' তোমার এক্সেন্টটা আমার খুব মজার লাগে----'
বোর্ড থেকে চোখ ফিরিয়ে রানাস দেখল সবুজ চোখা মেয়েটা ঠিক তার পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে। কেউ হাসি মুখে কিছু বললে হাসি মুখে জবাব দেয়াটাই ভদ্রতা। টানা তিন ঘন্টা ক্লাস করিয়ে রানাসের এখন ভদ্র হতে ইচ্ছে করছে না। অনেক কষ্টে মুখে চিমসে একটা হাসি ফুটিয়ে বলল,
'তাই নাকি?'
মাথায় ঘিলু থাকলে মেয়েটার বোঝা উচিত যে সে আর কথা বাড়ানোয় আগ্রহী না।
'হুমম---ঠিক অন্য ইন্সট্রনিয়ান্দের মত না। ওদের একটা এক্সেন্ট আছে---দুই মাইল দূর থেকে শুনলেই বোঝা যায়---'
এইটুকু বলে মেয়েটা আবার হাসিমুখে তাকিয়ে রইল তার দিকে।
কিছু একটা বলা দরকার।
তেমন কিছু না ভেবেই রানাস বলে বসল,' যাক, শুনে প্রীত হলাম! অন্ততঃ দুই মাইলের ভেতরে আমি নিরাপদে কথা বলতে পারব তোমাকে বিরক্ত না করেই-----'
বলেই মেজাজটা তার আরো খারাপ হলো। একটা তৃতীয় শ্রেনীর রসিকতা! কি দরকার ছিল এইটা করার? মেয়েটা তো মনে হচ্ছে এখুনি উৎসাহী হয়ে আরো বর্ধিত কলেবরে বকর-বকর শুরু করবে।
তাকে কিঞ্চিত অবাক ও অনেকখানি স্বস্তি দিয়ে মেয়েটা 'বাই' বলে ফুরুৎ করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল। রানাস স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কাগজ-পত্র গোছাতে শুরু করল। দুপুরে ক্যাফেটেরিয়াতে আজ ফ্রী কফি দেয়া হচ্ছে। একেবারে ১০০ ভাগ খাঁটি প্রাকৃতিক কফি---কোন সিন্থেটিক এজেন্ট দেয়া নয়। রাগাস্লুভ ক্যাম্পাসে এইটা একটা বিশেষ উপলক্ষ। প্রফেসর ইখট্রাক্ট এর কগ্নিটিভ নিউরোসাইন্সের এর সেই বিখ্যাত পেপারটার আজ পাঁচ বছর পূর্তি। ছোট্ট দুই পাতার এই পেপারটিই বলতে গেলে রাগাস্লুভ কগ্নিটিভ রিসার্চ ইন্সটিটিউট কে বিদ্ব্যৎ সমাজে সুপরিচিত করে তুলেছিল। পরের পাঁচ বছরে রাগাস্লুভ থেকে একের পর এক দূর্দান্ত কাজ বেরিয়েছে যা বলতে গেলে কগ্নিটিভ স্ট্রাকচারাল রিফর্মালিস্ম এর খোল-নলচে পালটে দিয়েছে এবং ২০২৫ সালে যে নিউরন ম্যাপিং কাজ শুরু হয়েছিল, ৩৫ বছর পরে আজ সেটা উৎকর্ষের চূড়ায় পৌছেছে।
রানাস কগ্নিটিভ নিউরোসাইন্সের লোক নয়। সে পদার্থবিদ্যার লোক। রাগাস্লুভে তার কাজ করারও কথা নয়।