মুদ্রার অন্য পিঠে

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি
লিখেছেন অমি রহমান পিয়াল (তারিখ: বুধ, ২২/০৮/২০০৭ - ১২:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(একদিন এইখানে আমিও ছিলাম
লাঠিতে, গুলিতে, টিয়ারগ্যাসে
কটু কর্ডাইট সুগন্ধী মেনে শ্বাসে জড়িয়েছি
কাঁদো চোখে আমিও ছুড়েছি ঢিল স্বৈরাচারের উর্দিকে
এই কাঁধে আমিও তুলেছি লালেভেজা বন্ধুর লাশ
একদিন আমিও মিছিলে ছিলাম)

কাঁটাবন মোড়ে এসেই থেমে গেল বাস। ওয়ারল্যাস হাতে একজন উঠলেন- আপনারা এখানেই নেমে যান, বাস আর যাবে না। সামনে গোলমাল, ভাঙচুর হচ্ছে। একটা হট্টগোল অবস্থা। কেউ বলে, ক্যান যাবে না! ঐযে সামনের বাস যাচ্ছে। মহিলাদের মধ্যে কান্নাকাটি। এখানে রিক্সা কোথায় পাব? ড্রাইভার বাস ঘোরাচ্ছেন। একজন সিটে বসে পড়লেন। আমার পক্ষে দৌড়াদৌড়ি সম্ভব না। আপনারা যেখানে যাবেন আমাকে নামিয়ে দেবেন। নেমে যাই। কাধে হটপট ঝুলিয়ে সিগারেট ধরিয়ে সামনে হাটি। ধানমন্ডীর আর কোনো বিকল্প রাস্তা নেই। আমাকে সায়েন্স ল্যাব হয়েই যেতে হবে।

এক প্লাটুন পুলিশ টিয়ার গান লোড করছে। সামনে ঢাল নিয়ে তৈরি। মিছিল আসছে। অকুতোভয়। প্রিয়তম ঢাকা কলেজের রাগী ছেলের দল। অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। পথচারীদের-দর্শকদের স্রোতে একটা দোলা লাগে। দৌড়ে সব এদিক ওদিক। মজারুদের জংলী চিৎকার। আরো ভয় ছড়িয়ে দেয়া।

চোখবুজে ফিরে যাই সেইসব দিনে। টায়ার পাইতাছি না দোস। ধুর বাল, কাগজ জ্বালা। আশেপাশে পানি নেই। টিয়ারগ্যাসের ধোয়ায় অন্ধকার চারদিক। ঐতো হেলাল গেঞ্জিতে মুখ আটকে কাপড় জড়িয়ে তলল টিয়ার সেল, ছুড়ে দিল পাল্টা পুলিশের দিকে। ঢিল ছুড়ছে আরিফ, মিশু, অসীমরা। ভাঙ গাড়ি।
একদফা একদাবী এরশাদ তুই কবে যাবি

মিছিলের মুখগুলো ঘামে দরদর, টকটকে লাল। চোখে এক উদভ্রান্ত দৃষ্টি। এই চোখ বিপ্লবীর। একটা গুলি চললে পাল্টা গুলি চলবে, হাজার গুলি চলবে ... ঐতো জুয়েল কোমর থেকে কাটা রাইফেল বের করে তাক করে জাতীয় ছাত্রসমাজের আগুয়ান গুন্ডাদের দিকে। পাগলা আমারে কাভার দে, খাইছি খানকির পোলাগোরে। ক্র্যাকার চার্জ। চারিদিকে বারুদের গন্ধ। বিদ্রোহ চারিদিকে।

সম্বিতে ফিরি। মিছিল নয়, আমাকে অফিসে যেতে হবে। বউয়ের ভালোবাসা মাখা দুপুরের খাবার কাঁধে ঝুলিয়ে আমি অফিস রওয়ানা হই। একজন মধ্যবিত্ত কর্মজীবি দৌ্ড়ে ছুটে পেটের দায়ে, মিছিলের বন্ধুদের সবটুকু শুভেচ্ছা ছুড়ে দিয়ে


মন্তব্য

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বিপ্লবের পথ কেবলই গার্হস্থ্যের দিকে বেঁকে যায়, বনের সন্ন্যাসীও ফিরে আসে ঘরে।

আহ্ মধ্যবিত্ত কর্মজীবী!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নজমুল আলবাব এর ছবি

আসলেই গার্হস্থ জীবন। চলছে আন্দোলন, আর আমি ঢাকার পথে থাকা সন্তান, স্ত্রি আর মায়ের জন্য উতলা হচ্ছি...

