বাংলাদেশে যেভাবে শিবিরের উত্থান

জাহামজেদ এর ছবি
লিখেছেন জাহামজেদ [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১৮/০৮/২০১০ - ১:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্ব : ০১

ইসলামি ছাত্র সংঘ নামটার সাথে বাংলাদেশের কমবেশি সব মানুষই পরিচিত। আমিও পরিচিত। কিভাবে পরিচিত, গালি দিতে দিতে পরিচিত, মানুষ আলবদর রাজাকার বলে যখন গালি দেয় সেই গালি শুনে পরিচিত, একাত্তরে দালালি করছে, মানুষ খুন করছে, লুটপাট করছে এসব শুনে পরিচিত। আমি নিজে এই নামটার সাথে পরিচিত হই কৈশোরেই। স্কুলে আমাদের ক্লাসের এক স্যার ছিলেন, আমাদের সবচেয়ে প্রিয় স্যার ভালোবাসার স্যার, যিনি আমাদেরকে ছেলে বলে ডাকতেন, সেই স্যারের কথায় আমরা প্রথম জানতে পারি, আমরা মানে আমাদের ক্লাসের সব বন্ধুরা,ছাত্র সংঘ নামটার ইতিহাস। তখন আমাদের স্কুলের সামণে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দাঁড়িয়ে থাকতেন ভদ্রবেশি দু'তিনজন যুবক। স্যার ক্লাসে এসে আমাদেরকে ওই যুবকদের সম্পর্কে সতর্কবাণী শোনাতেন, বলতেন ওরা শিবির, ওদের থেকে সাবধান, ওরা একাত্তরের ঘাতক, ওরা রাজাকার, ওরা আলবদর, ওরা অনেক মানুষকে একাত্তরে হত্যা করেছে, অনেক লুটপাট করেছে, ওদের কথা কখনো শুনো না, ওদের ডাকে কখনো সাড়া দিও না। স্কুল ছুটি হলে ওরা আমাদেরকে ডাকতো, আমি যেতাম না, আমার বন্ধু নোমান যেত না, হাসান যেত না, আমাদের ক্লাসের কেউই ওদের কাছে যেত না। তারপরও ওরা আমাদেরকে নানা ধরণের প্রলোভন দেখাতো, স্টিকার দিতে চাইতো, ক্যাসেট দিতে চাইতো, ফুলকুঁড়ি নামের একটা সংগঠনে যাওয়ার জন্য বলতো। আমরা ওদের কথা পাত্তা না দিয়ে স্যার কে গিয়ে এসব কথা বলতাম। স্যার কান্নাজড়ানো কন্ঠে আমাদের সাথে গল্প করতেন, বলতেন, বাবারা ওরা হচ্ছে সেইসব পিশাচ, যাদের পূর্বসুরিরা একাত্তরে এদেশে গণহত্যা চালিয়েছিলো, লাখ লাখ মানুষ এরা খুন করেছে, মানুষের সম্পদ লুটপাট করেছে, এরা হায়েনার দল, এরা রক্তচোষা, এদের থেকে তোমরা দুরে থাকবে, জীবনে আমার একটা কথা তোমরা রেখো, কোনোদিন এইসব রাজাকার আলবদর ছাত্র সংঘের মানুষদের সাথে হাত মেলাতে যেও না।। তখন আমরা শুনেছিলাম ইসলামি ছাত্র সংঘের নাম, শুধু আমি না, আমার ক্লাসের প্রায় সবাই শুনেছিল এই পশুদের কথা, বর্বরদের কথা। স্যার আরো বলতেন, স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে যারা তোমাদেরকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করে তারা শিবির, তারাই বর্বর পশুদের উত্তসূরি, এরাই ছাত্র সংঘ নামের কুলাঙ্গারদের উত্তরসূরি। তারপর স্যারের চোখে আমরা পানি দেখতাম, স্যার বাইরে তাকাতেন, তার সেই দৃষ্টিতে কি থাকতো আমরা তা বুঝতে পারতাম না। কিন্তু আমরা স্যারের কথা রেখেছিলাম, আমাদের ক্লাসের কেউ শিবির করেনি,কোনোদিন না, আমরা শুধু ঘৃণাই করে গেছি এই পশুদের, এই বর্বরদের। স্যার বেঁচে নেই, সিলেটে গণহত্যা নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্রের সিরিজ করতে গিয়ে আমি পুরো সিলেট চষে বেড়িয়েছি ২০০৬/০৭ সালে। সিলেটের গণহত্যা নিয়ে এই সিরিজের পরই সচলায়তনে আরেকটা সিরিজ লিখবো। প্রামাণ্যচিত্রের কাজে তখন একদিন স্যারের গ্রামে গিয়েছিলাম, তখন অবাক হয়ে আমি শুনেছি, স্যার মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, একাত্তরে রাজাকার আলবদরদের সহযেগিতায় স্যারের দুই ভাই ও বাবাকে খুন করে পাক সেনাবাহিনী। অথচ স্যার কখনোই আমাদেরকে এই কথাগুলো বলেননি, স্যার শুধু রাজাকার আলবদর বলে গালি দিতেন, তারপর বাইরে তাকাতেন, তার চোখে জল টলমল করতো, অসম্ভব ভদ্র একজন মানুষ গালি দিতেন এই বলে, শিবির নামের কুলাঙ্গারা আসলে ছাত্রসংঘ।

এই সিরিজটা উৎসর্গ করছি এক মুক্তিযোদ্ধাকে, একাত্তরে স্বজন হারানো এক মানুষকে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও যে মানুষটি যুদ্ধ করে গেছেন দেশবিরোদী শক্তির বিরুদ্ধে, সেই মানুষ, একজন যোদ্ধা, একজন বীর, আমার প্রিয় শিক্ষক শফিকুর রহমানকে...

ইসলামি ছাত্র সংঘ থেকে ইসলামি ছাত্রশিবির :

জিয়াউর রহমান নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সেক্টর কমানডার ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য তিনি বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতির সূচনা করার সুযোগ করে দেন। বিশেষত, রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের শুধু ক্ষমাই করে দেননি, ভবিষ্যতের এসব দেশবিরোধী শক্তির যেন বিচারের মুখোমুখি না দাঁড়াতে হয় তার জন্য ১৯৭২ সালের প্রণীত দালাল আইন ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসে বাতিল করে দেন। জিয়াউর রহমানের দালাল আইন বাতিলের ফলে জেলে আটক প্রায় ১১ হাজার রাজাকার সে সময় মুক্ত হয়। তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের রাজনৈতি করার সুযোগ দিয়ে রাজনীতিকে ধর্ম ব্যবসায়ী আর মৌলবাদীদের এক রকমের লিজ দেওয়া হলো। একাত্তরের আলবদর রাজাকারদের অনেকেই জেল থেকে বের হয়ে এসে শুর করে আনন্দ উল্লাস। যারা পালিয়ে ছিলো তারাও জনসম্মুখে বের হয়ে এলো। এরপর ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখে ঢাকার সিদ্দিক বাজার কমিউনিটি সেন্টারে আলবদর রাজাকাররা একটি সভায় মিলিত হয়। আলবদরদের সেই সমাবেশে আবার রাজনীতির মাঠে প্রকাশ্যে নামার প্রস্তুতি নেয় ইসলামি ছাত্রসংঘ নামের একাত্তরের ঘাতক সংগঠনটি। কিন্তু ছাত্র জামাতের নীতি নির্ধারকদের মনে এই ভয় ছিলো, ছাত্রসংঘ নামটাকে হয়তো মানুষ একাত্তরে তাদের পৈশাচিক কর্মকান্ডের জন্য ভুলে যাবে না, এই চিন্তা থেকেই তারা ছাত্রসংঘের সংঘ কেটে সেখানে শিবির যোগ করে দেয়। এই শিবির নামটি এসেছে কোথা থেকে, পাকিস্তান আমলে জামাতের শিশু কিশোরদের একটা সংগঠন ছিলো শাহিন শিবির, শাহিন শিবির নিয়ে এসে ইসলামি ছাত্রসংঘের নাম হয়, ইসলামি ছাত্রশিবির। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রয়ারি স্বৈরাচারের পৃষ্টপোষকতায় বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম হয় একাত্তরের ঘাতক দালাল ও তাদের উত্তরসূরিদের নিয়ে ইসলামি ছাত্র শিবির নামের বর্বর পৈশাচিক এক সংগঠনের।

ইসলামি ছাত্রসংঘ বাদ দিয়ে শুধু শিবির করা হয়, আর সবকিছুই একই থাকে। পতাকা মনোগ্রাম সবই এক। প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, পাঠক্রম, এমনকি জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত নেতৃত্ব কাঠামো সবই এক থাকে ইসলামি ছাত্রসংঘের মতোই।

শুরুতেই এই কথাটা আমরা জেনে রাখি, ইসলামি ছাত্রশিবির মানে ইসলামি ছাত্রসংঘ, ইসলামি ছাত্রসংঘ মানে আলবদর রাজাকার, আলবদর রাজাকার মানে একাত্তরে হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষ খুনী, লুটপাটকারী, দালাল।

সবকিছু যদি এক তাহলে কেন এই নাম পরিবর্তন ? নামবদলের কারণ, প্রথমত, আলবদর বাহিনীর সাথে ইসলামি ছাত্রসংঘের সম্পর্ক ছিলো আনুষ্টানিক। জামাতের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় পাকিস্তানের সামরিক সরকার এই বাহিনী গঠন করে। পরবর্তীতে বদর বাহিনীর মূল নেতৃত্ব ন্যাস্ত হয় ইসলামি ছাত্রসংঘের হাতে। দ্বিতীয়ত, বদর বাহিনীর হিংস্র এবং পৈশাচিক কার্যকলাপ বাংলাদেশের মানুষের মনে একটা স্থায়ী ঘৃণার ভাব সৃষ্টি করেছে। জামাত তখন ভালো করেই জানতো এই ঘৃণাটা কখনো দূর হবে না। ইসলামি ছাত্রসংঘের কথা উঠলেই অবধারিতভাবে আলবদর বাহিনীর কথা চলে আসবে। এর ফলে সংগঠন সম্প্রসারণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তৃতীয়ত, যদি কখনো স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি উদ্ভব ঘটে তখন আইনগত ভাবে ফেসে যেতে পারে ইসলামি ছাত্র সংঘ। সেক্ষেত্রে যাতে সংগঠনের কাজ ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য জামাতিরা এই নামবদলের কাজটা প্রথম সুযোগেই সম্পাদন করে ফেলে। চতুর্থত, নতুন কর্মী সংগ্রহের ক্ষেত্রে যদি আলবদর এবং ইসলামি ছাত্রসংঘের সম্পর্কের বিষয়টি নতুন কর্মীদের মনে প্রশ্ন ও সন্দেহ জাগায় তাহলে সেটা সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর হবে। ইসলামি ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামি ছাত্রশিবির নামে তাদের কার্যক্রম শুরু করার পর শিবিরের প্রথম সভাপতি হয় মীর কাশেম আলী ও সেক্রেটারি হয় মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

মীর কাশেম আলীর ডাক নাম পিয়ার। ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে মীর কাশেম আলী ছিলো জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি, পরে রাজাকার কর্মে কৃতিত্বের পুরস্কার হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়া হয় তাকে। স্বাধীন হওয়ার পরপরই সে পালিয়ে যায় সৌদি আরব। ফিরে আসে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরে। তারপর জিয়াউর রহমান সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। শিবিরের প্রথম সভাপতি হবার পর সে মহানগর জামায়াতের আমির হয়। 'একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়' বই থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে মুসলিম ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সমাবেশে সভাপতির ভাষণে মীর কাশেম আলী বলে, গ্রামগঞ্জের প্রত্যেকটি এলাকায় খুঁজে খুঁজে শত্রুর শেষচিহ্ন মুছে ফেলতে হবে। প্রথম দিকে মীর কাশেম আলী চট্টগ্রামে আলবদর বাহিনীর প্রধান কমান্ডার ছিলো। পরে তার অত্যাচার-নির্যাতনে খুশি হয়ে ঊর্ধ্বতন নেতারা তাকে আলবদর বাহিনীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তিন নম্বরে পদোন্নতি দেয়।

অন্যদিকে কামরুজ্জামান ৭১ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার নেতা ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুরে প্রথম আলবদর বাহিনী গড়ে উঠে, যার প্রধান সংগঠক ছিলো কামারুজ্জামান। শহীদ বদিউজ্জামানকে ধরে এনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার জঘন্য কর্মটি কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে হয়েছিল। এ ব্যাপারে আরও কয়েকজনসহ তার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পর মামলা দায়ের হয়েছিল। শেরপুর জেলার শহীদ গোলাম মোস্তফার হত্যাকাণ্ডটিও তার সংঘটিত হয়েছিল কামারুজ্জামানের নির্দেশে। এই বীরকে হাত-পায়ের রগ কেটে, গায়ের মাংস তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলো কামরুজ্জামানের বাহিনী। তাছাড়া বাড়ি পোড়ানো, লুটপাট, নারী নির্যাতনসহ আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়’ বইয়ের ১১১-১১২ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে জানা যায়, কামারুজ্জামানের নেতৃত্বেই ময়মনসিংহ জেলার সব ছাত্রসংঘ কর্মীকে আলবদর বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এই দুই আলবদর শিবিরের নেতৃত্বে আসার পর নতুন করে গতি পায় তাদের বাংলাদেশ বিরোধী কার্যকলাপ। একবছরের মধ্যেই তারা শুরু করে তাদের প্রথম অভিযান। ১৯৭৮ সালে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ভের ভাস্কর্য 'অপরাজেয় বাংলা' ভেঙ্গে ফেলার জন্য সাক্ষর শুরু করে। এতে ছাত্রসমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে রাতের অন্ধকারে তারা অপরাজেয় ভাস্কর্য বেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু সচেতন ছাত্রসমাজের প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হঠে এবং সেদিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। এরপর একইভাবে তারা জয়দেবপুরে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে। সেখানেও তারা ব্যর্থ হয়। তারপর তারা ঢাকা ছেড়ে নিজেদেরকে সারাদেশে বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করে। শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলের লড়াই। একাত্তরে মুক্তিবাহিনীর হাতে যেসব আলবদর রাজাকার নিহত হয় তাদের নামানুসারে বিভিন্ন সেল গঠন করে তারা তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে শুরু করে। তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে তারা একদিকে যেমন অস্ত্র ও অর্থভান্ডার গড়ে তুলে অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক যে কোনো স্মৃতি মুছে ফেলার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। শুরু হয় চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের দখলদারিত্বের রাজনীতি। এদেশে আবার নতুন করে শুরু হয় আলবদর রাজাকার স্টাইলে তাদের খুনের রাজনীতি।

(চলবে)


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

এই সিরিজটার খুব খুব দরকার ছিল,চলুক।

অদ্রোহ।

কী কমু [অতিথি] এর ছবি

বিস্ময়কর ব্যাপার হল, ক্ষমতায় আসার পর জিয়াউর রহমানের প্রথম কাজই ছিল দালাল আইন বাতিল করা। তখনকার প্রেক্ষিতে দালাল আইন কোনও বিচারেই অগ্রাধিকারপ্রাপ্য ছিল না। কিন্তু আমাদেরই এই বীরোত্তম ক্ষমতায় এসে প্রথমেই অনুভব করেছেন, এই আইন বাতিল করে স্বাধীনতার শত্রুদের সদম্ভে দেশে প্রতিষ্ঠা করা দরকার। কার ইঙ্গিতে/পরামর্শে/নির্দেশে তিনি এই দায় অনুভব করলেন? নাকি নিজের বিবেকের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন সেই নির্দেশ? তাহলে কি তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে ভুল করেছিলেন, যে ভুল ক্ষমতায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শোধরানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠতে হল? তবে কি মুক্তিযুদ্ধের সময় শোনা খালেদা জিয়ার কাছে প্রেরিত চিরকূটের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের গোপন পাকিস্তান কানেকশনসংক্রান্ত তথ্যগুলো সঠিক? সে কারণেই কি পাকিস্তানের আদলে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ', 'রেডিও বাংলাদেশ' এসবের প্রবর্তন? মুক্তিযুদ্ধের সব চিহ্ন আর অর্জনকে একে একে ধ্বংস করাও কি একারণেই?

