সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ
ভীষন দীঈঈ-ঈ-ঈ-ঈ-ঈ-ঈ-ঈ-- র্ঘ লেখা। নষ্ট করার মত প্রচুর সময় এবং অকারণে নিজেকে খেপাইয়া তোলার অভ্যেস থাকিলে পরে অগ্রসর হউন।পাঠ-পরবর্ত্তী যেকোন রকম শারীরিক ও মানসিক বিক্ষেপের জন্যে লেখক দায়ী থাকিবেন না।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রবাসে অনেকের সাথে কথা বলে জেনেছি, বর্ণবাদ সম্পর্কে 'সঠিক' ধারণা তাদের দেশের বাইরে এসে হয়েছে। দেশের বাইরে আসার পর জেনেছেন একজন 'সেকেন্ড-ক্লাস সিটিজেন' প্রতিনিয়ত কী রকম মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যায়, জেনেছেন কী করে একটা সাধারণ কথার মাঝে ঘৃণা খুঁজে পাওয়া যায়, জেনেছেন কোন একটা কিছু করার আগে বা বলার আগে দশ-পঁচিশ বার ভাবার অনুভূতিটা কী রকম গ্লানিকর। আরো জানতে পেরেছেন শুধু মাত্র ভিন্ন গাত্রবর্ণ আর ভিন্ন উচ্চারণভঙ্গী আমাদেরকে কত সহজে আলাদা করে ফেলে একরাশ মানুষের ভীড়ের মাঝে। এমনকি যখন কোন জমায়েতে কেউ আমাদের নিয়ে হয়ত ভাবছেও না, তখনও অকারণেই নিজেকে আক্রান্ত মনে করে ম্রিয়মান হয়ে পড়া।
এদের সবার সাথে দ্বিমত ঘোষনা করে বলতে চাইছি---বর্ণবাদ সম্পর্কে আমার প্রথম চেনা-জানা হয় আমার নিজের দেশে, নিজের মাটিতেই।
ছোটবেলা আমার জ্ঞান-বুদ্ধি হবার পরপরই নিজ সম্পর্কে যে মহান উপলব্ধি হয়েছিল তা হল---আমি কালো। প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই কালো। ঠিক যতটুকু কালো হলে মায়েরা তাদের ছেলেদের শ্যামলা বলেন, তার চেয়ে কয়েক পোঁচ গাঢ় আমার গাত্রবর্ণ। ভাল বাংলায় যাকে বলে 'ঘোর কৃষ্ণবর্ণ' !!
আমার এই "বিশেষ" বৈশিষ্ট্যটির জন্যে আমার শৈশব-কৈশোর-যৌবন নানাবিধ গঞ্জনা-অপমান-শ্লেষের মাঝে কেটেছে। হয়ত এই ব্যাপারগুলো খুব স্বাভাবিক এবং হাসিমুখে উড়িয়ে দেয়া যেত এবং সেটাই সকলে করে। আমি কেন জানি পারিনি। সবার মাঝে হয়ত হাসির ফুৎকারে উড়িয়ে দেবার ভান করতাম। কিন্তু যখনই একলা হতাম, তখন বারবার ঈশ্বরের কাছে জানতে চাইতাম(সে সময়ে আমি আবার নিদারুণ ঈশ্বর ভক্ত ছিলাম) ঠিক কী অপরাধে আমাকে এমন ঘোরতর কালো করে পাঠান হয়েছে এই সংসারে। বরাবরের মতই ঈশ্বর নিশ্চুপ থেকেছেন।
কিছু বিচ্ছিন্ন দৃশ্যাবলী অবলোকন করা যাক।
দৃশ্য একঃ
কোন এক আত্মীয়ের বিয়ে হচ্ছে। সারা দেশের নানান প্রান্ত থেকে সব আত্মীয়-স্বজনরা একখানে জড়ো হয়েছেন। সবার মুখ বিনা কারণেই হাসি হাসি। এক দঙ্গল বাচ্চা-কাচ্চা প্রাণপনে চেঁচিয়ে যাচ্ছে, দৌড়ে বেড়াচ্ছে ঘরময়, জিনিস পত্র ছয়-ছত্রখান করছে। কেউ সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করছেন না। বড় জোর সস্নেহে বলছেন, ওরে ব্যথা পেয়ে যাবি তো তোরা---
প্রতি রাতে বসছে জমাট আড্ডা। বিভিন্ন বয়েসী বিভিন্ন আড্ডা। বড় বড় ভাইয়েরা কোনার দিকের একটা ঘর দখল করে নিয়েছেন। দরজা বন্ধ করে চলছে প্রাণপনে ধুমপান। সারা ঘর ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে আছে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে বাড়িতে মনে হয় আগুন লেগেছে!
আমরা ছোটরা চাইছি সেই ঘরটাতে ঢুকতে কারণ আমাদের সকলের প্রিয় 'বড়ভাই' সেখানে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন।নির্বিকার ভঙ্গীতে বলে যাচ্ছেন একের পর এক গল্প---বারবার শোনা গল্প কিন্তু যতবার বড়ভাই বলেন ততবারই নতুন কিছু এসে যোগ হয়। বড়ভাইয়ের বড়াই করে বলার মত 'মুখ-খারাপ' ছিল। অশ্লীল কথা বলাটাও যে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়---সেইটা তাঁর সাথে দেখা না হলে বোঝা মুস্কিল। চেনা গল্প গুলোতে তিনি একের পর এক নতুন রঙ চড়াতেন---তাতে আবালবৃদ্ধবনিতা মুগ্ধ হত। কাজেই আমরা ছোটরা প্রাণ বাজী রেখে ওই ঘরে ঢোকার চেষ্টায় আছি। এদিকে বড়রা ঢুকতে দেবে না কারণ অনর্গল অশ্লীলতার স্রোত বইছে সেখানে। মোটামুটি নিরীহ মানের একটা আড্ডার রেটিং অনায়েসে NC-17 হবে। কাজেই জমকালো আড্ডার কথা ভাবুন দিকিনি---
যাই হোক,'ঢুকতে না দিলে খালা/মামা/চাচাদের বলে দেব সিগ্রেট খাবার কথা' এই ভয় দেখিয়ে শেষমেশ ঢুকতে পারলাম সেই স্বর্গরাজ্যে! সবে আড্ডা জমে উঠেছে, এমনি সময় বেরসিকের মত কারেন্ট চলে গেল। সাথে সাথেই হৈ হৈ চিৎকার--বিনা কারণেই। সবাই খুঁজছে মোমবাতি বা লাইটার। এমনি সময় অন্ধকারের ভেতর থেকে বড়ভাই-এর গলা শোনা গেল---আমার নাম ধরে ডেকে বললেন, ওই 'শ-',দয়া করে একটু হাস বাপ, নাহলে তোরে তো এই অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না, বলা যায় না কে কখন তোর ঘাড়ের উপর এসে পড়ে, হে হে হে -----
দৃশ্য দুইঃ
বাসায় বেড়াতে এসেছেন আমার বাবার বন্ধু। ড্রইং রুমে জমজমাট আড্ডা হচ্ছে। আমাকে ডাকা হয়েছে--গিয়ে যেন খোমাখানা দেখিয়ে আসি। আমি সঙ্গত কারণেই পালিয়ে বেড়াচ্ছি। বাসার পেছনদিকে একটা ছোট্ট মাঠের মত আছে। আমি সেদিকে গিয়ে রকের উপর বসে আকাশ-পাতাল ভাবছি। এমন সময় দেখি বছর দশেকের একটা ফুটফুটে বাচ্চা একা একাই ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুঝলাম, বাবার বন্ধুর কেউ হবে। হাতছানি দিয়ে ডাকলাম। কাছে এল। টুকটাক কথা হতে লাগল। এমন সময় আমাদের বাসার কাজের ছেলেটা এসে বলল, ভাইয়া, আম্মায় আপনারে ডাকে। মেহমানদের লগে দেখা করতে কইসে-- শেষরক্ষা আর হলো না মনে হচ্ছে। নিশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়েছি ঘরে যাব বলে---দেখি বাচ্চাটা মিটমিট করে হাসছে। জিজ্ঞেস করলাম হাসছে কেন। বলল, আমি তো তোমাকে দেখে প্রথমে মনে করেছিলাম এ বাড়ির কাজের ছেলে, আর ওই ছেলেটাকে (কাজের ছেলে) ভেবেছিলাম তুমি---হা হা হা ----কিঞ্চিত হতভম্ব ও অনেকখানি অপমানিত বোধ করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম ঠিক কী কারণে তার এমন মনে হল। উত্তরে বাচ্চাটা হেসে জানাল, তুমি যা কালো না---!
