বাসের দোতলায় উঠেই চটপট দুজনে পাশাপাশি সিটে বসে গ্যাজানো শুরু করে দিলাম। বাস থেকে নেমে ট্রেন নিতে নিতে ওর সুইমিং, আমাদের ডান্স ক্লাব, চাইনিজ নিউ ইয়ারের ছুটির প্লানিং এইসব গুচ্ছের কথা চলতে থাকে।কথায় কথায় আমার বাসার কথা ও চলে আসে। এত টাকা দিয়ে একলা একটা বাসায় থাকি এটা শুনলে সবাই বেশ অবাক হয়, দীপক ও হল। এটা আমার কাছে নতুন কিছুনা, আমি শুধু মুচকি হেসে পরবর্তী অবধারিত প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত হতে থাকি।অবশেষে সেই চিরচেনা অজস্রবার শোনা সেই প্রশ্ন ও এসে যায়। প্রশ্ন কমন পরে গেল দেখে আমার হাসিটা আর ও বেশি চড়া শোনা গেল।ও অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বললো কি হল বললে না একা থাকতে তোমার ভয় করে কি না, আর এতে হাসার কি হল। হাসি থামিয়ে বললাম হুম আগে করতো এখন আর করেনা। বলতে বলতেই ট্রেন থেমে গেল, ও বাই বলে লাল-লাইনের ট্রেন নিতে ছুট দিল। আমি ধীরলয়ে বাসার রাস্তায় হাটাঁ ধরলাম।
এ পথে রোজ বার দুয়েক করে হাঁটা হয়, স্টেশন থেকে মাঠের মাঝ দিয়ে পথটা চলে গেছে রাস্তার ওপাশে ঠিক আমার ব্লকের দিকে। মেঠো-পথের দুধারে সবুজ আর পিঙ্গল বর্ণের ঘাসের সাথে কিছু বেগুনি আর হলদে লজ্জাবতী মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।ইন্টারমিডিয়েটের বোটানিতে পড়া মাইমুসা পুডিকার কথা এত্ত সহজে ভোলা যায়, না ভোলা যায় বোটানির মিস রিনা দাসকে। উনার জন্যই কিনা জানিনা বোটানি আমার এক্কেবারে ভালো লাগতোনা।তবে লজ্জাবতী বেশ লাগে। ছোট্টবেলার মত নুইয়ে ছুঁয়ে দিতে মন চায় লজ্জাবতীর পাতা। ছুঁয়ে দিলেই কেমন চুপসে নুইয়ে যেত ডালসহ।
মাঠের রাস্তাটুকু হেঁটে নিয়ে রাস্তার ওপাশে যেতে পথেই ফুটোভারব্রিজ পরে। নিচ দিয়ে রাস্তা ক্রস করার কোন উপায় নাই, রেলিং দিয়ে রাস্তার ডিভাইডার দেয়া। কষ্ট হলে ও রোজ দুবার এই ওভারব্রিজে উঠানামা করতে হয়। আমাদের দেশী ভাইরা অবশ্য রেলিং এর ধার ধারেনা, রেলিং টপকে এইপাশ থেকে ওপাশে চলে যায়। নিয়মকানুনের ধার না ধারা বোধহয় আমাদের কেমন একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। এইখানে ও এসে তাই ব্যতিক্রম ঘটে না। বেশ কদিন আগে শুনলাম কোন একজন শ্রমিক রাস্তায় জলবিয়োগ করে দুশো-ডলার ফাইন গুনেছেন। রাস্তার পাশে এভাবে মুতে দেয়া যে শোভন না দুশো ডলার গুনে এই লোককে এই বয়সে এসে এতদিনে শিখতে হবে কেন আমার মাথায় ঠিক ঢুকেনা।
মেঠোপথ ছেড়ে আমি রাস্তায় এসে উঠি। ওভারব্রিজের হাতলে হাত রাখতে না রাখতেই কোথা থেকে যেন উড়ে এসে জুড়ে বসে আমার ভাগ্নে আমার মাথাটা খারাপ করে দিল। ভাগ্নে আর বোন এসে মাসখানের উপর থেকে গেল আমার কাছে। ওদেরকে এদিক সেদিক ঘুরিয়ে দেখানোতে দারুণ সব সময় কেটেছে। বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওভারব্রিজ এর কাছে আসলেই ভাগ্নে সামনে এসে রাস্তা আটকে দিত তাকে কোলে নেবার জন্য। আমি কোলে নেবার আগেই ওর মা ওর হাত রেলিঙে ধরিয়ে দিত হাঁটবার জন্য। অন্য হাতে আমাকে ধরে গুটুগুটু পায়ে ও তখন সিঁড়ি ভাংতে শুরু করতো। আমি ও ওর সাথে পা মেলাতাম।আবার সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় একি কাহিনী, ওকে কেউ না ধরলে ও একা সিঁড়ি ভাংতে চাইতোনা। রোজই একি কাহিনী হত, আর রোজই ওর একহাত ধরে থাকতাম সিঁড়ি ভাঙ্গার সময়। ওর ছোট্ট হাতটা ধরতে না পারার জন্য হুট করেই আমার কেমন বিষণ্ণ লাগতে থাকে। বাসায় ফিরতে মন করেনা। একহাত দূর দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষগুলাকে মনে হতে থাকে ভিন-গ্রহের কেউ, এত এত লোকজনের মাঝে আমি আর একবার ভীষণ একা হয়ে যেতে থাকি। একা থাকতে আজকাল আমার একটুকু ও ভয় করেনা, ভয় করে শুধু এই একলা আমাকে ।
মন্তব্য
ভালো লাগলো একলা হাটা পথের টুকরো কথন। একা থাকা আসলেই কষ্টের আর তা যদি হয় ভিন্ন কোন দেশে।
এই একাকীত্ব ঘুচিয়ে ফেলুন
একা থাকা কিন্তু খুব মন্দ না অমিভাই, যদি ও না বিষন্নতার ডালপালা গজায়ে বেশি বড় হয়ে যায়।
এই ফেব্রুয়ারিতে দেশে আসছেন?
