• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function 'theme_imagefield_image' not found or invalid function name in theme() (line 669 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/theme.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

লৌকিক দ্রৌপদী, অলৌকিক দ্রৌপদী।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল্লাহ এ.এম. [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১৬/১১/২০১৩ - ৮:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


এ জগতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠা সুন্দরী নারী কে? তিনি কি ক্লিওপেট্রা? কিংবা হেলেন বা মেরিলিন মনরো, গ্রেটা গার্বো, সায়রা বানু, মধুবালা, সুচিত্রা সেন, ঐশ্বরিয়া? কে? মহাভারতের বর্ননা অনুযায়ী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠা গ্ল্যামার গার্ল হলেন একজন শ্যামাঙ্গিনী ভারতীয় নারী, কারো কারো মতে তিনি বাঙ্গালীও বটে। আমাদের তো আর অত পুন্য নেই যে তাঁকে চাক্ষুষ দেখব, তবে বহু শতাব্দী আগে একজন সৌতি গল্পকথক যে ভাবে তাঁর বর্ননা করে গেছেন, সেই বর্ননায় তিনি এখনও জীবন্ত সবার মাঝে।

পাঞ্চাল দেশের রাজকন্যা- গায়ের রং কালো বলে নাম তার কৃষ্ণা, আরো কয়েকটি নামও আছে- যেমন পাঞ্চালী, বিদেহী, যোজনাগন্ধ্যা, যাজ্ঞসেনী ইত্যাদি, তবে পাঞ্চালের অধিপতি রাজা ও পিতা দ্রুপদের নামানুসারে দ্রৌপদী নামেই সে বেশী পরিচিতা। দ্রৌপদী অনন্যসাধারন সৌন্দর্যের অধিকারীনি। তার বিয়ের বয়স হয়েছে, রাজা দ্রুপদ তাই সিদ্ধান্ত নিলেন এবার দ্রৌপদীর বিয়ে দিতে হবে। কার সাথে বিয়ে দেবেন, মনে মনে সেটাও ঠিক করে রেখেছেন। পরম বন্ধু, রাজা পান্ডুর পুত্র অমিততেজা ধনুর্বীর, অতিশয় রুপবান, শ্যামাঙ্গ অর্জুনই হবে দ্রৌপদীর স্বামী। কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে, অর্জুন এবং পান্ডু রাজার আরও চার পুত্রের অনেকদিন থেকে কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, এদিকে অতুল্য সুন্দরী কন্যা দিন দিন অরক্ষনীয়া হয়ে উঠছে। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পঞ্চপান্ডব কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। রাজা দ্রুপদ তাদের সন্ধানে বহু দেশে তার লোকজন পাঠিয়েও কোন হদিস করতে পারলেন না। এমতাবস্থায় দ্রৌপদীর জন্য তিনি অভিনব এক সয়ম্বর সভার আয়োজন করলেন, সুকঠিন এক তীরন্দাজী লক্ষ্যভেদের মাধ্যমে দ্রৌপদীকে অর্জন করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন সকল রাজা রাজরাদের প্রতি। দ্রুপদের আশা, অর্জুন যেখানেই থাক, এই সয়ম্বর সভার কথা শুনে এখানে না এসে থাকতে পারবে না, এবং সে ছাড়া অন্য কেউ এ লক্ষ্য ভেদ করতেও পারবে না।

যথাসময়ে চারিদিকে রাষ্ট্র করে দেয়া হলো- দ্রৌপদীর সয়ম্বর সভা অনুষ্ঠিত হবে, আগ্রহী উচ্চ বংশীয় রাজা ও ক্ষত্রিয় বীরেরা যেন তীর নিক্ষেপে তাদের সামর্থের পরিচয় দিয়ে দ্রৌপদীর বরমাল্য গ্রহন করতে সানুগ্রহে উপস্থিত হন। এই সংবাদ শুনে ভূ-ভারতের সকল রাজা ও রাজপুত্রদের মাঝে সাজ সাজ রব পড়ে গেল, কারন লোক পরস্পরায় দ্রৌপদীর সৌন্দর্য খ্যাতি সম্পর্কে সবাই অবগত। রাজা দ্রুপদ নিমন্ত্রিত অতিথীদের জন্য আয়জনের চুরান্ত করেছেন। নগরের ঈষান কোনে এক উত্তম সমতল ভূমিতে সুউচ্চ প্রাসাদসমূহে পরিবৃত বিশাল সভাস্থল নির্মিত হলো অতিথীদের জন্য, তার চতুর্দিকে প্রাচীর, পরিখা, দ্বার ও সুদৃশ্য তোরন নির্মান করা হলো। অপরুপ চাঁদোয়ায় আবৃত সভাস্থল চন্দনজল ও অগুরুধুপে সুবাসিত করা হলো। প্রাসাদসমূহ সোনার জালিকায় বিভূষিত করে রত্নশোভিত আসবাব এবং বহুমূল্য তৈজসপত্র দ্বারা সজ্জিত করা হলো, সুবাসিত পুস্পের গন্ধ এক যোজন দূর থেকেও অনুভূত হতে লাগলো। নিমন্ত্রিত রাজা ও রাজপুত্রগন সুখারোহনীয় সোপান ও সুপ্রশস্ত দ্বার বিশিষ্ট সেইসব কৈলাস শিখরতুল্য অত্যুচ্চ প্রাসাদে বহুমূল্য পরিচ্ছদ ও অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে পরস্পরের প্রতি স্পর্ধা প্রদর্শন পূর্বক বসবাস করতে লাগলেন। অনেকদিন ধরে নর্তকেরা মোহনীয় নৃত্যগীত এবং বাদকেরা মধুর ঝংকারে বাদ্য বাজিয়ে চললো, বাজীকরেরা বাজীর খেলা এবং কুস্তিগীরেরা কুস্তির প্রদর্শন করে চললো। ব্রাহ্মন এবং দরিদ্রদের প্রতি অকাতরে দান ধ্যান চলতে লাগলো।

