কথামালা

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: বুধ, ২৬/০৮/২০২০ - ৮:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কথামালা....
কখনও তা দুটো চিন্তার। দুটো অনুভবের। দুটো হৃদয়ের।
কথামালা মানে, সবসময় কাছে আসার জন্য তা কিন্তু নয়।
কখনও অনেক কথা বলি আমরা, দূরে যাওয়ার জন্যও।
দূরে গিয়ে কাছে আসার জন্য।
এই কথামালাটা ধরা পড়েছিলো কানের রাডারে।
একটা পার্কে, তখন সন্ধ্যা নামছে।
আকাশে অনেক পাখি। বাড়ি ফেরার আগে শেষ আলোয় গোসল করে নিচ্ছে।
একটা ছাতিম গাছ, তার তলায় আমি হেলান দিয়ে ছিলাম।
হঠাৎই ভেসে আসলো কেউ কথা বলছে।
দুজন। একজন ছেলে, আর একজন- মেয়ে।
ভাবছিলাম, উঠে যাবো। কিন্তু শব্দের মধ্যে মানুষ থাকে।
মানুষ দুজন আমাকে যেতে দিলো না।
ওদের কথার মধ্যে ডুবে গেলাম।
আলো নিভে তখন অন্ধকার নেমে এসেছে ।
অন্ধকারের মধ্যে কথাগুলো মনে হচ্ছিলো আরও জীবন্ত।
ওদের কথা ভেসে আসে-
-কতদিন পরে দেখা।
: হ্যাঁ। অনেক দিন।
- এমন এক সময় ছিলো- মনে হতো, একটা দিনও তোমায় না দেখে থাকতে পারবো না। আবার তারপর, কতটা বছর।এটাই মনে হতো- এই জীবনে কোনদিন আর দেখাও হবে না।
: এটাই fact। ভাবনার ধার ধারে না। আর প্রতিদিনও দেখা হবে না। আবার কোনদিন দেখা হবে না, এরকম ভাবনাও আর আসবে না।
- হ্যাঁ, এটাই reality।ভাবনা দিয়ে আমরা এটা পাল্টাতে পারি না। কতবার তোমার দিকে তাকিয়ে একটা উত্তর খুঁজেছি।
: কি?
- তোমার চোখের মধ্যে আমার এই যে ছায়া, তা কি আসলেই তোমার মধ্যে? না কি. আমি সামনে এসেছি বলে, আমার ছায়া তোমার ওপর পড়েছে।
: এর উত্তর খুঁজে পাবে না।
- কেন?
: এর উত্তর খুঁজে পাওয়া পাওয়া যায় না। আর পেলেও কি লাভ। আচ্ছা, এই যে এতদিন পর দেখা- জিজ্ঞেসও করা হলো না- কেমন আছো?
- আছি আর কি। না থাকার মতো। চারপাশটা আছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু এসে যায় না। কোন কিছুর সাথে কোন যোগ নেই। একটা শূন্যতা মনে হয় সবকিছু।
: তাহলে তো ভালোই।
বিছুক্ষণ চুপচাপ...
- তুমি এখনও আগের মতোই আছো। নিষ্ঠুর।
: শূন্যতা মানে কি জানো?
- কী?
: শূন্যতা হচ্ছে একটা শাদা পাতা। যেখানে লেখা হবে বলে শব্দেরা অপেক্ষা করছে।
- কোনদিনই লেখা হবে না।
: তাই?
- এ জীবন এভাবেই কেটে যাবে।
: তা জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, তোমার কাগজটা খালিই থেকে যাবে।
- অভিশাপ দিচ্ছো?
: না। কারণ তুমি সেটাই চাও। শাদা পাতাটা শাদাই থাকুক। কেউ এসে শাদা পাতাটা ভরিয়ে দিক।
- চাওয়াটা কি অন্যায়?
: না। একদমই না। কিন্তু তুমি বোঝো নি, এই শাদা পাতাটা কেউই ভরিয়ে দিতে পারে না।যতদিন তুমি নিজেই তা পূরণ করছো..
- কি বলতে চাইছো?
: তুমি ভালবাসা চাইছো- এজন্য পাতাটা শূন্য।যদি ভালবাসতে, তখন এমন মনে হতো না.. ভালবাসার শব্দে পাতাটা ভর্তি হয়ে যেত।
- চলো যাই। অন্ধকার হয়ে গেছে।
দুজনে উঠে পড়লো। আমিও।
কথাগুলো শুনে ওদের দেখতে ইচ্ছে করছে।
কি জাদরেল জুটি ছিলো। সেয়ানে সেয়ানে।
সিনেমার চরিত্রগুলো এরকম সব জীবন থেকেই তৈরি হয়।
অন্ধকারের ভেতর দিয়ে আমিও ওদের পিছু নিলাম।
দুজন ছায়ার মতো যাচ্ছে। পাশাপাশি।
কথা বলছে না।
দুজনে কী কথা ভাবছে? ভাবার চেষ্টা করি।
ধরতে পারি না। ওরা নিশ্চয় ওদের ফেলে আসা জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতি, কল্পনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অভিমান, রাগ আর ভালবাসা একসাথে ওদের ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
পার্কের গেটের কাছে.. একটা ল্যাম্পপোস্ট।
ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ওদের দেখে চমকে উঠি।
এত অল্প বয়স! যে কথাগুলো ওরা বলছিলো- এই বয়সে এ কথা বলার কথা নয়। চল্লিশের বিদ্যা বিশে সম্ভব। অভিজ্ঞতা না।
: শোন তোর স্ক্রিপ্টটা আমায় আজকের জন্য দে।
- কেন তোরটা কী হলো?
: আমারটা ফেলে এসেছি।
- শোন, থিয়েটার এভাবে হয় না।
ও!
এতক্ষণে বুঝলাম।
ওরা আসলে ওরা দুইজন ছিলো না।
থিয়েটারের দু চরিত্র ওদের ওপর ভর করেছিলো।
শুনুন।
ওরা চলে যাচ্ছিলো। ডাক শুনে ফিরে তাকালো।
ভাই, এই যে রিহার্সাল করছিলেন, কোন নাটক ওটা?
কবে শো- যদি বলতেন, তাহলে দেখতে আসতাম..


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

হা হা। ভালো লাগল। মজার হয়েছে। দুভাবেই দেখা যায়। ভোজবাজিটা ভালো এসেছে। ৫ তারা।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

মজার গল্পে বিষাদ পোঁতা।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভালো লেগেছে।

হেমন্ত শিশির

সোহেল ইমাম এর ছবি

দারুণ লাগলো পড়ে। চমৎকার। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

চমৎকার গল্প। শেষটা আরও চমৎকার।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।