LHC বা Large Hadron Collider সম্পর্কে জানার আগে একটু স্মৃতিচারন মনে হয় খারাপ লাগবে না।
১৯১৯ সালের পর সম্ভবত এই প্রথম সারা পৃথিবীর চোখ পদার্থবিজ্ঞানের দিকে। ১৯১৯ সালে স্যার আর্থার এডিংটনের দল আবিষ্কার করেছিল যে মাধ্যাকর্ষন বা অভিকর্ষ বল সত্যি সত্যি আলোর পথ পর্যন্ত বাঁকিয়ে দেয়। আর এ আবিষ্কারের সাথে সাথে ইউক্লিডের ৩০০ খ্রীষ্টপুর্বাব্দে লেখা জ্যামিতির চেনা জগত আমাদের কাছে প্রথম বারের মত পুরোনো ঠেকল। ১৯১৯ সাল আইনষ্টাইনের বিজয়ের বছর---পদার্থবিজ্ঞান তথা মানব সভ্যতার মনীষার উৎকর্ষের বছর। যখন পশ্চিম আফ্রিকায় এডিংটনের দল এই সব পর্যবেক্ষনে ব্যস্ত---- আইনশটাইন তখন সাগরতীরে ছুটি কাটাচ্ছেন। এডিন্টন যখন তার গবেষনার ফল প্রকাশ করলেন----সারা পৃথিবী ছুটল আইন্সটাইনের কাছে। তার এই বিজয়ের মুহুর্তে, তার মন্তব্য জানতে। 'যদি ধরেন---এডিংটনের গবেষনার ফলাফল আপনার বিপক্ষে যেত---তাহলে কি করতেন আপনি?উৎসুক এক সাংবাদিকের এই প্রশ্ন শুনে আইন্সটাইন বলেছিলেন---"তাহলে ঈশ্বরের উপর আমার করুনা হতো।"
সেই এত বছর পর---আবার সবাই পদার্থবিজ্ঞানীদের দিকে চেয়ে আছে।
কি ঘটবে ১০ তারিখে?
পৃথিবী কি আসলেই ধ্বংস হতে চলেছে?
কিয়ামত কি শেষ পর্যন্ত এসেই গেল??
এসব প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের জানা দরকার LHC বস্তুটা কি। খুব সাদামাটা করে যদি বলি, তাহলে LHC কে বলতে পারেন এক ধরনের মাইক্রোস্কোপ। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে যেমন আমরা আমাদের দৃষ্টি ক্ষমতার বাইরের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম জগতে উকি দিতে পারি---- LHC আমাদের কে সেই রকম একটা অজানা জগতের ছবি এনে দেবে। সে ছবিতে ভূত না ভগবান থাকবেন---সেই নিয়েই বিতর্ক।
LHC কে তাই বলে আতশ কাঁচ বা মাইক্রোস্কোপের মত ছোটখাট ভাবলে কিন্তু ভুল করবেন। এযাবৎ কালের মাঝে সবচাইতে বড় আর সবচাইতে শক্তিশালী কণা-ত্বরনায়ক(particle accelerator) হচ্ছে LHC.
