সক্কালবেলায় এসেই আমার ল্যাব-মেট আমাকে বলে বসলো, ‘কি ব্যাপার তুমি কি মুসলিম হয়ে গেলা হঠাৎ করে’। আমি তো ওর কথা শুনে যারপরনাই আকাশ থেকে পড়লাম। তারপর নিজের পরিধেয় বস্ত্রের দিকে তাকিয়ে আমার হুশ হোল, মনে মনে বললাম ও আচ্ছা। কথা বলবো কি বলবোনা এই দ্বিধা কাটিয়ে উঠে একটু ভয়ে ভয়েই খোনা গলায় সকালের প্রথম বাক্যটা বলে ফেললাম। আমার এহেন কণ্ঠ শুনে ইউং বেচারি যারপরনাই চমকে উঠে লাফ দিতে বাকী রাখলো কেবল। ওর চমকে উঠা উপেক্ষা করেই আমি বলে চললাম, ‘গলায় ব্যাঙ ঢুকেছে, তাই কথা বের হচ্ছেনা। আজকে তাই বাসা থেকে আরো কিছু গরম কাপড় নিয়ে এসেছি, এখন ওগুলা গলায় ও মাথায় জড়িয়ে বসে আছি”। ঘটনা হচ্ছে আমার মাথার ঠিক উপরেই এসির একখান আউট-লেট, সেখান থেকে ভুরভুর করে বের হওয়া ঝিরঝিরে ঠাণ্ডা মৃদুমন্দ বাতাস রোজ বেশ ভালোই লাগে, প্রাণে কেমন যেন একটু ও দোলা দিয়ে যায় । কিন্তু গলা বসে যাওয়াতে সেই মৃদুমন্দ বাতাস কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে তাই হিজাব স্টাইলে মাথা আর নাক, কান ঢেকে জুত করে চেয়ারে বসেছি। ছুটির দিন হলে ও আমার মত পাঁচ ছয়জন নিবেদিত প্রাণ রিসার্চার এর পদচারনায় ল্যাব অল্প হলে মুখরিত হয়ে উঠেছে। এদের এক একজন দরজা দিয়ে ঢুকেই আমার দিকে একবার তাই অবাক হয়ে তাকাচ্ছে। এতদিন পর আমি হঠাৎ হিজাব নিলাম নাকি সেই বিষয়ে ওদের মাঝে একটু মতবিরোধ দেখা দিয়েছে বুঝতে পারলাম।
ইউং হোল যাকে বলে আমাদের ল্যাবের ডক্টর কাম নিউট্রনিস্ট। একটু পরেই আমার কাছে তার ভাইটামিনের ভাণ্ডার নিয়ে উপস্থিত। আমাকে কিছু ভাইটামিন দিয়ে গেলো পানিতে গুলিয়ে শরবত করে খাওয়ার জন্য, কিছু দিলো জিভে ফেলে সময় নিয়ে খাবার জন্য, সাথে একটা পিচফল দিয়ে গেলো। ঔষধবিষুধ বরাবরি আমার চোখের বিষ, কিন্তু ওকে না বলতে পারলামনা। পরে খাবো বলে টেবিলে সাজিয়ে রাখলাম। আমার অকর্মণ্য দশা দেখেই কিনা কে জানে একটু পরই ও একটা বোতলে লিউকোওয়ার্ম পানি নিয়ে হাজির, ভাইটামিন ফেলে চটপট আমাকে খেয়ে ফেলতে বললো আর চোখ মটকে বললো তুমি কি একটু হানি ট্রাই করবা নাকি এটা গলার জন্য তো ভালোই প্লাস মেয়েদের জন্য বেশ ভালো। ওর চোখ মটকানোর কাহিনী ধরতে পারিনি, তবুও বললাম যা দিয়েছো ওগুলা আগে শেষ করি তারপর নাহয়..। ওকে ওকে বলতে বলতে নিজের ডেস্কে চলে গেলো ইউং।
কিছুক্ষণ পরেই পাশের সীট থেকে ইউং জানতে চাই আমার রাশি যেনো কি, ভয়ে ভয়ে বললাম বৃশ্চিক, আবার নতুন কোন হেপা শুরু হয় কে জানে। একটুপরি আমাকে বলে তুমি কিন্তু কন্যারাশি আর বৃষরাশির ছেলে ছাড়া বিয়ে করবেনা, এটা তোমার বাবাকে বলে দিয়ো। একবার মিনমিন করে বললাম আচ্ছা সে দেখা যাবেখন, এখন ওর সাথে তর্ক করার মত গলার জোর নেই আমার। পরমুহুর্তেই কি মনে হোল, বলে ফেললাম বাবামা কি ছেলের চরিত্র, পড়ালেখা, চাকুরী আগে দেখবে না রাশি আগে দেখবে, তোমার কি মনে হয়? এত কিছু দেখলে এই জনমে আর ছেলে কপালে জুটবে বলে মনে হয়না ইউং!!