থ্রু দ্যা আল্পস টুওয়ার্ডস সেইন্ট মরিটয

বন্দনা এর ছবি
লিখেছেন বন্দনা [অতিথি] (তারিখ: রবি, ৩১/০৭/২০১১ - ৯:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এইবছর ইউরোপের একটা কনফারেন্সে যাবার সুযোগ হয়েছিলো। বিগত বছরগুলাতে ল্যাবের সিনিয়র ভাইদেরকে দেখেছিলাম এটাতে এটেন্ড করে ইউরোপ ভেজে খেয়ে আসতে। যদি ও ভেবেছিলাম আর কোনো কনফারেন্সেই যাবোনা, কারণ কনফারেন্স বাবদ ডিপার্টমেন্ট যে টাকা এলোকেট করে, গতবছর আমেরিকা গিয়ে সেটার পুরাটাই উড়িয়ে দিয়ে আসছি। কিন্তু কনফারেন্স থেকে আবার সব মিলিয়ে দশজনকে ট্রাভেল ফেয়ার দেয় এটেন্ড করার জন্য, যেটা কিনা ৫০০ ইউরোর মত। খোঁজ করে দেখলাম যে কোন মতে যদি এটা এভেল করতে পারি, প্লেন ফেয়ার কভার করে যাবে। সেক্ষেত্রে ইউরোপ দেখার জন্য বাকি টাকাটা নিজের পকেট থেকে দিতে আমার কোন আপত্তি ছিলোনা। এইসব এলোমেলো চিন্তাভাবনা করতে করতে পেপারটা সাবমিট করেই দিলাম, সাথে স্কলারশিপের আবেদন ও করে ফেললাম। যথারীতি পেপার একসেপ্টেড হয়ে গেলো। কিন্তু স্কলারশিপের এর আবেদনের উত্তরে আর কোনো মেইল আসেনা। মনের ভিতরে আশা নিরাশার মিশ্র অনুভূতি নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম স্কলারশিপের ইমেইলটার জন্য। এর কিছুদিন পরেই আমার সব বিশ্রি আশঙ্কা দূর করে দেয়া মেইলটা এসে পড়লো, জানতে পারলাম যে ট্রাভেল ফেয়ারটা পাচ্ছি। সাথে সাথেই প্লেনের টিকেট কেটে ইটালিয়ান এম্বেসীর কাগজপত্র পূরণ করে ভিসার জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম। এইবেলা আসল কাজ করতে হবে, মানে মিনিমাম টাইমে কিভাবে ম্যাক্সিমাম সাইটসীয়ীং করা যায় তার প্ল্যান। কোথায় ঘুরবো, কিভাবে ঘুরবো তার ডিটেইল প্ল্যান করতে বসে গেলাম। দুই সপ্তাহে কিভাবে আমার পছন্দের জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যাবে তার নিখুঁত প্ল্যান করা, প্লেন, বাস, ট্রেন, হোটেলের বুকিং দেয়া, এইসব করতে করতে দিন কেটে যাচ্ছিলো খুব দ্রুত। দেখতে দেখতে যাবার সময় ও ঘনিয়ে এলো, দুরুদুরু বুকে প্লেনে উঠে বসলাম। যেই প্ল্যান করেছি তাতে যে নিজের উপর ব্যাপক অত্যাচার হবে সেই ভাবনা আগেই ছিলো। তবু সেটা নাহয় সহ্য করা গেলো, কিন্তু প্ল্যানের একটা কিছু উলটপালট হয়ে গেলে তারপরের পুরাটা প্লানই যে ভেস্তে যাবে এই টেনশনে বুকের ভিতরটা কেমন কেমন যেনো করা শুরু করে দিয়েছিলো।

