টু বি কন্টিনিউড

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব ময়ূখ রিশাদ [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২৯/০৭/২০১২ - ৫:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

#বাইরে ঝুম বৃষ্টি। অর্ধেক শহর ডুবে গেছে। ডুবে ডুবে হাঁটছে মানুষ, চলছে রিকশা। থেমে আছে সিএনজি, প্রাইভেট কার। প্রকৃতি যন্ত্র পছন্দ করে না। তাই হয়ত তাদেরকে থামিয়ে রেখেছে। মানুষ যন্ত্র অভ্যস্ত। তাই হয়ত একটু আড়াল খুঁজে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ কখন বৃষ্টি থামবে, কখন পানি কমবে। সবার অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। যেমন নেই হালিশহরের জনৈক যুবকের। জিইসি মোড়ে এসে আটকা পড়েছে সে, গন্তব্য মেডিকেল। তাকে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে যে তার বাবা হাসপাতালে ভর্তি, গ্যাংগ্রিন হয়েছে, পা কেটে ফেলতে হবে। কিছুক্ষণ পর অপারেশন। তাই সে ছুটছে। একসময় সে আর অপেক্ষা করতে না পেরে, বহু বর্ষার স্পর্শ প্রাপ্ত তার পুরোনো ছিড়ে যাওয়া প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে রওনা দিবে এবং গন্তব্যে পৌছে যাবে। এটা অবশ্য ভিন্ন কথা যে তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করে না, তার পৌছানো নিয়ে কেউ চিন্তিত হয় না। যুবক জানে, সবাই একা, অনেক বেশি একা।
কাঠখড় পেরিয়ে ওয়ার্ডে এসে উপস্থিত হয় সে। বাবাকে খুঁজে বের করে বারান্দায়। একজন অল্পবয়স্ক ডাক্তার তাকে ডেকে পাঠায়।
আপনার বাবার আজকে অপারেশন, আপনি জানেন?
জ্বি স্যার, সে জন্যই আসছি
সে জন্য আসছি মানে কী? পা পচায় নিয়ে আসছেন, এদিকে রক্ত লাগবে, তার কোনো ব্যবস্থা হয় নাই। মাইরে ফেলতে চান?
যুবক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। যুবকের জানার কথা না, অল্প বয়স্ক ডাক্তারটি একজন ইন্টার্ন এবং সে অল্প ক’দিনেই জীবনের এত নিষ্ঠুরতা দেখে ফেলেছে যে খুব অবলীলায় মৃত্যুর কথা বলে ফেলতে পারে।
রক্তের গ্রুপ জানেন?
যুবক চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
ডাক্তারটি কাগজে খসখস করে কিছু লিখে দিয়ে বলে, নেন এইটা নেন। এটা নিয়ে ব্লাড ব্যাংকে যাবেন। ওরা রক্তের গ্রুপ বের করে দিবে। দুই ঘণ্টার ভেতরে রক্ত জোগাড় করবেন। বুঝতে পেরেছেন?
যুবক মাথা ঝাঁকায়।
যুবক তার বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আব্বা, অপারেশন হবে। আমি রক্ত জোগাড় কইরা নিয়া আসি।
সুস্থ মানুষের চোখ কথা বলে আর অসুস্থ মানুষের সমস্ত দেহ কান্না করে। বাবা বললেন, আমি অপারেশন করাবো না।
অতঃপর ছেলেটি ডাক্তারদের জানাতে যায়। ডাক্তাররা বলে দেয়, রোগী বাঁচবে না অপারেশন না করালে।
ছেলেটি গিয়ে বাবাকে জানায়।
আব্বা, করাইতে হবে। নাইলে তোমাকে বাঁচানো যাবে না।
আগের চেয়ে আরো নির্লিপ্তভাবে তিনি জবাব দেন, না। পা কাইট্যা কারো মাথায় থাকতে চাই না।
ছেলেটি এসে তার বাবার হাত ধরে, আমি সব দেখতেসি। তুমি চিন্তা কইরো না।
এবার তিনি কিছু বলেন না। হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেন কিন্তু শরীরে কুলোয় না। চোখ বন্ধ করে ফেলেন।

দুইদিন পর গিয়ে এই যুবক এবং তার বাবাকে দেখা যায় না, তারা অপারেশন করেছিল নাকি এই ব্যাপারটা জানা যায় না, যদিও খাতা আছে, অপারেশন করালে সেখানে অবশ্যই লেখা থাকবে তবু এই ঝামেলায় কেউ যাওয়ার কোনো মানে নেই। এমন অজস্র ঘটনা প্রায় ঘটে, আর যা বেশি ঘটে তা নিয়ে মানুষ মাথা ঘামায় না।