কিন্তু কোয়ান্টাম ইনফরমেটিক্সের উপর তার কাজ তাকে এইখানে চাকুরীটা জুটিয়ে দিয়েছে। প্রফেসর ইখট্রাক্টের সাথে তার নিজের দেখা হয়নি--তবে শুনেছে যে, যেকোন নিয়োগের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইখট্রাক্ট নিজেই নেন। কাজেই তার সকল কাগজ পত্র ইখট্রাক্ট নিজে খুঁটিয়ে দেখেছেন, তার রেফারিদের রেকমেন্ডেশানগুলো পড়েছেন---এই চিন্তাগুলো অলস মূহুর্ত্তে তাকে কিঞ্চিত শিহরিত করেনি----এইটা বুকে হাত দিয়ে সে বলতে পারবে না। পাহাড় ঘেরা ছোট্ট এই ইন্সটিটুটে কেবল গবেষণা নয়, এখানে শিক্ষাদানের ব্যবস্থাও রয়েছে। রানাসের পড়াতে খারাপ লাগে না। তাই সপ্তাহে দুই দিন পড়ানো আর বাকী দিনগুলোয় রিসার্চের কাজ---রানাসকে মোটামুটি সন্তুষ্টই বলা যায়।
ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এসে রানাস দেখল বিশাল লাইন--ঠিক যেমনটি আশা করা গিয়েছিল। সারা ক্যাম্পাসের প্রায় সব ফ্যাকাল্টিরা জড়ো হয়েছেন।
'তোমার কী মনে হয়? এখানে আসলে কতজন ইখট্রাক্টের পেপারের ব্যাপারে বকবকানি শুনতে এসেছে? আমার তো মনে হয়, কফির ব্যবস্থা না থাকলে একটা মাছিকেও খুঁজে পাওয়া যেত না--হে হে হে ----'
লাইনে রানাসের ঠিক সামনে দাঁড়ানো লোকটা যে ইকোনমিক্সের ইঙ্ক্রা সেটা বুঝতে রানাসের বেশ খানিকটা বেগ পেতে হল। ইঙ্ক্রার মাথার চুল পুরো কটকটে হলুদ। কিছুদিন পর পর চুলের রঙ বদলায় ইঙ্ক্রা। তার সাথে একইদিনে ইন্টারভিউ থাকায় পরিচয় হয়েছিল। এমনিতে সে খুব হাসিখুশি ছটফটে। কমবয়েসী ছাপটা মুখে রয়ে গেলেও ইঙ্ক্রার বেশ সুনাম রয়েছে পন্ডিত মহলে। একমাত্র উৎকট চুলের ব্যাপারটা ছেড়ে দিলে ইঙ্ক্রার বাকী সবকিছুই বেশ সহনীয়।
রানাসের বিহবল ভাবটা কিছুখন উপভোগ করে ইঙ্ক্রা জিজ্ঞেস করে--কি? চুলের রঙ একটু বেশি কটকটা লাগছে?? আজ সকালে ঘুম থেকে ঊঠে চুল দেখে মনে হল ওরাং-ওটান এসে মাথায় হেগে দিয়ে গেছে---হে হে হে --ভাল কথা ওরাং-ওটানের 'গু' দেখতে কী হলুদ??
--- ঠিক কী কারনে তোমার মনে হল যে, আমি ওরাং-ওটানের 'গু' এর রঙ জানি?
----উমম,মূলতঃ তুমি নিজে একটা ওরাং-ওটান বলে---হে হে হে ----
ঠিক সেই মুহুর্তে অনুষ্ঠান ঘোষকের গলার খাকড়ানি না শোনা গেলে আলাপটা কতদূর এবং কোনদিকে গড়াত বলা মুস্কিল।
বড় একটা নীল মগে করে ধোঁয়া ওঠা কফি নিয়ে বসতে বসতে রানাস খেয়াল করল, শুধু ফ্যাকাল্টি নয়,প্রচুর ছাত্র-ছাত্রীদেরও আনা-গোনা দেখা যাচ্ছে। বেশ বড় সভাস্থল। পুরোটা হল গমগম করছে।কফির কাপে ফুঁ দিতে দিতে রানাস বলল, তুমি নিশ্চয়ি জানো যে বিশ বছর আগেই কিন্তু শেষ ওরাং-ওটাং মারা গেছে।
---'ভুল তথ্য, গত বছর আমি নিজে কেন্দ্রীয় যাদুঘরে একটা দেখেছি। দিব্যি চলে ফিরে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, নিজের গু নিজেই গিলছিল হে হে হে ---'
--ও, সেইখান থেকেই বুঝি চুলের রঙের আইডিয়াটা পাওয়া?
