একবছর ধরে আমরা শাহেদের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। মৃত্যুর প্রক্রিয়া হয়ত শুরু হয়েছিল বহু বছর আগে, কিন্তু আমাদের তা জানা ছিল না। শাহেদ নিশ্চয় জানত, ওকে আমরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে, সে হেসে এড়িয়ে গিয়েছিল। হেসে এড়িয়ে যাওয়া অথবা আমাদের কাছ থেকে পুরো বিষয়টা লুকিয়ে রাখা তার ইচ্ছেজনিত এবং পরে বুঝতে পেরেছিলাম, শাহেদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। যদিও প্রথমে আমরা ক্ষিপ্ত হয়েছিলাম।
এ কেমন বন্ধুত্ব? আমাদের কাছে লুকালি? তোর বিষাক্ত ছোঁয়াচে কোন রোগ হলেও তো আমরা ছেড়ে যেতাম না। অবশ্য এই কথাটি বলার সময় আমাদের অবচেতন মন নিশ্চয় জানত আধুনিক যুগে এমন কোন উল্লেখযোগ্য বিষাক্ত রোগ নেই, যার কারণে বন্ধুকে দূরে সরিয়ে দেয়া যায়। তবে অনেক বছর আগে এলাকার যে ছেলেটির র্যাবিস হয়েছিল, তারা আমার এই কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতেই পারে।
শাহেদ আমাদের টিপন্নীর জবাবে শুধু হেসেছিল। আমরাও তাকে আর এই ব্যাপারে জানতে চেয়ে বিব্রতবোধ করাই নি।
নিঃসন্দেহে শাহেদের এই আগাম মৃত্যু পরোয়ানা আমাদের বিষণ্ণ করে তুলেছিল। বিষণ্নতার সঙ্গে সত্যটির ভয়াবহতাও আমাদের খানিকটা কাবু করে ফেলছিল।
আমাদের সবার বয়স ত্রিশের কোটায়। এই অল্প বয়সে মৃত্যুর মতো ভারি চিন্তা আমাদের পেয়ে বসার কারণ ছিল না। আড্ডার একটি জায়গা এত দ্রুত ফাঁকা হয়ে যাবে, আমাদের চিন্তাতে কোনকালেও তা স্থান পায় নি। তাও আবার শাহেদের! যে কিনা আমাদের সার্কেলের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। কী খেলাধুলা, কী বিতর্ক - সবকিছুতে শাহেদ আমাদের হারিয়ে দিত অবলীলায়। ভেতরে ভেতরে হয়ত টুকটাক ঈর্ষাবোধ হতো, কিন্তু সেটি শাহেদের মৃত্যুর শূন্যতাকে ছাড়িয়ে যাবার মতো কিছু হতো না।
আমাদের ভেতর কেউ একজন একবার বলে উঠেছিল, আহারে শাহেদের এত সুন্দর একটা বউ, বিয়ে হলো অল্প কদিন মাত্র- এখন তার কী হবে? সে কি আরেকটি বিয়ে করবে? বাকি সবাই তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলাম।এ কথা অস্বীকার করব না, শাহেদের বউকে মনে মনে আমরা কাছে চাইতাম। এই চাওয়াটা একেবারেই নির্দোষ চাওয়া, বন্ধুর চিরবিদায় চাওয়ার মতো তীব্র কিছু নয়।
তাই আজ যখন সত্যি সত্যি শাহেদের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া গেল, বলা চলে উড়ে উড়ে আমাদের কাছে চলে এলো, আমরা দেল বস্ক এর টং এর দোকানে জড়ো হবো বলে ঠিক করলাম। মৃত্যুর ব্যাপারটিতে ঠিক চমক না থাকলেও, শাহেদের মৃত্যু সংবাদ টিভিতে প্রচারিত হতে দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। আমাদের বন্ধু এত বড় স্টার আমাদের জানা ছিল না। আমার একটু খারাপ লাগছিল। শাহেদের বউ রুহার সাথে অল্পবিস্তর কথা তো হতো, এই তো গতকাল রাতেই ফেসবুকে চ্যাট হলো, আর এই খবর কিনা টিভি থেকে জানতে হলো আমাদের! দেল বস্কের দোকানে গিয়ে দেখতে পেলাম প্রায় সবাই এসে গিয়েছে এবং
কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝতে পারলাম রুহার এহেন অবহেলায় আমাদের সকলের সামান্য মন খারাপ হয়েছে।
হোসেন ভাই ওরফে দেল বস্ক দেখলাম চোখ মুছছেন। এই দেল বস্ক নামটাও শাহেদের দেয়া। স্পেনের কোচের সাথে চেহারায় এত মিল, স্বয়ং বস্ক এসে দেখলেও ভিমড়ি খেয়ে যাবেন। হোসেন মিয়া বস্কের মতো ভাবলেশহীন। তাই তার চোখে জল দেখে আমরা অবাক হই। আমাদের চোখে জল নেই কেন, এটা ভেবে হোসেন মিয়া অবাক হচ্ছেন কিনা তা আমাদের জানতে চাওয়া হয় না।
এখন কী করা যায়?