ওদিকে পিতৃব্য ধৃতরাষ্ট্রের প্রশ্রয়ে তার পুত্ররা হস্তিনাপুরের সিংহাসন থেকে বঞ্চিত করতে পান্ডু রাজার পাঁচ পুত্রকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছিল, তাই তারা তাদের মা কুন্তিকে সাথে নিয়ে আজ এ দেশে কাল ও দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ মুহুর্তে তারা ক্ষত্রিয় হয়েও ব্রাহ্মনের ছদ্মবেশে পাঞ্চাল দেশের দিকেই আসছিল। পথে দেখলো দল বেঁধে বহু ব্রাহ্মনের দলও সেদিকেই যাচ্ছে। বড় ভাই যুধিষ্ঠির তাদের জিজ্ঞেস করলো যে তারা কোথায় যাচ্ছে। উত্তরে ব্রাহ্মনেরা জানালো তারা পাঞ্চাল দেশে যাচ্ছে, সেখানে মহাসমারহে অতুল্য সৌন্দর্যময়ী রাজকন্যা দ্রৌপদীর সয়ম্বর সভা অনুষ্ঠিত হবে। রাজা দ্রুপদ এক অদ্ভূত ধনুক বানিয়েছেন, যা
থেকে তীর ছুঁড়ে দশ যোজন উর্ধে স্থাপিত একটি লক্ষ্য বিদ্ধ করতে হবে, যিনি সফল হবেন তিনিই দ্রৌপদীর বরমাল্য অর্জন করবেন। এ উপলক্ষে সারা পৃথিবী থেকে ধনবান এবং দানশীল রাজা রাজপুত্রদের আগমন ঘটবে, যাঁরা বিজয়লাভের আকাঙ্খায় বিবিধ গো, অর্থ, ভোগ্য, ভোজ্য প্রভূত বস্তু সর্বোতভাবে দান করবেন। দান ও দাক্ষিন্যে ব্রাহ্মনদের ভান্ড পূর্ন হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। প্রচুর উপার্জনের নিমিত্তে পঞ্চপান্ডবদেরও সেখানে যাওয়ার উপদেশ দিল তারা। আবার তাদের মধ্য থেকে অন্য আরেকজন অর্জুনের দিকে তাকিয়ে বললো- এই যুবকটিকে তো বেশ তাগড়া এবং সুদর্শন দেখাচ্ছে, উপযুক্ত পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে পারলে তার ভাগ্যে জুটলেও জুটতে পারে দ্রৌপদীর বরমাল্য। এসব শুনে পঞ্চপান্ডব পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলো তারাও যাবে সয়ম্বর সভায়, অংশগ্রহন করবে লক্ষ্যভেদের প্রতিযোগীতায়।

অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ষোড়শ দিবসে নিমন্ত্রিত অতিথীগন মহাসাগরের উদ্ভূত তরঙ্গের ন্যায় মহাকলরবে সভামঞ্চের দিকে ধাবিত হয়ে মঞ্চের পাশে নিদ্রিষ্ট আসন গ্রহন করলেন। মঞ্চের একপার্শ্বে সকল ক্ষত্রিয় রাজা, রাজপুত্রগন এবং বীরেরা আসন গ্রহন করলেন। সেই দলে দুর্যোধন, দুঃশাসন, দুর্ব্বিসহ, দুর্ম্মুখ প্রমূখ শত কৌরব রাজপুত্রগনের সাথে রয়েছেন ভীষ্ম, দ্রোন, কৃপ এবং মহাবীর কর্ণ। আরও আছেন গান্ধার, মগধ, বিরাট, কলিঙ্গ, কোশল, মদ্র, পত্তনা প্রভৃতি দেশের রাজা এবং রাজপুত্রগন। বাংলা অঞ্চল থেকে পৌন্ড্রবর্দ্ধনের রাজা বাসুদেব, তাম্রলিপ্তের রাজা, পাণ্ড্যের রাজা এবং স্বয়ং বঙ্গাধিপতি উপস্থিত আছেন। সবশুদ্ধ লক্ষাধীক ক্ষত্রিয় রাজা, রাজপুত্র ও বীরগন আসন অলংকৃত করে বসলেন। মঞ্চের অন্যপার্শ্বে আসন গ্রহন করলেন ব্রাহ্মনগন, পঞ্চপান্ডবও ব্রাহ্মনদের সাথে মিশে গিয়ে আসন গ্রহন করলেন। লক্ষ লক্ষ নাগরিকগন মঞ্চের চতুপ্বার্শ্বে অবস্থান গ্রহন করলো। এরপর দ্রৌপদী স্নান করে বিচিত্র বেশ এবং আভরনে সজ্জিত হয়ে কাঞ্চনময় বরন পাত্র হাতে ভ্রাতা ধৃষ্টদ্যুম্ন সহযোগে সভামঞ্চে আবির্ভূতা হল। সকল দেবতাগন, ঋষিগন, গন্ধর্ব্বগন, নাগ অসুর ও সিদ্ধগন তাদের স্ব স্ব বিমান সহযোগে উর্ধাকাশে আগমন করলেন, তাদের বিমানের সংখ্যাধীক্যে নভঃস্থলে বিশেষ যানজট দেখা দিল। ধৃষ্টদ্যুম্ন মেঘের মত গম্ভীর স্বরে সবার সকাশে দ্রৌপদীকে পরিচয় করিয়ে দিল এবং ঘোষনা করলো- এই যে ধনুক, এই যে পাঁচটি তীর, ঐ যে দশ যোজন উর্ধাকাশে একটি রত্নখচিত মাছ, মাঝপথে রয়েছে একটি ছিদ্রযুক্ত ঘুর্নায়মান চক্র, আর এই ভূমিতলে একটি জলভরা পাত্র। উপরে সরাসরি তাকালে সেই মাছটি দৃষ্টিগোচর হবে না, কিন্তু ভূমিতে রক্ষিত জলভরা পাত্রে সেই মাছের প্রতিবিম্ব দৃশ্যমান হবে। এই ধনুক থেকে একসংগে পাঁচটি তীর ছুঁড়ে ঐ চক্রের ছিদ্রপথ গলে সবকটি তীর দিয়ে একসঙ্গে মাছের চোখ বিদ্ধ করতে হবে। আমি সত্য করে বলছি, যে বলশালী রুপবান কুলীন পুরুষ এই মহৎ কর্মটি সাধিত করতে পারবেন, আজ আমার বোন কৃষ্ণা তাঁর স্ত্রী হবেন।

দ্রৌপদীর অকল্পনীয় রুপের ছটায় সভাস্থলের পুরুষ সকল মদন দহনে দগ্ধচিত্ত হয়ে পুতুলের ন্যায় নিস্পন্দ বসে রইল, দুর্বলচিত্তের অনেকে সংজ্ঞা হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। কারন তাঁর মুখমন্ডল পূর্ন শশীর চেয়েও শোভাময়, তাঁর লোচনযুগল অত্যুৎকৃষ্ট কমলদলের চেয়েও মনোহর, যা দেখে হরিণীরা ঈর্ষান্বিতা হয়, তাঁর অধরে ভোরের সূর্যের রক্তিমাভা, তাঁর পীনোন্নত মনোহর বক্ষের সৌন্দর্য দেখে ঈর্ষায় সুপক্ক সুডৌল ডালিমের হৃদয় ফেটে যায়, তাঁর সুদৃশ্য উরুযুগল দেখে হাতীরা কদলীকান্ডের নিন্দা করে, তাঁর ক্ষীণ কটিদেশ, সুকৃশ উদর, গুরু নিতম্বের সৌন্দর্যের কাছে স্বর্গের অপ্সরাদের সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়, মেঘমালার তড়িৎপ্রবাহ স্তব্ধ হয়ে যায়। মোটকথা, দ্রৌপদীর শরীরের কোন অঙ্গই নিন্দনীয় নয়। তাঁর শরীরে নীলপদ্মের মত সুগন্ধ, এক যোজন দূর থেকেও যার সুঘ্রান অনুভূত হয়।

