মরে যাওয়া মানুষের লোভ থাকে না।
এজন্য মৃত মানুষদের নিয়ে বাজে কথা বলতে নেই।
হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ মারা যান নি,
কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি তিনি চলে যাচ্ছেন।
প্রতিটি মানুষ একটা সময়।
আমরা বুঝতে পারছি একটা সময় চলে যাচ্ছে।
সেই সময়। রূপকথার গল্পের মতো সেই ছোটবেলার সময়...
এরশাদের মুখটা মনে পড়ছে।
আমাদের ছোটবেলায় টিভির পর্দায়
রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদের মুখ দেখে আমরা বড় হয়েছি।
তার মুখটা দেখে আমরা ঘৃণা করতে শিখেছিলাম
‘মরে যায় না কেন?’ এই ভাবনার মধ্যে প্রথম টের পেয়েছিলাম
আমাদের মনের ভেতরেও একটা খুনি বসবাস করে।
জেনারেলের সেই মুখটা আর মনে পড়ছে না।
এরশাদের কথা মনে হলেই
মনে পড়ছে একটা শিশুর মুখ।
সেও টিভিতে দেখা একটা দৃশ্য, এই রোজার সময়
একটা ইফতার পার্টিতে বসে আছেন
অবোধ শিশুর মতো।
চারদিক তাকাচ্ছেন, কিন্তু কিছুেই বুঝতে পারছেন না।
সুন্নতে খাতনার আসরে চারপাশের মানুষদের কৌতূহলী দৃষ্টির সামনে
শিশু যেমন বসে থাকে...
রাগের কথা ভুলে যাই।
মায়া আসে...
রাজনীতির কথা বললে
এখন অনেকেই বলেন
তিনি কি খুব খারাপ ছিলেন?
অনেকে এক পা বাড়িয়ে বলেন
এরশাদ আমলই আসলে সবচেয়ে ভালো ছিল।
এরশাদের সময়ে বিরোধীদের হত্যা করা হয়েছে।
এরপরে কি এরচেয়ে কম মানুষকে হত্যা করা হয়েছে?
এরশাদ সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে চুরি চামারী করেছেন।
দূর্নীতি, কমেছে একটুও, এতদিনে? না কি বেড়েছে?
কমেছে সহিংসতা? রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সন্ত্রাস? নিপীড়ন?
চলে যাচ্ছেন তিনি।
মানুষ কতটা ভাল ছিল আর কতটা খারাপ ছিল
এই নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে না।
সব মানুষের মতো, সব শাসকের মতো
তারও কিছুটা ভালো ছিল। কিছুটা খারাপ ছিলো।
তা নিয়ে অনেক কথা বলা যায়।
তবে আমার মনে হচ্ছে
এই জানোয়ারকে হত্যা করতে হবে
মুক্তিযুদ্ধের সময় ইয়াহিয়া খানকে নিয়ে
কামরুল হাসান পোস্টার করেছিলেন।
এরশাদ অন্তত অতবড় জানোয়ার ছিলেন না।
কেননা তিনি কবি ছিলেন।
অনেকে অবশ্য বলেন, তার কবিতাগুলো লেখার জন্য সভাকবি ছিল।
কিন্তু ৬০ সালের দিকে কোয়েটায় এরশাদ যখন সেনা অফিসার
তখন তিনি কেমন ছিলেন তার কথা শুনেছি।
সে সময় আরেক বাঙালী আর্মি অফিসার
যিনি জিয়াউর রহমানের আমলে অনেক গোপন ক্যূয়ের একটিতে জড়িয়ে নিহত হন
তার স্ত্রীর কাছে শুনেছি, সে সময় তিনি খুব লাজুক ছিলেন।
এবং কবিতা লিখতেন।
কবি ও প্রাবন্ধিক তরুণ স্যান্যালের বাড়িতে বসে তার কথা শুনছিলাম।
তিনিও এরশাদের প্রশংসা করেছিলেন এইবলে
তিনি যদি কবি নাও হন
অন্তত তিনি কবি হতে চেয়েছিলেন।
বাঙালী জাতির আর কোন রাষ্ট্রনায়ক কবি হতে চান নি।
যদিও তার কবি হওয়অর ইচ্ছেটাকেও কবিরা মেনে নেন নি।
কবি মোহাম্মদ রফিক জেনারেলের এই কবিতা লেখার ঘটণাটি এভাবে তুলে ধরেছেন
পিপড়ে ধরেছে গো, উড়বেই।
এরশাদ প্রেমিক ছিলেন, তার অনেক প্রেমিকার গল্প আমরা জানি।
এরশাদের এক বিখ্যাত প্রেমিকা
জিনাত আমানের নামে নাম, বলেছিলেন
এরশাদের যদি সন্তান হতো তাহলে পৃথিবী কলকাকলিতে ভরে উঠতো।
এ প্রশ্ন উঠবার কারণ ছিলো না
কারণ তিনি বাবা হয়েছিলেন।