ইঙ্ক্রা কটমটিয়ে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু এরই মাঝে হঠাৎ করে 'রানাস, রা-না-আআআ-স' চিৎকার শুনে রানাস ঘুরে তাকিয়ে দেখল ভীড়ের মাঝে সবুজ চোখের সেই মেয়েটা পাগলের মত হাত নাড়ছে। এক দঙ্গল কম বয়েসীদের ভীড়ের মাঝে থেকে সে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। দেখা গেল মেয়েটার চিৎকার কেবল রানাসের কানেই নয়, আরো কিছু লোকের কানেও গিয়ে পৌছেছে। গোমড়া মুখো কিছু লোককে দেখা গেল স্মিত মুখে ব্যাপারটা অবলোকন করতে। পাশের সীটে বসা ইঙ্ক্রা কনুই দিয়ে একটা গুঁতো দিয়ে বলল, কি হে,এইটা কবে জোটালে? জিনিস খারাপ না কিন্তু---হে হে হে --
---উফফ, ইঙ্ক্রা, এইটা আমার ছাত্রী---
---এবং??? ইঙ্ক্রা পিত্তি জ্বালানো একটা হাসি মুখে ঝুলিয়ে রেখে রানাসের দিকে সকৌতুকে তাকিয়ে রইল।
--- মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোমাকে ধরে---
কথা শেষ করতে পারল না রানাস। মেয়েটা ভীড় ঠেলে ঠুলে তার কাছে চলে এসেছে। হাফাতে হাফাতে বলল, কী খবর রানাস?
--- আসলে এই গত ৩০ মিনিটের মাঝে খবর দেয়ার মত তেমন নতুন কিছু ঘটেনি---
'হা হা হা ----' প্রানপাখি খাঁচাছাড়া করার মত বিকট এক অট্টহাসি দিল মেয়েটা।সামনের সীটের এক ভদ্রলোক চমকে উঠে বিষম খেলেন।
-- 'তুমি খুব মজা করে কথা বল---হা হা হা !! ভাল কথা এখানে বসা যাবে তো---??' বলে রানাসের অনুমতির অপেক্ষা না করেই মেয়েটা হুড়হাড় করে বসে পড়ল। এর মাঝেই রানাস ইঙ্ক্রার আরো দুটো কনুইয়ের গুঁতো খেয়েছে।
---' ইয়ে তোমার নামটা আসলে কী যেন? মানে আমার আবার নাম-টাম কেন জানি মনে থাকে না--', অস্বস্তির সাথে ঘাড় চুলকাতে চুলকাতে রানাস জিজ্ঞেস করে।
----' আমার নাম তোমার জানার কথা না, আমি কখনোই তোমাকে সেটা বলিনি। যাই হোক, নামটা হল-- নীশান।'
----' আর আমার নাম ইঙ্ক্রা' রানাসের উপর দিয়ে প্রায় হামলে পড়ে ইঙ্ক্রা মেয়েটার সাথে করমর্দন করল।
----' ইসস, তোমার চুলের রং-টা কি সুন্দর---!!!'
মেয়েটার মানসিক সুস্থতা নিয়ে রানাসের যাওবা সন্দেহ ছিল, এই কথায় সেটাও দূরীভূত হল।
প্রায় ঝাড়া দেড় ঘন্টার বিরক্তিকর আলোচনা অনুষ্ঠানে, আলোচনা গুলো ছাড়া দ্বিতীয় যে জিনিসটা বিরক্তিকর ছিল সেটা হল গোটা সময় ধরে নীশান আর ইঙ্ক্রার ফিসফিসিয়ে কথা বলা আর থেকে থেকে চাপা গলায় হেসে ওঠা।ইখট্রাক্টের কগ্নিটিভ নিউরোসাইন্সের পেপারটা আর যাই হোক, হাস্যকর কিছু নয়। কাজেই বেশ সিরিয়াস আলাপের মাঝে ফাঁকে ফাঁকে এই দুইজনের চাপা হাসির আওয়াজ রানাসের জন্যে বেশ অস্বস্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সভা শেষে হল থেকে বেরিয়ে এসে ঝলমলে রোদে দাঁড়িয়ে রানাসের বেশ ভাল লাগতে থাকে।বেশ একটা বসন্ত বসন্ত ভাব আবহাওয়াতে। নাম-না-জানা কিছু পাখির কিচির মিচির, মৃদু শীতল হাওয়া, এমনকি খুব হালকা নেশা ধরানো ফুলের সুবাস-----ভাবাই যায় না যে গোটা ব্যাপারটাই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রনকক্ষের কিছু অষ্টম প্রজন্মের কম্পুটারের বদান্যতায় প্রাপ্ত।কিছু কিছু সময় মেকি জিনিসটাকেই সত্যি বলে ভেবে নিতে ইচ্ছে করে।
বাই-ভার্বাল না ধরে আজ হেটেই বাড়ি যাবে ঠিক করল। নীশানও বেরিয়ে এসেছে। কাছে এসেই ছটফটে গলায় জিজ্ঞেস করল, 'কই যাচ্ছ এখন?'
