"'পমান' করিতে হইবে যে----"
দৃশ্য একঃ-
সিলেট জেলা স্কুল। গ্রীষ্মের দুপুর বেলা। এমন ঝিম ধরা সময় যে মাছিরা পর্যন্ত ওড়াউড়ি বন্ধ রেখে ঝিমাচ্ছে। ক্লাসে অংক স্যার ও ঝিমাচ্ছেন।
"পমান" করিতে হইবে যে শুনে ধড়ফড় করে উঠলেন।
---ঐ, কি বললি রে?
প্রায় সাদা হয়ে আসা ব্ল্যাক বোর্ডের সামনে দাড়ান ছেলেটির এবার সাদা হবার পালা। আমতা আমতা করে বলল, স্যার, 'উপপাইদ্য'-৮ পমান করতে কইসিলেন যে----
'পমান' করতে কইসিলাম??
সমস্বরে সকলে খুব হে হে হে করে খানিকটা হেসে নিল। সাথে সেই ছেলেটাও।
--ঠিক করে বল।
--প্রমান করিতে হইবে যে---
--হুঁ, বলে যা
কিন্তু দুই লাইন পরে আবার বজ্র-নির্ঘোষ,
---'সাধারন নির্বাচন'??? ঐ এইটা তুই ইলেকশন পাইলি নাকি?
-- স্যার বইয়ে লেখসে--
---তাই নাকি রে? এ্যাঁ?? নিয়ে আয় দেখি
[------]
---কই? এইটা বুঝি 'নির্বাচন'? নির্বচন রে গাধা,নির্বচন----আন্ধা হইলি কবে থাইকা??
সবাই আবার হে হে হে করে হেসে উঠল। এবার ছেলেটা ছাড়া। কারন তার ডান কানের দখল স্যার নিয়ে নিয়েছেন।
দৃশ্য দুইঃ-
একই স্থান। ভিন্ন কাল। সকলে ক্লাসে বসে সম্পাদ্য করছি। কয়েক মাস পরেই মেট্রিক পরীক্ষা। আমরা ক'জন সম্পাদ্য, উপপাদ্য করে করে মুখস্থ করে ফেলেছি প্রায়। এমন অবস্থা যে চোখ বন্ধ করে লিখে ফেলতে পারব। সকাল-বিকাল স্যারের বাসায় কোচিং চলছে। শুধু একটা ছেলে দলছুট।
তাকে কোন স্যারের কোচিং এ দেখা যায় না। এমন নয় যে সে সচ্ছল নয়--- রুবিক্স কিউব প্রথম তার কাছেই দেখেছি। কথা বলে দেখেছি। ছেলেটার মাথায় 'জিনিস' আছে। কিন্তু কেমন যেন খাপ ছাড়া। স্যারদের সাথে তেড়িয়া তর্ক করে। একে তো কোচিং-এ আসে না, তার উপর এঁড়ে তর্ক। প্রায়ই ছেলেটা মার-ধোর খায়। আমরা যারা কোচিং করি আর আমরা যারা স্যারের সাথে তর্ক করিনা, কোন প্রশ্ন করিনা, তারা প্রথমে খুব অবাক হতাম। এখন ছেলেটাকে করুণা করি। ফি-দিন মার খাওয়া ছেলেটাও নির্বিকার।
আমাদের ক'জনের মধ্যে তখন প্রতিযোগিতা চলছে। কে কার আগে স্যারের কাছে খাতা জমা দেবে।
সবার শেষে ছেলেটা জমা দিল। স্যার খাতার পর খাতা দেখে যাচ্ছেন। লাল কালিতে মার্ক দিচ্ছেন। আমরা প্রায় সকলেই দশে দশ পেয়েছি। একদম শেষের দিকে এসে স্যার হঠাৎ ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।
--এই খাতাটা কার?
-- আমার স্যার।
আমাদের সেই 'মার খাওয়া' ছেলে!
