পড়ছিলাম: দিনপঞ্জি-মনপঞ্জি-ডাকঘর / মুনীর চোধুরী * লিলি চৌধুরী

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: বুধ, ২৯/০৩/২০২৩ - ১০:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সতর্ক থেকো, শক্ত থেকো
ভয় পেলে চলবে না
লজ্জা পাওয়া উচিত হবে না
কারণ এতে অশ্লীল কথা থাকবে অনেক।
তুমি তৈরিতো?

মুনীর চৌধুরী
আমাদের তৈরি হয়ে নিতে বলেন।

আমাকে সত্য কথা লিখতে হবে।
সত্য না হলে শিল্প সৃষ্টি হয় না।
সত্যটা সুন্দর হওয়া চাই
অশ্লীলতার স্থান নেই আর্টে।
সত্যটাকে সুন্দর করে তোলা চাই
দেখতে হবে যাতে
মিথ্যাতে পরিণত না হয়ে যায় আবার।
কী মুশকিলেই না পড়া গেল!
সত্য হলেই না কি সুন্দর হবে।

এই দ্বিধার মধ্যে শুরু গল্পটার
চলতেই থাকবে
এটাই গল্পের গতি।
গতিও সূত্র মেনে চলে
তাই মুনীর চৌধুরীকেও একটা জায়গায়
আসতে হয়।

সত্যকে বাছাই করে
তবে না কি সুন্দর সৃষ্টি হয়।
আগে সত্যটা লিখবো
হোক অসুন্দর, হোক অশ্লীল
পরে বাছাই করে নেয়া যাবে।

বাছাইটা করবে কে?

“পড়ে তুমি ঠিক করে দিয়ো।
সত্যগুলোকে সুন্দর করে তুলো, ঠিক আছে?”

মুনীর চৌধুরী একভাবে
দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছেন
আমাদেরই... পাঠককে

বইটার তিনটি অংশ।
প্রথম দুটি অংশ,
দিনপঞ্জি আর মনপঞ্জি
মুনীর চৌধুরীর।
দিনপঞ্জি তার ডায়েরি
তার জীবন-
মনপঞ্জিটা মনের ডায়েরি।
ডায়েরি নিজের একার জন্য হলেও
এই দিনপঞ্জি আর মনপঞ্জি
নিজের জন্য নয়।
একটা ডাকঘরে জমা হতো এই ডায়েরির পাতাগুলো।
এই ডাকঘর লিলি চৌধুরী।
এটা বইয়ের তৃতীয় অংশ।
লিলি চৌধুরি, যার কাছে এই দিনপঞ্জি আর মনপঞ্জি
জমা হচ্ছিলো
তারও কথা মিলে
যে জগতটা তৈরি হয়
আমি কখনও এমন আর পড়িনি।

ডাকঘরে জমা কথাগুলো
কেমন ছিল?

“সব সত্য বলতে নেই।
সব সত্য বোঝা যায় না
ঠিক বোঝা যায় না
ভুল বুঝলে দুঃখ বাড়ে।
তখন কষ্ট পাবে…’

মুনীর চৌধুরী একটা মজার
খেলা খেললেন।
নিজেই, কিন্তু নিজে নয়
এমন একটা চরিত্র তৈরি করলেন।
তার নাম, কায়ুম।

মুনীর চৌধুরী বলছেন
“এই দিনপঞ্জি মনপঞ্জি- আমার নয়, তাতে ক্ষতি কী?
একজনেরতো, সেটাও মস্তবড় লাভ।”
কায়ুম শিল্পী। আঁকিয়ে। আর শিখা
যার সাথে তার মনের বোঝাপড়া বা লুটতরাজ
এই নিয়ে মনপঞ্জির বুনন।

শিল্পীকে যে সত্য আর সত্যের পেছনের যে সত্য
তার টানাপোড়েনের মধ্যে যেতে হয় জীবনে
তাকেই জীবন দেয়ার একটা চেষ্টা
তার একটা বয়ান।
এই বয়ান
বারবার বলা, দ্বিধা আর সংকোচের মধ্যে
গুঁড়িগুঁড়ি কথা... অগুনতি কথা দিয়ে
রচিত হতে থাকে।

- সব সত্য বলা যায় না।
- আরেকটা বাহানা ধরেছো!
- সব সত্য বলা যায় না।
- মানি না। কেন?
- বলতে গেলেই বেঁকে যায়। সত্য থাকে না।
- যে বুঝতে চায় সে ঠিক করে নিতেও জানে।
- তুমি জানো?
- জানি।
- বিশ্বাস হয় না।
- পরখ করে দেখো
- খুব বেশি সাহস করছো কিন্তু
- সত্যটা তোমারইতো- ভয় করবো কাকে? তোমাকে? পাগল হয়েছো নাকি?
- একবার বেঁকে গেলে আর কিন্তু সোজা হবে না।
আরও আরও কেবল বেঁকেই যাবে।
-
এরকম বরফকুঁচির মতো ধারালো কথা আর
দিনপঞ্জি, যেটাকে মনপঞ্জি বলছেন মুনীর চৌধুরী
এই নিয়ে গল্পটা এগোয়।
ডাকঘর?
ডাকঘর এখন নেই। ছোটবেলার স্মৃতির মধ্যে ও থাকে।
বইটার ঘোরে যদি সেই ডাকঘরে গিয়ে
ওর গন্ধটা পাওয়া যায়
সে ভেবে নেয়ার চাইতে
মজা হবে না?

ছবি: 
04/06/2007 - 1:18অপরাহ্ন

মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।