ছোটবেলায় বইয়ের পাতা উল্টাইয়া দেখছিলাম কুলাকুলি করতাছে বাপ আর পোলায়, নিচে লেখা 'আজ ঈদ, মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ'। সেই ছোটো আছিলাম যখন, তখন মাথার মধ্যে প্রশ্ন আইসা ঘুরাঘুরি করতো, আমরাও তো ঈদ করি, তাইলে বইয়ের পাতায় মদিনার ঈদের কথা লেখা কেন ? আমাদের ঈদের আনন্দ তাইলে কি মদিনার ঈদের থাইকা কম ? লেখাটা তো এরকম হওয়া উচিৎ ছিলো, আজ ঈদ, পৃথিবীর ঘরে ঘরে আনন্দ।
বাসায় আসছি, সিলেটে যতবার আসি ততবার ফরফুরে থাকি, নিজের আঙিনা, নিজের শহর, পরিচিত সব জায়গা, পরিচিত সব মানুষ, নিজের মাঝে অন্য রকমের এক ভালোলাগা কাজ করে। এবার সিলেটে আমি আসার সাথে সাথেই বৃষ্টি শুরু হইছে, ক্যাটস এন্ড ডগস, আম্মা আইসা আমারে কন, তুই আওয়ার পর থাকি দেখি মেঘ
( সিলেটে বৃষ্টিরে মেঘ বলে ) আর মেঘ ! আমারও এই বৃষ্টির মধ্যে কি আর করার থাকে, ছোট শহর এখন নাম পরিবর্তনে নগর হইছে, আকারে আয়তনে একটু বড় হইছে, কিন্তু ঈদ আর বৃষ্টির পাশাপাশি অবস্থানে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা ! বাসায় বসে থাকতে থাকতে ভালো লাগতেছিলো না, একটু বাইর হইলাম, কই যাওয়া যায়, বন্ধু দেবুরে দিলাম ফোন, গেলাম তার পত্রিকা অফিসে, তখন মাগরিবের আজান পড়ি পড়ি, আম্বরখানা পয়েন্টে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ইফতার কিনলাম, দেবু বরাবরের মতোই কিপটা, ইফতার কিনার সময় দেখি সে নাই, কি আর করা, দুইজনের জন্য ১৫০ টাকার ইফতার কিনতে কিনতেই শোনা গেলো আযান, দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া গিয়া উঠলাম দেবুর অফিসে, বারান্দায় বসে খুলে ফেললাম ইফতারের প্যাকেট, রোজা রাখা যদি উপবাস হয়, তাইলে আমরা দুইজনেও রোজাদার, পরম তৃপ্তির সাথে ইফতার করতে করতে দেবু আর আমি দুইজনেই বলে উঠলাম, কাল থেকে তো আর দিনে খাইতে কোনো ঝামেলা নাই, দেবুর মুখে দেখি হাসি, আমার মুখেও হাসি।
ইফতারের পর যখন শরীরে শক্তি আইসা দৌড়াদৌড়ি শুরু কইরা দিছে, তখন ঈদের জামাত নিয়া কথা উঠলো, দেবু আমারে জিগায়, নামাজ পড়বি কই, আমি কইলাম, শাহী ঈদগা'য়, তারপর ও আমারে কয়, জামাত শিবিরের মানুষ তো নিজেদের জন্য এখন আলাদা ঈদের নামাজের আয়োজন করে, আমি কইলাম, আলিয়া মাঠের জামাতের কথা কস নাকি, দেবু আমার কথা শুইনা মাথা দোলাইয়া সায় দেয়, আমি কইলাম, ঐটা তো বহুদিন থাইকা চলতেছে, শালারা তাইলে আমাদের মুক্তি দিলো, এতদিন ঈদগাহ'তে আমাদের সাথে দাঁড়াইয়া নামাজ পড়তো, এখন আলাদা পড়ে, এইসব মুনাফিক বেঈমানদের সাথে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়াটা আল্লাহ ও হয়তো কবুল করবো না, যাক ভালোই করছে, কাঠাল পাতা খাইতে খাইতে সবগুলা একসাথে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে ঈদের নামাজ পড়বো, সাঈদীর জন্য দোয়া করবো, আমাদের সাথে নামাজে গিয়া সাঈদীর জন্য দোয়া করলে সেইটা তো আর আমরা