পুরাণকথা, পর্ব-৯

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: শনি, ০৭/০১/২০১২ - ১০:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পৌরাণিক যুগের শুরুতে দৈহিক শুচিতাই যেন ক্রমে চরিত্রের সংজ্ঞা হয়ে দাড়াচ্ছে।

অতি ক্রুর স্বভাবাপন্ন নর-নারী কোন ক্রমে দৈহিক শুচিতা রক্ষা করতে পারলেই তাঁরা চরিত্রবান আর চরিত্রবতী হচ্ছেন।

সংহিতা যুগে এ পরিবর্তনের গৈরব বহন করেছেন, উদ্দালক ঋষিপুত্র শ্বেতকেতু।

:সংহিতা যুগে উদ্দালক নামে এক মহর্ষি ছিলেন, তাঁহার পুত্রের নাম ছিল শ্বেতকেতু। তবে এই শ্বেতকেতু, উদ্দালকের ঔরসে বা ক্ষেত্রে জন্মাননি। জন্মিয়াছিলেন পিতার এক শিষ্যের ঔরসে।

একদা তিনি পিতা-মাতার নিকট বসিয়া বিশ্রাম গ্রহণ করিতেছিলেন, এমন সময় এক ব্রাহ্মণ আসিয়া তাঁহার জননীর হস্ত ধারণপূর্বক কহিলেন, আইস আমরা যাই।

ঋষিপুত্র পিতার সমক্ষেই মাতাকে বলপূর্বক ('বলাৎ ইব') লইয়া যাইতে দেখিয়া সাতিশয় ক্রুদ্ধ হইলেন। মহর্ষি উদ্দালকপুত্র শ্বেতকেতুকে তদবস্থ দেখিয়া কহিলেন, 'বৎস ক্রোধ করিওনা, ইহা নিত্য ধর্ম। এ ভূমন্ডল মধ্যে, সমস্ত রমণীরাই অবারিতা। গোগণ যে রকম ব্যবহার করে, প্রজাগণও স্ব স্ব বর্ণে সে রকম আচরণ করিয়া থাকে'। স্ত্রীগণ শত সহস্র পুরুষে আসক্ত হইলেও উহারা অধর্ম লিপ্ত হয়না।

ঋষিপুত্র পিতার বাক্য শ্রবণ করিয়াও ক্ষান্ত হইলেন না, প্রত্যুত পূর্বাপেক্ষা ক্রুদ্ধ হইয়া মনুষ্যমধ্যে বলপূর্বক এই নিয়ম স্থাপন করিয়া দিলেন যে, অদ্যাবধি যে স্ত্রী পতিভিন্ন পুরুষান্তর সংসর্গ করিবে এবং যে পুরুষ কৌমারব্রহ্মচারিনী বা পতিব্রতা স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্য স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, ইহাদের উভয়কেই ভ্রূণহত্যা সদৃশ ঘোরতর পাপপঙ্কে লিপ্ত হইতে হইবে।"
(মহাভারত, আদিপর্ব, অধ্যায়: ১২২৷৷১/১২২/২৪৷৷ অনুবাদক: কালিপ্রসন্ন সিংহ)

শ্বেতকেতু সেই যুগে পক্ষপাতশুন্য অনুশাসনই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যদিও পুরুষরা তাঁর বিধান মানতোনা। আর শ্বেতকেতু নিজে যেহেতু ক্ষেত্রজ পুত্র ছিলেন, তারও কোন পরিবর্তন করেননি।

আর এই পরিবর্তনকে পরিশোধিত করেছিলেন, দেবগুরু বৃহস্পতির ভাইপো, উতথ্যের পুত্র দীর্ঘতমা।

জ্ঞানী জন্মান্ধ দীর্ঘতমা বিদ্যাবলে প্রদ্বেষী নামে এক রূপসী তরুণী ব্রাহ্মণীকে পত্নীরূপে লাভ করেছিলেন।

পরবর্তীতে দীর্ঘতমা, নিখিল গোধর্ম অধ্যয়ন করে, নিঃশঙ্কচিত্তে, প্রকাশ্যে মৈথুনাদি করতে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। পত্নী প্রদ্বেষী একারণে রূষ্ট হলে একদিন দীর্ঘতমা স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'তুমি কেন আমার সাথে খারাপ আচরণ করো?' প্রদ্বেসী জবাব দিয়েছিলেন, "স্বামী, তাঁর স্ত্রীর ভরণপোষণ ও প্রতিপালন করেন বলে তাঁকে ভর্তা বলা হয়। কিন্তু তুমি জন্মন্ধ। তার কিছুই করতে পারোনা। বরং আমিই তোমার ও তোমার সন্তানদের চিরকাল ভরণপোষণ করে অত্যন্ত ক্লান্ত ও পীড়িত হয়ে পড়েছি। আমি আর তোমার ও তোমার সন্তানদের আগের মতো ভরণপোষণ করতে পারবোনা।"

দীর্ঘতমা প্রদ্বেসীর এই স্বগর্ব উক্তি শুনে বলেছিলেন, "আমি আজ হতে পৃথিবীতে এই নিয়ম প্রতিষ্ঠিত করলাম, স্ত্রী জাতিকে যাবজ্জীবন কেবল মাত্র স্বামীর অধীন হয়ে থাকতে হবে, স্বামী বেঁচে থাকলে বা মারা গেলেও, স্ত্রী পুরুষান্তর ভজনা করলে তিনি অবশ্যই পতিত হবেন। আর পতিহীনা নারীদের প্রচুর সম্বৃদ্ধি থাকলেও তা ভোগ করতে পারবেনা। ভোগ করলে অকীর্তি ও পরিবাদের সীমা থাকবেনা।"
সেই থেকেই স্ত্রীগণ পুরুষের অধীন হয়ে যায়।

[url=http://www.sachalayatan.com/42577 ]পুরাণকথা, পর্ব-৮[/url]
[url=http://www.sachalayatan.com/guest_writer/42539 ]পুরাণকথা, পর্ব-৭[/url]
পুরাণকথা, পর্ব-৬
পুরানকথা, পর্ব-৫
পুরাণকথা, পর্ব-৪
পুরাণকথা, পর্ব-৩
[url=পুরাণকথা, পর্ব-৩]পুরাণকথা, পর্ব-২[/url]
পুরাণকথা, পর্ব-১

"ঝাঁপি খুলে বহু পুরাতন একটি নোটবই পেলুম। তখনকার সময়ে আমাদের দেশে ইন্টারনেটের সুবিধা ছিলনা। বই-পুস্তক ঘেঁটেই যা কিছু পাওয়া। কখন, কোথায়, কিভাবে এগুলো পেয়েছিলাম তা আজ আর মনে করতে পারিনা, তাই সূত্র জানাতে পারবোনা। ক্ষমা করবেন।"


মন্তব্য

তাপস শর্মা এর ছবি

ভালো চলছে। চলুক ...

দাদা পর্ব গুলো আরেকটু বড় করলে ভালো হয়না।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ।

তারেক অণু এর ছবি

প্রায় সব ধর্মেই নারীরা পুরুষের অধীন হয়ে যায় এমন আষাঢ়ে গালগল্প দিয়ে !

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

শুধুমাত্র আষাঢ়ে গালগল্প দিয়েই কি ? নাকি পুরুষের এক ধরনের অহং এর কারণে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।