দৃশ্য তিনঃ
ঈদের বাজার। মা গেছেন আমার জন্যে শার্ট কিনতে। কোন কারণে আমি সাথে যেতে পারিনি। মা দোকানে একের পর এক শার্ট দেখছেন। অনেক দেখার পর একটা শার্ট মনে ধরল। কিন্তু সমস্যা হল শার্টের রঙ নিয়ে। ওই রঙের শার্ট গায়ে দিয়ে হাঁটলে লোকজন আমাকে আর খুঁজে পাবে না। আমার মায়ের দোনোমোনো দেখে দোকানী জানতে চাইল, সমস্যা কী। নিজের সন্তানকে কী করে আর প্রাণে সেধে 'কালো' বলেন, তাই মা আমার বুদ্ধি করে বললেন, আসলে আমার ছেলেটা একটু 'শ্যামলা' তো--
দোকানী হাত নেড়ে বলল, আরে কত 'কাউলা' পোলায় এইর'ম শার্ট কিন্যা নিতাসে, আর আপনার পোলা তো শ্যামলা---
জানি, জানি, এইসব কিছুই না।
কিন্তু ওই বয়েসটাতে আমার আত্ম-বিশ্বাসটা কেন জানি চুরমার হয়ে গিয়েছিল। আমার খালি মনে হত, আমি যত যাই করি না কেন শেষ পর্যন্ত আমি আসলে পিছিয়ে পড়ব শুধুমাত্র আমার গাত্রবর্ণের কারণে। মনে হতো, আমি পড়াশোনায় কত ভাল বা খারাপ, শান্ত-শিষ্ট না দুষ্টু, ক্লাস এইটে বৃত্তি পেয়েছি কি পাইনি--- এসব কোন কিছু বিচার্য্য নয় এই পৃথিবীতে। এই পৃথিবীতে মানুষ আজীবন আমাকে বিচার করবে একজন কালো মানুষ হিসেবে।
আরো একটু বয়েস হবার পর যখন প্রেমে পড়ার সময় এল--তখন আমি আরো সংকুচিত হয়ে গেলাম। কারণ ততদিনে আমার মাথায় বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে---মানুষের অন্য কোন গুণাবলীর কোনই দাম নেই---যদি না সে দেখতে 'ফর্সা' হয়। যেহেতু আমি ফর্সা না--কাজেই মেয়েরা আমার দিকে ফিরেও তাকাবে না। তখন রাজশাহী কলেজে উচ্চ-মাধ্যমিকে পড়ছি। আমাদের একপাল ছেলেদের ভীড়ে গোটা বিশেক মেয়ে। কয়েকজন রীতিমত ডাকসাঁইটে সুন্দরী। বন্ধুরা নিজেরা নিজেরাই দেখলাম মেয়েদের 'ভাগ' করে নিল নিজেদের মাঝে---ঐ লাল ওড়না কিন্তু আমার, ভুলেও তাকাবি না এই দিকে, ওই যে মাথায় বেনী করেছে, সে হল তোদের ভাবী, আমার বঊ---ইত্যাদি ইত্যাদি---
মেয়েদের মধ্যে থেকে দুইজন আমার হৃদয়-হরণ করল। আমার পছন্দের দু'টি মেয়ের মাঝে একটি মেয়ের নাম 'উ-'। বড্ড স্নিগ্ধ এই মেয়েটা। ছোটখাট হালকা পাতলা গড়নের । পড়াশোনায়ও আলাদা করে চোখে পড়ার মত কিছু না। কিন্তু কিছু একটা মেয়েটার মাঝে ছিল---যা আমাকে টানত ভীষন করে। ক্যালকুলাস ক্লাসে মেয়েটা বসত ঠিক আমার সামনে। আমি এখন পর্যন্ত ক্যালকুলাসে আমার দূর্বলতার জন্যে তাকেই দায়ী করি। সারাটা ক্লাস শুধু তার মুখ, আর ভোরের সূর্যের মত সেই মুখের হাসি---- অন্য যে মেয়েটি, 'ত-', সে পড়াশোনায় দূর্ধর্ষ। ধারালো চেহারা। শ্রাবনের মেঘের মত ঘন চিকুরজাল। চোখে চশমা। আমি যখনি তাকে দেখতাম, কেমন যেন এক ধরনের 'পবিত্র' একটা অনুভূতি হত মনে।মেয়েটা ছিল শ্যামলা বরণ। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, আমার বন্ধুদের মাঝে যখন এই 'মেয়ে-ভাগ' করা চলছিল, কেউ খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছিল না এই মেয়েটার প্রতি। বোকার মত যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম এর কারণ, তখন শুনতে হয়েছে 'মা কালী'র প্রতি তাদের কোন মোহ নেই--আমি যদি চাই, আমি তাকে নিতে পারি---তবে বন্ধুদের অনেকেই আমাদের অনাগত শিশুদের গাত্রবর্ণের কথা ভেবে শিউরে উঠতে দেখলাম।
আমি নিশ্চিত, ঠিক এই রকম না হলেও এর কাছাকাছি রকমের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমাদের অনেককেই যেতে হয়েছে।বেড়ে ওঠার নানান স্তরে গাত্রবর্ণ নিয়ে আমাদের নানা রকম কথা শুনতে হয়েছে। মজাটা হল, ফর্সা লোকেদের সাত খুন নয়, প্রায় সত্তুর খুন মাফ। আমাদের দেশের প্রায় ৮০ ভাগ লোকের গায়ের রঙ্গই আমার মতো---কালো। বাকী ২০ ভাগের মাঝে আছেন ফর্সা ও শ্যামলা বর্ণের মানুষেরা। সংখ্যাগুরু বলে আমাদের অর্থাৎ কালো মানুষদের যতটা স্বস্তিতে থাকার কথা ছিল, বাস্তবে ঘটেছে পুরো উলটো। আপনি যদি ওই বাকী বিশভাগের মাঝে না থাকেন---তাহলে আপনি 'হতভাগ্য'! আপনি ছেলে হলে তাও কিছু বাঁচোয়া। কিন্তু যদি মেয়ে হন, তাহলে সমস্যা চৌদ্দগুন বেশি। কালো মেয়েদের বিয়ে হওয়া মুস্কিল---এই কথা বারবার শুনেছি নানান জনের মুখে। কোন বরপক্ষের মানুষের কাছে শুনিনি যে তারা 'কালো' মেয়ে খুঁজছেন বলে।
আমাদের সমাজ এমনিতেই বড় কপট স্বভাবের। জন্মের পর পরই একটা মেয়ে জেনে যায় সে কতটুকু উপেক্ষিত আমাদের মাঝে (যতটুকু জানি, মেয়ে সন্তান হলে নাকি কেউ আযান দেয় না, কিন্তু পুত্র সন্তানের জন্মের সময় আযান আছে)। এর উপর সেই মেয়ে যদি কালো হয়---তার সামনের পথ আরো দুস্তর হয়ে যায়।পথে ঘাটে, দেয়ালে, বিল-বোর্ডে, টিভির পর্দায় আমরা অনবরত মেয়েদের জানিয়ে দিচ্ছি----তার মূল্য আসলে নিহিত আছে তার গায়ের রঙের মাঝে। এই সমাজে যদি একটা মেয়েকে একটা ভাল জীবন পেতে হয় তার ফর্সা হওয়া ভীষন জরুরী। তাই তার প্রয়োজন 'ফেয়ার এন্ড লাভলী'!বড় বড় পাশ দিয়েও ভাল চাকুরী জোটাতে হলে শেষমেশ দরকার ফেয়ার এন্ড লাভলী।ওইটা মেখে মেখে উজ্জ্বলবর্ণা হতে হবে। একমাত্র উজ্জ্বল ত্বকই হলো একজন মানুষের আসল সম্পদ।
মেয়ে তুমি কতটা বিদুষী,কতটা ভাল বা কতটা রুচিশীলা---এসব কিছুই হিসেবে আসবে না, যতখন না তোমার গায়ের রঙ হবে দুধে-আলতার মত।মেয়ে, তুমি যদি কালো হও, তুমি যুদ্ধে নামার আগেই হেরে গিয়েছ। কোটি কোটি কালো মানুষের মাঝে থেকেও আমরা বিপন্ন বোধ করি---ব্যান্ডের ছেলেরা মাথায় জেল মেখে গাইতে থাকে 'কালো মাইয়া কালো বইলা কইরো নাতো হেলা---'
