চলচ্চিত্রালোচনাঃ ডিয়ার জিন্দেগী

অনিকেত এর ছবি
লিখেছেন অনিকেত (তারিখ: রবি, ০৪/১২/২০১৬ - ১১:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি হিন্দী মুভির ভক্ত না। সমালোচক তো আরওই না। তবে মাঝে মধ্যে কোতুহল হলে যে দেখি না--তা নয়। নায়কদের মাঝে আমির খানকে এগিয়ে রাখি তার ছবি তৈরির ডিভোশন এবং এক্সপেরিমেন্টেশন করার সাহস ও ক্ষমতার জন্য। নতুন নায়কদের মধ্যে রনবীর নামের একটিকে আমার বেশ পছন্দ (সিং-ওয়ালা না কাপড়-ওয়ালা--নিশ্চিত নই)-- যার বরফি ছবিটা মনে ধরেছিল (যদিও প্রভূত পরিমানে নানান চলচ্চিত্র থেকে টুকলিফাই করা এবং ধরা পড়ার পরেও পরিচালক বা প্রযোজক--কারো পক্ষ থেকেই দুঃখ প্রকাশ বা কোন ব্যাখা দেখিনি--অন্তত আমার চোখে পড়েনি)।

যাক সে সব কথা। কাজের কথায় আসি। ইউ টিউব ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ল একটা ছবির ট্রেইলার --- Dear Zindagi ! নিজের জীবনে আমি এখন এমন একটা জায়গায়--সেটাকে ঠিক ডিয়ার বলার মত অবস্থা বলা যাবে না। আমার নিজের জীবন নিয়ে ছবি হলে ঐটার নাম হতো--Fear Zindagi !! আবারো প্রসঙ্গ থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। ছবিতে দেখলাম আলিয়া ভাট আর শাহরুখ খান আছেন। মনটা কিঞ্চিৎ দমে গেল। শাহরুখ খান হলেন আমির খানের প্রায় বিপরীত একজন অভিনেতা। খুব হিসেব নিকেশ করে ছবি হাতে নেন। নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল---কাজেই যে সব রোল উনি পারবেন না বলে উনি নিজে মনে করেন, সেই গুলো নিয়ে এক্সপেরিমেন্টাশনও করতে চান না। ইংরেজিতে যাকে বলে 'সেইফ প্লেয়ার'। আলিয়া অল্প বয়েসী ছটফটে মেয়ে। তবে একটা সমঝদার মাথা আছে ওর। আরো আছে একটা স্বতঃস্ফুর্ত গানের গলা। ওরা গাওয়া "Mein Tenu Samjhawan ki" শুনে মুগ্ধ হন নি এমন মানুষ পাওয়া শক্ত। আমি ওর 'টু স্টেটস' ছবিটা দেখেছিলাম এবং অভিনয় ভাল লেগেছিল।

তো, ডিয়ার জিন্দেগীর ট্রেইলার দেখে মনে একটা ইন্টারেস্ট জাগল। হিন্দী ছবির গত ৬-৭ বছরে একটা ট্রেন্ড নজরে পড়ার মত---সেটা হল, সাহসী কিছু ডিরেকটর এসেছেন এবং তারা হিন্দী সিনেমার ফর্মেট ভাঙ্গার চেষ্টা করছেন সচেতন ভাবেই। গৌরি শিন্ডে তেমন একজন। উনার প্রথম ছবি English Vinglish একই সাথে দর্শক এবং সমালোচকদের কাছে হিট হয়েছিল। সেই ছবিটা তার নিজের জীবনের উপর ভিত্তি করে (তার সাথে তার মায়ের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে) বানানো। এই ছবিটাও আত্মজীবনী-ভিত্তিক কি না জানিনা তবে ছবিটার কাহিনীর মাঝে এক ধরনের সরলতা আছে যা সাধারনত আত্মজীবনীমূলক ছবি গুলোতে থাকে। ছবিটার কাহিনী ‘সরল’ বলাতে ধরে নেবেন না যেন কাহিনীতে গিট্টু নেই, টার্ণ-ট্যুইস্ট নেই। সেসব আছে। এখনকার সময়ের আর দশটা বিশ-একুশ বছর বয়েসী, সচ্ছল স্বাধীনচেতা মেয়েদের জীবনে যে সকল জটিলতা উপস্থিত হয়--তার সব গুলোই উপস্থিত আছে!