প্রায় ২৫ ঘণ্টার মত জার্নি শেষে মিলান গিয়ে পৌঁছলাম খুব সকালে। সেইদিনই আবার বিকেলে রোমে চলে গেলাম। রোমে একদিন থেকে সেখান থেকে গেলাম ভেনিস। ভেনিস থেকে ট্রেনে আবার লেক্কো আসার কথা ছিলো আমাদের। কিন্তু, ইটালিতে যে আমাদের দেশের মতই স্ট্রাইক হয় আগে জানা ছিলোনা। স্ট্রাইক এর কারণে ভেনিস থেকে মিলান হয়ে লেক্কো যাবার সমস্ত ট্রেন বন্ধ হয়ে গেলো। আমদের তিন বন্ধুরই মাথায় হাত, আমাদের কালকের প্ল্যান হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের একটা জায়গায় যাওয়া। তার উপর আজ রাতের হোটেল বুকিং করা আছে লেক্কোতে। সব মিলিয়ে পুরাই ধরা। বারবার কাউন্টারে গিয়ে খোঁজ করতে লাগলাম কি করা যায়, আর কোন বিকল্প উপায় আছে কিনা এখানে থেকে মিলান যাবার। কিন্তু ওরা ভালো ইংরেজি পারেনা, তাই বেশি কথা ও বলতে চায়না। আমাদের সবার মুখ ততক্ষনে টেনশনে শুকিয়ে গেছে। বিদেশবিভুইয়ে এসে কী বিপদেই না পড়া গেলোরে বাবা। এমন সময় ঘোষণা এলো যে একটা স্পেশাল ট্রেন মিলান যাচ্ছে, আমরা চাইলে ওটাতে যেতে পারি। এই ঘোষণা শুনেতো পুরা স্টেশনের মানুষ তড়িঘড়ি করে অই ট্রেনে উঠে পরলো। আমরা ও কোন রকম ঠেলাঠেলি করে দাঁড়ানোর একটু জায়গা করে নিলাম। ট্রেন চলতে শুরু করলে চেপে রাখা দীর্ঘনিঃশ্বাসটা সযত্নে ছেড়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পরই টিকেট চেকার এসে চেক করতে লাগলো। খানিক পরেই আমাদের পালা এলো, চেকার বললো আমাদের টিকেট নাকি এই স্পেশাল ট্রেন কভার করেনা। আমাদেরকে এখন বাড়তি টাকা দিতে হবে। আমার মেজাজ ততক্ষণে সপ্তমে চড়ে গেছে, বলেই বসলাম যে এটা তো তোমাদের সমস্যা, সার্ভিস দিতে পারছোনা ঠিকমত, আমিতো টিকেট ঠিকই করেছি, এখন বাড়তি কেনো দেবো। আমার কথাবার্তা শুনেই কিনা কে জানে টিকেট চেকার মন নরম করে ফেললো, তিনজনের টাকার বদলে দুইজনের বাড়তি টাকা নিলো। ৩ ঘন্টার মত জার্নি করে অবশেষে মিলান এলাম। কিন্তু মিলান পৌঁছে ও শান্তি নাই, ওখান থেকে ও কোন ট্রেন আজকে লেক্কো যাবেনা, এতদূরের পথ যেতে কোনো ট্যাক্সি ও রাজী হচ্ছেনা। সারাদিনের এত ধকল সামলাবার পর ভয়ঙ্কর পরিশ্রান্ত সবাই, আর কোন স্ট্রেস নেবার মত অবস্থায় কেউই নেই। অবশেষে ১০০ ইউরো গচ্চা দিয়ে কোনরকমে একটা ট্যাক্সি ম্যানেজ করে মাঝরাতে লেক্কো পৌঁছে তবেই সবার মাথা ঠাণ্ডা হোল।

DSC07717

IMG_3330

DSC07792

আমাদের এক বন্ধু লেক্কোতেই থাকে। আগামীকাল ওই আমাদেরকে নিয়ে যাবে ইতালির তিরানোর কাছেই সুইজারল্যান্ড এর সেইন্ট মরিটয নামে একটা জায়গায়। পুরা ইউরোপ ট্যুরে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর জায়গা, ঠিক যেন পৃথিবীর বুকে একটুকরা স্বর্গ। আজকে এই জায়গাটায় যাবার অভুতপূর্ব অভিজ্ঞতার কথাই বলবো যার জন্য এত ভূমিকা দেয়া। তারেক অণু ভাইয়ের আল্পস পোষ্টটা দেখে মনে হোল এই জায়গাটার অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করে সবাইকে হিংসিত না করাটা আমার ভীষণই অন্যায় হয়ে যাবে।