আসলেই ভেবে দেখুন-- একটা ছোট মেয়ে বড় হচ্ছে এই জিনিস জেনে যে, গায়ের রঙ্গটা তার জীবনের জন্যে কতটা অপরিহার্য্য। ইদানিং শুনলাম ছেলেদের জন্যেও 'ফেয়ার এন্ড লাভলী' জাতীয় কী একটা যেন বেরিয়েছে। ইসসস---আরো বছর বিশেক আগে বেরুলে কী চমৎকারই না হতো----
বিদেশে আসার পরে জানলাম আরেক ধরনের বর্ণবাদের কথা। এখানের বর্ণবাদ গাত্রবর্ণ নিয়ে শুরু হলেও মূলত এইটা এখন একটা রাজনৈতিক ও বহুলাংশে সাংস্কৃতিক বর্ণবাদ। সাদারা নাকি কালোদের দেখতে পারে না। মজা হচ্ছে কালোরাও কিন্তু একই সাথে সাদাদের দেখতে পারে না। এই জায়গায় এসে আমার দেশের চেয়ে একটু ভিন্নতা পেলাম। আমার দেশে কালোরা নিগৃহীত হলেও, সাদাদের বিরুদ্ধে তাদের কোন ক্ষোভ নেই। বরং সাদাদের দলভুক্ত হবার জন্যে একরকমের বাসনা কাজ করে। এখানে কালোরা তাদের অবস্থান ও অস্তিত্ব নিয়ে যথেষ্টই সোচ্চার। তারা তাদের একটা নিজস্ব জীবনাচরণ তৈরী করে নিয়েছে। তাদের বাচন-ভঙ্গী,হাঁটার স্টাইল থেকে শুরু করে তাদের সঙ্গীত সবকিছুতেই তাদের নিজস্বতার ছাপ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। এবং এই স্বাতন্ত্র্য এতটাই প্রবল এবং অমোঘ যে প্রচুর সাদাদের দেখেছি 'কালোদের মত' আচরণ করতে---তাদের কথার ভঙ্গী নকল করতে, হাটা নকল করতে এমনকি পোষাক-আশাক পর্যন্ত ওদের মত করে পরতে। আর কালোদের গানের কথা নাইবা বললাম। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা পৃথিবী জুড়েই তাদের র্যাপ-সৌল-হিপহোপ দোর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব করছে। আমার একাধিক কালো বন্ধুদের সাথে কথা বলে দেখেছি--তাদের বেশির ভাগেরই পছন্দ কালো নারী, শ্বেতাঙ্গিনী নয়।
আমরা যারা উপমহাদেশ হতে এখানে এসে জুটেছি, তারা আচারের বৈয়াম, শিল নোড়া, শিমুল তুলোর বালিশ (এইটা আমি নিজেও এনেছি) প্রভৃতির সাথে আমাদের স্বদেশী বর্ণবাদটাও সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এখানে আসা মাত্রই 'অভিজ্ঞ' দেশী ভাইরা আমাদের প্রথমে জানিয়ে দেন--'কাউলা'-দের কাছ থেকে শত হস্ত দূরে থাকতে।
কেন?
এক) ওরা কাউলা--
দুই) ওরা খুব মারকুটে, তোমাকে রাস্তায় একা পেলেই বন্দুক বা ছোরা চেপে ধরবে, মার ধর করবে, মেজাজ তেমন খারাপ থাকলে খুনও করে ফেলতে পারে---
তিন) ওরা ড্রাগ ডিলার
চার) ওরা কাউলা-----
অথচ শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে কিন্তু তেমন কোন সাবধান বানী শুনতে হয় না। যারা নিউ ইয়র্ক , শিকাগো, লন্ডন বা এই রকম বড় কোন শহরে থেকেছেন তারা জানেন যে সাদাদের নিয়ে বাঙ্গালীদের মাঝে একধরণের অদ্ভূত আচরণ বিদ্যমান। এইটা নেহাতই আমার পর্যবেক্ষন এবং কেবল বাংলাদেশীদের মাঝেই দেখেছি। পশ্চিমবঙ্গের কেউ হয়ত তাদের দিকের কাহিনী ভাল বলতে পারবেন। আচরণটা হল খানিকটা এই রকম, যখন কোন বাঙালী আরেক বাঙ্গালীর সাথে তার 'সাদা দাদাদের' নিয়ে কোন ঘটনা বর্ণনা করেন তখন নিজেকে নাম পুরুষে ব্যক্ত করেন। সাদারা থাকেন উত্তম পুরুষে। উদাহরণ দিচ্ছিঃ
এক বাংলাদেশি তার আরেক দেশী ভাইয়ের কাছে গল্প করছেন ডাক্তার দেখানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে। তো উনি বলছেন, বুঝলি, ডাক্তার তো আমার পেট-পুট টিপা দিয়া, চাপায়-চুপায় থাবড়া দিয়া কইল 'তোর তো অবস্থা টাইট রে'। আমি কইলাম, ক্যান কী হইসে আমার? ডাক্তারে কয়, তোর ইন্সুরেন্স আছে তো ? নাইলে তোর যে বেরাম হইসে সেটা কিন্তু বিরাট খরচান্ত ব্যাপার----
নিশ্চয়ি ধরে ফেলেছেন ঘটনা কী। ডাক্তারের কথা যখনি বলা হচ্ছে তখন উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি নাম পুরুষে আছেন। অথচ ইংরাজীতে তুই-তোকারী কিন্তু করার সুযোগ নেই। তাহলে ডাক্তারের কথা বলার সময় নিজেকে 'তুই-তোকারীর' জায়গায় নিয়ে ফেলছি কেন?
হীনমন্নতাবোধ থেকে?
যদি হীনমন্নতাই হয়, তাহলে কারণটা কী? ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা?
এই দোষটা কী কেবল বাংলাদেশি বাঙালীদের? নাকি অন্যেরাও একই রকম রোগে আক্রান্ত?
আমার ভারতীয় বন্ধুদের মাঝে একটা বড় অংশ তামিল। আমি নিজেও দ্রাবিড় গোত্রীয় বলেই হয়ত তারা আমার সাথে খুবই স্বচ্ছন্দ। তাদের সাথে মিশে একটা জিনিস দেখেছি---তারা নিজেদের নিয়ে কেবল সন্তুষ্ট নয়, অনেক খানি গর্বিত। এবং কথাটা বলছি, বর্ণ নিয়েই। দাক্ষিনাত্যের অধিকাংশ লোকই আমার মত---ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। তফাতটা হল--তারা সেইটা নিয়ে সংকুচিত নয়। তাদের সিনেমা যদি দেখেন, তবে দেখবেন তথাকথিত 'বিকট দর্শন' পুরুষরা সেখানে সুপারহিট (রজনীকান্তকে আর যাই হোক, ঠিক সুপুরুষ হয়ত বলা যাবে না)। ফর্সা 'হীরু' মার্কা চেহারার নায়কদের টিকে থাকতে রীতিমত কষ্ট করতে হয়েছে। "রোজা" ছবির সেই সুদর্শন সুপুরুষ অরবিন্দ স্বামী একেবারেই সুবিধা করে উঠতে পারেননি তামিল ছবিতে। অথচ চিন্তা করে দেখুন, বাংলা সিনেমায় নায়কদের অবস্থা। তবে একটা কথা না বললে আসলে সঠিক চিত্রটা অনুধাবন করা যাবে না। সেটা হল, নায়ক যাই হোক না কেন---নায়িকা অবশ্যই 'সুশ্রী' হতে হবে। আমরা শ্রীকৃষ্ণ কে ঘনশ্যাম বলেই জানি---কিন্তু তার প্রেমিকা রাধা কিন্তু কৃষ্ণবর্ণা নন।
এত কাল এত কালো মানুষদের মাঝে থেকেও কেন আমরা হীনমন্নতায় ভুগি? ইতিহাসের কোন মোড়ে এসে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম? কেন নিয়েছিলাম?গায়ের রঙ নিয়ে মানুষের এত বাড়াবাড়িরকমের বাড়াবাড়ি কেন?