---'বাড়ি'
---' সেটা কোথায়?'
---' ওই আসুমান ক্যাম্পাসে।'
---' আরে ওই নীল রঙের এপার্টমেন্ট গুলোতে তুমি থাকো নাকি?'
---'হ্যা'
--- 'উফফ আমার যে কী দারুন লাগে এপার্টমেন্টগুলো! এপার্টমেন্টগুলো যে কী চমৎকার ভাবে তাদের রঙ বদলায়!! যখন আমার খুব টাকা হবে, আমি প্রথমেই ঐখানে একটা বাড়ি কিনব।'
--'অথবা তুমি ম্যাক্সার রিডলটা সমাধান করে ফেলতে পারো---তাহলে কর্তৃপক্ষ নিজে থেকেই তোমাকে একটা চাকরী আর ঐখানে একটা বাড়ি দিয়ে দেবে।'
----ম্যাক্সার রিডল সমাধান করব আমি?? নাহ,তুমি আসলেই অনেক মজার কথা বলতে পার-- হা হা হা ----
এরই মাঝে ইঙ্ক্রা এসে তাদের সাথে যোগ দিয়েছে। এখানে ইঙ্ক্রার কী একটা কাজ রয়েছে তাই সে রয়ে যাবে আরো কিছুখন। রানাস ভাবল নীশানও মনে হয় রয়ে যাবে।ঊল্টা দেখা গেল সে গুটি গুটি করে তার দিকে হেঁটে আসছে।
----'আমি তোমার ঐ দিকেই থাকি, ক্রাইসন ডর্মে। তোমার সাথে আসলে তোমার আপত্তি নেই তো?'
---'আরে না না আপত্তি কিসের, চল।ভাল কথা, আমি কিন্তু হেঁটে যাচ্ছি এবং বেশ অনেকদূর কিন্তু হাঁটতে হবে, জানো নিশ্চয়ই?'
--' আমার হাঁটতে খুব ভাল লাগে। তাছাড়া এমন চমৎকার দিন করেছে---- আজ না হাটলে লোকজন কে ধরে জেলে পুরে দেওয়া উচিত
--'হা হ হা, তুমিও তো বেশ মজা করে কথা বল নীশান--'
কিছুখন দুই জনেই চুপচাপ। দুপুরের এই সময়টায় এমনিতেই রাস্তায় লোকজন তেমন থাকেনা। মাঝে মাঝে কিছু বাই-ভার্বালের অনুচ্চ যান্ত্রিক গুঞ্জন, হুশ-হাশ করে মাথার উপর দিয়ে চলে যাওয়া, এছাড়া আর তেমন কোন আওয়াজ নেই আশেপাশে।
--ইখট্রাক্টের পেপারটা তুমি পড়েছ? নীরবতা ভেঙ্গে নীশানের প্রশ্ন।
--হ্যা, বেশ চমৎকার একটা পেপার। তুমি পড়নি?
-- নাহ,এইধরনের পেপার দেখলেই আমার ঘুম চলে আসে। দু'একবার চেষ্টা করেছিলাম। প্রথম প্যারাই পার হতে পারিনি---- হা হা হা ---
--ওহ, আসলে পেপারটা কিন্তু অতটা খারাপ না।
--তাই বুঝি? আসলে ঐ দু পাতার পেপারে কি এমন ছাতা লেখা যে সেইটাকে এমন করে মাথায় তুলে নিয়ে ধেই ধেই করে নাচতে হবে? আজ থেকে বহু বছর আগে 'ইন্সটান' নামের এক লোকও নাকি এই রকম কী একটা বের করেছিল----তাকে নিয়েও লোকজন মনে হয় এত্ত মাতামাতি করে নি---
--তুমি বোধহয় আইন্সটাইনের কথা বলছ, তাই না?
---ওই হল, ইন্সটান--আইন্সটাইন--একই কথা!
