আজ সকালটা আমার শুরু হয়েছিল দারুন ভাবে। ঘুম থেকে উঠতেই সুসংবাদ---- ম র নিজামী জেলে গিয়েছে। প্রাথমিক আনন্দের রেশ কাটতে অবশ্য বেশি খন লাগল না। অত্যন্ত ঝাপসা চরিত্রের এই অন্তর্বর্ত্তিকালীন সরকার শুরু থেকেই জামাতীদের প্রতি বিশেষ রকমের সদয়। রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে 'বা-আ-ল' (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) , 'বা-জ-দ'(বি এন পি) এবং আরো কিছু না-ধরলেই-নয় এমন দূর্বৃত্তদের ধরে জেলে পুরেছে। আমরা বেকুবের জাত, রাস্তায় আনন্দে ডিগবাজী খেতে লাগলাম। দিন গেল, মাস গেল এমনকি বছর ও গেল। কত লোক ধরা পড়ে, কিন্তু সোনার চান ময়না পাখি জামাতীদের গায়ে আঁচড়টিও পড়ে না। আস্তে আস্তে ফিসফাস শুরু হল। ব্যাপার কি? তিন রকমের ব্যাখ্যা পাওয়া গেলঃ
------এক) জামাতীরা কোন অন্যায় কাজ করতেই পারে না। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত সকল দস্যিপনা কেবল বি এন পির লোকেরা করেছে। জামাতীরা 'আল্লাহ ওয়ালা' মানুষ। তাদের পক্ষে একটি দেশের সব মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে অন্যতম বিরোধী হওয়া সম্ভব, প্রয়োজনে তারা চমৎকার নামের কিছু আধা-সামরিক বাহিনী (শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর, আল শামস......আহা কি সব খাপসুরত নাম) তৈরি করে দেশের মধ্যেই 'শোধন প্রক্রিয়া' চালাতে পারে---কিন্তু তাই বলে দূর্নীতি? নৈব নৈব চ, থুড়ি নাউজুবিল্লাহ!
-----দুই) সরকারের মাঝে জামাত-প্রেম প্রবল।Infact জামাত সরকারের ভাসুর লাগে। সেই জন্য সরকার তাদের সাথে গুস্তাখি করতে পারে না। দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় হাসিনা কে দেশের বাইরে যেতে না দেয়া হলেও ঐ একই দোষে দোষী মুজাহিদ তুরস্ক ঘুরে আসেন অনাবিল মসৃনতায়।
-----তিন) এরা এতই চালাক যে তাদের দস্যিপনার কোন চিহ্ন পেছনে ফেলে আসে নি। হয়ত তাদের প্রিয় TV Show হল CSI।
লোকজন আরেকটু বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলে পরে, ফ-উ-আ/ ম-উ-আ -র দল জানাল, তারা আসলে জামাতীদের দুর্নীতির তেমন কোন প্রমান পাচ্ছে না। পাওয়া মাত্রই জেলে পোরা হবে।
সেই মাহেন্দ্রক্ষন এল প্রায় দু'বছরের মাথায়। এর আগে ম র নিজামী অবশ্য ঘটা করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তাঁর আশংকার কথা--তাকে হয়ত জেলে নিয়ে যাওয়া হবে। কি রকম পোক্ত ঈমানের লোক, চিন্তা করুন! জানা সত্ত্বেও তিনি আত্ম গোপন করেননি।(সবাই বলেন সুবহানাল্লাহ...)। প্রবল বৃষ্টির মাঝে শত শত ভক্তদের দূর্ভেদ্য ব্যুহ ভেদ করে শেষ পর্যন্ত এই মহান বাদরটিকে জেলে আনা হয়েছে।
অনেকেই হয়ত ফ-উ-আ/ম-উ-আ এর নৈতিক দৃঢ়তায় মুগ্ধ হয়েছেন। অনেকে হয়ত নুতুন করে প্রেমে পড়ছেন তাদের সাথে।
খালি আমার মত কতিপয় ঘর-পোড়া-গরু কেন যে আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখে কে জানে? হয়ত চশমা নেয়ার সময় হয়ে এসেছে।
ম র নিজামীর এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে হঠাৎ করে আমার খেয়াল হল, পৃথিবীতে দুশ্চরিত্র দুর্বৃত্তরা কেন দীর্ঘজীবি হয়? কি কারনে তারা টিকে থাকে সকল ঝড় ঝাপ্টা মাথায় নিয়ে? এই নিয়ে কি কোন রকমের গবেষনা হয়েছে?
গুগল বাবাজীর কাছে ধর্ণা দিলাম। বেশ খানিক্ষন চেষ্টা করে তেমন যুৎসই কিছু উদ্ধার করা গেল না। Criminal Psychology, Criminal Anthropology ঘেটে খুজে পেলাম না কি কারনে এরা এমন জীবনীশক্তি নিয়ে আসে?