কিন্তু ইউং এর সেই একি কথা, তুমি যদি লঙ ম্যারিডলাইফ চাও তোমার এদের ছাড়া কাউকে বিয়ে করা উচিত না, বাকীদের সাথে তোমার কমপ্যাটিবিলি এক্কেবারেই কম। চুপ করে গেলাম, রাশিতে বিশ্বাস করিনা এই কথা বলে এই মুহূর্তে আর একখান ক্যাচাল বাধাবার চেষ্টা আর নাই বা করলাম। মেনে নিয়েছি ভেবে ওদিকে ইউং ও তাই চুপ মেরে গেলো, আমি ও ওকে ছেড়ে কাজে মন দেই।
কিন্তু না আজকে মেয়েটাকে কথায় পেয়েছে। দশ কি পনেরো মিনিট পরেই আবার বলে আমার ডেস্কে আসোতো তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো। গেলাম, কোথাকার কোন চাইনিজ ওয়েবসাইট থেকে কোনো এক হাতের ছবি উদ্ধার করেছে এই পাগলি। এইবার সেই হাতের ছবি আমাকে ও দেখতে হবে। হাতের তালুর কোন কোন জায়গায় ম্যাসাজ করলে শরীরে কোন কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভালো থাকবে এইবার সেই কাহিনী ও আমাকে শুনতে হোল। সেইখান থেকে সরে এসে চটজলদি আরো কিছু ছবি আমাকে দেখতে হোল। কিছু ব্যায়াম আমার করা উচিত যেগুলাতে কোন পয়সা খরচ হবেনা কিন্তু আমি নাকি ফিট থাকবো। এরপর ও অন্যকিছু জ্ঞান দিতে চাইছিলো, আমি না থাকতে পেরে বলে ফেললাম আমি ঠিক ভালো-বোধ করছিনা, আমার বোধহয় একটু বিশ্রাম নেয়া দরকার। শিউর শিউর বলে আমাকে ডেস্কে ফেরত পাঠালো ইউং। এই যাত্রা বেঁচে গেলাম আর কী। ডেস্কে এসে যেইনা নিজের কাজে হাত দিয়েছি, অমনি ইউং এর কণ্ঠ, “একটা মিউজিক দিচ্ছি তোমাকে, মেসেঞ্জারে আসো। এটা শুনলে অনেক রিলাক্স লাগবে, মাথাটা ডেস্কে রেখে মিউজিক শুনো আর বিশ্রাম করো”। অগত্যা কি আর করা। হুদাই এইবার হেডফোন কানে লাগিয়ে বিশ্রামের ভান করি ওর হাত থেকে রক্ষা পেতে।
মন্তব্য
ইশ! আপনারে কত ভালোবাসে !
হুম রে ভাই, বেশি ভালোবাসা ভালু নয় পদে পদে টের পাই।
ও। এই নি অবস্থা? খাইছে। হায় হায় বিয়া করনের লাইগা এত সব হ্যাপা
হুম তাপসদা আপনার রাশি টা বলে দিয়েন, আপনার উপযুক্ত কোন রাশির কন্যা হবে ওর থেকে জেনে নিয়ে আপনাকে বলে দেবোখন।
রাশি দেখে গলায় রশি লাগাতে হবে.... ভালো ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আপনি এখন ও গলায় রশি না লাগালে, নির্ভয়ে রাশি বলে ফেলেন, আপনারটা ও জেনে দিলাম নাহয় ।
এরপর ইউং এর কাছে যাবার আগে কানে হেডফোন লাগিয়ে যাবেন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
নীড়দা, কানে হেডফোন লাগালেই কি, ও এক ডেস্ক দূরেই বসে, কাছে এসে কাধে হাত দিয়ে ঝাকি দিতে ওর কষ্ট হয়না মোটেই
বাহ, কতো কেয়ারিং ল্যাবমেট!
আচ্ছা, তুলা রাশির বেলায় কী নিয়ম?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অনিয়ম !!!