অনেকগুলো প্রশ্ন--কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে এর উত্তর একটাই।
মন্তব্য
প্রথম যখন এভাবে কথা বলতে শুনেছিলাম, ঘাবড়ে গিয়েছিলাম খুব। এভাবে আগে কাউকে কথা বলতে শুনিনি। পরে শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
হা হা হা ---যাক কিছুটা স্বস্তিবোধ করলাম---আপনিও শুনেছেন--
খালি কী গায়ের রং? নোয়াখাইল্যা, বরিশাইল্যা এই গালিগুলো কম যায় কীসে?।
আপনার কালো কেমন কালো তা জানি না। তবে আমি নাকি ঘামলে গা দিয়ে কালি বের হয়।
হা হা হা --আমাকে ডিফিট দেয়া ডিফিকাল্ট --আমি প্রায় কাল্ট পর্যায়ের কাল
চমৎকার লাগলো আপনার লেখাটা। গায়ের রং নিয়ে বাড়াবাড়িটা আমাদের দেশের মানুষের রক্তের মধ্যে মিশে আছে। অনেক শিক্ষিত মানুষজনকেও দেখেছি শুধু রং দেখে অন্য একজন সম্পর্কে একটা বাজে মন্তব্য করে দিতে।
কিন্তু আপনাকে যেসব বিড়ম্বনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তা বোধ হয় কৌতুকবশত অন্যরা করেছে, কারন আপনি উজ্জ্বল শ্যামলা না হতে পারেন কিন্তু শ্যামলা বলা যায়
-------------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
হে হে হে ----আম্রিকা আসায় কিছু লাভ হইসে শেষ পর্যন্ত
"বোকার মত যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম এর কারণ, তখন শুনতে হয়েছে 'মা কালী'র প্রতি তাদের কোন মোহ নেই--আমি যদি চাই, আমি তাকে নিতে পারি---তবে বন্ধুদের অনেকেই আমাদের অনাগত শিশুদের গাত্রবর্ণের কথা ভেবে শিউরে উঠতে দেখলাম।"
সে অনেক আগের কথা... ইস্কুলে আমাকে "বাবা কালা" বলা হত। (বুইঝা নেন)
আর কালোদের প্রতি ভীতি সাদাদের থেকে কিন্তু আমি আমাদের বাঙালিদের মধ্যে বেশি দেখি। এখানের এক ভাবী... প্রথম আসছিলেন... বিমানবন্দরে এক কালো লোক তার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে "হাই" বলায় উনি ভয়ে প্রায় চিত্কার করে উঠেছিলেন।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
খুবই সত্যি কথা।
আমার নিজের আরেকটা ঘটনা বলি। আমার এক বন্ধুকে আনতে গিয়েছি ফিলাডেলফিয়া। তো সেখানে গিয়ে গাড়ি পার্ক করার জায়গা খুঁজছি। খুঁজতে খুঁজতে একটা জায়গা পেলাম কিন্তু পার্ক করতে পয়সা লাগবে। বেশ দাম টিকিটের। দাম-টাম দেখে নিরাশ হয়ে যখন বেরিয়ে আসছি, তখন দেখি এক দূর্দান্ত SUV এসে ঠিক আমাদের সামনে থামল। সেটা থেকে বেরিয়ে এল এক কাউলা। আমি আর আমার বন্ধু তো প্রমাদ গুনলাম। বেশ নিরালা এদিকটা। যদি কিছু করে বসে !!! ভাবছি এক্সেলেটারে চাপ দিয়ে ভাগি। এর মাঝেই লোকটি এসে আমাদের জিজ্ঞেস করল, আমরা এখানে পার্ক করতে চাই কি না। যদি চাই, তার কাছে একটা টিকিট আছে। খুব দ্রুত আমাদের ভয় সরে গিয়ে সেখানে সন্দেহ উঠে আসল। কাউলা মনে হয় ড্রাগ এডিক্ট। ভুয়া টিকিট একটা গছিয়ে টাকা মারার ধান্ধায় আছে। খুব চালাক একজন বাঙ্গালীর মতই বললাম, না ভাই দরকার নেই। আমাদের ওত টাকা নেই। লোকটা খুব অবাক হয়ে বলল, টাকা? টাকা কে চাইছে?? আমি টিকিট কিনে ছিলাম কাল সকাল পর্যন্ত থাকব বলে। কিন্তু কাজ শেষ তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। তোমাদের দেখে মনে হল পার্কিং খুঁজছ, তা ভাবলাম শুধুমুদু টিকিটটা নষ্ট না করে তোমাদের দিই। আমার টাকা চাই না।
আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে তার কাছ থেকে টিকিটটা নিতে নিতে দেখলাম লোকটা শিস দিতে দিতে তার গাড়িতে উঠে চলে গেল। বিশাল পার্কিং লটে রেখে গেল দুই তথাকথিত প্রগতিশীল লোককে যারা দিনের বেলায় সাম্যবাদের বাণী কপচায় কিন্তু সন্ধ্যে বেলায় যখন একজন সজ্জন লোক তার নিজের টিকিটটা বিনা মূল্যে দিয়ে দিতে চায়---আমরা তার ছায়ার আড়াল থেকে বের করে আনি একজন দস্যু, একজন মাতাল, একজন হঠকারী দূর্বৃত্ত।
এই আমাদের শিক্ষা!!
আপনার প্রথম প্যারার সাথে একমত।
আপনার ধারনা পুরোপুরি ঠিক নয়। আমি যতদুর জানি ছেলে শিশুদের বেলায় আযান দেয়া হয় শব্দ করে আর মেয়ে শিশুদের বেলায় আযান দেয়া হয় কানে কানে। অবশ্য কেন এ পার্থক্য তা জানা নেই।
আপনার জানাটা সম্পূর্ণ-ই ভুল বলে মনে হচ্ছে।
আমাদের দেশেই এরকম আজব নিয়ম তৈরী করা হয়েছে যে ছেলেদের জোরে আজান শোনাতে হবে আর মেয়েদের আস্তে আস্তে শোনাতে হবে। তিরমীযী শরীফের হাদিস অনুযায়ী প্রফেট মোহাম্মদ (স.) বাচ্চার (ছেলে) কানে আজান শুনিয়েছিলেন। অন্য এক হাদিসে আছে সন্তান জন্মের পর এক কানে আজান এবং অন্য কানে ইকামা শোনাতে হয়। উল্লেখ্য যে, সন্তান ছেলে না মেয়ে সে বিষয়ে পার্থক্য করা হয় এমনটা আমি কখনোই শুনিনি। ইন্টারনেটে একটা সার্চ মেরে দেখলেই বুঝতে পারা যাবে।
অনিকেত, খুব ভাল লাগল। একেবারে ঠিক জায়গায় আঘাত দিয়েছেন।
সর্বস্থানে, সর্বকালে এবং সর্বপাত্রে বর্ণবাদ নিন্দনীয়। আমরা বাঙালীরা চরম বর্ণবাদী, কিন্তু তা স্বীকার করতে তো চাইই না, বরং বিদেশের বর্ণবাদকে সুযোগ পেলেই এক হাত নিয়ে আত্মসুখ লাভ করে নিজেদের নৈতিকতা শ্রেয়তর ভাবতে থাকি।
ধন্যবাদ ফজলুল কাদের ভাই।
ভাল থাকবেন
যেইনা অবস্থা... ফেয়ার এন্ড লাভ্লীর পুকুরে ঝাঁপ দিলেও কোন লাভ হবেনা। আমার মা অবশ্য সারাক্ষন আমাকে "উজ্জল শাযমলা" প্রমাণ করার জন্য তৎপর থাকে তাও কাজ হয়না। কি আর করা আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যায়...
হাহা...আসলে আমার মনে হয়না এইসমস্ত বিশ্রী স্বভাব অন্তত আমাদের দেশের মানুষের কখনো যাবে।
হা হা হা ----
মানতে ইচ্ছে করে না---কিন্তু ঠিকই জানি আপনার কথাটা কত নিষ্ঠুর রকমের সত্যি।
ভাল থাকবেন
দেশের বাইরে যাইনি, তাই জানিনা। দেশের ভিতরের অভিজ্ঞতাগুলো প্রায় একই। ইউনিভার্সিটি জীবন শুরু হবার পর বন্ধুরা আমার প্রথম জন্মদিনে একটা "জেন্টস উপটান" উপহার নিয়ে এসেছিল। বুঝেন অবস্থা!!! ডাক-নামগুলোর কথা তো এখানে লেখাই যাবে না।
আমি কিছু মনে করিনা। এতদিনে একটা জিনিস বুঝে গিয়েছি, নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করব, মানুষ আমাকে সেভাবেই নিবে। খুব কম মানুষেরই কাউকে সত্যিকারভাবে বুঝতে পারার ক্ষমতা/ইচ্ছা আছে। এরা কী ভাবল তাতে কি যায় আসে! যত্তসব মুখোশের দুনিয়া...
লাখ কথার এক কথা---
ধন্যবাদ, বস।
আর আমার বিশাল সাইজের জন্যে কম নাম কামাইনাই
সর্বনাশ করেছিস । তুই দেখি বিবিএ না পড়েই বিবিএ শিখে ফেলেছিস । এইবার তো তুই চাকরির বাজারে হাঙ্গামা লাগায় দিবি !
