লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: শনি, ০৯/০৬/২০০৭ - ১:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
সে যখন সমুদ্রের লোনা পানিতে পা ডুবিয়ে তীরে এসে নামলো তখন আকাশ নীল হতে শুরু করেছে। মাটিতে দাড়িয়েই সে চারদিকে তাকায়। দ্বীপটাকে সমুদ্রেরই একটা অংশ মনে হয়, বালিয়ারীতে ঢেউ খেলতে খেলতে গোটা কয়েক নারকেল গাছের ঝোপে গিয়ে শান্ত হয়ে বসেছে। এখনও সবকিছু স্পষ্ট নয় কেবল আবছা আবছা আলোয় ঘুমন্ত গ্রামটাকে বড্ড বেশি শান্তু দেখায়। বেশ কিছু দিন এখানে থাকা যাবে আপনমনে খুশি হয়ে ওঠে লোকটা।
ওয়ালেট বের করে সেখান থেকে দুইটা পাচশত টাকার নোট নৌকার মাঝিকে দিয়ে বলে
- ঠিক আছে ?
- হ্য - কত্দিন স্যার
সে মাঝির দিকে তাকায়, মাঝি সেই দৃষ্টিটার সামনে একটু দমে যায়। এমন শীতল চোখ সে সাধারনত সমুদ্রে ঘুরতে আসা লোকদের মধ্যে দেখে না। সমুদ্রে যারা আসে তারা হয় খুব হাসিখুশি না হয় মনভোলা উদাসী আর কিছু অভিযাত্রী গোছের। মাঝরাত্রে সে যখন এসে তুনি নৌকা নিয়ে সাগরদ্বীপে যাবার কথা বলেছিল তখন ভেবেছিল লোকটা এ রকমই কেউ একজন যে মাঝরাত্রিতে দরিয়া পার হওয়ার স্মৃতি রোমান্থন করতে করতে সফেদ বিছানায় ঘুমিয়ে পড়বে।
এ অঞ্চলে সেই সবচাইতে সাহসী মাঝি এই সুযোগ হাতছড়িা করবে কেন। বিশেষত সে যখন চারগুণেরও বেশি টাকা দিতে রাজী হয়েছিল। আকাশের তারা গুনে নিশানা ঠিক করে সে তাকে নিয়ে এই পৌছেছে সাগরদ্বীপে। এমনটি তার জীবনে প্রথম নয়। কিন্তু এরকম যাত্রাসঙ্গী তার জীবনে প্রথম।
রাত্রে মানুষ সাধারনত বেশি কথা বলে । আর এমন সমুদ্রে দুটি প্রাণী হলেতো কথাই নেই। কিন্তু এই লোকটি পুরোটা পথ নিশ্চুপ। নিশুতি রাত্রে চাদের মায়াবী আলোয় সমুদ্র ফুটফুট করছে। মাঝি দুই একটা কথা বলার চেষ্টা করে সাড়া না পেয়ে চুপ করে গিয়েছিল - দুজন নিরব মানুষের সামনে সমুদ্রের ঢেউ আর বাতাসের শব্দের সাথে নৌকার একটানা শব্দ মিশে চারপাশে এক অদ্ভুত পরিবেশ। মাঝির মনে হচ্ছিল তাদেও এই যাত্রা যেন একটি বিন্দুতে ঝুলে আছে - কোনদিনই তারা এর থেকে বের হতে পারবে না।
মাঝি আর কোন কথা না বাড়িয়ে লোকটির দিকে তাকায়।
লোকটি সৈকতের বালিয়ারী পেরিয়ে উঠে যাচ্ছে। লোকটির সুস্থির সুনিশ্চিত ভঙ্গী দেখে মনে হয় এ অঞ্চলে আগেও সে এসেছে। দুরে লোকটির হাটার পথে বৃদ্ধ দাড়িয়ে আছে। এতদুরে যে ভাল করে দেখেও বোঝা যায় না।
মন্তব্য
অজ্ঞাতবাস
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নতুন মন্তব্য করুন