ঘটনার শুরু ক্লাস সিক্সে। ইসলাম ধর্মের ক্লাস। ছাত্র ছাত্রীদের অর্ধেক ঘুমিয়ে। বাকি অর্ধেক ধুমের পথে। স্যার প্রায় রোবটের গলায় বই থেকে পড়ে যাচ্ছেন। এক জায়গায় এসে তিনি পড়ছিলেন, মানব জাতি কে আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টি করেছেন।
আমার মাথায় যে কি ভূত চাপল। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, স্যার, আসলে তো আমরা বানর থেকে আসছি তাই না?
স্যার চোখ সরু করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। জলদ গম্ভীর গলায় বললেন, এ দিকে আয়। যারা এতক্ষন ঘুম-ঘুম ভাবে ছিল তাদের চোখ থেকে ঘুম তখন ছুটে গিয়েছে। কনুই দিয়ে গুতো মেরে যারা ঘুমিয়ে আছে, তাদের ও জাগানো হয়েছে। বহুদিন পরে ক্লাসে একটা জম্পেশ মারপিটের আয়োজন হয়েছে। বেশ বিরাট স্কেলের এবং সম্ভবত বেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য। আমি তখন এক পা দু'পা করে এগিয়ে যাচ্ছি স্যারের দিকে। পরিষ্কার বুঝতে পারছি, আমার বন্ধু-শত্রু নির্বিশেষে সকলের চোখ উৎসাহে চক্চক্ করছে।
স্যার আমার কানটা তার আপন করে নিতে নিতে বললেন, কি জানি বলছিলি তুই? নানারকম অব্যয় ধ্বনির ফাকে ফাকে স্যার কে আমার অভিমত ব্যক্ত করলাম। কানে যন্ত্রনা আমার বাড়ল বই, কমলো না। শেষ আশ্রয় হিসেবে কঁকিয়ে উঠে বললাম, আমার কাছে প্রমান আছে স্যার!
হঠাৎ করেই বুঝলাম, কানের অনুভুতি যেন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। আমার কানটা ছেড়ে দিয়ে বললেন, আগামী ক্লাসে যদি সেই 'প্রমান' নিয়ে না আসি তাহলে বাকি বছরটা আমাকে নীল ডাউন হয়েই কাটাতে হবে। আমি লাফ দিয়ে উঠে বললাম, আমাকে ১০ মিনিট সময় দেন। আমি আপনাকে প্রমান এনে দেখাচ্ছি। স্যার খানিকটা হতভম্ব খানিকটা অবিশ্বাসে আক্রান্ত হয়ে বললেন, যা তাহলে।
স্কুল থেকে বাসা তেমন দূরে নয়। আমি উল্কার বেগে ছুটলাম। মা রান্না করছিলেন। অসময়ে আমাকে দেখে বললেন, কীরে, তোর স্কুল আজকে জলদি জলদি শেষ হয়ে গেল নাকি রে? আমি কোনো জবাব না দিয়ে আমার রুম থেকে সদ্য কেনা 'ছোটদের বিশ্বকোষ'-টা
বগলদাবা করে আবার দে ছুট।
সেদিন প্রায় ১০ মিনিটের মাঝেই স্কুলে পৌঁছতে পেরেছিলাম। তার চেয়ে বড়কথা, বিশ্বকোষে আঁকা এক ছবি দেখিয়ে স্যার কে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিলাম। কি ছিল সেই ছবিতে? তেমন কিছুই না। খালি বানর-জাতীয় প্রজাতি (Primate,Great Apes) থেকে কিভাবে মানুষ বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে, তার একটা চিত্রকল্প দেয়া ছিল।
আমার ষষ্ঠ শ্রেনীর ভাল মানুষ স্যার এই রকম অকাট্য প্রমান(!) দেখে প্রচন্ড ধাক্কা খেয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে। কারন এর পর থেকেই স্যার আমাকে 'বিশেষ' চোখে দেখা শুরু করেন। সেটা না ছিল ভালোবাসার, না ছিল ঘৃনার। বহুপরে বুঝতে পেরেছি, সেটা ছিল অসহনীয় অস্বস্তির।
