ডুমুর পাখি ও ফুল

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব ময়ূখ রিশাদ [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১১/০৪/২০১২ - ৯:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রঙ খসে গিয়ে, লতা-পাতায় আচ্ছাদিত হয়ে বাড়িটি মৃতের ছায়া ধারণ করে আছে; রঙচটা বিল্ডিংটির ঠিকপাশে রয়েছে আরেকটি আভিজাত্যহীন তিনতলা মেসবাড়ি। সেখানে থাকে বেশ কয়েকজন যুবক; কেউ চাকরি করছে, কেউ পড়াশোনা। প্রায় বিকেলবেলা কিংবা লোডশেডিংময় কোনো রাতে যুবকেরা ছাদে গিয়ে বসত, এখনো বসে তবে আগের তুলনায় অনেক কম।
ছাদ থেকে তারা এই মৃত বাড়ির ছাদে ফেলেছে অনেকগুলো সিগারেটের শেষাংশ। কেউ দাবি করতে পারবে না যে তারা ঠিক ছাদের উদ্দেশ্যেই ফেলেছে বরং বলা যায় সিগারেট শেষ হয়ে যাওয়ার পর মূল্যহীন কাগজের টুকরোটি তারা ফেলে দিয়েছে, যেমন করে অনেকেই তাদের ফেলে দেয় কাজ শেষে; সিগারেটের টুকরোগুলো তখন নিজের ইচ্ছেয় পাশের বাড়ির ছাদে দিয়ে পড়েছে। একদিক দিয়ে চিন্তা করলে তারা ভাগ্যবান কেননা তবু তারা একটা ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে, অনেক মানুষের কপালেই যে সৌভাগ্যটি জোটে না।
আধ-ঘন্টা আগেও হাবিব ভাবেনি সে ছাদে এসে দাঁড়াবে কিন্তু এখন দাঁড়িয়ে আছে। সে চারপাশটা দেখতে থাকে। অনেকবার দেখেছে আগে, তবে গত একবছরে ভালো করে কখনো দেখা হয় নি। ভালো করে না দেখার জন্য ওকে দোষ দেয়া যাবে না। অকারণে এ দেশের মানুষ পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। একসময় দেখত, দেখতে দেখতে বিকেলে পার হয়ে রাত হয়ে যেত। শুধু হাবিব না, মেসের অনেকেই দেখত। এমনকি বাড়ি থেকে দূরের ছাদগুলোতেও ভিড় লক্ষ করা যেত। তখন ছাদের কোথাও রঙ উঠে গেছে কি’না, রেলিংটা ভেঙ্গে আছে কি’না এসব দেখা হতো না।