রানাস একরাশ অবিশ্বাস আর দুঃখ নিয়ে নীশানের দিকে তাকায়। নীশান সে সব পাত্তা না দিয়ে পালটা জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা, ওই পেপারটাতে কি এমন ছাতা লেখা আছে যে প্রতিবছর এমন ঘটা করে লোক ডেকে নিয়ে দেড় ঘন্টা ধরে কচকচাতে হবে? তাও কফিটা যদি ভাল হত খেতে!!!
--সেকি? কফিটা তোমার ভাল লাগে নি? আমার তো বেশ---
---ধুসস, ঐটা কোন কফি হল? খেয়ে মনে হয়েছিল বমি করে ভাসিয়ে দিই!
রানাস আবার বেশ খানিকটা দমে গেল। কফিটা তো বেশ ভালই লেগেছিল তার।
নাহ, মেয়েটার মাথায় আসলেই বড় রকমের গন্ডগোল আছে।
--তো বললে না যে, ওই পেপারে কি আছে?
--ওহ, আসলে খুব সহজ করে বললে বলা যেতে পারে যে, ইখট্রাক্ট ওই পেপারেই প্রথম মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোগ ঘটান। উনি প্রথম দেখান যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানুষের বুদ্ধিমত্তার কাছাকাছি কিছুও যদি হতে হয় তবে সেই শতাব্দী প্রাচীন ব্যুলিয়ান লজিক আর বাইনারি লজিক মেনে চললে হবে না। নতুন এক ধরনের লজিক সিষ্টেম তৈরী করতে হবে। তুমি তো জানো নিশ্চয়ি যে পঞ্চম প্রজন্ম পর্যন্ত কম্পিঊটারগুলো বাইনারি লজিক সিষ্টেম ফলো করত--অর্থাৎ, কেবল 'হ্যা'/'না' অথবা '০' আর '১'। ইখট্রাক্ট প্রথমে দেখালেন যে বাইনারি সিষ্টেম মানুষের মূল চেতনাকে, তার বৌদ্ধিক আঙ্গিককে
সম্পূর্ণভাবে ধারন করে না। মানুষ কেবল 'হ্যা' বা 'না' নিয়ে চলে না। তার মানস গঠনে আরো দুটো লজিক কাজ করে---'হয়তো' এবং 'যদি'। ইখট্রাক্ট প্রথম লোক যিনি এই বাড়তি দুটো লজিক যোগ করে একটি Quaternary logic system সৃষ্টি করেন------
--আরে বাহ, দারুন তো!
--হ্যা আসলেই দারুন ব্যাপার! রানাস বেশ খুশি হয় নীশানের কথায়।
নীশান বলে, আরে না না, ইখট্রাক্টের ওই ছাতা-মাতার কথা বলছি না। তুমি যখন কথা বলছিলে তখন তোমার চোখদুটো এমন জ্বলজ্বল করছিলো যে মনে হচ্ছিল, তুমি মানুষ না---বেড়াল---হা হা হা হা---
রানাস খুব সাবধানে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে। হঠাৎ করেই তার মনে হতে থাকে যে নীশান কে নিয়ে হেটে বাড়ি ফেরাটা একটা প্রথম শ্রেনীর গাধার মত কাজ হয়েছে।
আড় চোখে রানাস তাকিয়ে দেখে, নীশান কেমন অদ্ভুত ভাবে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে শিস দিতে দিতে হাঁটছে।
(চলবে)
মন্তব্য
চালাক হয়ে গেছি। আগেই "চলবে"টা দেখে নিয়েছি। একদম শেষ হলে পুরোটা পড়বো। খণ্ডে খণ্ডে পড়তে গেলে মজা কমে যায়।![মন খারাপ মন খারাপ](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/2.gif)
খালি ফাঁকিবাজীর ধান্ধা---এ্যঁ??
গল্প শেষে যদি কমেন্ট না পাইসি তবে ঠেলা বুঝামু কিন্তু--মনে রাইখো চান্দু!
প্রশংসার ভাষা জানা নাই!
কঠিন কঠিন সব শব্দ , তবু খুব ভালো লাগল।
হাই স্পীড বাই-ভার্বালের গতিতে চলুক!!!
থ্যাঙ্কু মামুন ভাই---দোয়া রাইখেন, বস!
সবাই এইভাবে পোষ্টে 'চলবে' সিগনেচার লাগাইলে ক্যাম্নে কী!