পরের ঘটনা। ইন্টারমিডিয়েট শেষ বর্ষ। জীববিদ্যা ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। এমনিতে আমাদের স্যার তরুনদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। ঈঙ্গিতপুর্ণ কথা বলার জন্য এবং মেয়েদের অস্বস্তিতে ফেলার জন্য। আমরা সাধারনত কোন কিছুর বিনিময়ে ঐ ক্লাস মিস দিতামনা। সেদিন দেখা গেল, কলেজের মাঠ থেকে কারোর ক্লাসে যাবার
তেমন আগ্রহ নেই। কারন জিজ্ঞেস করে জানলাম, আজ ডারউইনের বিবর্তনবাদ পড়ানো হবে। ক্লাসের সবচেয়ে তেঁদড় ছেলেটা পর্যন্ত যেতে রাজী না। কারন? 'ঐসব' শুনলে আমরা নাকি মুসলমান থেকে 'খারিজ' হয়ে যাব।
শেষতক আমি গিয়েছিলাম। সঙ্গে এক বন্ধু(তার আবার না গিয়ে উপায় ছিলো না, স্যার ছিলেন তার বাবা)। গিয়ে দেখলাম, ছেলেদের অংশটুকু নির্জন। কেবল আমরা দুই নরপুঙ্গব পুরুষ-প্রজাতির প্রতিনিধিত্ব করছি। কিন্তু মেয়েদের দিকটা ভরপুর।
এ কাহিনী আসলে অনেক অনেক কাল আগের কথা। 'তখন গাছে গাছে পাখিরা গান গাহিত, আরবের লোকেরা ধর্ম ভুলিয়া গিয়াছিল..........' অদ্ভুত ব্যাপার এইযে, এই এতগুলো বছরে আমি অনেক কিছু বদলাতে দেখলাম। মানুষ বাস ছেড়ে টেম্পো ধরল। মতিঝিলে যাবার পথে 'শীতাতপ' নিয়ন্ত্রিত বাস বেরুল। ফোন ছেড়ে সেল ফোন ধরলাম। কিন্তু ডারুইন কে রেখে দিলাম দরজার বাইরে। এ যেন ক্রমাগত কান চেপে 'না না না' করে চিৎকার করা। এবং ভাবা এতেই আমরা ডারুইন কে পরাস্ত করছি।
আমার কাছে সবচাইতে যেটা কৌতুককর মনে হয়েছিল যে, এই ডারুইনের বেলায় হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই। দু'পক্ষই মানবজাতির 'পবিত্রতা' নিয়ে নিঃসন্দেহ।
আজ বিবর্তনবাদের ২০০ বছর হতে চলল। এখন পর্যন্ত এই মতবাদ আমাদের সমস্ত প্রানীকুলের বিবর্তনের এক মাত্র যুক্তিযুক্ত দলিল। আমার মনে হয়না যে বিজ্ঞানের আর কোনো মতবাদ এতটা দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে। গ্যালিলিও থেকে টাইকো ব্রাহে হয়ে কোপার্নিকাস হয়ে আইন্সটাইন--- সবাইকেই নুতুন বৈপ্লবিক ধারনা প্রবর্তনের চাপ সইতে হয়েছে। কিন্তু কালক্রমে বিরুদ্ধবাদীরা হার মেনেছে। এমন না যে ডারুইন এক মাত্র লোক যিনি ধর্মের নর্ম ভেঙ্গেছিলেন। গ্যালিলিও,টাইকো ব্রাহে,ব্রুনো(বেচারা কে শেষমেষ পুড়িয়ে মারা হয়েছিল,সাবাস!) সকলেই তাদের নিজ নিজ সময়কে প্রশ্নের মুখোমুখি করে দিয়েছিলেন। ধর্মের অতি সংবেদনশীল দিককে উলংগ করে দিয়ে পরাজিত করেছিলেন। ডারুইন ও তার সময়ে লড়েছেন এইসব মোল্লা পুরুতের সাথে। অল্ডাস হাক্সলি থেকে শুরু করে হালের রিচার্ড ডকিন্স, সকলে এই ২০০ বছর ধরে একের পর এক অকাট্য যুক্তি দেখিয়ে গেছেন। কিন্তু সারা মানবজাতি আমার 'ষষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষক' হয়ে থাকাই পছন্দ করল। যেন এ এমন ছাত্র যাকে না বের করে দেয়া যায়, না রাখা যায় ক্লাসে।