জানতাম না, আমরা দোয়া করতাম আল্লাহ সাইদী নিজামীর যেনো বিচার হয়, ওদের যেনো ফাঁসি হয়, আর ওরা দোয়া করতো, আল্লাহ, শয়তানের হাত থেকে তুমি দেশরে রক্ষা করো, তোমার বান্দাদের মুক্ত করার ব্যবস্থা করো, আল্লাহ তখন মহাবিপদে পইড়া যাইতেন, দেখা যাইতো, ওদের দোয়া আর আমাদের দোয়া ধাক্কা খাইয়া ঈদগাহ মাঠে ঘুরতেছে আর ঘুরতেছে, সাত আসমানের উপরে আল্লাহর কাছে আর যায় নাই, এখন ওরা যেহেতু আলাদা নামাজ পড়তেছে ওদের দোয়া আল্লাহর কাছে যাইবো, আমাদের দোয়াও যাইবো, ওরা নামাজ পড়ে দুই তিন হাজার, আমরা ঈদগা মাঠে পড়ি লাখের উপরে মানুষ, তার মানে এক লাখ মানুষ হাত তুলবে, ওদের যেনো বিচার হয়, কিন্তু এই এক লাখের মধ্যে কোনো জামাতি থাকবে না, কোনো ছাগু থাকবে না! শুধু ওদের একজন প্রতিনিধি থাকবে, সাদা পাঞ্জাবি পড়া হাস্যোজ্জল আমাদের নগর পিতা !
গত সরকারের আমলে চৌহাট্টার সিংহবাড়ি নিয়া খুব আন্দোলন হইলো, রাজপথে মারামারি, হাতের উপরে হাত, মানুষের হাতে হাত, বিশাল সব মানববন্ধন, মানুষের দেয়াল, সিংহবাড়ি ভূমিখেকোদের হাত থেকে রক্ষা করতে হইবো, এরপর তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সিংহবাড়ির লিজ বাতিল হইয়া গেলো, আমরা খুশিতে টগবগ টগবগ করলাম।
এবারের ঈদে সিলেট এসে শুনলাম, সিংহবাড়ি একটা এনজিও নাকি নিজেদের নামে লিজ নিয়া নিছে, এখন সিংহবাড়ির বাসিন্দাদের তারা বারবার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিতেছে, এইটা শুইনা অবাকই হলাম, বিএনপি আমলে যে দখলকারীদের বিরুদ্ধে মানুষ তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তুলছিলো, আওয়ামীলীগ আমলে দেখি তারাই নীরব, পত্রিকাওয়ালারা নীরব, আন্দোলনকারীরা নীরব, তাহলে কি নীরবে সবার চোখের সামনে দিয়ে ভূমিখেকো চক্র গিলে ফেলতেছে সিলেটের ঐতিহাসিক এই বাড়িটা ?
সচলায়তনের সব বন্ধুকে ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।
মন্তব্য
এই অংশটা সবচেয়ে বেশি ভাল্লাগসে!
ঈদ মোবারক!
কাজী মামুন
লেখা ভালো হয়েছে.
নুসদিন।
ধন্যবাদ নুসদিন
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
পুরো পোষ্টে একখানা লাইক দিলাম!
এই টাতে ডাবল লাইক!!
...
সিংহ বাড়ি রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া জরুরী। সব হাঙ্গরের চরিত্রই একই রকম- গোগ্রাসে গিলতে চায়।
এই নিয়ে সাপ্তাহিকে সম্ভবত দেবুদার এই শিরোনামে- "সিলেটে অর্পিত সম্পত্তি
মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার, প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটির নেতা- দখলে পিছিয়ে নেই কেউ
"
দেখা যায় গিলে খাওয়ার সময় সব পক্ষেই একটা নিরব ঐক্যমতে পৌছে। এইসবের ববাইরে আমাদের একটা বিকল্প প্লাটফর্ম দরকার । খুব দরকার
লেখা ভালো লেগেছে।
মানুষ শুধু প্রথম ধাক্কাতা দেখে! পরে কি হলো তার খোঁজ রাখে না!
---থাবা বাবা!
নতুন মন্তব্য করুন