#
এবার আমরা যেই বারান্দায় বৃদ্ধ বাবাটি ভর্তি ছিলেন সেদিকে একটু চোখ তুলে তাকাতে পারি।

বারান্দাটি দুর্গন্ধ নিয়ে ক্লান্ত বৃদ্ধের মতো অভিযোগ না করে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। অবশ্য বারান্দার বর্তমান অধিবাসী বৃদ্ধ কিংবা তরুণদের অভিযোগের যেমন শেষ নেই, তেমন অভিযোগ শোনার কেউ নেই। বারান্দাটি লম্বায় বেশ বড়। মূল ওয়ার্ডে যাদের জায়গা হয় না, তাদের স্থান হয় এখানে। একপ্রান্তে বাথরুম, অন্যপ্রান্তে স্টোর রুম, মাঝে এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা সাতটি বেড।
এই মুহূর্তে রোগী এবং রোগীর সঙ্গের লোকজন মিলে পনেরো জনের মানুষের অবস্থান। তাদের কেউ কেউ নাকে রুমাল কিংবা হাত চেপে রেখেছে। একজন কে বলতে শোনা যায়, বাথরুম পরিষ্কার করার মানুষ নাই নাকি! রাখব না এইখানে আব্বাকে। কথাটা সে বলার জন্য বলে, কেননা অন্য কোথাও নিয়ে যাবার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। নেই দেখেই এখানে এসেছে।
যে কথাটি বলে সে নাকে রুমাল চেপে বারান্দা থেকে বের হয়ে যায়। আশেপাশে থাকা মানুষ ভাবে খুব সম্ভবত সে আর গন্ধ সহ্য করতে পারছে না। যদিও মূল কথা তা ছিল না। সে ডাক্তারকে খুঁজতে থাকে। পেয়েও যায় একজনকে। জানতে চাই, স্যার আমার আব্বা আর কয়দিন আছে?
কোন বেড?
ঐ যে স্যার, বারান্দায়।
অবস্থা ভালো না। অপারেশন করতে হবে। তার আগে একটু ঠিক হতে হবে। এখন অপারেশন লোড নিতে পারবে না।
মনে মনে ভাবে, অপারেশন লোড করে কেমনে? তার বাবার মোবাইল নাই। ফ্লেক্সিলোড করে নাই জীবনে, অপারেশন কেমনে লোড করবে? মুখে বলার সময় ছেলেটাকে ইতস্তত করতে দেখা যায়। সে থেমে থেমে বলে, না টাকা পয়সার সমস্যা। আব্বারে বাসায় নিয়া যাই। মইরা গেলে, গেল গা।
ডাক্তার নির্বিকার ভাবে বলে, আপনার ইচ্ছে। নিয়ে গেলে সই দিয়ে নিয়ে যাবেন।
ছেলেটা বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। সে একবার বাইরের রাস্তার দিকে তাকায়, একবার বারান্দায়, একবার ছাদে। বুঝতে পারে না যেন কোনদিকে যাবে। কিছুক্ষণ ভেবে আবার বারান্দায় চলে যায়। এবার তাকে আর মুখে হাত চাপা দিয়ে রাখতে দেখা যায় না। কে জানে, জীবনের দুর্গন্ধ পরিবেশেরটাকে সরিয়ে দিল কি’না।
এইমাত্র একজন বমি করে ফ্লোর ভাসিয়ে দিল। বমি করার জন্য নিচে একটি প্লাস্টিকের বোল থাকার কথা থাকলেও নেই। আবার বিছানায় ছারপোকা থাকার কথা না থাকলেও আছে। তাদের দেখা যায় না। কুটকুট করে কামড়ায়। এই থাকা না থাকার বাস্তবতার মাঝে ফ্লোরকে ভিজে যেতে হয় আঠালো বৃষ্টিতে। ফ্লোর রেগে ওঠে, অনেকটা মানুষের মতো নিস্ফল্ভাবে। ছুটে এসে ধমক লাগায় ওয়ার্ড বয়। অথচ বিকল্প কোনো পথ বাতলে না দিয়ে চলে যায়।
পাশের বেডে কাঁতরে ওঠে অন্য একজন। প্রথম ছেলেটি চিৎকার দিয়ে বলে, ধুর। নাকের শান্তি নাই, কানের শান্তি নাই, মনেও শান্তি নাই। তার অসুস্থ বাবা মিনমিন করে কিছু বলার চেষ্টা করে। সে শোনে না। বলতে থাকে, বলতেই থাকে।
লোকটি জবাব দেয়। ব্যথা করতেসে, হাসমু নাকি? কথাটা বলতেও কষ্ট হয়, জোর পায় না। তরুণের গলার জোরের কাছে প্রায় হারিয়ে যেতে থাকে তার উত্তর।
আবার ওয়ার্ড বয় ছুটে আসে। এবার চোখেমুখে কিছুটা ভীতি নিয়ে। তবে তাদেরকে নিয়ে নয়, এটি তার পরের কথাটি শুনলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। বড় ডাক্তার রাউন্ডে আসতেসে। রোগী ছাড়া সবাই বাইরে যান।
