আজ থেকে প্রায় এক বছরের মত আগে, ২০০৯ এর জুন মাসে একটা খবর দেখেছিলাম, দেখে আমি যার পর নাই বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিলাম, খবরটা ছিল পোর্টা-পটিতে বাচ্চা প্রসব করার পরে এক অপ্রকৃতস্থ মায়ের পালিয়ে যাবার চেষ্টা সংক্রান্ত খবর। নিচে একটা ভিডিও সহ লিংক দিয়ে দিলাম। আমেরিকায় যেখানে সংস্কারের কাজ চলে বা কন্সট্রাকশন চলে অথবা পাব্লিক জায়গা গুলায় এইধরনের পোর্টেবল শৌচাগার রাখা হয়। এরকমই একটা শৌচাগারে এক গর্ভবতী মহিলা বাচ্চা প্রসব করে ফেলেন। তারপর এই মহিলা বের হয়ে আসেন রক্তাক্ত অবস্থায়, তারপর এক কনস্ট্রাকশন কর্মীর সাথে পথে দেখা হয়ে গেলে হাসতে হাসতে বলেন, ঐখানে যেয়ো না, রক্তারক্তি অবস্থা, আর ইয়ে, মানে তোমার কাছে কি সিগারেট আছে, একটু ধোঁইয়ার জন্যে মনটা আঁকুপাঁকু করছে। সেই বেচারা কনস্ট্রাকশন কর্মী চটপট দৌড়ে গিয়ে ঢুকে সেখানে, তারপর দেখে বাচ্চাটা কমোডের নীল পানিতে ডুবে আছে গনমলের মাঝে জীবনের প্রথম গোসল করছে। বাচ্চাটাকে তুলে নেয় এক হাতে, অপর হাতে ৯-১-১ ফোন করে বলে সে যাত্রায় ব্যাপক অসুস্থ হয়েও বাচ্চাটা বেঁচে যায়। পরে জানা যায়, এই মহিলা মানসিক ভারসাম্যহীন। এদেশে তো কোন কুকাজ করে ধরা পড়লেই সবাই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়।
এই খবরটা আর আগের, সম্ভবত ২০০৮ এর শেষের দিকের বনিতা জ়্যাক্স, এক মা তার বাচ্চাদের মেরে রান্নাঘরের সিংকের নিচে রেখে দিয়েছিল। বাচ্চার সংখ্যা ছিল ৪, ১৫ থেকে ৬ বছর বয়সের। বাচ্চা মরে পচে গন্ধ বের হয়, তাও কারো কোন খবর হয়নি। ঐ পাড়ায় পুলিশ হানা দিয়েছিল মাদকবিরোধী অভিযানে, সেখান থেকে তারা গন্ধ পেয়ে হানা দিলে এই ঘটনা জানা যায়। বড় মেয়ের গায়ে ছুরির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল, অন্যদের মৃত্যুর কারণ ধরে নেয়া হয়েছে যে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে । বাচ্চাগুলোর দেহ কতটা বিকৃত হয়ে গিয়ে থাকলে এরকম হতে পারে যে মৃত্যুর কারণ বের করা যাইয় না, সেটা চিন্তা করতে গেলে আমার গা গুলিয়ে আসে।
কিন্তু আমার নিজের দেশ কোন অংশে কম না, আমাদের দেশেও পাওয়া গেছে এরশাদ শিকদার বা বাংলা ভাইয়ের মত ঘৃণ্য চরিত্র, কিন্তু ধরেন এরা একটা উদ্দেশ্য বা স্বার্থের জন্যে নাহয় অন্যের গলায় ছুরি চালায়, পায়ে সিমেন্টের বস্তা বা লোহার শিকল পরিয়ে নদীতে চুবিয়ে দেয়। কিন্তু সেদিনের প্রথম আলো আর বিডি নিউজের খবর দেখে আমি এমন তব্দা খাইলাম যে ভোদাইয়ের মত হা করে বসে থাকলাম, আর আমার স্ত্রী পুরা ঘটনা আমাকে খুলে বলল। একজন মা কিভাবে নিজের সন্তানকে প্রেমিকের সহায়তা করে গলা টিপে হত্যা করতে, ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা জানিনা, যদি এই খবরটা মিথ্যা প্রমাণ হয়, আমার চেয়ে খুশি মনে হয় না আর কেউ হবে। মনে মনে চাইছি যেন শুধু সেই প্রেমিক হত্যাকারী হিসাবে প্রমাণিত হয়। ৬ বছর ধরে তিল তিল করে আদরে বড় করে তুলা বাচ্চাকে তার মায়ের সামনে গলা টিপে হত্যা করেছে, আর সে তাকে সাহায্য করছে, ভাবতেই আমার গায়ের লোম দাড়িয়ে যায়। ঘটনা বিস্তারিত যারা এখনো জানেন না, একটু কষ্ট করে গুগুলে খোঁচা দেন (প্রথম আলোর ২৮-২৯-৩০ তারিখেও আছে)। নারে ভাই, আমাদের দেশেও বনিতা জ্যাক্সের মত মা আছেন, আসলেই আমাদের দেশটা এগিয়ে গেছে!