বাঙলাদেশে জামাতের উত্থানে জিয়াউর রহমানের অমর অবদানের আরও বিস্তারিত তথ্য আশা করি।

জাহামজেদ এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়াটা জিয়ার জন্য সৌভাগ্যই বয়ে এনেছে। অথচ তিনি যেদিন মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছেন বলে বিএনপি প্রচার চালায় সে রাতে তিনি বন্দর থেকে অস্ত্র খালাসে যাচ্ছিলেন। আমার ব্যক্তিগত ধারণা সেদিন যদি জিয়া বন্দরের পথে না যেতেন তাহলে হয়তো পাকিস্তানের হয়েই যুদ্ধ করতেন। খালেদ মোশাররফ, তাহের, সফিউল্লাহ, শাফায়েত জামিলের মতো বীরত্বগাঁথা তো জিয়ার নামে শুনিনি। জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া নিয়েও তো বিতর্ক আছে। শাহ আজিজকে তিনিই মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে তিনিই বিভিন্ন দুতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন, তারপরও কি তার কানেকশন নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন তুলতে হয় ?

......................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

আরিফ জেবতিক এর ছবি

চলুক। নেটে এই ইতিহাস লিখে রাখা দরকারী।

জাহামজেদ এর ছবি

ধন্যবাদ আরিফ ভাই।

...................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

সারওয়ার কামাল এর ছবি

লেখাটা চমৎকার ও সময়োপযোগী। তবে কিছু বিষয় অপ্রাসংগিক লেগেছে , আশা করি পরের পর্বগুলোতে সেগুলো সংশোধিত হবে।

জিয়াউর রহমানের দালাল আইন বাতিলের ফলে জেলে আটক প্রায় ১১ হাজার রাজাকার সে সময় মুক্ত হয়।

বক্তব্যের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সূত্র থাকলে লেখাটা আরও বাস্তবধর্মী হতো।

১৯৭৮ সালে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ভের ভাস্কর্য 'অপরাজেয় বাংলা' ভেঙ্গে ফেলার জন্য সাক্ষর শুরু করে। এতে ছাত্রসমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে রাতের অন্ধকারে তারা অপরাজেয় ভাস্কর্য বেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু সচেতন ছাত্রসমাজের প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হঠে এবং সেদিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারেনি।

যতদূর জানি এই আশির দশকেও শিবির ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং প্রতিদ্ধন্দ্বিতা করেছে। আটাত্তরেই পিছিয়ে পড়লে সেটা কি করে সম্ভব?

শুরু হয় চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের দখলদারিত্বের রাজনীতি। এদেশে আবার নতুন করে শুরু হয় আলবদর রাজাকার স্টাইলে তাদের খুনের রাজনীতি

চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হওয়াদের মধ্যে শিবিরের কতজন আর অন্য সংগঠনের কতজন, সে পরিসংখ্যানটা দিলে লেখাটা আরেকটু বলিষ্ঠতা পাবে।

ধন্যবাদ।

জাহামজেদ এর ছবি

চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হওয়াদের মধ্যে শিবিরের কতজন আর অন্য সংগঠনের কতজন, সে পরিসংখ্যানটা দিলে লেখাটা আরেকটু বলিষ্ঠতা পাবে।

মানুষকে এত বোকা ভাবা ঠিক না। যদি বোকা হতাম তাহলে শিবিরই করতাম, মনে রাখবেন কথাটা !

............................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

জাহামজেদ এর ছবি

যতদূর জানি এই আশির দশকেও শিবির ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং প্রতিদ্ধন্দ্বিতা করেছে। আটাত্তরেই পিছিয়ে পড়লে সেটা কি করে সম্ভব?

বাইরে থেকেও নির্বাচন করা যায় । এরশাদ তো বেশ কবার জেলে তেকেও নির্বাচন করলো?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের অবস্থানটা আপনি আমাকে দেখান ? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির নামে আলাদা একটা পোস্ট দিবো !

..................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

সারওয়ার কামাল এর ছবি

অসংগতির উল্লেখ করা ও সূত্র জানতে চাওয়াকে যদি আপনি বাঁকাভাবে নিয়ে থাকেন, আমার কিছু বলার নেই।

আপনার দাবী করা তথ্য '১১ হাজার বন্দীর মুক্তি'র সপক্ষে আপনি কোন সূত্র উল্লেখ করেননি এবং রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রখুনের কোন পরিসংখ্যান আপনি দেননি। লেখার স্বচ্ছতার স্বার্থেই তার প্রয়োজন ছিল।

যাই হোক, আপনার জন্য শুভকামনা।
লেখাটাকে আপনি অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং পরের পর্বগুলো আরও তথ্যবহুল ও বস্তনিষ্ঠ হবে, এ কামনা করছি।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

ছাগুতে ভুবন ভরা!
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

জাহামজেদ এর ছবি

বাংলাদেশে ভৌগোলিকভাবেই কাঠালের প্রচুর গাছ জন্মায়। কাঠালের জন্য গাজীপুরের কাপাসিয়া, নরসিংদী, টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকা এবং সিলেটের শ্রীমঙ্গল বিখ্যাত !

..................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

সাইফ জুয়েল এর ছবি

জনাব সরোয়ার কামাল। মনে হচ্ছে আপনি শিবির নামক মানসিক রোগীদের সংগঠনটির একজন। যাহোক, আপনার দূর্গন্ধযুক্ত মন্তব্যটার জবাব না দিয়ে পারলাম না। প্রথমে জানাই আপনার মত লোক দেখলেই প্রথম আমার মুখের ভেতরটা একদলা থুথুতে ভরে যায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৬ সালে হামিদের হাত কাটার মধ্য দিয়ে শিবিরের আধিপত্য শুরু হয়। দূর্ভাগ্য যে হাতটা কেটেছিল সে পরবর্তীতে পুরস্কার স্বরুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছিল। তারপর দীর্ঘদিন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য কোন সংগঠন রাজনীতি করতে পারে নাই। ১৯৯৪ সালে শিবিরের সন্ত্রাসীরা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মুসাকে হত্যা করে এ বিশ্ব বিদ্যালয়ে। তারপর আরো কয়েক বছর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন রাজনীতি করতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিরোধের মুখে পড়ে শিবির। এ সময় প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা বাশের লাঠি হাতে হাজারে হাজারে শিবিরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে মরন কামড় দেয় শিবির। ১৯৯৭ সালে তাদের গুলিতে নিহত হয় ছাত্রলীগ কর্মী বকুল। ৯৮ সালে ছাত্রলীগের সাইফুল, ছাত্র ইউনিয়নের সঞ্জয় তলাপাত্র নিহত হয়, নিহত হয় ভর্তি পরিক্ষার্থী আইয়ুব যে কিনা হলে এলাকার এক অগ্রজের রুমে উঠেছিল ভর্তি পরিক্ষা উপলক্ষে। একই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাসে ছাত্রলীগ কর্মী ভেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ছেলে মুসফিককে মাথায় গুলি করে হত্যা করে শিবির। ২০০০ সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা কর্মী ভেবে একে ৪৭ সয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে মাইক্রোবাস আরোহী চট্রগাম কর্মশিয়াল ইন্সটিটিউটের ৭ ছাত্র ও মাইক্রোবাসের ড্রাইভারকে। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে চট্রগাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আলী মর্তুজাকে নিজ বাড়ীর সামনে হত্যা করে শিবির। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শিবিরের তিনজন মারা যায় চবিতে। একজন ছাত্রদের গনপিটুনিতে ফরেষ্ট্রির হোষ্টেলে আর দুইজন মারা যায় পুলিশের গুলিতে যখন এই সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের উপর গুলি করছিল ছাত্র গন প্রতিরোধ ঠেকাতে। ১৯৮৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্র পঙ্গুত্ব বরন করেছে শিবিরের হামলায় কেবলমাত্র ভীন্ন মতাবলম্বী হবার কারনে। কয়েক হাজার ছাত্র তাদের শিক্ষা জীবন শেষ না করে চলে আসতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুধুমাত্র প্রান বাঁচানোর জন্য। আমি এক সময় চবির ছাত্র ছিলাম। দেখেছি শিবিরের মহান কীর্তি। আনেক ছেলে মেয়েকে প্রকাশ্যে প্রেম করার অভিযোগে বিয়ে তাৎখনিক বিয়ে করতে বাধ্য করেছে এক সময় সংগঠনটির কর্মীরা। এই ক্যাম্পাসটিকে তারা বিভৎস পরিবেশ তৈরী করে রেখেছিল দীর্ঘদিন। শিবিরের যারা মরেছে বা মার খেয়েছে তারা তারা মুলত ১৯৯৭-৯৮ সালের সাধারন ছাত্রদের জাগরনের ফলে ক্ষোভের রোসানলে পড়েছে। আশাকরি লেখক সব বিষয়ে বিস্তারিত লেখবেন। তবে এ মুহুর্তে মুখে আসা এক দলা থুথুই শুধু ফেলতে পারি সরোয়ার কামালের মন্তব্যের জবাবে। শিবিরদের চেনার কিছু কমন সাইকোলজি আছে। কিছু আচরন ও কথাবার্তা থেকে শিবিরদের চিনে ফেলা যায়। এটা অর্জন করেছি চবিতে পড়ার সময়। হয়ত কখনও শিবিরের মনঃত্বত্ত নিয়ে এবটা লেখাও রিখে ফেলতে পারি, তবে এখন অন্তত এটা বলি। এই মন্তব্যকারী সরোয়ার কামাল একজন শিবির। এর আর কোন প্রতি মন্তব্য প্রকাশ না করার অনুরোধ জানাচ্ছি মডারেটরদের।

তাসনীম এর ছবি

খুব মন দিয়ে আপনার লেখাগুলো পড়ছি। ঢাকা বড় হওয়ার কারণে বুঝতে পারিনি ঢাকার বাইরে শিবিরের তান্ডবের প্রকৃত চিত্র এবং ওদের কর্মী সংগ্রহের প্রক্রিয়া। আমাদের শৈশবে শিবির ঢাকাতে প্রকাশ্য ছিল না।

আমি মনে করি এই বিষয়গুলো নিয়ে সচলে যেসব লেখা এসেছে সেগুলো নিয়ে একটা ই-বুক তৈরি করা হোক।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

জাহামজেদ এর ছবি

ঢাকার মানুষের মৌলবাদ নিয়ে চিন্তা করার বেহুদা টাইম নাই বলে ঢাকায় ওদের অবস্থান করতে পারেনি।

...............................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

তাসনীম এর ছবি

ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক তা না...

৮০ এর দশকে শিবিরকে প্রতিহত করা হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ঢাকার অন্যান্য জায়গাতেও শিবিরের প্রকাশ্য তৎপরতা আমি শৈশবে ও কৈশোরে দেখিনি।

কিন্তু মগবাজার ও মালিবাগ এই দুইটা জায়গা ছিল শিবিরের বেশ শক্ত ঘাঁটি, আমার এক বন্ধু মালিবাগ রেলক্রসিংয়ে আক্রান্তও হয়েছিল শিবিরের দ্বারা, সেটা ৯১/৯২ সালে। ঢাকায় শিবির ৮০ এর দশকের শেষ ও নব্বইয়ের দশকে জায়গা করতে শুরু করে এই প্রক্রিয়াটা ঢাকার বাইরে আগেই শুরু হয়েছে।

আপনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের উত্থান নিয়ে লেখাটার অপেক্ষায় আছি।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

জাহামজেদ এর ছবি

মগবাজার ও মালিবাগ এই দুইটা জায়গা ছিল শিবিরের বেশ শক্ত ঘাঁটি

ঢাকা শহরের বড় হওয়া যত ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে, তাদেরকে আমি এখনো শিবির করতে দেখিনি বা শিবিরের কথা বলতে দেখিনি, শুনিনি। এমর একজনও পাইনি যে ঢাকায় বড় হয়েছে আর শিবির করে!

মগবাজারে বা মালিবাগে যারা আসে, তারা ঢাকার বাইরে রাজনীতি করেই ঢাকায় আসে। ছাত্রদল বা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতুত্বে আসতে হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা জগন্নাথে রাজনীতি করতে হয়, কিন্তু শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা উঠে আসে রাজশাহী, চট্রগাম, সিলেট, কুষ্টিয়া থেকে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাহের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিলো যে সালেহী, সেও শিবিরের পরবর্তী সভাপতি হওয়ার তালিকায় আছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে শিবিরের নতুন কোনো কমিটি দেয়া হচ্ছে না। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি দেয়া হলে সালেহী সভাপতি বা অন্য কোনো বড় পদে চলে আসবে।

....................................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

তাসনীম এর ছবি

ঢাকা শহরের বড় হওয়া যত ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে, তাদেরকে আমি এখনো শিবির করতে দেখিনি বা শিবিরের কথা বলতে দেখিনি, শুনিনি। এমর একজনও পাইনি যে ঢাকায় বড় হয়েছে আর শিবির করে!

ঢাকার বাইরের তুলনায় সংখ্যায় কম হলেও ঢাকার ছেলেদের মধ্যেও শিবির কর্মী আছে। আমি বুয়েটে বেশ কয়েকজনকে দেখেছি, কম্পিউটার প্রকৌশলের একজন টিচারও শিবির কর্মী ছিল। বুয়েটের ছাত্রীদের মধ্যেও শিবির কর্মী দেখেছি। এরা সবাই ঢাকার ছেলে-মেয়ে। ৯০ এর দশকে আমার মনে হয়েছে ঢাকাতে শিবির গোপনে বেড়ে উঠেছে, চারদলীয় জোটের স্পন্সরে এখন আরো ভালো অবস্থানে আসা উচিত সেটা। ছাত্রদল ও বিএনপিপন্থী সবাই জামাত-শিবিরের প্রতি অত্যন্ত সদয়।

আমাদের সাথে শিবিরকরা ছেলেরা দেখি সামুতে ব্লগিংও করে, প্রগতিশীল বামপন্থী ছাত্ররা আমেরিকাতে চাকরি আর জীবন নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু শিবির এখনো সক্রিয়!

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

জাহামজেদ এর ছবি

আমি আমার পরিচিতজনদের কথা বলেছি। তবে বুয়েটে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির আছে এটা জানি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওদের তৎপড়তা প্রকাশ্য না, তবে বুয়েটে কি ওরা প্রকাশ্যে তৎপড়তা চালায় ?

