ক্যালকুলেটর

জাহামজেদ এর ছবি
লিখেছেন জাহামজেদ [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৬/০৯/২০১০ - ১:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

০১.
রাতে বিছানায় এসে ঘরের সিলিংটা দেখতে দেখতে বিছানাটাকে-ই বড় আপন মনে হয় আবু সামাদের। পাশে টিভি চলছে, কিন্তু সে দিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে ভাবছে, ভাবছে না ঠিক, হিসাব মেলাচ্ছে সারাদিনের। বিছানা যেন তার ক্যালকুলেটর, শুতে এসে প্রতিদিন চোখ বন্ধ করার অথবা আয়েশ করে নিজের শরীরটাকে নিয়ে গড়াগড়ি খাওয়ার আগে আবু সামাদকে তাই সারাদিনের হিসেবটা মেলাতে হয়। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর তো নতুন একটা দিন, নতুন হিসেব- তাই বিছানায় এসে গড়াগড়ি খাওয়ার আগে তার কাছে দিনের হিসেব, তারপর টিভি অথবা ঘুম।

০২.
পেশায় আবু সামাদ একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। সংক্ষেপে বললে এমআর। তাই প্রতিদিন সকালে পেশার খাতিরে ঘুম থেকে উঠেই তাকে ঝকঝকে তকতকে হওয়ার জন্য খুব ভালো করেই দাঁড়ি কামাতে হয়। শুধু দাড়ি কামালেই হয় না, দাড়ি কামানোর মধ্যেও যত্ন থাকতে হয়। চাকরির ইন্টারভিউয়ে তার চাকরি হয়ে গেছে কথাটা শোনার পর আবু সামাদকে শুনতে হয়েছিল এই কথাগুলো- প্রতিদিন ক্লিন শেভ করতে হবে, জুতো জোড়া চকচকে থাকতে হবে, ব্যবহারে অমায়িক আর ভদ্র হতে হবে, অধৈর্য্য হলে চলবে না।

আবু সামাদের ব্যবহার যথেষ্ট অমায়িক, ব্যবহারে বংশের পরিচয়- বাসে অথবা রেস্তোরার দেয়ালে লেখা এই কথাটা তার ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য। আবু সামাদ যে ভালো পরিবারের ছেলে এটা তার ব্যবহার দেখেই যে কারো অনুমান করে নিতে কষ্ট হয় না। তাই অন্য মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের যখন ডাক্তারদের কাছাকাছি যেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় সেখানে ডাক্তাররাই তাদের সহকারীদের বলে রাখেন, ‘সামাদ যদি আসে, তাহলে সরাসরি ভিতরে পাঠিয়ে দিও।’ তারপর সামাদ ঠিকই আসে, কিন্তু দেখা যায়, যে ডাক্তার তার সহকারীর কাছে সামাদকে ভিতরে পাঠানোর কথা বলেছেন, সে তার কাছে আসে না। আসে অন্য একজনের কাছে। কিন্তু হাসপাতালে ডাক্তারের রুমগুলো পাশাপাশি হওয়ার কারণে সহকারী আবু সামাদকে দেখামাত্রই বলে, ‘স্যার দেখা করে যেতে বলেছেন।’ আর সামাদ এই কথা শোনার পর ডানে বায়ে না থাকিয়ে একেবারে সোজা ঢুকে পড়ে ডাক্তারের রুমে।
‘স্লামালিকুম স্যার। শরীরটা নিশ্চয়ই ভালো আছে।’
‘খুব একটা ভালো না। তুমি কেমন আছো।’
‘এইতো আপনাদের দোয়ায় আছি স্যার। এই চাকরি নিয়ে অনেক কষ্টে বেঁচে আছি।’
‘তোমার পারফরমেন্স তো ভালো। কষ্ট করে বেঁচে থাকবে কেন ?’
‘আপনি যেমন জানেন আমার পারফরমেন্স ভালো, তেমনি কোম্পানীও কথাটা খুব ভালো করেই জানে। কিন্তু আমাকে ওরা প্রমোশন দিয়ে অফিসের কোনো একটা চেয়ারে বসাতে চায় না। কারণ, আমাকে যদি ফিল্ড থেকে অফিসে নিয়ে যায়, তখন ফিল্ডের অবস্থা খারাপও হয়ে যেতে পারে ! তাই ভালো পারফরমেন্স করেও আমার প্রমোশন হয় না স্যার। এটাই আমার কপাল। চিন্তা করছি চাকরিটাই ছেড়ে দিবো।’