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
বেশ বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা দিয়ে বিষয়টি সাজিয়েছেন। তাতে অনেক কাছের মনে হয়েছে সেসব।
আমরা জার্মানীতে নাজীতের কথা বলি। পাশাপাশি বাঙ্গালীদের চরিত্র দেখে মনে হয়, ওরা যদি জার্মান হতো, তাহলে নিজেরাও প্রত্যেকে একটি করে নাজী হতো। আমার এসব দেখে হতাশ লাগে খুব।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
তীরুদা,
একেবারে আমার মনের কথা বলে দিয়েছেন।
একটু ভিন্ন প্রসঙ্গঃ
আমারে 'আপনি' 'আপনি' না করলে খুব খুশি হবো, তীরুদা। আপনি শুধু বর্ষীয়ান তাই নয়, অনেক বড় মাপের মানুষ। আমাকে 'তুমি' করে বললে খুব খুশি হবো(চাইলে তুই করেও বলতে পারেন---হা হা হা )
প্রথম কথা হলো--লেখাটা মোটেও লম্বা না।
দ্বিতীয় কথা হলো, আমার সাথে আপনার দেখা হয় নাই। দেখা হলে গায়ের রঙ নিয়ে আপনার দুঃখ অনেকখানিই কমে যাবে।
তৃতীয় কথা হইলো মনে বেশি দুঃখ হইলে একটা দুঃখের গীত গেয়ে পুস্টান
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
হা হা হা রেনেট অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে।
লেখা লম্বা না বলায় বেশ অবাক হলাম। আমি তো ভেবেছিলাম বেশ লম্বাই লেখাটা---
আর গাত্রবর্ণের কথা বলছ বস? আমাকে হারানো মুস্কিল হবে কিন্তু---
ভাল থেকো বস। সব সময়---
অত্যন্ত সংবেদনশীল একটা বিষয়।
এই বৈষম্যতার বিপক্ষে অনেকেই নিন্দা করেন, সাম্যতার বড় বড় বুলি কপচান, কিন্তু এই বৈষম্যবোধই আবার তাদেরই মাঝে বিরাজমান থাকে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সুতরাং এই হীনমন্যতার বাড়াবাড়ি শেষ হবেনা কোনদিনই। অথবা শেষ হবে সেদিনই, যেদিন আমরা তাই বলবো যা বিশ্বাস করবো।
জাত, বর্ণ, ধর্ম, বাহ্যিক বৈশিষ্টের হাত থেকে সেদিনই রেহাই পাবো যেদিন অপরকেও রেহাই দেবো!! জীবনে চলতে গিয়ে যা দেখেছি তাই বললাম।
অনিকেত বস, আপনের দলে আমিও আছি। কালা জাহাঙ্গীর এর পরে দেশের মূল টপ টেরর হয়ে আত্নপ্রকাশ কর্মু ভাবসিলাম...
সত্যি কথা হচ্ছে, আমদের দেশে আসলেই কালো বর্ণের মানুষের প্রতি অন্যান্যদের একটু 'কেমন যেনো' দৃষ্টিতে তাকানোর রেওয়াজ আছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে তাও সহনীয়, কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে... বলা বাহুল্য।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
হক কথা, বস।
ভাল লাগল আপনার লেখাটা। কয়েকটি মন্তব্যঃ
আমার একাধিক কালো বন্ধুদের সাথে কথা বলে দেখেছি--তাদের বেশির ভাগেরই পছন্দ কালো নারী, শ্বেতাঙ্গিনী নয়। - অন্যদিকে একজন বাংলাদেশী ছেলে বা মেয়ে কিন্তু খুব কম সময়ই কালো নারী বা পুরুষের সাথে (অন্যদেশী) প্রণয়ের/বা গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এমনকি পরিবারও একজন শ্বেতাঙ্গ বা শ্বেতাঙ্গিনীর সাথে প্রণয়ের ব্যাপারটা কখনো কখনো প্রশ্রয়ের চোখে দেখে। কিন্তু কালো নরনারীর ব্যাপারে কখনোই মাফ নেই।
এখানে আসা মাত্রই 'অভিজ্ঞ' দেশী ভাইরা আমাদের প্রথমে জানিয়ে দেন--'কাউলা'-দের কাছ থেকে শত হস্ত দূরে থাকতে। - আমি যখন প্রথম যুক্তরাজ্য যাই, তখন আমাকে এক 'অভিজ্ঞ' দম্পতি প্রথমই এই কথাটা বলেছিল। অথচ আমি গেছলাম মাত্র ২০ দিনের জন্য। কিন্তু আমার ‘কাউলা’দের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা তৈরী করে দিয়েছিল। এমনকি তাঁদের সাথে দেখা করার জন্য আমাকে সাউথ লন্ডনের Brixton এ নামতে হয়েছিল (যেখানে অনেক ‘কাউলা’) আছে। আমাকে আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল কারো সাথে কথা না বলতে, সাথে সাথে কিছু হরর গল্প। আমি তো সেখানে নেমে চুপসে গেছলাম।
বিজ্ঞাপনের ক্ষমতা তো আমাদের জানা আছে। 'ফেয়ার এন্ড লাভলী' জাতীয় বিজ্ঞাপন যে সমাজে কতটা প্রভাব ফেলছে ভাবতে অবাক লাগে। কেউ কিছু বলার নেই।
ধন্যবাদ সুমন এমন চমৎকার একটা মন্তব্য করার জন্যে।
ভাল থাকবেন---
- মজার ব্যাপার হলো, আমার এখন পর্যন্ত ভিবিন্ন স্তরে যতোগুলো ভালো বন্ধু হইছে সবগুলার রং-ই মাশাল্লাহ! সেইজন্য এই রংটারে আমার তেমন খারাপ মনে হয় না। আরও ব্যাপার হইলো, আমার সকল স্তরের মানুষের লগেই মোটামুটি বন্ধুত্ব হয়ে যায়, মানে আগে যাইতো আরকি! রিক্সা চালক থেকে শুরু করে ট্রাক ড্রাইভারও আমার বন্ধু ছিলো এককালে। চুটায়া আড্ডা মারতে মারতে পারতাম সবার সাথেই। অবশ্য এই নিয়া বহুত কটুকথা শুনতে হইছে আমার। কিন্তু কান দেই নাই কখনোই।
গাত্রবর্ণের পাশাপাশি আমাদের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের প্রতি ঋণাত্বক মনোভাবটাও বিরক্তিকর। এই আমরাই নিজের দেশে আইল্যা, কাইল্যা, জাইল্যা বলে গাইল দেই আবার আমরাই বিদেশে এসে বিদেশীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলি অমুক চুদির্ভাই একটা র্যাসিস্ট।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধূসর গোধূলির এই মন্তব্য সুনা দিয়া বান্ধানো হৌক। পরবর্তীতে গায়ের রং লৈয়া নিরীহ সজ্জন সদালাপী মিষ্টভাষী উদার বন্ধুবৎসল ক্ষমাশীল এক্কথায় জোস একজন ঘোর কৃষ্ণবর্ণ সচলরে সে আক্রমণ কর্লে এই কমেন্ট থিকা কোটামু।
@ হিমু
হা হা হা ---
সেইটাই কথা
ভাল থেকো বস, সব সময়
অন্যের কথা কি কমু, আমি নিজেই ঘোর বর্ণবাদি, কাউলাদের ব্যাপক গালাগালি করি, অথচ আমার সহকর্মীদের মাঝে কাউলারা অনেকবারই এগিয়ে এসেছে আমাকে সাহায্য করতে। কাজেই এটা আমার হীনমন্যতা আর বেহুদা স্টেরিওটাইপিং ছাড়া আর কিছুই নয়। খুব ভালো লাগল আপনার লেখাটা, তবে বড় বললেন কেন, ঠিক বুঝলাম না, আমার একটা লেখা আসতেছে, আসল হাতি পোস্ট। কয়েক জায়গায় ব্যাপক হাসি পেয়ে গেল আপনার দুরবস্থা দেখে, তার জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
থ্যাঙ্কু বস, কষ্ট করে পড়ার জন্যে---
ভাবতেছিলাম লেখা লম্বা ..... কিন্তু তখনই শেষ। সুপাঠ্য হয়েছে।
ফেয়ার এন্ড লাভলী বস্তুটাই তো বর্ণবাদী বস্তু। ত্বকের রং ফর্সা হলে সেটা সুন্দর এই কনসেপ্টটাই তো এটার (এবং আরো কিছু সৌন্দর্যবর্ধক! সামগ্রীর) বিজ্ঞাপনের মূলতত্ব!
ফেয়ার এন্ড লাভলী যদি সত্যিই ত্বক ফর্সা করতে পারতো তবে ঈদি আমিনকে ফেয়ার এন্ড লাভলি লাগিয়ে দেখাউক .... কিংবা মাইকেল জ্যাকসন কেনো ফেয়ার এন্ড লাভলি না লাগাইয়া প্লাস্টিক সার্জারি করলো ... যাউগ্গা ....