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতিথি এর ছবি

সত্যিই অদ্ভুত মধ্যবিত্ত জীবন , গা বাচিয়ে চলার প্রানান্তকর চেষ্টা !
তবুও কি বাচা যায় ,আঁচ কি লাগে না ?
ধন্যবাদ বাস্তবতাকে মেনে নেবার জন্য।

মাসুদ রানা

((আপনার বিজয়ে টাইপ করা মন্তব্য ইউনিকোডে পরিবর্তিত করে প্রকাশ করা হল। এব্যাপারে অনুগ্রহ করে পুরোনো লেখা প্রকাশ করব কিভাবে? এই "প্রায়শ জিজ্ঞাস্য" টি "সাহায্য" মেন্যু থেকে পড়ে নিন। -- মাহবুব))

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এই লিংকটা
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

জিফরান খালেদ এর ছবি

ভাল লাগলো বেশ, স্টাইল্টা।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

হ পিয়াল ভাই। এরমই সিস্টেম।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সুশীল হয়ে গেলে সুবিধা। অল্পস্বল্প লাভের বিনিময়ে বিকিয়ে দেয়া যায় নিজেকে। ছাত্রজীবনে সুশীল হওয়াটা অনেকেরই হয় না। তেজ থাকে, অহং থাকে, ভালোবাসা থাকে। তারপর সময়ের সাথে অভিযোজিত হতে হতে ক্রমাগত মানিয়ে নিতে নিতে একসময় তেজ নাই হয়ে যায়, অহংয়ের চেয়ে বেশি মূল্যবান হয় দুই পয়সার রুটি, আর ভালোবাসা? নিজের প্রতি শুধু। তাও নিজের সাথে প্রতারণা।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

অনুভূতির এই কষ্টবোধটা আমিও চিনি। নিজেকে পাশ মার্ক দেয়া যায় না।
সংগ্রামেই মানুষকে সবচে সুন্দর মনে হয়।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

থার্ড আই এর ছবি

অমি রহমান পিয়াল,কাব্যিক ভাষায় দারুন লিখেছেন। ইচ্ছে হয় এই টেমস নদীর তীর হতে ছুটে যাই ক্যাম্পাসে ,কিন্তু এই যোজন যোজন ক্রোশ দুর হতে দু'চারখান মন্তব্য করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছিনা।
এই কয়েক দিন অফিসের কাজ বাদ দিয়ে দিনভর নেটে পড়ে ছিলাম ঢাবির সংবাদের জন্য।
---------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

রাসেল এর ছবি

পিয়াল ভাই ১৪ই জানুয়ারী সাকুরার আলোচনা- আপাতত এইভাবে ভাবি ভাবনা থেকে সরে আসবার সময় চলে এসেছে মনে হয়-

শুধু উচ্চ শিক্ষিত আর ভালো ব্যবস্থাপক হলেই দশ চালানো যায় না- আরও কিছু মাল মশলা লাগে-

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

হ রাসেল ঠিকোই। সেইটা তাতক্ষণিক আনন্দে লেখা, তলাইয়া বা দূরদর্শিতা নিয়া না। মনে করাইয়া দিবার জন্য ধন্যবাদ। সকালে আমি নিজো ভাবতাছিলাম


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আপনের এই অবনতি বড় ভাই, শেষমেষ কান্ধে হটপটের ডিব্বা?
আমার কফিনডা গেলো কই, বিক্ষিপ্ত মন সংক্ষিপ্ত করা লাগবো।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

এস্কিমো এর ছবি

এটাই নিয়ম...
ম্যারাথনের ব্যাটনটা পরের প্রজন্মকে দিয়ে থেমে যেতে হবে।

শুধু একটাই বিষয় আমাদের আনন্দ এবং স্বস্তি দেবে ..যদি দেখি ব্যাটনটা ঠিকঠাক মানুষের হাতে তুলে দিতে পেরেছি।

সত্যই ..গতবার দেশে গিয়ে হতাশ হয়েছিলাম ..

ভেবেছিলাম ..আমাদের অর্জন বোধ হয় নতুন প্রজন্মের কাছে অর্থহীন...

এবার মনে হচ্ছে না ...এতো সহজ নয়। একটা সালাম দিয়ে বিষ্যুদবার রাতে প্রসাআইপ্র হয়ে যাবেন সেটা বোধ হয় হবে না।

অভিনন্দন সেই প্রজন্ম কে...

লেখতে চাই ..কিন্তু কি লিখবো?

ঝরাপাতা এর ছবি

সিম্পলি গ্রেট। শুভেচ্ছা অবারিত সংগ্রামী জনতাকে।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।