.....................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

তাসনীম এর ছবি

আমি ৯০ এর দশকের শুরুর কথা বলছি। তখন বুয়েটের শিবির কর্মীদেরকে ক্যাম্পাসের সচেতন সবাই চিনত, কিন্তু তৎপরতা প্রকাশ্য ছিল না। এর পরও ওরা ইউকসু ইলেকশন করেছিল ৯১ তে। আমাদের ক্লাসে প্রচারণা চালতে আসলে আমরা কয়েকজন ওদের লিফলেট ছিড়ে ফেলি।

কিন্তু এটা প্রায় বিশ বছর আগের ঘটনা। ওই সময় শিবির কর্মীদের অনেকেই এখন উঁচু পদে আছে, সরকারী, বেসরকারী চাকরিতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এখনাকার অবস্থাটা জানি না, আমি নিজেও পনের বছর ধরে বাইরে আছি তবে আন্দাজ করতে পারি যে আগের চেয়ে অনেক বেটার অবস্থানে আছে তারা।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

buet এ শিবির কে ইউকসু নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অনেক আগে ই। কিন্তু শিবির আছে, কারা শিবির করে সবাই তা জানে। শিবির প্রকাশ্যে কিছু করতে পারেনা। মূল তত্পরতা দেখা যায় রমজানের সময় ইফতার পার্টি আয়োজন করা নিয়ে। আমরা খবর পেলে ই মিছিল করে দাবড়ে দিয়ে আসতাম। আগের ভিসির আমলে শিবির কে মসজিদে ইফতার পার্টি আয়োজন করার অনুমতি দিয়েছিল, ক্যাম্পাস তখন বন্ধ ছিল, তাই তারা নির্বিঘ্নে কাজ সেরেছিল। আর কাজ হচ্ছে পোস্টারিং। সোজা কথা এরা আছে তবে এখনো দাত নখ বের করার সুযোগ পায়নি।

সজল

জাহামজেদ এর ছবি

বুয়েট মেডিকেল আর কাটাবন মসজিদে নিজেদের গোপন কার্যক্রম চালিয়ে শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের একটা অবস্থান করে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর বাঁধার মুখে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং না করলেও অপ্রকাশ্য তৎপরতা ঠিকই চালাচ্ছে। এছাড়া বুয়েট আর মেডিকেলে তাদের প্রচুর কর্মী সমর্থক রয়েছে।

________________________________
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

ধুসর গোধূলি এর ছবি

তাসনীম লিখেছেন:
প্রগতিশীল বামপন্থী ছাত্ররা আমেরিকাতে চাকরি আর জীবন নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু শিবির এখনো সক্রিয়!
এটা যে কতো বড় শাপে বর শিবিরের জন্য! আমার পরিচিত কয়েকজন আছেন এখানে। যাঁরা সক্রিয় ছিলেন এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কোনো এক ঝিমানো বিকেলে তাঁদের সেইসব দিনের কথা শুনি। আমার কাছ থেকে বর্তমান সময়ের চিত্র পেয়ে মনেহয় নিজেকে ঠিক মেলাতে পারেন না। তাঁদের চোখের দিকে তাকালে মনে হয় এখনো সেইসব দিনগুলোতে ফিরে যেতে চান। পিটিয়ে পিটিয়ে দেশ ছাড়া করতে চান গোলাম আযম, মইত্যা আর এদের পায়ুজাত গেলমানদের। কিন্তু বাস্তবতা তাঁদের সেই তৌফিক দেয় না। বাম আন্দোলনের ডাকসাইটে লোকজন একজন পুঁজিবাদী দেশের আরামদায়ক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে!


বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

অতিথি লেখক এর ছবি

বাসাবো, খিলগাঁও এলাকাতে শিবিরের মহিলাকর্মীদের কিছু কিছু প্রোগ্রাম আছে। তারা কোরআন শিক্ষা, ধর্মবাণী প্রচার প্রভৃতি নাম দিয়ে মহিলাদের মাঝে শিবিরের প্রচার চালায়। কয়েকদিন আগে আমার পরিচিত এক মহিলা তাদের বৈঠকে যান। কয়েকদিন পর দেখেন যে শিবিরের বই দিতেছে বাসায় পড়ার জন্য।
বাড়ির মহিলারা মোটিভেটেড হলে অনেককিছুই সহজ হয়ে যায়।

আসলেই দরকারী একটা লেখা। লিঙ্ক দিয়ে দিলে অথবা সূত্র উল্লেখ করলে মনে হয় আর একটু সুবিধা হত।
লিখতে থাকুন। সবর্দা পড়ছি।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

কাজী রাফি এর ছবি

<<< এই শিবির নামটি এসেছে কোথা থেকে, পাকিস্তান আমলে জামাতের শিশু কিশোরদের একটা সংগঠন ছিলো শাহিন শিবির, শাহিন শিবির নিয়ে এসে ইসলামি ছাত্রসংঘের নাম হয়, ইসলামি ছাত্রশিবির।>>>

>>> জামাতের শিশু সংগঠনটির নাম ছিলো শাহিন ফৌজ, শাহিন শিবির নয়। "শাহিন শিবির" ছিল জামাতের মুখপত্র "দৈনিক সংগ্রাম" এ শিশুদের পাতা। জামাতের "মেধাবী" সংগঠকরা নামটি এখান থেকে নিয়ে থাকতে পারেন।

>>> ইসলামি ছাত্র সংঘ যেমন ছাত্র শিবির হয়, শাহিন ফৌজ হয়ে যায় ফুলকুড়ি আসর।

জাহামজেদ এর ছবি

শাহিন শিবির থেকেই ছাত্রশিবির নামটা এসেছে।

........................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

তাসনীম এর ছবি

--মুছে দিন--

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

জাহামজেদ এর ছবি

থাকুক...মাঝে মাঝে কাঠালপাতা দেখতেও ভালো লাগে ! ওদের প্রশ্নগুলো শুনলে তো একটু হাসা যায়, আর হাসলে হার্ট ভালো থাকে...

......................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

পৃথিবী [অতিথি] এর ছবি

আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি সরকারের জামায়াতী প্রকাশনাগুলো গায়ের জোড়ে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কিশোরকন্ঠ, youth wave, ছাত্র সংবাদ(এটা একদম নগ্নভাবেই মৌলবাদী), প্রফেসরস এর গাইড, ইত্যাদি বইপত্র খুব সুক্ষ্মভাবে জামায়াতের মতবাদ প্রচার করে, এদের ষড়যন্ত্র শণাক্ত করতে পারা পোলাপাইনের পক্ষে সম্ভব না। শিবিরের সদস্যদের একটা ব্যক্তিগত ডায়েরী রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় যেখানে সাপ্তাহিকভাবে ধর্মকর্মের রেকর্ড রাখার পাশাপাশি উপরে উল্লেখিত বইগুলোর বিতরণের হিসাবগুলোও নথিভুক্ত করে রাখতে হয়। দেখতেই পারছেন এরা কি ভয়ংকর রকম সংঘবদ্ধ।

জামায়াতি প্রকাশনা ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা তালিকা করে পিডিএফ আকারে সাইটে রেখে দেওয়া দরকার, এটা হয়ত ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

কেমন সুর [অতিথি] এর ছবি

... খুব ভালো লাগলো ... তবে এই ধরনের লেখায় সূত্র / উদ্ধৃতি ইত্যাদি যথেষ্ট থাকলে বক্তব্য আরো জোরালো হয়...

... সিরিজ চলুক ...

একুশ তাপাদার [অতিথি] এর ছবি

দরকারি পোষ্ট... চলুক......

@তাসনিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের উথান নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের অবস্থান নিয়ে মনে হয় পোষ্ট দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কারন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো শিবির উত্থান তো হয়-ই ব্রং তারা এখানে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারেনি- এখনো পারে না । গোপনে বিভিন্ন নামে হয়ত করে ।

Hamidur Rahman ( Palash ) এর ছবি

[url]শিবিরের দুটি নৃশংস-ভয়ঙ্কর কিলিং মিশনের মধ্য থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া দুজন ছাত্রনেতার ভাষ্য আপনার লেখাটা খুবই যুগোপযোগী। বর্তমান নতুন প্রজন্মের জন্য অত্যান্ত জরুরী। ধর্মভীরু সহজ সরল মানুষ গুলোকে ধর্মের কথা বলে শিবির নিজেদের দল ভারী করে। আসলে তারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে।
এমন কোন হীন কর্ম নেই যা শিবির করে না। তার কিছু চিত্র আপনার পরবর্তী লেখাকে আরো সমৃদ্ধ করতে তুলে ধরলাম।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে নানা অপকর্ম রয়েছে এমন অভিযোগ বহু বছর ধরেই করে আসছেন প্রতিপ রাজনৈতিক দল কিংবা প্রগতিশীল ধারার রাজনীতিকরা। দুয়েকটি দৃশ্যমান ঘটনা ছাড়া লোকচক্ষুর সামনে এসবের তেমন কোনও প্রমাণ এতদিন মেলেনি। এবার সেসব অপকর্মের কিছু দলিল-দস্তাবেজ পাওয়া গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলবাদী এই ছাত্র সংগঠনটির বিপুল সংখ্যক গোপন নথি চলে এসেছে এখন পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে।

ছাত্রশিবিরের এসব গোপন নথি দেখে যারপরনাই বিস্মিত বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসন। খুনের বদলার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে আয়-ব্যয়ের বিস্ময়কর ফিরিস্তি, পরীক্ষার খাতা জালিয়াতি, বিরোধী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার পরিকল্পনার ছকসহ শিবিরের নানা গোপন মিশনের খবর রয়েছে এসব নথিপত্রে। রাবিতে ছাত্রলীগ নেতা ফারুকীকে খুন ও নির্মম নৃশংস হামলার পর শিবির হল ছেড়ে গেলে তাদের নিয়ন্ত্রিত কগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে এসব গোপন নথি মিলেছে।

খুনের বদলা খুন : ‘খুনের বদলা খুন’ এই নীতিতে চলে ছাত্রশিবির। এর প্রমাণ মিলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ৮ ফেব্র“য়ারির ঘটনা সেই নীতির বাস্তবায়ন ঘটাতেই করা হয়েছে বলে দাবি ছাত্রলীগের। বিশ্ববিদ্যালয়টির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রশিবিরের ২০১০ সালের বার্ষিক পরিকল্পনায় সেই প্রমাণও মিলেছে। ওই বার্ষিক পরিকল্পনার একেবারে শেষ অংশে ‘নোমানীর খুনের বদলা’ শীর্ষক একটি বিষয়ে ওই হলের ছাত্রলীগ কর্মী আসাদ, কাওসার ও সোহেলের নাম রয়েছে। কাওসার ও আসাদের নামের পাশে তিনটি তারকা চিহ্ন ও সোহেলের নামের পাশে দুটি তারকা চিহ্ন দেওয়া রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আওয়াল কবির জয় বলেছেন, ‘এ বছরের ২৮ জানুয়ারি করা ওই বার্ষিক পরিকল্পনার ১১ দিনের মাথায় আসাদ ও কাওসারকে খুন করতেই গত ৮ ফেব্র“য়ারি রাতে হলের গেটে তাদের ওপর হামলা করে শিবির ক্যাডাররা। কিন্তু তাদের খুন করতে ব্যর্থ হয়েই শিবির ক্যাডাররা ওই রাতে অন্যান্য হলে হামলা চালিয়ে খুন করে মেধাবী ছাত্রনেতা ফারুক হোসেনকে ও আহত করে ছাত্রলীগের অর্ধশত নেতাকর্মীকে।’

যেভাবে প্রথম শ্রেণী পায় শিবিরের নেতা-কর্মী : ছাত্রশিবিরের নেতারা সবসময়ই গর্ব করে বলতেন রাজনীতি করলেও তারা পরীক্ষায় ভালো ফল করেন, প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। তাদের সেই ‘ভালো ফলে’র রহস্য এবার উন্মোচন হয়েছে। চূড়ান্ত পরীক্ষায় শিার্থীদের নিজ নিজ বিভাগে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা এতদিন দিয়ে এসেছেন নিজের হলে নিজের রুমে বসে। শুনতে অবাক মনে হলেও ঘটনা সত্য। প্রমাণ মিলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে। সম্প্রতি তল্লাশি চালাতে গিয়ে ওই হলের শিবির নিয়ন্ত্রিত একটি রুম থেকে ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার তিনটি খাতা উদ্ধার করেছে হল প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও বিভাগের কোনও ধরনের পরীক্ষার খাতাই শিার্থীদের কাছে থাকার নিয়ম নেই। অথচ শিবিরের রুমে খাতাগুলো কীভাবে গেল তা জানাতে পারেননি প্রশাসনের কেউই। সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্য অধ্যাপক আখতার ফারুক জানান, গত ২৫ ফেব্র“য়ারি হলে শিবির নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি রুমে তল্লাশি চালানো হয়। সে সময় আতাউর রহমান নামের এক শিবির ক্যাডারের ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষার তিনটি খাতা উদ্ধার করা হয়। খাতাগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভাগের সিলমোহর রয়েছে। আতাউর ওই বিভাগের মাস্টার্সের শিার্থী। খাতাগুলোর ওপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বসানো সিরিয়াল নম্বরগুলো হলো ০২৮২০৫, ০২৫৯১৪ ও ৪০৮৭১১। সাদা এই খাতাগুলো আতাউর বিভাগ থেকে এনে রুমে বসে সেগুলোতে লিখে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার উদ্দেশ্যেই এই কাজ করা হয়েছে বলে প্রাধ্যরে ধারণা। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় ফলিত রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সিএম মোস্তফার সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, পরীক্ষার হলে অনেক সময় শিার্থী সংখ্যার চেয়ে বেশি খাতা নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে যেসব খাতা অব্যবহৃত থাকে সেগুলো জমা রাখা হয় বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কাছে। সেখান থেকে কোনও শিার্থীর খাতা নেওয়ার সুযোগ নেই। সভাপতি আরও জানান, ভালো ফল করার জন্য জালিয়াতির অংশ হিসাবে এসব খাতায় ঘরে বসে প্রশ্নের উত্তর লিখে পরীক্ষার হলে এসে কৌশলে তা জমা দিয়ে দিতে পারে। ছাত্ররা খাতা নিতে না পারলেও বিভাগীয় শিকরা অব্যবহৃত এসব খাতা অফিসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নিতে পারেন বলে তিনি জানান। এমন কোনও শিকের কাছ থেকেই ওই খাতাগুলো নিয়ে গেছে শিবিরÑ এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোস্তফা বলেন, ‘সেটি এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসন বিষয়টি এখনও আমাদের জানায়নি। তারা জানালে আমরা একাডেমিক কমিটির বৈঠক করে এ ব্যাপারে তদন্ত করব।’ বিভাগীয় সভাপতি অব্যবহৃত খাতাগুলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে ফেরত পাঠানো হয় বলে দাবি করলেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন, ওই বিভাগ থেকে অব্যবহৃত কোনও খাতা তারা ফেরত পাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক চৌধুরী জাকারিয়ারও ধারণা, জালিয়াতি করে এভাবেই এতদিন ভালো ফল করে এসেছে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, ‘হল থেকে পরীক্ষার সাদা খাতা উদ্ধারই তাদের অসদুপায় অবলম্বনের প্রমাণ দিয়েছে।’ পুলিশ অবশ্য সম্প্রতি এই সাদা খাতা চুরির হোতা শিবির ক্যাডার আতাউরকে গ্রেফতার করেছে। হল প্রাধ্য অধ্যাপক আখতার ফারুক জানান, আতাউরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তার ছাত্রত্ব বাতিল হতে পারে।

