আটপৌরে কথার যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে এই নিয়ে দু'দুটো লেখা পড়লাম 'প্রথম আলো'তে। প্রথমটি লিখেছিলেন ড. মেহতাব খানম। বিষয়ঃ 'টেলিভিশন নাটকে আটপৌরে ভাষার ব্যবহার'। দ্বিতীয়টি বেরিয়েছে আজ। লিখেছেন সৌমিত্র শেখর।
ড.মেহতাব পেশায় মনোবিজ্ঞানী। তাই ভাষা ব্যবহার নিয়ে তার মন্তব্য আমাকে আকৃষ্ট করল। খুব সংক্ষেপে আমি যদি সে লেখার বিষয়বস্তু বলতে চাই তবে সেটা হবে এরকমঃ
আটপৌরে ভাষার যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম কে প্রমিত বাংলা শেখার ক্ষেত্রে বিপদে ফেলবে।শুধু তাই নয়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সর্বব্যাপী প্রভাবের যুগে আমাদের ভাষা কিন্তু প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। আমাদের শিল্পীদের তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে দাঁড়িয়ে এই বিষয়টি নিয়ে মানুষের মনে সচেতনতা তৈরী করতে হবে।
সৌমিত্র শেখর লিখেছেন ঐ লেখাটির সূত্র ধরে। তিনি বেশ কিছু চমৎকার বিষয় উল্লেখ করেছেনঃ নাটকে এই বিশেষ কথ্যরীতির প্রবর্তকরা সাধারনত যুক্তি দেন এই বলে যে, তারা 'অভিনয় থেকে অভিনয় কে মুক্তি' দিয়েছেন। সৌমিত্র আরো বলেছেন যে, এই কথ্যরীতির ধরন যে বিপুল জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তার পেছনে বণিকগোষ্ঠির অবদানও কম নয়। অনেকে আবার এই বলে বিষয়টিকে 'জায়েজ' করছেন যে, 'প্রমিত বাংলা' বলে আসলে কিছু নেই। যেটাকে আমরা প্রমিত বলে জানি সেটা আসলে কলকাতার কথ্যভাষারীতির বিবর্তিত রূপ। সৌমিত্র বাংলার লোক (বাংলাদেশের লোক বা বাঙ্গালী---সে অর্থে নয়, বরং পেশা অর্থে)। কাজেই এই যুক্তিটি বেশ দারুন ভাবে খন্ডন করেছেন।
আমার সমস্যা হল, 'ভাষা বিজ্ঞান' আমার বিষয় নয়। তাই ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না যে আসলে ব্যাপারটা কি ঘটছে এখানে?
আমার মনে যে প্রশ্নগুলো আসছেঃ
১। একই ভাষার মধ্যে কথ্যরীতি আর লিখনরীতি(?) ভিন্ন হয়। আমরা সাধারনত যেভাবে বলি সেভাবে লিখিনা। প্রশ্ন হলো, এই যুদ্ধে জিতবে কে? 'সাধু' ভাষা আর 'চলিত' ভাষার যুদ্ধের ফলাফল আমরা সকলেই জানি। এখানেও কি তাই ঘটতে চলেছে? অবশ্য তার আগে আমার বোঝা দরকার যে আসলেই কেউ কখনো সাধু ভাষায় কথোপকথন করেছিলেন কিনা। ঠিক কি কারনে আমরা 'লিখন রীতির' মাধ্যম হিসেবে এই আড়ষ্ট রূপটি পরিগ্রহন করেছিলাম? এর সাথে সম্পুরক প্রশ্ন হিসেবে থাকছেঃ- 'ইত্তেফাক' কবে সাবালক হবে ? (ইত্তেফাক-প্রেমীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী)
২। অন্যান্য ভাষাতেও কি এই ব্যাপার গুলো ঘটে? সাধারন যুক্তি বলে যে, ঘটে। সেখানে কে জিতেছে? আমি এই মুহুর্তে যা মনে করতে পারছি তা হল, বিলেতের আঞ্চলিক কথ্যভাষা বনাম তাদের প্রমিত ভাষার লড়াই। যারা My Fair Lady দেখেছেন তারা সবাই মোটামুটি জানেন দুই রীতির যুদ্ধের কথা। খুব সাম্প্রতিক উদাহরন হবে সম্ভবত Snatch ছবিটি। ব্রাড পিট মহোদয় সেখানে এত দ্রুত 'কক্নি' ভাষা বলছিলেন যে পরিচালক আমাদের বোঝার সুবিধার জন্য
Subtitle দিয়ে রেখেছিলেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রীয় ইংরাজি আর যুক্তরাজ্যীয় ইংরাজির অন্তহীন লড়াই তো আছেই।
৩। সাধু ভাষার 'আড়ষ্টতা' থেকে চলিত ভাষার প্রগলভতায় ছুটি নিতে নিতে আমরা কি ভেবে দেখেছি যে, সময়ের সাথে এই রূপটিও বদলাতে পারে?
