"দ্য গেরিলা"- এ পার্সোনাল মেমোরেন্ডাম অব নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল্লাহ এ.এম. [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২৬/০৩/২০১৬ - ১২:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"যুদ্ধদিনের সাথীরা আমার, তোমরা যাঁরা বেঁচে আছ, কিংবা যাঁরা পাড়ি জমিয়েছ অনন্ত পরলোকে, তোমাদেরই একজন হতে পেরে নিজেকে আমি অত্যন্ত গৌরবান্বিত মনে করি।"- যাঁদের উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর লেখা স্মৃতিকথায় এই কথাগুলো বলেছেন, চুয়াল্লিশ বছর আগে তাঁদের সাথী হয়ে তিনি বাংলাদেশের মরণপণ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজামান মজুমদার বীরপ্রতীক। সুদর্শন অবয়বের অধিকারী এই দীর্ঘদেহী মানুষটি মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে, একাত্তরের মার্চে, সদ্য জিন্না কলেজে(পরবর্তীতে তিতুমির কলেজ) ভর্তি হওয়া এক নবীন কিশোর, গোঁফের রেখাই তখনও স্পষ্ট হয় নি ক্ষীণতনু ছেলেটির, তবে লুকিয়ে চুরিয়ে সিগারেটে টান দেয়ার অভ্যাস হয়েছে। একসময় তাঁর শৌখিন শিকারি বাবার একটি রাইফেল এবং দুটি শট গান ছিল, যে কারনে শৈশবেই তিনি বন্দুকের গুলি ছুঁড়তে শেখেন এবং অল্প বয়সেই বেশ অব্যর্থ নিশানাবাজে পরিণত হন। এই কারনে পরিচিতদের মাঝে তাঁর একটা আলাদা ইমেজও ছিল, তবে তখন কে জানতো যে তাঁর এই দক্ষতা পরবর্তীকালে কি দারুনভাবেই না দেশমাতৃকার জন্য নিবেদিত হবে! প্রশিক্ষন ক্যাম্পের সবাই তাঁকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু অদম্য সেই ছেলে অস্ত্র হাতে হয়ে ওঠেন এক অপ্রতিহত বীর যোদ্ধা। এতটাই যে, যুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার তাঁকে বীর-প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে সম্মাননা জানায়।

এর বহুদিন পরে, প্রায় চল্লিশ বছর পর তিনি তাঁর যুদ্ধদিনের স্মৃতি নিয়ে ইংরেজিতে একটি স্মৃতিকথা লেখেন "দ্য গেরিলা- এ পার্সোনাল মেমোরেন্ডাম অব নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান"। ততদিনে তিনি বাংলাদেশের আইটি অঙ্গনে একজন পুরোধা ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন, সমাজে প্রতিষ্ঠাও পেয়েছেন। ইংরেজিতে লেখার কারন হিসেবে বলেছেন- কর্মজীবনে প্রাতিষ্ঠানিক বহু ডকুমেন্ট, প্রোপোজাল পেপার ইত্যাদি ইংলিশে লিখতে লিখতে প্রাতিষ্ঠানিক ইংরেজিতে এক ধরনের সক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছিল, সে কারনেই ইংরেজিতে লেখা। অবশ্য বিনয় সহকারে এও জানিয়েছেন, তাঁর সেই অলঙ্কার বর্জিত দাপ্তরিক ভাষা এ বইয়ে অনেকাংশে সৌকর্যমন্ডিত হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক(এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা) কায়সার হক এর সযত্ন স্পর্শে। কারন যাই হোক, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইংরেজি তথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল প্রচলিত কোন ভাষায় রচিত বইয়ের যে সংখ্যাল্পতা, চমৎকার লেখনীর মাধ্যমে তা দূরীকরণের চেষ্টা হিসেবে তাঁর এই সাবলীল লেখা নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবী রাখে। এপ্রিলের শুরুর দিক থেকে একেবারে যুদ্ধের অন্তিম লগ্ন পর্যন্ত তিনি যুদ্ধক্ষেত্রেই ছিলেন, এবং সেখান থেকে তাঁর বেঁচে ফেরাটাই প্রায় অলৌকিক একটা ব্যাপার। এই বইটির সর্বত্র বিরাজ করছে যুদ্ধদিনের সেই অগ্নিগর্ভ হিমশীতল বাস্তবতা-


