লিখেছেন উৎস (তারিখ: রবি, ১০/০৬/২০০৭ - ১:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
আবার ট্রান্সলিটারেটেড টাইটেল দেয়ার জন্য দুঃখিত, অবশ্য আত্মীকরণ প্রক্রিয়ায় এগুলোর অনেকগুলোই হয়তো বাংলা ভাষার শব্দ, কে জানে৷ এখানে স্পেন্সার ওয়েলসের একটা লেকচার শুনতে গিয়েছিলাম চার পাচ মাস আগে৷ লোকটাকে আমার খুব পছন্দ, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ডকুমেন্টারীতে আপনারাও দেখেছেন হয়তো৷ তারপর থেকে অনেকদিন ধরেই মনের একটা অংশ প্রাগৈতিহাসিক যুগে পড়ে আছে৷ ব্যাপারটা এমন, অনেক সময় রাতে একটা নাড়া দেয়ার মতো সিনেমা দেখলে তারপর ২/১ দিন ঐ কাহিনীটা মনের মধ্যে ঘুরঘুর করতে থাকে, কেমন একটা ইমার্সিভ ফিলিং, আমার প্রস্তর যুগে পড়ে থাকাও অনেকটা কাছাকাছি, ইন্টেন্সিটি কম, কিন্তু অনেকদিন ধরে হচ্ছে৷ ঐ সংক্রান্ত কিছু দেখলেই আগ্রহ লাগে৷ ওয়েবে খুজি, টিভিতে দেখি পেলে কাজ বাদ দিয়ে দেখি, নানা রকম আদিবাসিদের গান শুনি কয়েক মাস ধরে৷ গাড়ীতে সবার কান ঝালাপালা করে দিয়েছি এসব গান শুনিয়ে৷
এখন নাড়াচাড়া করছি প্রিহিস্টরিক আর্ট নিয়ে একটা বই৷ দিনে মাত্র ৩০-৪০ মিনিট পড়ার সুযোগ পাই এজন্য শেষ করে উঠতে পারছি না৷ ওখানে দেখলাম এই কথাটা, আগেও জানতাম, আসলে সবাই শুনেছি কখনও না কখনও৷ প্রশ্নটা এমন, সভ্যতা কেন শুধু মানুষ তৈরী করেছে, অথবা আরেক ভাবে সভ্যতার চালিকাশক্তি কোথায়? হয়তো অন্য প্রানীদের সাথে এটাই আমাদের একটা দৃশ্যমান পার্থক্য৷ সায়েন্টিফিক আবিস্কার হোক, অস্ত্র/হাতিয়ার বানানো হোক, গল্প লেখা হোক আর গুহা চিত্র হোক৷ সৃজনশীলতা আমাদের সহজাত গুন, শেখাতে হয় না, হয়তো ধারালো করা যায় চর্চার মাধ্যমে৷ প্রাগৈতিহাসিক মানুষের ফেলে যাওয়া অলঙ্কার, পাথরে খোদাই করা ছবি, বর্শার হাতল সবজায়গায় মানুষ পরিস্কার ভাবে তার মনের ভেতরের আরেকটা মানুষের উপস্থিতির ছাপ রেখে গেছে৷
অনেক সময় প্রায়োগিক উদ্দ্যেশ্য বোঝা মুস্কিল৷ যেমন ২০-৩০ হাজার বছর আগের বর্শা বা এরকম কোন হাতিয়ারে খোদাই করা চিত্রকর্মের কার্যকারিতা প্রথম দেখায় বোঝা মুস্কিল৷ কারন বর্শা নিক্ষেপ করা, বা শিকার করায় এসব চিত্রকর্মের সত্যিকার কোন মুল্য নেই৷ কোন কোন ক্ষেত্রে চিত্র কর্ম করতে গিয়ে এসব হাতিয়ারের আকৃতি এতটা বদলে গেছে যে সত্যি সত্যি ওগুলো শিকারে ব্যবহার হতো কি না সন্দেহ৷
তাহলে ৩০ হাজার বছর আগে সময় নষ্ট করে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ এগুলো কেন করেছে৷ কেবল মাত্র সিম্বলিক ভ্যাল্যুর জন্য? এসবের পেছনে যে মানুষ মারাত্মক রকম সময় দিতো তার আরো প্রমান আছে৷ কিন্তু কেন? বরফ যুগে যখন বেচে থাকাটাই মুখ্য তখন এসব বিলাসিতা বলে যে এ ধরনের শিল্প কর্মের পেছনে জটিল এবং শক্তিশালী কোন চালিকা শক্তি আছে৷
ইউরোপে যেমন আধুনিক মানুষ (ক্রোম্যানিয়ন) আফ্রিকা থেকে আসার আগে আরেক প্রজাতির মানুষ ছিল, নিয়ান্ডার্থাল৷ নিয়ান্ডার্থালরা কয়েক লাখ বছর ধরেই ইউরোপের অধিবাসি, শক্ত গড়নের, শ্বেতকায়, বরফ যুগের উপযোগি শরীর৷ অন্যদিকে ক্রোম্যানিয়নরা হালকা পাতলা, লম্বাটে, কৃষ্ঞকায় গড়নের৷ নিয়ান্ডার্থালরা এত লক্ষ বছর পৃথিবীতে থাকলেও ওদের তৈরী কোন ছবি বা অলঙ্কারের উদাহরন পাওয়া যায় না (বিচ্ছিন্ন কিছু ক্ষেত্রে যেগুলো আছে সেগুলোর স্রষ্টা অনিশ্চিত, বা সন্দেহমুক্ত নয়)৷ নিয়ান্ডার্টালরা কেনো ছবি আকে নি, বা আকার প্রয়োজন বোধ করে নি, সেখানেই লুকিয়ে আছে কেন শুধু আমরাই সভ্যতা তৈরী করেছি তার উত্তর৷ সম্ভবত একই কারনে নিয়ান্ডার্টালরা প্রতিযোগিতায় না টিকতে পেরে বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ কারন? ইমাজিনেশন৷
আসলে সিম্বলিক চিন্তা করার ক্ষমতা থেকেই কিন্তু প্রতিনিয়ত নানা রকম আবিস্কার করছি৷ এখনকার টেকনোলজিকাল সভ্যতার ভিত্তিও এ্যাবস্ট্রাক্ট চিন্তা করার ক্ষমতা৷ হয়তো আরো দুচারটা প্রানীর এরকম ক্ষমতা আছে, কিন্তু আমাদের মতো এত ওয়েল ডেভেলপড নয়৷ নানা সময় আবার মানুষেরই সমাজ নানাভাবে এই চিন্তা করার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে৷ কারন ইমাজিনেশন একটা টুল, সমাজের দৃষ্টিতে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যায়, খারাপ কাজেও করা যায়৷ যদিও ভালো, খারাপের সংজ্ঞা পরিবর্তনশীল, আসলে ভিত্তিহীন এবং মুল্যহীন৷ ধর্ম যেমন আমাদের একটা আবিস্কার, আবার ধর্ম নিজেই সৃজনশীলতাকে ভীষনভাবে ম্যানিপুলেট করতে চায়, এই জন্যই ধর্ম আর সংস্কৃতিকে কে আমি খুব ভয় পাই, দুটোই অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাড়াতে চায় এবং পারেও৷
সে যাকগে প্রাগৈতিহাসিক আর্ট নিয়ে আরো কয়েকটা লেখা দিতে চাই, আজকে বাজারে যেতে হবে …
মন্তব্য
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
নতুন মন্তব্য করুন