লেখা ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এই ফেব্রুয়ারীতে আসার প্লান নাই নজুভাই, আসলে আড্ডা মারা যেত বইমেলায় । তানিম ভাইয়ার স্টাটাসে আপনাদের একসাথে ডিনার করার কথা শুনে আমি বেশ হিংসিত।
একা থাকার মজাই বলেন আর কষ্টই বলেন, একা না থাকলে সেটা বোঝা যায় না। আপনার একাকিত্বের কথন ভাল্লাগ্লো।
আমিও প্রায় ৩ বছর একা ছিলাম একটা বাসায়। আমার কাছে তাই বাসা যা, ল্যাবও তাই ছিল। ফলাফল স্বরুপ রাত ১০টার আগে ল্যাব ছাড়তেই ইচ্ছা করত না, কখনো কখনো ১২টা/১টা । বাসায় যেয়ে জাস্ট খেয়েই শুয়ে পড়তাম। আবার যত সকালে সম্ভব আবার ল্যাবে। মাঝে মাঝে ক্লান্ত লাগত। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোটামুটি ২৪ ঘন্টাই নিজের। কি বিরক্তিকর!! কি বিষণ্ণ!! আবার মাঝে মাঝে ভালই লাগত। পুরাটা সময়ই আমার। আহ!! কি শান্তি!! কি স্বস্তি!!
টুকরোকথন জারি থাকুক।
আপনার এই লাইন্টা পড়েই মন ভাল হয়ে গেসে বাউল ভাই।
অনেক দিন পর লিখ্লেন মনে হয়, ভাল লাগল একলা কথন ।
মন খারাপ হতেই হুড়হুড় করে লেখা বের হয়ে গেল আপু।
একা থাকার কষ্টে থাকবেন না, শীঘ্র একটি বঙ্গদেশীয় রাজকুমার আমদানি করে ফেলুন
বংগদেশীয় রাজকুমার কৌস্তভ (মনের কথাটা বলে দিলাম?)
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
রে রে বেয়াদপ, এই দুইটা দ্যাখ -
http://www.sachalayatan.com/kaustubh/40169
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/40201#comment-429788
আহারে।
ও এই অবস্থা!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
"বংগদেশীয় রাজকুমার কৌস্তভ"
কৌ তুই একটা বংগদেশীয় রাজকুমার রপ্তানীর ব্যবসা খুলে ফেল, আমি তোর কাস্টমারের খাতায় নাম লেখালাম যা।
হুহ, আমি নিজের বেবস্থাই করে উঠতে পার্তেছিনা আবার কোম্পানি খুলুম? ওসব ফন্দি বাদ্দাও, উপরের লিঙ্কদুটিতে যে লীড দিইছি তাই ফলো কর।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
পড়লাম। ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ পিপিদা
কথাটা খুব মন ছুঁয়ে গেল আপু।
লেখা ভালো লেগেছে। দেশের বাইরে একাকীত্ব অন্যরকম কষ্টের হয়ে যায়।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আপু এম্নিতে তো অফিসে জাপানী বসের যন্ত্রণায় বেশ ব্যস্ত থাকি, মাঝে মাঝে হুটহাট মাথাটা এলোমেলো হয়ে যায়, আমি আসলে খুবি হোমসিক টাইপের মানুষ।
মন খারাপ নাকি? বাদ্দেন। আসেন গান শুনিঃ
..................................................................
#Banshibir.
ধন্যবাদ পীরসাহেব, আমার একসময়কার প্রিয় একটা গান।এই গান্টা শুনেই আমার বেহালা শিখবার শখ হয়েছিল।
বেয়ালা শেখার কদ্দুর? কিছুমিছু বাজায় শুনান।
..................................................................
#Banshibir.