খুব দ্রুত-ই ফ্লোর মোছা হয়ে যায়, বাথরুম পরিষ্কার হয়ে যায়। দুর্বিষহ গন্ধ নিয়ে এজমা রোগীর মতো শ্বাস নিতে থাকা বারান্দাটি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। ওয়ার্ড বয় যাবার আগে পাক্কা জ্যোতিষীর মতো বলে যায়, চিল্লাইলে বাজার বানায়ে লাভ নাই, যাইবেন তো কবরে।
কথাটি কারো কানে ঢোকে, কারো কানে ঢোকে না। কানে ঢোকাটা গুরুত্বপূর্ণ নয় কেননা তারা বিষয়টি মন থেকে জানে। তাই নতুন করে আর তাদের মন খারাপ হয় না।
ওয়ার্ড বয় এর পেছন পেছন বের হয়ে যায় রোগীদের সঙ্গে থাকা মানুষেরা। প্রথম তরুণটি তবু দাঁড়িয়ে থাকে। তার অসুস্থ বাবা তাকে বের হয়ে যাবার জন্য ইঙ্গিত করে। ছেলেটি পাত্তা দেয় না। তাকে কিছুটা উদাস দেখায়।
যে কেউ দেখলে ভাবতে পারে বাবার জন্য মন খারাপ তার। কিন্তু তার মনের ভেতরে একটু ঢুকলে দেখা যাবে, সে বিদেশ যেতে চাচ্ছে, তার টাকা প্রয়োজন। সে বাবাকে বলতে পারে নি। বলতে গেলে তার শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায়, গাছ থেকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙ্গে গেলে কিভাবে এই মানুষটা তাকে দৌড়ে কাঁধে করে নিয়ে হাসপাতাল নিয়ে গিয়েছিলেন, কিভাবে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘন্টার পর ঘন্টা। সে চুপ করে থাকে আর মাঝে মাঝে অব্যক্ত কথাগুলো মানুষের প্রতি বিষেদগারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
একজন দালাল তাকে বলেছে মালয়শিয়া যাওয়া কোনো ব্যাপার না। আর একবার যেতে পারলে শান্তি আর শান্তি। কথাটি সে উড়িয়ে দিতে পারে নি। তার বন্ধু আছে সেখানে। ভালো আছে। মাসে মাসে টাকা পাঠায়।
দালাল এরপর যখন টাকা চেয়েছিল ছেলেটির মুখের হাসি দপ করে নিভে গিয়েছিল। দালাল সব শুনে তাকে বলেছিল, আরে মিয়া বাপের কাম কী? বাপের কাম হচ্ছে পোলাপানরে দেইখা রাখা, যাতে তারা কিছু একটা কইরা ভালো করে বাঁচবার পারে। বাপের অসুখ ভুইলা যাও। সুযোগটা কামে লাগাও।
ছেলেটি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ভাবে বাবা তার জন্য কিছু করতে পারে নি। জন্ম দিয়েছেন, পড়াশোনা করাতে পারেন নি। পা ভেঙ্গে গেলে কোলে নিয়ে ছুটোছুটি করেছেন কিন্তু মেরুদন্ড তৈরী করতে পারেন নি। মেরুদন্ডহীন ভাবে বড় হয়ে এখন নিজেকে তার পঙ্গু মনে হয়। একটা তীব্র ক্ষোভ তার ভেতরে সঞ্চারিত হতে থাকে।
একজন বেশ বয়স্ক ডাক্তার আর তার পেছনে আরো আট দশজন তরুণ ডাক্তার গম্ভীর মুখে এসে দাঁড়ায়।
এটা কিসের রোগী? বয়স্ক জন জিজ্ঞেস করে।
তরুণ একজন কিছু একটা বলে, ছেলেটা বুঝতে পারে না। ছেলেটা কিছু বলার জন্য উসখুশ করতে থাকে। তাকে কেউ পাত্তা দেয় না। যেন সে এখানে নেই, যেন সে অদৃশ্য মানব।
এভাবে রাউন্ড দেয়া শেষ হয়ে যায়। তরুণদের একজন কে বলতে শোনা যায়, যাক আজকে বেঁচে গেলাম। স্যারের মুড ভালো ছিল, কোনো ঝাড়ি খাইলাম না।
ছেলেটা জিজ্ঞেস করতে চায়, তারা কবে বেঁচে ফিরবে? করা হয় না তার। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। বিস্ময়কর ভাবে তার চোখেমুখেও আর কোনো বিরক্তি দেখা যায় না। মনে হয় সে তার উত্তর পেয়ে গেছে, সে যেনে গেছে তার বাবার আর ফেরা হবে না, সেই সাথে তার।
পরেরদিন আরো কিছু নতুন রোগী আসে, কেউ সুস্থ হয়ে চলে যায়, আর কেউ একেবার চলে যাওয়ার জন্য পূর্বের মতো অপেক্ষা করতে থাকে।
বারান্দার অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। নতুন এক রোগী আসে। তাকে বলতে শোনা যায়, সব-ই আল্লাহর ইচ্ছা। দোয়া করেন, বুঝলেন দোয়া করেন। দোয়ার কারণেই বাঁইচা আছি।
অসুস্থ বাবার ছেলেটি শুনতে পেয়ে বিরক্ত বোধ করে। মনে মনে ভাবে, দোয়ার এত জোর থাকতে এখানে আসছে কেন? অসুস্থ হইল কেন?