IMG_0671

SAM_4866

পরদিন খুব ভোরে উঠে লেক্কো থেকে ট্রেন নিলাম তিরানো যাওয়ার। এখান থেকে তিরানো যেতে লাগে দুঘণ্টার মত। ট্রেনে বসে বসে আক্ষরিক অর্থেই চারপাশের সবকিছু গিলছিলাম । আশেপাশের দৃশ্য পরিবর্তন হচ্ছিলো ক্রমাগতই। কখনো লোকালয়, কখনো ও বা এক লাইনে সারি করা গাছের পর গাছ, কখন বা দুপাশেই পাহাড় পরছিলো। কখন বা দূর থেকে পাহাড়ের চুড়ার সাদা বরফের শেষ অস্তিত্বটুকু আমাদের চোখে কেমন যেন মোহ ছড়িয়ে দিচ্ছিলো। সাথে সাথে দিগন্ত জুড়ে বিস্তৃত ধূসর বরফ না দেখতে পাওয়ার হাহাকারটা ও টের পাচ্ছিলাম নিজের ভিতরে। তখন ও কেউ জানতামনা যে চোয়াল ঝুলিয়ে দেবার মত ভয়ঙ্কর সব সৌন্দর্য আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে সামনেই যার কাছে এখনকার দৃশ্যগুলো কিছুই না।

IMG_0704

SAM_4908

SAM_4914

গল্প করতে করতেই টুকটাক ছবি তুলে নিচ্ছিলাম যার যার ক্যামেরায়। আশেপাশের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির কারণেই কিনা কে জানে কখন যে দুঘণ্টা পেরিয়ে তিরানো পৌঁছে গেলাম টের ও পেলামনা। তিরানো থেকে সেইন্ট মরিটয যাওয়া আসার টিকেট করে ফেললাম প্রত্যেকে, ৪৫ ইউরো খরচ করে। গুগলে খুঁজেপেতে আসার আগে কোন ইনফরমেশন জেনে আসতে পারিনি, কারণ ঠিক কোথায় যাচ্ছি জানা ছিলোনা। তাই স্টেশনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ম্যাপে দেখে নিলাম যাবার পথে কি কি পরবে, সাথে সাথে আর ও কিছু ইনফরমেশন ও জেনে নিলাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৯০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই তিরানো থেকে রেললাইন বারনিনা পাস এর উপর দিয়ে সেইন্ট মরিটয হয়ে আলবুলা পাস এর উপর দিয়ে চুর পর্যন্ত চলে গেছে। সেন্ট্রাল ইস্টার্ন আল্পস এর অংশ হিসেবে এই বারনিনা রেঞ্জ পূর্ব সুইজারল্যান্ডকে উত্তর ইতালির সাথে সংযুক্ত করেছে। বারনিনা রেঞ্জে অবস্থিত আল্পসের পিকগুলোর মাঝে পিজ বারনিনা(Piz Bernina) হচ্ছে উঁচুতম পিক যার উচ্চতা ৪০৪৯ মিটারের কাছাকাছি। পিজ বারনিনা এবং ৩৯০৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত পিজ পালু(Piz Palü)দুটোয় আমাদের যাত্রা পথে পড়বে। ধাক্কা খাবার মত কিছু দেখার জন্য মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলাম।

SAM_4928

SAM_4937

প্লাটফর্মে গিয়ে দেখলাম লাল টুকটুকে একটা ট্রেন দাড়িয়ে আছে আমাদেরকে নিয়ে যাবার জন্য। ভীষণ উত্তেজনা নিয়ে ট্রেনে চেপে বসলাম। ট্রেন চলা শুরু করতেই আমরা হৈচৈ শুরু করে দিলাম। ট্রেনের এই কামরাটায় আমরা চারজন ছাড়া আর কেউ ছিলোনা। যত ইচ্ছে চিৎকার করা যাবে বাধা দেবার কেউ নেই এই চিন্তা করেই যেন দিগুণ ভলিউমে চিৎকার করে উঠলাম।। ট্রেন মোটামুটি যেভাবে এঁকে-বেঁকে চলা শুরু করলো তাতে আমরা একপাশ থেকে অন্য পাশে যেন ছিটকে পরতে লাগলাম। সবাই ঠিক যেনো বাচ্চা মানুষের মত হয়ে গেলাম । ট্রেনের আমাদেরকে ছুড়ে দেয়ার পাশাপাশি আমরা নিজেরাও একপাশ থেকে অন্য পাশে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলাম। যেদিকেই সুন্দর সব দৃশ্য সেদিকেই সবাই মিলে ছুটে যেতে লাগলাম। আর কার আগে কে সেইসব দৃশ্য ক্যামেরা-বন্দি করবো সেই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো। ট্রেন একটু ঘুরলেই দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে যাবে, তাই হুড়োহুড়ি করে সবাই ছবি নিতে চাইছিলাম। আশেপাশের এক একটা দৃশ্য দেখে মনে হতে লাগলো যেনো এখানে না এলে জীবনটাই অপূর্ণ থেকে যেতো। সুন্দর লাগার অনুভূতি প্রকাশের যেসব শব্দ জানা ছিলো, দেখলাম কারোই ঠিক কিছু মনে আসছেনা, সবারি মনে হয় মাথাটা এলোমেলো হয়ে গেছে এসব দেখে, নইলে খালি ওয়াও আর উহ আহ করা ছাড়া আর কোন শব্দ কারো মুখে আসছিলোনা কেন।

