম। নিতান্তই সাধারণ এক ছাত্র আমি। একেবারেই সাদামাটা রেজাল্ট। আমাদের ব্যাচের মানুষজনের রেজাল্টের তুলনায় আমার রেজাল্ট বেশ খানিকটা নিচের দিকেই।
ডিস্ক্লেইমার ৩: অনেককেই ইদানিং বলতে শুনি/দেখি, আপনারা অনেক দিন আগে পাস করে গেছেন। আপনারা এখনকার অবস্থা বুঝবেন না। আপনাদের জন্য একটা গল্প। এক মেয়ে প্রেগন্যান্ট। খুব যন্ত্রণায় চিৎকার করছে! তার মা তার পাশে দাঁড়িয়ে সান্তনা দিচ্ছেন, "এই তো মা, আর কিছুক্ষণ পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে।" মেয়ের উত্তর, "তুমি বাচ্চা হওয়ার ব্যাথা কী বুঝবা?!" গল্প শেষ। এবার আপনি আসতে পারেন। স্লামালিকুম!
ডিস্ক্লেইমার ৪: যারা সব কিছুতেই মনে করেন সিস্টেমের দোষ, তাদের জন্য এই পোস্ট না। কারণ আমি কোন কিছুতেই সিস্টেমের দোষ দেয়ার পক্ষে না। সিস্টেম বলে কিছু নাই। আমরা নিজেরাই সিস্টেম। আপনার মানসিকতা যদি সিস্টেমের ঘাড়ে দোষ দেয়ার জন্য তিন পায়ে খাড়া থাকে, তাহলে আপনি নিচে অনেক কর্কশ কথা পড়বেন। কাজেই, নিজ দায়িত্বে, খুউব খিয়াল কইরা।
মূল কথা
বুয়েট থেকে পাস করেছি প্রায় বছর পাঁচেক হয়ে গেলো। আমাদের ব্যাচ মনে হয় খুব অল্প কিছু ব্যাচের মধ্যে অন্যতম, যারা তিনটি (বিএনপি-জামাত, তত্ত্বাবধায়ক, আওয়ামী লীগ) শাসনামলে বুয়েটে পড়েছে। সব ব্যাচের মতোই আমরাও বুয়েটে থাকতে একটি ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ পেয়েছিলাম, ২০০৬ সালে। মূলত বিশ্বকাপের জন্যই পরীক্ষা পেছাতে পেছাতে শেষমেশ স্যারদের বাসায় ঢিল ছোঁড়া, সোহরাওয়ার্দী হলের তৎকালীন প্রোভস্টকে জিম্মি করার মতো ঘটনাও ঘটে, সাথে হলের ভেতর টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া, হল ভ্যাকেন্ট তো আছেই। অনির্দিষ্টকালের জন্য বুয়েট বন্ধ হয়ে যাবার পর বুয়েটের তৎকালীন সব ব্যাচের কিছু ছাত্র (আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম) মিলে সিদ্ধান্ত নেই, আমরা স্যারদের কাছে যাবো। তাঁদের সাথে খোলামেলা কথা বলে ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে সিস্টেমের ভেতরের 'বাগ'গুলো সমাধা করার চেষ্টা করবো।
অনেক দিন আগে বঙ্কিমচন্দ্র চটোপধ্যায় বঙ্গদেশের কৃষক প্রবন্ধে বলেছিলেন- "আমার একটি কথা জিজ্ঞাসার আছে, কাহার এত মঙ্গল? হাসিম শেখ আর রামা কৈবর্ত্ত দুই প্রহরের রৌদ্রে, খালি মাথায়, খালি পায়ে এক হাঁটু কাদার উপর দিয়া দুইটা অস্থিচর্ম্মবিশিষ্ট বলদে, ভোঁতা হাল ধার করিয়া আনিয়া চষিতেছে, উহাদের কি মঙ্গল হইয়াছে? . . . . . . .