-- এইদিকে আয়।
আমরা কয়েকজন খুব সতর্কভাবে দীর্ধনিশ্বাস গোপন করলাম। বেচারা আজ আবার মার খেতে যাচ্ছে। এত্ত মার খায় ছেলেটা। প্রথম দিকে দেখতে 'মজা'-ই লাগত। এখন বিরক্ত লাগে। কি হয় রে বাবা একটু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে। আর না করলে না করলি, স্যারের সাথে তর্ক করার দরকারটা কি? সে সময়টাতে Sadomasochism শব্দটা তখনও আমাদের জানা ছিল না। জানা থাকলে নির্ঘাৎ তার যন্ত্রনা আমরা আরো বাড়াতাম বৈ কমাতাম না।
--- পরীক্ষার আর কয়দিন বাকী? স্যারের জিজ্ঞাসা।
ছেলেটা উত্তর দিল।
--- তুই তো পাস করতে পারবি না রে। এইসব কি লিখেছিস?
--কেন স্যার, কি হয়েছে?
আর যায় কোথায়? তার জুলফিটা স্যার ডান হাতে মোচড়াতে মোচড়াতে দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, এই যে লিখেছিস, সাধারন নির্বচন, তারপর বিশেষ নির্বচন, তো এইগুলোর পর 'কোলন' কই? এ্যা?
আর এই যে নীচে লিখেছিস, 'প্রমান করতে হবে যে'---তো ঐ 'যে' এর পরে কমা কই??
ছেলেটা উত্তর দেবার আগেই ঠাসঠাস দুটো শব্দ।
আমরা মনে মনে বলছি, মুখ খুলিস না হারামজাদা, চুপ করে থাক, চুপ করে থাক----
---কিন্তু স্যার, আমার প্রমান কি ভুল নাকি?
আবার ঠাস ঠাস----
আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ছেলেটা আসলেই গোলমেলে। প্রমান ঠিক না বেঠিক, তাতে কি আসে যায়? বইয়ে যে রকম লেখা হুবহু সেই রকম না লিখলে যে শুন্য পাবে---এ তো আমাদের পাড়ার ছাগলও জানে। মানছি যে ছেলেটা সব কঠিন কঠিন অঙ্ক কী রকম করে জানি মিলিয়ে ফেলে। মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে দেখেছি---তার সমাধানটা আমার কাছে বেশ সহজ মনে হয়েছে। এমনকি স্যারের সমাধানটার চেয়েও।
ছেলেটার মাথা ভাল কিন্তু কেন যে 'সহজ' জিনিস গুলো বুঝতে চায় না!!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি নিশ্চিত, আপনাদের এই রকম অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে। বিশেষ করে যারা পাব্লিক স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। আমাদের কে এমন ভাবে 'তৈরী' করা হয়েছে, এমন ভাবে 'খুঁটিনাটি'-র উপর জোর দিতে শেখানো হয়েছে---যে শেষমেষ আমরা একেকটা 'মেষ' হয়ে বেরিয়েছি।