অপরিষ্কার/ময়লা আর পরিষ্কার থাকার পার্থক্যটা অনেক সময় গাত্রবর্ণ থেকে বোঝা যায় (ময়লা পরিষ্কার না করলে গাত্রবর্ণ ঘন দেখায়)... ---- এজন্যই হয়তো গাত্রবর্ণভিত্তিক এরকম কনসেপ্ট গড়ে উঠেছে। ফর্সা ফর্সা হিন্দু দেবদেবীদের আবির্ভাব ইংরেজদের আসার অনেক আগেই ঘটেছে ... কাজেই, ইংরেজ-দাসত্ব থেকে বর্ণবাদী মনোভাব হয়েছে এটা ঠিক খাপ খায় না। হয়তো এ উপমহাদেশের লোকদের বর্ণবাদী মনোভাব আগে থেকেই মনে ভেতরে ছিল, ইংরেজদের ফর্সা গাত্রবর্ণ দেখে ওদেরকে অপেক্ষাকৃত উত্তম ভাবতে সুবিধা হয়েছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
থ্যাঙ্কু শামীম ভাই
ভাল থাকবেন
লেখাটা এমনিতেও বড় না, আর পড়তে গিয়ে আরোই মনে হলো না।
বর্ণবাদের জন্যে নিশ্চয়ই একটা-দুইটা জিন (জ্বিন না কিন্তু) দায়ী, নাইলে এই ব্যাপার এমন ইউনিভার্সাল হওয়ার কথা না।
"Life happens while we are busy planning it"
এইটা একটা ইন্টারেস্টিং কথা বলেছেন সমুদ্র--!!
ভাল থাকবেন
কী কব আর দুষ্কের কথা রে ...
মন খ্রাপ করবেন না। আমার একখান ফটুক আপ্নারে পাঠায়া দিমুনি। কেউ আপনাকে কালা বলে হেলা করলে সিনেমাতে এফবিআই এজেন্ট যেইভাবে আইডি ফ্ল্যাশ করে, ঐভাবে আমার ছবিখানা হেলাকারী/কারিণীকে দেখায়া দিবেন।
হা হা হা , হিমু----অনেক ধন্যবাদ আমাকে অভয় দেয়ার জন্যে---
ভাল থেকো সব সময়
আসেন প্রথমে কিছুক্ষণ দুই ভাই গলা জড়াজড়ি করে কেঁদে মনের ভার হাল্কা করি ।
...
মন হাল্কা হইছে ? এইবার আসেন কাজের কথায় ।
এই রকম বর্ণবাদী ষঢ়যন্ত্র থেকে বাঁচার একটা উপায় পাইছি । প্রচুর পরিমানে মাছ মাংস ডিম দুধ খান, সকাল বিকাল ব্যায়াম করেন, ইয়োগা করেন, গামা পালোয়ানের মত একটা শরীর বানান । তারপর কোন হালা আপনারে কালা কয় দেখবেন ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
হা হা হা , তথাস্তু এনকিদু----
বর্ণবাদ তো আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছে। কালা, চিকনা, মোটকা, টাকলা, ক্ষ্যাত, পূব্বা, ফরেন, নোয়াখাইল্যা, বরিশাইল্যা, আবাইদ্যা......... বলে শেষ করা যাবে না। জেলায় জেলায় রেশারেশি থেকে শুরু করে উপজেলা-গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত। এগুলো নিয়ে আমাদের মাতামাতি, হীনমন্যতা, কপচানি, স্ববিরোধিতা এগুলোরও শেষ নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা সবাই কোন না কোন ভাবে এর ভিক্টিম হই তবু নিজেরা সুযোগ পেলে অন্যকে ঠুসতে ছাড়িনা। এসব নিয়ে দেশে মন খারাপ হলেও তা মেনে নেই, আর বিদেশে একই ধরণের পরিস্থিতির শিকার হলে মনে মনে ফুঁসে উঠি (আমাদের আবার সাহস কমতো)। আমি জানি না কত বৎসর বা কত প্রজন্ম শিক্ষার আলো পেলে, উদারতার-মানবতার ছোঁয়া পেলে আমাদের এই অসুখ সারবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
হা হা হা , একদম সত্যি কথা বলেছেন পান্ডব দা
ভাল থাকবেন, সব সময়
ইদানিং শুনলাম ছেলেদের জন্যেও 'ফেয়ার এন্ড লাভলী' জাতীয় কী একটা যেন বেরিয়েছে। ইসসস---আরো বছর বিশেক আগে বেরুলে কী চমৎকারই না হতো----
হা হা হা হা ---এক্কেরে মনের কতা কইসেন গো---
খুব ভালো লাগলো, অনিকেত।
থ্যাঙ্কু মূলোদা---
ওরে বাবা। এই বিষয়ে মেয়েদের উপরে যা হয় তা যদি শোনেন, তাইলে মারাত্মক কান্ড লেগে যাবে। আমি হিন্দুপরিবার গুলির দেখেছি, তাই তাদের কথাই জানি। মেয়ে জন্মানোমাত্রই তো( সে কালা ধলা যাই হোক) মাবাপ আত্মীয়স্বজনের মুখ হাঁড়ি, নাকি মেয়ের বিয়ের চিন্তায়। ভাবুন মেয়েটা জন্মেছে মাত্র, তখনই তাকে বিড়াল পারের চিন্তা। যেন মেয়ের লেখাপড়া কেমন হবে,অন্য স্কিল কি হবে, ব্যক্তিত্ব কিরকম হবে এইসব কিছু না, সে শুধু মেয়েচিহ্নধারী এক লায়াবিলিটি। ছেলেসন্তান এই থেকে বাঁচে।
তারপরে সে মেয়ে যদি কালো হয় তো কুরুক্ষেত্র। হাসপাতালেই আত্মীয়স্বজনেরা বলতে থাকে ওরে এ মেয়েকে কত পণ দিয়ে যে ঘাড় থেকে নামাতে হবে সে জানেন উপরের উনি।
তারপরে এ মেয়ে বড় হয়ে ওঠার পদে পদে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হতে থাকে কি পরিমাণ অভিশাপ সে বহন করে এনেছে। একে মেয়ে,তায় কালো। এই থেকে আত্মবিশ্বাস বাঁচিয়ে 'বড়' হয়ে উঠতে পারে খুব কম মেয়েই, যারা পারে তারাও অনেকক্ষেত্রে ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে, তীব্র ঘৃণায় ঐ বিশ্রী সমাজ থেকে দূরে পালাতে চায়।
অথচ দেখুন গায়ের কালো বা ফর্সা রঙের সঙ্গে কিন্তু প্রতিভা, গুণ, দক্ষতা, মানসিক দৃঢ়তা, নেতৃত্ব দেবার শক্তি এইসবের সম্পর্ক নেই, এমনকি সৌন্দর্যেরও না। কালোরঙের মানুষ দারুণ সুন্দর হতে পারে, তার নেতৃত্ব দেবার গুণ বিশাল একটা দেশের কঠিন সময়ে বিরাট এক সহায়ক হয়ে দেশকে বাঁচাতে পারে,তার মানসিক দৃঢ়তা অনুসরণযোগ্য হতে পারে।
তবু আমাদের অদভুত সমাজ একইভাবে বলে যায়, " ঐ কাইল্যা ভুতে করবে ? তবেই হইছে! "
ফর্সা বোনের প্রতিপত্তি দেখে কালো বোন মুখ শুকিয়ে বলতে আজো বাধ্য হয় "ফর্সা মাবাপের ভরসা"।
আমাদের এইসব সহজে যাবে না, কারণ এতো সাদাকালো দুই জনগোষ্ঠীর মুখোমুখি লড়াই না, যে লড়ে অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে। এখানে যে লতাপাতায় জড়িয়ে আছে, একইঘরের ভাই ও বোনে আলাদা ট্রীটমেনট, একই ঘরের ফরসা বোন আর কালোবোনের প্রতি ভিন্ন ব্যবহার! এ জিনিস ধুয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে আরো গভীর সংস্কার প্রয়োজন, হয়তো হবে কোনোদিন।
আমার শুধু খারাপ লাগে সেই প্রমিসিং মেয়েগুলোর জন্য, সমাজের ভুলে সমাজ যাদের আত্মবিশ্বাস লুঠে নিয়ে অকেজো করে দিলো।
লেখা ভালো লেগেছে, আরো লিখবেন।
----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ধন্যবাদ তুলিরেখা, কষ্ট করে পড়ার জন্যে এবং এমন বিষদ মন্তব্য করার জন্যে-----
ভাল থাকবেন, সব সময়
১ ...