যদিও তার বাবা হওয়ার খবরটি ছিল হঠাৎ দুপুরে দীর্ঘদিন আগে হারিয়ে যাওয়া কোন বন্ধুর হঠাৎ বাড়িতে কড়া নাড়ার মতো।
মনে আছে হঠাৎ একদিন দুপুরে রেডিওর খবরে ভেসে আসলো
রাষ্ট্রপ্রধান এরশাদ পিতা হয়েছেন। যদিও তখনকার ফার্স্ট লেডি রওশন এরশাদকে তার কয়েকদিন আগেও দেখেছি কুমারী কন্যার মতো দৌড় ঝাঁপ করতে। হুট ছুড়ি তোর বিয়ের মতো হুট ছুড়ি তুই মা- এমন একটা কিছু, আর আমরা দেখলাম তিনি কয়েকদিন বয়সের সমান বড়সড় একটা নবজাত শিশু।
তিনি আধূনিককালের একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি স্বপ্নের মধ্যে প্রত্যাদেশ পেতেন।
তিনি হঠাৎ হঠাৎ শুক্রবার, পবিত্র দিনে
জুম্মার নামাজের জন্য মসজিদে হাজির হয়ে বলতেন
তার আগের রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেছেন এই মসজিদে নামজ পড়তে
তাই তিনি এখানে এসেছেন।
আমরা তাকে দেখেছি ভরা বন্যার জলে
গামবুট পড়ে বানভাসি মানুষের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন
আর লেখা একটা খুব সুন্দর গান আমাদের কানে ভেসে আসছে।
যদি এটা তার লেখা গান নাও হয়
তবু একথা সত্যি
তিনি গানটা লিখতে চেয়েছিলেন। তিনি রিখতে পারেন নি বলে তার বদলে অন্য কেউ লিখেছে।
তাকে কাঁদতে দেখেছি।
যখন তখন।
এরশাদ ভালই ছিলেন। অন্তত হৃদয়ের দিক থেকে।
তিনি সুন্দর হতে চেয়েছিলেন।
তবে সুন্দর হতে চাওয়ার ধরণটা একটু কেমন জানি ছিল।
এটা কেমন ছিল তা সবচেয়ে ভাল বলেছিলেন
পটুয়া কামরুল হাসান।
বলেছিলেন না, এঁকেছিলেন।
৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কামরুল হাসান ইয়াহিয়ার ছবি একেছিলেন।
কামরুল হাসান তার জীবনের শেষ ছবিটা আঁকলেন হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদকে।
ইয়াহিয়ার মুখটা তিনি একেছিলেন জানোয়ারের মতো করে
এবার তিনি মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে
এরশাদের মুখটা কল্পনা করতে গিয়ে দেখলেন, এক বেহায়ার মুখ।
তিনি, ছবি আঁকলেন, ছবির ওপর ক্যাপশন লিখলেন
দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে।
কামরুল হাসান ছবিটা আঁকছিলেন, জাতীয় কবিতা উৎসবে কবিতা শুনতে শুনতে।
নব্বইয়ের দশকে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে কবিতা হয়ে উঠেছিল হাতিয়ারের মতো।
কবিতা উৎসবে কবিরা একে এক কবিতা পড়ছেন
এরশাদের বিরুদ্ধে মানুষকে রাজপথে টেনে নিয়ে আসতে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন
লড়াই করে মসনদ থেকে এরশাদকে টেনে নামানোর লড়াইয়ে নামতে আহ্বান করছেন।
এখনই সময়-
কামরুল হাসান এসব শুনছেন আর আনমনে কলম নিয়ে এরশাদের একটা পোর্ট্রেট আঁকছেন।
আঁকা শেষ করে কামরুল হাসান ছবিটার দিকে তাকিয়ে ভীষণ লজ্জ্বা পেলেন।
জানোয়ারের সাথে লড়াই করা চলে
বিশ্ববেহায়ার সাথে তো আর সেটা করা চলে না। তার সাথে জড়ালে লজ্বাই পেতে হয়।
দেশের নায়ক হিসেবে বেহায়াকে দেখে আবার মরমে লজ্বা পেলেন
তার মনে হলো এমন বেহায়ার সাথে এক পৃথিবীতে বাস করা চলে না।
কামরুল হাসান হাতের ছবিটার দিকে একবার তাকিয়ে
এই পৃথিবী ছেড়ে অনন্তলোকে চলে গেলেন।
এইতো এরশাদ।
এখনকার ছবিটা দেখেছেন?
শিশুর চেয়েও শিশু। কোন লোভ নেই।
চলে যাচ্ছেন তিনি।
একজন মানুষ চলে যাচ্ছেন।
মানুষটার একজন সুন্দর মানুষ হওয়ার লোভ হয়েছিল
মানুষটা একটু বেহায়া ছিলেন, এইতো
এটুকু ছাড়া, তিনি খুব খারাপ কি ছিলেন?
