হবেন নাকি সকাল বেলার পাখি? সবার আগে কুসুম বাগে ডেকে উঠবেন? স্বীকার করছি, বেলা আটটা নয়টা অবধি নাক ডেকে ঘুমানোর মধ্যে একটা মাদকতা আছে, কিন্তু বিশ্বাস করুন, ভোরের হাওয়ায় বনবিথির মাঝে দৃপ্ত পায়ে হেঁটে বেড়ানোর মধ্যে রয়েছে জীবনের অন্য রকম সতেজতা। আমরা যারা ঢাকাবাসী, তাদের জন্য ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়ায় দুদণ্ড শান্তিময় পদচারনা যদিও দুর্লভ বিষয়, তবুও একেবারে অবাস্তব কল্পনা নয়। অনেকদিন আগে যখন মোহাম্মদপুরে টাউন হলের কাছে থাকতাম, তখন ভোর বেলা টা সংসদ ভবন-চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকায় কাটিয়ে দিতাম। ভোর বেলায় সে এক এলাহি কারবার, সূর্যোদয়ের খানিকটা আগে থেকে আটটা নয়টা অবধি দফায় দফায় হাজার হাজার মানুষের পদচারনা। অধিকাংশেরই স্বাস্থ্যোদ্ধার কিংবা স্বাস্থ্যরক্ষাই উদ্দেশ্য, কিন্তু আরও নানাবিধ উদ্দেশ্যও থাকে। এখন বহুদিন পর আবার যখন সংসদ ভবন এলাকার মোটামুটি কাছাকাছিই অবস্থান করি, তখন পুরনো শখটি আবার চাগিয়ে ওঠে। এত বছরে মৌলিক বিষয়ে পরিবর্তন না হলেও খুঁটিনাটি কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এখন এটা শুধুই চন্দ্রিমা উদ্যানের প্রত্যুষকালীন বর্ণনা, আমার চাক্ষুষে। কারন সংসদ ভবন এলাকায় এখন আর সর্বসাধারণের প্রবাশাধিকার নেই।
প্রত্যুষ ছাড়াও অন্যান্য সময়ে এবং দেহমনের সজীবতা আনয়ন ছাড়াও অন্যান্য নানা কারনেই আপনি যেতে পারেন চন্দ্রিমা উদ্যানে, কিন্তু উপরোক্ত বিধিনিষেধ দুটিতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলে ভাল হয়। আপনি যদি স্কুল বা কলেজের ছাত্র কিংবা ছাত্রী হয়ে থাকেন, তাহলে স্কুল ড্রেস পড়ে কিছুতেই আপনার এই উদ্যানে আসা চলবে না। লাইনে আসুন, সঠিক ড্রেস কোড মেনে এখানে আসুন। আর আপনি যদি ভদ্র মহোদয় কিংবা মহোদয়া হয়ে থাকেন, তাহলে চন্দ্রালোকিত রাতের চন্দ্রিমা উদ্যানে চন্দ্রপ্রভা দর্শন আপনার জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সন্ধ্যার পরে এই উদ্যানে ঠিক কি কারনে প্রবেশ নিষিদ্ধ, সে বিষয়ে আমি বিশেষ অবগত নই, আপনার ইচ্ছা হলে বিস্তারিত জানার এবং বোঝার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
উদ্যানের পরিবেশ এবং আবহ-