বিশ-পঁচিশের মূল সমস্যা হল মানবিক সম্পর্ক। মা-বাবার সাথে সম্পর্ক, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সম্পর্ক, প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে সম্পর্ক---সম্পর্কের এই ভীষন জটিল আপাত দুর্বোধ্য গোলকধাঁধায় ঘুরে ফেরা এই কম বয়েসী মানুষগুলো নানান সময়েই বড় বিপন্ন বোধ করতে থাকে। এই সমস্যা গুলো তাদের জন্যে নতুন--আবার সম্পর্ক ঘটিত জটিলতা থাকার কারণে যে সকল জায়গা থেকে তারা উপদেশ পেতে পারত (যেমন বাবা-মা-ভাই-বোন) তাদের কাছেও মনের আগল খুলতে পারে না। তারা মনে করতে থাকে যে তাদের জন্যে কোন সেফটি নেট, কোনো সাপোর্ট সিষ্টেম নেই। সারা বিশ্বের জন সংখ্যার ১৬% হল এই বয়েসি মানুষ গুলো এবং তাদের মাঝে বেশির ভাগই এমন সমস্যায় ভুগছে। তাদের সমস্যা গুলো বড়রা বুঝতে চান না/ পারেন না (যেন তারা কখনো এই বয়েসের মধ্যে দিয়ে যান নি), ছোটরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। ফলে তাদের আশা-ভরসার স্থল শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই। এই বয়েসে মানুষ প্রথম বারের মত জীবনের মোকাবেলা করতে নামে কোন ঢাল-তলোয়ার ছাড়া। এই বয়েসে মানুষ প্রথমবারের মত অনুভব করতে পারে তাদের চোখ থেকে খসে পড়ে গেছে শৈশবের রঙিন চশমাটি। জীবন আসলে যত নিষ্করুন, যতটুকু নির্মম--তার সকলটুকু নিয়েই এদের সামনে এসে দাঁড়ায়---আর এই মানুষ গুলো অপ্রস্তুত হয়, হতবাক হয়--ঠিক যেন অন্ধকার রাস্তায় দ্রুতগামী গাড়ির চোখ ঝলসানো আলো দেখে যুগপৎ আতংকে বিস্ময়ে জমে যাওয়া হরিণের মত। আর পরিনতিটাও হরিণের মতই হয়---দ্রুতগামী জীবন নিদারুন নির্মমতায় তাদের ঝড়ের মুখে কুটোর মত করে উড়িয়ে ফেলে দিয়ে যায়। আহত এই মানুষগুলোর মূল ভবিষ্যত পরিনতি দুইটিঃ হয় তারা ধীরে ধীরে নিজেকে বাঁচাতে শিখে ফেলে আর নয়ত অনেকেই বেছে নেয় আত্ম-বিধ্বংসী কোন পথ--যন্ত্রণা বন্ধ করার একটা নিশ্চিত পথ হল নিজেকে মুছে ফেলা! প্রতিদিন গড়ে ৯৪ জন যুবক-যুবতী নিজেদের এই পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলে!

ডিয়ার জিন্দেগী ঠিক এই সমস্যাটা নিয়েই কথা বলেছে। দেখিয়েছে আমাদের শিশু-কিশোর-যুবা কতটা অসহায় বোধ করে জীবনের এই সমস্যা গুলো মোকাবেলা করতে গিয়ে। এই বয়েসটাতে মানুষ নিজেকে চিনতে পারা শুরু করে। আশে-পাশের সকল কিছুই তখন তার অনাঘ্রাত কোমল মনে ছায়া ফেলে। এই নিজেকে চেনার যুদ্ধে সবাই কম-বেশি হতাহত হয়---এই সময় পেরিয়ে যারা প্রৌঢ়ত্বে উত্তীর্ণ হই তারা সকলেই কিন্তু সেই যুদ্ধের ক্ষত বুকে নিয়ে বেড়াই। অন্যান্য সকল ক্ষত-র মতো এইগুলোরও পরিচর্যা না করলে ফলাফল মারাত্নক হতে পারে। এই ক্ষত গুলোর পরিচর্যা করা এবং আহত মন গুলোকে সুস্থতার পথ দেখানোর কাজ গুলো করেন সাইকোলজিষ্ট আর সাইকিয়াট্রিষ্টরা।