৪। মানুষের, তার চেয়ে বরং 'জাতি' শব্দটা ব্যবহার করি,ভাষার বিবর্তনের ধারায় কোন বৈশিষ্ট্যটি নির্দেশ করে দিয়েছিল সেই ভাষার গ্রহনযোগ্যতা? সংস্কৃত আর Latin মৃত ভাষা হওয়ার পেছনে কি এই ভাষাগুলোর কঠোর নিয়মনীতি(পড়ুন,ব্যাকরন) দায়ী ছিল?
৫। আমাদের গুলশান-বারিধারার নব্য 'Cool' প্রজন্ম কি শেষ পর্যন্ত আমাদের ভাষার আদল ঠিক করে দেবে? আমি তো এখনি অনেক রোমহর্ষক উদাহরন দেখতে পাই। আমি নিশ্চিত আপনারাও খেয়াল করেছেন যে, আমাদের বর্তমান ব্যান্ড সঙ্গীতের গায়কদের উচ্চারনরীতি। বিপুল জনপ্রিয় ব্যান্ড ব্ল্যাক। তাদের প্রধান গায়কের উচ্চারন বেশ কর্ণপীড়াদায়ক (এই রে, কত জন কে খেপিয়ে দিলাম কে জানে!)। তার উচ্চারনে বাংলা 'র' সবসময় ইংরাজি 'R' ও বাংলা 'ড়' এর মাঝামাঝি একটি ধ্বনি। বেশ জটিল ও আয়াসসাধ্য ব্যাপার। তাদের এবং তাদের অব্যবহিত পরের দলগুলো গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে গেল। মাঝখানে ডুবলো আমাদের আগামী ভবিষ্যত। এই নিয়ে আমার উদ্বেগ কি আমার বুড়ো হবার লক্ষন না আসলেই চিন্তার বিষয়?
বুঝতেই পারছেন, আমার মনে হাজার প্রশ্নের মিছিল চলছে। কিন্তু উত্তরের দেখা নেই।
তাই আপনাদের শরনাপন্ন হলাম।
আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।
মন্তব্য
আমাদের পছন্দ হোক বা না হোক, ভাষার পরিবর্তন ও বিবর্তন ঠেকানো অসম্ভব বলেই মনে হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভাষার শুদ্ধতার পক্ষপাতী। কিন্তু আমাদের মানতেই হবে, সমস্যাটি শুধু বাংলা ভাষার নয়। পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষাই বর্তমান টেকনোলজির যুগে আকস্মিক ও ব্যাপক বিবর্তনের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।
আর নাটককে জীবনের প্রতিফলন বলতে চাইলে টিভি নাটকে আটপৌরে ভাষা ব্যবহারে আপত্তির কারণটি ঠিক বোধগম্য নয়। আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারে কেউ কি প্রতিবাদ করেন? তবে প্রচলিত আটপৌরে ভাষা কী অপরাধ করলো?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আমার মনে হয় আসল আপত্তিটা হলো এইখানে, নাটক একটি জনপ্রিয় শিল্প মাধ্যম। কাজেই সাধারন্যের কাছে সহজেই পৌছে যায়। সুতরাং, নাটকে ভাষারীতির ব্যবহার নিশ্চিত ভাবে জনমানসকে প্রভাবিত করবে।
আঞ্চলিক ভাষার ব্যাপারে আমার ব্যাখ্যা-----যেহেতু এইটা 'আঞ্চলিক' ভাষা সেই কারনেই আমাদের প্রত্যেকের স্বস্তি বোধের ব্যাপার এর সাথে জড়িত। এক আঞ্চলিক ভাষা সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য নাও হতে পারে।তার উপর প্রত্যেক অঞ্চলের কিছু নিজস্ব শব্দ ভান্ডার রয়েছে। কাজেই যে কারো পক্ষেই সহজে সেটা আত্মস্থ করে ফেলাটা একটু কঠিন।
আমরা যে কথ্যরীতির কথা বলছি, সেটার সবচাইতে 'শক্তিশালী' পয়েন্ট হলো---- এইটা সকল অঞ্চল নির্বিশেষে বোধ্যগম্য। সে কারনেই,'আইজ তোর খবর আছে'---এই বাক্যবন্ধ শুনে বাংলাদেশের কেউ সংবাদপত্র বা রেডিও টিভি খুলে বসবে না। বরং নিজের আসন্ন বিপদের চিন্তায় শংকিত হয়ে উঠবে।