ঢাকার নাগরিক পরিবেশ এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে যত রকম নেতিবাচক কথাবার্তা সচরাচর শোনা যায়, সুখের বিষয় ভোরের চন্দ্রিমা উদ্যানে সাধারণত সে সবের দেখা মেলে না। আমি আমার দীর্ঘ কালের অভিজ্ঞতায় সেরকম কিছু কখনও দেখি নি। তবে দুপুর, বিকেল কিংবা সন্ধ্যাবেলায় (এবং রাতে?) পরিবেশ পরিস্থিতি কেমন, সে বিষয়ে জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছি না। উদ্যানে যত্রতত্র কত কিছু যে পরে থাকে- আইসক্রিমের কাপ, তার কাঠের বা প্লাস্টিকের চামুচ, চিপসের খালি প্যাকেট, কাগজের ঠোঙ্গা, চকোলেটের মোড়ক, বাদামের খোসা, কলার ছিলা, ছেঁড়া কাগজ, সিগারেটের খালি প্যাকেট, খাওয়া সিগারেটের টুকরা, পলিথিনের ব্যাগ, টুটা-ফাটা পোস্টার, কনডমের খালি প্যাকেট এবং ব্যবহৃত কনডম, ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানে স্থানে স্থানে আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিন আছে, কিন্তু সবাই তার কাছাকাছি গিয়েও সবকিছু কেন যেন বাইরেই ফেলে থাকেন। সুতরাং দৈনিক ৬০ টাকা মজুরীর এই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ছাড়া আমাদের আর কোন ভরসা নাই। এই আপাত অপরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আপনাকে তাই একটু কনসিডার করে চলতে হবে।
কিসে যাবেন-
খুবই ক্রিটিক্যাল প্রশ্ন। আপনি যদি সচ্ছল এবং একটু আয়েশি টাইপের হয়ে থাকেন, তাহলে হয়ত গাড়ী ছাড়া নড়তে চাইবেন না। কিন্তু মুশকিল হল গাড়ী রাখবেন কোথায়? এখানে এবং আশেপাশে কোথাও কোন পাবলিক পার্কিংও নাই, আর এখানে রাস্তার ধারে পার্কিং নিষিদ্ধ, প্রমান স্বরুপ এ সংক্রান্ত নোটিশের একটা চিত্র সংযুক্ত করা গেল(শুধুমাত্র নোটিশ ব্যতীত এই চিত্রের অন্যান্য সকল বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ না করতে পরামর্শ দেওয়া গেল)। অতএব গাড়ী নিয়ে আসা চলবে না। আপনি যথেষ্ট স্মার্ট এবং আধুনিক হলে বাইসাইকেল চালিয়েও আসতে চাইতে পারেন, সেটা যথেষ্ট স্বাস্থ্য সম্মতও বটে, কিন্তু সমস্যা হল উদ্যানের অভ্যন্তরে তো সাইকেল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না(এ সংক্রান্ত নোটিশের চিত্র নিম্নে প্রদত্ত হল)। আর এখানে কিংবা এর আশেপাশে কোথাও কোন পাবলিক সাইকেল গ্যারেজ নাই। রাস্তার ধারে সাইকেলটি তালাবদ্ধ করে রেখে আসতে পারতেন, কিন্তু ফিরে এসে সেটি আর ফেরত পাবেন কিনা সে নিশ্চয়তা আপনাকে কে দেবে? এ রাস্তায় রিক্সা এবং বাস চলাচলের অনুমতিও নাই, সিএনজি চালিত অটো রিক্সার অবশ্য অনুমতি আছে, কিন্তু কে না জানে- তার অপেক্ষায় থাকলে ভোরের বদলে আপনি দুপুর নাগাদও যে সেখানে পৌঁছতে পারবেন সে নিশ্চয়তা নাই। সুতরাং পদব্রজে গমনাগমনই শ্রেষ্ঠ উপায়- কি ডরাইলেন?
