দুটি যুগের সন্ধিক্ষণে আমার বেড়ে ওঠা। দুটি যুগ বলি কেন, দুটি শতাব্দীরও। বিংশ শতাব্দীর কঠিন পৃথিবী পার করে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জের দ্বারপ্রান্তে তখন আমাদের বিশ্ব, আমাদের দেশ। চোখের সামনে আমূলে বদলে যেতে দেখেছি আমাদের শত শত বছরের ঐতিহ্যকে। জীবনের প্রথম ছয়টা বছর বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাতায়াতের দুটি মাত্র বাহন ছিল। গরুর আর ঘোড়ার গাড়ি। আর আজ, পৃথিবী কোথায় দাঁড়িয়ে!
অনেক দিন আগের কথা। আমি তখন ক্লাস এইটে। একদিন দেখি আমার এক চাচা ও তার বন্ধু 'লাল-সালু' উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের সংলাপগুলো আওরাচ্ছে আর হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমার ঐ চাচা তখন ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থী ছিল। আমার মনে আছে, আমার ঐ চাচা যখন বিএ (ডিগ্রি)র শিক্ষার্থী ছিল, তখন এমনি করেই একদিন সৈয়দ আবুল মনসুর আহমেদের 'হুযুর কেবলা' নিয়ে দারুণভাবে আমোদিত হয়েছিল। কিন্তু আমার সেই চাচা এখন আর মজিদ ব
কলেজ থেকে ফেরার পথে মাঝেমধ্যে সার্সেন রোডের পথ দিয়ে ফিরতাম। শহরের সবচে সবুজ-শান্ত রাস্তার একটা ছিল এই পথটা। এই রাস্তায় চলার সময় চোখে পড়ত এক বাসার গেটের সামনের এক নামফলক, প্রফেসর ডঃ জামাল নজরুল ইসলামের নাম লেখা তাতে। আমাদের হাইস্কুলেরই ছাত্র ছিলেন তিনি, সেই সুবাদে স্যারদের মুখে উনার নাম শুনেছিলাম আগেই, জানতাম খুব উঁচুমাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। নিভৃতে, অনেকটা আড়ালে থেকে বিজ্ঞানসাধনা করতেই বেশি ভালোবাসতেন
১।
আমার পরিচ্ছনতার ব্যারাম আছে বলে মনে হয়। তবে সেটা শুচিবায়ুগ্রস্থতার পর্যায়ে পৌছেছে বলে মনে হয় না। কারণ ..... লিমিট টানতে পারি, ধূলাবালি ভরা কীবোর্ডেও টাইপ করে যাচ্ছি, কিন্তু সচেতনতায় ধূলাবালির কথাটা বিস্মৃত হচ্ছে না। বাসে, সিএনজিতে ময়লা সিটে ভ্রমন করতে পারি, ড্রেনের উপরের সালাদিয়া হোটেলের পাশে দাঁড়িয়ে চা খেতে পারি।
মার্চ ১৯৭১; আব্বা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের ছাত্র। থাকতেন শহীদুল্লাহ হলে। জায়গাটা আমাদের মেডিকেল এলাকার প্রতিবেশী। কার্জনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেলে বা রিকশায় আসা যাওয়ার পথে শহীদুল্লাহ হলটি দেখে কেমন যেন আপন মনে হতো। কারন একাত্তুরে এই হলটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার গল্প আমি শুনে এসেছি সেই ছোট বেলা থেকে।
দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরু হল সূর্যের আলো ফুটতেই। সকালে খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম সকাল ৭.৩০ টার মধ্যেই। আবার ও ভাত আর মুরগি, সাথে ডাল। পথে খাওয়ার জন্য বিস্কিট কিনে নিলাম সবাই কারণ মাঝে খাওয়ার জিনিস কেনার মত জায়গা পাওয়া যাবে না। হালকা ওষুধপত্র ও কেনা হল।
[জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে নিজের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমার এই ছেলেমানুষি লেখা দেবার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমার নিজের মন ভাল করার জন্যেই আমি বেশির ভাগ সময় লিখি এই শৈশব কথন। অনেকদিন কিছু লিখি না। আজকে একটু লিখতে ইচ্ছে হলো অনেকদিন পর। তাই শৈশব লেখা দিয়েই শুরু করলাম আবার। সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করছি।]
ট্রেন ভ্রমণ
আমার জন্ম সত্তুরের দশকের শেষের দিকে, স্বাধীন বাংলাদেশে। আমি বাহান্নর ভাষা আন্দোলন দেখিনি, ঊনসত্তুরের গনআন্দোলন দেখিনি, একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। আমি দেশের ইতিহাস পড়েছি বইয়ে। কিন্তু এসব ঘটনা আমার মনে জীবন্ত হয়ে আছে অন্য একটি কারনে। স্বাধীনতা উত্তর প্রজন্মের আর সবার মতো, আমি ছোটবেলা থেকেই এসব ঘটনার কথা শুনেছি বড়দের মুখে। ইংরেজিতে যাকে বলে, first-hand account; বাংলায় “প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
আমাদের প্রি-ক্যাডেট স্কুলের পূব পাশে আকাশী রঙের যে বিল্ডিংটা দুপাশের অন্যান্য হেঁজিপেঁজি দোকানপাটের মাঝখানে একলা একা দাঁড়িয়ে আছে, যাতে সারাটা সকাল বোরিং ক্লাশের পর ভীষণ ক্লান্ত হয়ে সারি সারি বইয়ের আলমারীর মাঝে মুখ লুকাতাম,- দ্বিতীয় শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার পর ১০ টাকা ফি দিয়ে ঐ পাঠাগারে ভর্তি হবার পর থেকেই যে সাহিত্যের প্রতি আমার ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে তা কিন্ত নয়। কিংবা, কবে কখন কীভাবে সাহিত্যের প্র
শৈশবের সব স্মৃতিই মধুর তবুও তার মধ্যে আলাদা করে ভাবতে গেলে মনে পড়ে যায় প্রথম প্রভাত ফেরীতে যাবার ভোর বেলাটি। তখন বয়স ঠিক কত ছিল আজ আর মনে নাই, শুধু মনে আছে সেদিন রাত থাকতেই ছোট চাচা ঘুম থেকে টেনে তুলেছিলেন। ঘুম ভেঙে অবাক হয়ে বলেছিলাম এখনও তো রাত। সেদিন বেশ ঠাণ্ডা ছিল রাজশাহীতে, ঘুম ভাঙ্গার পর লাল লাল ফুল তোলা ফ্লানেলের পোশাক পরে চাচার এক হাত ধরে বাইরে আসা। অন্য হাতে আগের সন্ধ্যায় চাচার সাথে শিরইল স্কুলে গিয়ে তোলা ফুল।