হা হা হা --এইটা ভালো বলেছেন আক্তার ভাই।
ভাবতেসি--পরের পর্বের সিগ্নেচার দিমু 'চলবে না'----কী চলবো?
উদ্ধৃতি :
রাগাস্লুভ ক্যাম্পাসে এইটা একটা বিশেষ উপলক্ষ। প্রফেসর ইখট্রাক্ট এর কগ্নিটিভ নিউরোসাইন্সের এর সেই বিখ্যাত পেপারটার আজ পাঁচ বছর পূর্তি। ...কগ্নিটিভ স্ট্রাকচারাল রিফর্মালিস্ম এর খোল-নলচে পালটে দিয়েছে..
বাজি... আই আন্নের কাছে দুইশোডা ট্যায়া পাই বাজি... আন্নের নেয়া ফড়তি যাই আঁর হামনের যে দুইখান বান্ধাইন্যা দাঁত আছিল, হেডি ফাল্টি খাই ডেরেনের বিত্রে ফরি গেসে গই...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
ওউ কিতা কইলায়বা??
'মিদুল' বাই, তুমি নু হুনলাম সিলোটি? এখন ইতা 'বেঙ্গলি' হক্কলোর লাকান মাতলে অইব নি?? খালি বেঙ্গলি অইলে এক কতা আসিল। ইতো নুয়াখাইল্লা ভুতোর মাত বা-----
আর আমি তো মনো করসিলাম তুমার সব দাঁত বাইন্ধাইল দাঁত!! বান্ধাইল দাঁত দুই একটা খুলি গেলে কুনো সমস্যা নায়। এক্টান মারি বাকি গুলাও ফালাই দেও---সব ঝামেলা শেষ---হে হে হে হে----
এইবার ধরা খাইলাম!![মন খারাপ মন খারাপ](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/2.gif)
নিচের চলবে লেখাটা আগে খেয়াল করি নাই। পুরাটা পইড়া আইসা একটা ধাক্কা খাইলাম।
চা খাওয়াটা একটু তাড়াতাড়ি শেষ কইরেন অনিকেত দা! গল্প দারুণ হচ্ছে......
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
থ্যাঙ্কু বস।
গল্পের রাজা কীর্তি-র কাছ থেকে সার্টিফিকেট পেয়ে যার-পর-নাই রকমের উল্লসিত। নতুন পর্ব আইতাসে----চোখ রাখুন রুপালী পর্দায়!
ভাল্লাগতেছে, চা খাইতে যায়েন না ...
কোয়ার্টারনারী লজিকের আইডিয়াটা কিন্তু ভালো ... একটা পেপার লিখে ফেলেন![দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/4.gif)
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
সত্যি, এই ব্যাপারে আর কারও লেখা আছে কিনা জানা নেই।
আইডিয়াটা ভালই মনে হচ্ছে।
হা হা হা , বলছ বস?? চল দুইজনে মিলে লিখে ফেলি। মাইর যা খাবার, তুমি খাবে আর প্রাইজ যা পাবার, সব আমি পামু---কী রাজী???
শুধু চল্লে হবে না..দৌড়াতে হবে..![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
বুড়া মানু---দৌড়াইতে পারুম না বস---তবে কইতাসেন যখন--তখন একটু জোর কদমে হাটা দিমু---দোয়া রাইখেন বস...
চমৎতার গল্প, একটু গতিশীল হোক।
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ
থ্যাঙ্কু বস। মাথায় রইল!!
শুভেচ্ছা---
দীর্ঘদিন পরে একটা ভালো সাই ফাই পড়ছিলাম...
কিন্তু মাঝপথে থেমে এমন একটা দাগা দিলেন...!!!
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
আপনারে দাগা দেয় কোন হতভাগা??
পরের পর্ব আইতাসে বস।
শুভেচ্ছা
আজিজ মোহাম্মদ ভাই, টাল্টিবাল্টি কম কইরা লেখা টা চালান তারাতারি। আমার তো আত্মা ছটফট করতেসে এখুনি। এইভাবে লোটা ধরাইবেন চিন্তাও করি নাই। হেভি জোশ হইছে। আপনার আরো পেন্ডিন্গ লেখা আছে, তাই আমি বড়ই ভীত। বস না আমার ভালা, তারাতারি দিয়েন।
হা হা হা ---
তোমার কথা শিরোধার্য বস।
পরের পর্ব আইতাসে----
গল্পটা ভাল লাগছে। শুধু নামগুলো বড় খটো মটো।
বাই ভার্বাল বেশ পরিচিত মনে হয়!