মুক্তিযোদ্ধা শাহজামান মজুমদার বীরপ্রতীক

মার্চ ১৯৭১, ঢাকা। মিন্টু রোডে বোনের বাসায় থেকে কলেজে যাতায়াত করেন এবং মাঝে মাঝে ইকবাল হলের(পরবর্তীতে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) অঙ্গনে ঘোরাঘুরি করেন। ৭ই মার্চের ভাষণ শুনতে বেলা এগারো'টা থেকে অপেক্ষায় থাকেন আর বিপুল সমুদ্রস্রোতের মত জনস্রোত দেখে এবং সমুদ্রগর্জনের মত ভাষণ শুনে মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েন। তাঁর উদ্বিগ্ন বোন ১৯ তারিখে তাঁর এহেন বেপরোয়া ঘোরাফেরা এবং সন্ধ্যার পর বাইরে বেরুনো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ফলস্বরূপ পরদিন তিনি বাসা থেকে বের হয়ে সোজা ইকবাল হলে চলে যান এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। ২৪ তারিখ রাতে তাঁর বড় ভাইয়ের বন্ধু এবং সে সময়ের তরুণ সমাজে স্বপ্নের মানুষ বলে বিবেচিত সিরাজুল আলম খান তাঁকে খুঁজে বের করে বাসায় ফিরে যেতে নির্দেশ দিলে অগত্যা ফিরে যান মিন্টু রোডে বোনের বাসায়। ২৫ তারিখ সকালে আবার যখন ইকবাল হলের দিকে যান, লক্ষ করেন শহরের অবস্থা অস্বাভাবিক রকমের থমথমে। শোনা যায়, ইয়াহিয়া খান আলোচনা পরিত্যাগ করে ঢাকা থেকে চলে গেছে এবং যে কোন সময় শহরে আর্মি নেমে পড়তে পারে। সময়ের সাথে সাথে অস্বাভাবিকতার মাত্রা বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে চলে যেতে থাকে। রাত দশটায় একজন ছাত্রনেতার নির্দেশে তিনি যখন বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হন, ঢাকা তখন কার্যত নিস্তব্ধ ভূতুরে শহর। তবে নিউ এলিফ্যান্ট রোডে দেখেন একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা রাস্তায় ব্যারিকেড নির্মাণ করছে। বাসায় ফিরে দেখেন তাঁর আপা, দুলাভাই(তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের রিলিফ কমিশনার), তাঁদের চার ছেলেমেয়ে, তাঁর এক ভাই, দুজন গৃহকর্মী, সবাই যেন এক দুঃসহ আশঙ্কা সহকারে ভয়ানক কোন কিছুর জন্য অপেক্ষমাণ। মধ্যরাতের একটু আগে প্রথম একটি গুলির শব্দ শোনা গেল ইস্কাটন রোডের দিকে, তারপর ক্রমে ক্রমে চতুর্দিক থেকেই অবিস্ত্রান্ত গোলাগুলির শব্দ, সেই সঙ্গে ভয়ার্ত চিৎকার। কৃষ্ণপক্ষের সে রাতে নির্মল আকাশের তারাগুলো হয়ত একটু বেশীই জ্বলজ্বল করছিল, কিন্তু তাদের ছাপিয়ে ট্রেসারের ভয়াবহ আলোকমালা ঢাকার আকাশকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলেছিল। বাসায় সবাই তীব্র আতঙ্কে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল, কেউ কেউ অস্ফুট স্বরে বিলাপ করছিল। একটি চরম দুঃস্বপ্নের সারা রাত এভাবেই পোহানোর পর ভোরের পাখিদেরও যেন কন্ঠ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সবার শরীর ও মন চূড়ান্তভাবে অবসন্ন হয়ে পড়েছিল, কন্ঠতালু শুকিয়ে গিয়েছিল এবং জিহ্বা ভারী হয়ে গিয়েছিল। রেডিওতে ঘোষণা করা হল যে ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। অবশ্য আতঙ্ক সবাইকে এমনভাবে গ্রাস করেছিল যে কারফিউ না থাকলেও বাইরে বের হওয়ার মত সাহস কারো হতো না। তবুও রাতের আঁধার কেটে গিয়ে দিনের আলো ফোঁটায় মনে কিছুটা সাহস সঞ্চারিত হচ্ছিল, কিন্তু একসময় সেই দিনের আলোও যখন আবার নিভে গেল, সাথে সাথে আবার তীব্র আতঙ্কে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো সবাই। চতুর্দিকে অসহনীয় নিস্তব্ধতা আর মাঝে মাঝে একদল কুকুরের উন্মত্ত চিৎকার, এমনি ভয়ার্ত পরিবেশে কেটে গেল আরও একটা রাত।