গনিতের প্রমানে একটা ছেলে 'যে' শব্দের শেষে কমা দিল কিনা, তার চেয়ে জরুরী বিষয় হল সে অঙ্কটার মূল সমস্যা ধরতে পেরেছে কিনা। যতখন পর্যন্ত সে লজিক্যালী একটা গণিতের সমস্যা সমাধান করবে, ততখন সে কোনভাবে সেইটা লিখল---সেইটা বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। আমাদের মেধার একটা বড় অংশ আমরা অপচয় করি এইসব তুচ্ছ জিনিস নিয়ে মাথা ঘামিয়ে।
আমরা সবাই মেট্রিক পরীক্ষায় ভাল করেছিলাম। অঙ্কে লেটার পেয়েছিলাম।
যেমনটা সকলে আশা করেছিলেন।
ছেলেটা অঙ্কে লেটার পায় নি। কোনমতে ফার্ষ্ট ডিভিসন পেল।
---ঠিক যেমনটা সকলে আশা করেছিলেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
দৃশ্য তিনঃ-
বুয়েটের ভর্ত্তি পরীক্ষা। প্রশ্ন সামনে রেখে দর দর করে ঘামছি।
সব কি রকম জানি আবছা দেখাচ্ছে।
হল থেকে বেরিয়ে দেখা হয়ে গেল ছেলেটার সাথে।
এখনো সে সেই স্কুলে পড়া ছেলেটার মতই ছোটখাট রয়ে গেছে। মুখটাতে এখনো রয়ে গেছে কৈশোরের ছায়া। আমাদের মত কর্কশ কঠিন রুক্ষ্ম চোয়াল তার নয়।
কপালের ঘাম মুছে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছে, পরীক্ষা কেমন দিলো এই সব।
কিছুদিন পরে, বোর্ডে টাঙ্গানো রেজাল্টে নিজের নাম না দেখে যখন ক্রুদ্ধ-বিস্মিত-হতবাক হবার বদলে অদ্ভুত এক রকমের স্বস্তি বোধ করছি---তখন আবার দেখা,তার সাথে। সে বুয়েটে চান্স শুধু পায়নি। প্রথম আট জনের মধ্যে একজন!
আমি বুয়েটকে সম্মান করতে শিখেছি সেই দিন থেকে।
সালাম, বুয়েট!!!
মন্তব্য
এই আজব ব্যবস্থার জন্যেই অংক শিখতে পারিনি। তাই এতদিন পরে ঠেঙ্গানির সুযোগে পুরোনো জিনিস নিজের মত করে শিখছি। ক্যালকুলাস যে এত মজার, এত রিয়েলিস্টিক তা আগে কোনদিনই জানিনি।
জ্যামিতির কথা যখন উঠল তখন প্রায়ই মনে পড়ে এমন কয়েকটা জিনিস:
১। ত্রিভুজ বানানে দীর্ঘ-উকার দেয়াটাই ছিল কমন একটা ব্যাপার।
২। সম্পাদ্য করতে পারতাম বেশ। কিন্তু পরীক্ষার খাতার কোয়ালিটি এত খারাপ থাকতো যে প্রায়ই ফুটো হয়ে যেত। সম্পাদ্যতে বর্ণনার জন্য কোনদিনই নম্বর পাইনি। কী-এক আজব কারণে ড্রইংএর জন্যই থাকতো বেশি নম্বর, আর সেজন্যই রক্ষা পেতাম। কারণ বইয়ের ভাষায় সম্পাদ্য আমি আঁকতে পারিনি কোনদিনও
৩। আর মনে পড়ে লম্ব অভিক্ষেপ। আহারে তখন যদি আরেকটু ভালো করে কেউ শেখাত জিনিসটা কী!
হাত মেলান রে ভাই----
একই দুঃখ আর অভিযোগ নিয়ে আমিও আছি
ছেলেটার জন্য ভালো লাগছে।
আপনার লেখার মধ্যে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ছায়া খুঁজে পাই। লেখা যথারীতি উত্তম
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
আরে বস, শুধুমুদু লজ্জা দিচ্ছ কেন এই সব বলে??