ঘটনাক্রমে এই মুহূর্তে ছাদে দাঁড়িয়ে হাবিবের মনে হলো ভৌতিক পরিবেশে চলে এসেছে সে। নারকেল গাছের বিশাল বড় বড় পাতা শুকিয়ে গিয়ে জরাজীর্ণ হয়ে আছে, ছাদের গ্রিল ধরে একটা ঘুড়ি আটকে গিয়ে হাঁসফাস করছে, অজস্র সিগারেটের টুকরো, পুরোনো ছেড়া-জামা,ব্যবহৃত কনডম যা এলাকার মানুষের যৌন সচেতনতার ইঙ্গিত বহন করে, বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর একটি ধূলমাখা চিলেকোঠা ঠাঁয় বসে আছে। চিলেকোঠা তার ভেতরে ধারণ করে আছে পুরোনো পোকা খাওয়া খাট আর ছোট্ট একটি টেবিল। একটি নষ্ট দেয়াল ঘড়ি থেমে আছে ঠিক বারটার কাটায়।
অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারে না হাবিব এই চিলেকোঠায় কে থাকত। খাটের উপর থাকা ছেড়া শার্ট দেখে তার মনে হয় হয়ত কোনো ছেলে থাকত এখানে। কেন পরিচয় হয় নি? নাকি পরিচয় হয়েছে, মনে নেই? এক বছর ভুলে যাবার জন্য খুব বেশি সময় না, আবার কম সময় না। অনেক কিছুই ভুলে গেছে কিন্তু একজনের কথা ঠিক মনে আছে। তাকে ভুলতে গেলে এক, দুই, তিন বছর হয়ত কম হবে কিংবা আদৌ কোনোদিন ভোলা হবে না।
বাড়ির সামনে, সীমানার ভেতরে একসময় ফুলবাগান সগৌরবে সৌরভ ছড়াত আর এখন সেখানে ঝোপ, লতা-পাতা মাখা জীর্ণ ঝোপ। ঝোপের আড়ালে সাপের বাসা আছে কি’না সেই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার মতো নির্ভরযোগ্য কাউকে পাওয়া যায় না। আজ সমস্ত বাড়ি ঘুরে এসে হঠাৎ করে মানুষের ভিড়ে ঝোপগুলোর ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে থাকার সময় হাবিবের মনে হলো, এইখানে সাপ থাকা বিচিত্র কিছু না এবং তখন-ই তার স্মৃতিতে নাড়া দিয়ে যায় একটি শোনা কথা যা সে রাইসার কাছ থেকে শুনেছে। রাইসা যখন অনেক ছোট তখন এই বাড়ির দারোয়ান সর্বদা হাতে লাঠি নিয়ে ঘুরে বেড়াত এবং সেই সাথে তার আরো মনে পড়ে যায় রাইসা একবার সাপের কামড় খেয়েছিল। সুতরাং হাবিব কিছুটা ভয় পেয়ে ভীড় থেকে বের হতে চেষ্টা করে।
আপনাদের বাসার বাগানটা অনেক সুন্দর। কিন্তু পেছনে জঙ্গল কেন? সাপ কিংবা অন্যকিছুর ভয় নেই?
উহু, ভয় কিসের? আর যাকে একবার সাপে কামড়ায় তার সব ভয় চলে যায়।
হাবিব অবাক হয়ে গিয়েছিল।
এত অবাক হচ্ছেন কেন? মানুষকে সাপে কামড়াতে পারে না?
কথোপকথন স্পষ্ট মনে পড়ে যায় হাবিবের।