SAM_4945

ট্রেন-চলা পথের দুধারের সবুজ গাছগুলাতে যেন স্নিগ্ধতার মাখামাখি, কেলেন্ডারের পাতায় দেখা সবুজের মত বাড়াবাড়ি রকম সবুজে সজ্জিত প্রত্যেকটা গাছ। অনবরত যখন এইসব কিছু গিলে যাচ্ছি, ঠিক তখন আমাদেরকে নিয়ে লাল ট্রেনটা বারনিনা রেঞ্জের উপর দিয়ে এঁকে বেঁকে চলে ক্রমশ আর ও উঁচুতে উঠে যাচ্ছিলো। উপর থেকে নিচের লোকালয়গুলোকে মনে হচ্ছিলো ঠিক যেন ছোট বাচ্চাদের খেলনার মত। যেতে যেতে কিছুক্ষণ পর টানেল মত পড়লো, হঠাৎ ই চারিদিক যেনো অন্ধকার হয়ে গেলো, পরমুহুর্তেই আবার টানেল ছাড়িয়ে আলোতে চলে এলো ট্রেন। ছবি তোলায় মগ্ন থাকায় টানেল খেয়াল করে উঠতে পারিনি, হঠাৎ অন্ধকার হওয়াতে মৃদু একটা চিৎকার করে উঠেছিলাম। সেই চিৎকার সংক্রমিত হবার আগেই ট্রেন আলোতে চলে আসছিলো বলে বাঁচোয়া। আমার চিৎকারের রেশ কাটতে না কাটতেই আমার বন্ধুদের অস্ফুট চিৎকার কানে এলো। কাহিনী কি দেখার জন্য মাথা ঘুরিয়ে আমার নিজের বন্ধ মুখ ও হা হয়ে গেলো। পাহাড়ের চূড়ায় ছাড়া ছাড়া করে যেন বরফ জমে আছে। সেই দৃশ্য আমার চোখকে কেমন যেন জাদু করে ফেললো। আমি স্পেল বাউন্ডের মত তাকিয়ে খালি দেখতে লাগলাম, হুশ ফিরল ট্রেনের বাক ঘোরায় পাহাড়ের চূড়াটা যখন ভোজবাজির মত অদৃশ্য হয়ে গেলো চোখের সামনে থেকে। নিজের উপর মেজাজ গরম হয়ে গেলো আমার, ছবি না তুলে ক্যামেরা হাতে নিয়ে বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকার জন্য। এখন যদি এই দৃশ্য আর না দেখতে পাই, সারাজীবন আফসোস করতে করতেই মরে যাবো। কিন্তু আমার সব আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে কিছুক্ষণ পরেই আবার সেই চূড়াটা উকি দিলো আর ও কাছ থেকে, আমার হাতের আঙ্গুল ক্লিক বাটন টিপে যেতে লাগলো অবিরাম। এইবেলা পাহাড়ের পাদদেশে লুকিয়া থাকা লেক এর গাঢ় সবুজ পানি ও যেনো আমার চোখে নতুন নেশা ধরিয়ে দিলো। সাদা বরফে ঢাকা পাহাড়ের চূড়া, পাহাড়ের ঢালে জন্ম নেয়া হাল্কা সবুজ রঙের গাছ আর গাঢ় সবুজ রঙের পানি সব মিলে কি যে অপূর্ব একটা দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে তা ঠিক বলে বোঝানো যাবেনা, আমরা হতবিহবল হয়ে দেখতে লাগলাম। নিজেদেরকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছিলো। এভাবে বাকী পথটুকুতে বারবার এই পাহাড়ের চুড়াগুলোকে ঘুরেফিরে দেখতে পেলাম। এদের মধ্যে যে কোনটা পিজ বারনিনা আর কোনটা পিজ পালু সেটা ঠিক আলাদা করতে পারলামনা।

