চোখটা এত পোড়ায় কেন, ও পোড়াচোখ সমুদ্রে যাও, সমুদ্র কি তোমার ছেলে, আদর দিয়ে চোখে মাখাও...নারিতা, সঞ্জীব চৌধুরীর এই গানটা শুনলেই চোখে ভেসে উঠে তোমার ছবি, তুমি পাহাড়ের মেয়ে, তোমার বেড়ে ওঠা পাহাড়ে, তোমার বেড়ে ওঠা মেঘের কোলে, সাদা মেঘে ছুটতে ছুটতে মেঘের কোলে তুমি রোদ হয়ে হাসো, শিলংয়ের মেঘে এক চিলতে রোদ হয়ে ভাসো...
শিলংয়ে গেলে মেঘের কোলে বসে বসে সবাই অমিত হতে চায়, আমার লাবণ্য যে শিলংয়েই থাকে, আমিও তাই অমিত হতে বারবার তোমার কাছেই ছুটে যাই, অমিত কেন শিলংয়ে গিয়েছিলো, দার্জিলিংয়ে তো যেতে পারতো, কিন্তু যায়নি, অমিত বলেই হয়তো যায়নি, দার্জিলিংয়ে জনতা আছে, মানুষ নেই, অমিত শিলংয়ে ‘মানুষ’ পেয়ে গিয়েছিলো, পাহাড়ি রাস্তায় না-ঘটা এক ‘দুর্ঘটনা’য়। ওই মানুষটি লাবণ্য; গাড়ি থেকে লাবণ্য নেমে এসেছিল: ‘সে যেন ফুটে উঠল একটি বিদ্যুৎরেখায় আঁকা সুস্পষ্ট ছবি—চারদিকের সমস্ত হতে স্বতন্ত্র।’ নারিতা, শিলংয়ের সাদা মেঘে আমি লাবণ্যকে পাইনি, পেয়েছিলাম তোমাকে...
তুমি আর আমি একসাথে সমুদ্রবিহারে যাওয়ার কথা ছিলো, আমাদের নীল জলরাশির সমুদ্রে, শিলংয়ের পাহাড়ে বসে তোমার কাছে আমাদের সৈকতের শুভ্র শামুকের গল্প করেছিলাম, আর তুমি চেয়েছিলে মারমেইড হতে। আমার পুরোপুরি মনে আছে, আমরা যখন পাহাড়ের কোলে বসে শিলং শহরটা দেখছিলাম, তুমি আমাকে বলেছিল, একবার যদি মৎস্যকুমারী হতে পারতাম ! অথচ আমি তোমাকে বলিনি, তুমি যদি একবার আমাদের নীল জল সৈকতে আসতে তাহলে মৎস্যকুমারীরা কিছুদিনের জন্য উইন্টার ভ্যাকেশনে যেতো, তুমি প্রক্সি দিতে, ঝাউবনে ছোপ ছোপ পা ফেলে হাঁটতে, আমি হাঁটতাম তোমার পেছনে পেছনে...নারিতা, তুমি কেন আমার সাথে আসোনি এই সমুদ্রে ?
পালংকি নামের মাঝে একটা ভালোবাসা আছে, নীল জলরাশির উপরে ভাসছে পুরো শহর, মুগ্ধ কিছু মানুষ লাবণী পয়েন্টে, তাদের চোখে মুখে মুগ্ধতার জলরাশি, ঝাউবনে মাতাল ভাবনা, শহরটার নাম যদি পালংকি থাকতো, তাহলে হয়তো জীবনানন্দের বই হাতে এলামেলো হাঁটতো কিছু তরুণ, কেউ কেউ বসে থাকতো ঝাউবনে, একজনের মাথা আরেকজনের কাঁধে, ধীরে ধীরে রাত নামতো, প্রেমিক তরুণ হয়তো প্রেমিকাকে ভালোবাসা মাখা কন্ঠে বলতো, এই শহরটার নাম জোছনার শহর হলেই ভালো হতো, কি সুন্দর ছড়ানো ছিটানো জোছনা, জোছনারা ঢেউ তুলে নীল জলে, জোছনারা ঢেউ তুলে সোনালী বালুর সৈকতে...আহারে, পালংকি নামটাই বড় ভালো ছিলো...
বুড়ো সান্তিয়াগোর কথা তোমার মনে আছে, ঐ যে চুরাশি দিন মাছ না ধরে বসেছিলো, সান্তিয়াগোর কথা কেন আসছে জানো, আমাদের সমুদ্র শহরে গেলে আমি অনেক সান্তিয়াগোকে দেখি, কিন্তু তারা বুড়ো সান্তিয়াগোর মতো বসে থাকে না, গান গায়, আমায় ভাসাইলিরে, আমায় ডুবাইলিরে, অকুল দরিয়ার বুঝি কুল নাইরে...গান শেষে হেইয়ো হেইয়ো কোরাসে জাল টানে, সমুদ্রের নীল জলরাশিতে ভাসতে ভাসতে তারা মাছ ঝলসে খায়, আমরা এটাকে বারবিকিউ বলি, আমাদের সান্তিয়াগোরা বলে মাছপোড়, এই শব্দটার আবার লোকাল একটা এডিশন আছে, আমি বলতে পারি না সেটা, কক্সবাজারের ভাষা আর চীনের ভাষাটা আমার কাছে সমান দুর্বোধ্য মনে হয়, তাদের সাথে নীল জলে ভাসতে ভাসতে তীর হারিয়ে ফেলি, বাইনোকুলারের গোল গোল বৃত্তে দেখি লাইট হাউজ, জেলেরা তখনো হেইয়ো হেইয়ো কোরাস টানে, অকুল দরিয়ার গানে, ওদের মাঝে তখন আমি ইয়াং সান্তিয়াগো, নীল জলরাশির বঙ্গোপসাগর আমার কাছে তখন আটলান্টিক আটলান্টিক...
সান্তিয়াগোর মাছের নাম ছিলো মারলিন, আমার সহযাত্রী সান্তিয়াগোরা মারছিলো রুপচাঁদা, কোরাল, লইট্যা, ভেটকি, আরো কত কি, আরো কত কি। তাদের জালে আমি একটাও মারলিন মাছ দেখি না, কিন্তু আমাদের মাছগুলো দেখেই মুগ্ধতার সাগরে হাবুডুবু খাই, ওদের কাছে আমি সান্তিয়াগোর গল্প করতে করতে নৌকায় দুলুনি উঠেছিলো, আমার ভয় দেখে ওরা শুধু হাসছিলো, ওদের হাসি দেখে তোমার হাসির কথা মনে পড়ছিলো বারবার, নারিতা, তুমি কেন আসোনি এই বিহারে, তুমি কেন আসোনি আমার সাথে নীল জল এই সমুদ্রে...
প্যানোয়া নামেও নাকি এই শহরটাকে ডাকা হতো একটা সময়, এই নামটাও তো অনেক সুন্দর ছিলো, অথচ দেখো মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সৈকতের শহরটাকে চিনে আজ এক উর্দিওয়ালার নামে, লেফটেন্যান্ট কক্স, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর এই কর্তার নামেই আজ জেগে আছে শহরটা, তার সাথে সমুদ্রের কি সম্পর্ক বলো, অথচ শহরটা তার নামেই, পালংকি বা প্যানোয়া নয়, তোমাকে নিয়ে আমি কক্সের শহরে দীর্ঘ দিগন্তের কক্সবাজার সৈকতেই হাঁটতাম, তোমাকে নিয়েই হারিয়ে যেতাম অবারিত নীল জলে, তুমি কেন আসোনি নারিতা...
তুমি তো শিলংয়ে থাকো, ওখানে মেঘ দেখা যায়, মেঘের সাথে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা যায়, ঘুম ভেঙ্গে বারান্দায় অপেক্ষায় বসে থাকা মেঘকে জড়িয়ে ধরে গুডমর্নিং গুডমর্নিং বলা যায়, বারবার তুমি আমাকে শিলংয়ে যাওয়ার কথা বলো, আমি বলি কক্সবাজার, এতো সুন্দর সৈকত তুমি পৃথিবীর আর কোথায় পাবে বলো ? জানি খুঁজলে আর একটাও পাবে না। আমার বন্ধুরা এই ঈদে পাতায়া যাবে, ঐটা থাইল্যান্ডের সৈকত, দেখতে ঠিক আমাদের পাশের বাড়ির রহিমাদের ঘরে যেতে যে খাল পেরোতে হয়, ঠিক সেই খালের পাড়ের মতো, অথচ কক্সবাজারের কথা কি তোমাকে আর বলতে হয়, একবার টেকনাফ থেকে দৌড়ে দৌড়ে কক্সবাজার এসেছিলাম, মনে আছে, মনে আছে নীল সৈকত, হিমছড়ির পাহাড়ে পাখির বাসা, ঝর্ণায় রূপালি জলের খেলা, হাওয়ায় উড়ে প্রজাপ্রতির রঙিন ডানা, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না...