এই বাড়িতে কয়েকমাস আগেও মানুষ ছিল। এখন কেউ থাকে না। যে কেয়ারটেকারের দায়িত্বে এই বাসা তাকেও খুব একটা দেখা যায় না। এই মফস্বল শহরে এই প্রাসাদসম বাড়িটি কিভাবে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে তা বিস্ময়কর। যেখানে বাংলাদেশে মালিকানাধীন থাকা অবস্থায় বাড়ি দখল হয়ে যায় সেখানে এই লোভনীয় বাড়িটিতে কেউ হামলে পড়ছে না তা দেখেও বিশ্বাস করা কঠিন। কিছুক্ষণ আগে বাড়ির ছাদের আবিষ্কৃত কনডম অবশ্য এই ধারনা দেয় যে কেউ দখল করে না নিলেও অনেকেই নিজের সুবিধার্থে বাড়িটি বেশ ভালোভাবেই ব্যবহার করেছেন। তবে বাড়ির ছাদেই কেন কনডম পাওয়া যাবে? কেউ নিশ্চয় ছাদে গিয়ে কিছু করে না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে হাবিবের মাথায় প্রশ্নটি আসে না।
পাশের বাড়ির তরুণদের কাছে বিষয়টি একাধারে উৎসাহব্যাঞ্জক এবং বেদনাদায়ক। উৎসাহব্যাঞ্জক—কেননা এলাকায় মাস্তান হিসেবে তাদের পরিচয় না থাকলেও খুব সহজেই এই মেসে থেকে টাকা গোনার চেয়ে পাশের বাড়িটিতে গিয়ে উঠতে পারে, কেউ তাদের বাধা দিবে না; এলাকার মানুষের নিশ্চুপ কৌতূহল তাই ইঙ্গিত করে। আর যেহেতু এত সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও তারা যেতে পারছে না এজন্য বেদনাদায়ক বলে মনে করা শ্রেয়, তবে এই কথাটি হাবিব কিংবা অনেকেই ভেতর থেকে মানে না অথবা তারা মানতে চায় না। হয়ত বাড়িটি দখল করে নেবার চিন্তা যখন তাদের মনে আসে তখন কোনো সৎচিন্তা তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে অথবা রাইসার কথা ভেবে তারা উদাস হয়ে পড়ে। আজ তাই হুট করে যখন একট্রাক আসবাবপত্র এসে থামে বাড়িটির সামনে তখন কেবল এই তরুণেরা নয় সব ধরনের মানুষ এসে বাড়িটির সামনে ভীড় জমায়।
নিজের অজান্তেই হাবিব বলে উঠে, এখানে সাপ থাকতে পারে। আপনারা ঝোপ-ঝাড় থেকে দূরে সরে দাঁড়ান। জনতা নড়েচড়ে দাঁড়ায়।
পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে ফেলা এক লোক বলে, সাপ? এই বাড়িতে সাপ ও আছে?
লোকজনের ভেতরে তর্ক বেধে যায়। কেউ বলে আছে, কেউ বলে নেই। আর হাবিব চুপচাপ সেখান থেকে বের হয়ে এসে মোড়ের চা দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
দোকান থেকে তাদের মেস কিংবা রাইসাদের বাসা কোনোটাই দেখা যায় না। তবে বসামাত্র-ই দেখতে পেল আরেকটি ট্রাক এসে ঢুকছে।
হাবিব ভাই, কাহিনিটা কী? হুট কইরা মানুষ আইল কেমনে?
হাবিব দার্শনিকের মতো ভাব নিয়ে বলে, মানুষ আসবে দেখেই তো খালি হইসিল।
তা ঠিক। চুপ হয়ে যায় চা বিক্রেতা। আর হাবিবের মন ছুটে যায় অতীতে।