ছবির কাঠামোটা মোটামুটি এই রকমঃ কিয়ারা ( একেবারে অভারতীয় নাম, কেমন জানি Anime চরিত্রগুলোর নামের মত শোনায়) নানা রকম যন্ত্রণায় আছে। ভাড়া বাসা থেকে উৎখাত হওয়া, মা-বাবা যাদের সাথে দুই মিনিট ভাল করে কথা বলতে পারে না ঝগড়া করা ছাড়া---তাদের কাছে ফিরে যাওয়া এবং আরো অন্যান্য হৃদয়ঘটিত সমস্যাবলী তো আছেই। এই সকল সমস্যা নিয়ে যখন সে পাগল-পারা এবং ইনসম্নিয়ায় ভুগছে--তখন জাহাঙ্গীর খান নামের একজন সাইকোলজিষ্ট-এর সাথে তার পরিচয় হয়। জাহাঙ্গীর উর্ফে ‘জাগ’ কিয়ারার সকল কিছু শুনে তাকে সাহায্য করতে রাজী হোন। এবং ছবির বাকী অংশ এই দুই অসম বয়েসী মানুষের হৃদ্যতার গল্প, একজন আহত কিন্তু বিজয়ী মানুষের আরেক আহত মানুষকে জিতিয়ে দেবার জন্যে হাত বাড়িয়ে দেবার গল্প।

আমার কাছে যে জিনিস গুলো ভালো লেগেছে তার কিছু নীচে বলছি যথাসম্ভব কাহিনী স্পয়েল না করেঃ

  1. মানবিক এবং মানসিক সমস্যা গুলো নিয়ে আমাদের কথা বলার সময় এখন হয়েছে--এবং ঠিক এই সময়ে এই রকম একটা ছবি দরকার ছিল জনগন মনে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যে
  2. আলিয়া ভাট ( যার এক বোন প্রায় একই রকম সমস্যায় ভুগছেন) তার চরিত্রটির দুঃখ-আনন্দ-অসহায়তা-আত্ম-সমর্পন,আত্ম-উদবোধন ও উদযাপন কোন রকম ভনিতা বা ম্যানারিজম না এনে পরিবেশন করেছেন। তার ছবি মাত্র দুইটি দেখেছি--এবং দুইটিতে তার সাবলীলতা প্রশংসনীয়। আমার ধারণা বলিউডের জগতে মাথাটা ঠান্ডা ও সুস্থির রাখতে পারলে অনেক দূর ইনি যাবেন
  3. শাহরুখ খান তার ফর্ম্যাট ভেঙ্গে (তার জন্যে) যথেষ্ট দুঃসাহসিক রোলে অভিনয় করেছেন। জাহাঙ্গির খান হিসেবে তার প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার দাম দর্শক এবং সমালোচক উভয়েই দেবেন আশা করি। নিজের কম্ফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বুকের পাটা থাকতে হয়---বেশ দেরীতে হলেও সেটা করে দেখানোর জন্য উনি সাধুবাদ পেতেই পারেন
  4. মা-বাবারা অনেক সময়েই ‘তোদের ভালোর জন্যেই তো’ ব্যানারের নীচে অনেক অমানবিক কাজ করে বেড়ান এবং সেগুলোর জন্যে তারা কখনো জবাবদিহি করেন না। এবং তারা আনন্দের সাথে একটা জীবন কাটান যে জীবনে তারা কখনোই তাদের কৃত কর্মের জন্যে সন্তানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন না। আমাদের উপমহাদেশীয় সংস্কৃতিতে আমরা সাধারনত আমাদের পিতা-মাতার ‘সম্পত্তি’ হিসেবে গন্য হই, তাদের নানান অপরিনামদর্শী গবেষনার গিনিপিগ হই---এবং এইজন্যে তাদের কখনো সামান্য মর্মাহতও হতে দেখি না। ছবিটিতে এই বিষয় নিয়ে একটা চমৎকার অংশ রয়েছে--যা তাদের জন্য শিক্ষামূলক হতে পারে বলে মনে করি--Its never too late to say sorry, you know?