খেয়াল করে দেখুন আমাদের দেশের সবচাইতে বড় দুর্বৃত্তটির কথা- গো আযম। প্রতি দিন হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রান দেয়, বানে ভেসে যায় লাখ লাখ লোক, সুনামীতে লোপ পায় জনপদ, কিন্তু গো আযম মাখন মাখিয়ে রুটি খায় রোজ। আমি কখনো শুনিনা, তার হৃৎপিন্ডের কোন গোলযোগের কথা।কখনো শুনিনা তাকে নেয়া হয়েছে কোন হাস পাতালে--- জরুরি স্বাস্থ্যের বিকলতার কারনে।
শুধু শুনি, হুমায়ুন আজাদ মারা যান নিভৃতে একাকী ঘরে, দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, আপনজনের কাছ থেকে আলোকবর্ষ দূরে। আমি দেখতে পাই জাহানারা ইমাম সংগ্রাম করেন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে পরাজয় অনিবার্যে জেনেও। আমি দেখতে পাই হঠাৎ করে দেশের মানচিত্র থেকে মুছে যান সঞ্জীব চৌধুরী।
কিন্তু, সাকা চৌধুরী,মওদুদ,নাজমুল বেহুদা সহ আরো অনেক আলোকিত (!) ব্যাক্তিত্ব কেবল দিন কে দিন উচ্চকিত হন।লে জ়ে হো মো এরশাদ একের পর এক
জন্ম দিয়ে যায় রক্তবীজের বংশধর, অঙ্কশায়িনী করতে থাকে একের পর এক উদ্ভিন্ন রমনী। আমরা দেখি খন্দকার মোস্তাক তার পাপের সমান এক দীর্ঘজীবন লাভ করে। সাঈদীর দাঁড়ি তেল খেয়ে খেয়ে আরো চকচকে হয়।
আর সিডরে ভেসে যায় অগনিত প্রান।
উচ্চশিক্ষিত মেরুদন্ডহীনেরা উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হয়, কিছু দিন পর পর জাতির সামনে তৈল-চিক্কন নুরানী চেহারা নিয়ে উপস্থিত হয়। মাঝে মাঝে রবি ঠাকুরের কোন মহৎ কবিতার লাইন আওড়ায়। এক সেনা নায়ক তার অবোধ্য নির্বোধ অসংলগ্ন বচনচয় এক করে প্রকাশ করে 'নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ'।
আমার অনুসন্ধান কালে উইকিপিডিয়াতেও ঢুঁ মেরে ছিলাম, যেমনটা করা দস্তুর। সেখানে গো আযমের নামে একটি ভুক্তি রয়েছে। সেখানে তাঁর নুরানী চেহারার কোন ছবি নেই। নেই ১৯৭১ সালে তার কৃতকর্মের কোন খতিয়ান। তাকে উল্লেখ করা হয়েছে "alleged collaborators" হিসেবে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে তার অগ্রনী ভুমিকার কথা বিধৃত হয়েছে।আর ১৯৭১ কে কেবল ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে, পাছে তার মনে ব্যথা লাগে।
দুর্বৃত্তরা কেন দীর্ঘজীবি হয়, তার একটা ব্যাখ্যা আমি দাঁড় করিয়েছি---- এদের আসলেই কই মাছের প্রান।অথবা বেড়ালের মত নয়টি জীবন। আর তার কারন, তাদের কে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় বাঁচার জন্য। বাঁচার জন্য সাধারন মানুষ ও লড়াই করে। কিন্তু এদের লড়াই অন্য লেভেলের, ভিন্ন স্তরের। এদের লড়াই করতে হয়, কি করে মানুষদের কাছ থেকে নিজেকে বাঁচানো যায়। কি করে গা ঢাকা দেয়া যায়, কি করে এড়ানো যায় গ্রেফতার,কি করে কোন ছাপ না রেখে সমাধা করা যায় নৃশংস অপরাধ।তাদের এই বিপদ-সংকুল জীবনযাত্রা তাদের কে আরো সুচতুর, আরো ধূর্ত, আরো দূর্মর করে তোলে।
আমি, আপনি চাইলেই দুর্বৃত্ত হতে পারব না। এদের পেছনে আছে বহু দিনের 'সলতে পাকানোর' অভিজ্ঞতা।
ভালো মানুষ বা সাধারন মানুষরা এই ধরনের বিপদ সংকুল জীবন যাপন করে না। তাদের প্রতি নিয়ত শতর্ক থাকতে হয় না।
অবশ্য দুর্বৃত্তরা যে সবাই দীর্ঘজীবি, এমনটা সত্যি নয়। তাদের কাজের ধরন বিপদসংকুল। মুহুর্তের অসাবধানতায় প্রান বিপন্ন হয়। অনেকে মারাও যায়। সমীক্ষায় দেখা গেছে অপরাধিরা ৬৫ -র দিকে এসে কিছুটা স্থবির হয়ে আসে। তারা নিজেরা অপরাধ সংঘটনে অংশ নেয় না। অন্যদের দিয়ে করিয়ে নেয়। আর অনেক দিনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হওয়ার কারনে বিপদের ঝুকি বিষয়েও তারা দারুন ওয়াকিবহাল। এই সব কিছু তাদের বেচে থাকার ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখে।
মোদ্দা কথা, দীর্ঘজীবন লাভের একটা পথ হল, দুর্বৃত্ত হওয়া এবং আইনের হাত থেকে পালিয়ে থাকা। খন্দকার মোস্তাক আর গো আযমের জীবন এ ক্ষেত্রে আমাদের আদর্শ হতে পারে।
মন্তব্য
- ভাই, সরকারের চরিত্র থেকে ধুসর কথাটা বাদ দেয়া যায় না? নিজেকে অপমানিত বোধ করি। আমি লোকটা বেসিক্যালী দুই নাম্বার হইলেও নাম্বারহীন লোকজন এড়িয়ে চলতে চাই। আমার নামটারে রেহাই দেন ভাই না ভালা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হা হা হা তথাস্তু.........