DSC07874

DSC07889

চলতে চলতে ট্রেন যেন হঠাৎ ই অন্যরকম একটা জায়গায় চলে এলো যখন দুপাশে আর কোন গাছপালা নেই শুধু পাহাড়ের ঢাল দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের ঠিক গা বেয়ে ট্রেন চলে যাচ্ছিলো সর্পিল গতিতে। পাহাড়ের গায়ে জমে থাকা বরফ কোথাও গলে গলে ছোট্ট ছোট্ট লেকের মত হয়ে গেছে। কোথাও আবার বরফ গলা ধূসর পাথুরে মাটিতে নতুন সবুজ ঘাস জন্ম নিয়েছে। কোথাও কোথাও পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নেমে যাওয়া উদ্দাম পাহাড়ি ঝর্নার দেখা পাওয়া যাচ্ছিলো। সে আর এক অদ্ভুত দৃশ্য! বিহ্বল হতে হতে নতুন করে অবাক হওয়া ও ভুলে গেছি ততক্ষণে। মুখ দিয়ে কোন শব্দ করছিনা কেউই, খালি বিহ্বল বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া ঐ মুহূর্তে ঠিক যেনো কারোরই কিছুই করার কথা মনে ছিলোনা, এমনকি হাত পা নাড়া ও যেন ভুলে গেছি।

IMG_0709

DSC07919

এমনি বারবার অবাক হতে হতেই দুঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে সেইন্ট মরিটয এসে পড়লাম। ট্রেন থেকে নেমে শেষবারের মত আর একবার অবাক হলাম। ওইতো খুব কাছেই দেখা যাচ্ছে লেকের সবুজ টলটলে পানি, হাত বাড়ালেই ছুতে পারবো এখনই। ইতস্তত কিছু বেলে মাছ যেন লেকের স্বচ্ছ জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। লেকের একপাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সাইক্লিং করছে। লেকের ওপাশেই বুনো সবুজ গাছের সারি। লেকের জলে সেই গাছেরই ছায়া পড়ছে। এই ভয়ঙ্কর ঠাণ্ডার মাঝে ও এক তরুণীকে দেখলাম মহা আনন্দে সান-বাথ করে লেকের সেই সবুজ জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাতরে চলে গেলো বহুদূর । লেকের ওপাশে সারি করা গাছের গা ঘেঁষে অনেক উঁচুতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ম্যাপে দেখা সেই পিজ এলা পাহাড়। পাহাড়ের গা জুড়ে এখন ও এখানে সেখানে ইতস্তত ছড়িয়ে আছে সাদা বরফের চাড়। একজীবনে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে এতবার অবাক বোধহয় কখনোই হইনি আগে। এই মুগ্ধতার যেন কোন সীমা পরিসীমা নেই।


মন্তব্য

guest_writer এর ছবি

ওমা জেনেভা আসেননি?
অনেক কিছু মিস করলেন আপা
আমি সুইজারল্যান্ড/ জেনেভা নিয়ে লিখেও আপনাকে জেনেভা আনতে পারলাম না, আফসোস
এখানে আমার জেনেভা নিয়ে লিখা:
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/39311
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/39966

মাহমুদ.জেনেভা

বন্দনা এর ছবি

আপনার পোষ্টটা লিখবার আগেই যে ঘুরে এসছি কি করবো বলুন।তবে ইউরোপের অনেক কটা দেশ একটু একটু করে টাচ করে আসতে পারছি এই জন্য ই, এক দেশে সব দেখলে অন্য দেশের জায়গাগুলিকে মিস করতে হোত যে । তবে আবার যদি সুযোগ আসে আপনার ওখানে যাবো নিশ্চয়।

guest_writer এর ছবি

দারুন জায়গা। হিংসিত হাসি

পড়াচোর।

বন্দনা এর ছবি

আপনাকে হিংসিত করতে পেরে ব্যাপক ভালো লাগছে পড়াচোর। খাইছে

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দারুণ ট্যুর দিয়েছেন দেখা যায়। বাকি অংশের আশায় রইলাম।
আমি কিন্তু হিংসা করলাম না। আমি প্রায় এরকম একটা জায়গায় থাকি চোখ টিপি হো হো হো