আজ আমার এই প্রৌড়ত্বে দাঁড়িয়ে যখন খুঁজি কিছুর আশার আলো তখন দেখি জনপদ ছেয়ে আছে সুরমা আতরে আর দাঁড়িতে।
আমি নিজে 'উন্মার্গগামী' হলেও মানুষের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। কেউ যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে জীবনে শান্তির খোঁজ পায়, মন্দ কি? কিন্তু ধর্ম যদি এসে বিজ্ঞান কে পাঞ্জা লড়তে বলে, আর হারার পর বেমালুম অস্বীকার করে, তাহলে তার সম্পর্কে খুব একটা শ্রদ্ধা রাখা মুস্কিল।
ধর্ম এবং ধার্মিকরা যেন বেপরোয়া। তারা প্রায় সব লড়াইয়ে হেরেছে, বিজ্ঞানের কাছে। কিন্তু এইটা তারা ছাড়তে রাজী না। কেন? কেননা, এইখানে হারলে আমাদের 'মর্যাদা' আর রইল কোথায়? চিড়িয়াখানায় যার কীর্তিকলাপ দেখে আমরা লুটোপুটি খাই, আমি কি তার অধঃস্তন (বা উচ্চঃস্তন বা কোনো দুরসম্পর্কের আপন আত্মীয়) হতে পারি? কিন্তু আমরা মানতে চাই বা না চাই, চিড়িয়াখানায় সবচাইতে বেশি ভীড় কিন্তু বানরের খাঁচার সামনে। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমাদের এই বিরাট 'বানর-প্রেমের' কারনটা কি? এটা কি আমাদের রক্তের অন্তর্গত কোনো অনপনেয় ছাপ, যা আমাদের হারিয়ে যাওয়া অতীত কে ফিরিয়ে আনে? নাকি আমরা বানরদের দেখাতে চাই যে আমরা আসলে এই কয়েক হাজার বছরে তেমন কিছু এগোইনি। ওদের সাথে আমাদের তফাৎ শুধু এই, এদের একজন 'দ্রষ্টব্য' আর আরেকজন 'দর্শক'। কে কোনটা, সেইটা বিতর্কের বিষয়!
লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে। শুধু এইটুকু বলে ইতি টানতে চাইছি। এই 'তথাকথিত' প্রাগ্রসর সমাজ (পড়ুন, যুক্তরাষ্ট্র) কিন্তু আমার দেশের চেয়ে এই বিষয়ে যে খুব এগিয়ে আছে তা কিন্তু নয়। এই খানে ধর্ম আরো অনেক ধুর্ত। তারা স্কুলে বিবর্তনবাদ না পড়ানোর জন্য অনেকদিন থেকেই লড়াই করে এসেছে। মামলা মোকদ্দমা হয়েছে। কিন্তু ওদের সংবিধানের 'Establishment act' এর কারনে পুরুতরা এতদিন তেমন কিছু করে উঠতে পারেনি। কিন্তু তারা এখন ধর্মকে ছদ্মনামে ঢুকাতে চাইছে স্কুলে। ছদ্মনামটি নিশ্চয়ই অনেকের জানা----'Intelligent Design' বা ID। এই ID কে স্কুল সিলেবাসে ঢোকানর জন্য এদের চেষ্টা দেখলে 'অভিভুত' (উপযুক্ত শব্দের অভাবে ব্যবহ্রত) হতে হয়। এমন কি এদের রাষ্ট্রপতি (যাকে দেখলে ডারুইন নিঃসন্দেহে তাঁর Missing Link পেয়ে গেছেন বলে লাফিয়ে উঠতেন) পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন। সফল হননি যদিও।
আমার ভাবতে খুব অবাক লাগে, যে মানুষ নিজ বুদ্ধিবলে এত কিছু অর্জন করল, সে কিভাবে 'ধোঁয়াসা'র কাছে নিজের সমস্ত কিছু বিকিয়ে দেয়।
সত্যি, বড় আশ্চর্য লাগে!