হুম কেয়ারিং এর একটা করুন কাহিনি শোন। গিয়েছি টোয়াইলাইট দেখতে, আগে থেকে সিনামের কাহিনি পড়ে এসে হলে বসে সারাক্ষন আমার কানের কাছে কাহিনি বর্ণনা করেছে, এমন কেয়ার কে চাই বলো দেখি? আর তোমার জনে ভালো হবে তুলা, মিথুন আর কুম্ভ রাশির জাতক।
নেন ঔষুধ দেবার জন্য।
আমি ভাবলাম ইউং বোধ হয় রোম্যান্টিক বালক, চান্স পেয়ে ভালোবাসার পোটলা নিয়ে বেতাল ভুত সেজেছে ! তা না, নাকি বালিকা ! ধুরো ! পড়তে পড়তে লেখিকাকে কত রকম করে পচাবো তার লিস্টি করছিলাম, সবতাতে জল ঢেলে দিল। ধেৎ!
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
হেহেহে দিদি, তোমার উৎসাহে একবারে জল ঢেলে দিলাম যে বড্ডো
অষুধও বিষ আবার অসুখও বিষ--------- তাই ২০ বিষে কাটাকাটি!
তাই অষুধ খাওয়াটাই বিধেয়
নাদিম ভাইয়া, অষুধ পচা।
সচলায়তনে এমন লেখা মডারেশন পার হয়ে কিভাবে আসে...ফেসবুক স্ট্যাটাস টাইপ লেখা...নাকি সচল হয়ে যাবার পর লেখার মান নিয়ে তেমন ভাবার দরকার পড়েনা... একজন নিয়মিত এবং পুরানো পাঠক হিসেবে মন্তব্যটি করলাম।
দয়া করে কী ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে নিবেন না।
আমার কাছে তো লেখাটা বেশ ভালো লাগলো। এতো সুন্দর করে কি কেউ ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়? দিলে বইলেন, এমন আগ্রহ নিয়ে সেটাও পড়বো।।
বন্দনার লেখাগুলোর মান উত্তরোত্তর ভালো হচ্ছে বলেই আমার মনে হয়। ওঁর লেখার সহজিয়া ভাবটাই পাঠককে টানে। ক্রমবর্ধমান পাঠকপ্রিয়তাও সে কথাই বলে। পাঠকের ব্যাক্তিগত পছন্দ অপছন্দে ভেদাভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু লেখাটা একেবারেই মডারেশন ফেল করার মত মনে হয়নি কিছুতেই। আমার তো লেখাটা বেশ ভালো লেগেছে। লেখাটা পড়তে পড়তে মুখে যে একটা ছোট্ট হাসি চলে আসে সেটা তো যেকোনো লেখা পড়লেই আসেনা। আমার কাছে হাসিটা তাই ছোট্ট হলেও ফেলনা নয়।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
কষ্ট করে পড়েছেন এই জন্য ধন্যবাদ আপনাকে মুস্তাফিজ ভাই। যেহেতু লিখাটা আমার, আপনার ভালো না লাগার দায়ভার ও আমার। পরবর্তীতে লেখার সময় আপনার এমন মন্তব্য যাতে পেতে না হয় চেষ্টা থাকবে।
ল্যাবে এত মজা হয়???
আমি তো ল্যাবে গেলে খালি ঘুমাই। আজ তো যাই-ই নাই।
অলস সময়
পল্লুভাই, এত মজা হয়নারে ভাই। উইকেন্ডে সবাই একটু রিলাক্স থাকে, হাল্কা কথাবার্তা বললে তাই কেউ মাইন্ড খায়না আর কী।
'কি ব্যাপার তুমি কি মুসলিম হয়ে গেলা হঠাৎ করে'। ভাগ্যিস ছাগু বলে নাই।
হাহহা প্রৌঢ় ভাবনা, বেশ বলেছেন, তবে ও চাইনীজ কিনা এই টার্মতার সাথে পরিচিত না।
facebook
হাতের তালু ম্যাসাজ করে অসুখ সারানোর উপায়টাকে মনে হয় আকু প্রেসার বলে। কিছু ক্ষেত্রে নাকি ভালই কাজ হয়। ইউং বেচারিকে ভালা পাইলাম--
বেচারী একটু বেশিই ভালো, আমার আবার এত ভালো সয়না সবসময়।
সেবাব্রতা ইউংয়ের কথা পড়ে 'ইয়ং' হতে মঞ্চায়!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
কার ঘাড়ে কটা মাথা যে আপনারে বুড়ো কয় রোমেলদা।
সারাদিন খালি ল্যাবে পড়ে থাকলে চলবে?!...জ়ীবন পাইনসা হয়ে যাবে। পারলে একটা প্রেম করেন (পার্ট টাইম); সেটা সম্ভব না হলে একটা বিয়া করেন
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
জীবনটা এম্নিতে পান্সা উচ্ছালাপু। প্রেম এর টাইম ও নাই, বয়স ও নাই কি করা।
আরে বাহ!
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ ফাহিম।
নতুন মন্তব্য করুন