কি করবেন-
ভোরবেলায় এখানে যারা আসেন, তাদের প্রায় সকলেই হয় স্বাস্থ্য উদ্ধার কিংবা স্বাস্থ্য রক্ষা কল্পে এখানে এসে থাকেন। অতএব আপনিও তাই করুন- স্বাস্থ্য উদ্ধার কিংবা স্বাস্থ্য রক্ষা। এই গুগলের যুগে কি কি করলে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, সে বিষয়ে নিশ্চই আমার কিছু বলার প্রয়োজন নাই। তা ছাড়া অন্যান্য বহু মানুষ যা করছে এবং যে ভাবে করছে, তা থেকেই আপনি আপনার করণীয় ঠিক করে নিতে পারবেন। এখানে ফ্রীল্যান্সার যেমন আছেন, গোষ্ঠীবদ্ধ স্বাস্থ্যপিয়াসী নানা গ্রুপও আছেন- আপনার অভিরুচি অনুযায়ী একলা চলতে পারেন, আবার কোন গ্রুপেও ভিড়ে যেতে পারেন। এখানে এলে আপনার চোখে পরবে- নারী পুরুষ নির্বিশেষে বহু মানুষ হাঁটছে কিংবা দৌড়াচ্ছে, কেউ জোরে, কেউ বা ধীরে। কেউ ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করছে, কেউ বসে আছে। হাসির ক্লাবও আছে, স্বাস্থ্য রক্ষায় যাদের অন্যতম কৌশল হল অতি উচ্চ শব্দে হাঃ হাঃ করে হাসা, আগে থেকে জানা না থাকলে টাস্কি খেতে পারেন। কেউ কেউ জটলা করে বসে হাদিস, রাজনীতি, অফিসের নানা বিষয় কিংবা সমসাময়িক কোন বিষয়ে রাজা উজিড় মারে। মহিলাদের দুয়েকটি গ্রুপ দেখি বাসা থেকে নানারকম খাবার তৈরি করে নিয়ে এসে এখানে বসে বসে সেগুলোর স্বাদ পরীক্ষা করেন, কোন গতিকে তাদের দলে ভিড়ে পরা যায় কি না, চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এক ভদ্রলোক এখানে ছোট বাচ্চাদের স্কেটিং প্রাকটিস করান, মাত্র পাঁচশ টাকা মাসিক ফি দিয়ে আপনিও স্কেটিং শিখতে পারেন(বয়স কোন বাধা নয়, ভদ্রলোক আমাকেও প্রাকটিস করতে উৎসাহিত করেছিলেন)। কোন একটা কুংফু/কারাতে ক্লাবের সদস্য হয়ে আত্মরক্ষায় পারদর্শী হয়ে উঠতে পারেন, কিংবা পাড়ার মাস্তান। কেউ কেউ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে বসে থাকেন- এখানে ওজন, ব্লাড প্রেসার, সুগার, কলোস্টেরল, হার্ট, কিডনি, লিভার ইত্যাদি অত্যাধুনিক ডিজিটাল মেশিন দ্বারা পরীক্ষা করা হয়। অনেকে আসেন শুধুই প্রাতঃ ভ্রমনের নেশায়, কেউ আসেন কিছুক্ষণ বসে থাকার জন্য। কেউ কেউ এমনি এমনি আসেন, গাড়ী থেকে নেমে দরজা ধরে একটু দাঁড়ান, তারপর চলে যান। অনেক ভবঘুরে শূন্যদৃষ্টি মেলে বসে কিংবা শুয়ে থাকেন। একদিন লুঙ্গী পড়া একজন বয়স্ক মানুষ আমার পাশে এসে বসলেন, জিজ্ঞেস করে জানলাম ময়মনসিং থেকে সকালের গাড়ীতে এসেছেন, এখন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর শহরে কিছু কাজ সেরে বিকালে ফেরার ট্রেন ধরবেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এই সাত সকালেও মাঝে মাঝে দুয়েকটি প্রেমিক/প্রেমিকা জুটি এই জগতের অন্য সকল কিছু বিস্মৃত হয়ে গুটুর গুটুর আলাপে মগ্ন থাকে। এক হিসাবে এটা অত্যন্ত ফলদায়ক একটি পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হবার দাবী রাখে, একই সঙ্গে দেহ ও মনের পরিচর্যা তথা রথ দেখা এবং কলা বেচার এমন কার্যকর ব্যবস্থা আর আছে কি?
