মোটামুটি জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর ষাটের দশকের শেষাংশ থেকে দীর্ঘ চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে দেখে আসছি আমাদের গ্রামটিকে। এই সময়কালে গ্রামটির প্রাকৃতিক ও ভৌত কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু আমুল পরিবর্তন এসেছে এ গ্রামের অধিবাসীদের যাপিত জীবনে। আবহমান কাল থেকে চলে আসা রীতিনীতি, নিয়মকানুন, কর্মপদ্ধতি, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, প্রযুক্তি, সর্বোপরি মানুষের জীবনাচরণে এসেছে দৃশ্যমান ব্যাপক পরিবর্তন। পিছু ফিরে দেখলে ঠিক বিশ্বাস হতে চায় না যে এভাবে বদলে গেছে এ গ্রামের এতকিছু। শত শত, কিংবা হাজার বছর ধরে যা ছিল প্রায় অপরিবর্তনীয়, কালের এই ক্ষুদ্র পরিসরে তার আমুল পরিবর্তন ঘটলো আমারই চোখের সামনে। এক অর্থে এ আমার পরম সৌভাগ্য যে আমি এ পরিবর্তনের সাক্ষী, তবে এতে প্রাপ্তির আনন্দ যেমন আছে, হারাবার বেদনাও আছে অপরিসীম।
“হি ইজ অ্যা গুড ম্যান”- ছবিটার দিকে একটানা মিনিটখানেক তাকিয়ে, চোখ-মুখ ভুরু কুঁচকে, দুই-চারবার সাপের মত জিহবা বের করে নিচের ঠোট ভিজিয়ে উপর নিচে মাথা দুলিয়ে গমগমে কন্ঠে বলল জ্যুড। জ্যুড সেঙ্কুঙ্গু আমার বাথরুম্মেট, বাড়ি উগান্ডা, পেশায় শিশুচিকিতসক। বাংলাদেশে এসেছে পাবলিক হেলথে মাস্টার্স করতে। আমরা দুজন থাকি পাশাপাশি রুমে, কিন্তু দুজনের জন্য বাথরুম একটাই; সেই সুত্রে আমরা বাথ্রুম্মেট। মানুষের স্বভাব বি
বৈশাখের ঘুঘু ডাকা দুপুর। নানা বাড়িতেই কাটত গরমের দিনগুলো। কাটত, মানে কাটাতাম। আমাদের গ্রামের জনসংখ্যা একটু বেশি। ঝোপ-জঙ্গলও কম। তাছাড়া মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে গণগণে দুপুরে মাঠে বেরিয়ে পড়ার সুযোগ কম ছিল। নানা বাড়িতে ধরা বাঁধার বালাই নেই। তাছাড়া গ্রামটা একেবারে মাঠের ভেতরে। লম্বা একটা রাস্তা। দু’ধারে সার দিয়ে বসতি। বাড়ির পেছনে বাড়ি নেই। মাঠ আর মাঠ। কোথাও বুনো ঝোপে আচ্ছাদিত বাঁশবন, মাঠকে মাঠ খেজুর বাগান। বাঁশ আর উলুঘাসে একাকার হয়ে যাওয়া অবারিত প্রান্তর।
বাংলা নববর্ষের আনন্দ উদযাপন করি না আজ প্রায় তেরো বছর ধরে।
শরতের ভোরে আমি চুপি চুপি পায়ে হেঁটে গিয়ে দাঁড়াতাম সবুজ ঘাসের মাঠে। স্যান্ডেল খুলে নগ্নপায়ে হাঁটতাম শ্যামল কোমল শীতল ঘাসের উপর। প্রকাণ্ড সোনার থালার মতন চাঁদ উদিত হতো পূর্ব দিগন্তে। ঝোপের ভেতর ছোট ছোট বেলীফুলগুলিতে, ঘাসে ও গাছের পাতায় বিন্দু বিন্দু শিশির লেগে থাকতো অশ্রুবিন্দুর মতন। নবারুণের সোনালি আভায় শিশিরবিন্দুগুলি হীরের কুচি হয়ে উঠতো। মনে হতো, বুনোফুল ঘাস আর পাতাগুলি সেজেছে হীরের আভরণে। ঘাস পা
দূর শৈশবে ক্যালিডোস্কোপ ঘুরিয়ে নক্সা দেখতে দেখতে ঘোর লেগে যেত। আজ এই বেলা-ঢলে আসা প্রহরে জীবন-ক্যালিডোস্কোপ নিয়েও আমার এক-ই দশা, ঘোর লেগে আসে। একসঙ্গে ঝাঁক ঝাঁক স্মৃতি এসে ঘুরে যায় কাঁচকি মাছের ঝাঁক-এর মত। মনোযোগ দিয়ে দেখতে গেলে পলক ফেলার আগেই সব শুনশান, কেউ নেই। তখন আবার চুপটি করে বসে থাকা গহীন দিঘীর পারে। খুব সাবধানে। ঘোর লেগে জলে পড়ে গেলে, সাঁতার জানি না আমি, তলিয়ে যাব। আর না, সাবধানে পা টিপে টিপে জলের ধার থেকে সরে আসি। কিন্তু টের পাই, জল ও আসছে। বুকে হেঁটে, সাপের মতো। দৃষ্টিসীমার ঠিক বাইরে বাইরে। আসুক, পালিয়ে লাভ নেই। আমি মন সরিয়ে নিই।
The past actually happened. History is what someone took the time to write down.- A. Whitney Brown