মিতা হক আমার প্রিয় শিল্পী নন। প্রিয় বক্তা তো মোটেই নন। তার গাওয়া রবীন্দ্র সঙ্গীত আমার কোন একটা কারণে ভাল লাগে না ( আসলে কারণটা আমি জানি---তার গাওয়ার ভঙ্গীর মাঝে আমি কেন জানি তেমন গভীরতা খুঁজে পাই না--যেটা আমি ইফফাত আরা, পাপিয়া সারোয়ার প্রমুখদের গলায় পাই--একেবারেই ব্যক্তিগত অনুধাবন)। মিতা হক বেশ আগে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাম্প্রতিক দশা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তার রবীন্দ্র-মৌলবাদীত্বের স্বরূপ উন্মোচিত করেছিলেন (তার সেই সুবিখ্যাত-- "মেয়েটার মাঝে-- একটা Appeal আছে"-- উক্তিটি স্মর্তব্য)।
সম্প্রতি আবার দেখলাম তিনি বিতর্কে জড়িয়েছেন। তিনি নাকি বলেছেন "যারা মাথায় ঘোমটা দেয় তারা আর যাই হোক বাঙালি হতে পারেনা"। মজার ব্যাপার হল, যে আলোচনা অনুষ্ঠানে কথাটি বলেছেন, সেইটির ভিডিও ক্লিপ দেখে কোথাও কিন্তু তাকে ঠিক এই কথাটি বলতে শুনলাম না। এইদিকে আমাদের ছাগুকূলের ম্যাতকারে মিতা হকের চৌদ্দ গুষ্ঠির সৎকার করা হয়ে যাচ্ছে!!
মনে হচ্ছে আবারো সেই 'কান নিয়েছে চিলে"। আমি ঐ ভিডিও ক্লিপ দেখে যা বুঝলাম তা হল মিতা হক এই ক'টি কথা বলতে চেয়েছেনঃ
১) সবার আগে আমরা বাঙালি
২) আমরা এক রকমের আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছি
৩) যেখানেই জনসমাগম একটু বেশি হয় (রাস্তাঘাটে, হাসপাতালে, ওয়েটিং রুমে) সেখানে অধিকাংশ মেয়েরাই 'শুধু এইটুকু মুখ' দেখানো পোষাক পরে আছে।
৪) আমাদের একটা 'কমন' পরিচয় আছে--জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে--সেটা হল আমরা বাঙালি।
৫) বর্তমান সরকার 'অসাম্প্রদায়িক'--তাই তার সমর্থন রয়েছে এদের জন্যে
আমি তার ১ নং পয়েন্টের সাথে একমত। আমি জানি তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পয়েন্টেরও সত্যতা রয়েছে। আমি নিজে জানি যে আমার অনেক আত্মীয়া যারা এক সময় 'স্বাভাবিক' পোষাক পরেছেন আশি-নব্বই এর দশকে, তারা এখন হঠাৎ করেই মাথায় কাপড়, হিজাব দেয়া শুরু করেছেন। ফেবুতে তাদের ছবি দেখলে ধাক্কার মত লাগে বুকে!! একি! এদের এই অবস্থা হল কেন? উত্তর খুব সহজ। নব্বই দশকের শেষের দিক থেকেই আমাদের দেশে ইসলামী মৌলবাদীদের প্রচার প্রসার লক্ষ্য করার মত। তাদের প্রচার ও প্রসারের সাথে সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকে বোরকা আর হিজাবের সংখ্যা। ২০০০ সাল থেকে আমি দেশের বাইরে থাকি। ২০০৩ সালে আমি যখন দেশে ফিরি তখন রাস্তাঘাটে বোরকা-হিজাবওয়ালিদের ঘনঘটা দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। ২০০৭ এ যখন আবার যাই, সেই বিস্ময় ততদিনে আতঙ্কে রূপ নিয়েছিল। আমার মত যারা অনেক দিন পর পর দেশে গিয়েছেন---আমি নিশ্চিত তাদের চোখে এই 'রূপান্তর'-টা ধরা পড়েছে।
মিতা হক বলেছেন যারা এইরকম পোষাক পরেন তারা আর যাই হোক বাঙালী নন---তিনি কোথাও পরিষ্কার করে বলেন নি যে মাথায় ঘোমটা দিলে অবাঙালী হবে। বরং বোরকা/হিজাব ওয়ালীদের প্রতিই তার ইঙ্গিত ছিল।
বাংলাদেশের মিশ্র সংস্কৃতির পরিমন্ডলে নানান ধর্ম,বর্ণ,কৃষ্টির মিশ্রন হয়েছে। আমাদের জাতীয় জীবনে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা আমাদের সংবিধানসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে মূল প্রভাবক হয়ে কাজ করেছে। কিন্তু তার মানে এই না যে আমরা আমাদের বাঙ্গালিত্ব বিসর্জন দিয়েছি। আমি এই কথাটা ধ্রুবভাবে বিশ্বাস করি যে, সবার প্রথমে আমরা বাঙালি। তারপরে আমরা মুসলিম,হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রীষ্টান ও অন্যান্য কিছু। ১৯৭১ এ আমরা প্রমাণ করেছিলাম ধর্মের শক্তির চেয়ে আমাদের বাঙালিত্বের শক্তি বেশি ছিল। আমরা পৃথিবীর সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম যে ধর্মই শেষ কথা নয়--আবহমান কাল ধরে যে মাটির সুধারসে সিঞ্চিত হয়ে আমাদের বেড়ে ওঠা সে সংস্কৃতির মূল আমাদের অন্তরের গহীনে প্রোথিত।
একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা এই কথাটা মনে রেখেছে।
কিন্তু আমরা?
আমরা ভুলে গিয়েছি---বেমালুম।
আর তাই এখন পথঘাট ছেয়ে যায় বোরকা আর হিজাবে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল, যারা মুক্তিযুদ্ধের মূল চালিকা শক্তি হয়েছিল--- সে দলের প্রধাণারও মনে হয়, মাথায় হিজাব না পরলে আর নামাযী ভাব না ধরলে ক্ষমতায় ফেরা যাবে না। হিজাব যে তার গত নির্বাচনে একটা লাগসই নির্বাচনী চাল ছিল সেইটা এখন তার মাথায় হিজাবের অনুপস্থিতি দেখেই বোঝা যায়। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। হয়ত হিজাব আবার বেরুবে তার।
কিন্তু যে কথাটা বলার জন্যে এত কথা সেটা হল, মিতা হক আপনার এই কথাটার সাথে আমি একমত---আমরা সবার আগে বাঙালি আর অনাদি কাল হতে বাঙ্গালির যে স্বাভাবিক পোষাক সেখানে হিজাবওয়ালি, বোরকাওয়ালীদের আনাগোনা একটি আরোপিত অনুষঙ্গ। এবং আরোপিত বলেই আমাদের সাবধান হবার সময় হয়েছে! পোষাকের এই পরিবর্তন আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন নির্দেশ করে। অনেকেই হয়ত বলবেন কেবল হিজাবওয়ালিদের পেছনে লাগলে হবে? মেয়েরা আরো যে পাশ্চাত্যমুখী বেশবাস পরিধান করছে তার বেলা? আমার উত্তর সেখানেও একই। আমরা সবার আগে বাঙালি এবং আমাদেরকে আমাদের সংস্কৃতির প্রতি স্বনিষ্ঠ হতে হবে।
মিতা হকের অন্য যেকোন মতামতের সাথে আমার বিরোধ থাকতে পারে, মতের অমিল থাকতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি এইখানে মিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আশংকার কথা উল্লেখ করেছেন। এই সময়োচিত কাজটি করার জন্যে তাকে সাধুবাদ দিচ্ছি।
আমি মনে করি আমাদের সবারই বিষয়টা আরো একটু তলিয়ে দেখার সময় হয়েছে।
মূল ভিডিওটি [url= http://www.priyo.com/2013/08/11/26660.html]এইখানে[/url] আছে। আগ্রহীরা দেখে নিতে পারেন। কেউ কেউ আমাকে জানিয়েছেন যে ভিডিওটি এডিট করা। আমি সে নিয়ে নিশ্চিত হতে পারিনি। ঠিক একই বিষয় নিয়ে অদিতি ফাল্গুনীও একটি লেখা লিখেছেন।
মন্তব্য
বলেন মাশাল্লাহ
-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------
এখন আর কাউকে বলতে শুনবো না , আমি মুসলমান বাঙ্গালী বা বাঙ্গালী মুসলমান ।
সবাই বলবে আমি বাঙ্গালী । মৌখিক ভাবে বাঙ্গালীর সংখ্যা কিছু বাড়ল । মিতা হকের বক্তব্য পরবর্তী ধনাত্মক দিক এটাই ।
ধর্মীয় আগ্রাসনের শিকার যারা, যাদের অন্তরে মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি তাদের বাঙ্গালী-ত্ব অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ । ইনশাআল্লাহ্ - আলহামদুলিল্লাহ্-র মাধ্যমে যারা মুখের ভাষায় পরিবর্তন আনতে চায় তাদের বাঙ্গালী-ত্ব বেশীদিন টেকার নয় ।
কর্মে যাদের পরকালের লোভ-লালসা, মনোভাবে যারা জিহাদি...জাতিচ্যুত তারা অনেক আগেই ।
আপছুস, ব্যাংক আর ইসলামী ব্যাংক, জীবন বীমা আর ইসলামী জীবন বীমার পার্থক্য যারা বুঝে সজাতির পরিবর্তিত রূপ তারা বুঝে না।
মিতা হকের যে কথাগুলোতে ছাগুকেল্লা আর বাংলাদেশ ছাগীয়তাবাদী দলের পাছায় আগুন ধরে গেল- সেটা হল
তারপর ছাগুকেল্লাতে ছাগুদের স্বভাবসুলভ আচরন যেটা তার সবক্ষেত্রেই করে থাকে, মিতা হকের ভিডিওর কথাগুলো মাঝখান থেকে কেটে কেটে একটা ফরম্যাট দাড়া করায়, আর সেই ভিডিও জামাতী, হেফাজতি, বিএনপির সাথে সাথে আওয়ামীলীগের কিছু ধর্মান্ধ ছুপা ছাগু সুর মিলায়, আর কাঁধে কাঁধে মিলায়ে অপপ্রচার করতে থাকে।
বরাবরের মতই এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম । উপভোগ করেছি নিঃসন্দেহে । লেখকের জন্য শুভ কামনা ।
আফরিন আহমেদ
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় লেখা, এদানিং বাঙালীর চেয়ে মুসলমান পরিচয় বড় হয় যাচ্ছে। আমার নিজের খুব ক্লোজ স্কুল জীবনের দুইজন বান্ধবী আচমকা হিজাব পরা শুরু করেছে যদিও তারা আগে কখনোই হিজাবের প্রতি তেমন উৎসাহী ছিল না। রাস্তাঘাটেও এখন হিজাব পরা মেয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। আগে জানতাম শিক্ষা মানুষকে মুক্ত করে ক্ষুদ্রতা থেকে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শিক্ষা মানুষকে আরঅ বেশি নির্বোধ করে।
ইসরাত
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হিজাব ধরেছে এমন ২-৩ জনকে প্রশ্ন করেছিলাম যে কেন??? উত্তর পেলাম মোটামুটি এমন "কেন হিজাব কি খারাপ??", "মানুষ যেভাবে বিশ্রী ভাবে তাকাতো, এখন আর সেটার মুখোমুখি হতে হয়না", "টিজ করেনা এখন আর কেউ"।
টিজ বা কটুক্তি থেকে নিরাপত্তা, এর সাথে এক্টু সওয়াব কামাইও হল এটাই মনে হয় কারণ অনেকের জন্য। এসব মেয়েরা যে প্রেম করেনা তা না, প্রেম করে, ঘনিষ্ঠভাবে মেশমেশিও করে। সবচেয়ে মজা পেয়েছিলাম আমার বন্ধুর প্রেমিকার উত্তরে, সে বোরকা পরত শুধু কলেজে যাওয়া আসার সময়, কারণ হচ্ছে আর কেউ যাতে দেখে বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে না পারে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
লিখাটার প্রতি সন্মান রেখেই বলছি,হিজাব,বোরকা আর ঘোমটা কি একই বিষয়? ঘোমটার সাথে বাঙ্গালিত্তের সম্পর্কটাই বুঝলাম না।আমাদের উপমহাদেশে অন্য জাতি এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝেও ঘোমটা দেয়ার রীতি
দেখা যায়। আমারত মনে হয় এটা পরিধেয় বস্রের{শাড়ি, ওড়না্////} পরিধানের সাথে সম্পর্কিত ।মিতা হকদের অচিন্তা প্রসূত মন্তব্যগুলো শুধু অযাচিত বিতর্কের অবতারনাই করে না,"তারেক মুনাওয়ার"দের বিষময় রসদের মধ্যে আরও কিছু রস যুক্ত করে।
শাকিল অরিত
মিতা হকের এইবারের সমস্যা, সহজ কথা অনাবশ্যকভাবে বেশি সহজ করে বলা। একটু বুঝিয়ে বলা দরকার ছিল। সমস্যা হইল মৌলবাদী মানুষ তো, বুঝায়ে বলা তাদের পক্ষে একটু কঠিন।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় হিজাব পড়ে বা জিন্স-টি-শার্ট পড়ে, সেটা তার ব্যাপার। এর কোনটা নিয়েই তো কারো আপত্তি থাকা উচিত না। ব্যক্তি স্বাধীনতা সবারই আছে, সুতরাং হিজাব পড়লেই বাঙালি কালচার নষ্ট হয়ে গেলো বলে যারা কান্নাকাটি করছেন, তারাও মৌলবাদী ছাড়া আর কিছু না। নিরপেক্ষ হলে ঠিকমতই হওয়া উচিত, নিজের সুবিধামত না।
বাংলা নিউজ ২৪ থেকে মিতা হককে প্রশ্ন- "হিজাব পরলে যদি আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি হয়। তাহলে যে মেয়েরা জিন্স, শার্ট, টি শার্ট, স্কার্ট পরে তাদের কী বলবেন আপনি?"