ওরা সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে বাড়ি ফিরত। কেউ টিউশনি আর পড়াশোনা একসঙ্গে চালিয়ে, কেউ অল্প বেতনের চাকরির পেছনে ছুটে, কেউ বেকারত্বের বেদনা পিঠে রেখে। লোডশেডিংময় এলাকায় প্রায় বিকেলে, সন্ধ্যায় কারেন্ট থাকত না। তাদের অবসরে সুর নিয়ে রাইসা ছাদে হাঁটাহাঁটি করত। কখনো ছোট ভাই এর সাথে, কখনো একা। আশেপাশে এত মানুষের উৎসাহ তাকে নিয়ে, সে দেখেও দেখত না। তবু তার নিঃসঙ্গ চলন অনেককেই স্বপ্ন দেখাত। আর বেঁচে থাকার জন্য স্বপ্ন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এ কথায় মেসের কেউ দ্বিমত পোষণ করত না, করে নি এবং করবে না।
রাইসারা এ বাড়ি থেকে চলে যাবে এ কথা ভাবেনি হাবিব ও তার বন্ধুরা। ভাবার প্রয়োজন ছিল না এবং তারা ভাবতে চাইত না যদিও ভাবাটা স্বাভাবিক ছিল। তাদের নিরানন্দ জীবনে এই দুইজন ছিল তাদের আনন্দের অন্যতম উপলক্ষ্য। যার যত কাজ থাকুক না কেন বিকেলটা সবাই ছাদে থাকার জন্য বরাদ্দ রাখত। বন্ধুতে বন্ধুতে মাঝে মাঝে ঝগড়া হতো কিন্তু কখনোই সীমা ছাড়িয়ে যেত না কেননা যুবকের প্রত্যেকেই তাদের সীমা সম্পর্কে জানত। বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়ানো যায় না, এ কথাটা তারা মানতে চাইত না। তবে বাস্তবের সাথে পুরোপুরি সম্পর্কহীন হয়ে যায় নি বলে সত্যটা তাদের মনে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতো একঘেয়ে সুরে থেমে থেমে বেজে চলত।
এদের ভেতরে হাবিব-ই কিভাবে যেন রাইসার অনেক কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। অনেক কাছাকাছি মানে প্রেম হয়ে যাওয়া নয়, এমনকি বন্ধুত্ব নয়; মাঝে মাঝে কথা হতো। হাবিব একদিন রাইসাদের বাড়ির বাগানে বসে চা খেয়ে এসেছিল। ব্যাপারটি বন্ধুমহলে তাকে ঈর্ষার মুখে ফেলে দিলেও হাবিব তার থোড়াই কেয়ার করত।
সেই সময়ে হাবিবকে বাংলা সিনেমার ভক্ত হতে দেখা যায়। কেউ কেউ এটাকে রুচির অধঃপতন ভাবলেও হাবিব তা ভাবত না। বাংলা সিনেমাগুলো দেখে সে সাহস নিত। গরীবের ছেলের সাথে বড়লোকের মেয়ে প্রেম হয়ে যায়, বিয়ে হয়ে যায়; হাবিব তা দেখে ভীষণ অনুপ্রাণিত বোধ করত। বেশিদিন সে কল্পরথে ভেসে বেড়াতে পারে নি। একদিন হুট করে শুনে রাইসারা চলে যাচ্ছে। ঠিকানা আমেরিকা। রাইসার কাছে শুনেছিল এই খবর। মনের একদম গভীরে গিয়ে আঘাত হেনেছিল।
এই যে শুনুন, আমরা চলে যাচ্ছি।
কোথায় যাচ্ছেন? হাবিব ভেবেছিল হয়ত যাচ্ছে ঘুরতে কিংবা কোনো কাজে ঢাকায়।
কোথায় আবার। মামাদের কাছে, আমেরিকা।
কথা ছড়াতে বেশি সময় লাগে না। একসময় সবাই জেনে যায়। আর বিকেলবেলা ছাদে ভিড় কমতে শুরু করে, সমানুপাতিক হারে মোড়ের দোকানে বাড়তে থাকে সিগারেট বিক্রি।
রাইসা চলে যাবার পর জীবনের প্রথম সিগারেট খেয়েছিল হাবিব। আজ প্রায় একবছর পর কততম সিগারেট খাচ্ছে তা ঠিক হিসেব করে বের করতে পারে না। এর মাঝে কত কিছু ঘটে গেল। রাইসাকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন আড়ালে চলে গেল আর প্রতিমুহূর্তে বুকে আঁচড় দেবার জন্য হাবিবের বোন লিপি স্বামীর ঘরে মার খেয়ে ফিরে এলো। তার মা তাকে তাগাদা দেয় বিয়ে করার জন্য, লিপির স্বামীর সাথে গিয়ে কথা বলার জন্য; সে কিছুই করে না বরং আগের থেকেও উদ্দোমহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। কিছুটা উত্তেজিত কিংবা হাবিবের জীবনে গতি আনার জন্যই বোধহয় একটি প্রাইভেট কার এসে ঢোকে গলিতে। কালো কাচের আড়ালেও হাবিব স্পষ্ট দেখতে পায় রাইসাকে। ওরাই ফিরে এসেছে।