বাক্সের ভিতরে বাক্সের মতন নতুন নতুন স্মৃতি বার হয়ে আসছে কিন্ডারগার্টেন ক্লাসের কথা লিখতে বসলেই, রঙীন সব ছবি আঁকা বাক্স। তখন জীবন ছিল বিস্ময়ে ভরা, প্রতিটা দিন ছিল অদ্ভুত রকমের আশ্চর্য, প্রতিটা সকাল যেন হাতের মুঠোয় লুকিয়ে আনতো অচেনা উপহার। তখন তো বেশীরভাগই অচেনা আমাদের। নিজেদের পাড়ার বাড়ীঘর মাঠ রাস্তাগুলো পার হয়ে গেলেই অচেনা রূপকথার রাজ্য। আমবাগান কুলবাগান জোড়া পুকুর গাছপালায় ঘেরা অদ্ভুত অদ্ভুত বাড়ী
ব্রুসলি অথবা কৈশোরের নায়কের বিদায়:
আজ হঠাৎ মতির কথা মনে পড়ল। ক্যাডেট কলেজে মতি আমাদের স্কুল জীবনের সহপাঠী ছিল। আমাদের সাথে মতির সহপাঠ কলেজের শেষ দিনটি পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয় নি। গ্রাম্য প্রকৃতির মতির নিতান্ত গোবেচারা চেহারায় রূপোর টাকার মতো তেমন উজ্জ্বল কোন বৈশিষ্ট্য আমার চোখে পড়ে নি। আমরা ছিলাম ভিন্ন ভিন্ন হাউসের বাসিন্দা। আমার তিনতলার খোলা তলোয়ার হাউস, মতির নিচতলার বীরশ্রেষ্ট হাউস। মাঝখানে বাঁশের কেল্লা হাউসের গা বেয়ে নামা প্রশস্ত সিঁড়ির দু-দু'টি স্তর। সে বয়সে স্তর পেরুবোর ক্ষেত্রে ঘাম ঝরাবার কায়ক্লেশ হয়ত একেবারেই গা করতাম না, তবে খুব সূক্ষ্ম হলেও ভিন্ন হাউসে অবস্থানের একটা মানসিক বাধা ছিল। সেই বাধা পেরিয়ে জ্যোতিষ্কের সাহচর্য হয়ত কামনীয় হতে পারে, কিন্তু নিতান্তই সাধারণ একটি ছেলের সাথে বন্ধুতা ঘটবার তেমন আগ্রহ মনে জাগে না।
‘ভালোবাসা ভালো নয়’-- কথাটা আমার নয়, সমাজের। সমাজ যাই বলুক অর্ধেক জীবন পার করে হিসেব কষতে বসি ভালোবাসাটা শিখলাম কবে? আমার স্মৃতি বড়ই প্রখর। একেবারে দিন তারিখে হিসাব মেলাতে না পারলেও বয়স-বছরের হিসাব সে দাখিল করতে পারে। শৈশব কেটেছে ৮০-৯০ দশকে। বাংলা রোমান্টিক সিনেমার তখন রমমনা যুগ। ঠিক উত্তম-সূচিত্রার মতো প্রেমকাহিনি না হলেও তখন বড়লোকের মেয়ে ফকিরের ছেলে টাইপের সিনেমার রস গেলানো হচ্ছে ৮০ বছরের বুড়ো থেকে ৮ বছরের শিশুদের পর্যন্ত। সেই সাথে এও গেলানো হচ্ছে, প্রেম মানে পূত-পবিত্র সম্পর্ক--আদিম যৌনতা সেখানে কড়াকড়িভাবে অবাঞ্ছিত।
বুড়োদের কাছে কেমন ছিল জানি না, আমাদের কাছে সিনেমা মানে সিনেমাই। বাস্তবতার ছিটেফোঁটা সেখানে খোঁজার চেষ্টা করিনি। খুঁজব, সেই মগজ কোথায় তখন?