চাঁদাবাজির খপ্পর : ছাত্রশিবিরের চাঁদাবাজি থেকে রেহাই পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্প বেতনের মালী-ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের ক্ষুদ্র দোকানির কেউই। পুলিশের উদ্ধার করা শিবিরের গোপন নথিপত্রে মিলেছে এসব চাঁদাবাজির ফিরিস্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত কগুলোতে দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ উদ্ধার করেছে তাদের চাঁদাবাজির তালিকা। তালিকায় দেখা গেছে, গত জানুয়ারি মাসেও তারা চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে বহু বছরের অভ্যাসবশে। শিবিরের নির্বিচার চাঁদাবাজি থেকে বাদ পড়েনি ওই হলের কর্মচারীরাও। সোহরাওয়ার্দী হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের চাঁদাবাজির তালিকায় দেখা যায়, তারা হলের ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে নিয়মিত ধার্য করা চাঁদা তুলত। এদের মধ্যে হলের মালী চান মিয়া ও লোকমানের কাছ থেকে ১শ টাকা করে, মালী জাবেরের কাছ থেকে ১শ টাকা, ঝাড়ুদার সাইদুরের কাছ থেকে ১শ টাকা, প্রহরী আলাউদ্দিন, চান মিয়া, মোহাম্মদ আলী ও রাজ্জাকের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে, প্রহরী আমজাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা, ক্যান্টিন ম্যানেজার আবুল হাশেমের কাছ থেকে ১শ টাকা, লাইব্রেরি কর্মচারী আজহার আলীর কাছ থেকে ১শ টাকা, ডাইনিং কর্মচারী ইসমাইলের কাছ থেকে ৫০ টাকা, গেমরুমের কর্মচারী আলী ও আশরাফের কাছ থেকে ১শ টাকা করে, ক্রীড়া শিক মন্টু সিংয়ের কাছ থেকে ৩শ টাকা এবং ডাইনিং কর্মচারী হকের কাছ থেকে ১শ টাকা করে চাঁদা আদায় করেছে শিবির। সাধারণ শিার্থীদের কাছ থেকেও চাঁদাবাজি করেছে শিবির। সোহরাওয়ার্দী হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের চাঁদা আদায়ের একটি রসিদে দেখা গেছে তারা নানা প্রক্রিয়ায় হলের সাধারণ শিার্থীদের কাছ থেকে ৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত নিয়মিত চাঁদা আদায় করেছে ।
সোহরাওয়ার্দী হলের কাছেই বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বাজার এলাকা। হলের আশপাশেও রয়েছে বেশকিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দোকান। স্বল্প পুঁজির এসব ব্যবসায়ীর কাছে থেকেও নিয়মিত চাঁদা নিত শিবির। হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের চাঁদাবাজির তালিকায় দেখা যায় গত জানুয়ারি মাসে স্টেশন বাজার এলাকার সেলুন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১শ টাকা, চা দোকানি আজিজের কাছ থেকে ১শ টাকা, ফল ব্যবসায়ী চান মিয়ার কাছ থেকে ১শ টাকা, হাবিব ভ্যারাইটির কাছ থেকে ৩শ টাকা, বটতলা হোটেল থেকে ২শ টাকা, ফটোকপি ব্যবসায়ী লিখনের কাছ থেকে ১শ টাকা, ক্ষুদ্র দোকানি মিন্টুর কাছ থেকে ৫০ টাকা, মোবাইল ব্যবসায়ী মুনিরের কাছ থেকে ৫০ টাকা, বিসমিল্লাহ হোটেল ৫০ টাকা, মোবাইল ব্যবসায়ী নাজিরের কাছ থেকে ২শ টাকা, ুদ্র দোকানি গাফফার ও মাজদারের কাছ থেকে ১শ টাকা, মনোহারী দোকানি মামুনের কাছ থেকে ৬শ টাকা এবং মোবাইল ব্যবসায়ী আনিসুরের কাছ থেকে ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করেছে শিবির ক্যাডাররা। ৮ ফেব্র“য়ারির পর ক্যাম্পাসে শিবিরের দাপট কমলেও এসব চাঁদাবাজি নিয়ে মুখ খুলতেও ভয় পান এসব ব্যবসায়ী। একজন ক্ষুদ্র মোবাইল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভাই, ভয়ে নিয়মিত টাকা দিছি। না দিলে খালি ঝাড়ি মারত।’ এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মুসতাক আহমেদ বলেন, ‘দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের কাছ থেকে যারা এমন নির্দয়ভাবে চাঁদাবাজি করেছে এদের চেয়ে বর্বর কেউ থাকতে পারে না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে সচল রাজনীতি : গত বছর ১১ মার্চ মিছিল করা নিয়ে সংঘর্ষ বাধে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের। সংঘর্ষের পর ওইদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এখনও প্রত্যাহার হয়নি সেই নিষেধাজ্ঞা। তবে প্রশাসনের এমন নিষেধাজ্ঞা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারেনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে। গোপনে ঠিকই চলেছে তাদের সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম। বিভিন্ন আবাসিক হলে সম্প্রতি তল্লাশি চালিয়ে সেসবের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও কর্মীরা ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও ঠিকই হাজির হয়েছে দলীয় টেন্টে। এ জন্য নিয়মিত হাজিরা খাতাও ছিল তাদের। শাহ্ মখদুম হল থেকে উদ্ধার করা হল শাখা ছাত্রশিবিরের একটি রেজিস্টার খাতায় দেখা গেছে, গত বছরের অক্টোবর মাসের ২১ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৭ দিন নেতাকর্মীরা নিয়মিত দলীয় টেন্টে উপস্থিত ছিল। ওই রেজিস্টার খাতায় শাহ্ মখদুম হলের ২৭ নেতা-কর্মীর উপস্থিতি-অনুপস্থিতির হিসাব রয়েছে। এদের মধ্যে ২১ অক্টোবর ১০ জন, ২২ অক্টেবর ১০ জন, ২৪ অক্টোবর ৭ জন, ২৫ অক্টোবর ৩ জন, ২৮ অক্টোবর ৫ জন, ২৯ অক্টোর ১১ জন এবং ৩১ অক্টোবর ১৬ জন উপস্থিত ছিল। ২৩ ও ৩০ অক্টোবর শুক্রবার এবং ২৬ ও ২৭ অক্টোবর হাজিরা খাতার ঘরগুলো ফাঁকা ছিল। নভেম্বর মাসে টেন্টে উপস্থিতির হিসাবও রয়েছে ওই খাতায়। এতে দেখা যায় ৯ নভেম্বর হলের ২৭ জন নেতা-কর্মীর মধ্যে ১০ জন, ১০ নভেম্বর ১২ জন এবং ১৪ নভেম্বর ১০ জন দলীয় টেন্টে হাজিরা দিয়েছে।
শুধু টেন্টে হাজিরা দিয়েই থেমে থাকেনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতি। নিয়মিত সব হলে তারা সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে গেছে গোপনে। সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ছাত্রশিবিরের তৃতীয় স্তর হচ্ছে ‘সাথী’। সমর্থক ও কর্মী স্তরের ওপরের এই স্তরের দলীয়রা সংগঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পুলিশের উদ্ধার করা ছাত্রশিবিরের কিছু নথিপত্র থেকে জানা যায়, শাহ্ মখদুম হলে দলটির ‘সাথী’ স্তরের লোক ছিল ২৮ জন। হল শিবিরের একটি রেজিস্টার খাতা থেকে দেখা যায়, এই ২৮ জনকে নিয়ে গত জানুয়ারি মাসে বেশ কয়েকটি ‘জরুরি বৈঠক’ করেছে হল শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি আনিছুর রহমান, বর্তমান সভাপতি আবদুল আহাদ ও হল শিবিরের সিনিয়র ‘সদস্য’ এসএম ওয়াহেদুজ্জামান। ৪, ১৪, ১৭, ১৮, ২৫ ও ২৭ জানুয়ারি এই বৈঠকগুলো হলেই অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে রেজিস্টার খাতা সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকগুলোতেও হাজিরা পদ্ধতি রয়েছে। সর্বশেষ ২৭ জানুয়ারি তিনটি জরুরি বৈঠক করেছে হল শাখা শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এই দায়িত্বশীলরা। ৮ ফেব্র“য়ারির বর্বর ঘটনার মাত্র ১১ দিন আগে অনুষ্ঠিত একদিনেই ওই তিনটি বৈঠকে যথাক্রমে ২২, ১৩ ও ১১ জন উপস্থিত ছিল। গত বছরের অক্টোবর মাসে ২টি, নভেম্বর মাসে ২টি এবং ডিসেম্বর মাসে একটি করে জরুরি বৈঠক করেছে হল শাখা শিবির। শিবিরের একটি সূত্র জানায়, সাধারণত সংগঠনের কোনও ক্রান্তিলগ্নে কিংবা সংগঠনের ওই শাখা বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে অথবা কেন্দ্রের কোনও সিদ্ধান্ত অনুসারে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্যই এ রকম জরুরি বৈঠক করা হয়ে থাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেও শিবিরের রাজনীতি সক্রিয় থাকার প্রমাণ মিলেছে। ওই হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের বার্ষিক পরিকল্পনা থেকে জানা গেছে, চলতি বছরেই হলের দ্বিতীয় তলাকে ভাগ করে একটি নতুন দলীয় ইউনিট এবং প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ৩টি সমর্থক ইউনিট বৃদ্ধির পরিকল্পনা করে ছাত্রশিবির। বার্ষিক পরিকল্পনায় হল শাখা শিবির চলতি বছরে ১২টি দায়িত্বশীল বৈঠক, ১২টি জরুরি বৈঠক, ২৪টি মতবিনিময়, শিকদের সঙ্গে দুটি বৈঠক, ৬০টি জরুরি সাথী বৈঠকসহ বছরজুড়ে সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার ল্য নির্ধারণ করে। এছাড়া চলতি বছরে ১০টি কর্মী ও সাথীদের রাত্রিকালীন বিশেষ প্রশিণ (শিবিরের ভাষায় শববেদারি), ১২টি ফলচক্র, ৬০টি সামষ্টিক পাঠ, কর্মী ও সাথী প্রার্থীদের ২৪টি করে ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন প্রশিণের ল্য ছিল হল শিবিরের। হলের মসজিদে প্রতি বৃহস্পতিবার আছরের নামাজের পর মসজিদভিত্তিক দাওয়াতি কাজ ও প্রতি সোমবার ১শটি গ্র“পে ভাগ হয়ে ‘গ্র“প দাওয়াতি কাজ’ করারও প্রমাণ মিলেছে শিবিরের ওই গোপন নথি থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু বলেন, ‘এসব প্রশিণের আড়ালে মূলত শিবির জঙ্গি প্রশিণ দিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও প্রশাসনের নাকের ডগায় তারা কীভাবে এতদিন এসব প্রশিণ চালিয়ে গেছে তা বিস্ময়কর। হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ব্যবহার করে তারা এতদিন এসব জঙ্গি কর্মকা- চালিয়ে গেছে। আমরা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

হলে ছাত্রশিবিরের লোকবল : বিভিন্ন হল থেকে উদ্ধার করা ছাত্রশিবিরের গোপন নথিপত্র থেকে তাদের বিভিন্ন স্তরের লোকবলের সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে পুলিশ। সাংগঠনিক নিয়মানুযায়ী হলে যেসব নেতাকর্মী বা সমর্থক থাকে তাদের ‘জনশক্তি’ হিসাবে ভূষিত করে থাকে ছাত্রশিবির। সেই জনশক্তির কম্পিউটার কম্পোজ করা একটি তালিকাও থাকে তাদের। শাহ্ মখদুম হল থেকে কম্পিউটার কম্পোজ ও হাতের লেখার সমন্বয়ে তৈরি করা এমন একটি তালিকা রয়েছে পুলিশের হাতে। তালিকাটি গত জানুয়ারিতে সাবেক হওয়া হল শিবিরের সভাপতি আনিছুর রহমানের মেয়াদের শেষ দিকে তৈরি করা। ওই তালিকাতে দেখা যায় ওই হলে তাদের ৩ সদস্য, ১ সদস্য প্রার্থী, ২৮ সাথী, ২ সাথী প্রার্থী ও ২৪ কর্মীসহ মোট জনশক্তি ৫৪ জন। এসব জনশক্তির নাম, দলীয় স্তর, বিভাগের নাম, বর্ষ, পেশাগত ল্য, রক্তের গ্র“প ও মোবাইল নম্বরের একটি ছকও পুলিশ উদ্ধার করে হল থেকে। এরই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় ইংরেজিতে তৈরি করা একটি ফরম। ‘ম্যানপাওয়ার ডাটা’ নামের ওই ফরমে দলে যোগদানকারীদের বিস্তারিত তথ্য ও ছবি যুক্ত থাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের বার্ষিক পরিকল্পনায় চলতি বছরে তাদের জনশক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট হয়। পরিকল্পনায় চলতি বছরে ওই হলে ১৫ জন সদস্য (সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী শীর্ষ চতুর্থ স্তর), ৩০ সাথী (শীর্ষ তৃতীয় স্তর) ও ২৫ কর্মী বাড়ানোর ল্য নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি ১৫০ সমর্থক, ১৫০ জন বন্ধু ও ১০ জন শুভাকাক্সী বাড়ানোর টার্গেট নেয় শিবির।

তলা ও ব্লকের নাম ‘সেল’ : কারাগারের বিভিন্ন ক বা ভবনের নাম ‘সেল’ কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হলের তলা ও ব্লকগুলোকে সেল হিসাবে আখ্যা দিয়ে থাকে ছাত্রশিবির। শাহ্ মখদুম হলে এর প্রমাণ মিলেছে। গত ফেব্র“য়ারিতে সভাপতির দায়িত্ব নেওয়া আহাদ আলী স্বারিত একটি নথি থেকে দেখা যায় শাহ্ মখদুম হলকে ৬টি সেলে ভাগ করেছে ছাত্রশিবির। এগুলো হলো নিচতলা, দ্বিতীয় তলা (পূর্ব ব্লক), দ্বিতীয় তলা (পশ্চিম ব্লক), তৃতীয় তলা (পূর্ব ব্লক), তৃতীয় তলা (পশ্চিম ব্লক) এবং অনাবাসিক শাখা। ৬টি সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয় হল শিবিরের ৬ সিনিয়র সাথীকে। এদের সাংগঠনিক পদ দেওয়া হয় ‘সেল তত্ত্বাবধায়ক’। অন্যান্য সংগঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলে আলাদা কমিটি না থাকলেও শিবিরের সেটি রয়েছে তো বটেই এর সঙ্গে যোগ করা হয় তলা ও ব্লকভিত্তিক কমিটি। শাহ্ মখদুম হল থেকে উদ্ধার করা একটি নথিতে দেখা যায়, গত ফেব্র“য়ারিতে গঠন করা হল কমিটি ১৭ সদস্যবিশিষ্ট। এর সঙ্গে রয়েছে সভাপতি-সম্পাদক পদ দিয়ে গঠন করা নিচতলা, দ্বিতীয় তলা পূর্ব ও পশ্চিম ব্লক, তৃতীয় তলা পূর্ব ও পশ্চিম ব্লক এবং অনাবাসিক শাখা কমিটি। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে পদ নিয়ে যেন কোনও অসন্তোষ দেখা না দেয় ও প্রত্যেকই কোনও কোনও দায়িত্ব নিয়ে যাতে চাপের মধ্যে থাকে সে জন্যই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে শিবিরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