মন্তব্য
মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভালো কথা, আমি কিন্তু আপনার 'হুমায়ুন নামা' পড়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছি।
কবে দিচ্ছেন?
আমি তো 'হুমায়ূন নামা' লেখার কথা কোথাও বলিনি!
আপনি, মনে হয়, আমাকে অন্য কারুর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
উনি আমার সাথে আপনাকে গুলিয়ে ফেলেছেন। যাহোক, হুমায়ূননামা পোস্ট দিয়েছি। দেখুন এখানে।
আমারই ভুল ছিল। যাক তারপরেও জায়গা মত খবর পৌঁছেছে দেখে ভাল লাগল।
আরো ভাল লাগল, লেখাটি দেখে।
ভাল থাকবেন।
চমৎকার লেখার জন্য থ্যাঙ্কস্। ধার্মিক মানুষ নিয়ে আমারও প্রব্লেম নেই। তবে নিজের ভিতর চিড়বিড়ানি অনুভব করি যখন কাউকে ধর্মের মধ্যদিয়ে বিজ্ঞানকে ব্যখ্যা করতে দেখি (বিটিভিতে এক সময় এক জ্ঞানী বান্দাকে এইটা রেগুলার করতে দেখতাম, একদিন দেখি সে বিগ ব্যাং থিওরি এক্সপ্লেইন করল)। এক ধর্মাত্মারে একবার জিজ্ঞাসা করছিলাম, ধর্ম যদি বিজ্ঞানকে ধারন করে তবে ধর্মের আলোকে আলেম-ওলামারা কেন আবিস্কারটা আগে করে না; লাইফ হারাম করে বিজ্ঞানীরা কিছু আবিস্কার করবে, আর আলেমরা সেইটার সাথে ধর্মগ্রন্থের সাদৃশ্য খুঁজে উল্লাস্ করলে লাভটা কি? আমার এক বন্ধুরে আর্গুমেন্টের এক পর্যায়ে বলছিলাম যে গাছগাছালির ছায়ারে যেমন মানুষ-পশু-পঙ্খী যা ইচ্ছা কল্পনা করা যায়, ধর্ম আর বিজ্ঞানের সাদৃশ্য তেমনি আমাদের ইচ্ছাকল্পনা-আমার এই উক্তি নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়ন চলছিল কিছুদিন। কলেজ জীবনের কিছু ফ্রেন্ডের সাথে অনেক বছর পর আড্ডা দেওয়ার সময় কি কারনে জানি মানুষরে এনিমাল বলছিলাম (কনটেক্সট মনে নাই)। একজনের মুখ দেখি গম্ভীর হ'য়ে গেল; মানুষ প্রানী হইতে পারে কিন্তু এনিম্যাল হয় কেমনে?
আপনার সাথে আমার স্কুলজীবনের একটা সাদৃশ্য আছে। আরবী হুজুরের কাছে দুইহাতের সিমুল্টেনাস কানমলা খাইছিলাম দুইকানে-পিছনের বেঞ্চে বসে প্লাস্টিকের ব্যাগ বাজানোর জন্য। আমার দুই কানের টেম্পারেচার বডি টেম্পারেচারের চাইতে কয়েক ডিগ্রী বেশি ছিল ঘন্টাখানেকের জন্য।
বাহ, আপনি ও তাহলে এই দলে?
না না ভুল বুঝবেন না। আমার মত পথভ্রষ্টের দলের কথা বলছি না। বলছি,'নিখিল আরবী-স্যারের-হাতে- নিগ্রীহিত গোষ্ঠী'র কথা।
আর আপনার আরেকটা পয়েন্ট খুব ভালো লাগল। এত সময় আর শ্রম আর টাকা পয়সার শ্রাদ্ধ করে উচ্চ ডিগ্রীধারী মোল্লা হবার তো কোনো কারন দেখিনা।
আমাদের মাঝে যে কেউ উর্বর মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মালেই, এবং শিক্ষাদীক্ষায় ও পরবর্তিতে কর্মজীবনে ভালো করলেই আমরা 'মহাজন'এর কাতারে ফেলে দিই। কিন্তু কি অপচয়টা হল কেউ ভেবে দেখিনা।
তাই আমাদের প্রথিতযশা শমশের আলী তার সময় ব্যয় করছেন BIG BANG Theory-র 'ইস্লামিক' ব্যাখা দেবার জন্য।
কি অপচয়!