মিতা হকঃ এটাকে আমি ফ্যাশন বলবো। ফ্যাশনের অংশ হিসাবে মেয়েরা এটা পরছে।
হিজাব বোরকা পরা যাবে না, কারণ ওগুলো আরব পোশাক। জিন্স, শার্ট, টি শার্ট, স্কার্ট পরা যাবে কারণ এগুলো ফ্যাশন। এটা কি মিতা হকের হাস্যকর মন্তব্য না? হিজাব, বোরকা , জিন্স, শার্ট, টি শার্ট, স্কার্ট সবই তো বিদেশী পোশাক। হিজাবে বোরকায় আপত্তি, জিন্স, শার্ট, টি শার্ট, স্কার্ট এসবে ছাড় কেন? নাকি গন সমালোচনা হবে এই ভয়ে জিন্স, শার্ট, টি শার্ট, স্কার্ট ছাড় পেল?
@মফিজ,
হিজাব বা জিন্স-টি-শার্ট কিছুই নারীরা নিয়ে জন্মান না।সমাজ তাঁদের হাতে তুলে দেয়।নিজের ইচ্ছায় ধারণাটিও সমাজ ও পরিবার প্রভাবিত।ভারতীয় চ্যানেল ও বঙ্গীয় ওয়াজ প্রভাবিত-ও বটে।
কান্নাকাটি কে করলো ভাই?আর,মৌলবাদীর সংজ্ঞা জানেন তো ?
জ্বী ভাই, মৌলবাদের সংজ্ঞা আপনিই বলেন, শুইনা ধন্য হই। হিজাব বাদ দিই, বাঙালি পুরুষ কি পড়ে, আপনি কি পড়েন, শার্ট-প্যান্ট তো, নাকি? সেটা কিসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে? কবে থেকে শার্ট-প্যান্ট বাঙালি পোষাক? বাঙালি পুরুষ কি তাহলে আর বাঙালি নেই? নাকি কালচার বাচাতে ধূতি পড়া শুরু করবেন? বাঙালি মহিলা ব্হু আগে থেকে বোরখা পড়ে, আর মাথায় ঘোমটা টানার ইতিহাস আরো কয়েকশ বছর আগের? বাঙালিত্ব আসলে তাহলে কোনটা? কেউ যদি শাড়ির সাথে হিজাব পড়ে, তাতে তার বাঙালিত্ব ধ্বংসের মুখে? কে বাঙালি আর কে বাঙালি না, এটা বলার অধিকার কার? কারো যদি মনে হয় হিজাব পড়লে সওয়াব বেশি হবে, তাতে সমস্যা কি? হিজাব পড়লেই কেউ পাকিস্তানের বা আরবের হয়ে যাবে, এরকম ধারণা কারো থাকলে সে গাছ বেকুব ছাড়া আর কিছু না? (আবার গাছ বেকুবের সংজ্ঞা জানতে চাইয়েন না) এসব স্টুপিড বিতর্ক তুলে শুধু শুধু সাধারণ ধার্মিক মুসলমানকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়, আর কিছু না। কবে থেকে মুসলমানিত্ব আর বাঙালিত্ব সাংঘর্ষিক হলো? যারা এই বিতর্ক তুলে, তাদের সাথে আর ছাগুদের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না? নিচে নজরুল ইসলামের কমেন্ট দেখেন, আসল ব্যাপার হল মানসিকতায়, পোষাকে না।
@ মফিজ,
মৌলবাদের সংজ্ঞা আমার থেকে শুনবেন কেন ,ভাই?খাঁটি সংজ্ঞা শুইনা-ই ধন্য হন।
http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A7%8C%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6
http://en.wikipedia.org/wiki/Fundamentalism
আমি যতটুকু বুঝলাম, মৌলবাদ ধর্মীয় বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট।উইকি বলছে-
Fundamentalism is the demand for a strict adherence to orthodox theological doctrines usually understood as a reaction against Modernist theology, primarily to promote continuity and accuracy।
বাকীটা আপনে যা কন,ভাই।
সচলায়তনে-ই হিজাব বিষয়ে তথ্যসমৃদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসহ একটি লেখা রয়েছে,পড়ে দেখতে পারেন।
http://www.sachalayatan.com/mahbub/40927
আমি শার্ট-প্যান্ট-ই পরিধান করি ,ভাই।তুন্দ্রা অঞ্চলে জন্মালে ভালুকের চামড়া পরিধান করতাম,আরবে জন্মালে জোব্বা।অষ্টাদশ শতকে জন্মালে ধূতি পরিধান করতাম,গুহাযুগে জন্মালে নেংটি।প্রভাবক-যেমনটা আগেই বলেছি,পরিবার ও সমাজ।
এককথায় সবার।আপনার,আমার,মিতা হকের।মতের অমিল হলে মানুষকে গাছ বেকুব বলার অধিকার অবশ্য সংরক্ষিত,আমার মত তুচ্ছের জন্য নয়।হয়তো জ্ঞানীগুণীদের জন্য।
জাতিগত পরিচয় আর সাম্প্রদায়িক পরিচয় সংজ্ঞাগতভাবেই আলাদা,সাংঘর্ষিক হয় যখন পারষ্পরিক স্বার্থের ঐক্য থাকেনা।
দ্বিমত নেই,বলতে চেয়েছিলাম মানসিকতা গড়ে ওঠার প্রভাবকগুলো নিয়ে-বোঝাতে পারিনি হয়তো।
আর-ও কিছু বলার ইচ্ছে ছিলো ,ভাই।মুর্শেদ ভাইয়ের পোস্টটা মন্তব্যসহ আজ আবার পড়লাম।(উপরে দেয়া লিঙ্ক)
ওখানে অনেক কিছু-ই স্পষ্ট হয়েছে।পড়ে নিন,কাজে লাগবে।
ভালো থাকবেন।
আমার অবশ্য মিতা হকের কথা ভালো লাগে নাই। যার যেমন খুশি পোষাক পড়তেই পারে, তাই বলে কি বাঙ্গালিত্ব খারিজ হয়ে যাবে? কেউ তো দাবি করে নাই, হিজাব বাঙ্গালি পোষাক।
আমি ২৪ ঘন্টা শার্ট-প্যান্ট-ট্রাউজার-টিশার্ট পড়ে ঘুরি বলে কি আমি বাঙ্গালি না?
আমার মনে হয় সবই টাকার খেলা। যতই মানুষের কাছে টাকা পয়সা আসছে ততই মানুষের মনে ধর্ম চিন্তা বেড়ে উঠছে। তারা ধারনা করে বসে আছে এইগুলা হল আল্লাহর বরকত। মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তের মধ্যেও সরাসরি বোরকা না হলেও, ওই টাইপএর পোষাক এখন বহুল জনপ্রিয়। গরিব শ্রেনীর কথা বাদই দিলাম। মানুষ কাছে যত ধন সম্পদ আসছে ততই তারা ধর্মের পথে পা বাড়াচ্ছে। অথচ পশ্চিমা বিশ্বে হয়েছিল এর উল্টোটা। তারা মুক্ত চিন্তার পথে অগ্রসর হয়েছিল (তর্কসাপেক্ষ)।
বাঙালি হওয়ার জন্য সবার আগে প্রয়োজন একটা বাঙালি মানসিকতার। যেটার অভাব এখন ভয়াবহভাবে চোখে পড়ে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
যারা দেশে ছিলেন তাদেরও পড়েছে।
এর কারন সম্পর্কে আমার একটা অনুমান/পর্যবেক্ষণ/ধারণা আছে। আপনি তলিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছেন, আমার সীমিত ক্ষমতায় আমি সেই চেষ্টাটাই করলাম। একটু লম্বা হয়ে গেল মন্তব্যটা, আশা করি কিছু মনে করবেন না। আর আপনার মতামত জানতে পারলে ভাল হয়।
আপনি বলেছেন "নব্বই দশকের শেষের দিক থেকেই আমাদের দেশে ইসলামী মৌলবাদীদের প্রচার প্রসার লক্ষ্য করার মত" -- আমার মনে হয় না শুধু এটাই কারন, যদিও মৌলবাদ হয়তো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে। প্রথমত হিজাব/বুরকা যে গত দশকের শুরু থেকে শুধু বাংলাদেশেই হঠাৎ করে ব্যাপক ভাবে বেড়ে গেছে তাই না, সম্ভবত এই প্রায়-বিস্ফোরণটা (?) বিশ্বব্যাপীই কমবেশী হয়েছে। আমি পশ্চিমা দেশে থাকি না, কিন্তু টিভি দেখে যা মনে হয় (ভুল হতে পারে তাই) ইউরোপ-আম্রিকায় বসবাসকারী মুসলিম কমিউনিটিগুলির মধ্যেও এটা হঠাৎ করে বেশ বেড়ে গেছে - গত দশকের শুরু থেকেই।
আমার ধারণা এই ফেনোমেনাটার (এই আকস্মিক ব্যাপক বিস্তৃতি) সূচনা ৯/১১ পরবর্তী বিশ্বব্যাপী মার্কিন "ওয়ার অন টেরর" এর সময় থেকে এবং অনেকটাই তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে। "ওয়ার অন টেরর" তো শুধুই কয়েকটা সশস্ত্র ফিজিকাল যুদ্ধ ছিল না, এটা বিশ্বব্যাপীই সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতি-মিডিয়া সবকিছুকেই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, মানুষের চেতনায় বিশাল ও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যেন ৯/১১-এর ঘটনার জন্য একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে সারা পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানই এর জন্য দায়ী এবং সেজন্যে শাস্তিযোগ্য ('উইথ আস অর এগেইন্সট আস্' স্মর্তব্য)। মুসলমানদের পার্সেপশনে তাদের অন্যায্যভাবে সামষ্টিকভাবে সীমাহীন ডেমোনাইজ করা হয়েছে। এমনকি দাঁড়ি-টুপি-পাগড়ি-জোব্বা ইত্যাদি টেরোরিজমের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং সেই সাথে হিজাব-বুরকা তার সহযোগী। এরপরে শুরু হল ইরাক যুদ্ধ। বাগদাদে পড়া প্রতিটা বোমা যেন সে সময়ে পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বুকেই পড়েছিল - তাদের অনুভূতিতে। আমি কোন কিছু জাস্টিফাই বা বিরোধিতা করছি না - স্রেফ পার্সেপশনের কথা বলছি যতটুকু সেটা বুঝেছি। মুসলমানরা নিজেদের ব্যাপকভাবে আক্রান্ত ও কোনঠাসা ভাবতে শুরু করে। এমনটা বোধহয় তাদের ক্ষেত্রে অন্তত মানব-ইতিহাসে আর হয়নি। সম্ভবত ক্রুসেডের সময়েও না।
আর বলাই বাহুল্য, প্রবল ভাবে আক্রান্ত ও কোনঠাসা বা সেরকম পার্সেপশনে ভোগা জাতি/গোষ্ঠী/সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায়শই মৌলবাদী/জাতীয়তাবাদী/সংরক্ষণবাদী/সাম্প্রদায়িক/রেইসিস্ট ইত্যাদি ধরণের চেতনা/ভাবাদর্শ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। এটা দুনিয়াজুড়েই একটা ঐতিহাসিক ভাবে দৃশ্যমান ফেনোমেনন, শুধু মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য না। তাছাড়া, আরেকটা জিনিষ - কোন ব্যক্তি/গোষ্ঠী/জাতি/সম্প্রদায় যখন মনে করে তাদের আত্নপরিচয় গুরুতর ভাবে আক্রান্ত, কোনঠাসা বা হুমকির সম্মুখীন তখন তারা প্রায়ই সেটা আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরে, অনেক সময় ইরর্যাশনাল ভাবেই। এবং এরকম ক্ষেত্রে তারা তাদের পরিচয়ের সেই ডাইমেনশনটাকেই বেশি করে আঁকড়ে ধরে, হাইলাইট করে বা আশ্রয় নেয় - যেটা তাদের সঙ্ঘবদ্ধতার জোর বা অন্তত সেই অনুভূতি দেয়, এমনকি 'স্বাভাবিক' সময়ে তারা যদি সেই ডাইমেনশনটাকে ততটা পাত্তা বা গুরুত্ব না-ও দিয়ে থাকে আগে। কারন, আমার ধারণা - তারা এসময় পরিচয়, বিশ্বাস, ইত্যাদির আড়ালে আসলে সঙ্ঘবদ্ধতা, এবং সঙ্ঘবদ্ধতার আড়ালে নিরাপত্তা খুঁজে, সেই সাথে শক্তি ও আহত আত্নমর্যাদাবোধের পুনরুদ্ধারও হয়তো। এই প্রতিক্রিয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত বা তাদের জন্য কল্যানকর - নিরপেক্ষ বিশ্লেষনে তা অবশ্যই প্রশ্নসাপেক্ষ, কিন্তু বাস্তবে এমনটাই হয় মনে হয়। এগুলি আসলে যতটা না আইডিওলজিকাল, তার চেয়ে অনেক বেশি সাইকোলজিকাল। মানবমনে এরকম প্রতিক্রিয়া অন্যান্য অনেক বিষয়েও হয়।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের ক্ষেত্রে 'বাঙালী' পরিচয় সেই 'সঙ্ঘবদ্ধতা'-র জোর বা জোরের অনুভূতিটা মনে হয় দেয় না। '৫২ ও '৭১ সত্ত্বেও। এই পরিচয় 'বোধ-টা সেভাবে সংখ্যাগুরুর মনে গড়ে উঠেনি বা দানা বাধেনি বোধহয়। বাঙালীত্বটা মনে হয় অধিকাংশের মনেই - ঐ যে - 'স্বাভাবিক' ভাবেই একটা ঢিলেঢালা, দৈনন্দিন, আটপৌরে, প্রায় আত্ন-অসচেতন সাংস্কৃতিক পরিচয় হিসেবেই রয়ে গেছে। কিন্তু যখনই তারা সঙ্ঘবদ্ধতার আশ্রয় নিতে চায় বা একটা ব্যক্তিগত/সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে নিজের বা নিজের পরিচয় বিষয়ে ফোর্সফুল স্টেটমেন্ট করতে চায় (মৌখিক বা প্রতীকি), তখন সেটাকে তারা আর যথেষ্ট ইফেক্টিভলি ও এ্যডিকুয়েটলি ফোর্সফুল, গভীরতাসম্পন্ন ও এ্যক্সেসিবল ইন্সট্রুমেন্ট বা মতাদর্শ হিসেবে পায় না (যদি না হয়তো সরাসরি বাঙালীত্বের উপরেই আঘাত আসে)। তখন পরিচয়ের মুসলিম ডাইমেনশনটাই তাকে সেই সুযোগটা করে দেয়, বিকল্পটা দেয়।