অনেক আগে একবার বন্ধুদের আড্ডায় বর্ণবাদ নিয়ে কথা উঠসে, আমি বল্লাম, বাঙালির মধ্যে বর্ণবাদ তীব্রভাবে আছে, আমরা মুখে যত কথাই বলি বিয়ে করার সময় ঠিকই সাদা মেয়ে চাই ... তো এক বন্ধুর কড়া প্রতিবাদ, এইটাতে বর্ণবাদের কি আছে? সবাই চায় সুন্দর মেয়ে বিয়ে করতে, মেয়েরাও তো সুন্দর ছেলে চায় ... আমি বল্লাম, সাদা মানে যে সুন্দর আর কালো মানে অসুন্দর এই ধারণাটাই তো বর্ণবাদী ... তার যুক্তি, সৌন্দর্য তো যুক্তিতর্ক দিয়া হয় না, আমরা মোটা মেয়েদের অসুন্দর আর স্লিম মেয়েদের সুন্দর বলি কেন? দেখতে ভালো লাগে বলেই তো? তেমনি সাদা মেয়ে দেখতে আমার ভালো লাগে, এইটা বর্ণবাদের তো কিছু নাই ...
যাই হোক, আমি বিশেষ শক্ত যুক্তি দিতে পারলাম না ... সে পাঞ্চিং দিল এমনে, এখন বড় কথা কৈতেসো, বিয়া করার সময় দেখুমনে কেমন মেয়েরে কর
তখনো প্রেম করতাম না, তাই "দেখিস" ছাড়া আর কিছু বলা গেল না ... এখন হইলে প্রেমিকার ফেইসবুক প্রোফাইলটা ফরোয়ার্ড করা যাইতো
২ ...
আমার মায়ের গায়ের রং একেবারে দুর্ধর্ষ ফর্সা; আমি কালো আর বোনটা কালো আর শ্যামলার মাঝামাঝি (বড় হওয়ার পর অবশ্য কালো আর সাদার মাঝে চলে আসছে) ... এইটা নিয়ে মায়ের দুঃখের অন্ত ছিল না, কিন্তু কোন একটা বিচিত্র কারণে আমি বা আমার বোন কেউই এইটারে পাত্তা দেই নাই; বরং মা কখনো অমুকের ছেলে বা মেয়ে কত ফর্সা এইসব গল্প শুরু করলে আমরা দুইজনই হাসাহাসি শুরু করতাম ...
আম্মা খালার দুঃখ করতো মাঝে মাঝে ফ্যামিলির বেশিভাগ মেয়ে কালো হইসে, এদের বিয়ে দেয়া হবে কেমনে ইত্যাদি ইত্যাদি ...
মজার ব্যপার হচ্ছে ফ্যামিলির কোন ছেলে (বুঝতেই পারছেন সেটা আমি) যদি কালো কোন মেয়েকে পছন্দ করে, তাহলে কিন্তু সবাই একজোট, "কি দেখে তুমি এই মেয়েকে পছন্দ করলা?"
এই মেন্টালিটি বদলাবে শিগগিরই? সন্দেহ আছে
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
সেইটাই! আত্মীয়স্বজনদের কথা শুনলে মনে হবে, তুমি যেন এক কৃতঘ্ন!! অথবা মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে----
কী অদ্ভূতুড়ে এই সমাজ আমাদের---
খুব ভালো লেগেছে লেখাটা, নিজেদের দিকে তাকাতে ভুলে যাই আমরা কিন্তু আমাদের চিন্তায়-চেতনায় বর্ণবাদ আসলেই তো গভীর ভাবেই জড়িয়ে আছে। কতবার যে শুনেছি "মেয়েটি (বা ছেলেটি) কালো হলেও দেখতে ভালো"। যেন এটা একটা আশ্চর্য ব্যাপার, যেন কালো হওয়া এবং সুন্দর হওয়া একটা পরস্পরবিরোধী ব্যাপার।
দ্রাবিড়দের তাড়িয়ে এলো আর্য্যরা, তাদেরকে হটালো মুগলরা, তারপর বৃটিশদের রাজত্ব। প্রত্যেকটি শাসকদল তাদের পূর্ববর্তী দলের চেয়ে একটুখানি বেশী ফরসা। ঔপনিবেশিক শাসন যে কত গভীর ছাপ রেখে যেতে পারে মানুষের মননে ভাবতে অবাক লাগে।
নিজের উদাহরণ এতো অকপটে খোলামেলাভাবে টেনে এনে আমাকেও আয়নার সামনে দাঁড়াতে বাধ্য করলেন - একা একা কোনো অন্ধকার রাস্তায় রাতের বেলা চলতে যখন কোনো বিশালাকার কালো মানুষকে হেঁটে আসতে দেখি আমার দিকে, মনের অজান্তেই রাস্তা পেরিয়ে পা চালিয়ে চলে যাই উল্টোদিকে। এই আমিও কিন্তু দিনেরবেলা সাম্যবাদের বুলি কপচাই!
এই তো আমাদের সকলেরই শিক্ষা ভাই।
আহির ভৈরব
----------------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
ভাই আহির ভৈরব,
তোমার মন্তব্যটা আমার অসাধারণ লাগল।
দুর্দান্ত একটা অবজারভেশান। আমার এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যাবার পরে শুনেছিলাম তার মা তাকে বলেছিলেন,একজন 'কালো ছেলে' হিসেবে আমার চেহারা নাকি বেশ ভাল---!! হা হা হা -----
একদম সত্যি কথা!
অনেক ধন্যবাদ আহির ভৈরব। তোমার নামটি আমার খুব প্রিয় একটা রাগের নামে--সে কারণে তোমাকে আরো আপন মনে হচ্ছে---
ভাল থেকো, সব সময়
[বয়েসে ছোট ধরে নিয়ে তুমি তুমি করছি কিন্তু]
ধন্যবাদ অনিকেতদা, ঈদ মোবারক।
গান ছাড়া পৃথিবীতে আর কিছু বুঝিনা (তাই বলে গান যে বুঝি তা কিন্তু না! )।
কাজেই গানের প্রতি যাদের ভালোবাসা দেখি তাদেরকে আমারও আপন মনে হয়! নিশ্চয়ই তুমি বলবেন।
ভালো থাকবেন।
আহির ভৈরব
---------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
প্রথমেই বলে নেই ভালো লাগলো। বড় বললেন কেনো ? পড়তে গিয়ে তো চটজলদি শেষ হয়ে গেলো। এবার রবীন্দ্রনাথের বিলাত আগমনের প্রথম দিককার সেই ঘটনাটা মনে করিয়ে দেই- যুবক রবি বাবু কিংস ক্রস রেল স্টেশন থেকে বের হয়ে হেটে যাচ্ছেন। এক ইংরেজ মহিলা তার দুই পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাবার সময় এক পিচ্চি বলে উঠলো : মা দেখো দেখো একটা কালো লোক!
----------------------------------------------------------------------
আমার জীবন থেকে আধেক সময় যায় যে হয়ে চুরি
অবুঝ আমি তবু হাতের মুঠোয় কাব্য নিয়ে ঘুরি।
আমার জীবন থেকে আধেক সময় যায় যে হয়ে চুরি
অবুঝ আমি তবু হাতের মুঠোয় কব্য নিয়ে ঘুরি।
ধন্যবাদ রেজুয়ান---
ভাল থাকবেন
খুব ভালো লাগল লেখাটা, অনিকেত'দা।
আমিও কালো। যদিও এ নিয়ে এখন আর কিছু মনে করি না। তবে উচ্চতা কম হওয়ার কারণে প্রচুর কথা শুনতে হয়েছে। মাঝে মাঝে এখনও হয়। এ নিয়ে যে সামান্য হলেও মনে কোনো আফসোস নাই, সেই দাবী জোর করে করবোও না।
ভালো থাকবেন।
এইটা কি ঠিক হইল মিয়া? আমি যেন তোমার ফটুক দেখি নাই!!
এনিহু, থ্যাঙ্কু বস---আর ঈদ মোবারক!!
হা হা হা। ওইগুলা তো ফটোশপের কারসাজি
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা।
হাহাহাহাহাহা! ভালো লাগলো!
থায়েক বাই, আমাদের পরিবারে আমাকে পেঁচা/পেঁচী ডাকা হয়! মা খুব সুন্দরী, আমি পেয়েছি বাবার 'খারাপ' জিন গুলোই শুধু! খালাতো মামাতো ভাই-বোনগুলো একেকজন হুর/হুরা আর আমার মায়ের মেয়েটা কিনা হলো একটা পেঁচা! কতবার শুনেছি! এখনও শুনি!
আমার ছেলেবন্ধু আবার ছিলো বেশ ফর্সা, সবার ভাষায় সুন্দর ছেলে। অনেকের কাছেই শুনেছি এই কথাটা যে এই ছেলে আমাকে কেন পছন্দ করলো, অথবা আমার নিজের কিছু বন্ধুই আমাকে বলেছে যে নিজে বড় বড় কথা বললেও বেছে নেবার সময় আমিতো সুন্দর [পড়ুন ফর্সা!] ছেলেই বাছলাম! আমি খুব কঠিন মানুষ, তারপরেও যখন আমাকে গায়ের রঙ এ বা চেহারায় বিচার করা হয় তখন কষ্ট না পেলেও রাগ হয়, মনে হয় আবালটারে ধরে একচামচ গু খাওয়ায় দেই! কোনওদিন হয়তোবা এটা করেও বসবো!
