হাজার হ্রদের দেশ ফিনল্যান্ডে বসে লিখছি, তীব্র শীত পড়েছে বরাবরের মত, পেজা পেজা তুলোর মত তুষার পড়ার দিন আপাতত শেষ, এখন হাড় জমানো ঠান্ডার রাজত্ব। হিমাঙ্কের ৩০ ডিগ্রী নিচে, এত ঠান্ডায় তুষারপাতও বন্ধ হয়ে যায়। পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করছি আলগোছে, সাংবাদিক বন্ধু সীমান্ত দীপু আবার তাগাদা দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশে কোন উল্লেখযোগ্য জায়গায় ভ্রমণের উপর লেখা দিতে হবে।
তৃতীয় পর্বঃ কৌশলতত্ত্ব
মগবাজারে কোন এক জায়গায় টিউলিপ বলে এক সেলুন ছিল। ওইখানে আব্বা আমাদের তিন ভাইকে চুল কাটাতে নিয়ে যেতেন যখন আমি একবারে ল্যাদাবাচ্চা। মনে আছে ওরা প্রতিবার ছোট একটা রঙিন কার্ড দিত, একপিঠে দোকানের নামধাম অন্যপিঠে ক্যালেন্ডার। আমাদের তিন ভাইতে তুমুল ফাইট চলতো ঐ মহামূল্যবান কার্ড নিয়ে। তখন স্কুলে যেতাম একটা স্টীলের পেনসিলবক্স নিয়ে, উপরে সুপারম্যানের ছবি আর হিম্যানের স্টিকারওয়ালা। ঐ পেনসিলবক্সের ভিতর জায়গা হত কার্ডের। কোনদিন ক্যালেন্ডার দিনতারিখ দেখার জন্য ব্যবহার করেছি বলে মনে পড়েনা, দিন-তারিখ দেখার তেমন দরকারও হতনা। শুধু মাথায় থাকতো স্কুল বৃহস্পতিবার হাফ আর শুক্রবার পুরো ছুটি। ওইটে জানার জন্যে বালকের ক্যালেন্ডার প্রয়োজন নেই।
সকালবেলা যেদিন ক্লাস থাকে সেদিন ভার্সিটি যাবার সময় ছোট ছোট বাচ্চাদের যখন মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেতে দেখি তখন আগের দিনের এই সময়গুলোর কথা মনে পড়ে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, কিভাবে ১২টা বছর সকাল ৮টায় ক্লাস করতাম! অবাক লাগে ভাবতে। দেখি, ছোট ছোট মানুষ, কাঁধে বিশাল বড় বড় ব্যাগ!
.
…
[ গৌড়চন্দ্রিকা: নতুন সচলরা হয়তো জানেন না যে, এককালে সচলে নিয়মিত ইয়োগা'র আসর বসতো। এখন যাদেরকে বুড়ো সচল হিসেবে জানেন, তিনারা নিয়মিত ইয়োগা সেবন করিতেন। তাদেরকে সেই পুরনো দিনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়া আর নতুনদেরকে সেই পুরনো লিংকটা ধরিয়ে দেয়ার জন্যেই মূলত আজকের পর্বটা। তবে এটা বলে রাখা ভালো যে, পর্বটা নিয়মিত হবার সুযোগ নেই এজন্যেই যে, 'ইয়োগা' বইটার প্রকাশকের হাঁড়ি বানিয়ে রাখা চন্দ্রমুখ দেখা আমার জন্য কোনভাবেই উপাদেয় হবে না। অতএব সবাই সুস্থ থাকুন আর বেশি বেশি করে সচল থাকুন। ]
… ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে ঠিক সেই মেঘের মতো একটি ছেলেকে হেঁটে যেতে দেখা গেলো নবাবপুরের দিকে । দক্ষিণ থেকে উত্তরে । পরনে তার একটা সদ্য-ধোয়ানো সাদা সার্ট । সাদা প্যান্ট । পা জোড়া খালি । জুতো নেই । ...… সব আছে তার । ধবধবে জামা । প্যান্ট । পকেটে কলম । কবজিতে বাঁধা ঘড়ি । হাতে একটা খাতা । মুখের দিকে তাকালে ভদ্রলোকের সন্তান বলে মনে হয় । কিন্তু পায়ে জুতো নেই কেন ওর ? ...
লিখতে আমার কখনোই তেমন ভাল্লাগে না। কিছু পড়া এর চেয়ে অনেক বেশি আরামদায়ক। এ ব্যাপারে আমি পাক্কা ভোক্তা। অর্থাৎ কিছু উৎপাদন করি না, কেবল গিলি। তবে প্রিয় ঢাকা শহরকে নিয়ে লিখতে বসে বেশ অনেক কথা মনে চলে আসছে। লিখতেও খারাপ লাগছে না। ঢাকা ছেড়ে আছি প্রায় দুই বছর হতে চললো। পরিবারের লোকজন, আব্বু, আম্মু, বোন, বিচ্ছু ভাগ্নেটা, বন্ধু-বান্ধব; এদের চেয়েও ইট-কাঠ-ধূলা-বালির ঢাকাকে দেখতে ইচ্ছা হয় বেশি। নিউ মার্কেটের বইয়ের দোকানের চিপায় লেবু চা, সন্ধ্যাবেলায় ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে হাটাহাটি, শাহবাগের মোগলাই, ফুলার রোডের ফুটপাথ, বুয়েট ক্যাম্পাস, ইএমই ভবনের ছয়তলার বারান্দা – এইসব ‘তুচ্ছ’ জিনিষের স্বপ্ন দেখে প্রতিদিন ভোরবেলায় ঘুম ভাঙ্গে, আর দিন গুনতে থাকি। শালার পড়াশোনা, রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের থেকেও ভয়ংকর জিনিষ – শ্যাষ হয় না!