এই বিষয়টা নিয়ে আমার কতগুলো মন্তব্য আছে। যেগুলোর হয়তো একটা আরেকটার বিপরীতেও যেতে পারে;
১. পৃথিবীতে দুটো ভাষা ছিল যা দিয়ে কেউ কথা বলতো না শুধু সেই ভাষায় লেখা হতো। এর একটা সংস্কৃত আর আরেকটা প্রাচীন হিব্রু। ভাষাতত্ত্বে এই দুটো ভাষা মৃত ভাষা নামে পরিচিত
২. সাধু ভাষাটার উৎপত্তি হয়েছিল শুধু লেখার জন্যই। এই ভাষায় কেউ কোনোদিন কথা বলতো না। কিন্তু এই ভাষাটা সংস্কৃত কিংবা প্রাচীন হিব্রু থেকে একটু আলাদা ছিল। তা হলো এই ভাষাটা বিশেষত আলাদা ছিল ক্রিয়াপদের দিক থেকে। (যদিও ড. হায়াৎ মামুদ তাকে আলাদা ভাষা হিসেবেই গণ্য করেন)। এর ক্রিয়াপদ বিলম্বিত। এর্ সুবিধা হলো সেমি লিটারেটরা বিলম্বিত ক্রিয়া থেকে দ্রুত অর্থ উদ্ধার করতে পারে। এবং এর সিলেবল গুলো চলতি বাংলার মতো দ্বিত্ব উচ্চারণের আশংকা নেই (যেমন চলতি বাংলায় করব শব্দে মাঝখানের র বর্ণ উচ্চারণ হয় হসন্ত বর্ণ হিসেবে আর কবর শব্দে মাঝখানের ব বর্ণ উচাচরণ হচ্ছে ওকারান্ত বর্ণ হিসেবে। এর ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের পক্ষে এবং সেমিলিটারেটদের পক্ষে কোনোকিছু পড়ে সহজে এর উচ্চারণ ধরতে পারা বেশ কঠিন। কারণ একেক অঞ্চলের উচ্চারণরীতি একেক রকম। কিন্তু সাধু ভাষায় বিলম্বিত ক্রিয়াপদের জন্য এর আশংকা কম)
৩. পৃথিবীর কোনো জীবন্ত ভাষাই মৌলিক নয়। প্রতি নিয়ত এর শব্দ, শব্দের অর্থ এবং গ্রামার পরিবর্তিত হয়ে একটা সাধারণ প্রমিত (গ্রহণযোগ্য রূপ) ধারণ করে এবং এর একটা গ্রামার-স্ট্রাকচারও দাঁড়ায়। আমাদের বর্তমান চলতি বাংলাও তাই। এই চলতি বাংলা কোনো অঞ্চলের মানুষের মুখের কথ্য বাংলা নয়। কোনো অঞ্চলের লোকই এই ভাষায় কথা বলে না। বরং এটা বাংলা ভাষভাষী অঞ্চলগুলোর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা মাঝামাঝি ভাষা
৪. মাত্র দুজন লেখকের লেখার কারণে একটা আঞ্চলিক ভাষা জাতীয় মর্যাদা পাওয়ার ইতিহাস আছে পৃথিবীতে। তা হলো ইটালির বর্তমান জাতীয় ভাষা। আমি যতদূর জানি এই ভাষাটি ছিল ভার্জিল আর দান্তের আঞ্চালিক ভাষা
৫. বাংলাদেশের চলতি নতুন ঢাকাইয়া বাংলায় যে কথ্য রূপটি চলতি তা কোনো আঞ্চলিক বাংলা নয়। তা মূলত মানিকগঞ্জ-টাঙ্গাইল-কুমিল্লা ও বরিশাল অঞ্চলের উচ্চারণরীতির মিশ্রণে চলতি বাংলা শব্দকে উচ্চারণের একটা প্রচলন। যারা এই ভাষায় কথা বলেন তাদের এ্যাসেন্ট কাছাকাছি হলেও ডাইলেক্ট কিন্তু আলাদা আলাদা
৬. বাংলাদেশের টিভি মিডিয়াতে কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গার আঞ্চলিক ভাষাকে প্রায় 'টেলিভিশনের জাতীয় আঞ্চলিক ভাষায়' পরিণত করে ফেলেছেন মাসুম রেজা- সালাউদ্দিন লাভলু গ্রুপ। এখনকার আঞ্চলিক ভাষার নাটকগুলো দেখলে দেখা যাবে সেগুলো কোনো না কোনো ভাবে ওই অঞ্চলের শব্দরীতি কিংবা উচ্চারণ রীতি ফলো করছে।