'পরিচয়' জিনিষটা আসলে তৈরি করতে হয়। এটা সত্যি সত্যি আসমান থেকে পড়ে না, মাটিতেও গজায় না। এটা একটা কৃত্রিম মনুষ্য নির্মান। ব্যক্তির হোক আর জাতির হোক। এটা স্ট্যাটিক বা চিরস্থায়ী কিছুও না। তাই এটাকে যেমন নির্মান করতে হয়, তেমনিই সঠিক ভাবে ফ্রেইম করতে হয়, নিরন্তর লালন করতে হয়, চর্চা করতে হয়, রক্ষা করতে হয়, পৃষ্ঠপোষনা-প্রচার-প্রসার করতে হয়। বৃক্ষকে যেমন আলো-বাতাস-সার দিয়ে লালন করতে হয়, বাঁচিয়ে রাখতে হয়। কিম্বা মানুষকেও। ৫২ বা ৭১-এর কথা বলে কান্নাকাটি বা দোষাদুষি করা আসলে নিরর্থক। ঐ লড়াইটা ভিন্ন মাত্রায় সব সময়ই চালাতে হবে। না চালালে প্রতিপক্ষরা চালাবে, প্রতিপক্ষ না চালালেও বাস্তবতা বদলাবে বাস্তবতার নিজস্ব টানাপোড়েনে। এটা এমন কিছু না যে বিগ-ব্যাঙের মত একবার কিছু একটা করে ছেড়ে দিলেই তা আপন শক্তিতে অনন্তকাল চলতে / প্রসারিত হতে থাকবে। গণতন্ত্রের মত, ইটার্নাল ভিজিলেন্স এবং ইটার্নাল নার্চারিং এখানেও লাগবে, নইলে কখন 'বিগ-ক্রাঞ্চ' শুরু হয়ে যাবে টেরও পাবেন না।
মুশকিল হল, গোষ্ঠীগত/সমষ্টিগত পরিচয়বোধের ক্ষেত্রে এই কাজগুলি প্রায় ব্যতিক্রমহীণ ভাবেই ঐ সমাজের শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত, প্রাগ্রসর ও আগ্রহী বা নেতৃস্থানীয় শ্রেণীর মানুষেরা করে থাকেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ (আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সহ) মনে হয় না প্রত্যক্ষ, প্রকট ও তাৎক্ষণিক বা বাস্তব সঙ্কটে না পড়া পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও এসব নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান বা মাতামাতি করেন - কেউ কার্যকরী ভাবে তাদের উদ্বুদ্ধ না করা পর্যন্ত অন্তত। এবং এজন্যে তাদের দোষ দেয়া যায় না। গত ৪২ বছরে আমাদের শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত বা তথাকথিত স্বঘোষিত প্রাগ্রসর বাঙালীত্বের ধ্বজাধারী মানুষেরা একাজে নিদারুন ভাবেই ব্যর্থ হয়েছেন। তারা হয় প্রয়োজন উপলব্ধি করেননি, দূরদর্শিতার অভাব হয়েছে, বিভিন্ন ধরণের সুবিধাবাদিতার আশ্রয় নিয়ে আপোষ করেছেন, ভয় খেয়ে চুপটি মেরেছেন, উন্নাসিকতার গজদন্ত-মিনারে স্বেচ্ছা-বন্দীত্ব গ্রহণ করে জনবিচ্ছিন্নতা অর্জন করেছেন আর যখন দয়া করে মর্ত্যধামে বাণী দেয়ার জন্য নেহাতই ক্ষণিকের জন্য নেমে এসেছেন তখন এতই কন্ডিসেন্ডিং বা খাঞ্জা খাঁ-মার্কা আচরণ করেছেন যে অনেক মানুষ তাদের গ্রহণ করতে পারেনি, অথবা/এবং তারা 'বাঙালীত্বের' কনসেপ্টটা একটা অন্তর্নিহিত 'সঙ্ঘবদ্ধতার' ফোর্সফুলনেস-সহ এ্যাডিকুএটলি, ইফেক্টিভলি এবং স্বাধীন, বর্তমান ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশের প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বজনবোধ্যভাবে ও 'জীবন্ত'-ভাবে ডিফাইন করতে পারেননি, ফ্রেম করতে পারেননি, ডেপ্থ দিতে পারেননি, এবং তা নিররন্তর চর্চা করতে ও করাতে পারেননি, ব্যাপক ভাবে সুলভ করতে পারেননি -- ইতিহাসের অপসৃয়মান দূরবর্তীতা, প্রতিপক্ষ আদর্শের বিরোধিতা, নতুন নতুন প্রজন্মের আগমন ও পুরাতনদের বিদায়, দেশ ও বিশ্ববাস্তবতা ও সংস্কৃতির অব্যাহত পরিবর্তন - এতসবের মুখে বাড়তে থাকা একটা বিরাট-সংখ্যক মানুষের কাছেই মনে হয় ক্রমাগত ইনএ্যাডিকুয়েট, ইনইফেক্টিভ, সুস্পষ্ট-প্রাসঙ্গিক-জোরালো-জীবন্ত ও সুলভ্য মতাদর্শিক ব্যাকআপ-বিহীণ কিছু বিচ্ছিন্ন রিচুয়াল ও প্রতীক ছাড়া। ফলে এগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট চেতনাগুলি এযুগের মানুষের মননের গভীরে প্রবেশ করে সেখানে আত্নস্থ বা অন্তঃস্থ হতে পারছে না। আর এর ফলেই ঐ বিকল্প ডাইমেনশনটা সেই শুন্যস্থান পূরণ করছে। ব্যক্তিগত, মানসিক বা জাতিগত সঙ্কটের সময় মানুষ যখন সঙ্ঘবদ্ধতার ছাতাতলে মানসিক আশ্রয়ের আকাঙ্ক্ষা করে (সচেতন বা অবচেতন যেকোন ভাবেই হতে পারে), তখন তারা তাই পরিচয়ের ঐ বিকল্প/সেকেণ্ডারি ডাইমেনশন আর তার প্রতীক বা রিচুয়ালগুলিকেই হাতের কাছে অনেক বেশি ফোর্সফুল, ইফেক্টিভ, সুবোধ্য ও সুলভ হিসেবে পায় অন্যকিছুর তুলনায়, বা তাদের কাছে সেরকমই প্রতিভাত হয়। এবং সেটাকেই তখন অবলম্বন করে। শাড়ি বা অন্যকিছুর বদলে হিজাব-বুরকার সাম্প্রতিক প্রাবল্য এর অন্যতম বহিঃপ্রকাশ বলে আমার মনে হয়। আরও জিনিষ আছে, সেগুলি আর উল্লেখ করলাম না। এটা আমার কাছে কেবল বিশুদ্ধ ধর্মীয় বিধান পালন কিম্বা মৌলবাদ নয়, বরং নানাবিধ নিরাপত্তাবোধহীণতা আর সঙ্কট থেকে জন্ম নেয়া সঙ্ঘবদ্ধতার নিরাপদ ঘেরাটোপে আশ্রয় নেয়ার আকাঙ্খা আর সেই আকাঙ্ঘার একটা বহিপ্রকাশ - এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে স্টেটমেন্ট - বলে মনে হয়। ৯/১১ পরবর্তী যুগে এ শতকের শুরু থেকে মনে হয় মৌলবাদীদের প্রচারণার সাথে কম্বিনেশনে এই ফ্যাক্টরটাও কাজ করছে। এই ফ্যাক্টরটা না থাকলে বা বাঙালিত্বপন্থীরা বাংলার মাঠটা ছেড়ে দিয়ে প্রায় ওয়াকওভার না দিলে ওদের কাজ এত সোজা হত না। মজার ব্যাপার হল, বাঙালিপন্থীদের যা-যা অর্জন ও বর্জন করা উচিত বললাম উপ্রে, মৌলবাদীরা নিজেরা কিন্তু ঠিক সেগুলিই করেছে (অন্যান্য অনেক কিছুর সাথে অবশ্যই। সেজন্যেই তারা সফল হচ্ছে। এর মোকাবেলা করতে হলে তাই, অন্যান্য অনেক কিছুর পাশাপাশি, মূল বাঙালি পরিচয় বা বাঙালিত্বের কনসেপ্টটাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে স্বাধীন, বর্তমান ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশের প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু ক্যাচফ্রেইজের বাইরে অন্য যেকোন বিকল্পের তুলনায় সুস্পষ্ট-প্রাসঙ্গিক-জোরালো-পরিপূর্ণ ও জীবন্তভাবে - এ্যাডিকুয়েটলি এবং ইফেক্টিভলি - ডিফাইন করতে হবে, ফ্রেম করতে হবে, এবং সর্বোপরি এই সংজ্ঞা ও উপলব্ধির মধ্যে আগে বলা ঐ মানসিক সঙ্ঘবদ্ধতাবোধের ফোর্সফুলনেসের ছাতাতলে আশ্রয়ের আশ্বাসটুকু এক্সক্লুসিভলি ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী-ভাবে (বিশেষ করে অন্য যেকোন সম্ভাব্য বিকল্পের বিপরীতে), কার্যকরী, অবিচ্ছেদ্য ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে ইঞ্জেক্ট বা ইনকরপোরেট করতে হবে। এবং এই বাঙালিয়ানার চর্চা-প্রচার-প্রসার আর তার সাথে জনমানুষের এক্সক্লুসিভ একাত্নতাবোধ রক্ষার প্রয়াস নিরন্তর জারি রাখতে হবে।
এইসবের অবর্তমানে আমি তাই আগ্রাসী বা প্রোসলেটাইজিং মনোবৃত্তি না থাকলে বিচ্ছিন্ন ভাবে বুরকা-হিজাবধারী নারীদের দোষ দেখি না তেমন (পুরুষবাদী সমাজে তারা আসলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষের প্রভাবেই এসব করেন), অস্বস্তি বা বিরক্ত বোধ করি হয়তো - উচ্চশিক্ষিত হলে। বরং এর পেছনে অন্যান্য ফ্যাক্টরের পাশাপাশি বাঙালিত্ব-বিরোধীদের সফলতা আর বাঙালিত্ববাদীদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করি।
===========================
ডিসক্লেইমারঃ উপ্রের মন্তব্যটা লিখে ফেলার পর আবার পড়তে গিয়ে নিজেই ভড়কে গেছি। ক্যাটক্যাটে ইঞ্জিরি শব্দে ভর্তি এই ফিলিবাস্টারিং মন্তব্যটা কারও পড়ার ধৈর্য হবে কিনা বা পড়ে অর্থহীণ প্রলাপ বা বাচালতা মনে হবে কিনা বুঝতে পারছি না এখন। যা বলতে চেয়েছি তা সহজ ভাষায় নিজের অভিজ্ঞতা থেকে উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করে বলতে গেলে এটা আরও অনেক বড় হয়ে যেত। ফলে সংক্ষেপ করতে গিয়ে প্রায় যেন ক্রিপ্টিক ভাষা আর শব্দচয়নের আশ্রয় নিতে হয়েছে। অন্তত আমার এখন ভয় হচ্ছে - অন্যদের কাছেও এটা হয় ক্রিপ্টিক, নয়তো বিশুদ্ধ প্রলাপ মনে হবে। যাজ্ঞে, অনেক কষ্ট করে লিখেছি যা পানিতে যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না কপালে গালি জুটলেও -- যা থাকে কপালে মনে করে তাই "সংরক্ষণ" বাটনটা টিপেই দিলাম!!!