- অশেষ শুক্রিয়া বস।
তয় নাম একখান দিছেন চান্দুর, ম র নিজামী। হালারে আলাদা কইরা মূর্দাবাদ কওনের দরকার নাই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দিন খারাপ হলে এমনই হয়! তবে আমাদের সবসময়েই দিন খারাপের পালা।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
কে বললো আপনাকে? নিজের ওপর আরেকটু বিশ্বাস আনুন
আপনার মত গুরুজনের কথা ফেলি কি করে?
স্নিগ্ধা'পু এগিয়ে চলেন আমরা আছি পিছে পিছে.........
লঘুভ্রাতঃ অনিকেত - কি আর বলবো (দীর্ঘশ্বাসসসসসস) নিজের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি ......... দেখে দেখে আমার নিজেরই মাঝে মাঝে তাক লেগে যায় !!! অবশ্যই আমি এগিয়ে যাবো...... .
(দেখলেন আমি কেমন Fox News এর মত Fair and Balanced, নিজেকেও ছাড়ি না ? )
মাত্র গতকালই এক জায়গায় মন্তব্য লিখেছি:
মইত্যা, গোআযমের মতো পিশাচরা সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকে দিব্যি, আর পৃথিবী-উজ্জ্বল-করা লোকেরা আক্রান্ত হয় জটিল সব রোগে!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি তুষ্ট আত্মপ্রেমেই। এর সুবিধে হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হোক না তারা দীর্ঘজীবী। কোনো সমস্যা নেই। তারা শেষ পর্যন্ত মরবে গণশত্রু হিসেবেই। আইনের বিচারে কী হবে তা পরের কথা, আমি চাই তাদের আয়ু আরো দীর্ঘ হোক এবং জনমভর তারা শুনে যাক মানুষের গালিগালাজ ও অভিসম্পাত।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
সকলকে ধন্যবাদ, তাঁদের মন্তব্যের জন্য।
@ জুবায়ের ভাই, আপনার এই দৃষ্টিভঙ্গীটা বেশ লাগল। ওরা বেঁচে থাক, আর আমাদের গালি খাক।
আরেকটা কথা বলতে ভুলেই গেসলাম।
আপনাদের কেউ কি আসলে উইকি'র পাতাটা দেখেছেন?
আপনাদের কি মনে হয় নি অত্যন্ত আযম ঘেসা লেখা? নাকি কেবল আমারই দেখার ভুল?
ম র নিজামীর নামেও ভুক্তি আছে দেখলাম, কিন্তু সেইটা এত নির্লজ্জ নয়।
রাগিব ভাই সাড়া দিয়েছেন দেখে খুশি হলাম। গোলাম আযম নিয়ে লেখার জন্য আমি যথার্থ লোক অবশ্যই নই। যিনি যথার্থ লোক, তাকে নিঃসঙ্কোচে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি। আমার উত্তরপুরুষরা কিন্তু ওয়েব থেকেই ইতিহাস জানতে চেষ্টা করবে...
আর অনিকেত ভাই, আপনাকে কেউ ভোট দেয় নি দেখে আমি বিস্মিত!! এই জ্বালা ধরানো লেখার জন্য আপনাকে পাঁচ তারা দিচ্ছি! আপনার ক্ষোভ আর আক্রোশ নিজের মধ্যেই অনুভব করছি!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
মৃদুল ভাই,
আপনার কাছে লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগল। পাঁচ তারার জন্য পাঁচ তারা ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন