ডিয়ার জন, একটি প্রেমের গল্পের করুণ সমাপ্তি

জাহামজেদ এর ছবি
লিখেছেন জাহামজেদ [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২৩/০৮/২০১০ - ৮:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছবিটা দেখে আমার ভালো লেগেছে, সাদামাটা প্রেমের গল্প, অসাধারণ ভাবে কাহিনীর মোড় ঘুরে যাওয়া, তারপর দদুজনের চিঠি লেখালেখির বিচ্ছেদ, কাহিনীটাকে ভালো করেই দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন ছবিটির নির্মাতা।

চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কিছু নিজস্ব দর্শন থাকে, নিজেদের চিন্তার আলাদা একটা জায়গা থাকে, নিজেদের নির্মাণে তারা বৈচিত্র আনতে গিয়ে অনেক সময় সহজ সরল গল্পের মোড় হুট করে ঘুরিয়ে দিয়ে তাদের নিজেদের ভাবনাটাকে দর্শকদের কাছে ছড়িয়ে দিতে চান। এখন এই ছবিটার পরিচালক লেস হলস্ট্রম হয়তো এই কাজটি করতে চেয়েছেন।

ছবির নাম ডিয়ার জন। পরিচালক লেস হলস্ট্রম। ছবিটি নির্মিত হয়েছে নিকোলাস স্পার্কসের উপন্যাস অবলম্বনে।

এই ছবিটাকে একটি সহজ প্রেমের গল্প বলা যায়, চিঠির গল্প বলা যায়, এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে ছুটে চলা এক মার্কিন সৈনিকের গল্প বলা যায়, না পাওয়ার গল্পও বলা যায়।

পুরো ছবি জুড়ে জনের চরিত্রে অভিনয় করা টাটুমের অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছে। তেমনি জনের বিপরীতে সাভান্না'র চরিত্রে অভিনয় করা সেফ্রিড পুরো ছবিতেই ছিলেন অনবদ্য। কেন্দ্রীয় চরিত্রের দুজনের অভিনয়ই মুগ্ধতা ছড়িয়েছে ছবির পুরো সময় জুড়ে, যদিও ছবির গল্পে অন্যদের খুব একটা আহামরি কিছু করার সুযোগও ছিলো না।

ছবিতে জন মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক, দুই সপ্তাহের ছুটিতে এসেছে নিজের সমুদ্র তীরবর্তী শহরে। অন্যদিকে সাভান্না কলেজ পড়ুয়া ধনী এক মেয়ে, বসন্তের ছুটিতে বন্ধুদের সাথে বেড়াতে এসেছে, দিনে ঘূণিঝড়ে বিধ্বস্তদের ঘর মেরামতে সাহায্য করে আর রাতে সৈকতে বসে বন্ধুদের সাথে বারবিকিউয়ের স্বাদ নেয় । দুজনের পরিচয় সৈকতে নাটকীয়ভাবে, তারপর সেই পরিচয় খুব অল্প সময়েই দুজনেই টেনে নিয়ে গেছে প্রণয়ে। একপর্যায়ে জনের ছুটিও শেষ হয়ে যায়। নিজের কাজে ফিরে যাওয়ার আগে জন সাভান্নাকে কথা দেয়, সে এক বছরের মধ্যেই তার সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালন করে ফিরে আসবে। তারপর দুজনে সুখে শান্তিতে বাকি জীবনটা পার করে দিবে। এরপর শুরু হয় দুজনের চিঠি লেখালেখি। সাভান্না চিঠি লিখে তার সব হৃদয়ের আবেগ মিশিয়ে, অন্যদিকে জন, ব্যারাক থেকে ব্যারাকে, এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে ছুটে চলতে চলতে সাভান্নাকে চিঠি লিখতে ভুলে না। এরই মধ্যে ঘটে যায় টুইন টাওয়ার বিপর্যয়, জন এক বছরের মধ্যে আর সাভান্না'র কাছে ফিরে আসতে পারে না, তার দায়িত্ব বেড়ে যায়, তাকে ছুটতে হয় আফিকা থেকে ইরাকে, তারপর আফগানিস্তানে।

জনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে একদিন সাভান্না চিঠিতে জানায়, সে আর একা থাকতে পারছে না। তার জীবনে চলে এসেছে কেউ একজন। জন ভেঙ্গে পড়ে কিছুটা, আগুনে পুড়িয়ে ফেলে সাভান্না'র সব চিঠি। তারপর বাবার শেষ সময়ে সে যখন দীর্ঘদিন পর ফিরে আসে নিজের শহরে তখন সে আবার মুখোমুখি হয় সাভান্না'র। অবাক হয়ে তখন সাভান্না'র ঘরে একটা ছবির ফ্রেমে বাঁধানো দেখে সাভান্না আর টিমের বাঁধিয়ে রাখা বিয়ের ছবি। টিম, সাভান্না'র পারিবারিক বন্ধু, জনের সাথেও তার একসময় ভালো পরিচয় ছিলো। এখানে এসেই ছবির গল্পের পুরোপুরি মোড় ঘুরে যায়, দর্শক আহ্ উহ্ করে। কারণ, টিমকে সাভান্না'র স্বামী হিসেবে কল্পনাও হয়তো করেনি। এখানেই মুলত পরিচালকের সফলতা।

ডিয়ার জন ছবিটা দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়েছি, মুগ্ধ হওয়ার কারণও ছিলো, কাহিনীর সাথে এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফিটাও অসাধারণ। সাদামাটা কিছু শটে হলস্ট্রম তার অসাধারণত্ব দেখিয়েছেন। সমুদ্রে জনের সার্ফিং করার সময় ঢেউয়ের যে শটগুলো নেওয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহে মনে রাখার মতো। মার্কিন সেনা ব্যারাকগুলোর দৃশ্যগুলো যেভাবে ধারণ করা হয়েছে, তা দেখে মনে হয়েছে, এটা যেনো সাজানো কোনো সেট না, একেবারে যেন যুদ্ধ চলাকালীন কোনো সেনা ছাউনি।


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

রিভিউতে সবটা গল্প বলে দিলে দর্শকের আর দেখার সুযোগ থাকে না যে! অন্ততঃ স্পয়লার অ্যালার্ট / ভণ্ডুলবার্তা দিলে পারতেন বোধ হয়।

সেট নিয়ে অনেক গল্প আছে এখানে। ছবির পটভূমি চার্লস্টন বলে সে সব শুটিং তো সেখানে হয়েছেই, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের মরুপ্রান্তরও সেখানেই বানানো হয়েছে। এইটা নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ ছিলো। ডিভিডি-তে মেকিং অফ-এ বিশদ পাবেন। ওখানে ছবির একটা অন্য সমাপ্তিও দেওয়া আছে।

সাভানা বা সভানা লিখলে উচ্চারণানুগ হতো বলে মনে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।