…
ভাতের গ্রাসটি ঠেলে মুখে পুরে দিতেই বিবমিষায় ভরে গেলো মুখ। মেটে আলুর মতো স্বাদ-গন্ধহীন শক্ত শক্ত কাঁচকলায় রান্না তরকারি। কাতলার মতো বড় কানকাঅলা মাছের মাথাটার চ্যাপ্টা দুধার দুদিকে রেখে লম্বালম্বি দু’ভাগ করার পর মাথার মধ্যে লোটাকাটা ছাড়া আর কিছু থাকে কিনা কে জানে। মোটাচালের ভাত আর কেন্টিনের বিখ্যাত হলদে কিন্তু অবয়বহীন ডাল। সব মিলিয়ে একসাথে মেখে যে পদার্থটা তৈরি হলো তার একট...
আমরা যারা ঢাকা শহরে বড় হয়েছি, এই শহরটাকে তারা বড়ই ভালোবাসি। প্রবাসে যখন কেউ জিজ্ঞেস করে, দেশের কোন জিনিসের কথা বেশী মনে হয়, আমি উত্তর দেই আমার ঢাকা শহর। আমার কথাতে মোটামুটি একই মন্তব্য পাই সবার কাছে, সেটা হল ‘সেই ঢাকা আর নাই’। সেই ঢাকা যে আর নাই, তা আমিও জানি। আমি অবশ্য আমার ছেড়ে আসা ঢাকাকে নিয়ে যতটা স্মৃতিকাতর হই, তার চেয়ে ছোটবেলার ঢাকাকে আমার অনেক বেশী মনে পরে।
আমার বাবা-মা দেশের ...
আগের পর্বেই কহিয়াছি নটরডেমের সবথেকে মেদামারা পুলাপানদের জায়গা হইত গ্রুপ ৩ এ। এই অধম ও গ্রুপ ৩ এর ছাত্র ছিল। এক সপ্তাহ মুখতার স্যার এর ক্লাস করিবার পর বাংলা ক্লাস অসহ্যবোধ হইতে লাগিল। বিদু্যৎ স্যার গণিত ভাল পড়াইতেন এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই । তবে কয়েকদিন পরে উনার জায়াগায় আওকাত আলী নামে একজন আসিয়া যান। একঘেঁয়ে কন্ঠে টানা কথা বলিয়া যাইবার পরে আমাদের বিরস মুখের দিকে তাকাইয়া স্যা...
ইদানিং ভারী ভারী সব বিষয়ে মাথা ভার হয়ে থাকে। সমাজ-সংসার, দেশ-জাতি ছাপিয়ে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের নানা টুকিটাকি নিয়ে হাজারো ভাবনা মনের মধ্যে কুটুস কুটুস করে কামড়ায়। জীবনে সুখের উপাদানের কোনো অভাব না থাকলেও অজানা-অচেনা সব বিষণ্ণতা যখন তখন আচমকা আক্রমণে ধরাশায়ী করে ফেলে। এগুলোকে আবার দুঃখবিলাসের তকমা লাগিয়ে চাইলেই ঝেড়ে ফেলা যায় না। অথচ অপেক্ষাকৃত বাজে অবস্থায় থেকেও চারদিকে কত সুখী ...
[justify]নীলা ওর তিন বছরের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে, এই জীবনে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে, কোন অপূর্ণতাই নেই। জীবন এত সুন্দর তা ওকে শিখিয়েছে শাহেদ, শাহেদ ওর পাশে না থাকলে জীবন চলার পথটা হয়তো এতটা সহজ আর সুন্দর হতোনা। মাঝে কখন যে অনেকটা সময় কেটে গেছে তা একটি বারের জন্য ও টের পায়নি। জীবনের প্রতিটি মূহুর্তকে ও উপভোগ করেছে পরিপূর্ণ ভাবে। প্রতিটি দিন ও শাহেদকে আবিষ্কার করে...