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রণদীপম বসু এর ছবি

রতন, যতক্ষণ না এরকম সচিত্র প্রমাণ পাচ্ছি, ততক্ষণ এটা চাপাবাজি হিসেবেই তুলে রাখলাম।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমার ফেসবুক অ্যালবামগুলোতে আপনার অবাধ দর্শনাধিকার আছে রণ'দা। চোখ টিপি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মুস্তাফিজ এর ছবি

আমাদের দেশ এরচাইতেও অনেক সুন্দর, সবসময় দেখি বলে চোখে লাগেনা।

...........................
Every Picture Tells a Story

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আমি ট্রেইন ট্রেইন পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, ট্রেইনের কিছু ছবি থাকলে হতো, আমি আবার ট্রেইন বিশেষ ভালু পাই কিনা, তো দেখি লাল ট্রেইনের সুন্দর ছবি দিয়েছেন। হাসি

সুন্দর হয়েছে লেখা, (ছবিগুলো একটু বেশি স্যাচুরেটেড কি? সবুজ রঙটা একটু চোখে লাগছে)
চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

বন্দনা এর ছবি

ধন্যবাদ আপু ।লাল ট্রেনটাকে দেখতে আমার ও খুব সুন্দর লাগছিলো যখন সবুজ গাছপালার মাঝদিয়ে ঝিকঝিক ঝিকঝিক করে ছুটে যাচ্ছিলো।
সবুজ টা একটু চোখে লাগছে জানি, তবে আমার ভীষণ ভালো লাগে এই কটকটে সবুজটা।

বন্দনা এর ছবি

মন খারাপ
যাকগে সবসময় ভালো জায়গায় থাকলে ভালো জিনিস দেখে দেখে চোখ পচে যেতো। তাই কালেভাদ্রেই ভালো জিনিস দেখা ভালো চোখ টিপি

অপছন্দনীয় এর ছবি

দারুণ জায়গা হাসি

বন্দনা এর ছবি

ধন্যবাদ পছন্দনীয়দা, নেন আপনাকে একখান আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রণদীপম বসু এর ছবি

ইশশশশ্ ! প্রকৃতি এমন ভয়ঙ্কর সুন্দর হয় কী করে !!

আহা ! এ জীবনে বুঝি আর ছোট্ট গণ্ডিটার বাইরে যাওয়া হলো না ! সমস্যা, পরজন্ম বলে আর কিছু নাই !!
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

বন্দনা এর ছবি

আপনি এক্কেবারে ঠিক বলছেন,পরজন্ম থাকলে অনেক ভালো হোত রনদীপমদা।

বইখাতা এর ছবি

চলুক কিছু ছবি দারুণ সুন্দর।

বন্দনা এর ছবি

আপনার জন্য একটা আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- বইখাতা

মুস্তাফিজ এর ছবি

দারুণ জায়গা, সুন্দর লেখা।

...........................
Every Picture Tells a Story

বন্দনা এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই। হাসি

ত্রিমাত্রিক_কবি এর ছবি

সবগুলো ছবিই অছাম ... লেখায় 'উত্তম'

বন্দনা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কবিকে।

The Reader এর ছবি

গুরু গুরু

বন্দনা এর ছবি

লইজ্জা লাগে

মৌনকুহর এর ছবি

চলুক

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

বন্দনা এর ছবি

ধন্যবাদ মৌনকুহর।

সিউল  রায়হান এর ছবি

যাক, তেমন কিছু তাহলে মিস হয়নি।

আমিও সুইজারল্যান্ড ঘুরতে গিয়েছিলাম তবে সেন্ট মরিটয না যেয়ে গিয়েছিলাম ল'যান এর কাছেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ক্যাসলগুলির একটা শ্যাটু-দ্য-শিলন দেখতে....তবে ওখানে যাওয়ার পথে+ফেরার পথে জুরিখে আসার সময় আপনার পোস্ট করা সবকয়টা দৃশ্যই দেখেছি ভাবতেই দারুন লাগছে। আমার অনেক অতৃপ্তি ছিল সেন্ট মরিটয নিয়ে, বিশেষ করে আপনি ওদের যেই ফাটাফাটি সিনিক রুটটায় গিয়েছেন সেটায় যেতে পারিনি জন্যে......তবে এখন ভাল লাগছে কারণ আপনার পোস্টের সবকিছুই তো আমি দেখেছি।