বিরোধী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সক্রিয়তার হার : শুধু নিজেদের তথ্য হালনাগাদ করেই বসে থাকে না শিবির। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শাখা অঞ্চলে অবস্থান করা অন্যান্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সব ধরনের তথ্যের জোগান থাকে তাদের কাছে। শাহ্ মখদুম হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতির স্বার করা এমন একটি তথ্যপ্যাডের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। ‘অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা’ শিরোনামে তৈরি করা ওই প্যাডের কয়েকটি পাতায় ওই হলে অবস্থান করা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও তিনটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সক্রিয় নেতাকর্মীর বিস্তারিত তথ্য লেখা রয়েছে। বিস্তারিত তথ্যের মধ্যে রয়েছে নাম, বাবার নাম, পুরো ঠিকানা, বিভাগ ও সেশন, ক নম্বর ও সংগঠনে তাদের সক্রিয়তার হার। পুলিশের উদ্ধার করা ওই প্যাডে ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুর রহমান ডালিম, মশিউর রহমান ম-ল, আবদুল হালিম, আইয়ুব আলী, রবিউল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, ৮ ফেব্র“য়ারি নিহত ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেন, ওইদিন আহত শফিউল্লাহ, ওয়াসিম আকরাম, বদিউজ্জামান নিজাম, মফিজুল ইসলাম মুন্না, রুহুল আমিন ও মশিউর রহমানের নাম লেখা রয়েছে। এদের মধ্যে নিহত ফারুক হোসেন, আহত বদিউজ্জামান নিজাম, ওয়াসিম আকরাম, মফিজুল ইসলাম মুন্না, রুহুল আমিন ও ছাত্রলীগ নেতার নিজ দলে সাংগঠনিক বর্তমান অবস্থার ঘরে সক্রিয়তার হার লেখা ছিল শতভাগ। ওইদিন আহত শফিউল্লাহর সক্রিয়তার হার লেখা ছিল ৯০ শতাংশ।
প্যাডের পৃষ্ঠাটিতে ওই হলের আবাসিক ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান ইমাম সাগরের নামও রয়েছে। তার সংগঠনে সক্রিয়তার হার দেওয়া রয়েছে ৭০ শতাংশ। এর সঙ্গে রয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন এস-এর সাবেক সভাপতি ও ওই হলের আবাসিক ছাত্র এবিএম জাহিদ সরোয়ার, তীর্থক নাটকের আবু বাক্কার ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের মোফাজ্জল হোসেনের নাম। তাদের সবার বাবা-মা ও বিভাগ-বর্ষসহ নিজ নিজ সংগঠনে সক্রিয়তার হার লেখা রয়েছে ওই প্যাডে। উদ্ধার করা প্যাডের পৃষ্ঠা থেকে জানা গেছে প্রতিমাসে এই তালিকা হালনাগাদ করা হতো

বিরোধী সংগঠনগুলোর পোস্টমর্টেম: কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে জামায়াত-বিএনপির মিত্র হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে কেমন চোখে দেখত ছাত্রশিবির তার প্রমাণ মিলেছে তাদের গোপন নথিতে। শহীদ শামসুজ্জোহা হল থেকে সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের ২০০৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ছাত্রদলকে ‘অস্ত্র-সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিনির্ভর’ সংগঠন হিসাবে আখ্যা দেয় শিবির। প্রতিবেদনটিতে তারা ছাত্রদলের বিভিন্ন তৎপরতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সংগঠনটিকে ‘চরমমাত্রার অনৈতিক’ সংগঠন হিসাবে উপস্থাপন করে তাদের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডে। প্রতিবেদনে ছাত্রদলের নানা ‘অপকর্ম’ তুলে ধরে উপসংহারে বলা হয়, ‘এসব অপকর্ম পরিত্যাগ না করলে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এককালের ছাত্রমৈত্রীর মতো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’ শিবিরের চোখে ছাত্রলীগের পরিচয় ‘প্রতিহিংসা, গলাবাজি, সন্ত্রাস, ইসলামবিদ্বেষ, স্বদেশদ্রোহিতা আর দুর্নীতির কান্ডারি’ হিসাবে। বার্ষিক প্রতিবেদনে জাসদ ছাত্রলীগকে ‘নাম-পরিচয়বিহীন’, ছাত্রমৈত্রীকে ‘অস্ত্র, সন্ত্রাস ও অর্থনির্ভর’ এবং ছাত্র ইউনিয়নকে ‘ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিপ্তি নাস্তিক্যবাদী মতবাদের ধারক, বাহক ও পাগলপ্রায়’ সংগঠন হিসাবে দেখিয়েছে ছাত্রশিবির।

অমুসলিম আর নারীরাও শিবিরের টার্গেট : চলতি বছরে বঙ্গবন্ধু হলে শিবির ২০ অমুসলিম শিার্থীকে দলের সমর্থক বানানোর পরিকল্পনা করেছিল। পুলিশের হাতে থাকা শিবিরের বার্ষিক পরিকল্পনায় দেখা যায়, ২০ অমুসলিম শিার্থীকে সাংগঠনিক বন্ধু বানানোরও টার্গেট নেয় ওই হলের শিবির ক্যাডাররা। মুহরমাদের (নারী) মধ্যেও যোগাযোগ ও কাজ করার পরিকল্পনা নেয় শিবির। হল শিবিরের সব সাথী ও সদস্য স্তরের লোকজনকে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই পরিকল্পনায়।

হলের নথি তাদের কাছে : শিবির নিয়ন্ত্রিত কগুলোতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে বিভিন্ন হল প্রাধ্য যারপরনাই বিস্মিত হয়েছেন। শিবিরের কগুলোতে তারা পেয়েছেন শিার্থীদের আবাসিকতা দেওয়ার অফিসিয়াল তালিকা। প্রাধ্য স্বারিত এই তালিকার কোনও অংশ বা পুরো তালিকা কোনও শিার্থীর হাতে যাওয়ার কোনও নিয়ম নেই। কিন্তু শাহ্ মখদুম হলের তিনটি আবাসিকতার পুরো অফিসিয়াল তালিকা পাওয়া গেছে শিবির নিয়ন্ত্রিত কক্ষে তালিকাগুলো গত বছরের ৩১ মে, ১৮ জুলাই ও ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করেছিল হল প্রশাসন। অন্যান্য হলেও শিবির নিয়ন্ত্রিত কে পাওয়া গেছে এসব নথিপত্র।

দল না করলেই পলাতক : ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত হয়ে যারা কিছুদিন পরে নানা কারণে নিষ্ক্রিয় হয় তাদের কপালে জোটে ‘পলাতক’ আখ্যা। শাহ্ মখদুম হলে শিবিরের সভাপতির ক থেকে উদ্ধার করা একটি রেজিস্টার খাতায় এর প্রমাণ মিলেছে। সাবেক সভাপতি আনিছের মেয়াদকালে সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিস্তারিত তথ্য সংযোজন করে ওই খাতাটি তৈরি। এতে বেশকিছু কর্মীর নামের পাশে লাল কালিতে লেখা রয়েছে পলাতক। এদের মধ্যে অনাবাসিক হয়েও হলের ৩৫৬ নম্বর কে থাকতেন শিবির কর্মী সাইফুল ইসলাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবির করবেন না বলে তিনি পরে কাজলা এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি ছাত্রাবাসে ওঠেন। তাই শিবিরের ওই রেজিস্টার খাতায় সাইফুলের নামের পাশে লেখা রয়েছে ‘ম্যাচে পলাতক’। শফিউল বাশার নামের এক সাথীর নামের পাশে লাল কালিতে লেখা রয়েছে ‘কোন খোঁজ নাই।’

কোটি টাকা আয় : বছরে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন খাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের কোটি টাকা আয়ের খতিয়ান পেয়েছে পুলিশ তাদের গোপন নথিতে। এর মধ্যে তাদের পরিচালিত কনটেস্ট ও কনক্রিট কোচিং সেন্টার থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে কমপে ৮৬ লাখ টাকা আয় করে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে হলে অনেক অনাবাসিক ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা করেছিল শিবির। হলে বিনামূল্যে থাকার লোভে আর্থিকভাবে অসচ্ছল অনেক অনাবাসিক শিার্থী এভাবেই জড়িয়ে যায় শিবিরের রাজনীতিতে। তবে হলে ওঠার পর এদের মধ্যে অনেকের কাছ থেকে মেস ভাড়ার মতো সিট ভাড়া আদায় করে শিবির। পুলিশের উদ্ধার করা শাহ্ মখদুম হল শিবিরের ‘সিট রেন্ট আদায়যোগ্য মোট জনশক্তি’ শীর্ষক একটি নথি থেকে জানা যায়, ওই হলে তাদের ২০ নেতাকর্মীর কাছ থেকে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হতো। যারা কেউ হলের আবাসিকতা পায়নি এদের কাছ থেকে কত হারে ভাড়া আদায় করা হতো সে ব্যাপারে কোনও তথ্য ওই নথিতে নেই। তবে সোহ্রাওয়ার্দী হল থেকে উদ্ধার করা নথিপত্রে দেখা গেছে, শিবির প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি ছাত্র হল থেকে প্রায় ২৪ লাখ টাকা এই খাতে আয় করে। জামায়াতপন্থি শিকদের কাছ থেকেও প্রতি মাসে টাকা পায় শিবির। পুলিশের হাতে থাকা শিবিরের একটি নথিতে দেখা যায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২শ ৫০ জন শিকের প্রতিজনের কাছ থেকে মাসে ১ হাজার টাকা করে আদায় করে। সেই হিসাবে এক মাসে এই খাতে তাদের আয় ২ লাখ ৫০ হাজার এবং বছর শেষে তা দাঁড়ায় ৩০ লাখ টাকায়। ছাত্রাবাস ভাড়া দিয়েও প্রচুর টাকা আয় করে শিবির। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর অঞ্চলে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ভবন নামের একটি ছাত্রাবাস থেকে তারা মাসে ২৪ হাজার টাকা আয় করে। সেই হিসাবে বছরে ওই ছাত্রাবাস থেকে তাদের আয় আসে ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এরপাশেই তাদের ৪ তলা একটি ছাত্রাবাস রয়েছে ‘মহানন্দা’ নামে। সিট ভাড়া দিয়ে বছর শেষে এই ছাত্রাবাস থেকে তারা আয় করে ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।

শিবিরের দুটি নৃশংস-ভয়ঙ্কর কিলিং মিশনের মধ্য থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া দুজন ছাত্রনেতার ভাষ্য
রাজশাহীর যত শিবির ক্যাডার এবং তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড
শিবিরের কুকর্মের দলিল............।২০০১-২০১০
সূত্র: সাপ্তাহিক ২০০০

জাহামজেদ এর ছবি

এমন তথ্যবহুল মন্তব্য সংযুক্তির জন্য অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি এখানে শুধু একটা বিশ্বাবদ্যালয়ের চিত্র তুলে ধরেছেন। আমি আলাদা আলাদা পোস্টে একেকটা বিষয় নিয়ে লেখার চেষ্টা করব।

.............................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

পৃথিবী [অতিথি] এর ছবি

নোমানীকে জামায়াতী প্রকাশনায় বদরের যুদ্ধের শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়। নোমানীর মৃত্যুর কথা বলার আগে সবসময়ই আপনি ধর্মযুদ্ধ ও সেসব যুদ্ধের শহীদদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাবেন। কি যে ভয়ংকর এদের মগজধোলাইয়ের পদ্ধতি, কিছুতেই বিশ্বাস হতে চায় না।

জাহামজেদ এর ছবি

নোমানী সহ শিবিরের মৃত আরো অনেকের নামে শহীদ আর বীর বলে যে প্রচারণা চালানো হয় তার একটি দলিল হাতে এসেছে। সেখানে শিবিরের হত্যাকান্ডগুলোকে কখনো বদরের যুদ্ধের সৈনিক আর কাফিরের হাতে নিহত, এমন সব কথা লেখা। পরবর্তী পর্বে এ বিষয়ে আলাপ করব।

_______________________________
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

এ মন্তব্যটি আলাদা পোস্ট হতে পারে। লেখক ভেবে দেখবেন হাসি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

Hamidur Rahman ( Palash ) এর ছবি

[url]শিবিরের দুটি নৃশংস-ভয়ঙ্কর কিলিং মিশনের মধ্য থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া দুজন ছাত্রনেতার ভাষ্য আপনার লেখাটা খুবই যুগোপযোগী। বর্তমান নতুন প্রজন্মের জন্য অত্যান্ত জরুরী। ধর্মভীরু সহজ সরল মানুষ গুলোকে ধর্মের কথা বলে শিবির নিজেদের দল ভারী করে। আসলে তারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে।
এমন কোন হীন কর্ম নেই যা শিবির করে না। তার কিছু চিত্র আপনার পরবর্তী লেখাকে আরো সমৃদ্ধ করতে তুলে ধরলাম।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে নানা অপকর্ম রয়েছে এমন অভিযোগ বহু বছর ধরেই করে আসছেন প্রতিপ রাজনৈতিক দল কিংবা প্রগতিশীল ধারার রাজনীতিকরা। দুয়েকটি দৃশ্যমান ঘটনা ছাড়া লোকচক্ষুর সামনে এসবের তেমন কোনও প্রমাণ এতদিন মেলেনি। এবার সেসব অপকর্মের কিছু দলিল-দস্তাবেজ পাওয়া গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলবাদী এই ছাত্র সংগঠনটির বিপুল সংখ্যক গোপন নথি চলে এসেছে এখন পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে।

ছাত্রশিবিরের এসব গোপন নথি দেখে যারপরনাই বিস্মিত বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসন। খুনের বদলার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে আয়-ব্যয়ের বিস্ময়কর ফিরিস্তি, পরীক্ষার খাতা জালিয়াতি, বিরোধী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার পরিকল্পনার ছকসহ শিবিরের নানা গোপন মিশনের খবর রয়েছে এসব নথিপত্রে। রাবিতে ছাত্রলীগ নেতা ফারুকীকে খুন ও নির্মম নৃশংস হামলার পর শিবির হল ছেড়ে গেলে তাদের নিয়ন্ত্রিত কগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে এসব গোপন নথি মিলেছে।

খুনের বদলা খুন : ‘খুনের বদলা খুন’ এই নীতিতে চলে ছাত্রশিবির। এর প্রমাণ মিলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ৮ ফেব্র“য়ারির ঘটনা সেই নীতির বাস্তবায়ন ঘটাতেই করা হয়েছে বলে দাবি ছাত্রলীগের। বিশ্ববিদ্যালয়টির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রশিবিরের ২০১০ সালের বার্ষিক পরিকল্পনায় সেই প্রমাণও মিলেছে। ওই বার্ষিক পরিকল্পনার একেবারে শেষ অংশে ‘নোমানীর খুনের বদলা’ শীর্ষক একটি বিষয়ে ওই হলের ছাত্রলীগ কর্মী আসাদ, কাওসার ও সোহেলের নাম রয়েছে। কাওসার ও আসাদের নামের পাশে তিনটি তারকা চিহ্ন ও সোহেলের নামের পাশে দুটি তারকা চিহ্ন দেওয়া রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আওয়াল কবির জয় বলেছেন, ‘এ বছরের ২৮ জানুয়ারি করা ওই বার্ষিক পরিকল্পনার ১১ দিনের মাথায় আসাদ ও কাওসারকে খুন করতেই গত ৮ ফেব্র“য়ারি রাতে হলের গেটে তাদের ওপর হামলা করে শিবির ক্যাডাররা। কিন্তু তাদের খুন করতে ব্যর্থ হয়েই শিবির ক্যাডাররা ওই রাতে অন্যান্য হলে হামলা চালিয়ে খুন করে মেধাবী ছাত্রনেতা ফারুক হোসেনকে ও আহত করে ছাত্রলীগের অর্ধশত নেতাকর্মীকে।’