তোমার ভাল লাগায়, আমারো ভাল লাগল।
এখন আমাদের নয়া জমানা'র অঙ্ক স্যারেরা আসলে 'আসল' জিনিসের প্রতি মনোযোগ দিলে ভাল হত। কে জানে এখন অবস্থা কি রকম----
"ঠা ঠা মহস্ত" জিনিস পরীক্ষার হলে গিয়ে ভুলে যাবার কারনে কোনদিনও ফাটাফাটি ফলাফল করা হল না আমার।
চেনা দৃশ্য। খুব চেনা দৃশ্য। নির্জলা সত্যকে খুব প্রাঞ্জলভাবে তুলে এনেছেন।
চমৎকার লেখা
স্কুলে মাঝমধ্যে দেখতাম অমুক স্যার তার নিয়মে অংক করা হয়নি বলে শূণ্য দিতেন। তবে বুয়েটকে সালাম দিচ্ছেন তো, চোথা সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারেনি বুয়েট...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
জীবনের একটা পর্যায়ে আমি আবার বুয়েটে ঢোকার সুযোগ পেয়েছিলাম। পদার্থবিজ্ঞানে এম ফিল করার সুযোগ নিয়ে। সেই সময়টাতে বুয়েটের চোথা সংস্কৃতির সাথে বেশ ভাল পরিচয় হয়েছিল। কিন্তু আমার মনে হয়, এইটা এক ধরনের necessary evil। এমন সকল কিছু সত্ত্বেও বুয়েট একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেটা বিশ্বমানের শিক্ষা দিতে পারে এবং তার কম বেশি চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর তুলনায় অন্যান্যরা আলোকবর্ষ পেছনে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই বি আই টি (ঠিক লিখলাম তো?) শুনেছি বেশ ভাল ষ্টান্ডার্ড বজায় রেখে চলে।
হুম...আমরা শুধু মন্দের ভালোই খুঁজে বেড়াই সবখানে...
ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কোন কথা নেই। তবে বুয়েটে বেশির ভাগ ডিপার্টমেন্টেই তেমন গবেষণা হয় না। গবেষণার চেয়ে ম্যাটেরিয়েল টেস্টিংয়ে বেশি আগ্রহী ডিপার্টমেন্টগুলো। এরকম একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় ভাবতে কিছুটা কষ্ট হয় বৈকি। যারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে প্রতিবছর বুয়েটে ভর্তি হন তাদের একটি বড় অংশ সামগ্রিকভাবে হতাশই হন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
বিপ্র, আপনার কথা সত্যি আমি জানি। বুয়েটে সে রকম ভাল গবেষণা হয় না এখন।
কিন্তু এর পরেও যা হয়---সেইটা বাংলাদেশের আর কোন জায়গায় হয় বলেন?
আর আমার মুল বক্তব্য ছিল বুয়েটের শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে। আমরা যারা দেশের সাধারন সব পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বাইরে এসেছি---তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি আমাদের কত 'অপ্রস্তুত' করে তৈরী করা হয়েছে। অন্য বিষয়ের কথা জানিনা। আমি আমার নিজের বিষয়ের ব্যাপারে বলতে পারি--পদার্থবিজ্ঞান এমন একটা বিষয় যেটা ভাল করে আয়ত্ব করা সম্ভব একমাত্র প্রব্লেম সল্ভিং এর মাধ্যমেই। আর কোন সোজা পথ খোলা নেই। কিন্তু সেই জিনিসটা কি আমাদের দেশে কোথাও করা হয়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জাহাঙ্গীর নগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা---যখনই কোন ফিজিক্স ষ্টুডেন্টের সাথে কথা হয়েছে এইখানে---তারা প্রায় এক বাক্যে জানিয়েছেন তাদের এই সমস্যার কথা।
আমরা ফিজিক্সটা প্রায় সমস্যা সমাধান না করে শিখে বেরিয়ে এসে কি সমস্যায় পড়েছি সেইটা এখানে আসলে টের পাওয়া যায়। দেশে একেক জন থিওরী কপচাতে কপচাতে কত রাজা উজীর মেরেছি। এইখানে এসে যখন Jackson এর Electrodynamics এর প্রব্লেম সলভ করতে হয়েছে তখন রাতের পর রাত গেছে দুঃস্বপ্ন দেখে আর আহাজারী করে।
বুয়েটের ভাল দিকটা হল---তারা ছাত্রদের যথেষ্ট চাপে রাখে, প্রব্লেম সলভ করায়, বেশ একটা rigorous training দিয়ে দেয়। যে কারনে ওদের আমি খুব কমই ঝামেলায় পড়তে দেখেছি।
বুয়েটকে সালাম সেই জন্যেই!!