----------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
বিদেশীদের সমস্যা খুব সামান্য... তারা হয় সাদা নয় কালো...
আমাদের সমস্যা বিরাট... আমরা না সাদা না কালো... আমাদের ভেরিয়েশন বেশি... ফর্সা, শ্যামলা, কালো, উজ্জ্বল শ্যামলা, হালকা ফর্সা... এইসব নানাবিধ জটিলতায় আমরা থাকি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এইটা সেরা মন্তব্য। ঝাতি যে কনফিউজড সে কি অমনি?
লেখাটা মাত্র পড়লাম। সতর্কীকরণ পড়ে বিশাল আশা নিয়ে পড়তে বসলাম। এত তাড়াতাড়ি কেন শেষ হল?
মনে পড়ছে, স্কুলে তোমাকে যখন সুন্দর বলতাম, তুমি মৃদু একপেশে হাসি হেসে আত্ম-উপহাসের সুরে বলতে "হুহ, পাতিলের তলা" । তোমার সুন্দর চেহারার পরেও কৈশোরে রং নিয়ে তোমার "কষ্ট" কিছুটা বিলাসিতা লাগলো । তবে একদম ছোটবেলাকার কথা বুঝি, তখনো তুমি হয়তোবা চেহারা সচেতন হওনি। ভেবে দেখ, আমার এই চেহারার উপর আমার "স্বাস্থ্য" নিয়ে কী বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে ।
পুনশ্চঃ ছেলে মেয়ে দু'জনের জন্যই আজান দিতে হয় । আর সঠিক বানানটা কি "হীনমন্যতা"?
উরে দুষ্টু,
তোমার নিজের লেখা কই?????
তোমার একটা লেখা চাইইইইই-----
বানানটা হীনমন্যতা-ই হবে।
---যাক একটা জিনিস তাহলে জানা গেল।
ভাল থেকো বস---সব সময়!
আমার ফেয়ার এন্ড লাভলীর ডিব্বাপাহাড় থেকে দু'একটা পাঠাবো?
আরেকটা প্রশ্ন আছে (ঝাতি বা জনগণের যে কেউ নিদান জানাতে পারেন, কৃতজ্ঞ থাকবো) - পাতিলের তলার মতো রঙ্ই শুধু ব্যাপার্না, বিরিয়ানীর পাতিলের মতো বিশাল গোলাকার একটা মুখ (মানে মুখমন্ডল) থাকলে তাদের উপায় কী???
লেখা যথারীতি ভালো লাগলো
দু'একটায় লাভ হবে না--
এইসব পাক্কা রঙ মশাই----
পেয়ারের ফেয়ার এন্ড লাভলী'র গুদাম উজাড় হয়ে যাবে মাগার রঙের ইদিক সিদিক হবে না -- হু হু বাবা---ভেবেছ কী??
অনিকেত ভাই,
আমি নিজেও বেশ কালো। আমার ছবি দেখেও বোঝেন আশা করি। আপনার লেখাটা দারুণ লাগলো।
তবে ছোটবেলায় এ নিয়ে কিছু ঠাট্টা-তামাশা শুনলেও... আমার এ নিয়ে তেমন আপত্তি নেই আর কি। আর একটা বয়সের পর কোন সমস্যাও হয়নি।
আপনি ভুল বলেননি যে এটা এক প্রকারের ক্যাজুয়াল রেসিজম। আমি জিনিসটাকে সেভাবেই দেখি। সমস্যা হল, বাই দ্যা টাইম ইউ গ্রো আপ, এগুলি নিজেরে একা একাই কিউর করে ফেলে। মানুষ মোটামুটি বুঝে ফেলে, যারা বুঝার।
যাহোক, ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ সিরাত
ভাল থেকো---
অনিকেতদা, দেখা হলে পদধূলি দেবেন, শুধুমাত্র এই লেখাটার জন্য।
এদেশে কৃষ্ণকলি কন্যার মাও পুত্রবধূ হিসেবে ফর্সা মেয়েই খোঁজেন। কখন, কোন রন্ধ্রপথে বর্ণবিদ্বেষ আমাদের চরিত্রে প্রবেশ করে জানিনা।
তবে সৌভাগ্যক্রমে শ্যামবর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বর্ণবাদ কখনো স্পর্শ করতে পারেনি আমাকে। আশৈশব বর্ণবিদ্বেষীদের সসম্ভ্রমে উপেক্ষা করতে শিখেছি। তাতে সমস্যা যা হয়েছে তা হলো কাউকে তার গায়ের রঙ দিয়ে সনাক্ত করার ক্ষমতাটুকু হারিয়েছি। যেমনঃ আমাকে যদি বলা হয় "অমুক" কে চেনো? ঐ যে ফর্সা করে ... আমি তখন বিপদে পড়ে যাই। কারণ আমি একাধিক "অমুক" কে চিনি, তাদের মধ্যে কে ফর্সা, কে শ্যামলা আর কোনজন ঘোর কৃষ্ণবর্ণ আমি খেয়াল করে দেখিনি। আমার এই বর্ণান্ধতা হয়তো বর্ণবাদেরই প্রতিবাদ।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আমার ঝাপসা জ্ঞানে যদ্দুর জানি আর্যরা এদেশে আসার পর বা ওই সময়টায় গাত্র বর্ণের ওপর নির্ভর করে জাতিভেদ প্রথা শুরু করেছিল। তারা নিজেরা উজ্জ্বল দেহত্বকের অধিকারি ছিল এবং সমাজের সুন্দরী রমনিদের বিয়ে করত যাতে তাদের বংশধরেরাও দিব্যকান্তি হয়। এই জন্যেই ব্রাহ্মণরা সাধারণত সেই সমাজে ফর্সা ত্বকের মালিক ছিল। এখান থেকেই বোধ হয় ওই ফর্সা ত্বক বন্দনা এবং তার প্রতি সমীহের ভাবটা পরম্পরা হিসেবে রক্তের ভেতর ঢুকে গেছে।
লেখার ট্যাগে রম্য উল্লেখ করা পছন্দ হয়নি। কারো দৈহিক বৈশিষ্ট নিয়ে রস করা আমার হাসি আনেনা, আনেনি কখনও। তবে লেখা বরাবরের মতই অসাধারন অসাধারন ভালো।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এই লেখাটা আগে পড়িনি মনে হয়...
বস, আমাদের বর্ণবাদ কিন্তু অনেক বর্ণবাদের চেয়ে আলাদা। অধিকাংশ বর্ণবাদেই নিজেদেরকে সুপিরিয়র আর অন্য ধরনকে ইনফিরিয়র মনে করা হয়, আমরা উলটো নিজেদের ইনফিরিয়র আর অন্যদের সুপিরিয়র বলে নিজেদের উপরেই বর্ণবাদী আচরণ চালাই। বাসার সামনে ঝুলাই ফর ফরেনার্স ওনলি, ইউরোপীয়ান আমেরিকান দেখলে পারলে তাদের পায়ে মাথা ঠুকে কপালটা একটু খুলে নেই, এবং নিজের গায়ের রঙ যা-ই হোক ফরসা+সুন্দরী মেয়ে খুঁজি!
আমাদেরটা তো খালি গায়ের রঙ না, কোন জেলায় আদি নিবাস ছিলো, কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে, ঢাকার মধ্যের নাকি বাইরের, নিজে যা-ই হোক বাপ স্বাধীনতাবিরোধী কিনা, চৌদ্দ পুরুষে কেউ মাছের ব্যবসা করতো নাকি নামের পিছে খানবাহাদুর রায়বাহাদুর মার্কা পদবী ছিলো আরো কত কী দিয়ে বিচার হয়। রেসিজমে আমাদের চেয়ে উপরে কি কেউ যেতে পারবে কোনদিন?
একবার এক পারিবারিক আড্ডায় এক পিচ্চি কাজিন (কেবল কথা বলতে শিখেছে) জিজ্ঞেস করে বসলো মা'কে "আম্মু এই আপুটা এতো কালো কেন? " । ঘর ভর্তি লোকজন কথা বলছিল, হঠাৎ সবাই চুপ করে গেল, পিচ্চির মা পিচ্চিকে বলল "এমন বলেনা মা" ............
আর আমি
কালো বলে কখনও হীনমন্যতায় ভুগিনি, কিন্তু ওইদিন কেন জানিনা চোখে পানি চলে এসেছিল
নতুন মন্তব্য করুন