যেভাবে প্রথম শ্রেণী পায় শিবিরের নেতা-কর্মী : ছাত্রশিবিরের নেতারা সবসময়ই গর্ব করে বলতেন রাজনীতি করলেও তারা পরীক্ষায় ভালো ফল করেন, প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। তাদের সেই ‘ভালো ফলে’র রহস্য এবার উন্মোচন হয়েছে। চূড়ান্ত পরীক্ষায় শিার্থীদের নিজ নিজ বিভাগে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা এতদিন দিয়ে এসেছেন নিজের হলে নিজের রুমে বসে। শুনতে অবাক মনে হলেও ঘটনা সত্য। প্রমাণ মিলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে। সম্প্রতি তল্লাশি চালাতে গিয়ে ওই হলের শিবির নিয়ন্ত্রিত একটি রুম থেকে ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার তিনটি খাতা উদ্ধার করেছে হল প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও বিভাগের কোনও ধরনের পরীক্ষার খাতাই শিার্থীদের কাছে থাকার নিয়ম নেই। অথচ শিবিরের রুমে খাতাগুলো কীভাবে গেল তা জানাতে পারেননি প্রশাসনের কেউই। সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্য অধ্যাপক আখতার ফারুক জানান, গত ২৫ ফেব্র“য়ারি হলে শিবির নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি রুমে তল্লাশি চালানো হয়। সে সময় আতাউর রহমান নামের এক শিবির ক্যাডারের ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষার তিনটি খাতা উদ্ধার করা হয়। খাতাগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভাগের সিলমোহর রয়েছে। আতাউর ওই বিভাগের মাস্টার্সের শিার্থী। খাতাগুলোর ওপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বসানো সিরিয়াল নম্বরগুলো হলো ০২৮২০৫, ০২৫৯১৪ ও ৪০৮৭১১। সাদা এই খাতাগুলো আতাউর বিভাগ থেকে এনে রুমে বসে সেগুলোতে লিখে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার উদ্দেশ্যেই এই কাজ করা হয়েছে বলে প্রাধ্যরে ধারণা। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় ফলিত রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সিএম মোস্তফার সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, পরীক্ষার হলে অনেক সময় শিার্থী সংখ্যার চেয়ে বেশি খাতা নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে যেসব খাতা অব্যবহৃত থাকে সেগুলো জমা রাখা হয় বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কাছে। সেখান থেকে কোনও শিার্থীর খাতা নেওয়ার সুযোগ নেই। সভাপতি আরও জানান, ভালো ফল করার জন্য জালিয়াতির অংশ হিসাবে এসব খাতায় ঘরে বসে প্রশ্নের উত্তর লিখে পরীক্ষার হলে এসে কৌশলে তা জমা দিয়ে দিতে পারে। ছাত্ররা খাতা নিতে না পারলেও বিভাগীয় শিকরা অব্যবহৃত এসব খাতা অফিসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নিতে পারেন বলে তিনি জানান। এমন কোনও শিকের কাছ থেকেই ওই খাতাগুলো নিয়ে গেছে শিবিরÑ এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোস্তফা বলেন, ‘সেটি এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসন বিষয়টি এখনও আমাদের জানায়নি। তারা জানালে আমরা একাডেমিক কমিটির বৈঠক করে এ ব্যাপারে তদন্ত করব।’ বিভাগীয় সভাপতি অব্যবহৃত খাতাগুলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে ফেরত পাঠানো হয় বলে দাবি করলেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন, ওই বিভাগ থেকে অব্যবহৃত কোনও খাতা তারা ফেরত পাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক চৌধুরী জাকারিয়ারও ধারণা, জালিয়াতি করে এভাবেই এতদিন ভালো ফল করে এসেছে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, ‘হল থেকে পরীক্ষার সাদা খাতা উদ্ধারই তাদের অসদুপায় অবলম্বনের প্রমাণ দিয়েছে।’ পুলিশ অবশ্য সম্প্রতি এই সাদা খাতা চুরির হোতা শিবির ক্যাডার আতাউরকে গ্রেফতার করেছে। হল প্রাধ্য অধ্যাপক আখতার ফারুক জানান, আতাউরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তার ছাত্রত্ব বাতিল হতে পারে।

চাঁদাবাজির খপ্পর : ছাত্রশিবিরের চাঁদাবাজি থেকে রেহাই পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্প বেতনের মালী-ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের ক্ষুদ্র দোকানির কেউই। পুলিশের উদ্ধার করা শিবিরের গোপন নথিপত্রে মিলেছে এসব চাঁদাবাজির ফিরিস্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত কগুলোতে দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ উদ্ধার করেছে তাদের চাঁদাবাজির তালিকা। তালিকায় দেখা গেছে, গত জানুয়ারি মাসেও তারা চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে বহু বছরের অভ্যাসবশে। শিবিরের নির্বিচার চাঁদাবাজি থেকে বাদ পড়েনি ওই হলের কর্মচারীরাও। সোহরাওয়ার্দী হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের চাঁদাবাজির তালিকায় দেখা যায়, তারা হলের ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে নিয়মিত ধার্য করা চাঁদা তুলত। এদের মধ্যে হলের মালী চান মিয়া ও লোকমানের কাছ থেকে ১শ টাকা করে, মালী জাবেরের কাছ থেকে ১শ টাকা, ঝাড়ুদার সাইদুরের কাছ থেকে ১শ টাকা, প্রহরী আলাউদ্দিন, চান মিয়া, মোহাম্মদ আলী ও রাজ্জাকের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে, প্রহরী আমজাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা, ক্যান্টিন ম্যানেজার আবুল হাশেমের কাছ থেকে ১শ টাকা, লাইব্রেরি কর্মচারী আজহার আলীর কাছ থেকে ১শ টাকা, ডাইনিং কর্মচারী ইসমাইলের কাছ থেকে ৫০ টাকা, গেমরুমের কর্মচারী আলী ও আশরাফের কাছ থেকে ১শ টাকা করে, ক্রীড়া শিক মন্টু সিংয়ের কাছ থেকে ৩শ টাকা এবং ডাইনিং কর্মচারী হকের কাছ থেকে ১শ টাকা করে চাঁদা আদায় করেছে শিবির। সাধারণ শিার্থীদের কাছ থেকেও চাঁদাবাজি করেছে শিবির। সোহরাওয়ার্দী হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের চাঁদা আদায়ের একটি রসিদে দেখা গেছে তারা নানা প্রক্রিয়ায় হলের সাধারণ শিার্থীদের কাছ থেকে ৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত নিয়মিত চাঁদা আদায় করেছে ।
সোহরাওয়ার্দী হলের কাছেই বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বাজার এলাকা। হলের আশপাশেও রয়েছে বেশকিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দোকান। স্বল্প পুঁজির এসব ব্যবসায়ীর কাছে থেকেও নিয়মিত চাঁদা নিত শিবির। হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের চাঁদাবাজির তালিকায় দেখা যায় গত জানুয়ারি মাসে স্টেশন বাজার এলাকার সেলুন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১শ টাকা, চা দোকানি আজিজের কাছ থেকে ১শ টাকা, ফল ব্যবসায়ী চান মিয়ার কাছ থেকে ১শ টাকা, হাবিব ভ্যারাইটির কাছ থেকে ৩শ টাকা, বটতলা হোটেল থেকে ২শ টাকা, ফটোকপি ব্যবসায়ী লিখনের কাছ থেকে ১শ টাকা, ক্ষুদ্র দোকানি মিন্টুর কাছ থেকে ৫০ টাকা, মোবাইল ব্যবসায়ী মুনিরের কাছ থেকে ৫০ টাকা, বিসমিল্লাহ হোটেল ৫০ টাকা, মোবাইল ব্যবসায়ী নাজিরের কাছ থেকে ২শ টাকা, ুদ্র দোকানি গাফফার ও মাজদারের কাছ থেকে ১শ টাকা, মনোহারী দোকানি মামুনের কাছ থেকে ৬শ টাকা এবং মোবাইল ব্যবসায়ী আনিসুরের কাছ থেকে ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করেছে শিবির ক্যাডাররা। ৮ ফেব্র“য়ারির পর ক্যাম্পাসে শিবিরের দাপট কমলেও এসব চাঁদাবাজি নিয়ে মুখ খুলতেও ভয় পান এসব ব্যবসায়ী। একজন ক্ষুদ্র মোবাইল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভাই, ভয়ে নিয়মিত টাকা দিছি। না দিলে খালি ঝাড়ি মারত।’ এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মুসতাক আহমেদ বলেন, ‘দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের কাছ থেকে যারা এমন নির্দয়ভাবে চাঁদাবাজি করেছে এদের চেয়ে বর্বর কেউ থাকতে পারে না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে সচল রাজনীতি : গত বছর ১১ মার্চ মিছিল করা নিয়ে সংঘর্ষ বাধে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের। সংঘর্ষের পর ওইদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এখনও প্রত্যাহার হয়নি সেই নিষেধাজ্ঞা। তবে প্রশাসনের এমন নিষেধাজ্ঞা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারেনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে। গোপনে ঠিকই চলেছে তাদের সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম। বিভিন্ন আবাসিক হলে সম্প্রতি তল্লাশি চালিয়ে সেসবের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও কর্মীরা ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও ঠিকই হাজির হয়েছে দলীয় টেন্টে। এ জন্য নিয়মিত হাজিরা খাতাও ছিল তাদের। শাহ্ মখদুম হল থেকে উদ্ধার করা হল শাখা ছাত্রশিবিরের একটি রেজিস্টার খাতায় দেখা গেছে, গত বছরের অক্টোবর মাসের ২১ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৭ দিন নেতাকর্মীরা নিয়মিত দলীয় টেন্টে উপস্থিত ছিল। ওই রেজিস্টার খাতায় শাহ্ মখদুম হলের ২৭ নেতা-কর্মীর উপস্থিতি-অনুপস্থিতির হিসাব রয়েছে। এদের মধ্যে ২১ অক্টোবর ১০ জন, ২২ অক্টেবর ১০ জন, ২৪ অক্টোবর ৭ জন, ২৫ অক্টোবর ৩ জন, ২৮ অক্টোবর ৫ জন, ২৯ অক্টোর ১১ জন এবং ৩১ অক্টোবর ১৬ জন উপস্থিত ছিল। ২৩ ও ৩০ অক্টোবর শুক্রবার এবং ২৬ ও ২৭ অক্টোবর হাজিরা খাতার ঘরগুলো ফাঁকা ছিল। নভেম্বর মাসে টেন্টে উপস্থিতির হিসাবও রয়েছে ওই খাতায়। এতে দেখা যায় ৯ নভেম্বর হলের ২৭ জন নেতা-কর্মীর মধ্যে ১০ জন, ১০ নভেম্বর ১২ জন এবং ১৪ নভেম্বর ১০ জন দলীয় টেন্টে হাজিরা দিয়েছে।
শুধু টেন্টে হাজিরা দিয়েই থেমে থাকেনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতি। নিয়মিত সব হলে তারা সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে গেছে গোপনে। সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ছাত্রশিবিরের তৃতীয় স্তর হচ্ছে ‘সাথী’। সমর্থক ও কর্মী স্তরের ওপরের এই স্তরের দলীয়রা সংগঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পুলিশের উদ্ধার করা ছাত্রশিবিরের কিছু নথিপত্র থেকে জানা যায়, শাহ্ মখদুম হলে দলটির ‘সাথী’ স্তরের লোক ছিল ২৮ জন। হল শিবিরের একটি রেজিস্টার খাতা থেকে দেখা যায়, এই ২৮ জনকে নিয়ে গত জানুয়ারি মাসে বেশ কয়েকটি ‘জরুরি বৈঠক’ করেছে হল শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি আনিছুর রহমান, বর্তমান সভাপতি আবদুল আহাদ ও হল শিবিরের সিনিয়র ‘সদস্য’ এসএম ওয়াহেদুজ্জামান। ৪, ১৪, ১৭, ১৮, ২৫ ও ২৭ জানুয়ারি এই বৈঠকগুলো হলেই অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে রেজিস্টার খাতা সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকগুলোতেও হাজিরা পদ্ধতি রয়েছে। সর্বশেষ ২৭ জানুয়ারি তিনটি জরুরি বৈঠক করেছে হল শাখা শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এই দায়িত্বশীলরা। ৮ ফেব্র“য়ারির বর্বর ঘটনার মাত্র ১১ দিন আগে অনুষ্ঠিত একদিনেই ওই তিনটি বৈঠকে যথাক্রমে ২২, ১৩ ও ১১ জন উপস্থিত ছিল। গত বছরের অক্টোবর মাসে ২টি, নভেম্বর মাসে ২টি এবং ডিসেম্বর মাসে একটি করে জরুরি বৈঠক করেছে হল শাখা শিবির। শিবিরের একটি সূত্র জানায়, সাধারণত সংগঠনের কোনও ক্রান্তিলগ্নে কিংবা সংগঠনের ওই শাখা বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে অথবা কেন্দ্রের কোনও সিদ্ধান্ত অনুসারে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্যই এ রকম জরুরি বৈঠক করা হয়ে থাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেও শিবিরের রাজনীতি সক্রিয় থাকার প্রমাণ মিলেছে। ওই হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের বার্ষিক পরিকল্পনা থেকে জানা গেছে, চলতি বছরেই হলের দ্বিতীয় তলাকে ভাগ করে একটি নতুন দলীয় ইউনিট এবং প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ৩টি সমর্থক ইউনিট বৃদ্ধির পরিকল্পনা করে ছাত্রশিবির। বার্ষিক পরিকল্পনায় হল শাখা শিবির চলতি বছরে ১২টি দায়িত্বশীল বৈঠক, ১২টি জরুরি বৈঠক, ২৪টি মতবিনিময়, শিকদের সঙ্গে দুটি বৈঠক, ৬০টি জরুরি সাথী বৈঠকসহ বছরজুড়ে সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার ল্য নির্ধারণ করে। এছাড়া চলতি বছরে ১০টি কর্মী ও সাথীদের রাত্রিকালীন বিশেষ প্রশিণ (শিবিরের ভাষায় শববেদারি), ১২টি ফলচক্র, ৬০টি সামষ্টিক পাঠ, কর্মী ও সাথী প্রার্থীদের ২৪টি করে ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন প্রশিণের ল্য ছিল হল শিবিরের। হলের মসজিদে প্রতি বৃহস্পতিবার আছরের নামাজের পর মসজিদভিত্তিক দাওয়াতি কাজ ও প্রতি সোমবার ১শটি গ্র“পে ভাগ হয়ে ‘গ্র“প দাওয়াতি কাজ’ করারও প্রমাণ মিলেছে শিবিরের ওই গোপন নথি থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু বলেন, ‘এসব প্রশিণের আড়ালে মূলত শিবির জঙ্গি প্রশিণ দিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও প্রশাসনের নাকের ডগায় তারা কীভাবে এতদিন এসব প্রশিণ চালিয়ে গেছে তা বিস্ময়কর। হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ব্যবহার করে তারা এতদিন এসব জঙ্গি কর্মকা- চালিয়ে গেছে। আমরা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