থ্যাঙ্কু অনিন্দিতা, আপনার মন্তুব্যের জন্যে।
নামগুলো ইচ্ছে করেই খটমটো রাখা হয়েছে---আমাদের ভাষার সায়েন্স ফিকশনে এইটা বেশ পুরাতন ধারা। ভবিষ্যতের উপর কোন কাহিনী নিবদ্ধ হলে, আমরা কেন যেন সহজ-সাধারন নাম নিয়ে স্বস্তি পাই না। অথচ ভেবে দেখুন, করিম-রহিম-জব্বার-ফজলু এই নামগুলো বলতে গেলে অনাদিকাল হতেই আমাদের সাথে আছে এবং ২০৬০ সালে এইসব নাম বদলে ক্র্যাম-র্যাম-জ্যাবর-ফিজল এই জাতীয় অদ্ভুতুড়ে নামে পরিবর্তিত হবে---সে সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।
তাহলে কেন আমাদের সায়েন্স ফিকশনে অদ্ভুত সব নামের ভীড়? আমাদের দেশে বিজ্ঞান কল্প-কাহিনী যার হাতে প্রান পেয়েছে সবচাইতে বেশি---সেই মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখাগুলো যদি আপনি দেখেন----তার অধিকাংশ রচনাতে অদ্ভুত সব নামের মিছিল----পৃ, ত্রিনিত্রি রাশিমালা, ক্রুগো, কিম জিবান, শ্যালক্স গ্রুন--এরকম আরো কত শত নাম। তার লেখনীর যাদু এমনই যে আমাদের মনে হতে থাকে চরিত্র গুলোর নাম কিম জিবান বা শ্যালক্স গ্রুন না হলে গল্পটা যেন সম্পূর্ণ হতো না।
আমার নিজস্ব ব্যাখ্যা হল----অপরিচিত ও খটমটো নামগুলো প্রথমেই আমাদেরকে চেনা পরিপার্শ্ব থেকে আমাদের আলাদা করে দেয়। একজন করিমের চেয়ে কিম জিবান অনেক বেশি দূরের মানুষ এবং অসম্ভব ঘটনার নায়ক হিসেবে অনেক বিশ্বাসযোগ্য। সেই কারনেই আমার ধারনা লেখকরা এই রকম নামগুলো পছন্দ করেন।
আর বাই-ভার্বালের কথা বলছেন?? এইটা না চেনা লাগলে আমি কিঞ্চিত হতাশই হতাম। জাফর স্যারের নানান গল্পে এই বাই-ভার্বালের প্রসঙ্গ এতবার এসেছে যে অন্তত আমাদের দেশের যেকোন সায়েন্স ফিকশন পাঠকের কাছে এইটা রিকশার মতই 'পরিচিত' এক বাহন(!)। আমি অম্লানবদনে তাই সেটা ব্যবহার করেছি।
আরে খাইছে। লেখা এর ভেতরে লেখা
স্যরি, আমি একটু ভিন্নমত পোষন করছি। আমার মনে হয় আপনি যেহেতু নিজের স্টাইলে সাইন্স ফিকশন লিখছেন তাই ড. জাফর ইকবাল বা অন্য কারো লেখায় ব্যবহৃত
জিনিসের নাম এখানে ব্যবহার না করাই ভাল। তাই বাই-ভার্বাল নাম দেখে কিঞ্চিত বিস্মিত হয়েছি।
পয়েন্ট টেকেন !!
অসাধারণ! অসাধারণ! অসাধারণ!
পরের পর্ব কই? তাড়াতাড়ি...
এক নিঃশ্বাসে পড়া যায়, এতো সাবলীল। সাঁতারুর নিঃশ্বাস না, ধূমপায়ীর নিঃশ্বাস।![হো হো হো হো হো হো](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/21.gif)
পরবর্তী কিস্তির অপেক্ষায় থাকলাম।
_______
চিন্তিত (sajjadfx@জিমেইল.কম)
হা হা হা --এইটা পড়ে আমি হাসছি, তো হাসছিই--
ভাল থাকবেন বস।
পরে আরো দুইটা পর্ব দিয়েছি--পড়ে দেইখেন---
নতুন মন্তব্য করুন