এই প্রশ্নের উথাপনে আমরা চুপ হয়ে যাই। একজন কাছের মানুষ মারা গেলে কী করতে হয়? তার বাড়িতে যেতে হয়, স্বজনদের সাথে দেখা করতে হয়, লাশের চেহারা শেষবারের মতো দেখতে হয়, মৃত বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করতে হয়, খুব বেশি মেলোড্রামাটিক হলে সবাইকে জানান দিয়ে কাঁদতে হয়।
সুতরাং শাহেদের ক্ষেত্রেও আমাদের তাই করার কথা কিন্তু একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আমরা চুপ করেই থাকি।
সবার পরনে সুন্দর পাঞ্জাবি। মানসিক প্রস্তুতি আছে যাওয়ার, তবু কেন বসে আছি বোধগম্য হয় না। এর মাঝে কাশেম হুহু করে কেঁদে ওঠে। ব্যাপারটা খুব অপ্রত্যাশিত ঠেকে আমাদের কাছে। কাঁদতে কাঁদতে সে বলে, আমার এখন কী হবে? আমি কিভাবে চলব?
এরপর আমরা শাহেদের একটি মানবিক গুণ উন্মোচিত হতে দেখি। পড়াশোনায় পিছিয়ে যাওয়া কাশেমকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল শাহেদ এই ব্যাপারটি আমরা জানতাম, আজ কাশেমের কান্না শেষ হবার পর আমরা জানতে পারি, তাকে মাসে মাসে টাকাও দিত শাহেদ।
হোসেন মিয়া তার বাকির খাতা উল্টোতে উল্টোতে বলে, এক টাকাও বাকি নাই।
আমি একটু গলা খাঁকারি দিয়ে উঠি।
এক টাকাও বাকি নাই কথাটা কেমন শোনায়?
আমরা কী বাকিতে খাই? বলেই বুঝে ফেলি, স্থান, কাল ভেদে এটি একটি ভুল কথা।
হোসেন ভাই, আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। এইটা কী বললেন? শাহেদ ভাইয়ের বাকি নাই, এটা বলতে পারব না?
অন্যরা কেউ কিছু বলে না। যেন হোসেন ভাইয়ের কথা শুনতেই পায় নি, এমন একটি ভাব নিয়ে থাকে।
আমাকে আরো রোষানলে পড়ার হাত থেকে বাচাঁয় কাশেম। সে বলে, আমাদের যাওয়া উচিত। এভাবে বসে থেকে তো লাভ নেই।
লাভ ক্ষতি হিসেব করে আমরা কিছুই করি না, আবার সবকিছু করি। অন্যসময় হলে এই ব্যাপারটি নিয়ে জম্পেশ একটা তর্ক হয়ে যেত, এখন থেমে যাই কিংবা বলা যায় শুরুই করি না।
চল, আমরা যাই।
কিন্তু কারো ভেতরে ওঠার কোন তাগিদ দেখা যায় না।
বরং আরেকজন বলে ওঠে, বড় ভালো লোক ছিল শাহেদ।
এই বিষয় নিয়ে তর্কের অবকাশ থাকে না।
মরে গেলে সবাই ভালো লোক হয়ে যায়, এই কথাটি যেমন সত্য, শাহেদ সত্যি ভালো ছিল কথাটি মিথ্যে হয়ে যায় না। আমাদের সাথে মতের তীব্রকিছু অমিল থাকলেও তাকে খারাপ মানুষ বলার কোন সুযোগ থাকে না আমাদের অথবা বলা যায় কোন সুযোগ রাখে নি শাহেদ। এই তো কয়েক মাস আগে, আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়ল। গভীর রাত। শাহেদকে ফোন করতেই গাড়ি নিয়ে চলে এলো। এদের অনেককেই ডেকেছিলাম। কেউ ফোন ধরে নি, কেউ গড়িমসি করেছে, অথচ
শাহেদ বিনা বাক্যব্যয়ে চলে এসেছিল।
এমন ছোটখাট গল্প আমাদের প্রত্যেকের সাথে কিছু না কিছু আছে, তাই এমন ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে শাহেদ বড় ভালো লোক ছিল, কথাটি জাস্টিফাই করার জন্যও আমরা কিছু বলি না।
কাশেম বিড়বিড় করে বলে, শাহেদের দাফন নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। আমাদের যাওয়া উচিত।