মন্তব্য
বেচারা এরশাদ! তাঁর ফেসটা ফটোজেনিক ছিল না। সাদাকালো টিভিতে এরশাদের বিভিন্ন মুখভঙ্গী দেখে যেমনটা ধারনা হয়েছিল, সামনা সামনি তাঁকে অবাক হয়ে দেখে ভাবলাম- আহা, ইনিই কি তিনি! আমার এক বন্ধু বলতো- মানুষের হয় স্মাইলিং ফেস, আর এরশাদের হয়েছে ক্রাইং ফেস।
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
আপনার বন্ধুর জন্য এরশাদের ফুল
ফুলটা দেয়ার জন্য এখন বন্ধু খুঁজে দেখতে হবে
ততক্ষণে ফুলটার গন্ধ
ডেকে নিয়ে এলো ৮৭ সালের ইশকুলের নিরিহ দিনগুলোতে বারুদের গন্ধমাথা সেই উত্তাল দিন
শ্লোগান আর শ্লোগান-
আগুনমুখো বড় ভাইদের রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজের দেয়ালে
রাত জেগে লেখা দেয়াল লিখন
বাহ্! এরশাদ মরার আগেই তার নামে নরম নরম গোল গোল কথা বলা শুরু হয়ে গেছে! তাও আবার সচলায়তনে!! এরশাদ মরলে একদল লোক "মরা মানুষের নামে বদনাম করতে নেই" জাতীয় কথা বলার জন্য তো এক পায়ে খাড়া আছেই। তার সাথে এই প্রকার মধুমাখা বচন যোগ হলে এরশাদের পক্ষে দেকামেরনের Ciapelletto'র মতো সন্তে পরিণত বেশি সময় লাগবে না।
এরশাদের দুষ্কর্মের খতিয়ান হয়তো কোনদিনই নেয়া সম্ভব হবে না। কারণ, এরশাদের 'পে লিস্ট'-এ লোকের সংখ্যা এতো বেশি ছিল এবং তারা এতো কৃতজ্ঞ ছিল যে ২৯ বছর পরেও তাদের মুখে রা' কাড়ে না। কিন্তু তাতে এরশাদের দুষ্কর্মের কণামাত্র লাঘব হয় না।
অগুস্তো পিনোচেত প্রাপ্য শাস্তি না পেয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করার সুযোগ পাওয়া আফসোস হয়েছিল। সম্ভবত এখানেও .........
হ্যাঁ, এই আফসোসটা এখানেও সম্ভবত-
এরশাদ নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যবান বাংলাদেশীদের অন্যতম। সারাজীবন কুৎসিত রাজনীতি করেও এমন প্রেমময় শিরোনামের একটি মধুর লেখা উপহার পেল।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
হ্যাঁ, মানুষটা সৌভাগ্যবান যে তার কর্মের স্বাভাবিক পরিণতির মুখোমুখি তাকে হতে হলো না
যদিও ঠিক নিশ্চিত নই আমি,এটাকে সৌভাগ্য বলে কি না-
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত ব্যাক্তি হচ্ছে সোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, মানুষে বলাবলি করে উনি নাকি কবিতা লিখতে পারেন বেশ কিন্তু দুভাগ্য আমার এ পর্যন্ত উনার কবিতা পড়ার সুযোগ হয়নি আমার।
বড় ভালু মানুশ ছিল লোক্টা। হাপুশ হয়ে কাঁদতেছি খালি
4 DU student leaders hail ML
Four student leaders of Dacca University on Wednesday congratulated the Chief Martial Law Administrator Lt. Gen H M Ershad and patriotic Armed Forces for assuming the responsibility of running the state, reports BSS.
The four leaders in a joint statement hailed the decision on behalf of the student community as a timely and correct step as a critical …….. of ……… was suffering from total political and economic failures.
The administration at all level s has come to a stand-still situation due to rampant corruption, they maintained.
Mr. Mujibul Huq Chunnu and Mr. Jamaluddin Ahmed, Vice President and General Secretary of Mohsin Hall Students’ Union and Mr. Mostafizur Rahman Masum and Mr. Sohel Rana Vice President and General Secretary of Sir A F Rahman Hall Students’ Union in their statement also appealed to the countrymen and the student community to extend all out and active cooperation to the Armed Forces in fast ………
(The Bangladesh Times; Column 8, Page 1; Thursday, March 25, 1982; Dacca, Bangladesh)
(অস্পষ্টতার জন্য যে সব অংশ পড়তে পারিনি সেখানে ...... দিয়েছি)
মুজিবুল হক চুন্নু, জামালউদ্দিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম আর সোহেল রানা ১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচনে কোন কোন দল থেকে নির্বাচন করেছিলেন বলে কেউ জানাতে পারেন? মুজিবুল হক চুন্নু পরবর্তী জীবনে জাতীয় পার্টিই করে আসছেন। বাকিদের খবর কী?
দেখা যাচ্ছে এরশাদ এবং যারা ১৯৮২ সালে দেশে সামরিক শাসন এনেছিল তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও গ্রাউন্ডওয়ার্ক করে রেখেছিল। নয়তো সামরিক আইন জারীর কয়েক ঘন্টার মধ্যে এমন যৌথ বিবৃতি আসে কী করে!
নতুন মন্তব্য করুন