আমার যতো কথা-১

ফারহানা এর ছবি
লিখেছেন ফারহানা [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০৩/০৬/২০০৯ - ৭:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কর্পোরেট অফিসের ধুমায়িত কফির আড্ডা আর প্রতিদিনের কঠিন ব্যস্ততায় আমি ভুলতে বসেছিলাম আমার এক বন্ধু রিয়াজকে।

তখন আমি ঢাকা বিশশবিদ্যালয় ৩য় বর্ষের ছাত্রী। পহেলা বৈশাখের এক অনুষ্ঠানে তার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। তার পারিবারিক নানা বিষয়ের কথা বলতে বলতে আমরা কার্জন হল পার হয়ে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে রিক্সা করে যাচ্ছিলাম ।সে ছিলো একজন দক্ষ আই,টি স্পেশালিস্ট এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির খণ্ডকালীন শিক্ষক। নানান কথায় যখন আমরা হাইকোর্টের মোড় পার হচ্ছিলাম তখনই ঘটলো একটা দুর্ঘটনা। একটা সি।এন।জি আমার রিক্সা রোধ করে দাঁড়ালো। ভেতর থেকে এক ভীমমূর্তি মাথা বের হয়ে এসে আমার হাতের ব্যাগটা টান দিলো। টানাটানির এক পর্যায়ে আমি ব্যাগটা ছেড়ে দিলাম। সেই ভীমমূর্তি মানুষটা আমার ব্যাগ নিয়ে নিমিষেই মিলিয়ে গেলো। সাভাবিক ভাবেই আমি হারালাম আমার মোবাইল ফোন, কিছু পরিমান টাকা, আর অন্যান্য প্রয়োজ়নীয় জিনিস পত্র।

সেই সময় বন্ধু রিয়াজ আমাকে হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলেছিলো “এটা রাখো।“ আমি নিলাম এবং পরে দিয়ে দিবো এই ইছা প্রকাশ করলাম।

পরদিন সকালে রিয়াজ আমার বাসার সামনে এসে হাজির। বললো “আমার সাথে এক্ষুনি চলো। আমি প্রশ্ন করতেই সে বলে ওঠে “কথা পরে আগে চলো।“ আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে রিয়াজের সাথে গেলাম। সে আমাকে নিয়ে গেলো ইস্টার্ণ প্লাজ়া মার্কেটে একটি মোবাইল ফোনের দোকানে। একটা সিমেন্স সেট কিনে আমরা দুজনেই বের হয়ে এলাম। একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম। মোবাইল সেট টা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো এটা তোমার জন্যে। আমি বললাম মানে? রিয়াজের উত্তর ছিলো “ একজ়ন পুরূষ মানুষ থাকা অবস্থায় তোমার মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়েছে এটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই এটা তোমার জন্যে।“ আমি ইতস্তত বোধ করছিলাম। এভাবে আসলে আমি ভাবিনি। যাই হোক। আমি মোবাইল সেটটা নিলাম এবং নতুন সিমকার্ড চালু করলাম। এভাবে কেটে গেলো বেশ কিছুদিন। আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমার কাজ়ে। মাঝে মাঝে অবশ্য রিয়াজের সাথে কথা হতো।

একদিন বিকেলে রিয়াজ আমাকে ফোন করলো। তার কথায় আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি সে ছিলো তখন ড্রাংক। আমি তার সাথে কথা বলতে আপত্তি জানালাম। এরই মাঝে কেটে গেছে বেশ কিছুদিন। আমার দিক থেকে রিয়াজের সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ।

প্রায় ছয় মাস পরে আমি এক বিকেলে কি বুঝে যেনো রিয়াজকে ফোন করলাম। ওপাশ থেকে ভেসে এলো ভিন্ন কন্ঠসর। আমি জিজ্ঞেস করলাম রিয়াজ কোথায়? উত্তর পেলাম “গতকাল ভোর পাঁচটায় সে মারা গেছে।“ আমি স্তম্ভিত হয়ে ফোন রেখে দিলাম।

মাঝে মাঝে ভাবি রিয়াজ কি অসুখি ছিলো???? সে কি আত্মহত্যা করেছিলো???

মোবাইল ফোনের রিং টোন টা মাঝে মাঝে রিয়াজের কথা মনে করিয়ে দেয়। অবসর সময়ে বসে আজকাল আমি মাঝে মাঝেই ভাবি “একদিন আমকেও মৃত্যু নামের এক স্টুপিডিটির সম্মুখিন হতে হবে।“

ফারহানা


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

রিয়াজ মারা গেলেন কিভাবে?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এই একাউন্টটি কোন মডারেটরের নয়। এই একাউন্ট থেকে মডারেশন করা হয়না, কিংবা এই একাউন্টের কর্মকান্ডের দায়ভার সচলায়তন নেবে না।

ফারহানা [অতিথি] এর ছবি

সে প্রশ্ন আমারও , রিয়াজ মারা গেলো কিভাবে?????