৭. শহর কেন্দ্রিক নতুন ঢাকাইয়া বাংলায় এখন সরওয়ার ফারুকি ট্রাই করছেন। শুধু টিভিতে নয় এই স্টাইলে এখন অনেকে লেখালেখিও করেন। এই ব্লগেই কয়েকজন লেখক আছেন যারা নতুন ঢাকাইয়া বাংলা লেখেন। যদিও এদের মধ্যে এখনও ইউনিফর্মিটি তৈরি হয়নি। আবার টিভিতে গ্রাম শহর দু জায়গাতেই সিরাজগঞ্জের এ্যাকসেন্ট চালিয়ে যাচ্ছেন জাহিদ হাসান
৮. আমার মাতৃভাষা কিংবা আঞ্চলিক ভাষা সিলেটি। যা সর্ম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ডাইলেক্ট এবং এ্যাসেন্ট। যার উচ্চারণ রীতি ক্রিয়াপদ এবং শব্দ রীতি বাংলাদেশের অন্য এলাকার ভাষা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে আমার পক্ষে নিজস্ব ডাইলেক্টকে নতুন ঢাকাইয়া এ্যাকসেন্টে কিংবা মধ্য বাংলার ডাইলেক্টের সাথে মিলিয়ে কথা বলা সম্ভব না। ফলে আমি যখন সিলেটি বলি তখন সম্পূর্ণ সিলেটি বলি আর যখন সিলেটির বাইরে বলি কিংবা লিখি তখন প্রমিত বাংলাতেই লিখি কিংবা বলি এবং আমার সবগুলো নাটকও প্রমিত বাংলায় সংলাপযুক্ত। এবং নিজের একটা আলাদা ভাষার গঠন থাকার কারণেই হয়তো চলতি ঢাকাইয়া বাংলার সাথে কোনোভাবেই ঘনিষ্ঠ হতে পারি না
৯. টিভিতে মাঝামাঝি একটা লেঙ্গুয়েজ কিংবা ফ্লেস্কিবল উচ্চারণ রীতি আবিষ্কার করার প্রধান কারণ হলো এখনকার পারফরমারদের মধ্যে ফনেটিক্স চর্চা একেবারেই নেই। এদের বেশিরভাগই প্রমিত বাংলায় কথা বলতে পারেন না। ফলে নির্মাতাদের যেতে হয় মাঝামাঝি উচ্চারণরীতির দিকে (যাকে অনেকেই থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ বলেন)। শুধু টিভি নয় বাংলাদেশে এখন যত প্রামিত বাংলার মঞ্চ নাটক হয় তার বেশিরভাগই হয় মফস্বলে। ঢাকার দলগুলোর মধ্যে মাত্র হাতে গোনা দুয়কটা ছাড়া বাকি দলগুলো প্রমিত বাংলার সংলাপওয়ালা নাটক ধরতে ভয় পায়। কারণ শিল্পিদের বেশিরভাগই প্রমিত বাংলায় কথা বলতে পারেন না। ঢাকার মঞ্চে যত নাটক দেখা যায় তার ৯০% হয় থার্ড ল্যাঙ্গুজে
১০. ভাষা প্রয়োজন থেকেই তৈরি হয়। বহুজাতিক সৈনবাহিনীর সদস্যরা এক সময় নিজেদের মধ্যে কমিউনিকেশনের জন্য যে উর্দু ভাষা (উর্দি পরা লোকজনের ভাষা। কিংবা ইউনিফর্ম লেঙ্গুয়জ) চালু করেছিল তা এখন একটা দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা এবং সে ভাষায় সাহিত্যও হয়
১১. আমি এখনও এই থার্ড ল্যাঙ্গুয়জ কিংবা নতুন ঢাকাইয়া কথ্য বাংলায় কোনো কাজ করছি না কিন্তু তাকে আপত্তিও করছি না। হয়তো এইরকম চর্চার মাঝখান থেকেই নতুন বাংলা বের হয়ে আসবে। সেটা আমি বলতে পারি বা না পারি
১২. ভাষাতত্ত্ব এবং ধ্বনিতত্ত্ব দুটোই আমার ব্যক্তিজীবনের চর্চার বিষয়। এবং এই কারণেই জানি এই দুটো নিয়ে আগাম কোনো মন্তব্য করা ঠিক না। তাই আমি আমার অবজারভেশনগুলো এখানে তুলে দিলাম। এর হয়তো একটা আরেকটার বিপরীতেও যেতে পারে
নিজে দেশ নাটকের মেম্বার হয়া (নিবাস সিলেট। কোনো কালে কুষ্টে অঞ্চলে কেউ ছেল না) কমনে কব যে দেশ নাটক থি এখন কুষ্টে খেদান চলতিছে?