[পোস্টটা লিখতে বসে আমি আসলে কি বুঝাতে চাইছি আর কি বলতে চাইছি, নিজের কাছের পরিষ্কার না। আশাকরি নিজের মানসিক যন্ত্রণা অন্যদের মাঝে ভাগ করার মত স্বার্থপর চেষ্টার জন্যে কেউ বিরক্ত হলেও নিজগুনে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন]
মন্তব্য
কোন কোন বাস্তব খুবই ঘৃণ্য আর অবিশ্বাস্য সাইফ ভাই।
আর খুব কাছ থেকে দেখলে হয়ত নিজের বিশ্বাসটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে সারাজীবনের জন্য।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
পৃথিবীতে যেদিন থেকে মানুষ আছে, প্রায় সেদিন থেকেই অপরাধও আছে। স্থান, কাল, পাত্র, জাতি কোন ধরনের ভেদ বিবেচনা ছাড়াই। আমাদের কানে আসে না মানে যে পৃথিবীতে সেটা ঘটনা ঘটে না তাতো না।
প্রতিটা ঘটনার পেছনের কাহিনী আদ্যোপান্ত জেনে (যদি সেরকম নার্ভ থাকে) মনস্থির করা উচিৎ, তারপরে একটা মতামত দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের যে ঘটনাটা আপনাকে বিচলিত করেছে তাতে সংশ্লিষ্টদের অতীত জানাটা জরুরী। যতটা পত্রিকায় এসেছে তাতে মায়ের দোষ খুব একটা দেখি না আমি। মন বিষাদ করা খবর, কিন্তু এটাকে দুর্ঘটনা বলাই শ্রেয়।
আমাদের দেশে যারা শরীয়া চালু করতে চায় তাদের এক নম্বর যুক্তি হলো, মধ্যপ্রাচ্যে আছে, যেখানে কোন অপরাধ 'নেই'। এ নেইয়ের মানে হলো পত্রিকায় দেখা যায় না। বাস্তবে সেখানে সব ধরনের অপরাধই হয় এবং সরকার সেগুলোকে চাপা দেয়। মার্কিন সমাজ খোলা বলে সব জানতে পারেন।
কিছুটা অপ্রাঙ্গিক, আবার প্রাসঙ্গিক এ কারণে এ ঘটনায় এক শ্রেণীর ব্লগার ইনিয়ে বিনিয়ে তাই বলছে এ নিয়ে।
পত্রিকায় তো এসেছে মা সন্তানকে খুন করতে সাহায্য করেছেন। আপনার মন্তব্যটা কী শুধু তাদের অতীত ঘাটাঘাটি করেই করা, না কী পত্রিকায় আসা এই ঘটনাটাকেও বিবেচনা করে করা?
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
পত্রিকার কতটা পড়ে আপনি আমাকে কোট করলেন জানি না। আমি মন্তব্য করেছি ঘটনা শুনে তার পেছনের প্রেক্ষিত বিবেচনা করে। এশা একটা ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে। কুড়ি বছর বয়সে তার বাবা তাকে বিদেয় করে একজন চল্লিশোর্ধের সাথে। সে ব্যাক্তি তার ব্যবসায়িক সব প্রয়োজনেই এশাকে ব্যাবহার করেছে। এটা পড়েছেন?
আমি এটাকে দুর্ঘটনাই বলি, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলি না
একটা শিশুকে হত্যা করা হয়েছে- তাতে আপনি হত্যাকারী বা হত্যাকারীর সহায়তাকারীর খুব একটা দোষ দেখতে পাচ্ছেন না! আপনার মন্তব্যে খুবই হতভম্ব আমি। আপনার দেয়া লিংক থেকে প্রতিবেদনটা পড়লাম। এরকম হাজারটা প্রতিবেদন, হাজারটা ব্রোকেন ফ্যামিলির মা-ও কি একটা শিশু হত্যাকে জায়েয করতে পারে!!!???