[justify]
বাইরে মরা স্যাঁতানো একটা দিন।
গুগলে ঠোকাঠুকি জানিয়ে দিলো, আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হবে ১৯ ডিগ্রি, এখন ১৩।
বৃষ্টি হবে,আরও ঠাণ্ডা পড়বে।
ঘরের ভেতর হিটার চালিয়ে বসে আছি।
আবহাওয়ার নিম্নগামিতা মনোজগত্কে কতটা প্রভাবিত করে জানিনা, প্রবল ব্যস্ততা আর অসীম অনিশ্চয়তার মধ্যেও মন খারাপের বিষণ্ণ সুর একটানা বেজে চলছে।
মাথার ভেতর কেবল বাজছে - অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা -- --- ---
হয়তো ছায়ানটে...
[justify]বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই ১৯৯৮ সালে, ক্লাস শুরু হয় আগস্ট মাসে, একদিকে বিশ্বকাপ খেলা দেখি সারারাত জেগে, আর দিনের বেলায় ক্লাসে এসে ঝিমাই, ঘুম কেটে গেলে হা করে তাকায় থাকি। মনে হয়, ক্লাসে আমি একমাত্র আবাল, শিক্ষকেরা আইসা কী সব পড়ান, কিছুই বুঝি না, এইদিকে পোলাপাইন মহা আগ্রহে মাথা ঝাকায়, ক্লাস নোট লিখে আর ফটফট কইরা কী সব বলে। দিনে দিনে হতাশ হইতে থাকি, আমি কিনা ছোট বেলা থেকে ...
ছেলেবেলায় গ্রামে বেড়াতে যাওয়াটা ছিলো আমাদের জন্য দ্বিগুণ আনন্দের! কারণ পথে নানাবাড়ি থামা হতো দু’দিন। নানাবাড়ি মফস্বল শহর। প্রধান সড়কের শহুরে বাউন্ডারি পেরোলেই বাড়িটি। একে ঘিরে ক্ষেত, পুকুরঘাট আর সর্পিল রাস্তা। সেই মেটে রাস্তার মাঝ বরাবর ঘাস ক্ষয়ে গিয়ে তৈরী হওয়া সিঁথি পথ ধরে অনেকদূর দৌড়ালে চলে যাওয়া যায় একদম শেষ প্রান্তে, আবার লোকালয়ে।
সারাদিন উঠান আর ক্ষেতের প্রান্ত ধরে ...
প্রফেসর এমেরিটাস বুলহাওয়ার বেশ অমায়িক। ছিপছিপে সদাহাস্য যত্ন করে ছাঁটা দুধসাদা দাড়িওয়ালা পরিপাটি চেহারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকী একাডেমিকেরা যেখানে টুইডের জ্যাকেট আর প্রজাপতি টাই দিয়ে সপ্তাহ-মাস কাবার করে দেন, সেখানে বুলহাওয়ার আসেন নিত্যনতুন দুই বা তিনপ্রস্থের উল বা রেশমি স্যুট পরে। সাথে প্যাস্টেল রং এর রেশমি টাই, নয়তো এরশাদ দাদুর মত গলাবন্ধ রু...
আমাদের স্কুলের মাঠের এক পাশে বেশ কিছু ডাবগাছ ছিলো। সকালবেলা কিছু পিচ্চি সাইজের ঝরে পড়া ডাব গাছের নিচে পড়ে থাকত, আর আমি স্কুলে ঢোকার সময় সেগুলোরই কয়েকটা হাতে নিয়ে ক্লাসের দিকে হেঁটে যেতাম। এমনই এক ডাবকুড়ানো দুপুরে ক্লাসে ঢুকে এক নতুন ছেলের দেখা পাই। হ্যাংলামতো ভালোমানুষ চেহারার শ্যামলা এই ছেলেটাকে প্রথমদিন তেমন আহামরি কিছু মনে হয়নি। কিন্তু দিন যত যায়, তত এই ছেলের তেলেসমতি বাড়...