#

সকাল দুপুর হয়ে সন্ধ্যার গলিতে ঢুকে পড়ে। তার আগে জানিয়ে দিয়ে যায় সবাইকে রাইসা ফিরে এসেছে। কেন ফিরে এসেছে এই নিয়ে খানিক জল্পনা কল্পনা শেষে যে যার ঘরে দুপুরনিদ্রা দিতে যায় অথবা কাজে চলে যায় কোনো প্রত্যাশিত উত্তরে পৌছাবার আগেই।
হাবিব বিস্মিত হয়ে খেয়াল করে, সাময়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে খবরটি কিছুক্ষণের ভেতরে কোনো খুপরি ঘরে গিয়ে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে বসে থাকে।
এই শুনেছিস রাইসারা এসেছে? হাবিব প্রশ্নের সুরে নয় বরং নিজের চোখে দেখা সত্যের উপর দাঁড়িয়ে থেকেও আরেকজনের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে নিতে চায়। কেননা হঠাৎ করে তার চলে যাওয়ার কথা ছিল না, এভাবে ফিরে আসার কথাও ছিল না।
হুম, শুনছি। স্বামী তাড়ায় দিসে। চরিত্র খারাপ তো।
হাবিব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। রাইসার চরিত্র খারাপ?
নাইলে কী? মনে নাই, কেমনে আমাদের সাথে ছাদে দাড়াইয়া শরীর দেখাইত?
হাবিব বন্ধুর কথায় আরো অবাক হয়। বিস্মিত হয়ে সে খেয়াল করল, এই ধরনের কোনো ঘটনার কথাই তার মনে পড়ছে না। ছাদে বিকেলে রাইসা হেঁটে বেড়াত আর ওরা দাঁড়িয়ে থেকে দেখত, দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করত। ক্রমেই একটা ক্রোধ ছেয়ে ফেলতে থাকে হাবিবকে। বলতে ইচ্ছে করে, তোদের পাত্তা দেয় নাই তো এজন্য এইসব ফাউল কথা বলতেছিস। বলে না সে। গত কয়েকবছরে একটা জিনিষ শিখেছে সবসময় ন্যায্য কথা বলতে নেই।
স্বামীর ঘর থেকে ফিরে আসার কারণেই হয়তবা রাইসার কথা সন্ধ্যা হবার আগেই অনেকেই ভুলে যায়, যদিও পূর্বে ভিন্ন পরিস্থিতি ছিল। হাবিব ভুলে না। চুপচাপ একা ছাদে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন তার মনে পড়ে চিলেকোঠায় ঘড়ি থেমে আছে বারটার কাটায়। তার জীবন থেমে আছে কোথায়?

#

দিন চলে যেতে থাকে, হাবিবের মা’র বিলাপ বাড়তে থাকে।
তুই কেমন বড় ভাই? লিপির জন্য কিছু একটা কর। ওর ডিভোর্স আইনা দে। নাইলে জামাই এর সাথে কথা বল। মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো যায় না।
হাবিব মা’কে বলে, আমি খারাপ বড় ভাই।
রাত বাড়তে থাকে, সিগারেট পুড়তে থাকে, মানুষ থাকা স্বত্তেও রাইসাদের বাড়ির ছাদ এলোমেলো হয়ে থাকে, ঘড়ি থেমে থাকে, ময়লা লেগে থাকে।
হাবিব নিজেকেই বলে, তুই কেমন প্রেমিক? প্রেমের জন্য কিছু করতে পারিস না?
নিজেকে সে উত্তর দেয়, আমি কখনো প্রেমিক হতে পারি নি। আমি ঈর্ষাকাতর একজন সাধারণ যুবক।
এখন আর ঈর্ষার কিছু নেই। মেয়ের অবস্থা ভালো না। গিয়া সাপোর্ট দে। কাজ হয়ে যাবে।
আগে কেউ তাকে ছুঁয়েছিল।
হাবিব থমকে থাকে কোনো অজানা কাটায়।

একদিন দেখা হয়ে যায়, একদিন ভোরবেলা।
কেমন আছেন? রাইসার প্রশ্নে চমকে উঠে হাবিব। ওদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল।
ভালো। আপনি?
রাইসা হাসে। হেসে বলে, ডুমুর পাখির মতো।
রাইসা, কার সাথে কথা বলিস? ভেতরে আয়। সে ভেতরে চলে যায়। হাবিব জিজ্ঞেস করতে পারে না, ডুমুর ফুলের কথা শুনেছি কিন্তু ডুমুর পাখি কী?
কেউ একজন দেখে ফেলে ওদের দুজনের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা।
কী, মাগীর জ্বালা বাড়ছে নাকি?