কি খাবেন-
প্রথমেই বলে নেয়া ভাল, ভোরের চন্দ্রিমা উদ্যান ভোজন রসিকদের স্বর্গোদ্যান নয় মোটেই। নিম্নের প্রথম ছবিটি দেখে অবশ্য এরকম ভাবাটাই সঙ্গত যে, দিবসের কোন প্রহরেই এ উদ্যানে রসনা বিলাসের কিছুমাত্র আশা নাই। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অন্যরকম। ভোরে অনেকে স্বাস্থ্যপ্রদ বিভিন্ন আইটেম বিক্রি করেন, যেমন- ভিজানো ছোলা, খাঁটি(?) দুধের মাঠা, সুন্দরবনের মধু, বিষমুক্ত ফল, কচি ডাব ইত্যাদি। দ্বিতীয় ছবি দেখে হয়ত বুঝতে পারছেন, ভুরি ভোজের ব্যবস্থা না থাকলেও অন্তত মুখোরোচক খাবারের ব্যবস্থা ভালভাবেই আছে, তবে ভোরে নয়, হয়ত দুপুর কিংবা বিকেলে। ভোরে বিশ্রামরত এরকম ভ্রাম্যমান অস্থায়ী চাটের দোকান এ উদ্যানে অনেক দেখতে পাওয়া যায়।
কি দেখবেন-
মানুষ ছাড়া আর এখানে দেখার আছে গাছ এবং পাখি। বহুরকম গাছের প্রায় কোনটিরই আমি নাম জানি না, আপনি হয়ত জানতে পারেন, কিংবা আপনার আগ্রহ জাগতে পারে গাছগুলো চেনার। পাখির মধ্যে শুধু চোখে পড়ে কাক আর শালিক। আগে আমার ধারনা ছিল, সে নিয়ে খুব অবাকও লাগতো, এখানে বোধ হয় কাক আর শালিক ছাড়া আর কোন পাখি নাই। মাঝে মধ্যে অন্য দুয়েক ধরনের পাখির সাক্ষাৎ লাভ এবং বসন্তে বেশ কয়েকটি কোকিলের অবিরাম ডাকাডাকি ছাড়া আর বিশেষ কিছু চোখে পড়ত না। একদিন উদ্যানের পাশের লেকের বাঁধানো শানে চিত হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় মাথার উপর আশেপাশের কয়েকটি গাছের ডালাপালা ছড়িয়ে আছে, খুব নিবিষ্ট ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে গিয়ে মনে হল গাছের ডালে ডালে কি যেন নড়াচড়া করছে। আরও ভালভাবে ঠাহর করে বোঝা গেল গাছে গাছে, ডালে ডালে অনেক পাখি। কাক ও শালিক যেমন সহজে চেনা যায়, এ সবের প্রায় কোনটিই চেনা যায় না। আপনি হয়ত চিনতে পারবেন, কিন্তু আমি প্রায় কিছুই চিনতে পারি না। তবু প্রায়শই বৃক্ষরাজীর পত্রশাখে আঁখিপল্লব মোর কি যেন খুঁজে বেড়ায়। মাঝে মাঝে ভাবি ভাল দেখে একখানা বাইনোকুলার কিংবা টেলিস্কোপ কিংবা থিওডোলাইট যোগার করবো, তারপর-
সেইখানে- সেই তরুতলে-
আমার মনের কুতূহলে
এ- জীবনের ক'টি দিবস কাটিয়ে দেবো গিয়ে
সঙ্গে রবে চাটের পাত্র,
অল্প কিছু ফুচকা মাত্র,
আর একখানি অনু'র পাখির গাইড হাতে নিয়ে,
থাকবে না বউ আমার পাশে,
খুঁজবো আমি প্রেমাবেশে,
বাইনোকুলার স্বপ্ন-স্বরগ করবে বিরচন,
চন্দ্রিমা বাগ হবে লো সই
স্বপ্নেরই এক বন!