কক্সবাজার গেলেই শেষরাত অবধি আমি হাওয়া ভ্রমণেই কাটাই, সৈকতে জোছনার নাচ দেখি, বালির গায়ে তাদের মাতালতা দেখি, জোছনার আলো হাওয়ায় ভাসে, আমি নিজেকে ভাসাই, তখন আবার তোমার কথা মনে হয়, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, নারিতা, নারিতা, পাহাড়ের মেয়ে নারিতা, মেঘের দেশের মেয়ে নারিতা, তুমি কেন আসোনি আমার সাথে এই সৈকতে...জোছনার নাচ অথবা নীল জল, আমরা ঝাউবনে বসে দেখতাম, পৃথিবীর মানুষকে জড়ো করে নীল জল দেখাতাম, সৈকতে জোছনার লুটোপুটি দেখাতাম, চিৎকার করে বলতাম, এই শহরের নাম পালংকি, এই শহরের নাম প্যানোয়া, এই কক্সবাজারই পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সৈকত...একবার আসো, একবার এসে দেখে যাও, কত সুন্দর, কত সুন্দর, হাওয়ায় উড়ে প্রজাপ্রতির রঙিন ডানা,তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না...
এবার আমি আর শিলংয়ে যাবো না, তুমিই আসবে নো ম্যানস ল্যান্ড মাড়িয়ে, এই শীতে আমরা দুজন নীল জল সমুদ্রে যাবো...
আলোকচিত্র : মেহদী হাসান খান
মন্তব্য
ঘুম তাড়াতে সচল খুললাম,
লেখা পড়ে তো এখন ইচ্ছে হচ্ছে পরীক্ষা টঙে তুলে কক্সবাজার চলে যাই...
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমারও খুব যেতে ইচ্ছে করছে। এই ঈদের পর একটা চক্কর দিতেই হবে...
_____________________________
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
খুব ভ্রমন মুডে আছো মনে হয়...
পাহাড় আর সমুদ্র ২টাই ভীষন প্রিয়!
কি করবো বলো, একদিকে পাহাড় একদিকে সমুদ্র, মাঝখানে আমি...
সেদিন শিলং থেকে ফিরলাম, ঈদের পর কক্সবাজার যাওয়ার কথা, কিন্তু তর সইছে না, এখনি যাইতে মন চায় !
______________________________
বৃষ্টির মধ্যে রোদ হয়ে তুই
পাতার গায়ে নাচ
কষ্টের রঙে সুখ হয়ে তুই
আমার মাঝে বাঁচ...
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
মন,বড় অবুঝ এ মন । কিছুতে মানে হায় ______________মন খারাপ করিস না বন্ধু ।নারিতা'রা এমনি হয় ।
আরেকটা ভাল লেখা পড়লাম ।ভাল লাগছে ।বিভিন্ন সমস্যার কারণে কখনো কক্সবাজার যাওয়া হয় নি ।লেখাটা পড়ার পর থেকে খুব ইচ্ছে করছে কক্সবাজার যাবার ।চালিয়ে যা বন্ধু ।
ঈদের পর আমরা বিশাল এক দল যাচ্ছি, চাইলে যেতে পারিস।
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
প্যানোয়া নামটা ভালো লাগছে।
প্যানোয়ার সৈকতে চান্নিপসর রাতে বসে এবং হেঁটে প্যান প্যান করার ইচ্ছা জাগ্রত হলো।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পালংকি অথবা প্যানোয়া, কোনোটাই কিন্তু খারাপ ছিলো না।
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
প্যানোয়া, পালংকি নাম বদলে কেন কক্স করা হলো তার বিস্তারিত ইতিহাস জানা থাকলে লেখবার অনুরোধ থাকলো। লেখাটা পড়ে দীর্ঘশ্বাসের ডালপালা গজালো..তাই আপনাকে মাইনাসসসসসসসস
ভবিষ্যতে কোনো একদিন এই বিষয়ে লিখবো... আর আপনার মাইনাস পছন্দ হয় নাই, প্লাস মারেন, প্লাস !
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
নতুন মন্তব্য করুন