খুব ভালো লাগলো।
আপনি কে বলেন তো ভাই?
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
আপনার ভালো লেগেছে শুনে আমারো খুব ভালো লাগল।
ভালো থাকুন।
কারে জিজ্ঞাইলেন? আমারে না অনিকেত ভাইরে?@ সুজন চৌধুরী ভাই।
এইটা ভাল প্রশ্ন করেছেন।
আমি অম্লানবদনে অবশ্য মন্তব্যটা আমার উদ্দেশ্যে করা ভেবে নিয়ে মন্তব্য করে ফেলেছি। এখন দেখি সুজন ভাই কি বলেন।
বেশ মজাদার পরিস্থিতি।
সুজন ভাই ????
বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করতে অনেকেই অস্বস্তি অনুভব করে। বিশ্বাস করতে অস্বস্তি অনুভব করে এর কারণ হলো বিজ্ঞান সব সময় সবকিছু উন্মুক্ত করে দেয় আর ধর্ম সবকিছুকে ঢেকে রাখে
সোজা কথায় বিজ্ঞান সবাইকে এমন নেংটা করে দেয় যে ঐতিহ্য কিংবা উত্তরাধিকার নিয়ে গালভরা লেকচার দেবার কোনো সুযোগই রাখে না
আর ধর্ম এবং কিংবদন্তী শুরু করে সমৃদ্ধ ঐহিহ্য দিয়ে;
যেমন ঈশ্বরের নিজের হাতের তৈরি মানুষ অথবা আমি অমুক রাজার বংশধর অমুক পীরের বংশধর ইত্যাদি ইত্যাদি
ফলে শুধু বিবর্তনবাদ নয়। বিভিন্ন জাতির মধ্যে রক্তমিশ্রণের মতো সভ্যতার সাধারণ ধারাবাহিকতাও অনেকে মানতে অস্বীকার করে
খাঁটি কথা।
ডারউইনের ব্যাপারে সব ধর্মবনিকেরা এক কাতার ।
বিবর্তনবাদ নিয়ে কিছু চমৎকার লেখা আছে সচলায়তনে ।
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
চমৎকার লিখার জন্য বিপ্লব।
আমি নিজে যখন অসীমের চিন্তা করি, তখন সমস্ত অর্জন, আমাদের দেখার পৃথিবীর সীমাবদ্ধতা অনেক বড় হয়ে ধরা দেয়। মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা অসহ্য মনে হয়; কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতাটাই বর্তমান। সুতরাং সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ বা কারা
১. থাকতেও পারে,
২. নাও থাকতে পারে।
সৃষ্টিকর্তা থাকতে পারেকে একমাত্র অপশন ধরে নিয়ে শুরু হয় তার গুণগান, পূজা-অর্চনা। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করা যায় না। সৃষ্টিকর্তা নেই-এর যেমন প্রমাণ নেই, সৃষ্টিকর্তা আছে, তারও প্রমাণ নেই। সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ থেকে থাকলে তিনিও বোধহয় সরাসরি প্রমাণ দিতে তেমন ইচ্ছুক নন। তিনি যেগুলোকে প্রমাণ বলেন, সেগুলোও রাখ-ঢাক করে ধোয়াশাসৃষ্টির প্রয়াশমাত্র।
কেউ অপশন ১ ধরে নিলে কোনো সমস্যা নেই। কেউ সৃষ্টিকর্তা আছে এই বিশ্বাসে আত্মশুদ্ধিতে মনোযোগ দিক, কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু সমস্যা বাধে তখনই, যখনই এরকম একটি বিষয়কে অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। সবার ওপরে মানুষ সত্য, মানুষের জন্যই যত ধর্ম। সৃষ্টিকর্তা এতই শক্তিশালী হলে মানুষের পূজা-অর্চনা ছাড়াও তার দিব্যি চলে যাবে, মানুষকে বলি না দিলেও তার শক্তিতে ভাটা পড়ার কথা নয়। অতএব, সমস্ত ধর্মীয় বিধানই হওয়া উচিত মানুষের মঙ্গলের জন্য এবং কিভাবে মঙ্গল সেই কথাগুলো মানুষের বোধগম্য যুক্তিতে ধোয়াশা না রেখে স্পষ্ট করে বলতে হবে। মানুষের জন্যই ধর্ম, ধর্মের বলি হওয়ার জন্য মানুষ নয়। এজন্যই ধর্মের 'বিশ্বাস' অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়া অন্যায়।