#

ওয়ার্ডের ভেতরে হুড়োহুড়ি শুরু হয়েছে। নতুন রোগী এসেছে। রোগীর অবস্থা ভালো না। বারান্দার সেই ছেলেটি ঘুরে ফিরে দেখছে। কিছু বুঝতে পারছে না।
এই ঘটনাটি আমাদের একটু দেখা প্রয়োজন। তাই আমরা এমন কারো দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পারি যে ঘটনাটি পুরোপুরি আমাদের সামনে তুলে ধরতে পারবে।
ইন্টার্ন ডাক্তাররা গিয়ে প্রথমে দেখতে পায়, রোগী ব্যথায় কাতরাচ্ছে। পেটে হাত দিয়ে একজন আরেকজন কে বলে পারফোরেশনের কেস মনে হচ্ছে। কখন থেকে ব্যথা? রোগীর লোকজন ঠিকভাবে কিছু বলতে পারে না। কেউ একজন কিছু বলতে নিলে, আরেকজন থামিয়ে দেয়।
ইন্টার্নরা রোগীকে স্যালাইন দেয়, ব্যথানাশক ইনজেকশন দেয় এবং একটি আরজেন্ট এক্স রে করতে পাঠায়।
অতঃপর তাদের ডায়াগনসিস সঠিক হয় এবং তারা উৎফুল্ল হয়ে ওঠে, একে অপরের পিঠ চাপড়ে দিয়ে সিনিয়রকে জানায়। সিনিয়র তাদের রোগী রেডি করে ওটি তে পাঠিয়ে দিতে বলে।
ডাক্তার রোগীর ভাইকে ডাক দিয়ে বলে, আপনার বোনের নাড়িভুড়ি ছিড়ে গেসে। অবস্থা খুব খারাপ। অপারেশন না করালে রোগী বাঁচবে না। অপারেশন করালে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
খরচ কেমন পড়বে?
ওষুধের খরচ নেই তেমন একটা, আমরা দিবো। তারপর ও হাজারখানেক টাকা সাথে রাখেন।
কিছুক্ষণ পর রোগীর সাথে কথা বলে এসে ভাই বলে, স্যার আমার বোন মইরে যাক। ঐটাই ভালো। আমরা অপারেশন করাবো না।
কিছুক্ষণ বোঝানোর চেষ্টা করে ডাক্তারটি হাল ছেড়ে দেয়। তবে তার খারাপ লাগে না। এটা প্রায় ঘটে। এখন সে অভ্যস্ত। তবে রোগীর ভাই এর শেষ কথাটি তার চোখের কোণে জল এনে দেয়।
স্যার, বাঁইচা ফিরলে জামাই আবার হ্যারে মাইরা ফেলব। এরচেয়ে আমরা বাড়িত নিয়া যাই, ঐহানেই মরুক, একবার-ই মরুক।

কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরতে ফিরতে ডাক্তারটি ভাবতে থাকে, যাক আজ একটু তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরা যাচ্ছে, অনেকদিন মুভি দেখা হয় না। আজ দেখা যাবে। আমার মতো কেউ ভাবতে থাকে, টুকরো ঘটনাগুলো দিয়ে একটা বেশ গল্প হয়ে যাবে। ওদিকে বারান্দার ছেলেটি কোনো কথা বুঝতে না পারলেও শেষের কথাটি বুঝতে পারে এবং তার খুব গরম লাগতে থাকে, পিপাসায় তার গলা শুকিয়ে আসে। মনে হতে থাকে রোদের উত্তাপে ঝলসে যাচ্ছে সে। তবে শুধু সে নয়, তার বাবা, এই রোগীটি, এর পূর্বে আসা কোনো রোগী, আরো অনেকেই; তাদের চারপাশে কেবল মৃত্যুস্পর্শী রোদ।

( অনেকদিন পর লেখায় ফেরা। এটাকে ঠিক গল্পের কাতারে ফেলা যায় কি'না জানি না। গত দুই মাসে দেখা সামান্য কিছু অভিজ্ঞতা)


মন্তব্য

জ.ই মানিক এর ছবি

জীবন যেখানে যেমন!
অপেক্ষা কেবলই অপেক্ষা_ স্বস্তির নয়, মুক্তির!

ভাল্লাগলো জীবনের গল্প।

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

আইলসা এর ছবি

ভালো হইছে খুবই। চলুক

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

থ্যাঙ্কস

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

বন্দনা এর ছবি

আপনি ডাক্তার নাকি রিশাদ, আমি ডাক্তার ভালু পাইনা , তারা এক্কেবারে পচা, কেমন করে কাটাছেড়া করে আমি ভাবতেই পারিনা এক্কেবারে।তবে আপনার অবজারবেশন বেশ ভালো, টুক্রো টুক্রো করে অনেককিছু তুলে এনেছেন লিখায়।

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

হুম, আমি বাচ্চা ডাক্তার। কাটাছেড়া করসি কিছু। অমানবিক আনন্দ পাই খাইছে

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অরফিয়াস এর ছবি

গল্প ভালো হয়েছে, গাঁথুনি আর একটু শক্ত হলে ভালো হতো। জীবন আর মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখে দেখে মানুষের এই দুটিকে আলাদা করে দেখার অনুভূতি কি নষ্ট হয়ে যায় কিনা জানতে ইচ্ছে করে।

অনেকদিন পরে লিখলে, ভালো লাগলো। চলুক

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

আমার মনে হয়ে যায়। আমার এই অল্প ক'দিনেই হয়ে গেছে। মন খারাপ

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

পথিক পরাণ এর ছবি

চলুক

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

হাসি

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ভাল লাগলো গল্পোচ্ছলে বলা টুকরো কথা।

শান্ত এর ছবি

অসাধারণ। জীবন এমনই।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হু... এটাই বাস্তবতা
এটাই আমাদের জীবন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

হুম, তাই আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

দীপ্ত এর ছবি

গল্প খুবই ভালো লাগছে। বাক্যগঠন, বলার ভঙ্গি সবকিছুই।

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক কিছু কোট করতে চাচ্ছিলাম।অত কোট করতে গেলে মন্তব্যই এক লেখা সমান হয়ে যাবে।তাই কোটাকুটি বাদ দিলাম।লেখা প্রাণ ছুঁল। ডাক্তার হওয়া ভাল না,একটুও ভাল না।।।।।।।

সুবর্ণনন্দিনী

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

এই গল্প এরকম ভালো লাগবে ভাবি নাই হাসি

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতায় মুগ্ধ হলুম, ডাক্তার সাহেব। চলুক
সময় পেলে একটা পুতুপুতু প্রেমের গল্প লিইখেন তো, মৃত্যুকে প্রতিদিন খুব কাছে থেকে দেখা মানুষ জীবনের এই দিকটা নিয়ে কিভাবে ভাবে, সেটা জানা হবে। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

হায় প্রেম মন খারাপ

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

অনেকদিন পরে গল্প পড়লাম রিশাদ। মিস ইউ ম্যান। বরাবরের মত এবারো ফাটাইসো। চলুক

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

তোমার লেখাও অনেকদিন পরি না মন খারাপ

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।