এবার যেগুলো খারাপ লেগেছেঃ

  1. উচ্চ বিত্ত পরিবার নিয়ে ভারতীয় ছবি বানানেওয়ালাদের আদিখ্যেতা কবে শেষ হবে? আমি ধরে নিচ্ছি যে এই ছবির আরো অনেক উদ্দেশ্যের মাঝে জনসচেতনতা সৃষ্টিও একটা ছিল। এখানে নায়িকা ও তার পরিবারের যে জীবনযাত্রা দেখানো হয়েছে---সেটা সাধারণ ভারতীয় জীবনযাত্রার কতটুকু প্রতিচ্ছবি তুলে ধরছে--আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে। সাধারণ মানুষ যদি ছবি দেখা শেষ করে বাসায় ফেরার সময় ভাবে---এইগুলো বড়লোকদের খাম-খেয়ালি ব্যাপার--আমাদের মাঝে এইসব ‘দুঃখবিলাস’ করার সুযোগ কই---তাহলে বলতে হবে ছবি এইখানে মারাত্মক ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
  2. নায়িকা একরাশ বন্ধু-বান্ধবী দ্বারা পরিবেষ্টিত যারা কমিক রিলিফ দেবার জন্য উপস্থিত। এদের চরিত্র কখনোই পূর্ণতা পায় না, ভিন্ন মাত্রা পায় না। এরা এক ধরণের সেবাদাস হয়ে থাকেন। এখন সময় এসেছে এইসব পার্শ্ব চরিত্র গুলোকে আরো খানিকটা মর্যাদা দেবার।

তো মোটামুটি এই আমার মুভি-রিভিউ। আমার ভাল লেগেছে। পাঁচের মাঝে সাড়ে তিন তো অবশ্যই দেব।
ছবিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিনিট। অমিত ত্রিবেদীর সুর করা গান গুলোর শরীরে সমসাময়িকতার আলো জাজ্বল্যমান। শুনতে খারাপ লাগে না--বিশেষ করে জীবনকে হারিয়ে ফেলে আবার নতুন করে খুঁজে পেয়ে ভালবাসার গান Love you Zindagi এবং তার ঠিক উল্টো ভাবের Go to hell, aye dil উল্লেখযোগ্য বলে মনে হয়েছে।

তাহলে আপনারা দেখে আসুন, দেখুন পাঁচে কতটা দিতে পারেন।

শুভেচ্ছা !!

ছবি: 
24/08/2007 - 9:17পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

mithun1989 এর ছবি

আলিয়া ভাটের "হাইওয়ে" আর "উড়তা পাঞ্জাব" মুভি দুটো দেখতে পারেন!

অনিকেত এর ছবি

ধন্যবাদ মিঠুন! দেখার চেষ্টা করব।

শুভেচ্ছা নিরন্তর!

সামিউর এর ছবি

০১। মানসিক রোগের কথা বলা হলেও, মানসিক সমস্যার সমাধান কি এইভাবে করা হয় কি না সেই প্রশ্নটা থেকে যায়।
০২। আলিয়া দুর্দান্ত প্রতিভাবান নায়িকা (ভাট পরিবার থেকে আনএক্সপেক্টেড)। হাইওয়ে, টু স্টেটস, উড়তা পাঞ্জাব, এখন ডিয়ার জিন্দেগি এই চয়েসগুলা যেমন ভালো ঠিক তেমনি কমার্শিয়াল ভাবেও সফল।
০৩। শাহরুখ প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করেছেন কিন্তু কেন যেনো তা দর্শকরা গ্রহণ করেন নি। স্বদেশ, মাই নেম ইজ খান, চাক দে ইন্ডিয়া - বেশ ভালোই প্রচেষ্টা বলা যায়।
বাকি সবগুলাতে কঠিন সহমত।