****************************************
মন্তব্য পড়তে পারি নাই। তয় ডিসক্লেইমার টা পড়লাম।
ঐটুকু যে পড়তে পেরেছেন, স্রেফ সেজন্যেই আপনাকে এক বিশ্ব-ব্রম্মাণ্ড পরিমান ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা!
****************************************
হু... ডিস্ক্লেইমারের আগের লাইনটার সাথে একমত... বাকিগুলো আবার পড়ে আসি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আপনি ১ টা আওয়ামি ছাগু
"হিজাব পরলে যদি আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি হয়। তাহলে যে মেয়েরা জিন্স, শার্ট, টি শার্ট, স্কার্ট পরে তাদের কী বলবেন আপনি?"
দেশে বোরকা বেড়ে গেছে এই অবজারভেশনে আমি কখনো একমত হই নাই। উল্টো আমার অবজারভেশন বলে দেশে পর্দাপুশিদা কমেছে।
আমি আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মনে করতে পারি। সেইসময় রাস্তায় মেয়ে বলতে স্কুলে যাওয়ারা প্রধান ছিলো। মেয়েরা তখন অফিসে যেত না, বাজার করতো না। তারা ডাক্তারের কাছেও একা যেত না।
এখন,
রাস্তায় অর্ধেকের মতো নারী। এরা অফিসে যায়, কারখানায় কাজ করতে যায়, বাজার করতে যায়, ডাক্তার, ব্যাংক ইত্যাদি কাজে বের হয়। অর্থাত আগে যে অংশটা সারাদিন বাসায় কাটাতো তারা এখন বাইরে বের হয়। এদের অনেকে ঘোমটা পড়ে, হিজাব করে সত্য। তবে তারা বের হয়। যেটা আগে পর্দাপুশিদার ঠেলায় বেরই হতো না। এইটা একটা বিশাল অগ্রগতি যেটা আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। গ্রামের যে মেয়েরা আগে স্কুলে থাকতে বিয়ে করে গন্ডাগন্ডা বাচ্চা পালতো তারা এখন ঢাকায় কাজ করে। তারা হেটে অফিসে যায়, হেটে ফেরে। এরাও অধিকাংশ ঘোমটা করে। সালোয়ার কামিজের সাথে বড় একটা ওড়না পেচিয়ে মাথা ঢাকে এরা। এই বিশাল অংশটা অন্তপুর থেকে বের হয়ে এলো এটা গণনায় নেয়া উচিৎ। আগে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়েরা হাতে গোনা ছিলো। এখন মধ্যবিত্ত সব বাসার মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে, অনেকেই পড়া শেষে কাজে ঢোকে। এদের মধ্যে একটা হিজাবি অবশ্যই। তবে এই অংশটা এবং সাথে মেয়েদের একটা বিশাল অংশ কিন্তু আগে "ঘরে থাকতো"। এরা বের হয়েছে এবং আরো বের হবে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হুমম... একমত
তবে, যেভাবে চলছে শেষ লাইনের "আরো হবে" বলতে গলায় জোর থাকেনা আজকাল
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এইটা হওয়া ছাড়া গতি নাই। বাংলাদেশে নগরায়ন বেশ দ্রুতগতিতে হচ্ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ নগর ব্যতিত গ্রাম থাকবে না। নগরে বাস করলে জীবনযাত্রা খুব টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যায়। এই টানাপোড়েনের একটা দিক হলো পরিবারের সকলকে কোন না কোন ভাবে কন্ট্রিবিউট করতে হয়। এই কারণে অনেক মেয়ে এখন কাজ করে। পরিবারের সাপোর্ট হয়। নিজেরও হাতে কিছু অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রন আসে। ঢাকা শহরে এই কন্ট্রিবিউট করার আইডিয়াটা বেশ ভালোমতো গেড়ে বসেছে। মফস্বলের উচ্চ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তও এর আওতায় এসে পড়তে বাধ্য। মফস্বলের নিম্ববিত্তরা অনেক আগেই গার্মেন্টসে কাজ করতে বেরিয়ে পড়েছে। মোল্লা আছে দেশে, তবে তাদের কথা শুনলে ঐ মেয়েরা বেরতো না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হু, সেই ভয়েই বুঝি সবাই উঠে পড়ে লেগেছে :-/
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন করে কেউ উঠে পড়ে লাগে নাই। এরা আগের গ্রুপই যাদের দৌড় শালিশ বা মাদ্রাসার পাশের বাজার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলো। অর্থনৈতিক উন্নতির ছোয়া তাদের কাছেও লেগেছে। নতুন অর্থনৈতিক সক্ষমতায় তারা ঢাকা পর্যন্ত গিয়ে শোডাউন করতে পারে। এইটুকুই যা পরিবর্তন। শফি হুজুর বা হেফাজত নতুন কিছু বলে নাই। পুরনো মালই এসব। আবহমান বাংলার ওয়াজ মাহফিলে এগুলো বলা হয়ে আসছে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কিন্তু হাসিব ভাই, আবহমান বাংলায় ওয়াজের ভাইরাস জোকারের হাত ধরে যেভাবে মধ্যবিত্তের টিভিবিলাসের তালিকায় ঢুকে পড়েছে, সেটা বোধ হয় আগে হয় নি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হুজুরদের কথা শোনা ও সেইমতে চলতে চেষ্টা আগেও ছিলো। আগে এসব তাবিজ, ফু, পানি পড়া এসবের ফর্মে ছিলো। যুগ বদলিয়ে এখন ওগুলো জাকির নায়েকের দিকে শিফট করেছে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আপনার পর্যবেক্ষণের পেছনে কোন কারণটা বেশী সক্রিয় বলে মনে হয়েছে? - মানসিকতার পরিবর্তন না আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নতি?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
অর্থনীতি একটা কারণ। মানসিকতা আরেকটা কারণ। নারী শিক্ষায় ব্যাপক বিনিয়োগ আরেক কারণ। বাংলাদেশের সমাজে নারী প্রসঙ্গে গত ত্রিশ বছরে অনেক পরিবর্তন দ্রুতগতিতে হয়েছে। নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা অনেক ইস্যুতে এসব চোখে পড়বে। এটার শুরু আশির দশকে যখন ব্যাপক হারে জন্মনিয়ন্ত্রনের প্রচারণা শুরু হয়। মোল্লাপুরুতের কথা কেউই শোনেনি এসব বিষয়ে। নতুন জিনিস গ্রহণ করার আগ্রহ ও উতসাহ সংস্কৃতির ভেতর আছে বলে মনে হয়।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
- এইটা আমারও পর্যবেক্ষণ।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
@ হাসিব
আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করছি
একদিন বাঙ্গালী ছিলাম রে রে রে
facebook
ফেইসবুকের এই কপিটি এডিট করা মনে হয়নি। আপনাকে ইমেইলে এমবেড কোড পাঠাচ্ছি। মূল আলোচনায় অংশগ্রহণ করছি শিঘ্রী।
বোরকা , হিজাবের ব্যবহারের দুটি দিক আছে : ১ ধর্মীয় অনুশাসন পালন
২ নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তির প্রত্যাশা । ২০ বছর আগেও মহল্লায় আপনি বা আমি কোন মেয়েকে টিজ করলে মহল্লার মুরুব্বী বা দশ জন তার বিচার করত আর এখন টিজ করার প্রতিবাদ করায় মেয়ের বাপ সহ মার খেতে হয়েছে এরকম উদাহরন বাংলা সংবাদ পত্র গুলো গুগল করেন পাবেন । সুতরাং জুতা আবিষ্কারের মতন নিজেকে বোরকায় মুড়িয়ে যদি রেহাই পাওয়া যায় তার ব্যাখ্যা মৌলবাদের প্রসার নয় বরং আইনের শাসনহীনতা , সামাজিক বন্ধন বা নিয়ন্ত্রনের দিকেই নির্দেশ করতে হবে । আমাদের প্রচলিত সামাজিক ইন্সটিটিউশন (সমাজ বিজ্ঞানীরা যে অর্থে ব্যবহার করেন ) গুলো তার কার্যকারিতা হারিয়েছে কিন্তু সে জায়গায় কার্যকরী আইন বা রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে উঠেনি
সহমত । @ Mahbub
-নজরুল ভাইয়ার এই কথার সাথে একমত।
মিতা হকের সেদিনের কথাটা আমি শুনেছি। তিনি আসলেই উলটা পালটা বলেন বা বলার সময় খেয়াল করেন না কি বলতাছেন। বাঙ্গালী মানে ধর্মহীনতা নয়। হ্যাঁ, আমি মননে বাঙ্গালী হতে পারি, কিন্তু আমার ধর্মে যদি থাকে পর্দা প্রথা মেনে চলো, আমি সেটিও মেনে চলতে চাইবো। এখানে আমার বাঙ্গালিত্বের সাথে আমার মুসলমান সত্ত্বার বিরোধ হবে কেনো? বাঙ্গালী হওয়ার টার্মস এন্ড কন্ডিশনে কি লেখা আছে- আমি বোরখা পরতে পারবো না, টুপি পরতে পারবো না বা দাড়ি রাখতে পারবো না?
আমার কাছে মনে হয়- মিতা হকের আর কিছু বলাই না ভালো, এমনিতেই এরও আগে ক্ষ নিয়েও বিতর্কিত হয়েছিলেন। আর কতো?
-এস এম নিয়াজ মাওলা
এটা লেখা হিসেবে দিব ভাবছিলাম, কিন্তু আলোচনার সাথে প্রাসঙ্গিক বিধায় মন্তব্য হিসেবেই দিয়ে দিচ্ছি।
বোরকা না বিকিনি - What is Dress
খবরদার শিরোনামে ভুরু কুঁচকাবেন না। নিঃস্বার্থ ভালোবাসার ইংলিশ যদি What is Love হতে পারে, তবে আমার What is Dress কি দোষ করলো শুনি? লেখার টাইটেল হল বোরকা না বিকিনি, আর শ্লোগান হল What is Dress । এইসব তাকনুলুজিকাল ব্যাপার না বুঝলে নাই, বরং মূল লেখায় চলে যাই।
বিষয় নারীর পোশাক। সমস্যা গুরুতর। কি দিয়ে ছতর ঢাকবেন। বোরকা নাকি বিকিনি। আপনারা সবাই জানেন পোশাকের এই দুনিয়া বাইনারি। দুনিয়াতে আছে মাত্র দুইটা পোশাক। একটা বোরকা আরেকটা বিকিনি। হয় পুটলা নয় উলঙ্গ। হয় ইমাম শফি নয় সানি লিওন।
উপরের ছবিটি দেখেই বুঝতে পারছেন ঘটনা কি। ঈদের দিনে বিকিনি পরা ইসরায়েল ইহুদী তরুণী, পাশে বোরকা পরা মুসলিম ফিলিস্তিন তরুণী। আমি যখন এই ছবিটি দেখি আমার মাথায় প্রথমে একটা লাইনই আসে - Cultural Difference । তবে আরও খানিক মাথা চুল্কালে আরও কিছু ভাবনা আসে বটে।
...
...
...
...
...
...
...
...
...
...
...
...