সামাদ যার সাথে এই কথাগুলো বলে তিনি দেশের একজন নামকরা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তার কষ্টের কথা শুনে তিনিও ব্যাথিত হন, কথা দেন সামাদকে ভালো একটা চাকরির ব্যবস্থা তিনি করে দিবেন। তখন তাকে আর কষ্ট করতে হবে না, আর কষ্টের কথা কাউকে বলতেও হবে না। দেশের নামকরা একজন ডাক্তার যখন এই কথা বলেন, তখন সামাদের মন খুশিতে ভরে উঠে, নিজের মাঝে আনন্দের একটা ঢেউ খেলে যায়। মনে মনে ভাবে, যিনি দেশের অনেক মন্ত্রী এমপি'র ব্যক্তিগত ডাক্তার, তার কথা ফেলে দেয়ার নয়। এবার নিশ্চয়ই তার ভালো একটা চাকরি হবে। কিন্তু দূর্ভাগ্য যেনো সামাদের পিছু ছাড়ে না। যে ডাক্তার সামাদকে ভালো একটা চাকরির আশ্বাস দিয়েছিলেন, যিনি দেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, তিনি নিজেই সামাদকে চাকরির আশ্বাস দেয়ার তিন দিন পরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কোনো ডাক্তার মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যদের পরপরই মৃত্যু সংবাদ মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাছেই আসে। কারণ, তখন তাদেরকে তাদের কোম্পানির তৈরি ওষধের গুণগান করার জন্য ছুটে যেতে হয় নতুন আরেকজন বিশেষজ্ঞের কাছে। যদি একটু দেরি অথবা ভুল হয়ে যায়, তাহলে কোম্পানীর বারোটা বেজে যেতে সময় লাগবে না। তাই দেশের প্রখ্যাত একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মারা গেলে এক কান দুই কান হয়ে খবরটা আবু সামাদের কানে আসতে খুব একটা সময় লাগে না। সে হায় হায় করে উঠে, বরাবরের মতো নিজেকে তার সত্যিকারের একজন দূর্ভাগা মনে হয়। কিন্তু যে মানুষটি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তিনি আবু সামাদকে একটা ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এই কথাটা সে আর কাউকেই বলতে পারে না।

০৩.
আবু সামাদ আর ফারহানা দুজনের প্রায় একই সময়ে ঢাকায় আসা, দুজন এই শহরে এসেছিলোও একই উদ্দেশ্য নিয়ে। আবু সামাদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে আর ফারহানা তখন স্নাতক পরীক্ষাটা শেষ করেছে শুধু। দুজনের পরিচয় একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে। সেখানে প্রথম আবু সামাদ নিজে থেকেই পরিচিত হয়েছিলো ফারহানার সাথে। আবু সামাদ চাকরি খুঁজতে খুঁজতে যখন বুঝতে পারে, এই শহরে মেধার সাথে মামা চাচারও প্রয়োজন আছে, তখন সে ভালো একটা চাকরির আশা প্রায় ছেড়েই দেয়। দুই একটা টিউশনি করে নিজেকে চালাতে শুরু করে। অন্যদিকে ফারহানা পাঁচ ছয়টা ইন্টারভিউ দেয়ার পর উপলব্ধি করতে পারে, এই শহরে স্নাতক ডিগ্রী চাকরির জন্য খুব বড় কিছু না, স্নাতকোত্তরদের চাকরি পেতেও এখন হিমশিম খেতে হয়। তার সাথে যারা ইন্টারভিউ দিতে আসে, দেখা যায়, তাদের অনেকেরই এমবিএ ডিগ্রী শেষ করা, আবার কেউ রেগুলার এমবিএ করছে, আবার কেউবা রাতের শিফটে এমবিএ পড়ছে। তাই চাকরিটাকে সোনার হরিণ মনে করে ফারহানা আবার ফিরে যায় নিজের শহরেই । কিন্তু সে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে এ কথাটা আবু সামাদকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে যেতে ভুলে না। পাঠক, গল্পের শুরুতেই আবু সামাদের ব্যাপারে একটা কথা লিখেছিলাম, আবু সামাদের ব্যবহার যথেষ্ট অমায়িক, ব্যবহারে বংশের পরিচয়, বাসে অথবা রেস্তোরার দেয়ালে লেখা এই কথাটা তার ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য। আবু সামাদ যে ভালো পরিবারের ছেলে এটা তার ব্যবহার দেখেই যে কারো অনুমান করে নিতে কষ্ট হয় না। তাই ফারহানাও মিষ্টভাষী আবু সামাদের অমায়িক ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়েছিলো। তাই যখন আবু সামাদ তাকে বলে, ‘যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনার মোবাইল নাম্বারটা কি আমি পেতে পারি, যদি চাকরিটা হয় তখন অন্তত ফোন করে আপনাকে জানাতে পারব।’ ফারহানা আবু সামাদকে তার মোবাইল নাম্বার ঠিকই দেয়, অন্যদিকে সে নিজেও আবু সামাদের মোবাইল নাম্বারটা নিতে ভুল করে না । ফারহানার ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার খবরে আবু সামাদ ব্যাথিত না হয়ে বরং খুশি হয়। ফারহানাকে সে বলে, এই শহরে কি মানুষ থাকে। এটা একটা শহর হলো। রাস্তায় বের হলেই ট্রাফিক জ্যাম, সারাদিন লোডশেডিং, বাতাসে কালো ধোঁয়া, এমনকি কখনো কখনো খাবার পানিটা পর্যন্ত নেই। তারপর আবু সামাদ ঢাকা শহরের জীবন নিয়ে স্বরচিত একটা কবিতা শোনায় ফারহানাকে,

ভাসতে আছি...
ভাসতে আছি, এই শহরে ভাসতে
বিদ্যুৎহীনতায় আর ট্রাফিক জ্যামে
মানুষের কোলাহলে
বাতাসে ওড়া পোড়া সীসায়
আমি ভাসতে আছি...

আবু সামাদের কবিতা শুনে হেসে উঠে ফারহানা। আর ফারহানার হাসিতে যে মুগ্ধতা ঝরে কথাটা বলতে ভুল করে না আবু সামাদ।

আবু সামাদের সাথে নিজের শহরে গিয়েও কথা বলা বন্ধ হয় না ফারহানার। কখনো ফোন করলেই আবু সামাদ হাসিমুখে বলে উঠে, কেমন আছেন, কবে আসছেন ঢাকা শহরে, চলে আসুন একদিন, আমি আপনাকে ছবির হাটে নিয়ে গিয়ে ফুচকা খাওয়াবো। আবু সামাদের হাসিমুখ হাসিমুখ ফুচকা খাওয়ার নিমন্ত্রণ ঠিকই পেয়ে বসে ফারহানাকে। কিন্তু চাইলেই কি আর ঢাকা শহরে যাওয়া যায়। এদিকে আবার নিজের মাষ্টার্সের ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে।
তাই ফারহানার আর ঢাকায় যাওয়া হয় না, আবু সামাদের সাথে একসাথে বসে ফুচকাও খাওয়া হয় না। এরমধ্যে আবু সামাদ একদিন ফারহানাকে ফোন করে জানায় যে তার একটা চাকরি হয়ে গেছে, কিন্তু চাকরিটা খুব বড় কিছু না, সামান্য এক মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের, ডাক্তারদের পেছনে পেছনে ছুটতে ছুটতে বাকি জীবন শেষ হয়ে যাবে, তারপরও চাকরিটা করতে হচ্ছে, কারণ বেকার বসে থাকা যায় কতদিন, বেঁচে থাকতে তো হবে ? আবু সামাদ ফারহানাকে এটাও জানায়, অফিস তাকে লাল রঙের একটা হিরো এসপ্লেন্ডার মোটরসাইকেল দিয়েছে, এটা চড়েই এখন তাকে সারাদিন ঘুরতে হবে। নিজের একটা মোটর সাইকেল কেনার সাধ থাকলেও সাধ্যের কারণেও কেনা হয়নি কোনোদিন, এখন চাকরিটাই তার সাধ পূরণ করে দিচ্ছে। কোনো একদিন ফারহানাকে নিয়ে এই মোটরসাইকেলে করে সে পুরো ঢাকা শহর ঘুরিয়ে দেখানোর কথাও বলে।