এখানে গেলে পরে LHC ভেতরের একটা 3D ছবি দেখতে পাবেন।
এইরকম বড়সড় জিনিস এর আগে তৈরি হয়েছে কি না সন্দেহ। LHC আসলে ঠিক কত বড় সেটা বোঝানোর জন্য নীচে কিছু তথ্য দেয়া হলঃ
----এক) প্রায় ২৭ কিমি পরিধির এক বিশাল জায়গা জুড়ে LHC এর মুল অংশটি স্থাপিত।
----দুই) মুল অংশটি মাটির নীচে বসানো---প্রায় ৫০ থেকে ১৭৫ মি গভীরে।
----তিন) LHC এর একটি অংশ হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ফ্রীজ! সসেজ ঠাসা ১৫০০০০ টি ফ্রীজ অবলীলায় এঁটে যাবে এর মাঝে।
----চার) সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের পাশে স্থাপিত হয়েছে, এই পৃথিবীর বৃহত্তম এবং মহত্তম পদার্থবিজ্ঞানের গবেষনাগার। নাম হল European Organisation for Nuclear Research, সংক্ষেপে CERN। এইখানে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কণা-ত্বরনায়করা(Particle accelerator)। ১৯৫৪ সালে স্থাপিত এই বিশ্ব-মানবের মিলন মেলায় প্রায় ৮ হাজার বিজ্ঞানী,প্রযুক্তিবিদ (৮০টি দেশের ৮০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকজন) এবং ২৬০০ সার্বক্ষনিক কর্মী কুশলীরা কাজ করছেন। ইউরোপের ২০ টি সদস্য রাষ্ট্রের তত্বাবধানে দিবা রাত্র কাজ চলছে ---মানব জাতির সব চাইতে বিশাল কর্মযজ্ঞে। CERN তার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করছে। অনেক নোবেল প্রাইজের জন্মস্থান এই CERN। ১৯৮৩ তে W ও Z বোসন নামের কণা আবিষ্কারের মাধ্যমে সালাম-গ্লাসো-ভাইনবার্গের তত্বের প্রথম পরীক্ষামূলক স্বীকৃতি আসে। এছাড়াও Anti-hydrogen, CP violation সহ আরো অসংখ্য চমকপ্রদ ঘটনার জন্মস্থান এই CERN। এখানে ৬ টি কণা ত্বরনায়ক আছে, আর আছে একটি কণা- মন্থরায়ক(Decelerator)। LHC হল CERN এর নবতম এবং শ্রেষ্ঠতম সংযোজন।
----পাঁচ) অত্যন্ত কঠোর ভ্যাকুয়াম বা বায়ুশুন্যতার প্রয়োজন এই ধরনের নাজুক (sensitive) পরীক্ষা করার জন্য। LHC এর ভাক্যুয়াম মহাশুন্যের ভাক্যুয়ামের মতই (সমুদ্র উচ্চতায় বাতসের যে চাপ, সেইটার ১/১০০০০০০০০০০০০০০ ভাগ হল LHC এর ভেতরের চাপ)।
---ছয়) ৯৬০০ চুম্বক রয়েছে এর ভেতরে।
----সাত) পৃথিবীর শীতলতম স্থান এখন আর ভারখয়নস্ক কি ভ্লাডিভস্তক নয়। এদের সকলকে হঠিয়ে দিয়ে LHC নিয়েছে শীর্ষস্থান। LHC এর শীতলতম অংশের তাপমাত্রা হল ১.৯ কেলভিন বা -২৭১.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অর্থাৎ পরম শুন্য তাপমাত্রার নাকের ডগায়।
(দ্বিতীয় পর্ব সমাপ্ত)
তৃতীয় পর্বে থাকছেঃ কিভাবে কাজ করে LHC, কি কি আবিষ্কার করতে চলেছে সে আর কেনই বা সকলে উৎসাহী না হয়ে উদবিগ্ন হয়ে আছেন।
মন্তব্য
ড্যান ব্রাউনের এইঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস এর শুরুটাই তো মনে হচ্ছে সিইআরএন এ ছিলো। নাকি?
হাঁটুপানির জলদস্যু
হ্যা, এঞ্জেলস এন্ড ডিমনসের শুরুটা ছিলো CERN এ।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
Angels and Demons টা আমার পড়া হয়নি।
তবে Micheal Crichton এর State of Fear এর খুব সম্ভবত প্রথম দিকে CERN এর উল্লেখ আছে। খুব সম্ভবত প্রথম খুন ঐখানেই হয়।
শুভ ভাই
একটা বেসিক প্রশ্ন করি (ফিজিক্সে জ্যুইতের না আমি
পার্টিকেল এক্সেলারেটরে পার্টিকেলগুলো বৃত্তারপথে যেতে যেতে তাদের শক্তি হারিয়ে ফেলে না? নাকি পার্টিকেলের আকারের তুলনার বক্রতা নগণ্য?