এই প্যারার আগে বড় কিছু স্পেস দিয়ে নিলাম। আপনার মনিটর যত বড়ই হোক না কেন, নিশ্চিত করতে চাইছি এই লাইনটি যখন পড়ছেন তখন উপরের ছবি দেখা যাচ্ছে না। যারা এখনো হা করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছেন তাদের বলছি, নিচে নামুন। ছবি নয় লেখায় মনোযোগ দিন। উপরের ছবি থেকে আপনার মনোযোগ সরানোর জন্য বরং আরেকখানা ছবি দেই -
বলছিলাম সংস্কৃতির ভিন্নতার কথা। উপরের ছবিদুটো হয়তো Cultural Difference এর কথা ফুটিয়ে তুলছে। তবে একটু কিন্তু আছে। নিচের এই ছবির সাথে উপরের দুই ছবির বোধহয় সামান্য পার্থক্য আছে।
আলখাল্লা একটা পোশাক। শার্ট প্যান্টও পোশাক। তবে বোরকা কি পোশাক?? আমার মতামত - না, বোরকা কোন পোশাক না। আপনার মতামত ভিন্ন হতে পারে।যতক্ষন পর্যন্ত আমাকে চাপাতি দিয়ে কোপ না দিয়ে সভ্য ভাবে আপনার ভিন্নতা প্রকাশ করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার মতের প্রতি আমিও শ্রদ্ধা রাখব। আমার মত, একটা টেবিলক্লথ আর একটা সিন্দুকের মধ্যে পার্থক্য যা, একটা সালওয়ার কামিজ বা অন্য কাপড়ের সাথে এর সাথে বোরকার পার্থক্য তাই। টেবিলক্লথ এর কাজ টেবিলকে ধুলা-ময়লা-ঝোল থেকে রক্ষা করা, সেইসাথে খানিকটা ফ্যাশনও করা। এখন আপনার টেবিল আপনি কতটুকু ঢাকবেন সেইটা আপনি আর আপনার টেবিল মিলেমিশে সিদ্ধান্ত নিন। এটা আপনাদের অধিকার। কিন্তু টেবিলক্লথের ধার না ধেরে এখন আপনি হয়তো আপনার টেবিলে প্রতি বেলায় ভাত খেয়ে টেবিলকে সিন্দুকে ঢুকিয়ে রাখলেন, কেউ যদি নজর দেয় এই ভয়ে। আর নিজের টেবিল তালা দিয়ে আপনি দিব্যি চারিদিকে ঘুরে ওই টেবিল তোর ওড়না কই বলে বেশ টিজিং শুরু করলেন চারদিক ঘুরে ফিরে, এটা কেমুন বিচার ?
সে যাই হোক, আগেই বলে নিয়েছি এটা আমার মতামত। একইভাবে মিতা হকও হয়তো এমন একটি কথাও বলতে চেয়েছিলান। তার মতামত হচ্ছে, হিজাব বাংলাদেশের সংস্কৃতি নয়। মিতা হকের বলা কথা নিয়ে হচ্ছে হৈচৈ। নানাভাবে মূলকথা টুইস্ট করে যারা মাথায় ঘোমটা দেয় তারা আর যাই হোক বাঙ্গালী হতে পারেনা - এরকম শিরোনামে লেখা লেখা আসছে পত্রিকায়, ব্লগে। মিতা হক ঠিক কি বলেছেন, কি বুঝিয়েছেন, কথা ঠিক না বেঠিক সেই লাইনে যাবার প্রয়োজন নেই। লেখার উদ্দেশ্য সেটি নয়। অনিকেতদার লেখায় ইতোমধ্যে বিস্তারিত এই ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে। আমার লেখার উদ্দেশ্য বোরকার বিপক্ষে কিছু বলা মাত্র লোকজনের যেই প্রতিক্রিয়া হয় সেটা নিয়ে।
পৃথিবীতে কিছু কাজ খুব সহজ। সবচেয়ে সহজ কাজ বোধয় মেয়েদের অপমান করা। যত আধুনিক মেয়েই হোক না কেন, তাকে শালি মাগী বলে একটা গালি দিলেই সে খানিকটা হলেও থমকে যাবে। একই ভাবে যত আধুনিক একটা ছেলেই হোক না কেন, তার বাপ ভাইকে তুলে গালি দিলে সে যত না গায়ে মাখবে মা অথবা বোনকে তুলে গালি দিলে তার চেয়ে অনেক বেশীই গায়ে মাখবে। মিতা হকের সমর্থন দিয়ে নয়, বরং তাকে এভাবে গালাগালি করা অনুচিত বলে একটি লেখা লিখলেন অদিতি ফাল্গুনী। তার প্রতিক্রিয়ার কমেন্টগুলো বরং নিজেরাই পড়ে নিন।
দয়া করে মিতা হককে অশালীন আক্রমণ বন্ধ করুন!
আমি বরং সহজ সরল ভাবে বোরকা আর বিকিনি নিয়ে সাধারণত যে সকল ত্যানা প্যাঁচানো হয় তা নিয়ে কিছু কথা বলে বিদেয় হই।
পোশাক নারীর অধিকার, কে কোন পোষাক পরিধান করবে সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়।
আপনি যদি এই বলে কথা বলেন তাহলে আপনি ছুপা ছাগু। আরে না না রাগ করবেন না। আমি জানি এটা খুব চমৎকার একটা কথা। কথায় কোন ভুল নেই। কিন্তু তারপরেও বিশ্বাস করেন, আপনি একজন ছুপা ছাগু। আপনি নিজেও হয়তো জানেন না। কিন্তু যে কোন স্পেশালিষ্ট ডক্টর আপনার নাড়ি ধরে একটু টিপি দিলেই ম্যা ম্যা শব্দ শুনতে পাবে। আমি জানি আপনি হয়তো তেড়েফুঁড়ে আমাকে এখন শালা ভারতের দালাল, শালা আম্লিগ বা শালা নাস্তিক বলে গালি দিবেন। কিন্তু তাতে বরং আপনার রোগ আরও বেশী করে প্রকাশ পাবে। তার চেয়ে বরং মাথা ঠাণ্ডা করে বোঝার চেষ্টা করুন কেন আপনি ছুপা ছাগু। আবারও বলছি "কে কোন পোষাক পরিধান করবে সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়" এই কথার মধ্যে বিন্দুমাত্র ভেজাল নেই। নিখাদ সত্য কথা। ঘটনা আসলে হচ্ছে আপনি এই কথার পর যেই কথাগুলো বলবেন তা নিয়ে। এই মিষ্টি কথাটি হচ্ছে আসলে আপনার কমোডের কাভার। এই কাভার খুললে ভেতরে কি পাওয়া যাবে তা বলি। পরের কথাটি হবে বোরকার পরলে যদি দোষ হয় তবে ডট ডট পরলে কেন দোষ হবেনা। একদন যদি এই ডট ডট এর জায়গায় আপনি উলঙ্গ নগ্ন ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেন তাইলে আপনি আর ছুপা নন। একেবারে একশ পারসেন্ট প্রকাশ্য ছাগু। সেক্ষেত্রে আপনার পরের বাক্যটি কি হতে পারে সেটা বলি।
তোদের ল্যাংটা হয়ে চলাটা যেমন তোদের স্বাধীনতা তেমনি বাংলার মা-বোনের হেজাব পরে চলাটাও তাদের স্বাধীনতা।
এহহে, একবারে বেশী Raw হয়ে গেল না? একটু লাইনে আসুন। আমাদের দেশে প্রকাশ্যে কেউ ল্যাংটা হয়ে চলেনা। এমনকি আমেরিকাতেও চলে না। চলতে গেলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। সুতরাং তুলনাটা একটু ইয়ে হয়ে গেল না। আপনি বরং এক কাজ করুন। চাপাতিতে শান দিতে থাকুন। ল্যাংটা কাউকে দেখলে হা রে রে রে করে তেড়ে যাবেন। সুতরাং আপনাকে রেখে আমি বরং দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে যাই। দ্বিতীয় ক্যাটাগরির লোকজন "পোশাক নারীর অধিকার, কে কোন পোষাক পরিধান করবে সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়" এই কাভার লাইনটি বলার পর পরের লাইনটি বলবে -
বিকিনি পরলে দোষ হয়না, আর বুরকা পরলে তোমাদের যত চুলকায়
এটা আগের তুলনায় সভ্য লাইন। সম্বোধনেও তুই না বলে তুমি আছে। বোঝা যায় আপনার মাদ্রাসা শিক্ষার বাইরেও বেশ খানিকটা শিক্ষাদীক্ষা আছে। তবে এটাও একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? আমাদের দেশের কোন মেয়েকে কি বিকিনি পরা অবস্থায় দেখেছেন কখনও? স্বপ্নে দেখেন জানি। আমাদের মিলিটারি স্কুলের আব্দুল মতিন কেন প্রতিদিন কেন সকালে উঠে পাজামা ধুয়ে দিত সেটা বুঝতাম না। একদিন অঙ্ক ক্লাসে যখন শিক্ষক মহোদয় একটি চৌবাচ্চার তিনটি নল দিয়ে পানি ঢুকে, দুটি দিয়ে বের হয় অঙ্ক করাচ্ছিলেন তখন আমি আচমকা সব বুঝে গেলাম। ইউরেকা ইউরেকা করতে করতে মতিনের কাঁধ ঝাকানো শুরু করেছিলাম দিব্যি। সে যাই হোক, কি যেন বলছিলাম। ওই যে আপনার পায়জামার কথা, না না আপনার স্বপ্নের কথা। আরে ধুর, বলছিলাম বিকিনির কথা। কথা হচ্ছে উলঙ্গ বাদ, বিকিনিও বাদ। তাইলে হাতে রইল কি? পেন্সিল বা হারিকেন না। হাতে রইল বোরকা? হাতে আসলে আরও বেশ কিছু পোশাকই রইল। বোরকা আর বিকিনি ছাড়া পৃথিবীতে আরও সামান্য কিছু পোশাক আছে। যারা নাম জানেন না তাদের জন্য বলছি, শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ, শার্ট, প্যান্ট ইত্যাদি ইত্যাদি।
এবার তাই আরেকটু এগিয়ে তৃতীয় ক্যাটাগরিতে যাই। প্রথম ক্যাটাগরির কথা বলে এক্কেবারে মারদাঙ্গা চ্যাংড়া পুলাপান, দ্বিতীয় টাইপের কথা বলে আরেকটু বয়স্ক ভার্সিটি পড়ুয়া পোলাপান। আর এই তৃতীয় ক্যাটাগরির ফিনফিনে মোলায়েম কথা বলে মধ্যবয়স্ক বুদ্ধিজীবী প্রগতিশীল লোকজন। যাদের মাথায় বেশীরভাগ সময়েই টাক থাকে, যাদের স্ত্রীর চেঁচানোতে বাড়ির উঠোনে কাক চড়ুই বসতে পারেনা। রাতের বেলা গায়ে হাত দিতে গেলে স্ত্রী পোড়ামুখো মিনসে বলে ঝামটা মারে। অতঃপর তারা বাথরুম থেকে হাত মেরে এসে হাত না ধুয়েই কীবোর্ডে , আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম শিরোনামে ঝড় তোলা শুরু করে। হে হে, ভাবছেন আপনার এত সিক্রেট কিভাবে জানলাম। হু হু, বেনেডিক্ট মশাই পারলে আমি পারবোনা কেন?