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

খারাপ লাগল লেখাটা পড়ে। তবে বাস্তবতা হলো, মৃত্যু নামক দানবের হাত থেকে রেহাই নেই কারোই, শুধু ক'দিন আগে বা পরে।

লিখুন আরো।
কিছু মনে করবেন না, বেশ কিছু সহজ বানান ভুল আছে। লেখার আকার ছোট হলে চোখে লাগে এগুলো বেশ।

ফারহানা [অতিথি] এর ছবি

তবুও জীবন সুন্দর ও তাৎপর্যহীন।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আসলে কেমন করে মারা গেলো রিয়াজ?

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ফারহানা [অতিথি] এর ছবি

সে প্রশ্ন আমারও।

সাইফ এর ছবি

“গতকাল ভোর পাঁচটায় সে মারা গেছে।"

রীতিমত ধাক্কা খেলাম, আরেকটু বিস্তারিত বললে ভালো হয়। খুবই মন খারাপ করানো একটি লেখা মন খারাপ

ফারহানা [অতিথি] এর ছবি

বিস্তারিত কিছুই জানিনা।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

রিয়াজ মারা গেলেন কিভাবে?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সবার মতো একই প্রশ্ন আমারো!
সাথে বোনাস প্রশ্ন হলো, রিয়াজ কি কেবল আপনার একজন বন্ধু-ই ছিলেন, নাকি এর চেয়েও বেশি?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ফারহানা [অতিথি] এর ছবি

রিয়াজ কেবল আমার বন্ধুই ছিলো। এর বেশী কিছু নয়। তার সাজানো গোছানো সংসার, বউ, ছেলেমেয়ে সবার সাথেই আমি পরিচিত ছিলাম। মাঝে মাঝে রিয়াজের ক্ষেত্রে জীবনানন্দের একটি কবিতার লাইন খুব মনে পড়ে যায়, "যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ, মরিবার হলো তার সাধ।"

মামুন হক এর ছবি

খুব কষ্ট পেলাম পড়ে

ফারহানা [অতিথি] এর ছবি

আমার ও কষ্ট হয়।

গোপাল ভাঁড় এর ছবি

ফারহানা, তারপর। Don't you feel like digging deep into this?
ভাই তোমার বন্ধুর ব্যাপারটা ঠিক ব্যাটে বলে হম না। আমার কথা বলি - বিয়ের আগে, ৪ বার প্রেম হয় ও ১৭ বার মারা যাই আমি। I am happily married now.

--------------------------------------------
<ঘ্যাচাত, ঘ্যাচাত, ঘ্যাচাত> - আমার সিগনেচার

--------------------------------------------
বানান ভুল হইতেই পারে........

ফারহানা [অতিথি] এর ছবি

আসলে অনেক পরে আমি জানতে পারি রিয়াজ তার বিবাহিত জীবনে সুখী ছিলো না। এই কারণে প্রায় সময়ে সে ড্রিংক করতো। আর আমার সাথে তার সম্পর্ক যে ক'দিনের ছিলো তাতে আমি এতো বেশী কিছু জানতে পারিনি। হয়তো প্রশ্ন করাটাও ঠিক হতো না।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

'রিয়াজের কি হলো?' এই প্রশ্ন এতোবার উচ্চারিত হলো কিন্তু আপনি উত্তর দিলেন না। সুতরাং আমি একটা নতুন প্রশ্ন করি:

আপনার কেন মনে হলো রিয়াজ আত্মহনন করেছেন?

লেখাটা পড়ে ভালো একটা শক খেলাম। মৃত্যু প্রতিদিনের সবচেয়ে বেশি ঘটা ঘটনাগুলোর একটা, তাও মৃত্যুর খবর শুনলে এরকম বুক কাঁপে কেন বুঝি না!

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

মৃত্যুটাকে আমার কাছে স্টুপিড কিছু বলে কখনোই মনে হয়নি। খুব সত্য এবং স্বাভাবিক বিষয় আমাদের জীবনে। তবে অকালে কোনও তাজা প্রাণ ঝরে যাক তা কখনোই চাইনা।
---------------------------------------------------------

--------------------------------------------------------

ফারহানা [অতিথি] এর ছবি

আমার কেন জানিনা মনে হয় রিয়াজ আত্মহনন করেছে । কারণ সে প্রচুর পরিমাণে ড্রিংক করতো আর বিবাহিত জীবনেও সে সুখী ছিলো না। রিয়াজ যে আত্মহনন করেছে আমার এই ধারণা ভুলও হতে পারে।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

লেখাটা ভালই। তারপর? ...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

ফারহানা এর ছবি

ফারহানা সিমলা

তারপর আপনার না জানলেও চলবে।।।।।

ফারহানা সিমলা

বিপ্লব রহমান এর ছবি

অ্যাঁ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অমিপিয়াল এর ছবি

বিপ্লব, এই ভদ্রমহিলা (!) কিছুদিন আগে আপনার একটা লেখা হুবহু কপি করে মেরে দিছিলো আমার ব্লগে, তারপর ব্যান খাইছে। এই একই লেখা একটু আগে আমার ব্লগে দেখে চেক করতে ঢুকলাম, দেখি সচলায়তনেও দেওয়া হইছে। তবে মূল লেখাটা এখনও পাইনি বলে তারে লেখা চোর বলতে পারতেছি না। সিমলা আপুর এই লেখাচুরি রোগ অবশ্য অতিপুরাতন। এইটা যদি অবশেষে নিজেই লিখে থাকেন তাকে আমার অভিবাদন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।