চমৎকার আলোচনা । আমি ছোট্ট করে একটা কথা জুড়ে দেইঃ
প্রমিত বাংলার বিপরীতে মিডিয়ায় যে আটপৌরে/কথ্য বাংলা প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে সেটা কার জন্য আটপৌরে,কার কথ্য? এই বাংলা কি সারা দেশের সব মানুষের মুখের কথার প্রতিনিধিত্ব করে? লীলেন ভাই যেমন বলেছেন,এটাকে আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে মিডিয়ায় প্রমোট করলে আমার আপত্তি নেই ,প্রতিটি আঞ্চলিক ভাষাই প্রমোটেড হোক ।
কিন্তু একটা অঞ্চলের মুখের ভাষাকে যদি প্রতিনিধিত্বকারী ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয় তাহলে তো সমস্যা । আজকে সেই অঞ্চলের ভাষাভাষীরা মুলধারায় আছেন-কালকে যাবেন নোয়াখালির লোকজন,পরশু সিলেটীরা ।
আমি তার চেয়ে প্রমিত বাংলায় নিরাপদ বোধ করি । কারন প্রমিত বাংলা সবার জন্য সমান । কারো কথ্য,কারো অকথ্য নয় ।
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ইমরুল, তর্কটা আমিও ফলো করতেছিলাম। আজকে সৌমিত্র শেখর এর লেখা পড়ার পর নিজের ভয়ংকর ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে কোনো রকমে একটা লেখা দাঁড় করিয়ে প্রথম আলো বরাবর ছাড়লাম। সচলেও দেখছি বেশ ইন্টারেস্টিং আলোচনা হচ্ছে বিষয়টা নিয়ে। চলুক।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
প্রথম আলোর দুটো লিংক এখানে দিলাম
ফারুকীর যুক্তিগুলোর মধ্যে আমারও অনেক সমর্থন আছে যদিও আমি এই ভাষা ব্যবহার করি না কোথাও
আমি এখনও এর আরো কাঠামো তৈরি অপেক্ষা করছি। তখন হয়তো দেখবো বর্তমানটা বদলানো যায় কি না
মেহতাব খানের লেখা
ফারুকীর প্রতিক্রিয়া
আমি মনে করি নাটক ভাষা শিক্ষার স্কুল নয়।বিষয়টা হলো নাটকে যে চরিত্রটার রোল প্লে করছেন,তার ভাষা এবং এচিচিউড কেমন।যদি দেখানো হয়ো পুরান ঢাকার কোন পরিরারের লোকগুলো নিজেদের সাথে প্রমিত ভাষাতে কথা বলছে,অথচ অন্যদের সাথে বলছে স্থানীয় ভাষাতে,তাহলে কেমন হবে,অবশ্যই তা আজব লাগবে,বিষয়টা খেয়াল করুন আপনি একজন সেলেটি,সেলেটি চরিত্রে অভিনয় করতে হলে অবশ্যই দেখাতে কোন অবস্থায় প্রমিত বাংলায় কথা বলে আর কোন অবস্থার তাদের স্থানীয় ভাষাতে কথা বলে,নিজেকে খেয়াল করুন।মানুষ নাটক বা মুভিকে অনুসরন করবে নাকি নাটক বা মুভিগুলো মানুষকে অনুসরন করবে।আমি তো মনে করি প্রথম নাটক বা মুভিগুলো মানুষ এবং তাদের জীবনযাপন অনুসরন করবে।সালাউদ্দিন লাভলু তার নাটকে যে ভাষার প্রয়োগ করেছেন,সেটা কুষ্টিয়ার কিনা জানি না,তবে আমাদের পাবনার গ্রামের মানুষ কিন্তু সে ভাষাতে সেই অ্যাক্সেন্টেই কথা বলে,এমন কি যে গ্রামগুলোর নাম উল্লেখ করে সেই গ্রামগুলোও পাবনাতে আছে,শুধু শুটিংটা হয় গাজিপুরে।
নতুন মন্তব্য করুন