চেতনা ফিরে আসার পর দ্রৌপদীর দিকে আবার তাকাবার সাহস হয় না কারো। ভাবতে থাকে এ কোন রুপ আমি দেখলাম, দেখলামই যদি, তা কি আমি পাব? প্রতিদ্বন্ধীদের মধ্যে এক বিষম ঈর্ষার ভাব সৃষ্টি হলো, পরম বন্ধুর দিকেও সবাই চরম শত্রুভাবাপন্ন হয়ে রোষ কষায়িত দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলো। অনেক পরে সম্বিত ফিরে পেয়ে নৃপতিদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে গেল, সবাই বায়ুবেগে ধনুর্বানের দিকে ধেয়ে চললো। সবচেয়ে আগে লক্ষ্যভেদ করার জন্য সবার মধ্যে প্রানপন প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেল। অবশেষে মগধরাজ জরাসন্ধ প্রথম সুযোগ পেল। সুযোগ পেল বটে, কিন্তু গুন পড়াতে যেয়ে ধনুকের বিপুল ভার সে সহ্য করতে পারল না, কিছুদূরে ছিটকে পড়ে মুর্চ্ছা গেল। ক্ষনকাল পরে জ্ঞান ফিরে এলে ক্ষোভে, লজ্জায়, হতাশায় সভাস্থল ত্যাগ করে সে নিজ রাজ্যে ফিরে গেল। এরপর সুযোগ নিল দুর্যোধন, প্রানপন চেষ্টায় ধনুতে গুন পড়াতে গিয়ে সে বেচারা মুখে রক্ত উঠে কম্পিত শরীরে মুর্চ্ছিত হয়ে ছিটকে পড়লো। এরপর বিরাটরাজ গেল লক্ষ্যভেদ করতে গিয়ে পড়লো মহা বিপদে, ধনুক হাতে নিয়ে আড়ষ্ট হয়ে বসে রইল, না পারলো তাতে গুন পড়াতে, না পারলো ধনুকটা যথাস্থানে রেখে দিতে। এ দেখে রাজা সুশর্ম্মা তাকে টিটকারি দিয়ে বললো, কি রে বুড়া, সুন্দরী মেয়ে দেখে তুই কি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে লোক হাসাতে বসলি? এই বলে সে ধনুক কেড়ে নিতে গেল, কিন্তু ধনুকের ভার সহ্য করতে না পেরে সে ও মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে রইল। এইভাবে একে একে শিশুপাল, ভগদত্ত, শল্য, পৌরব, বৃহদ্বল, কাশীরাজ, ভোজরাজ, মদ্ররাজ সহ বিভিন্ন দেশের দশ সহস্র রাজা ও রাজপুত্রগন একে একে অমানুষিক চেষ্টা করে গেল, কিন্তু ফলাফল যথারীতি হতাশাব্যঞ্জক। কারো মাথা ফাটলো, কারো নাক ফাটলো, কারো দাঁত ভাঙলো, কারো হাত ভাঙলো, কেউ কেউ মুখে রক্ত উঠে মৃতবৎ পড়ে রইল, অনেকে পঙ্গু হয়ে গেল, মাথার মুকুট এবং বহুমূল্য রত্নমাল্য ছিন্নভিন্ন হয় ধুলায় লুটালো, কিন্তু কেউই লক্ষ্যভেদ দূরে থাক, ধনুতে গুনই পড়াতে পারলো না। অবশেষে এগিয়ে এলো বীর কর্ণ, তাকে দেখে পঞ্চপান্ডব উৎকন্ঠিত হয়ে উঠলো, কারন সবাই জানে অর্জুন ছাড়া আর কেউ যদি এ লক্ষ্যভেদ করতে পারে, সে হলো কর্ণ। অবশ্য পান্ডবদের উৎকন্ঠার অবসান হয়ে গেল সহসাই, ভরা মজলিসে স্বয়ং দ্রৌপদী ঘোষনা করলো- নীচু জাতের সূতপুত্রের গলায় মালা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। জগৎসেরা বীরদের এমন হেনস্থা দেখে আর কেউ লক্ষ্যভেদের ইচ্ছা পোষন করা থেকে বিরত হয়ে একান্ত বিষন্ন হৃদয়ে হাহাকার করতে লাগলো। তখন রাজা দ্রুপদ নিমন্ত্রিত রাজাদের উদ্দেশ্যে বললেন এ কেমন ব্যাপার হল! এত দেশের এত রাজা, মহারাজা, রাজকুমার, আপনারা কেউ পারলেন না লক্ষ্যভেদ করতে! নৃপতিগন সমস্বরে বললেন, হে পাঞ্চালরাজ, তোমার প্রকৃত উদ্দেশ্য রহস্যময়, বোধ হয় তুমি আমাদের সকলকে হেনস্থা করার জন্যই এই অভিনব অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রন করে এনেছ। নইলে এর আগেও তো অনেক সয়ম্বর হয়েছে, এক যোজন আকাশবর্তী লক্ষ্যভেদ করে মদ্ররাজের কন্যা লক্ষনাকে জয় করেছেন পৌন্ড্রের রাজা বাসুদেব, কর্ণ জয় করেছেন ভগদত্তের কন্যা ভানুমতীকে, কিন্তু এই অসম্ভব লক্ষ্য তো কোথাও নির্ধারিত ছিল না। আমরা না হয় পারলাম না, জগতের কেউ কি আছে যে এই লক্ষ্যভেদ করতে পারবে?