ডুমুর পাখির মতো কথাটা বাজতে থাকে হাবিবের কানে। অদৃশ্য পাখিকে ডুমুর পাখি বলে? রাইসার পাখি হতে ইচ্ছে করে? হঠাৎ ডুমুর ফুল বুকপকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে হাবিবের। রাইসাকে দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে এই নাও ফুল। ফুল দিয়ে পাখি বানিয়ে নাও। কিছু ফুল সে রেখে দিবে লিপির জন্য। লিপিকে দিয়ে বলবে, এই নে ফুল। পাখি হয়ে উড়ে যা।
আবার আরেকটি বিষণ্ণ রাত নেমে এলে, হাবিব খেয়াল করবে ডুমুর ফুলবিহীন বুকপকেটে সিগারেটের ভাঙ্গা টুকরো। সে বুঝতে পারবে, কেউ ডুমুর পাখি হতে পারবে না; যেখানে তার নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার আর রাইসাদের উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার মিলেমিশে এক হয়ে যায়।
-------------------
প্রথম খসড়া


মন্তব্য

সাত্যকি. এর ছবি

গল্প না, গল্প বলার ঢং টাই তোমার মূল শক্তি। বিষন্ন মেদুর। সেই কারণে সবটুকু গল্প মরমে না পৌছালেও গল্পের শরাবে মাতাল হতে অসুবিধা হয়না।
জোরসে চালাও।

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

তোমার মন্তব্য পাওয়ার পর খেয়াল করলাম, নিচে লিখে রাখসি প্রথম খসড়া। এটা খুব সম্ভবত এই গল্পটা সম্পর্কে নিজের সন্দেহ থাকায় পার পাওয়ার অবচেতন মনের চেষ্টা। মনমতো হয় নি মন খারাপ

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

ক্যাপ্টেন নিমো এর ছবি

তোর গল্প গুলা এতো দুঃখ মাখা সুরে বলিস ক্যান?
গল্প জুড়ে যেন কালো মেঘের সাত কাহন।

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

এইটা ভালো হয় নাই রে। রিপিটেশন হয়ে গেসে

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এই গল্পটার মধ্যে একটা পরিচিত চিত্র দেখলাম। বাংলাদেশের পাড়া মহল্লার ঘটনাগুলো প্রায় এরকমই। কিন্তু আপনার লেখার স্টাইলটা অন্যরকম। ভালো লাগে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

আমার আগেও একি রকম বেশ কয়েকটা গল্প আছে মন খারাপ

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

চলুক । এখন নিয়মিত হৈস...............


_____________________
Give Her Freedom!

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

দেখি। লেখায় না হলেও মন্তব্যে হবার ইচ্ছে রাখি

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

কর্ণজয় এর ছবি

আপনার লেখার সাবলীল ভঙ্গিটা খুবই সুন্দর। ডায়লগ খুবই মাননসই। ডায়ালগের মধ্যে একটা ক্যারেক্টারটা পাওয়া যায়। আপনার বর্ণনা শক্তিশালী। বর্ণনা এবং ডায়লগের যে সমস্বয় সেটা সহজ।

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগলো

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

কিছু কিছু বাক্য মনের ভেতর গেঁথে গেলো।
তবে দ্বিতীয় খসড়াতে এটার সাইজ আরেকটু ছোট হয়ে আরো টাইট একটা গল্প হয়ে যেতো নির্ঘাত। হাসি

আপনার নাম দেখে জানি না কেন আপনাকে অনেক ছোট্ট একটা ছেলে ভেবেছি, রিশাদ।
এখন মনে হচ্ছে, তার চেয়ে আরেকটু বড়। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

আমি খুব বেশি বড় না কিন্তু হাসি

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।