০৪.
নিজের একটা মোটরসাইকেলের সাধ চাকরি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যেই মিটে যায় আবু সামাদের। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরিটা যে কি জিনিষ সে এটা হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করে চাকরির প্রথম দিন থেকেই। রোদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালানোটা যে কি বিরক্তিকর একটা ব্যাপার এটা বোঝতে অবশ্য আবু সামাদের তিন মাস লেগে যায়। কারণ, তার চাকরিটা হয় শীতকালে, তখন রোদের তেজ থাকলেও ঠান্ডা বাতাসের কারণে সেটা বোঝা যায় না, কিন্তু যেই বৈশাখ মাসটা শুরু হয়, শীত যখন চলে গেছে পুরোপুরি, তখনই বুঝতে পারে আবু সামাদ, এই চাকরির সাথে মোটরসাইকেল চালানোটাও একটা বিরক্তিকর কাজ। কিন্তু বেঁচে থাকতে হবে, বেঁচে থাকতে হলে চাকরি করতে হবে, এই ভাবনা থেকেই ধীরে ধীরে মোটরসাইকেল আর চাকরিটার সঙ্গে সে নিজেকে মানিয়ে নেয়। কিন্তু তারপরও যেনো চাকরিটা তাকে খুব একটা টানতে পারে না। সে সময় পেলেই খবরের কাগজে চাকরির বিজ্ঞাপন খুঁজে বেড়ায়, চাকরির খবর নিয়ে সাপ্তাহিক যে পত্রিকাগুলো বের হয় সেগুলোও কিনে নিয়ে আসে বাসায়, তারপর রাত জেগে পত্রিকার পাতায় পাতায় চলে চাকরির সন্ধান। তার পরের দিন, দিনের শুরুতেই, নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে সারাদিনের জন্য বের হওয়ার আগে আগে ঠিকই তার পছন্দের চাকরি গুলোর জন্য একগাদা দরখাস্ত আর সাথে নিজের জীবনবৃত্তান্ত ও পাসপোর্ট সাইজের একটা হাস্যোজ্জ্বল ছবি খামবন্দি করে পোস্টঅফিসের লেটার বক্সে ফেলে আসতে ভুল করে না। খামগুলো লেটার বক্সে ফেলার আগে প্রতিবারই সুরা ফাতেহা পড়ে খামগুলোতে ফুঁ দিয়ে একটা চুমু খায়। সুরা ফাতেহার জোরে ভালো চাকরিটা যদি এবার হয়ে যায়, এই বিশ্বাস সবসময় তার মনের ভিতরে ঘোরাঘুরি করে।