অনিকেত এর ছবি

১) সকল প্রকার মনোবিকলনের চিকিৎসা তো এই ভাবে সম্ভব না---একেক রোগের একেক টোটকা। এই ছবির ক্ষেত্রে মেয়েটির আসলে কিছু সঠিক দিক নির্দেশনা দরকার ছিল যা তার ডাক্তার সরবরাহ করেছেন। আমার জানা মতে এই রকম ভাবেই ( মানে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে) প্রাথমিক ভাবে সাহায্য করা হয়। যদি বিকলন আরো গুরুতর রূপে প্রকাশিত হয় (যেমন ডিপ্রেশন, এংজাইটি ডিসোর্ডার) সেক্ষেত্রে সাকিয়াট্রিষ্ট ও সাইকোলজিষ্ট এক সাথে কাজ করেন।

দেবদ্যুতি এর ছবি

অনেকদিন পর শাহরুখের একটা ভালো সিনেমা দেখার আশা রাখছি। দেখার পর আপনার লেখাটা আরেকবার পড়ব কারণ এ লেখা সিনেমাটা দেখার আগ্রহ বাড়িতো দিলো।

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

অনিকেত এর ছবি

অবশ্যই দেখে জানাবেন ! শুভেচ্ছা জানবেন

অতিথি লেখক এর ছবি

দেখার ইচ্ছে আছে। টু ডু তালিকায় রাখলাম।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

অনিকেত এর ছবি

ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিরন্তর

অতিথি লেখক এর ছবি

শাহরুখ বা সালমান প্রকৃতির অভিনেতাদের উৎকট আদিখ্যতার ব্যপারটা যদি নাও থাকতো, তবুও উচ্চবিত্ত/উচ্চমধ্যবিত্তদের জীবনের টানাপোড়েন নিয়ে নির্মিত ছবি নিয়ে কেন যেন তেমন আগ্রহ খুঁজে পাই না। যেমন বাংলাদেশের গুলশান বনানীর ধনকুবেরের স্ত্রী-সন্তানদের জীবনের সমস্যা আমাদের মত সাধারণ মধ্যবিত্তদের পক্ষে অনুধাবন করা কঠিন। এই ছবির পোষ্টার দেখে যতদূর মনে হচ্ছে এইটাও ঐ একই ঘরানার ছবি।

এন.জি.ও.র কাজের সুবাদে ভারতে যাওয়া হয়েছে অনেকবার, বিশেষ করে দিল্লী, মুম্বাই, গোয়া এসব এলাকায়। আমি যতদূর দেখেছি তাদের মধ্যবিত্তদের জীবনমান বাংলাদেশের মতই। বরং ওখানে কিছু কিছু এলাকায় নিম্নবিত্তদের অবস্থা খুবই করুণ, এমনকি বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ। আপনি যদি একটু লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন যে ভারতে কিন্তু ছবি বানানোর জন্য ইন্টারেস্টিং বিষয়ের অভাব নেই, বিশেষ করে পরিচালক যদি মানুষের জীবনের সমস্যা নিয়েই ছবি বানাতে চান। যেমন ধরুন ভারতীয়দের উম্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের ব্যপারটা, সমস্যাটা এতটাই ভয়াবহ যে আমাদের, মানে বাংলাদেশীদের জন্য কল্পনা করা কঠিন। ওখানে অনেক বড় রাস্তায় লেখা থাকে "য়াঁহা হাগনা মানা হ্যায় (এখানে মলত্যাগ করা নিষেধ)" মুম্বাইয়ের মত শহরেও এরকম সাইনবোর্ড আমি দেখেছি। এই সমস্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ১৫ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্রটি দেখতে পারেন --