ধৃষ্টদ্যুম্ন তখন সমবেত অতিথিদের মধ্য থেকে ক্ষত্রিয়দের পুনঃ পুনঃ আহবান জানাল এ লক্ষ্য ভেদ করার জন্য। যাদবেরা কৃষ্ণকে অনুরোধ করলো, কিন্তু কৃষ্ণ এতে সম্মত হলেন না। তখন ভীষ্ম এগিয়ে এলেন চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে। তিনিই সর্বপ্রথম ধনু নুইয়ে তাতে জ্যা সংযুক্ত করতে সমর্থ হলেন, সমবেত অতিথীদের উদ্দেশ্যে বললেন- সুধী, আপনারা জানেন, আমি দার পরিত্যাগ করেছি। তাই এক্ষনে এ লক্ষ্য বিদ্ধ করে দুর্যোধনকে কন্যা দান করবো। হঠাৎ তাঁর দৃষ্টি পড়লো শিখন্ডীর প্রতি, অমনি তিনি ধনুর্বান পরিত্যাগ করে চলে গেলেন, কারন তাঁর মতে নপুংসক শিখন্ডী অশুভ, আর অশুভ কিছু দৃষ্টিগোচর হলে তিনি কোন কাজ শুরু
করতেন না। ধৃষ্টদ্যুম্নের পুনঃ আহবানে এমতাবস্থায় মঞ্চে এলেন দ্রোনাচার্য। তিনিও দুর্যোধনের পক্ষে তুলে নিলেন ধনুর্বান। ধনুতে গুন সংযোগ করে তিনি জলের ছায়া দেখে লক্ষ্যস্থীর করলেন, তারপর ছুঁড়লেন। সে তীর লক্ষ্য বিদ্ধ করতো কি না, তা জানার অবকাশ পাওয়া গেল না শ্রীকৃষ্ণের কল্যানে। সবার অলক্ষ্যে তিনি তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে ঘুর্নায়মান চক্রের ছিদ্রপথ রুদ্ধ করে দিলেন, ফলে দ্রোনের নিক্ষেপিত তীরগুলি বাধা পেয়ে ছিটকে গেল। এরপর ধৃষ্টদ্যুম্নের বারংবার আহবান সত্বেও আর কেউ লক্ষ্যভেদের সাহস দেখাল না। অগত্যা ধৃষ্টদ্যুম্ন তখন উপস্থিত ব্রাহ্মনদের ভেতরে কেউ যদি আগ্রহী থাকেন, তাকে লক্ষ্যভেদের আহবান জানাল।

এইবার অর্জুন সম্মতির আশায় জেষ্ঠ ভ্রাতা যুধিষ্ঠিরের দিকে তাকাল, যুধিষ্ঠির সম্মতি জ্ঞাপন করল। অর্জুন তাঁর আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালে কতক ব্রাহ্মন শংকিত হয়ে প্রশ্ন করল- মহাশয় আপনি কি উদ্দেশ্যে গাত্রোত্থান করলেন? অর্জুন বলল- শর নিক্ষেপে লক্ষ্য বিদ্ধ করতে সে ইচ্ছুক, তার একান্ত অনুরোধ, উপস্থিত ব্রাহ্মনগন যেন প্রসন্ন চিত্তে তাকে অনুমতি দেন। এই ইচ্ছা ব্যক্ত করা মাত্র ব্রাহ্মনদের মাঝে প্রথমে তুমুল হাস্যরোল পড়ে গেল। একজন বললো, ওরে বামুন ঠাকুর, সুন্দরী কন্যা দেখে শেষে তোরও দেখি মতিভ্রম ঘটলো। সহস্র সহস্র ক্ষত্রিয় বীরের যে ধনুকে গুন পড়াতে যেয়ে ভবলীলা সাঙ্গ হওয়ার উপক্রম, ভুখা নাঙ্গা ভিখারী হয়ে তুই কোন স্পর্ধায় সে ধনুকে হাত দিতে যাস? বামুন হয়ে কেন চাঁদ স্পর্শ করতে চাস? কেন আমাদের লোভী হিসেবে চিহ্নিত করতে চাস? কেন ক্ষত্রিয় সমাজে আমাদের হাসির পাত্র করে তুলতে চাস? অন্য একজন বললো- দূর দূরান্তের বহু দেশ হতে বহু ব্রাহ্মন এখানে এসেছেন কিছু ধনোপার্জনের আশায়, তোর আচরণে ক্ষত্রিয়রা ক্ষিপ্ত হবে, আমাদের অর্থোপার্জনের আশা ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবে। সবাই মিলে বলপূর্বক অর্জুনকে আসনে বসিয়ে দেয়। ধৃষ্টদ্যুম্নের বারংবার আহবানে অর্জুন বারংবার উঠে দাঁড়ায়, আশংকাগ্রস্থ ব্রাহ্মনেরা তাঁকে নিরস্ত করে, এভাবে কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর কৃষ্ণ তাঁর পাঞ্চজন্য শঙ্খে ফুঁ দিলেন, শঙ্খনাদে সভা স্তব্ধ হয়ে গেল। এবার অর্জুনের মনে বলের সঞ্চার হল, সে কৃতসংকল্প হয়ে উঠে দাঁড়াল এবং ব্রাহ্মনেরাও যথারীতি তাঁকে নিরস্ত করার চেষ্টা করতে থাকল। তখন যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মনদের বলল- কেন তাঁকে আপনারা নিবৃত করছেন? প্রত্যেকেই তাঁর নিজের পরাক্রম সম্পর্কে নিজে অবগত। যে কার্যে রাজা মহারাজা এবং ক্ষত্রিয় বীরেরা ব্যর্থ হয়েছেন, যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয়ী না হয়ে কেউ কি সে কাজে প্রবৃত্ত হতে পারে? কেউ কেউ ব্রাহ্মনদের পক্ষে অসম্ভব কিছু নেই, এই যুবকের পক্ষে লক্ষ্যভেদ অসম্ভব নয়, এমন মন্তব্যও করলো। অগত্যা ব্রাহ্মনেরা অনিচ্ছাসত্বেও অর্জুনকে ছেড়ে দিল।