হলে ছাত্রশিবিরের লোকবল : বিভিন্ন হল থেকে উদ্ধার করা ছাত্রশিবিরের গোপন নথিপত্র থেকে তাদের বিভিন্ন স্তরের লোকবলের সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে পুলিশ। সাংগঠনিক নিয়মানুযায়ী হলে যেসব নেতাকর্মী বা সমর্থক থাকে তাদের ‘জনশক্তি’ হিসাবে ভূষিত করে থাকে ছাত্রশিবির। সেই জনশক্তির কম্পিউটার কম্পোজ করা একটি তালিকাও থাকে তাদের। শাহ্ মখদুম হল থেকে কম্পিউটার কম্পোজ ও হাতের লেখার সমন্বয়ে তৈরি করা এমন একটি তালিকা রয়েছে পুলিশের হাতে। তালিকাটি গত জানুয়ারিতে সাবেক হওয়া হল শিবিরের সভাপতি আনিছুর রহমানের মেয়াদের শেষ দিকে তৈরি করা। ওই তালিকাতে দেখা যায় ওই হলে তাদের ৩ সদস্য, ১ সদস্য প্রার্থী, ২৮ সাথী, ২ সাথী প্রার্থী ও ২৪ কর্মীসহ মোট জনশক্তি ৫৪ জন। এসব জনশক্তির নাম, দলীয় স্তর, বিভাগের নাম, বর্ষ, পেশাগত ল্য, রক্তের গ্র“প ও মোবাইল নম্বরের একটি ছকও পুলিশ উদ্ধার করে হল থেকে। এরই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় ইংরেজিতে তৈরি করা একটি ফরম। ‘ম্যানপাওয়ার ডাটা’ নামের ওই ফরমে দলে যোগদানকারীদের বিস্তারিত তথ্য ও ছবি যুক্ত থাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের বার্ষিক পরিকল্পনায় চলতি বছরে তাদের জনশক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট হয়। পরিকল্পনায় চলতি বছরে ওই হলে ১৫ জন সদস্য (সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী শীর্ষ চতুর্থ স্তর), ৩০ সাথী (শীর্ষ তৃতীয় স্তর) ও ২৫ কর্মী বাড়ানোর ল্য নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি ১৫০ সমর্থক, ১৫০ জন বন্ধু ও ১০ জন শুভাকাক্সী বাড়ানোর টার্গেট নেয় শিবির।

তলা ও ব্লকের নাম ‘সেল’ : কারাগারের বিভিন্ন ক বা ভবনের নাম ‘সেল’ কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হলের তলা ও ব্লকগুলোকে সেল হিসাবে আখ্যা দিয়ে থাকে ছাত্রশিবির। শাহ্ মখদুম হলে এর প্রমাণ মিলেছে। গত ফেব্র“য়ারিতে সভাপতির দায়িত্ব নেওয়া আহাদ আলী স্বারিত একটি নথি থেকে দেখা যায় শাহ্ মখদুম হলকে ৬টি সেলে ভাগ করেছে ছাত্রশিবির। এগুলো হলো নিচতলা, দ্বিতীয় তলা (পূর্ব ব্লক), দ্বিতীয় তলা (পশ্চিম ব্লক), তৃতীয় তলা (পূর্ব ব্লক), তৃতীয় তলা (পশ্চিম ব্লক) এবং অনাবাসিক শাখা। ৬টি সেলের দায়িত্ব দেওয়া হয় হল শিবিরের ৬ সিনিয়র সাথীকে। এদের সাংগঠনিক পদ দেওয়া হয় ‘সেল তত্ত্বাবধায়ক’। অন্যান্য সংগঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলে আলাদা কমিটি না থাকলেও শিবিরের সেটি রয়েছে তো বটেই এর সঙ্গে যোগ করা হয় তলা ও ব্লকভিত্তিক কমিটি। শাহ্ মখদুম হল থেকে উদ্ধার করা একটি নথিতে দেখা যায়, গত ফেব্র“য়ারিতে গঠন করা হল কমিটি ১৭ সদস্যবিশিষ্ট। এর সঙ্গে রয়েছে সভাপতি-সম্পাদক পদ দিয়ে গঠন করা নিচতলা, দ্বিতীয় তলা পূর্ব ও পশ্চিম ব্লক, তৃতীয় তলা পূর্ব ও পশ্চিম ব্লক এবং অনাবাসিক শাখা কমিটি। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে পদ নিয়ে যেন কোনও অসন্তোষ দেখা না দেয় ও প্রত্যেকই কোনও কোনও দায়িত্ব নিয়ে যাতে চাপের মধ্যে থাকে সে জন্যই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে শিবিরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

বিরোধী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সক্রিয়তার হার : শুধু নিজেদের তথ্য হালনাগাদ করেই বসে থাকে না শিবির। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শাখা অঞ্চলে অবস্থান করা অন্যান্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সব ধরনের তথ্যের জোগান থাকে তাদের কাছে। শাহ্ মখদুম হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতির স্বার করা এমন একটি তথ্যপ্যাডের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। ‘অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা’ শিরোনামে তৈরি করা ওই প্যাডের কয়েকটি পাতায় ওই হলে অবস্থান করা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও তিনটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সক্রিয় নেতাকর্মীর বিস্তারিত তথ্য লেখা রয়েছে। বিস্তারিত তথ্যের মধ্যে রয়েছে নাম, বাবার নাম, পুরো ঠিকানা, বিভাগ ও সেশন, ক নম্বর ও সংগঠনে তাদের সক্রিয়তার হার। পুলিশের উদ্ধার করা ওই প্যাডে ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুর রহমান ডালিম, মশিউর রহমান ম-ল, আবদুল হালিম, আইয়ুব আলী, রবিউল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, ৮ ফেব্র“য়ারি নিহত ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেন, ওইদিন আহত শফিউল্লাহ, ওয়াসিম আকরাম, বদিউজ্জামান নিজাম, মফিজুল ইসলাম মুন্না, রুহুল আমিন ও মশিউর রহমানের নাম লেখা রয়েছে। এদের মধ্যে নিহত ফারুক হোসেন, আহত বদিউজ্জামান নিজাম, ওয়াসিম আকরাম, মফিজুল ইসলাম মুন্না, রুহুল আমিন ও ছাত্রলীগ নেতার নিজ দলে সাংগঠনিক বর্তমান অবস্থার ঘরে সক্রিয়তার হার লেখা ছিল শতভাগ। ওইদিন আহত শফিউল্লাহর সক্রিয়তার হার লেখা ছিল ৯০ শতাংশ।
প্যাডের পৃষ্ঠাটিতে ওই হলের আবাসিক ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান ইমাম সাগরের নামও রয়েছে। তার সংগঠনে সক্রিয়তার হার দেওয়া রয়েছে ৭০ শতাংশ। এর সঙ্গে রয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন এস-এর সাবেক সভাপতি ও ওই হলের আবাসিক ছাত্র এবিএম জাহিদ সরোয়ার, তীর্থক নাটকের আবু বাক্কার ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের মোফাজ্জল হোসেনের নাম। তাদের সবার বাবা-মা ও বিভাগ-বর্ষসহ নিজ নিজ সংগঠনে সক্রিয়তার হার লেখা রয়েছে ওই প্যাডে। উদ্ধার করা প্যাডের পৃষ্ঠা থেকে জানা গেছে প্রতিমাসে এই তালিকা হালনাগাদ করা হতো

বিরোধী সংগঠনগুলোর পোস্টমর্টেম: কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে জামায়াত-বিএনপির মিত্র হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে কেমন চোখে দেখত ছাত্রশিবির তার প্রমাণ মিলেছে তাদের গোপন নথিতে। শহীদ শামসুজ্জোহা হল থেকে সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের ২০০৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ছাত্রদলকে ‘অস্ত্র-সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিনির্ভর’ সংগঠন হিসাবে আখ্যা দেয় শিবির। প্রতিবেদনটিতে তারা ছাত্রদলের বিভিন্ন তৎপরতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সংগঠনটিকে ‘চরমমাত্রার অনৈতিক’ সংগঠন হিসাবে উপস্থাপন করে তাদের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডে। প্রতিবেদনে ছাত্রদলের নানা ‘অপকর্ম’ তুলে ধরে উপসংহারে বলা হয়, ‘এসব অপকর্ম পরিত্যাগ না করলে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এককালের ছাত্রমৈত্রীর মতো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’ শিবিরের চোখে ছাত্রলীগের পরিচয় ‘প্রতিহিংসা, গলাবাজি, সন্ত্রাস, ইসলামবিদ্বেষ, স্বদেশদ্রোহিতা আর দুর্নীতির কান্ডারি’ হিসাবে। বার্ষিক প্রতিবেদনে জাসদ ছাত্রলীগকে ‘নাম-পরিচয়বিহীন’, ছাত্রমৈত্রীকে ‘অস্ত্র, সন্ত্রাস ও অর্থনির্ভর’ এবং ছাত্র ইউনিয়নকে ‘ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিপ্তি নাস্তিক্যবাদী মতবাদের ধারক, বাহক ও পাগলপ্রায়’ সংগঠন হিসাবে দেখিয়েছে ছাত্রশিবির।

অমুসলিম আর নারীরাও শিবিরের টার্গেট : চলতি বছরে বঙ্গবন্ধু হলে শিবির ২০ অমুসলিম শিার্থীকে দলের সমর্থক বানানোর পরিকল্পনা করেছিল। পুলিশের হাতে থাকা শিবিরের বার্ষিক পরিকল্পনায় দেখা যায়, ২০ অমুসলিম শিার্থীকে সাংগঠনিক বন্ধু বানানোরও টার্গেট নেয় ওই হলের শিবির ক্যাডাররা। মুহরমাদের (নারী) মধ্যেও যোগাযোগ ও কাজ করার পরিকল্পনা নেয় শিবির। হল শিবিরের সব সাথী ও সদস্য স্তরের লোকজনকে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই পরিকল্পনায়।

হলের নথি তাদের কাছে : শিবির নিয়ন্ত্রিত কগুলোতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে বিভিন্ন হল প্রাধ্য যারপরনাই বিস্মিত হয়েছেন। শিবিরের কগুলোতে তারা পেয়েছেন শিার্থীদের আবাসিকতা দেওয়ার অফিসিয়াল তালিকা। প্রাধ্য স্বারিত এই তালিকার কোনও অংশ বা পুরো তালিকা কোনও শিার্থীর হাতে যাওয়ার কোনও নিয়ম নেই। কিন্তু শাহ্ মখদুম হলের তিনটি আবাসিকতার পুরো অফিসিয়াল তালিকা পাওয়া গেছে শিবির নিয়ন্ত্রিত কক্ষে তালিকাগুলো গত বছরের ৩১ মে, ১৮ জুলাই ও ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করেছিল হল প্রশাসন। অন্যান্য হলেও শিবির নিয়ন্ত্রিত কে পাওয়া গেছে এসব নথিপত্র।

দল না করলেই পলাতক : ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত হয়ে যারা কিছুদিন পরে নানা কারণে নিষ্ক্রিয় হয় তাদের কপালে জোটে ‘পলাতক’ আখ্যা। শাহ্ মখদুম হলে শিবিরের সভাপতির ক থেকে উদ্ধার করা একটি রেজিস্টার খাতায় এর প্রমাণ মিলেছে। সাবেক সভাপতি আনিছের মেয়াদকালে সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিস্তারিত তথ্য সংযোজন করে ওই খাতাটি তৈরি। এতে বেশকিছু কর্মীর নামের পাশে লাল কালিতে লেখা রয়েছে পলাতক। এদের মধ্যে অনাবাসিক হয়েও হলের ৩৫৬ নম্বর কে থাকতেন শিবির কর্মী সাইফুল ইসলাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবির করবেন না বলে তিনি পরে কাজলা এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি ছাত্রাবাসে ওঠেন। তাই শিবিরের ওই রেজিস্টার খাতায় সাইফুলের নামের পাশে লেখা রয়েছে ‘ম্যাচে পলাতক’। শফিউল বাশার নামের এক সাথীর নামের পাশে লাল কালিতে লেখা রয়েছে ‘কোন খোঁজ নাই।’

কোটি টাকা আয় : বছরে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন খাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের কোটি টাকা আয়ের খতিয়ান পেয়েছে পুলিশ তাদের গোপন নথিতে। এর মধ্যে তাদের পরিচালিত কনটেস্ট ও কনক্রিট কোচিং সেন্টার থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে কমপে ৮৬ লাখ টাকা আয় করে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে হলে অনেক অনাবাসিক ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা করেছিল শিবির। হলে বিনামূল্যে থাকার লোভে আর্থিকভাবে অসচ্ছল অনেক অনাবাসিক শিার্থী এভাবেই জড়িয়ে যায় শিবিরের রাজনীতিতে। তবে হলে ওঠার পর এদের মধ্যে অনেকের কাছ থেকে মেস ভাড়ার মতো সিট ভাড়া আদায় করে শিবির। পুলিশের উদ্ধার করা শাহ্ মখদুম হল শিবিরের ‘সিট রেন্ট আদায়যোগ্য মোট জনশক্তি’ শীর্ষক একটি নথি থেকে জানা যায়, ওই হলে তাদের ২০ নেতাকর্মীর কাছ থেকে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হতো। যারা কেউ হলের আবাসিকতা পায়নি এদের কাছ থেকে কত হারে ভাড়া আদায় করা হতো সে ব্যাপারে কোনও তথ্য ওই নথিতে নেই। তবে সোহ্রাওয়ার্দী হল থেকে উদ্ধার করা নথিপত্রে দেখা গেছে, শিবির প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি ছাত্র হল থেকে প্রায় ২৪ লাখ টাকা এই খাতে আয় করে। জামায়াতপন্থি শিকদের কাছ থেকেও প্রতি মাসে টাকা পায় শিবির। পুলিশের হাতে থাকা শিবিরের একটি নথিতে দেখা যায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২শ ৫০ জন শিকের প্রতিজনের কাছ থেকে মাসে ১ হাজার টাকা করে আদায় করে। সেই হিসাবে এক মাসে এই খাতে তাদের আয় ২ লাখ ৫০ হাজার এবং বছর শেষে তা দাঁড়ায় ৩০ লাখ টাকায়। ছাত্রাবাস ভাড়া দিয়েও প্রচুর টাকা আয় করে শিবির। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর অঞ্চলে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ভবন নামের একটি ছাত্রাবাস থেকে তারা মাসে ২৪ হাজার টাকা আয় করে। সেই হিসাবে বছরে ওই ছাত্রাবাস থেকে তাদের আয় আসে ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এরপাশেই তাদের ৪ তলা একটি ছাত্রাবাস রয়েছে ‘মহানন্দা’ নামে। সিট ভাড়া দিয়ে বছর শেষে এই ছাত্রাবাস থেকে তারা আয় করে ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।

শিবিরের দুটি নৃশংস-ভয়ঙ্কর কিলিং মিশনের মধ্য থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া দুজন ছাত্রনেতার ভাষ্য
রাজশাহীর যত শিবির ক্যাডার এবং তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড
শিবিরের কুকর্মের দলিল............।২০০১-২০১০
সূত্র: সাপ্তাহিক ২০০০

সালমা রহমান এর ছবি

সুন্দর তথ্যবহুল লেখা। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

রায়হান আবীর এর ছবি

জরুরী লেখা। ধন্যবাদ আপনাকে।

শিক্ষানবিস এর ছবি

খুব দরকারি লেখা।।।

pranabesh chakraborty [অতিথি] এর ছবি

ইতিহাস কথা বলবেই ... ...

pranabesh chakraborty [অতিথি] এর ছবি

ইতিহাস কথা বলবেই ... ...

pranabesh chakraborty [অতিথি] এর ছবি

-------------
+++++++
________________
-----------------------

দেবজ্যোতি দাস দেবু এর ছবি

অনেক দরকারী সিরিজ ।পরবর্তী অংশের অপেক্ষায় রইলাম ।

বাউলিয়ানা এর ছবি

চলুক সিরিজ চলুক।

পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। আর আপনার ব্যবহৃত রেফারেন্স লেখার শেষে দিয়ে দিতে পারেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

লেথাটি সুন্দর হয়েছে

সুরঞ্জনা এর ছবি

আরো লিখুন। সবাই জানুক।
সবাই।
............................................................................................
স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা।।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

জাহামজেদ এর ছবি

সাথে থাকুন...