আমার ক্যামেরাটা সাধারণ একটা সাইবারশট ক্যামেরা, দূরের ছবি/ট্রেন থেকে তোলা ছবি তেমন একটা ভাল আসেনা জন্যে একটা সময় মনে হয়েছে ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো ভবিষ্যতে দেখলে মন খারাপ হবে তাই ছবি তোলা বাদ দিয়ে ট্রেনের বাইরের এই দৃশ্যগুলো দেখেছি। নীল আকাশের মাঝে উড়ে বেড়ানো সাদা মেঘ ডান দিকে-পাহাড়ের মাঝে আটকে থাকা ধোঁয়াটে মেঘ-জেনেভা লেক-তার পাশ দিয়ে চলা ট্রেনলাইন-জুরিখের কাছে ঢেউ খেলানো দিগন্তবিস্তৃত মাঠ-তারমাঝে ২/১টা বাড়ি-পাহাড় কেটে চলা ট্রেনলাইন-বিকেল বেলায় সূর্যের আলো প্রতিফলন জেনেভা লেকে-ছোটবেলায় পোস্টারে দেখা দৃশ্যগুলি হঠাৎ করে চোখের সামনে দেখা......আসলেই স্বর্গ এটা। আপনি ছবি তুলেছেন, তবে আমি এতই মুগ্ধ ছিলাম এগুলো দেখে যে ছবি তুলতে যেয়ে যদি কোন কিছু মিস হয়ে যায় সেই ভয়ে ছবিও তুলিনি একসময়....নিজের চোখটাই সেরা ক্যামেরা হয়ে ছিল।

আপনার বর্ণনা দারুন লাগলো। ভাল থাকবেন।

বন্দনা এর ছবি

ধন্যবাদ সিউল রহমান, আপনি ও অনেক অনেক ভালো থাকুন।

কৌস্তুভ এর ছবি

অ্যাঁ

আমি ইউরোপ গেলেও সুইস আর ইতালীয় প্রকৃতিই দেখা হয় নি মন খারাপ

বন্দনা এর ছবি

তাইলেতো আপনার আর একবার যাওয়া অবশ্য কর্তব্য। চিন্তিত

কৌস্তুভ এর ছবি

যাওয়ার পথে তো একবার হাঁক দিয়ে যেতে পারতেন, আমিও ভিড়ে পড়তাম আপনাদের সঙ্গে!

বন্দনা এর ছবি

গতবছর যখন আপনার শহর ঘুরে এলাম, তখন ডাক দিলে তাও শুনতে পেতেন, আমার ও ভালোমন্দ কিছু খাওয়া দাওয়া করা হোত নাহয়। কিন্তু এবার যাওয়ার আগে এশিয়া থেকে হাঁক দিলে আমেরিকায় বসে শুনতে পেতেন কৌস্তুভদা। বলতে হয় আপনার কান তো সেরম তাইলে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

একবার যেতে হবে...

আমাদের এখানে ক্যানাডার আলবার্টা আর ব্রিটিশ কলম্বিয়াও এর মতই সুন্দর...(বা কাছাকাছি)

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

বন্দনা এর ছবি

আমার বন্ধুদের ছবিতে ও দেখেছি কানাডা ও অনেক সুন্দর। তবে সুইজারল্যান্ড ও দেখে আসতে পারেন, ভালো লাগবে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

আশালতা এর ছবি

বাস্‌ রে ! বাক্সের বাইরের দুনিয়াটা বুঝি এমন দেখা যায় ?? আহা! আহা!

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

বন্দনা এর ছবি

দিদি দুনিয়াটা যে এত সুন্দর আমি ও আগে জানতামনা।এখন তো খালি ঘুরতে ইচ্ছে করে এখানে সেখানে। এত সুন্দর জিনিস না দেখে মরা ও যে অন্যায়।

guest_writer এর ছবি

চমৎকার !! লিখতে থাকুন এমন আরো। আরে অবাক হবার ক্ষমতাটাই তো চায় আমাদের সবার মাঝে অনেক অনেক বেশি করে। শুভেচ্ছা- অণু

বন্দনা এর ছবি

ধন্যবাদ অণুদা। আপনার মত অতো সুন্দর করে লিখতে পারিনা, তবে চেষ্টা করবো ।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভালো হয়েছে লেখাটা।
আনন্দের তীব্রতাটুকু ধরা যাচ্ছিলো।

------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

বন্দনা এর ছবি

ধন্যবাদ পলাশ। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।