দিমু দিমু সবুর করেন পীরসাহেব। হাতটা একটু পাকুক।
আমার যাবতীয় বিষণ্ণ লেখাই ভাল্লাগে।
একা/ ওভারব্রিজের, হেঁটে-- তোমার ট্যাগলাইন সিলেকশানে একটু সমস্যা আছে মনে হয়।
একা থাকার কোন মানে নেই। সারাদিন অফিসে কী কী কাহিনি হলো হাত- পা নেড়ে সেইসব আজাইরা গল্প শোনানোর সঙ্গী পেতেই বিয়ে করে ফেলা উচিত। বর পাওয়া যায়, সঙ্গী পাওয়া অবশ্য কঠিন কাজ।
তা জানো তো, নো রিস্ক, নো গেইন? সো ফেব্রুয়ারিতে ছুটি নিয়ে আসো, আমাদেরকে একবেলা পাত পেড়ে খাওয়ার সুযোগ দাও। সিম্পল।
নয়তো (দত্তক নিয়ে) আমাকে নিয়ে যাও। হে হে
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ফেব্রুয়ারীতে পেট পুরায়ে খাওয়ায়ে ধন্য করতে পারলাম্না , তবে যেবার আসবো সেবার খাওয়াতে নিয়ে যাব যদি তুই দয়া করে ঢাকার দিকে আসিস।আর পারলে চলে আয় আমার এখানে,অফিস থেকে এসে জমায়ে আড্ডা দিবনে তখন।
লেখা ভাল হইছে। আর কৌস্তভের কথাটা মাথায় রাইখেন
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হুম কবি সাহেব, কৌস্তুভ এর সাথে আপনি ও ব্যবসার অংশিদারীত্ত নিয়ে ফেলান।
একলা থাকাটা আসলেই মজা, বিয়ের পর আমি এই হতভাগা বুঝতে পারছি। কারন, আগে কোন মুভি বাদ যেত না। সারাদিন ল্যাব নামের কারখানা থেকে এসে জমিয়ে মুভি দেখতাম। আর আজ্জকাল দেশের ইন্টার্নিরত বউ এর কল্যাণে আমার মুভি দেখার শখ উবে যাচ্ছে।
আমি মুভি + কার্টুন মিস করি
হুম এইজন্য দোকলা হবার আগে সব শখটখ মিলিয়ে নিতে বে ভাবছি।
বিষণ্ণকথন।
লেখা যদিও ভালো লাগছে।
ধন্যবাদ দীপ্ত।
আমি একাকীত্ব ভয় পাই! লেখাটা মন ছুঁয়ে গেল!
ধন্যবাদ রংতুলি।
শুনলাম রাজকুমার-ডালিমকুমার-কুমার নিয়া কথাবার্তা হচ্ছে !
লেখায় উত্তম জাঝা।
আরে ভাইয়া, পুলাপানের কথায় বিশ্বাস করবেন না , এরা সব পেকে গেছে বড্ডো।
একলা থাকার একরকম মজা আছে, দোকলা থাকার আরেকরকম।ঙ্কিন্তু দোকলা হলেই যদি একে অপরের সবটুকু সময়ের উপর দাবি জানিয়ে বসে থাকে, তবে সে সান্নিধ্য একসময় বোঝা হয়ে যায়। কিছু একাকী সময় সবারই দরকার হয়, কিন্তু একাকী বেশি সময়ও মনে উপর চাপ ফেলে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
একদম ঠিক বলেছো।
একাকী থাকার চাইতে একা থাকাই ভালো। নিজেকেই সময় দেয়ার টাইম পাইনা আরেকজনকে কোত্থেকে দিব?
লেখা ভালো লাগলো। টুকরোকথন চলুক।
ফারাসাত
ধন্যবাদ ফারাসাত
তিনদিন পর পোস্ট পড়ার অভ্যাসটা আমি কেন জানি বাদ দিতে পারলাম।
২দিন আগে থেকে ভাবছি আপনার পোস্টে হানা দিব, আজকে সেই শুভক্ষণ আসল।
দেরি করে হলেও ভাল লাগাটা জানাইতে দোষ কি? বিষণ্ণ কিন্তু মিষ্টি লেখা।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
ধন্যবাদ শাব্দিক আপনার মিষ্টী মন্তব্যের জন্য।
এত সিরিয়াস একটা লেখার মাঝে এই অংশটি পড়ে হাসি আটকাতে পারলাম না।
জীবনের বেশীর ভাগ সময়ই কি এইরাম মনে হয় না ?
যাই বলেন আর তাই বলেন, একা থাকার মজাই আলাদা ...নিরবিচ্ছিন্য আকাশ দেখা, আকাশের গায়ের সবটুকু মেঘের দখল নেয়া...গামলা ভর্তি চা...আর কী লাগে জীবনে ।
নিন একটি “একলা” গান শুনুন । এই গানটা আমাকে সচল তিথীডোর শুনতে দিয়েছিল ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
ধন্যবাদ আপু গানটার জন্য । আমি ভালোই জানি, দিনের শেষে প্রতিটা মানুষই একা। তবু মাঝেমাঝে কেমন যেন মাথা আউলায়ে যায়।
নতুন মন্তব্য করুন