অর্জুন দৃঢ় পদক্ষেপে ধনুর নিকটে এগিয়ে গেল। তা দেখে রাজন্যবর্গ এবং ক্ষত্রিয়কূল প্রবল অট্টহাস্যে ফেটে পড়লো। নানারকম ব্যঙ্গবিদ্রুপে তারা একজন লোভী ভিখারী ব্রাহ্মনের এহেন দুস্কর্মের নিন্দা জ্ঞাপন করতে লাগলো। হুমকিও দেয়া হলো- এরকম নির্লজ্জ বামুনকে সহজে নিস্কৃতি দেয়া হবে না, যথোপযুক্ত শাস্তি তাকে অবশ্যই দেয়া হবে। কোনদিকে কর্ণপাত না করে অর্জুন তিনবার ধনুক প্রদক্ষিন করে শিবের আরাধনা করলো। তারপর ধনুক হাতে তুলে নিয়ে তাতে গুণ পড়িয়ে তাতে টঙ্কার দিল। টঙ্কারের প্রচন্ড শব্দে সবার কানে তালা লেগে গেল, অশক্ত যারা, তাদের অনেকে মুর্চ্ছা গেল। ধনুক উর্দ্ধপানে ধরে অর্জুন প্রথমে তাঁর দীক্ষাগুরু দ্রোনাচার্যকে প্রনাম করলো, দ্রোন এতে খুবই বিস্মিত হয়ে ভাবতে লাগলেন এঁকে কোথায় যেন দেখেছি? অতঃপর অর্জুন কূলপতি ভীষ্মকে প্রনাম করলো। তখন দ্রোন এবং ভীষ্ম বুঝতে পারলেন ব্রাহ্মনের ছদ্মবেশে এ আসলে তাদের প্রানপ্রিয় অর্জুন, কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে কোন উচ্চবাচ্য করলেন না। অতঃপর অর্জুন কৃষ্ণ এবং বলরামকে প্রনাম করে তাঁদের আশির্বাদ গ্রহন করলো। সবশেষে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির এবং ব্রাহ্মনদের প্রনাম করে অর্জুন লক্ষ্যস্থীর করে তীর ছুঁড়লো। মেঘের গর্জন করে পঞ্চশর অন্তরীক্ষে স্থাপিত রত্নের তৈরী মৎসের চক্ষু বিদীর্ন করে আবার ফিরে এল অর্জুনের পদপ্রান্তে। আকাশচারী দেবতাগন প্রসন্নচিত্তে অর্জুনের উপর পুস্পবৃষ্টি করলেন, হর্ষোৎফুল্ল ব্রাহ্মনেরা খুশীতে জয়ধ্বনি করে উঠলো। দ্রৌপদীর মুখমন্ডলও অনির্বচনীয় খুশীর আভায় উজ্জল হয়ে উঠলো, না হেসেও তার চোখমুখে ফুটিয়ে তুলল হাস্যময় দ্যুতি। বরমাল্য নিয়ে সে এগিয়ে গেল অর্জুনের পানে।

এতদসত্বেও অর্জুনের পক্ষে দ্রৌপদীকে লাভ করা সহজ হয় নি, ক্ষত্রিয় রাজন্যবর্গের প্রবল বিরোধীতা যদিও সে মোকাবেলা করতে পেরেছে, তবুও নিয়তির বিচিত্র বিধানে দ্রৌপদীকে একান্তভাবে লাভ করতে পারে নি। লক্ষ লক্ষ পুরুষের একান্ত কামনার পাত্রী দ্রৌপদী হয়েছে একই সংগে পঞ্চপান্ডবের পঞ্চভর্ত্তৃকা, একসংগে পাঁচ স্বামীর স্ত্রী। অবশ্য প্রবল প্রতাপান্বিত পাঁচ স্বামী থাকা সত্বেও অন্য পুরুষদের কামনার দৃষ্টি থেকে কখনো নিস্কৃতি পায় নি সে, নানারকম নিগ্রহের হাত থেকেও লাভ করে নি পরিত্রান। সে সব ভিন্ন প্রসঙ্গ, সামগ্রীকভাবে মহাভারত ও পৌরানিক কাহিনী সমূহে সেসবের সুবিস্তৃত বর্ননা আছে।