Pooping on the beach in India

কিন্তু ভারতীয় নির্মাতা-পরিচালকরা এইরকম একটা ভয়াবহ সমস্যা খুব সুনিপুণ ভাবে এড়িয়ে চলেন। এমনকি যারা জীবনমুখী চলচিত্র নির্মান করেন তারও এরকম বিষয় নিয়ে ছবি বানান না। বিনোদন ধর্মী চলচিত্রের আবেদন সব সময়ই আছে, থাকবে, কিন্তু বাংলাদেশ বা ভারতের মত দারিদ্রপিড়ীত দেশের জন্য অবাস্তব এবং সুখ-কাল্পনিক, মেলোড্রামাটিক উচ্চবিত্ত বা পশ্চিমা দেশের অভিবাসীদের জীবন নিয়ে নির্মিত ছবি আমার কাছে কেমন যেন অসুস্থতার মত মনে হয়।

অনিকেত এর ছবি

একেবারে সহমত। এইজন্যেই আমার রিভিউতে লিখেছি যে

উচ্চ বিত্ত পরিবার নিয়ে ভারতীয় ছবি বানানেওয়ালাদের আদিখ্যেতা কবে শেষ হবে?

শুভেচ্ছা জানবেন

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা, এইডা কি ভিডিও দেখাইলেন ভাই? পুরাই মাথা নষ্ট। আমার ল্যাবে এক ইন্ডীয়ান আছে, চান্স পাইলেই বাংলাদেশকে পচায়, দেখি এখনই ফেসবুকে শেয়ার দেই।

-- পরজীবি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

হাগামুতার মত বিষয়বস্তু নিয়ে ছবি বানালে সে ছবির দর্শক হবে কারা?

সোহেল ইমাম এর ছবি

ছবিটা দেখতে ইচ্ছে করছেনা। তবে আপনার লেখাটা ভালো লাগলো। খুব সুন্দর করে লেখেন, এই লেখা পড়ার লোভেই আপনার যে কোন বিষয় নিয়ে লেখাই গোগ্রাসে গিলি।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অনিকেত এর ছবি

ধন্যবাদ সোহেল ইমাম---আপনার মন্তব্য আমার জন্যে একটা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকল।

শুভেচ্ছা নিরন্তর!

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো কথা কইছেন, এটা একটা চিন্তার বিষয় বটে, সিরিয়াস স্ক্রিপ্ট রাইটার থাকলে হয়ত এই নিয়ে সুন্দর লাভ স্টোরি বানাইতে পারতো, যেমন ধরেন নায়ক (শাহরুখ খান) রেগুলার সুমদ্রের ধারে গিয়া মলত্যাগ করেন, আর ওইদিকে নায়িকাও (আলিয়া ভাট) তার কয়েক গজ তফাতেই মলত্যাগ করেন। এভাবে একসাথে মলত্যাগ করতে করতে দুজনের চোখে চোখে দেখা থেকে প্রেম, কিন্তু আলিয়া ভাট এদিকে ডিভি পেয়ে চলে যান নিউইয়র্ক, নিউ ইয়র্কে গিয়ে কমোডে মলত্যাগ করতে গেলে তখন তাঁর খালি দেশে ফেলে আসা প্রেমিক আর সেই মলপূর্ণ সমুদ্র সৈকতের কথা মনে হয়, যে কারণে আলিয়া ভাট কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হোন এবং সেখান থেকে মেন্টাল ব্রেক ডাউন, ইত্যাদি। এর মধ্যে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন লোকেশনে কিছু গান, ঐ মলপূর্ণ সৈকতে কিছু গান, আর কিছু একশন ফ্লিক দিলে মনে হয় ভালই দর্শক পাওয়া যাবে।

-- পরজীবি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চ্রম আইডিয়া! চলুক সিরিয়াসলি বলছি, আইডিয়াটা অতিসত্বর কপিরাইট করে রাখেন, চুরি হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। যদি সেন্সর বোর্ড অযথা কাটাকুটি না করে, তাহলে এই ছবি যে সুপার ডুপার বাম্পার হিট হবেই হবে, সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই। মলাশয় সৈকতে দুই-তিন'শ সহযোগী শিল্পী সহ দুর্দান্ত মল নৃত্যে শাহরুখ আলিয়ার শৈল্পিক হাগাহাগি আমি মানসচক্ষে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।