দাফন নিয়ে ঝামেলা হবে, এই ব্যাপারটি কমবেশি আমরা সবাই জানি। সাথে এটাও জানি, এগুলো আমাদের দেখার বিষয় না। শাহেদের আব্বা আছেন। উনি দেখবেন। তাই কাশেমের কথাটিও আমাদের ভেতর যাওয়ার কোন স্পৃহা জাগায় না।
এসব বলে কী হবে? কাশেম উত্তর দেয়, কিছু না। তাই বলে, এভাবে বসে থাকব?
আমার রাগ উঠতে থাকে। সচরাচর আমি খুব একটা রাগ করি না। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা একটু কঠিন মনে হয়। একটু চেঁচিয়ে বলি, খুব বড় বড় কথা বলা হচ্ছে, এত যখন দরদ গত এক বছর কোথায় ছিলি? মৃত্যুটা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলি? ঠিক তো চুকচুক করেছি, একবারও গিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলি?
মোক্ষম জায়গায় আঘাত হেনেছি বুঝতে পারি। কাশেম একেবারেই চুপ হয়ে যায়। আরেকজন বন্ধু বলে, ঠেকাব কেন? এটা ও বুঝবে না? ও কী বোকা ছিল?
আমরা সবাই জানি, শাহেদ আর যাই হোক বোকা ছিল না। যা করছিল, বুঝেশুনেই করছিল। আমরা বরং বোকা ছিলাম, ব্যাপারটা এত দেরিতে বুঝতে পেরেছি। আমরা কী আসলেই মৃত্যু ঠেকাতে পারতাম? সেই ক্ষমতা আমাদের ছিল? কেউ যদি স্বেচ্ছায় মারা যেতে চায়, তাকে ঠেকাবে কে? আমি এবার এই প্রশ্ন ছুড়ে দেই।
এতক্ষণ এখানে বসে থাকতে থাকতে একটা জিনিষ আমরা বুঝতে পারি, শাহেদের সাথে গত এক বছরে আমাদের বেশ দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। মুখে যদিও আমরা বলতাম, তোকে দূরে সরিয়ে দিব নাকি, বস্তুত আমরা তাকে দূরেই সরিয়ে দিচ্ছিলাম একটু একটু করে। শাহেদ বুদ্ধিমান ছেলে এজন্য হয়ত আমাদের কিছু জানায় নি প্রথমে। একদিন যখন ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় প্রসংগ তুলল, আমরা আতঁকে উঠেছিলাম।
আমাকেই প্রশ্ন করেছিল সে। আমি তাকে এক ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে বাকিরাও।
শাহেদ বলছিল, এভাবে থামিয়ে দিলে তো হবে না। আমার প্রশ্নের উত্তর না পেলে, মানুষকে ধমক দিয়ে প্রশ্ন থেকে দূরে সরিয়ে রাখলে, একদিন অবিশ্বাস আসতে বাধ্য। আমি আসলে তোদের এই মনোভাবটাই মানতে পারি না। বিশ্বাস ঠুনকো হয়ে যায়। এমন তো না যে, তোরাও সব নিয়ম মেনে উল্টে ফেলিস।
কাশেম বলেছিল, আমাদের বলেছিস, ঠিক আছে। এসব কথা কাউকে বলিস না।
শাহেদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেছিল, এই বইমেলাতেই এই ধরনের কিছু প্রশ্ন নিয়ে আমার একটি বই বের হবে।
সেদিন আমরা জেনে যাই, শাহেদ আমাদের মাঝে আর বেশিদিন থাকবে না।
আমার বন্ধু যে অবিশ্বাসী সেজন্য যে দুরত্ব, এজন্য সেই দায়ী।
এরপর শাহেদের বইটি বের হয়। আমি এবং অনেকেই বইটি পড়ে হতবাক হয়ে যাই। তীব্র রাগে আমাদের গা রিরি করতে থাকে। বন্ধুত্বের খাতিরে আমরা তাকে কিছু বলি না। তবে নিজেদের ভেতরে গালাগালি করতে পিছপা হই না।
এই ভাবনার ভেতরে যখন বসে আছি, তখন মোক্ষম কথাটি আমার মুখ দিয়েই বের হয়।
আমি বুঝতে পারি গ্রুপের ভেতরে সাপ্রেসড হয়ে থাকার দিন ফুরিয়ে আসছে। খুব দ্রুত কমান্ডিং নিয়ে নিতে হবে।আসলে, ওই বাড়িতে গেলে পাপ হবে। ও তো এসব মানত না। দাফন হলেই কী না হলেই কী। তাছাড়া শুনেছিলাম ও নাকি ডেড বডি দান করে দিবে মেডিকেলে?