সে যাই হোক, এই তৃতীয় ক্যাটাগরির লোক হলে পরের লাইনটি হবে -
যদি জিনস আর টিশার্ট পরলে দোষ না হয় তবে বোরকা পরলে দোষ কথায়? বোরকা যদি আরবের কালচার হয়, প্যান্ট শার্টও তো তবে পাশ্চাত্যের কালচার।
সুন্দর একটি কথা। দ্বিমত করছি না। এই জন্যই তো আপনি ছুপা রুস্তম, আই মিন ছাগু। আমি নিশ্চিত আপনার স্ত্রী বোরকা পরে না। আপনার মুখে বলার সাহসও নেই তাকে, ওগো বোরকা পর। সাথে সাথে উস্টা খাবেন। সাথে বোনাস হিসেবে ঝাটার বাড়িও। তাই এই বোরকার পক্ষে ইন্টারনেটে ঝড় তোলাটা আপনার মাস্টারবেশন। মনে মনে ভাবেন - আহারে, শালার ওয়াইপকে যদি আজকে বোরকার মইদ্ধে রাখতে পারতাম তাইলে আমারে উঠতে বসতে উস্টা দিতনা।
লজিকজাল ফেলাসিটা এইখানে খুবই সরল। দেখতে চাইলে দেখা যায়। না দেখতে চাইলে একশত লাইন খরচ করেও লাভ নেই।
বোরকা পোশাক না। কালচার না। এটা নিয়ম।
এই নিয়মের কতটুকু ধর্মের মূল অংশের সাথে সম্পর্কযুক্ত, আর কতটুকু সুবিধাবাদী পুরুষের বানানো সেটা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলে, চলতে পারে। কিন্তু যারা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে নানাভাবে নানা কিছু বলতে চান তাদের জন্য এক লাইনে বোরকার উদ্দেশ্যটা বলে দেয়া যায়।
মেয়েদের দেখলে ছেলেদের উত্তেজনা হয়, সেই উত্তেজনা প্রশমনের জন্য মেয়েদের বোরকা পরা উচিৎ।
আগে পিছনে নানা পিছলা শব্দ জুড়ে এটাকে অলঙ্কৃত করতে পারেন ... মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য তাকে বোরকায় ঢুকানো ... অন্তঃপুরে বন্দী রাখা ... এতে তাদের সম্মান কমে না , আরও বাড়ে ... ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা। প্রশ্ন যদি নিরাপত্তা হয় তবে এর চেয়ে যার যার শিশ্ন তালা দিয়ে চাবি তার মায়ের বা বউয়ের হাতে তুলে দেয়া বেশী কার্যকর পদ্ধতি। ছেলে বলবে, আম্মা মুতু পাইছে। মা চাবি দিয়ে তালা খুলে তার মূত্রত্যাগের ব্যবস্থা করে দিবে। ছোকরা বলবে, ওগো বউ সেক্স উঠছে। বউ রুটি বেলার বেলন দিয়ে জায়গামত বাড়ি দিয়ে নামানোর ব্যবস্থা করবে অথবা তালা খুলে যা করার করবে। যেইসব মুমিন বান্দাদের নিজেকে নিজে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা নেই এটাই তাদের জন্য একমাত্র কার্যকর ব্যবস্থা। বোরকা নয়।
তাই দুটো পোশাকের মধ্যে তুলনা করা যায়। আমাদের দেশের মেয়েদের শাড়ি পরাটা কালচার নাকি সালওয়ার কামিজ পরা সেটা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে টি-শার্ট জিনস পরা শালিন কিনা বা টি শার্টের বদলে কি পোশাক পরলে কার কত উপকার হবে সেগুলো নিয়ে মন চাইলে আলোচনা করুন। কিন্তু বোরকার সাথে অন্য পোশাকের তুলনা করা ঠিক লজিকাল মনে হয়না। কারণ আবারও বলছি।
বোরকা পোশাক না। কালচার না। এটা নিয়ম।
ঘোমটা, ওড়না সবই আমাদের সাংস্কৃতিক পোশাক হতে পারে। বোরকা পোশাক না, এটা ধর্মীয় অনুশাসন। আপনি পরলে আমার সমালোচনা করার অধিকার আছে, তেমনি আমি না পরলে আপনার সমালোচনার অধিকার আছে। কিন্তু আমি বোরকা পরি না বলে বা বোরকার বিরুদ্ধে কথা বলি বলে আমাকে নাস্তিক, মাগী, বেশ্যা ... ইত্যাদি বলে ডাকার অধিকার নেই। এই মুহূর্তে অন্তত ১০০ জন লোকের ফেসবুক থেকে স্ক্রিনশট তুলে এনে দেখাতে পারবো ফিনফিনে দাড়িওয়ালা, মাথায় টুপি পড়া মাদ্রাসার ছাত্র থেকে শুরু করে স্মার্ট শিক্ষিত ভার্সিটির শিক্ষক পর্যন্ত নানা শ্রেণীর লোকজন কিভাবে মিতা হককে গালি দিচ্ছে। ফোন করে তাকে আর তার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। তসলিমা নাসরিনের সাথে তুলনা করে তাকে দেশ ছাড়া করতে চাইছে।
কে কোন পোষাক পরিধান করবে সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে ব্যক্তি যখন সমাজের মধ্যে থাকে সেটা তখন সমাজের বিষয়ও হয়ে দাড়ায়। আপনি ইচ্ছে করলে মায়ামি বীচে বোরকা পরে ঘুরতে পারেন। লোকে আপনাকে নিয়ে মুখ টিপে বিস্তর হাসাহাসি করবে তবে কেউ এসে আপনার বোরকা খুলে ফেলবে টেনে অথবা কোপ দিয়ে আপনাকে কয়েক পিস করবে সেরকম সম্ভাবনা খুবই কম।তবে আমাদের দেশ সহ অনেক দেশই আছে যেখানে আপনি বিকিনি পরে ঘুরলে আপনাকে রেপ করা নাগরিক ও সামাজিক দায়িত্ব বলে লোকে মনে করবে।
ফট করে আবার উলঙ্গ, বিকিনি এইগুলা বলে হৈ হল্লা শুরু করবেন না। ওগুলো আমাদের দেশের জন্য স্বপ্ন। ওগুলো আপনার স্বপ্নেই রাখুন। প্রতিদিন সকালে উঠে নিয়মিত পায়জামা ধৌত করুন। ঝামেলা শেষ।
(মাফ করবেন অনিকেত দা, আপনার লেখার চেয়ে আমার মন্তব্য বেশী বড় হয়ে গেল মনে হয়। কয়দিন ধরে লোকজনের নোংরা কথা শুনে মেজাজ চড়ে আছে ... )
সাবাস।
..................................................................
#Banshibir.
আলাদা পোস্ট দ্যান
facebook
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আপনে আসলেই বস্লুক।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
লেখা হিসেবে আসুক - মন্তব্য শেয়ার করতে পারিনা
শেয়ার করা জরুরী এরকম মারাত্মক একটা লেখা।
সচলে আর আলাদা লেখা না দিয়ে বরং ফেসবুকে দিয়ে দিলাম।
তবে এইটা লেখা হিসাবে দিয়ে দিতে পারেন। আপনের যেহেতু প্রচুর পাঠক আছে, লেখার গুরুত্ব বিবেচনায় মনে হয় লেখা হিসেবে দেয়া যায়, সেখানে অনিকেতদার মূল লেখা আর মিতা হকের ভিডিওর রেফারেন্সও থাকতে পারে।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
তাড়াহুড়া করে অগোছালো ভাবে লেখা একটা জিনিস। এজন্য আর আলাদা লেখা দিতে ইচ্ছা করলো না। ফেসবুক নোট বানায়ে দিছি।
দাদা গো, ১০০% সহমত। সাথে নিজের দুই পয়সা যোগ করে দিয়েছি, এখানেও নিচে দিলাম।
চরম উদাসের এই পোস্টের সাথে পূর্ণ সহমত। সাথে দুই পয়সা যোগ করি।
গত কিছু বছরে আচানক বোরকা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে, এবং দাবি করা হচ্ছে যে এর পেছনে "শালীনতা" একমাত্র কারণ। ভেজালটা শালীনতা নিয়ে না, ভিন্ন কয়েকটা ব্যাপারে।
১) তাচ্ছিল্য -- ধরে নেওয়া হয় যে বোরকা পড়ছেন না এমন সবাই অশালীন। এই কাতারে পড়ে যায় আমাদের মা-খালারাও, যারা জীবনে বিকিনি চোখেও দেখেনি আবার বোরকাও পরেনি।
২) পুরুষতন্ত্র -- আত্মনিয়ন্ত্রনহীন পুরুষের যৌনক্ষুধার ভয়ে নারীকে একটা চলমান সিন্দুক হয়ে থাকতে হবে, এই চিন্তা সম্পূর্ণই পুরুষতন্ত্র থেকে এসেছে।
আবহমান কাল ধরে বাঙালি নারীরা ব্লাউজছাড়া শাড়ি যেমন পড়েছে, আবার অচেনা কেউ সামনে এলে ঘোমটাও দিয়েছে। পুরুষতন্ত্রের যাঁতাকলে এদের পিষ্ট করা, এবং সেই কাজটা বিকিনি-র দোহাই তুলে অশ্রাব্য গালি-গালাজ দিয়ে হালাল করা প্রচণ্ড আপত্তিকর। এখানেই তৃতীয় কারণের অবতারণা।
৩) ভণ্ডামি -- যারা আজ বোরকার জন্য এত সরব, তারা ব্যাক্তিজীবনে ধার্মিক নন, প্রথম সুযোগেই অশ্রাব্য গালিগালাজে লিপ্ত হন, এবং ধর্মে পুরুষের জন্য যেই অনুশাসনগুলো আছে সেগুলো সুকৌশলে এড়িয়ে যান।
আমি একটা কথা প্রায়ই বলে থাকি -- আমরা পূর্ব-প্রজন্মের তুলনায় ধার্মিক কম, রক্ষণশীল বেশি। আমরা ধর্মকে অন্তরের চেয়ে অন্ত্রে ধারণ করি বেশি।
আজকের ধর্মব্যবসায়ীদের কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না যে বাপ-দাদার চেয়েও তারা বেশি ধর্মপরায়ন, অথচ ধর্মের নামে 'নিয়ন্ত্রণ' চাপিয়ে দেওয়ার বেলায় সেরের উপর সোয়া সের। এই কারণেই অবাক হয়ে দেখি এক কালে যারা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতো এবং আমার মতো 'মডারেট'-দের গোঁড়া বলে গালি দিতো, তারাই আজকে আল্লামা হয়ে সেই একই আমাকে নাসারা বলে গালি দেয়।
যাদের এত গালিগালাজ এবং বোরকাপ্রীতি, তারা চিরকাল একটাই উদাহরণ এবং একটাই যুক্তি দেখান। উদাহরণটি বিকিনি, এবং সেটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপপ্রয়াস। বোরকার বিপরীতে শাড়ি-সালোয়ার-কামিজ-প্যান্ট-শার্ট-স্কার্ট সবই সমালোচনা হয়, কিন্তু উদাহরণ দেওয়া হয় শুধুই বিকিনির।
এবারে যুক্তিটির প্রসঙ্গে আসি।
৪) ব্যাক্তিগত পছন্দের অধিকার -- এখানেই চরম উদাসের পোস্টের 'টেবিল'-এর উদাহরণটা আবারও খেয়াল করে পড়া উচিত। তার সাথে নিজের মতো করে কিছু যোগ করছি।
মানুষ নিজের ইচ্ছামতো যা-খুশি পরিধান করতে পারে। নতুন কোনো কিছু ফ্যাশনেবল হলে কেউ চেষ্টা করে দেখবে, কেউ দেখবে না। মিনিস্কার্ট থেকে হিজাব পর্যন্ত সবকিছুর ক্ষেত্রেই এই সত্য প্রযোজ্য। এটা ব্যাক্তির অধিকার। আজ থেকে ২০ বছর আগে কেউ চুল স্পাইক করলে সমাজের গৎ অনুযায়ী আমিও "বাজে ছেলে" ডেকেছি তাদের। আজকে সেই আমিই চুল স্পাইক করি, শরীরের মাপের চেয়ে দুই সাইজ বড়ো কাপড় পরি না। অতএব, কেউ কোনো ধরনের কাপড় পড়লে "হু অ্যাম আই টু জাজ" বলে নিজের মতো চলি। শুধু তাই না, ফ্রান্সের মতো কোনো দেশে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও এই কারণেই উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ করি।
প্রশ্ন হলো, এই "হু অ্যাম আই টু জাজ" পন্থা কেন বোরকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য না? কেউ স্বেচ্ছায় বোরকা পরলে কি সেটাকেও সমর্থন দেওয়া উচিত না? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হলে ইতিহাসে যেতে হবে একটু।
দুইশ' বছর ধরে ভারতবর্ষকে উপনিবেশ করে রাখা ব্রিটিশরাজ অন্তত একটা ভালো কাজ করে গেছে, সেটি হলো সতিদাহ প্রথা বন্ধ করা। সেযুগের সমাজে নারীকে পুরুষের অধিকার এবং মালিকানাধীন মনে করা হতো, এবং সেই চিন্তা থেকেই সহমরণের প্রথা সমাজে প্রচলিত ছিলো। এখানে ধর্মের চেয়ে পুরুষতন্ত্রের ভূমিকা বেশি। সেই যুগেও নারীরা ছোটোবেলা থেকে ধর্মীয় অনুশাসনের অংশ হিসাবেই সতিদাহকে জেনে আসতো, স্বেচ্ছায়ই সেই নিয়তি মেনে নিতো। কেউ কেউ হয়তো মানতে চাইতেন না, কিন্তু সেক্ষেত্রে ব্যাপক সমালোচনা ও সামাজিক ব্যাকল্যাশ সইতে হতো। আর দশটা প্রথা না মানার সাথে ধর্মের প্রলেপ দেওয়া প্রথার এখানেই পার্থক্য। বাকি প্রথাগুলো না মানার কারণে কেউ আপনাকে মানুষ হিসাবে নিচু চোখে দেখবে না, কিন্তু ধর্মের একটা অসামান্য শক্তি আছে মানুষকে জাজমেন্টাল করে ফেলার। পাকিস্তান কিংবা আরবের সমাজে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই মেয়েদের পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলা হয়। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত রাস্তায় গালি-ধামকি এবং ইন্টারনেটে হুমকি দেওয়াতে সীমিত আছে। এই পাগলা ঘোড়াকে সময় থাকতে নিয়ন্ত্রণে না আনলে আখেরে সমস্যা আরও ঘনীভূতই হবে।
ঠিক এই কারণেই সব রকমের পোষাক, সংস্কার, প্রথা, ও পছন্দের ব্যাপারে খোলা মন থাকলেও বোরকা নিয়ে আপত্তি। পুরুষকে অন্যায় থেকে বিরত করার হ্যাডম নাই, তাই নারীকে ধমক দিয়ে সিন্দুকে ভরে রাখা হোক -- এই রকম প্রচলন আরব সমাজে মেনে নেওয়া হতে পারে, আমি এই বাংলাদেশে চাই না। এখানেই চলে আসে আরও একটা পর্যবেক্ষণ।
ইসলাম ধর্মকে আমরা শুধু একটি বিশ্বাস নয়, বরং "পরিপূর্ণ জীবন বিধান" হিসাবে জানি। সমস্যা হলো, এই যে বিশ্বাস এবং বিধানের প্যাকেজিং, সেটার মধ্যে উৎসভূমি আরব মরুভূমি থেকে ঢুকে যাওয়া অনেক কিছুই আমরা ফিল্টার করি না। যুগে যুগে আমরা ইসলাম ধর্মকে 'আত্মস্থ' করেছি, ইদানীং শুরু হয়েছে 'গলাধকরণ'। সেটারই ফলাফল হিসাবে এই 'ধার্মিক কম, রক্ষণশীল বেশি' সিনড্রোমের সূচনা।
মধ্যপ্রাচ্য একটি অত্যন্ত অস্থিতিশীল এবং অসহনশীল জায়গা। পিপাসার্ত কোনো বেদুইন অন্য গোত্রের পানি পান করে তৃষ্ণা মেটালেও তাকে শাণিত তলোয়ারতলে মাথা পেতে দিতে হতো। অন্য দিকে এই বাংলায় আমরা খালা এবং মাসীতে তফাৎ করতে শিখি নাই, ঈদ-পূজায় একই সাথে আনন্দ করেছি, ঘরে মেহমান এলে গৃহপালিত মুরগি-ছাগল যা আছে সেটা দিয়েই অতিথি আপ্যায়ন করেছি। সেই সমাজে মধ্যপ্রাচ্যে প্যাকেজকৃত ইসলাম চাপিয়ে দিতে গেলে সমস্যা হবেই। বাদ দিতে হবে অনগ্রসর ও অসহিষ্ণু আরব প্রথা, বাদ দিতে হবে সামাজিক বিধান হিসাবে প্যাকেজিং-এর সুযোগ পেয়ে চাপিয়ে দেওয়া পুরুষতন্ত্র, যোগ দিতে হবে ধর্মের শিক্ষা, এবং সেই অনুযায়ী নিজেদের সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাকেজিং করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য এবং পাক-আফগান অঞ্চল বাদ দিলে সারা দুনিয়ায় সেই ভাবে ইসলাম অনুসৃত হয়।
সেই দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে উপলব্ধি হওয়া উচিত কেন সতিদাহের মতোই বোরকা প্রথাও বাঙালি সমাজে অচল। আমাদের নিজেদেরই শালীনতার অলিখিত কোড-অফ-কনডাক্ট আছে, মধ্যপ্রাচ্যের কাছে শেখার কিছু নাই।
@ইশতিইয়াক রউফ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দুর্দান্ত উত্তর।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
"প্রশ্ন যদি নিরাপত্তা হয় তবে এর চেয়ে যার যার শিশ্ন তালা দিয়ে চাবি তার মায়ের বা বউয়ের হাতে তুলে দেয়া বেশী কার্যকর পদ্ধতি।"
এই রকম তালা চাবি কিন্তু খুবই available।
কুর্নিশ, কুর্নিশ, কুর্নিশ। যতই রণদীপম-এর সাথে একমত হইনা কেন যে 'খুব ভাল' বলে সত্যিই ভালোর ভালোত্ব আরো বাড়ে না, তোমার এই লেখার জন্য একশ পাতা ধরে কুর্নিশ লিখে গেলেও আমার মন ভরবে না। আর, মনের গভীরে যেই তার ছুঁয়ে গেলে আমি আর 'আপনি'-র দূরত্ব রাখতে পারি না, তোমার এই লেখা সেই তার-এ ঝড় তুলে দিয়েছে। তাই এই কমেন্ট-এ আমার পক্ষে আপনি বলা সম্ভব হল না। অসুবিধাও অবশ্য কিছু নেই, তুমি তো ঘোষিত চরম উদাস!