তো সেই ছেলেটার সর্বশেষ অবস্থা কী? আমাদের ক্লিশে শিক্ষা ব্যবস্থায় সে কি আসলেই ঠিকতে পেরেছে!
তার অনেক দিন খবর পাই নি----
আশা করি সে যেখানে থাকুক, ভাল থাকুক
সময়কে পরাজিত করে বাঁচুক
দারুন লেখা অনিকেত দা!
ছেলেটির জন্য শুভ কামনা!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
থ্যাঙ্কু বস
দারুণ তো! বেশ একটি জীবননাট্যের প্রত্যক্ষ সাক্ষী আপনি!
কিন্তু তালিকায় নিজের নাম না দেখে স্বস্তি বোধ করেছিলেন কেন?
---------------------------------------------
রাজাকার আলবদর নিপাত যাক!
জয় বাংলা আমার থাক!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
কারন, মৃদুল'দা, আমার ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি---কোনটাই পড়ার ইচ্ছা ছিল না। ইচ্ছা ছিল ফিজিক্স নিয়ে পড়ার। বুয়েটে না হওয়ায়, খুশি সেই কারনেই।
অবশ্য এর অন্য ব্যাখ্যাও সম্ভব। চান্স না পেয়ে এখন লজ্জা ঢাকতে বলছি যে, ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার ইচ্ছা ছিল না--হে হে হে
অভিজ্ঞতা দিয়েই ছোঁয়া গেল লেখাটা। বেশ।
..................................................................................
দেশ সমস্যা অনুসারে
ভিন্ন বিধান হতে পারে
লালন বলে তাই জানিলে
পাপ পুণ্যের নাই বালাই।
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
ধন্যবাদ, মুজিব ভাই
দারুন একটা লেখা। খুব ভাল লাগল অনিকেত'দা।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার কোনই শখ ছিল না আমার। নিতান্তই বাসার চাপে পড়ে পড়া। আমি যদি গণিত/পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়তে পারতাম, তাহলে খুব ভাল হতো। গণিতে বরাবরই বেশ ভাল ছিলাম। পড়ালেখায় উদাসীন, সিনেমায়-মগ্ন আমার ভার্সিটি জীবনের অল্প কিছু ভাল লাগা স্মৃতিও আছে এই গণিত নিয়েই।
আপনার ওই বন্ধুর মতো অনেক পাগলাটে আছে, যারা মূল ধারার পড়াশুনা করে না, কিন্তু মাথা অত্যন্ত শার্প। আমার নিজেরই কয়েকটা বন্ধু ছিল এরকম। পরীক্ষার আগের রাতে ভোররাত পর্যন্ত হয়ত কার্ড খেলেছে বা আড্ডা দিয়েছে, পড়াশুনার প্রতি কোনো আগ্রহই ছিল না। অথচ "নিউরনে অনুরণন"-এর কঠিন কঠিন সব গাণিতিক সমস্যা চোখের পলকে সমাধান করে ফেলত, রুবিক্স কিউব মিলিয়ে ফেলত বা তুখোড় দাবা খেলত। এদের রেজাল্ট খুব একটা ভাল না হলেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতাম (করি), ওরা ক্লাসের ফার্স্টবয়ের চেয়েও অনেক বেশি শার্প ছিল।
থ্যাঙ্কু বস, তোমার সহৃদয় মন্তব্যের জন্য।
এইটে আমাদের দেশের বাস্তবতা যে বাবা-মা চাইবেন তাদের সন্তান যেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়। কারন আর কিছুই না। নিরাপদ ভবিষ্যৎ। সে কারনে আমাদের কত জনকে যে ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কত কিছু করতে হয়েছে-----
আমি আমার মা-বাবা কে অন্তত এই বিষয়ে একটা বি-শা-ল ধন্যবাদ দেব, এই কারনে যে, তারা নিতান্ত মধ্যবিত্ত হয়েও আমার পড়ার বিষয়ে তেমন কোন চাপ তৈরী করেন নি। আমাদের মত দেশে পদার্থবিজ্ঞান পড়তে যাওয়া আর দুপুর বেলা চোখ বেঁধে ফার্মগেটে হাঁটা--একই জিনিস। তাদের কষ্ট হয়েছে, এখনো হচ্ছে। কিন্তু তারা সযত্নে সকল দায় থেকে আমাকে সরিয়ে রেখেছেন। এমন না যে, আমি পদার্থবিজ্ঞান পড়ে পৃথিবীর খোল-নলচে পালটে দিচ্ছি প্রতিদিন। কিন্তু তারপরও, নিজের ভালবাসা, নিজের পছন্দকে সামনে রেখে পথ চলা ক'জনের হয়?