গুমোট পরিস্থিতি এক কথাতেই স্বাভাবিক হয়ে আসে। আমরা সবাই একমত হই, এত বড় পাপীর বাড়িতে যাওয়া ঠিক হবে না। রুহার সাথে আমরা কয়েকদিন পর দেখা করব।
কাশেম কেবল, আমাদের সাথে একটি দ্বিমত পোষণ করছিল। আমি বলি, তোকে ও সাহায্য করেছিল, কারণ ও তোকে ওর লাইনে নিতে চাইত। তুই কী মরতে চাস? এসব লেখালেখির জন্য ও মরসে, রাস্তায় লাশ পড়ে ছিল, কুটিকুটি করে কাঁটা, এগুলা শাস্তি, এগুলা অভিশাপ, তুই গেলে তুই ও মরবি। তুই কী চাস, তোর অল্প যে কিছু টাকা দিতে পারিস সংসারে, সেটা বন্ধ করে দিতে? তাছাড়া, তোর ছোট বোনের কী হবে? নাস্তিকের বোন বলবে না?- ওরে তখন কেউ ছাড়বে না। আমরা চাইলেও ফেরাতে পারব না।
আমি বুঝতে পারি কাশেম আর কিছু বলবে না।
বিশ্বাসের বাইরে যেন আর কেউ যেতে না পারে, খেয়াল রাখতে হবে আমাদের। সবার অজান্তে গ্রুপের নেতৃত্বের বাটন নিজের হাতে নিতে থাকি। আহারে! আমরা শাহেদকে ফেরাতে পারলাম না। ভাগ্য ভালো ওর লাশ কুকুরে খায় নি, আগেই পাওয়া গিয়েছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি, অনেক রাত হয়েছে। সবাই যে যার বাসার দিকে রওনা দেই।
বাসার সামনে পুকুরে গিয়ে বসি। সোহেলকে দেখতে পাই। আমাদের গ্রামের বাড়ির ছেলে। এখানে থেকে পড়াশোনা করে। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ায়। ভাই, কাজটা করে ভয় লাগতেসে। আমি তাকে রক্তমাখা অবস্থায় বুকে টেনে নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে, তুই তো নায়ক, ভয় পেলে চলবে না। আমাদের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ, তারা কেবল মুখোশ পড়ে আছে, একটু টোকা দিলেই সব চলে আসবে, ভয় পাবি না, একদম না!
মন্তব্য
দারুণ একটা গল্প, অবশ্য গল্পই বা বলি কি করে একে।
কোন কিছুই আর গল্প থাকবে না। গল্প না, স্যাটায়ার না।
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
কি বলব বুঝে পাচ্ছি না, একটানে পড়লাম।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
এটার জন্যই অপেক্ষা
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
গল্পটি পড়ে বিষণ্ণতা, ভয়, ক্রোধ সব জমা হল বুকের ভেতর।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
মুক্তি নেই।
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
এত নির্মম সত্য নিয়ে লেখা এ গল্পে মন্তব্য করা আমার সাধ্যের বাইরে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এটা যদি সত্যি গল্প হতো!
