১৯৯৭ সালের শুরুর দিকের কথা। বুয়েটের ক্লাস শুরু হয়েছে মাস দুয়েক হল। প্রথম সেমিস্টারেই পাঁচ টা কোর্স আর তিনটা সেশানাল নিয়ে অবস্থা কেরসিন... বিশেষ করে মেকানিক্স কোর্স নিয়ে তো রীতিমত হিমশিম অবস্থা। এর মধ্যে শুনলাম ইউকসু ইলেকশান হবে। বেশ একটা থ্রিল অনুভব করলাম। ডাকসু ইলেকশানের কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি, ডাকসু নেতাদের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা পেপারে পড়েছি, বিবিসি বাংলায় শুনেছি। তো আমি একে ওকে জিজ্ঞাসা করা শুরু করলাম জানার জন্যে যে কে কোন দল থেকে ইলেকশান করছে, কে কেমন ইত্যাদি। জানতে পারলাম ইউকসু ইলেকশান হয় প্যানেল ধরে, সাতজনের একেকটা প্যানেল...ছাত্র দল একটা প্যানেল দেয়, ছাত্র লীগ একটা প্যানেল দেয়, ইউনিয়ন একটা প্যানেল দেয় ... এরকম। প্যানেল গুলো পরিচিত হয় ভিপি-জিএস-এজিএস প্রার্থীর নামে। যাই হোক ধীরে ধীরে প্যানেল ঘোষণা করা হল প্রায় সব দলের। তারেক-কামাল-কল্লোল প্যানেল হল ছাত্রদলের... জাহিদ-খালেদ-তুহিন হল ছাত্রলীগের প্যানেল। অন্য আরও প্যানেল বোধহয় ছিল কিন্তু আমার মনে নাই। প্রচারনা শুরু হল। সারা বুয়েট ছেয়ে গেল পোস্টারে পোস্টারে। এরকম একটা পোস্টারে একটা চেনা মুখ দেখে তো আমি অবাক...... আনোয়ার জাহিদ ভাই। জাহিদ-খালেদ-তুহিন প্যানেলের জাহিদ যে আনোয়ার জাহিদ তা দেখে তো আমি অবাক। বছর খানেক আগের বুয়েটে ভর্তির কোচিং সুত্রে আনোয়ার জাহিদ আমাদের অতি প্রিয় মানুষ। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় তখন পর্যন্ত ১০০% স্কোর করা একমাত্র পরীক্ষার্থী উনি। সান রাইজ কোচিং সেন্টারে স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে আমাদের নিয়মিত ক্লাস নিতেন ইনি। আনোয়ার জাহিদ আমাদের ভোটে সেরা টিউটরও নির্বাচিত হয়েছিলেন সান রাইজের। আমি তো মহা খুশী এমন একজন গুনী মানুষ ইলেকশান লড়ছেন দেখে। একটু আশা জাগল মনে যে না ছাত্র রাজনীতি মানেই নষ্ট ছেলে আর ক্যাডারদের তাণ্ডব না। আমরা যারা লেভেল ১ টার্ম ১ এর নতুন ছাত্র ছাত্রী তারা তো প্রায় নিঃসন্দেহ যে জাহিদ ভাই ই জিতে যাচ্ছেন।
২০১০ সাল। ’০৯ ব্যাচের ক্লাস শুরুর এক কি দুই সপ্তাহ আগের কথা। বিকালে জনাকয়েক বন্ধু ক্যাম্পাসের হাফওয়ালে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হটাৎ দেখি একটা কালো, রোগাপটকা, লম্বাচুলো ছেলে মাজা থেকে প্যান্ট খসে পড়ে পড়ে অবস্থায় ড্যাংড্যাং করে হেঁটে যাচ্ছে। তখন ছিল র্যাগের মৌসুম। বন্ধুদের কেউ একজন চিনত যে ও নতুন ব্যাচের। আর যায় কই, প্রথমে ক্যাম্পাসে এবং পরে হলে এনে ডাইনিংয়ের আগে পর্যন্ত টানা ৩-৪ ঘণ্টা র্যাগ দেয়া হল ওকে। দীপের সাথে সেই প্রথম পরিচয়।
তখন এক রকম দিন ছিল, যখন কিছু কিছু সকাল শুরু হত দোতালার বারান্দা বরাবর রাস্তার ওপারে পুকুর পাড় বলে তো তেমন কিছু ছিলনা কিন্তু একটা খেঁজুর গাছের কান্ড ছিল যার উপর বসে মেরীর বাবা যিনি আমাদের বয়েসী সবার ড্রাইভার আংকেল গড় গড় করে কুলি করতে করতে পানিতে নেমে যেতেন, তার শব্দে। বারান্দায় ছুটে যেতাম কারণ একটা সোনালু গাছ হলুদ ফুলে ঢেকে রাখত পুকুর পাড়টা আর চোখ ডলতে ডলতে দেখতাম সোনালী সে গাছটার হলুদ বৃষ্টি। পাশে
আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস সামনে রেখে আমার মা’কে নিয়ে লিখতে বসেছিলাম। আমার মত সন্তান, যারা মা’দের জীবদ্দশায় তাঁদের মূল্যায়ন করতে শেখেনি, তাদের যা হয় আর কি! নাকের চোখের জল একাকার হয়ে যায়, লেখা আর এগোয় না।
দিনের বেলা বাবা অফিস থেকে ফিরে, মধ্যাহ্নভোজন সেরে শেষ দুপুরে একটু ঘুমুতেন। ওই সময়টা ওনার শোবার ঘরে আমাদের যাওয়া ছিলো বারণ। একেবারে কারফিউ জারি থাকতো সেসময়টা।
বঙ্গদেশের ইবনে বতুতা আমাদের সবার প্রিয় তারেক অনু ভাই কাজকাম ফেলে রেখে ঘুরে বেড়ায় দেশ-বিদেশ। মজার মজার আইটেম খায় আর তার বর্ণনা লিখে লাখো বাঙালির হৃদয়ে হিংসার আগুন জ্বালিয়ে দেয়। গরুর মাংস নিয়ে তো হালে শুরু করেছেন এক নতুন সিরিজ, ব্রাজিলে গিয়ে খেলেন চুরাস্কো, আর্জেন্টিনার চাপকে তো দিয়েই দিলেন নাম্বার ওয়ান সার্টিফিকেট! কথা সত্য হতেও পারে, তবে আমার কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে যা বলার জন্যই এই পোষ্ট।