.....................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

হাসিব এর ছবি

[/list]
[*]

ঢাকার আইডিয়াল স্কুল শিবির রিক্রুটের একটা আস্তানা। এটা অন্তত আশির দশকে ছিলো বলে জানতাম। এই বিষয়ে কেউ কোন আলোকপাত করতে পারবেন?

[*]

আমি আগে খিলগাও থাকতাম। ওখানে ইসলামি সমাজকল্যান পাঠাগার নাম নিয়ে শিবির রিক্রুটমেন্ট চলতো। পাড়ার সব পড়ুয়া বাচ্চা ছেলেদের মন ভজানোর জন্য সারাদিন কয়েকজন ঘোরাঘুরি করতো পাড়াতে।

[/list]

জাহামজেদ এর ছবি

এমন পাড়ায় পাড়ায় কার্যক্রম চালানোর জন্য ওদের এলাকাভিত্তিক একটা নেটওয়ার্ক আছে। শিশু কিশোরদের মন ভুলানোর জন্য ফুলকুঁড়ি ছাড়াও নতুন আরো একটি সংগঠনের জন্ম হয়েছে। ফুলকুঁড়ি নামটা পঁচে গেছে, তাই নতুন ব্যানারে ফুলকুঁড়ির মতো আরেকটা সংগঠন নিয়ে এসেছে ওরা। যেমন সংগ্রাম থেকে নয়াদিগন্ত ! আর স্কুলকেন্দ্রিক রাজনীতিটা করে মূলত শহরে। কিন্তু মজার ব্যাপারটা হচ্ছে যারা স্কুলে থাকতে শিবিরের প্রলোভনে পা দিয়ে ফেলে তাদের শতকরা ৯০ ভাগ কলেজ জীবনে উঠে আবার তাদের ভুল বুঝতে পারে। শিবিরে মতাদর্শ আর কীর্তিকলাপ সম্পর্কে সচেতন হয়ে যায়। আমি অনেকের ক্ষেত্রেই এটা দেখেছি।

শিবির রাজনীতি করে এমএলএম কোম্পানীগুলোর মতো। তাদের দেশব্যাপী বিস্তৃতিও একই কায়দায়। এসব বিষয়গুলো নিয়ে পরবর্তী পর্বগুলোতে বিষদ আলোচনা করা হবে।

.......................................................................
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

এনকিদু এর ছবি

খুব ভাল সিরিজ হচ্ছে, মূল লেখায় এবং মন্তব্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আসছে। চলুক।

চলুক


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ পোস্টের জন্য। খুবই দরকারী

একজন পাঠক এর ছবি

১. ছাত্রশিবিরের নোংরা কার্যকলাপের বিস্তারিত বিবরন পাবেন নিচের লিংকে-

http://no2shibir.blogspot.com/

২. আনিস রায়হানের নিচের পোষ্টটি শিবির নিয়ে আমার দেখা সেরা লেখাগুলোর একটি -

সহীহ্ শিবিরনামা

auto

৩. উপরে একটা কমেন্টে এসেছে যে শিবিরের ছেলেপেলে পরীক্ষার খাতা বাইরে নিয়ে যেত, সে খবরটা কপি পেইষ্ট করলাম।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: বাইরে লিখে উত্তরপত্র জমা দিত শিবির ক্যাডাররা!

আনু মোস্তফা ও আসাদুর রহমান

শিবির ক্যাডাররা দলীয় প্রশাসনের আনুকূল্য পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে, তার অন্যতম হলো পরীক্ষার খাতা বাইরে লিখে পরে জমা দেওয়া। নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষায়ও শিবির নানা অপকৌশল ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে হলগুলোর শিবির-নিয়ন্ত্রিত কক্ষ তল্লাশির সময় উদ্ধার হওয়া কাগজপত্র থেকে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ২৩৫ ও ২৬৬ নম্বর কক্ষ তল্লাশি করে শিবিরের নানা অপতৎপরতার বহু প্রামাণ্য দলিল উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি শিবির-নিয়ন্ত্রিত ১১৪ নম্বর কক্ষ থেকে পাওয়া গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের সিলমারা বেশ কিছু ফাঁকা উত্তরপত্র বা পরীক্ষার খাতা। বেশ কিছু ভর্তি পরীক্ষার ফাঁকা উত্তরপত্রও এ কক্ষ থেকে উদ্ধার করেছে হল প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম সোবহান বলেছেন, 'এসব ঘটনা আমাদের ধারণার অতীত ছিল। এখন দেখছি, শিবির ফাঁকা উত্তরপত্রও পরীক্ষা হলের বাইরে নিতে সক্ষম হয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটিকে এসব বিষয় দেখার জন্য অনুরোধ করেছি।'

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে ১১৪ কক্ষের আবাসিক ছাত্র শিবির ক্যাডার আতাউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মতিহার থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন খান জানিয়েছেন, আতাউরের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আলী। সে রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে তাণ্ডবের পর অন্য শিবির ক্যাডারদের সঙ্গে সেও পালিয়ে যায়। পরে ফিরে এসে ১১৪ নম্বর কক্ষেই ওঠে।
আতাউরকে ৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত পুলিশের ওপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকালই আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত থেকে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

মতিহার থানার ওসি বলেন, 'আপাতত আতাউরকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি তার বিরুদ্ধে একাডেমিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মামলা করে, তখন সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।'
সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. আখতার ফারুক আরো বলেন, উত্তরপত্র জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত শিবির ক্যাডার আতাউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে হল প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত পেলে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে মামলা করা হতে পারে। উত্তরপত্র বাইরে আনার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তার ছাত্রত্ব বাতিল হতে পারে বলেও প্রাধ্যক্ষ জানান।

সোহরাওয়ার্দী হল কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ১১৪ নম্বর কক্ষ থেকে পাওয়া যায় রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত মাস্টার্স শেষ বর্ষের পাঁচটি ফাঁকা খাতা বা উত্তরপত্র। খাতাগুলোর সিরিয়াল নম্বর ০২৮২০৫, ০২৫৯১৫, ০২৫১৫৮, ৪০৮৭১ ও ০২৫১৪২। এসব খাতা পরীক্ষা হলের বাইরে কীভাবে গেল, এই প্রশ্নের কোনো উত্তর এখনো খুঁজে পাচ্ছেন না হল প্রাধ্যক্ষ ড. আখতার ফারুক। তিনি আরো জানান, ২৬৬ নম্বর কক্ষ থেকে ২০০৫-০৬ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার ফাঁকা খাতাও পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি। প্রাধ্যক্ষের আশঙ্কা, রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগেরই কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী পরীক্ষায় অবতীর্ণ কোনো শিবির ক্যাডারকে ভালো ফল করিয়ে দিতে এ অবৈধ সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'যেহেতু আতাউর রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগেরই ছাত্র আর খাতাও পাওয়া গেছে তার বিভাগেরই, তাই তাকেই আমরা সন্দেহ করছি উত্তরপত্র সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত বলে।'

এদিকে ১১৪ নম্বর কক্ষ থেকে ২০০৫-০৬ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার ফাঁকা উত্তরপত্রও পাওয়া গেছে। এসব উত্তরপত্র পদার্থবিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও গণিত বিভাগের। প্রাধ্যক্ষ আরো বলেন, 'শিবিরের এসব অপতৎপরতায় আমরা ক্রমাগত বিস্মিত হচ্ছি।' তিনি আরো বলেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে দলীয় শিক্ষকদের সহায়তা ছাড়া পরীক্ষার খাতা পরীক্ষা হলের বাইরে আনা এবং পরে উত্তর লিখে জমা দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।

ফাঁকা উত্তরপত্র কীভাবে বাইরে গেল সে প্রসঙ্গে উপাচার্য ড. এম সোবহান বলেন, 'এসব কাজ বিভাগের কারো সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সম্ভব নয়, আপাতত এমনই মনে হয়। আমরা ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে এসব বিষয় দেখার অনুরোধ করেছি। রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগকেও আমরা বিষয়টি দেখার জন্য বলব। আশা করি, কারা এসবের সঙ্গে যুক্ত তা পরিষ্কার হবে।' তিনি বলেন, এসব যারা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এইটা একটা কাজের সিরিজ কর্তেছেন।

মন্তব্যগুলো ও কাজের।

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

সচল জাহিদ এর ছবি

চমৎকার সিরিজ। পড়ছি।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অস্থির চিত্ত [অতিথি] এর ছবি

খুবই দরকারী পোষ্ট...লেখককে অশেষ ধন্যবাদ!

লীন [অতিথি] এর ছবি

আমি নতুন এই ব্লগ কালচার এ। লেখা টা পরে খুবই ভাল লাগল। জিয়ার জামাত শিবির পুনস্থাপন এর ওপর কোন ভাল রেফেরেন্স বই বলতে পারেন কেউ? আপনার লেখা টা রেখে দেবার মত, কিন্তু আসলেই কিছু রেফেরেন্স এর প্রয়োজনিয়তা বোধ করছি, বিশেষ করে পুরোনো ঘটনা গুলোর। তাহলে নিজে যখন যুক্তি উত্থাপন করি তখন সুবিধা হয়।

অনেক ধন্যবাদ। আরও লিখুন।

মাহবুবুল হক এর ছবি

অসাধারণ হচ্ছে। জাহামজেদ এবং পলাশ মিলে মহাকাব্য রচনা করছেন দেখতে পাচ্ছি।ধন্যবাদ তাদেরকে। তবে সারোয়ার কামাল যে সূত্র চাচ্ছেন তা দিতে পারলে আসলেই ভালো হত। আমি জানি বর্ণনা সঠিক । কিন্তু শিবিরের লোকজন আবার তাদের পক্ষে না গেলে কোন তথ্যকে প্রামান্য(?) মনে করে না। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত কোন তথ্য, যা তাদের বিপক্ষে যায় তাকে চ্যালেঞ্জ করার ভাষা তাদের একটাই - ' প্রমাণ দেন' 'কোথায় আছে' ' কই পাইলেন এক্ষণ দেখান' মার্কা কথা। তারপর যদিও বা আপনি খেটেখুটে কোন সূত্র হাজির করবেন , তারপর শুরু হবে সেই সূত্রের গুষ্টি উদ্ধার করার পালা। সেটার বিশ্বাসযোগ্যতাকে হাস্যকর বানিয়ে বিতর্কটাকে আসল জায়গা থেকে দূরে সরানোর কাজটা চলবে। এই হচ্ছে তাদের বাহাসের তরিকা। তাই যে বা যিনি তথ্য দেবেন বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন আশা করি। আর ভাষার ক্ষেত্রে নৈর্ব্যক্তিক থাকার চেষ্টা করলে এ লেখাটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।
একজন পাঠকের দেয়া লিংকটা খু-উ-ব কাজের, এ বিষয়ে তথ্যের আড়ৎ বলা যায়। ধন্যবাদ তাকেও।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

shafi এর ছবি

এ বিষয়ে আরও লিখুন। চলুক আমি সাতক্ষীরার ছেলে তো, শিবির নিয়ে আমার জীবনেও ঘটনা কম নয়, পরে লেখা যাবে। ওখানকার (সাতক্ষীরা সদর) লোকজন এক্টু ধর্ম ভীরু আছে, সুযগের সৎ-ব্যবহারে জামাত-ই এডমিনিস্ট্রেশন আমাদের জন্যে লিনটেল-রাইস (হ্য়ত এখনো আছে, সঠিক জানিনা অবশ্য)।

শাফি।

Charles এর ছবি

আমার ব্লগার ভাইরা কি লক্ষ করেছেন 'প্রথম আলো' এখন শুধু ছাগুদের মন্তব্য ছাপে? পরীক্ষা করে দেখতে পারেন - হাসিনার পক্ষ নিয়া কিছু লিখলে আমার কথার সত্যতা পাবেন।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

খুবই দরকারী লেখা। ধন্যবাদ। চলুক আবাসিক এলাকা যেমন জুট মিলের আবাসিক কলোনী (খুলনাতে) এবং অন্যান্য বড় আবাসিক কলোনীতে শিবির গল্পএর বই, পাঠাগার, বই নিয়ে আলোচনা, পড়ার বই বুঝিয়ে দেয়া প্রভৃতি দিয়ে আকর্ষণ করে থাকে। এ বিষয়েও আলোকপাত করতে পারেন। ইস্লামী ছাত্রি সংস্থা নামে ওদের আলাদা সংগঠন আছে স্কুলের মেয়েদের রিক্রুট করার জন্য।

বাংলামায়ের ছেলে এর ছবি

রেটিনা, ফোকাস, কনক্রীট(এটা এখন আর নাই মনে হয়, প্রথম দুটো আছে) এগুলা দিয়ে জামাত ঢাবি, বুয়েট, মেডিকেল এর স্টুডেন্টদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর মিশন এবং ঈমানী!!! কার্যক্রমের অর্থসংগ্রহ ও করছে।
এদের কোচিং গাইডের উৎসর্গটা দেখলেই অনেকখানি বোঝার কথা...

এই সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।

লেখা ভালো লাগলো। চলুক।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমি কিছু বোঝার আগেই কিশোরকণ্ঠ ফ্রি পেতাম প্রতি মাসে। আমার তখন বোঝার বয়স হয়নি কিন্তু সেটা যে শিবিরের তা বোধকরি আমার বাসাতেও কেউ জানতো না। জানলে ওই বস্তু আমার পাওয়ার কথা না!
আমাদের ওখানে শিবিরের সাংস্কৃতিক উইংয়ের নাম ছিল 'বিহঙ্গ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী' টাইপের কিছু একটা। সেটা যে শিবিরের তাও আবিষ্কার করা কঠিন ছিল!

জরুরী সিরিজ। চলুক। সাথে আছি।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অরিত্র অরিত্র এর ছবি

খুবই জরুরী লেখা। এসব তথ্য সবাইকে জানানো উচিত। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।