রসো বৎস, রসো---
তৃতীয় পর্বে উত্তর আসিতেছে----
পদার্থ বিজ্ঞানে জ্ঞান আমার খুবই সীমিত। তারপরও আপনার লেখা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। আর তৃতীয় পর্ব পড়ার তড় সইছে না। দয়াকরে তাড়াতাড়ি ছাড়েন অনিকেত ভাই।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
তাড়াতাড়ি ছাড়েন পরের পর্ব
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আসিতেছে......
এখনো যদি আসিতেই থাকে তাহা হইলে এক্সিলারেট আর কী করলেন! এই টেস্টের ফলাফল তো সুবিধার হবে না।
খালি খালি ব্ল্যাকহোল বানাইয়া দুনিয়াটা ধ্বংস করব আরকি।
পড়ে মনে হচ্ছে হ্যারি সেলডনের আবির্ভাব ঘটবে একটু পর। এটা আসলেই একটা সেলডন ক্রাইসিস! (আসিমভের ফাউন্ডেশন সিরিজ থেকে চুরি করে উপমাটা দিলাম:-/ )
আপনি লিখছেন দুর্দান্তিক।
অন্তত প্রতিদিন একটা পর্ব পাবো তো?
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
খালি আইড়া কাইড়া বাইড়াইলে চলব? লাইনের মূল কতাগুইলা কও? ওইডা পয়দা অইলে কি আমরা ভালো থাকুম?
ভালো না থাকেন, খারাপ থাকবেন না।
আর যদি আমরা 'উড়েই' যাই তাহলে তো ভাল-খারাপের প্রশ্ন রইল না----হে হে হে ---
ভাই, তৃতীয় পর্বটা ঝুলায়ে না রেখে ছেড়ে দেন না...
মাথার উপর দিয়ে গেলো আর যেতে যেতে বলল সব জিনিস মাথায় ঢোকাতে নেই...
ব্রাদার, গেলেন কই? আপনার লেখাটা পড়ে একটু উঠবো ভাবছিলাম
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
লেখাটা সেইরাম হইছে
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কিসুই বুঝতাসি না। ক্যামত হইলে তো তবা আস্থাগফিরুল্লা নাউঝুভিল্লা পড়তে হয়। ভাইবইনসব পড়েন! সবে জোরেসোরে পড়েন!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
আরেকটু বড় করে লেখেন ভাই, এত আস্তে এ্যক্সিলারেট করলে তো পরে সামলাতে পারবেননা।
খুব ভালো লাগছে।পরের পর্বের অপেক্ষায় রয়েছি।
অ্যাঞ্জেল্স অ্যান্ড ডিমন্স পড়ার আগে সার্ন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। বইটা পড়ার পর এ নিয়ে উৎসাহ বাড়ল। কণা ত্বরকের ছবি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। ভাল্লাগছে এই ভেবে যে, ইউরোপের সেরা বিজ্ঞান সংস্থার নামটাও এই সুযোগে সাধারণ মানুষের গোচরে আসবে।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
CERN দেখেই ড্যান ব্রাউনের "অ্যাঞ্জেলস এন্ড ডিমনস"-এর কথা মনে পড়ে গেল। আর লেখাটা এত সহজ ভাষায় লিখেছেন যে বুঝতে সমস্যা হল না কোন। দারুন! এইরকম একটা জিনিস কিভাবে বানাল তা ভাবতেই অবাক লাগছে খুব! কত মানুষের শ্রম, মেধা জড়িয়ে আছে এর সাথে!
স্যার এডিংটনের পরীক্ষা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা করছে। কিছু লিখবেন কি এই প্রসঙ্গে?
_________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
থ্যাঙ্কু বস।
চেষ্টা করব রিলেটিভিটি নিয়ে একটা লেখা দিতে। সেখানে আশা করছি এডিংটনের ব্যাপারটা নিয়ে লিখতে পারব।
Actually LHC is the greatest sexy mechanical&scientic objectof CERN..........................
নতুন মন্তব্য করুন