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
থম মেরে গেলাম---সত্য
স্বয়ম
হুম
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
আপনার গল্পের সাথে এই কবিতার কোন মিল নেই। তবুও কোথায় যেন একটা মিল আছে। মানুষের ভিতরে থাকা মানুষের কথা লেখা হয়েছে আপনার গল্পে। আবুল হাসানের এই কবিতায়ও।
বনভূমির ছায়া
কথা ছিল তিনদিন বাদেই আমরা পিকনিকে যাবো,
বনভূমির ভিতরে আরো গভীর নির্জন বনে আগুন ধরাবো,
আমাদের সব শীত ঢেকে দেবে সূর্যাস্তের বড় শাল গজারী পাতায়।
আমাদের দলের ভিতরে যে দুইজন কবি
তারা ফিরে এসে অরণ্য স্তুতি লিখবে পত্রিকায়
কথা ছিল গল্পলেখক অরণ্য যুবতী নিয়ে গল্প লিখবে নতুন আঙ্গিকে !
আর যিনি সিনেমা বানাবেন, কথা ছিল
তার প্রথম থীমটি হবে আমাদের পিকনিকপ্রসূত।
তাই সবাই আগে থেকেই ঠিকঠাক, সবাই প্রস্তুত,
যাবার দিনে কারো ঘাড়ে ঝুললো ফ্লাস্কের বোতল
ডেটল ও শাদা তুলো, কারো ঘাড়ে টারপুলিনের টেণ্ট, খাদ্যদ্রব্য,
একজনের শখ জাগলো পাখির সঙ্গীত তিনি টেপরেকর্ডারে তুলে আনবেন
বনে বনে ঘুরে ঠিক সন্ধ্যেবেলাটিতে
তিনি তুলবেন পাতার মর্মর জোড়া পাখির সঙ্গীত !
তাই টেপরেকর্ডার নিলেন তিনি।
একজন মহিলাও চললেন আমাদের সঙ্গে
তিনি নিলেন তাঁর সাথে টাটকা চিবুক, তার চোখের সুষমা আর
উষ্ণ শরীর !
আমাদের বাস চলতে লাগলো ক্রমাগত
হঠাৎ এক জায়গায় এসে কী ভেবে যেনো
আমি ড্রাইভারকে বোললুম : রোক্কো-
শহরের কাছের শহর
নতুন নির্মিত একটি সাঁকোর সামনে দেখলুম তির তির কোরছে জল,
আমাদের সবার মুখ সেখানে প্রতিফলিত হলো;
হঠাৎ জলের নীচে পরস্পর আমরা দেখলুম
আমাদের পরস্পরের প্রতি পরস্পরের অপরিসীম ঘৃণা ও বিদ্বেষ !
আমরা হঠাৎ কী রকম অসহায় আর একা হয়ে গেলাম !
আমাদের আর পিকনিকে যাওয়া হলো না,
লোকালয়ের কয়েকটি মানুষ আমরা
কেউই আর আমাদের এই ভয়াবহ নিঃসঙ্গতা একাকীত্ব, অসহায়বোধ
আর মৃত্যুবোধ নিয়ে বনভূমির কাছে যেতে সাহস পেলাম না !
______________
সৌমিত্র পালিত
ধন্যবাদ।
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
গল্পটি এতটাই সমসাময়িক যে পড়তে গিয়ে বাস্তবের শাহেদেদের মুখ ভেসে উঠে কল্পনায়! তখন গল্পটি আর গল্প থাকে না..
গল্প জীবন হয়ে না যাক!
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
চমৎকার বাস্তব গল্প।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
ধন্যবাদ
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
'গল্প' ট্যাগটা বাহুল্য...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
সাহসী এবং সময়পোযোগী লেখা
জিল্লুর রহমান সোহাগ
Email:
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
রক্তাক্ত শহরে আর কতদিন???????????????????
-------------------------------------------
এমনভাবে হারিয়ে যাওয়া সহজ নাকি
ভিড়ের মধ্যে ভিখারী হয়ে মিশে যাওয়া?
এমনভাবে ঘুরতে ঘুরতে স্বর্গ থেকে ধুলোর মর্ত্যে
মানুষ সেজে এক জীবন মানুষ নামে বেঁচে থাকা?
অসাধারণ!
দেবদ্যুতি
গল্পের শেষ অংশটা পড়ে একইসাথে ভীত এবং বিমর্ষ হয়েছি।
কদিন পরে এগুলো ঠিক সত্যি হয়ে যাবে।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
নতুন মন্তব্য করুন