কখনো কখনো ইন্টাভিউয়ের জন্য ডাক আসে আবু সামাদের। সে আকাশী কালারের শার্টের সাথে গলায় সাদাকালো ডোরাকাটা একটা টাই ঝুলিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্তাদের সামনে হাজির হয়ে তারা কথা বলার আগেই কথা বলতে শুরু করে, স্লামালিকুম স্যার, আপনারা কেমন আছেন ? আবু সামাদের এমন সাহসে ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্তারা অবাক না হয়ে পারেন না। আবু সামাদের সাথে কথা বলে তারা আবারো নিশ্চিত হন ছেলেটা সত্যিকার অর্থেই মেধাবী, অমায়িক ব্যবহার, অসম্ভব বিনয়ী এবং প্রচন্ড রকমের আত্মবিশ্বাসী। তারা খুব ভালো করে এটাও বুঝতে পারেন আবু সামাদ ছেলেটা তার কথার মাধ্যমে অনেক কিছুই জয় করার যোগ্যতা রাখে। এমন একটা ছেলেই তাদের এই পদের জন্য দরকার। কিন্তু আবু সামাদের এই চাকরিটাও হয় না। কারণ, সে ইন্টরেভিউ দিতে আসার আগেই প্রতিষ্টানের নির্বাহী পরিচালক তার এক ভাগ্নেকে এই চাকরিটা দেয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে ফেলেন। অন্যদিকে ইন্টারভিউ বোর্ড তার উপরে সন্তুষ্ট হওয়ার পরও কেন তার চাকরি হলো না এই কারণটা খুঁজে পায় না আবু সামাদ। সে নিজেকে বরাবরের মতো একজন দূর্ভাগা মনে করে, আর ভাবে, হয়তো এই পদে যার চাকরি হয়েছে সে আবু সামাদের থেকে অনেক মেধাবী এবং তার মামা চাচারা অনেকেই হয়তো প্রতিষ্ঠিত। যদি মামা চাচাদের কারণে তার এই চাকরি না হয়ে থাকে তাহলে আর কোনোদিনই তার ভালো কোনো চাকরি হবে না, এটাকেই সে জীবনের নিয়তি হিসেবে মেনে নেয়। কারণ অন্যরা যখন নিজের জীবনবৃত্তান্তে উজ্জল করে লিখে, চাচা ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল, মামা অতিরিক্ত সচিব ( খাদ্য মন্ত্রণালয় ), দুলাভাই হাইকোর্টের বিচারপতি, বাবা সাবেক রাষ্ট্রদূত ( অষ্ট্রিয়া, চীন, ডেনমার্ক ) অথবা বড় বোন জাতিসংঘের আঞ্চলিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সেখানে আবু সামাদ লিখতে পারে না তার বাবা একজন সাধারণ কৃষক, চাচা গ্রামের বাজারে সবজি বিক্রি করেন আর মামা খেয়া ঘাটে বসে লোকজনের কাছ থেকে খেয়ার ভাড়া বাবদ সিকি আধুলি নেন।

এভাবে আবু সামাদ প্রতিদিন ভালো একটা চাকরির পেছনে ছুটতে থাকে। কিন্তু ভালো চাকরি দুরে থাক, তার আর নতুন কোনো চাকরি পাওয়া হয় না। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরি নিয়ে সে ঘুরতে থাকে নগরের পথে পথে। রাত হলে বাসায় ফিরে। কোনো রকমে গোসলটা শেষ করে দুটো ভাত মুখে দিয়ে বিছানায় নিজের শরীরটা এলিয়ে দেয়ার সাথে সাথেই শুরু হয় তার সারাদিনের হিসেব মেলানোর কাজ। তখন তার মাথাটা হেলিকপ্টারের পাখার মতো ভনভন করে ঘুরতে থাকে, ক্লান্তি এসে ভর করে পুরো শরীরে, চোখ দুটো জড়িয়ে আসে ঘুমে, তার ইচ্ছে করে ফারহানার সাথে কথা বলতে, ইচ্ছে করে ফারহানাকে চিৎকার করে বলতে, দেখো দিনে দিনে আমি একটা ক্যালকুলেটর হয়ে যাচ্ছি।


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

সিভিতে মামাচাচার বৃত্তান্ত লেখে নাকি মানুষ? একটু অবাস্তব হয়ে গেল না?

জাহামজেদ এর ছবি

রেফারেন্সের ক্ষেত্রে তো লেখা হয়, নাকি ?

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

তিথীডোর এর ছবি

ইয়ে, আমি তো জানি রেফারেন্স হিসাবে দিতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা সুপারভাইজার (বিশেষত ফ্রেশারদের ক্ষেত্রে) আর প্রাক্তন বা বর্তমান কর্মক্ষেত্রের ইমিডিয়েট বসের নাম... আত্মীয়স্বজন নয়|

আগের গল্পটা বেশি ভাল্লেগেছিলো! হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

জাহামজেদ এর ছবি

রেফারেন্স হিসাবে দিতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা সুপারভাইজার (বিশেষত ফ্রেশারদের ক্ষেত্রে) আর প্রাক্তন বা বর্তমান কর্মক্ষেত্রের ইমিডিয়েট বসের নাম... আত্মীয়স্বজন নয়|

বিষয়টা আসলে একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের চিন্তা, হয়তো গল্পকারেরও, কিন্তু আমি অনেককে দেখেছি, রেফোরেন্স হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মামা, ফুপাএমপি সিভিতে এইগুলা লিখে দেয় !

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

নুসদিন এর ছবি

কথা সত্য। এইটা আমিও দেখছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।