যাহোক, ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে যারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন, ধর্মে তাদের বিশ্বাস নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। তাদের বিশ্বাস নড়বড়ে বলেই তারা ধর্মকে প্রমাণ করার তাগিদে খড়কুটোর মত যা পান, তাকেই আঁকড়ে ধরেন। সেটা গুরু কিংবা পীর হতে পারে; হতে পারে বিজ্ঞান। ঈশ্বরই যেখানে একটা অপ্রমাণিত বিশ্বাস মাত্র, সেখানে ঈশ্বরের দেওয়া ধর্মের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুঁজতে গেলে এরকম নাভিশ্বাস হতেই হবে।
এসব মহান বুদ্ধিমানদের যুক্তির নমুনা দিয়ে মন্তব্য শেষ করি: বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে, নতুন আবিষ্কার আগের আবিষ্কারকে রিপ্লেস করছে। অতএব, বিজ্ঞানই ধ্রুবসত্য নয়। (ঠিক, একদম ঠিক)। অতএব, তোমার বিজ্ঞান আর কতদূর জানে! বিজ্ঞানে না থাকলেও ঈশ্বর আছে। (উহু, একদম গোঁজামিল। বিজ্ঞান ফালতু হোক, বিজ্ঞানের আকামের ধাঁড়ি হোক; কিন্তু কোনোকিছু আছে বলে তার থাকার প্রমাণ দিতে হবে। পৃথিবী সূর্য্যের চারিদিকে ঘোরে। কে ঘুরায়?ধরুন, বিজ্ঞান সেটা জানে না। আপনি বললেন, ঈশ্বর ঘুরায়। ঈশ্বর যে ঘুরায় তার প্রমাণ কই?)
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অনিকেত, আপনার লেখাটা ভাল লাগল। এ বিষয়টা নিয়ে আমি আর বন্যা দু জনেই অনেকধিন ধরে বেশ কিছু লেখা লিখেছি। সচলায়তনে ধারাবাহিকভাবে লিখব ভাবছিলাম। সময়ের অভাবে কিছুই করা হচ্ছে না। চাকরী বাকরী নিয়ে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।
যাহোক, যারা আমেরিকায় ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের উত্থান নিয়ে জানতে চান, তারা বন্যার "বিবর্তনের পথ ধরে" বইটার দশম অধ্যায় : "ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন - সৃষ্টিতত্ত্বের বিবর্তন" টি পড়ে দেখতে পারেন।
এ ছাড়া সচলায়তনেও বেশ কিছু ভাল লেখা আছে, দিগন্তও বেশ কিছু ভাল লেখা লিখেছেঃ
http://www.sachalayatan.com/taxonomy/term/866
আমার অনুরোধ, ক্যাটাগরি সিলেকশনের সময় " ব্লগরব্লগর" না লিখে যথাযথ বিষ্য়, যেমন - 'বিবর্তন', 'সৃষ্টিতত্ত্ব' -এগুলো নির্বাচন করলে পরে সেগুলো খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।
==========================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
অভিজিৎ'দা,
আপনি সময় নিয়ে এই লেখাটা পড়েছেন, সেই জন্য অনেক ধন্যবাদ। আর ক্যাটাগরী-র ব্যাপারটা মাথায় থাকল।
আপানাদের লেখাতেও এখন চোখ বুলাচ্ছি।
ভালো থাকবেন।
নতুন মন্তব্য করুন