মন্তব্য
হাতের কাছেই, নিত্য দেখা একটি সাধারণ উদ্যানের মধ্যেও অসাধারণত্বের অনুসন্ধান- চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া সৌন্দর্য্য অবলোকনের চোখ ও মনন অবশিষ্ট থাকলে সবসময়ই, সবখানেই মেলে সেই সুযোগ!
রমনায় যাওয়া হয়েছে এমনি ভোরে বেশ কয়েকবার, বিছানা থেকে উঠতে যদিও খুব কষ্ট হয়, তবু ফুরফুরে মন নিয়ে ফেরার নিশ্চয়তা দেয় এই প্রাতঃ উদ্যান ভ্রমন!
এই বিষয়টা আমি বুঝি না, স্কুল ড্রেসে উদ্যান ভ্রমনে কি অসুবিধে? স্কুল পালিয়ে আড্ডাবাজি বা প্রেম করবে ছেলেমেয়েগুলো? পড়াশুনা গোল্লায় যাবে? তো স্কুল ড্রেসে এসব করার জন্য উদ্যান ছাড়াও আরও তো বিস্তর জায়গা আছে। তাছাড়া, আড্ডাবাজি বা প্রেম-পিরীতি করলে পড়াশুনা গোল্লায় যায়, তারই বা কি নিশ্চয়তা আছে?
।।।।।।
অনিত্র
বাবা-মা, অভিভাবক বৃন্দ, পুলিশ বাহিনী, এবং উদ্যান কর্তৃপক্ষ কেন যে এই পরম সত্যটা বঝে না!
সবই ভালো, আবার সবকিছুর সাথেই একটা করে কিন্তু আছে!
এত এত সাইনবুড লাগাতে থাকলে এটার নাম আবার সাইনবুড উদ্যান হয়ে যেতে পারে
নোটিশ বোর্ডের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পরতে পারেন, তাই আরও বেশ কিছু নোটিশ বিসর্জন দিতে হয়েছে। যদিও ওঠাবসা সংক্রান্ত এই নোটিশ দুটি অবশ্যই দেয়া উচিৎ ছিল।
খুব সুন্দরভাবে চন্দ্রিমা উদ্যানের ভোরের চিত্রটা ফুটিয়ে তুলেছেন। দারুন লাগলো!
তবে সন্ধ্যার পরে এই উদ্যানে ঠিক কি কারনে এখন প্রবেশ নিষিদ্ধ, তা হয়তো আমি কিছুটা অনুমান করতে পারি।
আলোর নীচে যেমন অন্ধকার, তেমনি এই উদ্যানেরও সন্ধ্যার পরের চিত্রটা কিন্তু অন্যরকম। অন্তত কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তাইই ছিল, যখন আমি কিছুদিন এই এলাকা দিয়ে সন্ধ্যার পরে জগিং করতে যেতাম। আমার রুট ছিল - আসাদ গেট থেকে মানিক মিঞা এভি দিয়ে খামার বাড়ির সামনের গোলচক্করে বামে টার্ন নিয়ে মনিপুরী পাড়ার সামনের রাস্তা ঘুরে চন্দ্রিমার পাশ দিয়ে আবার আসাদ গেট পর্যন্ত - পুরো সংসদ এলাকাকে চক্কর দিয়ে। তখন দেখতাম (বিশেষত রাত ৮টার পরে) চন্দ্রিমার উলটো পাশের ফুটপথের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত জিন্স-হাইহিল ইত্যাদি পরা আধুনিক তরুনী সেজে থাকা হিজড়া / ট্রান্সজেন্ডার পতিতারা ঘাপ্টি মেরে বসে আছে কিম্বা ঘুরাঘুরি করছে খদ্দেরের আশায়। সম্ভাব্য খদ্দের মনে করলে কেউ কেউ আকার-ইঙ্গিতও করত। কিছুদুর পরপর আবার গাছের চিপায়-চিপায় মোটরসাইকেল নিয়ে লুকিয়ে থাকত কারও কারও বডিগার্ড, 'বয়ফ্রেণ্ড' কিম্বা পিম্পরা। 