কৈফিয়তঃ আমাদের মাহবুব লীলেন মহাভারতের গুরুত্বপূর্ন নারীদের নিয়ে সচলে ভিন্ন আঙ্গিকে একটি অসাধারন সিরিজ লিখছেন, দ্রৌপদীর লৌকিক উপস্থাপনায় তিনি ব্যবচ্ছেদ করেছেন কাহিনীর অন্তর্নিহীত অকথিত নানা অধ্যায়ের। তাঁর রচনাবলী পূর্নভাবে অনুধাবনের স্বার্থে তাঁরই অনুমতিক্রমে অলৌকিক দ্রৌপদীর এই আংশিক উপস্থাপন।

কৃতজ্ঞতাঃ
মহাভারত- কাশিরাম দাস
মহাভারত- রাজশেখর বসু
মহাভারত- কালিপ্রসন্ন সিংহ
আমাদের মহাভারত- সুনীল গঙ্গোপধ্যায়


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দ্রৌপদীর সৌন্দর্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই
বর্ণনার বাইরেও তার দুটো অন্তত উদাহরণ আছে
এক. তার ৪৫-৫০ বছর বয়সে দ্রৌপদী যখন ৫ ছেলের মা এবং দীর্ঘদিন ধরে বনবাসী তখনও তাকে দেখে জয়দ্রথ বলেছিল- এই নারীর সামনে জগতের বাকি সব নারী বান্দরনির সমান
আর যখন সে সব ধরনের সাজগোজ ছেড়ে মৎস্যদেশের রাণী সুদেষ্ণার দাসী তখন রাণী যেমন তার সৌন্দর্য নিয়ে চিন্তিত ছিলেন (রাজা পটে যাবার ভয়ে) তেমনি সুদেষ্ণার ভাই কীচক কিন্তু দ্রৌপদীকে তার প্রধান স্ত্রী হবার অফার দিয়েছিল শুধু রূপ দেখে....

০২
অনুমতির কথা বলে আমারে এক্কেবারে লজ্জায় ফেলে দিলেন। কারণ চার হাজার বছর ধরে মহাভারতের কাহিনী আর মহাভারত নিয়ে লেখার লোকের সংখ্যা বোধহয় চার লাখের কম হবে না; সেইখানে আমি একজন...
এইটা এমন এক ঘটনা যা নিয়ে প্রতি বছরই অন্তত কয়েকজন লেখে...

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

১। দ্রৌপদীর বয়স কত, সেটা ইমম্যাটারিয়াল। নারায়নের (না কি নারদের?) বরে প্রতিদিন প্রভাতে সে দেহগত ভাবে কুমারীত্ব অর্জন করে। সুতরাং পঞ্চাশ বছর বয়সেও সে সুন্দরী ষোড়শী ;) ।

২। আপনি যে ফরম্যাটে লিখছেন, তাতে করে যাঁরা মহাভারত কিংবা অন্য কোন পৌরানিক কাহিনীতে দ্রৌপদীর অনিন্দ রুপটি দেখেন নি, তাদের মধ্যে দ্রৌপদী সম্পর্কে একটি অসম্পূর্ন ধারনার সৃষ্টি হতে পারে। এই বিভ্রম থেকে আমার অতি প্রিয় দ্রৌপদীকে রক্ষা করার জন্যই মূলতঃ এই সাধারন প্রয়াস, পাশাপাশি আপনার অতি মূল্যবান লেখাটিরও যাতে যথাযথ গুরুত্ব বজায় থাকে, সে কারনেই আপনার অনুমতির প্রসঙ্গ।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

দ্রৌপদী ছিলেন যজ্ঞকন্যা। রাজা দ্রুপদ, পুত্রাকাঙ্খায় এক যজ্ঞ করেছিলেন। সেই যজ্ঞাগ্নি থেকে পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং যজ্ঞবেদী থেকে দ্রৌপদীর উদ্ভব হয়। যজ্ঞবেদী থেকে উৎপন্ন বলে তাঁর আরেক নাম যাজ্ঞসেনী। ইনি জন্ম থেকেই ছিলেন যুবতি।
লেখা ভাল লেগেছে। (Y)

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ধন্যবাদ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটা ছোট খটকা। যতদূর জানি গাত্রবর্ণের জন্য নয়, কৃষ্ণের সখী ছিলেন বলে তার আরেক নাম 'কৃষ্ণা'। একটু যাচাই করবেন?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

দ্রৌপদীর কৃষ্ণা নাম যে তার শ্যামাঙ্গের কারনে, এটা নিশ্চিত। তবে মহাভারতের বিভিন্ন ভার্সনে বিভিন্ন বিষয় বা ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ আছে, সেভাবে কোথাও কৃষ্ণের সখীত্বের কারনে তার নাম কৃষ্ণা হয়েছে কি না আমার জানা নেই।

দ্রৌপদীর জন্মের পর পরই তার নামকরনের বিবরণ কাশীদাসী মহাভারত অনুসারে নিম্নরূপ

"কৃষ্ণ অঙ্গে কৃষ্ণা নাম থুইল তখনি।
পিতৃ নামে দ্রৌপদী যজ্ঞেতে যাজ্ঞসেনী।।"

