এপার ওপার কোন পারে জানি না
ওহ আমি সবখানেই আছি...
দুজন মানুষ আসলে দুই পারের মতো। মাঝখানে নদী বইছে। দূরত্বের নদী। মতের। চিন্তার। ধর্মের। দেশের। ভাষার। আদর্শের। কত যে নদী। আমরা নিজের পাড় ধরে হেঁটে যাই। ঐ পাড়কে মনে হয় আমাদের শত্রু। ধর্মের নামে। মতের নামে। দেশের নামে। ভাষার নামে। রঙের নামে। এমন এমন আমাদের মধ্যে হাজারো নদী বয়ে চলেছে বয়ে চলেছে। আমরা আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছি।
কিন্তু আমরা যদি মেনে নিতে পারি, সবার আগে আমরা মানুষ। এই যে নদী তা বিভেদের নয়। বৈচিত্র্যের। তোমার আমার অমিলটাই সৌন্দর্য। নদীতে ঢেউ যেমন সুন্দর। তখন আমরা গাঙের জলে ডিঙা ভাসিয়ে সেই অমিলের নদী হয়ে উঠবে মিলের নদী। ভূপেন হাজারিকার গানটার মতো গেয়ে উঠতে পারবো
শঙ্খচিলের ভাসিয়ে ডানা
ওহ আমি দুই নদীতে নাচি ...
এটাই সমন্বয়বাদ। দুইটি ভিন্নতার মধ্যে মিলকে খোঁজা।
হিন্দু আর মুসলমান ধর্মের অমিলটা নিয়ে যেমন ভাবি, এই দুই ধর্মের মিলও যে কতটা তা কি ভাবি? দেখবো যে অমিলের চেয়ে মিলই বেশি। কারণটা হলো আমরা মানুষ।
যে মত আর পথেরই হই না কেন, মানুষ বলেই আমাদের মিলই বেশি। তাহলে যতটুকু অমিল তাকে আমরা গ্রহণ করতে পারবো না কেন?
এটিই হলো মানুষ। হাজারো নদীর ঢেউ ভেঙে জীবনের তরী বেয়ে সে ছুটে চলেছে আগামীর পথ বেয়ে। এদের কেউ মুসলমান। কেউ হিন্দু। কেউ ধার্মিক। কেউ আস্তিক। কেউ সাদা। কেউ কালো। যদি তুফান ওঠে, সে তরী ডুবে যায়-
নজরুল বলছেন- হিন্দু না মুসলমান - জিজ্ঞাসিছে কোনজন? .. বলো.. ডুবিছে মানুষ। আমাদের খুব কম সময়েই আমরা অনুভব করতে পারি,
আমি মানুষ।
সারাজীবনে বেশিরভাগ সময়েই আমরা হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, বাঙালী, পাকিস্তানী, জর্মান, ইংরাজ...। আমরা যদি মানুষ হই, তখন বুঝতে পারবো- ধর্ম আলাদা হলেও আসলে একই। যেজন্য একজন হিন্দু আর মুসলমান খুব আপনার নিকটজন হতে পারেন। আত্মার জন হতে পারেন। বিদ্রোহী কবির ভাষায়, একই বৃন্তে দুটি ফুল।
মানুষে মানুষে যে সমন্বয়, যে ঐক্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সাধনা করে গেছেন। তার সাধনার মধ্য দিয়ে তিনি দেশের মধ্য দিয়ে বিশ্বের হয়ে উঠার যে চেতনা- তা আমাদের মধ্যে সঞ্চার করে গেছেন।
কিন্তু এই সমন্বয়বাদের রূপ নজরুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়েছে। বলতে গেলে, আর কারও তুলনা আমরা ঐ অর্থে খুঁজে পাই না। তিনি একই সাথে মুহাম্মদকে নিয়ে গজল আর শ্যামা মাকে নিয়ে সঙ্গীত রচনা করছেন। একই হদয়ে তিনি দুই ধর্মের আত্মাকে ধারণ করেছেন। তিনি এটা করতে পেরেছিলেন, কারণ তিনি মানুষ হওয়ার সাধনা করেন নি। তিনি মানুষ ছিলেন, হৃদপিণ্ডে.. রক্ত প্রবাহে ...
তাই তিনি যখন দেখলেন পুরো জাতি দুই টুকরো হয়ে গেলো, তিনি মৌন হয়ে গেলেন যার পূর্বাভাষ তিনি নিজেই দিয়ে গিয়েছিলেন..
আর যদি বাঁশি না বাজে....
নজরুলের কবিতার জন্য তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়
কিন্তু তিনি যে মৌন হয়ে গেলেন, বেঁচে থেকেও
সরিয়ে নিলেন জগতের হাসিখেলা থেকে
তার নির্বাক চোখের দিকে তাকালে বোঝা যায়
এটাই তার সবচেয়ে বড় বিদ্রোহ-
মন্তব্য
এই বাক্যগুলি পড়ে মনে হচ্ছে দেশবিভাগের প্রতিবাদ হিসেবে নজরুল আমৃত্যু স্বেচ্ছা-মৌনতা পালনের ব্রত নিয়েছিলেন!
মৌনতায় বিদ্রোহ - হুম্ম্ম্
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
নতুন মন্তব্য করুন