'কি করবেন' অনুচ্ছেদে যেমনটা লিখেছেন, অমন সুন্দর পরিবেশটা ঐ মুহূর্তে কল্পনাতীত। তখন ঐ রাস্তা রাতের বেলায় পথচারী খুব বেশী থাকত না, খদ্দেররা গাড়ি / মোটরবাইক / রিক্সা নিয়ে এসে পার্ক করত গাছের চিপায় বা পিক করে নিয়ে যেত অথবা সম্ভবত চন্দ্রিমায় ঢুকে পড়তো। মাঝে-মাঝে ঝুটঝামেলাও হত, বিশেষ করে কাস্টোমারের তরফে প্রথমে জেন্ডার-আইডেন্টিটি ভুল বুঝে পরে সঠিক বোঝার কারনে।
এই হলো (বা ছিল) মনোমুগ্ধকর এবং অতি স্বাস্থ্যপ্রদ কুসুমবাগ, রিফ্রেশিং ভোরের চন্দ্রিমার সান্ধ্যচিত্র। ও হ্যাঁ, সংসদ এলাকার দক্ষিন পাশে ন্যাম ফ্ল্যাটের উল্টোদিকের ফুটপাথের চিত্রও তখন মোটামুটি একইরকম ছিল। তফাৎ শুধু, ঐ জায়গাটা ছিল স্ট্রেইট নারী হুকারদের জন্য রিজার্ভড, যেমন কিনা চন্দ্রিমার সাইডটা হিজড়া / ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য।
আপনার 'কি করবেন' আর 'কি দেখবেন' অনুচ্ছেদ দু'টিতে অপূর্ব বর্ণনা পড়ে আমার এই সান্ধ্যচিত্রটা মনে পড়ে গেল আর কোনমতে ভিরমি খাওয়া আটকালাম! আপনার উল্লেখিত সাইনবোর্ডগুলির মাজেজা কিছুটা হয়তো অনুমান করতে পারছি এখন, তবে এতে কতটা কি কাজ হয় জানিনা ওদিকে অনেকদিন যাই না বলে।
****************************************
সন্ধ্যার পর উদ্যানে প্রবেশ কেন নিষিদ্ধ, সেটা বোধ অল্পবিস্তর সকলেই অনুমান করতে পারেন (আমি ছাড়া )।
মুসলিম দেশে এইসব কি? আজব তো!
বাংলাদেশের ১ম জেনারেলের সমাধির ভাবগাম্ভীর্যের কথা ভেবে অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখেছিলুম।
নব্য ওমর খৈয়ামের পদাবলীতে এসে ফ্যাক করে হেসে দিলুম। ৭ম চরণ বাদে পদাবলীতে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আপনার এত কষ্ট করার দরকার ছিল না। লাফিং ক্লাবের সদস্যবৃন্দ এখানে নিয়মিত উচ্চস্বরে হাসাহাসি করে, আপনে হাসলে সমস্যা কি?
ইয়ে, মানে, আমি তো শুধু পাখি দেখার জন্যই বসে থাকতে চাই, কানের পাশে তেল নুন চাল ডালের আলাপ চলতে থাকলে পাখি দেখব ক্যামনে?
১। পেট্রোল বোমা খেয়ে কে মরিতে চায় হে, কে মরিতে চায়?
২। হুমম... ঐ তেল-নুন-লাকড়ি সংকটে এখনও পড়িনি কিনা!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অতিশয় দুঃখজনক ব্যাপার ! আপাতত আপনি সকালের পাশাপাশি বিকাল সন্ধ্যাবেলাটাও ঘুরে বেড়াতে পারেন চন্দ্রিমা উদ্যানে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
মজারু
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
স্বাস্থ্যপ্রদও বটে।
নতুন মন্তব্য করুন