- একলহমা
মন্তব্যের কারণে সচল থেকে নোবেল দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে আমি সবার আগে আপনাকে রিকমেন্ড করতাম। আমার প্রশংসা করেছেন এই জন্য না , অন্য সব লেখাতেও আপনার বিস্তারিত কমেন্ট পড়ে মুগ্ধ হই। সবাই (আমি নিজেও) উঁচা আঙ্গুল অথবা ধইন্নাপাতা দেখিয়ে বিদেয় হয়। ডিটেইলস মনের কথা লেখার কষ্ট করতে চায়না।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
প্রিয় অনিকেত, সারা দিন ধরে এই লেখাটা ধরে রেখেছিলাম সমস্ত কাজ শেষে মন লাগিয়ে পড়ব বলে। ইতিমধ্যে দেখছি কি ভাবে মণি-মুক্তা এসে জড় হচ্ছে। চরমতম মন্তব্য অবশ্যই 'চরম উদাস'-এর। তবে মনমাঝি আর হাসিব-এর কমেন্ট দুটিও আমার কাছে খুব সঠিক আর গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে। তোমার নিজের লেখা তো পুরোই যথার্থ, কিন্তু তার থেকেও তোমায় বেশী সাবাসি জানাই এই সামগ্রিক যে রচনা সংগ্রহ তৈরী হল তোমার এই লেখার ফলে সেটার সূচনা করতে পারার জন্য। টুপি-খোলা অভিনন্দন।
- একলহমা
একে বাড়ে খাবার স্যালাইনের মত সহজ করে গুলে খাওয়ালেন। এতে যাদের বোরকা ডায়রিয়া (মুলোত যারা বুঝের অভাব থেকে খামাকা বোরকারে ডটডট এর সাথে তুলোনা করে তারা) তাদের আরাম হইবো ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়া কমবো। আর যাদের বিকিনি ডায়রিয়া (যারা বোরকা নিয়া গলা ফাটাইলেও বাথরুমে যায় বিকিনির ছবি নিয়া) তাদের এই খাবার স্যালাইনে কাজ হপে না। তাদের ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন দিতে হপে।
স্বয়ম
সাবাস ভাইয়া। আর কিছু বলার নাই। অজুহাত পেলেই মেয়েদের গালি দেয়া এখন সবার নৈতিক দায়িত্ব হয়ে গেছে। বলতে ইচ্ছা করে অনেক কিছুই কিন্তু মানুষজন যেভাবে তেড়ে আসে।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
ফাটাইয়া দিছেন উদাস ভাই।
------------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
ঘটনা এক -
বিয়ের ২/৩ বছর পর আমার স্ত্রী স্লিভলেস ব্লাউজ আর কামিজ পরার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি সানন্দে তা সমর্থন করেছি। পড়লেন অনেকদিন। হঠাৎ সেদিন বললেন যে উনি হিজাব পড়তে চান। আমি প্রশ্নচোখে তাঁর দিকে তাকালাম। উত্তরে জানলাম যে, চুল বাঁচাতে তাঁর এই আগ্রহ। ঢাকার বাতাসে অত্যধিক ধুলো আর এই ধুলো তাঁর চুলের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে দ্রুতগতিতে। কে জানে, ঢাকায় কতজন যে চুল বাঁচাতে হিজাব পড়ে !!
ঘটনা দুই -
শ্বশুর পক্ষের আত্মীয়দের মধ্যে মেয়েদের একজন পালিয়ে বিয়ে করলো ভাড়াটিয়ার ছেলেকে। বাবা মেনে নিতে চাইলেন না। আত্মীয়-স্বজনও কঠোর। কিন্তু মা আর ছোট বোন তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে চাইছিলো (কারণ তাদের দু'জনের কেউই কর্মজীবি ছিলোনা)। সেক্ষেত্রে সহায় হলো বোরকা। ছোটমেয়ে বোরকা পড়া শুরু করলো আর তার আড়ালে টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড়, স্নো-পাউডার পৌঁছে যেতে লাগলো বড় মেয়ের কাছে। এভাবে চলতে চলতে এবার সুযোগ হলো ছোট মেয়ের। বোরকা পড়ে বড় ভাইয়ের বন্ধুর সাথে দুদ্দার প্রেম চালিয়ে যেতে লাগলো। ছোট জেলা শহরে বড়প্রেম চালিয়ে যেতে বোরকা যে অনেক বড় ত্রাতা হয়েছিলো, সাহায্য করেছিলো তা বলাই বাহুল্য। গোটা বাংলাদেশে মালামাল (এর সঙ্গে ড্রাগও আছে) পাচার আর প্রেম এর জন্য কতোজন যে বোরকা পড়ে, কে জানে !!
দূর্ঘটনা এক -
তবে সবচেয়ে ইন্টারেষ্টিং কারণটা বলেছেন আমার স্ত্রী। তাঁর মতে ঢাকায় যে মহিলাদের বোরকা পড়ে মার্কেট এ কেনাকাটা বা স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের আনা নেয়া করতে দেখা যায় তাদের সিংহভাগের সাথেই এক বা একাধিক বাচ্চা থাকে। এরা বাচ্চা আর সংসার সামলাতে এতোটাই ব্যস্ত থাকেন যে, নিজের ঘরে যেরকম (রঙ, ছাপা বা কাপড়ের বয়স থোড়াই কেয়ার) কাপড় পড়ে থাকেন তার উপর একটা বোরকা আর হিজাব চাপিয়ে নিয়ে বের হয়ে যেতে পারেন। শপিং এর সহগামিনী বা স্কুলের অন্য বাচ্চাদের মা বোরকাওয়ালীদের কাপড় বা অলংকার নিয়ে মাথা ঘামান না। (আমার এক দুষ্ট বন্ধু এটা শুনে যোগ করেছিলো যে, তার নাকি কোন কোন বোরকাওয়ালীকে দেখে মনে হয়েছে যে বোরকার নিচে ঘরের কাপড়টা পড়ার মত কষ্ট তারা করে নাই। শুনে মন্তব্য করেছিলাম যে তারা নিশ্চয়ই সানি লিওন বা পুনম পান্ডে'র কেউ হবেন)। এও একরকম নগর জীবনের চিত্র। এই দেশে কে বা কতজন নিজের পোষাক আড়াল করার জন্য বোরকা পড়ছেন, কে জানে?
দূর্ঘটনা দুই -
২০১২ এর নভেম্বর এ ছেলের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার আসন পড়েছিলো নূরজাহান রোডের মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। সকাল সাড়ে আটটায় সেখানে পৌঁছে দেখি লোকে লোকারন্য। সিংহভাগ মহিলা অর্থাৎ মায়েরা। বেশীরভাগ বোরকা পড়া। আমি সসম্ভ্রমে গা বাঁচিয়ে ছেলেকে নিয়ে এগিয়ে চলছি। হঠাৎ একটা ভীড়ের মধ্যে পড়ে গেলাম। ঘাড় ঘুড়িয়ে যতজনের চোখে চোখ পড়লো সবই হিজাব ঢাকা মুখ। হাসিমুখে খুব সাবধানে পরিস্থিতিটা সামলে ছেলেকে স্কুলের গেটে ঢুকিয়ে দিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ালাম। ছেলের মুখটা মনে করে রক্তচাপ বেড়ে গেলো একটু । জমানো টেনসন তাড়ানোর জন্য প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকালাম সিগারেট কেসটার জন্য। নেই । এবার হাত অন্য পকেটে। উঠে এলো মোবাইল ফোন। এরপর সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজলাম। নে-ই-ই তো নে-ই। আ-হারে পাঁচটি বেনসন লাইট ছিলো। সিগারেট এর সঙ্গে সঙ্গে প্রিয় সিগারেট কেসটার জন্য আরো মন খারাপ হলো। স্ত্রীকে জানালাম। যে উনি আমার সিগারেট পানের জোর বিরোধী, সেই তিনিও সিগারেট কেসটা হারানোর জন্য দুঃখ পেলেন। কিভাবে হারালাম ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো হিজাবধারীদের আচমকা ভীড়টার কথা। হিসেবটা মিলে গেলো। ঐ বোরকা-হিজাব ধারীদের মাঝে পকেটমারও ছিলো। যারা নিদেনপক্ষে একটা ব্ল্যাকবেরী ফোন মনে করে আমার পকেটমেরে সিগারেট কেসটা নিয়েছে। আ-হারে, পকেটমার নাকি পকেটমারনী, খুব দুঃখ হলো তার জন্য। মোবাইলের বদলে পাঁচটি শলাকা সহ সিগারেট কেস! বোরকার কত শালীন ব্যবহার !! কে জানে, এই দেশ-এ বা এই শহরে বোরকাপড়া কতশত মহিলা সম্ভ্রম দেখানোর সুযোগে কত শত পুরুষের পকেট ফূটো করে শখের বা প্রয়োজনের জিনিসটা হাওয়া করে দিচ্ছে!!!
সবশেষে - যদি কেউ আমার এই মন্তব্যগুলো পড়ে আমাকে রাগান্বিত হয়ে খুঁজতে চান, তবে মনে রাখবেন, সচলায়তন এ আমি এখনও বোরকা পড়েই থাকি। আমাকে খুঁজে, সাধ্য কার???