তানভীর ভাই
একেক জনের দৃষ্টিভঙ্গী একেক রকম হবে তাইতো।
এশা খুনী বা খুনীর সহযোগী হিসাবে যতটা দোষী হতে পারে সর্বোচ্চ ততটাই দোষী। নিজের সন্তানকে খুন করেছে বলেছে তার উপর আমরা যে বাড়তি দোষটা চাপাচ্ছি তার আগে আমি কিছুটা বিবেচনা করতে তাই সে নিজে কতটা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠেছে। যে মানুষ জীবনে ভালোবাসা-মায়া-মমতা-স্নেহ কী তা দেখলই না তার কাছে আমরা অপত্য স্নেহের চুলচেরা হিসাব চাচ্ছি। এশার "খুব একটা দোষে"র চেয়ে আমি তার বাবা-মার, স্বামীর ভূমিকাকে বড় করে দেখি। কাল যদি খবর বেরোয় এশা নিজের ফ্যামিলিতে, স্বামীর ফ্যামিলিতে অ্যাবিউসজ হয়েছে তাহলে আমি নিশ্চিত আপনার মতও পাল্টাবে।
ভালো থাকুন।
ভাইয়া,
আপনি বললেন এষা ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে। তার সাথে একটা 'যদি' যুক্ত করলেন। তারপরে একটা বিশাল 'জেনারেলাইজেশন' কিন্তু আপনিও করেছেন, ব্রোকেন ফ্যামিলির 'মেয়েরা' এবিউজড হয় বা হতে পারে। মানতে পারলাম না
নীল ভুত
ব্যাক্তিগত চাওয়া পাওয়া প্রতিদিন প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে, তারই ফলাফল এই।
এইরকম কিছু মুহূর্তে গা কাঁটা দিয়ে ওঠে, কিন্তু আবার ভুলেও যাই মাস খানেকের মধ্যে। সব কিছু মিলিয়ে খালি হতাশা বাড়ে।
.........
আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
ভিডিও দেখতে পেলাম না।
সাইফ ভাই শুধু মাত্র এই ঘটনা আপনার শরীরে কাঁটা দিল? মা দুই সন্তাম নিয়ে যে আত্মহনন করল সে ঘটনা কী আপনার মনে দাগ ফেলেনি?
দূর্ঘটনার বিচারে কী দেশ এগিয়েছে বলাটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হল? পরকীয়া প্রেমের বলি এমন আরো অনেক আছে। ক্ষুধার জন্য মা তার সন্তানকে হত্যা করে ফেলে এই দেশে, সেটা কী জানেন?
যৌতুকের জন্য স্বামী তার স্ত্রীকে হত্যা করে এই দেশে অবলীলায়। পৃথিবীর কোন দেশে আছে সহপাঠীর হাতে সহপাঠী মারা যায়? কোন সভ্যদেশে পুলিশ জনগণের বাসায় গিয়ে লাঠিপেটা করে?
আপনি ভুল বলেছেন এই রকম অঘটনের দিক থেকে আমাদের দেশ অনেক আগেই এগিয়ে গেছে। বরং বলতে পারেন এই দইক দিয়ে আমরা একধাপ এগিয়ে আছি।
বিষয়টা নিয়ে মর্মবেদনা আমাদের সবার। আমরা সবাই এই ধরনের ঘটনার পুনর্বার চাইনা। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
কামরুজ্জামান স্বাধীন
আপনার বক্তব্য বুঝতে পারছি, তবে লজিক্যাল ফ্যালাসির দিক থেকে এলেখা জেনারালাইজশেনের দোষে দুষ্ট।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
লেখাটাতে তোমার ক্ষোভ বা হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। এতটা জেনারেলাইজ তুমি করোনি বলেই মনে করি।
মানুষ বদলাচ্ছে, তবে আমাদের অবস্থা এতটা খারাপ হয়নি। একজন মা'কে দিয়ে তো সবাইকে তুলনা করা যায়না। এখানে এমন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই তার ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি করা হতো। আমার মনে হয় এতটা উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ঘটেনি। তবে হ্যাঁ, পাশ্চাত্যের প্রভাব আমাদের উপর খুব দ্রুতই পড়ছে।
নতুন মন্তব্য করুন