আর রাজশেখর বসুর মহাভারত অনুসারে-

"বেদীমধ্য হইতে পাঞ্চাল রাজনন্দিনী সৌভাগ্যশালিনী শ্যামাঙ্গী এক কুমারী উত্থিতা হইল।

এক লহমা এর ছবি

(Y)

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

(ধইন্যা)

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

পৌরাণিক কাহিনীমতে - এঁর গায়ের রঙ শ্যামলা ছিল বলে ইনি কৃষ্ণা নামে অভিহিত হতেন। অন্যমতে ইনি কৃষ্ণের ভক্তপরায়ণা অথচ বন্ধুর মত ছিলেন বলে কৃষ্ণা নামে অভিহিত হন। ইনি ছিলেন জন্ম থেকেই যুবতী। এঁর ছিল পদ্মফুলের মতো বিকশিত চোখ। চোখের রঙ ছিল নীল। কুঞ্চিত কেশরাশি তাঁকে অনন্যা সৌন্দর্যের অধিকারী করেছিল।

অমি_বন্যা এর ছবি

(Y)

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

(ধইন্যা)

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগলো। আমার যতদূর মনে আছে, তাতে গাত্রবর্ণের জন্যই নাম কৃষ্ণা ছিলো।

শব্দ পথিক
নভেম্বর ১৭, ২০১৩

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ধন্যবাদ!

এক লহমা এর ছবি

অসাধারণ রূপসী, নানা গুণে গুণী এই নারী নির্মমভাবে রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন।
আব্দুল্লাহ জনাব, জব্বর লেখা হয়েছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

নির্মমভাবে রাজনীতির শিকার হওয়ার জন্যই বোধ হয় তার জন্ম হয়েছিল। তার জন্মের সময়ই দৈববানী হয়েছিল "এই নারীর কারনে কুরুবংশ ধংসপ্রাপ্ত হবে। যার কারনে একটি বিশাল রাজবংশ ধংসপ্রাপ্ত হবে, তাকে তো কিছু কষ্ট স্বীকার করতেই হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ক্লিওপেট্রা বা হেলেন বা দ্রৌপদী এদের কারনে যে বিশাল ধ্বংস যজ্ঞ হয়েছে তাই মনেহয় স্রস্টা আর এই লেভেলের সুন্দরী সৃস্টির রিস্ক নেয় নাই

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

হ্যাঁ, এই লেভেলের সুন্দরীদের এখন শুধু স্বর্গের দেবতাদের জন্যই বরাদ্দ রেখেছে। ;)

তারেক অণু এর ছবি

বাহ, দারুণ দারুণ!

সুপক্ক সুডৌল ডালিম ফেটে যাবার উপমা পুরাই স্পিকার ! (Y)

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ছোটবেলায় দেখতাম এদেশের মহিলারা তাদের গার্হস্থ সূচীকর্মে নানা নীতিকথা হিতকথা লিখে ঘরের দেয়ালে টানিয়ে রাখতেন। তেমনি একটি ছিল-

ডালিম পাকিলে পরে নিজে ফেটে যায়।
ছোটলোক বড় হলে বন্ধুকে কাঁদায়॥

সুপক্ক ডালিম কেন ফেটে যায় তখন বুঝতাম না, এখন বুঝি ;) ।

দুর্দান্ত এর ছবি

" এ জগতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠা সুন্দরী নারী কে? তিনি কি ক্লিওপেট্রা? কিংবা হেলেন বা মেরিলিন মনরো, গ্রেটা গার্বো, সায়রা বানু, মধুবালা, সুচিত্রা সেন, ঐশ্বরিয়া? কে?"

মানুষের চাইত সাহিত্যচরিত্র কিভাবে সুন্দরতর হয়?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

সাহিত্য রচয়িতার রচনা কৌশলে। :)

এক লহমা এর ছবি

সৌন্দর্য্যের একটা বড় অংশই ত যে দেখছে তার কল্পনায়। আবার এই দেখাও ত অনেক ক্ষেত্রেই কোন শিল্পী তাঁকে যেমন দেখিয়েছেন - এঁকে, লিখে, চলচ্চিত্রে ইত্যাদি নানা মাধ্যমে, তার উপরে নির্ভর করে!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

তবে যাই বলেন, ভাবী কিন্তু আসলেই সৌন্দর্য্যময়ী! :)

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

(Y)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

(ধইন্যা)

মিলু এর ছবি

ভালো লাগল খুব। এমন আরও লিখুন। (Y)

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে, চেষ্টা করবো।

সোহেল ইমাম এর ছবি

এধরনের লেখা আরো লেখেননা কেন। লেখাটা সুন্দর লাগলো। (Y)

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

তাহার রূপের বর্ননায় শিহরিত হলাম আবদুল্লাহ এ. এম.। মনে পড়লো বহু আগে পড়া দুটি চরণ, শিহরে কদম্ব ফুল / দাড়িম্ব বিদরে।

---মোখলেস হোসেন।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

:D

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।