-----------------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
ঘটনা জিরোঃ এক বিভাগীয় শহরের প্রখ্যাত শাড়ীর দোকানে দুইজন বোরকা পরিহিত ভদ্র(!) মহিলা কয়েকটি শাড়ী বাছাই করে ট্রায়াল রূমে ঢোকেন। পরে ট্রায়াল রূম থেকে বের হয়ে পছন্দ হয়নি বিধায় শাড়ীগুলো ফেরত দিয়ে চলে যান। শাড়ীগুলো এলোমেলো ছিল, তাই গুছিয়ে তুলে রাখতে গিয়ে সেলসম্যানের নজরে আসে দুটি শাড়ী কম - উনারা বোরখার নিচে শাড়ী পরে এসেছিলেন কিনা জানি না, তবে নিশ্চিতভাবেই যাবার সময়ে দুজনে দুটি শাড়ী পরে বের হয়ে যান।
এই দেশে কে বা কতজন এই জন্য বোরকা পরছেন, কে জানে?
____________________________
চুল বাচাতে আমিও হিজাব ধরব ভেবছিলাম। একদিন পরে টরে মনে হলো এ পোষাবে না। চুল যদি ঢেকেই রাখতে হয় তো চুল সুন্দর হয়ে লাভ কি? অবশ্য চুল আচড়াইতে হবে না এইটাও প্রলোভন ছিল হিজাব ট্রাই করার পিছনে।
সৌদি মহিলারা বোরকার নিচে কি পোশাক পরে বলেন দেখি? সৌদি ফেরত মহিলাদের কাছে যা শুনেছি, অনেকেই গরম সামলাতে নিতান্ত না পড়লেই নয় এমন অল্প পোশাক পরেন, বা কিছুই পরেন না। আর আজকাল যত ফ্যাশনেবল রঙ বেরঙ্গের বোরকা উঠেছে, এগুলার অন্তরে অন্তর্বাস ছাড়া কিছু পরবার দরকার নেই।
আমার ছোট একটা বোন , খেলাধুলায় খুব আগ্রহ , সে হিজাব ধরলো যাতে খেলার পোশাক নিয়ে আপত্তি তুলে কেউ খেলা বন্ধ করতে না পারে। মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের বাইরেও একদল উটকো ছেলে দাঁড়িয়ে থাকত খেলার পোশাকে মেয়েদের টিজ করার জন্য, হুদাই। আর পোশাক পাল্টানোর তেমন ভালো সুবিধাও ছিল না তখন, তাই অনেক মেয়েই খেলার পোশাকের উপর বোরখা চাপিয়ে বের হয়ে যেত।
দুই নম্বুরি কাজ কারবার করতে চাইলে বোরখা টেকনিক্যালি আদর্শ পোশাক। পরিচয় গোপন করে যা খুশি করে পার পেয়ে যাওয়ার এরচে সমাজসিদ্ধ সহজ উপায় আর নাই। বোরখা পরা বলে সিকিউরিটিতে হ্যারাস করা হয়েছে বলে যারা শোর তুলেন, তাদের বোরখার এইটাও মনে রাখা উচিত।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
মনের কথা গুলো এইভাবে বলার মত লোক চৌ(চউ) দা ছাড়া আর কে?
সারারাত ধরে একমত একমত লিখে গেলেও কতটা একমত বোঝাতে পারবো না!
____________________________
বস, আপনাকে স্যালুট।
কি অকপটে যে আপনি মন থেকে মুখে না আসা কথাগুলো লিখে ফেলেন।
এই কমেন্টটা আসলে চউদার জন্য ছিল
চরম উদাসের লেখাটি সত্যিই খুব ভাল লাগলো। আমি ওনার সাথে সম্পুর্ণ এক মত যে তিনি যেই যুক্তি দেখিয়েছেন তা অনুযাই বোরখা আর বাকি পোশাকের সাথে তুলনা হয় না।
এই প্রস্তাব সেই কবে থেকে বলে আসছি, শালার পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নিজের সম্পদের হেফাজতের ব্যাপারে বড়ই উদাসীন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
এত্তগুলো মন্তব্য, বেশিরভাগই পুরুষদের। একটা কথা বলেন তো - নারী কি পোশাক পড়বে - সুসজ্জিত হবে না কি নিজেকে পোটলা বানায় চলবে - এতে সমাজের পুরুষদের মাথাব্যথা কেন?
সে কি! এতগুলো পুরুষ তো সেই কথাটাই এতক্ষণ নানা দিক থেকে বিশ্লেষণ করল!।
- একলহমা
বাংলাদেশে জন্মে দেহ-মন যদি আরবের মরুভূমিতে পড়ে থাকে তবে সে বাঙ্গালী হয় ক্যামনে? মিতা হককে সাধুবাদ জানাই সত্য উপস্থাপনের জন্য। আর লেখকেও ধন্যবাদ সুন্দর একটি লিখা’র জন্য।
মিতা আপার কথার মূল টোনটা তো পোষাকভিত্তিক বাঙালী জাতিত্বত্তের আলোচনা দিকে ছিল না বরং সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মান্ধতার ভয়াবহ উত্থানটার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
এই বিষয়ে পোষাকভিত্তিক বাঙালী জাতিতত্ত্বের আলোচনায় না গিয়ে, শুধুমাত্র সাম্প্রতিক ধর্মান্ধতার ভয়াবহ উত্থানের বিষয়টির দিকে নজর দিলেই উত্তম হয়।
মিতা হক খুবই জরুরি একটা কথা বলেছেন। আর যে যা-ই বলুক না কেন, গত এক দশকে দেশে যে পরিমাণে ইসলামী মৌলবাদ ছড়িয়ে গেছে, বিভিন্ন স্তরে, এটা খুবই আশংকাজনক। আমি আমার পরিচিত গণ্ডিতেই দেখতে পাই তার প্রভাব। সামগ্রিক পর্যায়ে না কী ভয়াবহ একটা ব্যাপার এটা! ধর্মীয় পরিচয়টাকেই অধিকাংশ লোকজন আজকাল বেশি প্রাধান্য দেয়, যা আমার ব্যক্তিগত মতে খুবই অনুচিত।
লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।
আমি সাধারনত আমার যে কোন লেখায় প্রতিটি মন্তব্যের আলাদা করে উত্তর দেবার চেষ্টা করি। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা এবং শারীরিক অসুস্থতা আমার এতদিনের নিয়মের একটি ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে। লেখাটির প্রতিটি মন্তব্যকারীকে আলাদা করে উত্তর দিতে না পারার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সেইসাথে এই লেখাটি যারা পড়েছেন এবং মূ্ল্যমান মতামত যোগ করেছেন তাদের সবার কাছে আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে চরম উদাস'দার মন্তব্যের কথাটা না বললেই নয়। আমি নিজে আমার লেখাটাতে যা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার নিজস্ব অপারগতার কারণে বলতে পারিনি---চরম উদাস'দা তার স্বভাবসুলভ তীক্ষ্ণ রসবোধের মাধ্যমে সেই পয়েন্টগুলো তুলে এনেছেন। তাঁর কমেন্টটা এই লেখাটার অলংকার হয়ে রইল। অনেক ধন্যবাদ চরম উদাস!
আবারো সকলকে ধন্যবাদ জানাই লেখাটি পড়া ও মনোগ্রাহী আলোচনা করার জন্যে। আলাদা করে মন্তব্য করতে না পারার জন্যে আবারো সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে রইলাম।
কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা ভাল জিনিস কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা জেনে খারাপ লাগল। খুব ঝামেলার কিছু নয়ত?
- একলহমা
অসাম্প্রদায়িক বাঙালি পরিবারের সংখা দিনদিন কমে যাচ্ছে! ফেসবুকে বন্ধু ঈদের দিন স্টেটাস দিচ্ছে eid mubarak to my muslim fb friends..... অনেকে লাইক দিচ্ছে........ এসব দেখে কিসসু ভাল্লেগেনা!
......জিপসি
অনিকেত দার সাথে সহমত।
চরম উদাস এর সাথে একমত,তবে এতো লজিক আর এতো ব্যাখা দেওয়ার প্রয়োজন ছিলোনা খুব সম্ভব।
”পোশাক নারীর অধিকার, কে কোন পোষাক পরিধান করবে সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়”।আপনার এই ব্যাখা ঠিক মতো হয়নি,যারা এই কথা বলছে তাদেরকে কেন ছাগু বলছেন,ওদের ভুলটা কোথায় সেটা না ধরিয়ে দিয়ে শুধু ছাগুর অ্যাখ্যা দিলেন।
”যদি জিনস আর টিশার্ট পরলে দোষ না হয় তবে বোরকা পরলে দোষ কথায়? বোরকা যদি আরবের কালচার হয়, প্যান্ট শার্টও তো তবে পাশ্চাত্যের কালচার” এইখানেও আপনার ব্যাখা জোরালো নয়।যে উদাহারন দিয়েছেন সেটা হালকা হয়ে গেছে।কারন নিজের বউকে বোরকা পরাতে পারেনা তারাই এমন বলে বিষয়টা এমন না।
”বোরকা পোশাক না। কালচার না। এটা নিয়ম। ”আপনার এই একটা লাইন যে বুঝবে তাকে আর এতো ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।বোরকা কোন পোশাক না,এটা যে বুঝবে সে আর কোন কথা বলবেনা।আপনার এই লাইন টাই অসাধারন,এটা বুঝে থাকলে সে মিতা হকের কথাও বুঝবে।
ভালোথাকবেন
একটা ঘটনা বলি। স্মৃতি প্রতারক, সুতরাং জায়গার নামটা ভুল হতে পারে তবে মূল বিষয়বস্তু নয়। দুই ইজিপশিয়ান-আমেরিকান বোন, উভয়েই বায়োলজিস্ট, অতি-আধুনিক, বোরকা-হিজাবের ধার ধারেন না। ৯/১১ পর কী হল, মুসলমানদের ওপর ঢালাও আক্রমণের প্রতিবাদেই হয়তবা, তারা হিজাব ও আবায়া পরা শুরু করলেন। খুব অল্পদিনের মধ্যে তারা লক্ষ করলেন তাদের প্রতি পুরুষ সহকর্মীদের আচরণ বদলে গেছে। সবাই প্রফেশনাল হিশেবে তাদের সমীহ করছেন/সম্মান দিচ্ছেন, আগে খোলামেলা পোশাকে যা তারা পেতেন না। বরং অনেক সময়েই পুরুষদের ইঙ্গিতপূর্ণ স্পর্শ বা চাউনি উপহার পেয়েছেন। কিন্তু ওই পোশাকের কারণে এই প্রথমবারের মত তাদের শরীর যেন গৌণ হয়ে পড়েছে এবং তারা একজন মানুষের, একজন পেশাজীবীর মর্যাদা লাভ করছেন, যা তাদের প্রাপ্য। এই কথাগুলো ওই দৃই বিজ্ঞানী বছর দু-তিনেক আগে [i]দি নিউ ইয়র্ক টাইমস[i]কে বলেছিলেন। পত্রিকাটি নতুন প্রজন্মের কলেজ-ইউনিভার্সিটি এডুকেটেড মুসলিম নারীর উপর একটি স্টোরি করেছিল, ওপরের বয়ান আমি সেখানেই পড়ি। এমন অনেক মেয়ে দেখি যারা হিজাব পরেন কিন্তু এভাবে যে ওটা আর হিজাব নেই, ফ্যাশন অ্যাকসেসরিতে পরিণত হয়েছে। ঠিক ইরানের মেয়েরা যেমন, আবায়ার নিচে স্কিনটাইট জিন্স পরছে। এও বোধহয় একধরনের স্টেটমেন্ট। জানি না।
৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, খাড়া রোদ আর শূন্য় ভাগ উষ্ণতায় সারা শরীর ঢাকা লম্বা পোষাক আর মাথা ঢাকা কাপড়ের উপকারিতা বুঝতেছি। কিন্তু বাংলাদেশে এই তাপমাত্রা হয় কোনদিন?
বাংলাদেশের যে জলবায়ু (উষ্ণ, আর্দ্র, এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত), তার জন্য শাড়ি/লুঙ্গি আদর্শ পোশাক। এগুলি ঢিলেঢালা বলে ventilation সহজ হয়, আবার অন্যদিকে বৃষ্টিতে ভিজলে শুকায়ও তাড়াতাড়ি। এমনকি বৃষ্টির সময় দরকার মনে করলে শাড়ি/লুঙ্গি গুটিয়ে হাঁটু পর্যন্ত তুলে ফেলা যায়।
আর আপনি যদি মরুভূমিতে থাকেন, তাহলে নাকে-মুখে-চোখে-কানে বালি ঢোকা থেকে বাঁচার জন্য হিজাবের একটা উপযোগিতা আছে। আলটিমেটলি, পোশাক একটা environmental adaptation। যেমন, শীতপ্রধান দেশের লোকেরা টাইট-ফিটিং জামাকাপড় বেশী পরে, কারণ এই ধরণের পোশাক পরলে শরীরের উষ্ণতা বজায় থাকে।
চরম উদাসের লেখাতে , লিঙ্ক থেকে মুরশেদ ভাই এর লেখা আর মন্তব্য পড়ে মাথা নষ্ট হয় যাবার দশা, কি ভয়াবহ
ইসরাত
ভালো লেগেছে লেখাটা।
আর চরম উদাস'দার মন্তব্যটা কপি করে রাখলাম।
অফলাইনেও বিলি বন্টনের প্রয়োজন . হতে পারে!!
সোহান হাসনাত
নতুন মন্তব্য করুন