নানান দূর্ভোগের পরও তাই মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়।
আরে মিয়া খালি দাড়ি কমা, স্কুলে স্বজনপ্রীতির একটা রূপ বলি:
আমি ঐ স্যারের কাছে পড়ি না। ফার্স্ট বয় পড়ে। একটু উত্তর ঠিক লেখে পাইছি ২.৫, মোট নম্বর ৪। কৌতুহলী হয়ে ফার্স্টবয়ের খাতা দেখলাম ... দাড়ি কমা শুদ্ধ একই উত্তর, নম্বর ৪। স্কুলের বাইরে অবশ্য সবগুলো পাবলিক পরীক্ষায় বেশি পেয়েছিলাম ওর চেয়ে।
বুয়েটের ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকগণও কিন্তু দাড়ি কমা টাইপের জিনিষের জন্য নম্বর কাটতো আমার সময়। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কোন শিক্ষককে সেটা করতে দেখিনি। স্টেপগুলো ঠিক হলেই প্রায় পুরা নম্বর। আল্লাহই জানে, ম্যাথ ডিপার্টমেন্ট ছাত্রদের কোন মেধার বিকাশ ঘটানোতে বেশি যত্নবান।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
সহমত শামীম ভাই----
আমাকে স্কুলে অঙ্কে ২৯ দেয়া হয়েছিল ক্লাস সেভেনে---অনেক গুলো কারনের মাঝে একটা কারন ছিল--বৃত্তের সংজ্ঞা বই থেকে না লিখে নিজের মত করে লিখেছিলাম!!!
আজ এত বছর পরও সে দুঃখ আর যন্ত্রনার উপশম হয় নি আমার (বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই---যেভাবে টোটাল মার্ক ২৯-টা পর্যন্ত মনে রেখেছি, ভুলতে পারিনি)
খুবি খুবি দারুন লাগলো লেখাটা পড়ে। মন ভালো হয়ে গেলো।
তয় আমার নিজেরো অবস্থা দ্রোহীদার মতো। ভালো রিজাল্ট করা হইলো না ইহ জীবনে।
=============================
বস তুমি একলা না।
দ্রোহীদা'র সাথে তুমি আমি সহ আরো বেশ অনেকজন রয়েছি, আমি নিশ্চিত---
একটা ক্লাব খুললে কেমন হয়?
দ্রোহী দা ????
আগেও বলেছি। আজও বলি। ভবিষ্যতে চান্স পেলে আবারও বলবো।
অনিকেত দা'র লেখা পড়ে কেমন একটা শান্তি শান্তি ভাব ছড়িয়ে যায় মনের মধ্যে।
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
স্বপ্নাহত, ভাইরে, তোমার এই কমেন্টে আমি এক্কেবারে 'হতাহত'
অনেক ধন্যবাদ এমন করে আমাকে 'লাই' দেবার জন্যে--
হে হে হে ---
ভাল থেকো বস---
পীথাগোরাস একটা জিনিস ছিল।
কী সব আজব আজব জিনিস আবিস্কার করেছিল
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
- আমার কমেন্ট কই?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমারটার উপ্রে।
=============================
আসলেই তোমার কমেন্ট কই মিয়া???
দেহি না তো----
নতুন মন্তব্য করুন