পরদিন সকালে কয়েক ঘন্টার জন্য শিথিল হল কারফিউ, আর তিনি বেরিয়ে পড়লেন। রাস্তা প্রায় জনশূন্য, খুবই নগন্য সংখ্যক ভয়ার্ত মানুষ এবং কিছু আর্মি কনভয় ছাড়া বিশেষ কিছু আর চোখে পড়লো না। হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল(পরবর্তীতে শেরাটন) ঘিরে রেখেছে উর্দি পড়া সেনাদল। সেখানে রাস্তা পেরিয়ে গলিতে ঢুকে পড়লেন, যেখানে "ডেইলি পিপল" এর অফিস এবং কয়েকটি দোকান রয়েছে, এর মধ্যে একটি হেয়ার কাটিং সেলুন। এই সেলুনে একজন উঠতি তরুন হিসেবে তিনি মাঝে মধ্যে স্টাইল করে চুল কাটাতে আসেন। সেলুনে তাঁর প্রিয় একজন দাঁড়িওয়ালা কর্মী, সম্ভবত তাঁকেই তিনি দেয়ালে ঠেস দিয়ে বিস্ফোরিত চোখে মেঝেতে বসে থাকতে দেখলেন, পা দুটো ছড়ানো, সারা শরীর পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। তিনি আঙ্গুলের ডগা দিয়ে লোকটির কপালের দিকটা স্পর্শ করতে গেলেন, ঝুরঝুরে কয়লার ঝরে পড়লো সে অংশটা। নিস্তব্ধ সকালের সেই অপার্থিব দৃশ্য এবং অবর্ণনীয় আবহ তাঁর মনটাকে প্রায় অবশ করে দিল, তবুও অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে একটি আহ্বান যেন তিনি শুনতে লাগলেন- এর একটা বিহিত হওয়া দরকার! এই পাশবিক বর্বরতার অবশ্যই একটা বিহিত হওয়া দরকার!! "ডেইলি পিপল" এর অফিসটিও সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তখনও একটু একটু ধোঁয়া উঠছে। সেই ভবনের ভিতরে কি দৃশ্য অপেক্ষা করছে তা তিনি সহজেই উপলব্ধি করতে পারলেন, কিন্তু আর ভেতরে গেলেন না। সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে চলে গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। টিএসসি'র কাছে গিয়ে দেখলেন কিছু মানুষ জগন্নাথ হলের দিকে ছুটে চলেছে, তিনিও ছুটলেন সবার সাথে। সেখানে শামসুন্নাহার হলের দেয়ালের পাশে দেখলেন একটি গর্তে মাটিচাপা দেয়া লাশের স্তূপ, মাটির উপরে হাত, পা, কিংবা শরীরের কোন কোন অংশ বেরিয়ে আছে। একদল কাক খুবলে খুবলে সেসব লাশের মাংশ তুলে নেয়ার চেষ্টা করছে আর একদল কুকুর কাকেদের তাড়িয়ে দিয়ে নিজেরাই এককভাবে সে অধিকার স্থাপনের চেষ্টা করছে। তিনি যুগপতভাবে অসুস্থ বোধ করতে লাগলেন এবং তাঁর মনে তীব্র প্রতিশোধ স্পৃহা জাগ্রত হতে থাকলো। জনশূন্য ইকবাল হলে গিয়ে দেখলেন সর্বত্র চাপ চাপ শুকনো রক্তের মাঝ দিয়ে কোন কিছু টেনে নিয়ে যাওয়ার স্পষ্ট রেখা, নিশ্চয়ই হতভাগ্য ছাত্রদের মৃতদেহ। ভোঁতা মন নিয়ে আবার বাসায় ফিরে যান, তবে সেদিন এর পরে কি কি দেখেছেন সে বিষয়ে তাঁর আর কিছুই মনে নেই, শুধু মনে আছে তাঁর মনে তখন একটাই চিন্তা- যে করেই হোক, এই বর্বরতার একটা উপযুক্ত জবাব দিতেই হবে। রাতের ঢাকায় চলছে লাগাতর কারফিউ, অন্য কিছু যেহেতু করার নেই, সুতরাং একমাত্র কাজ তখন রেডিওর নানা কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেশের প্রকৃত অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করা। বোধ হয় আকাশবাণীর মাধ্যমে জানা গেল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর তখনও শত্রুমুক্ত, অতএব সিদ্ধান্ত নিলেন যে করেই হোক ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যাবেন।

৭ই এপ্রিল সকালে বাসা থেকে বের হয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে করতে একটা পরিকল্পনা দাঁড় করিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললেন। বাসায় ফিরে দেখলেন সবাই খাবার টেবিলে। কণ্ঠস্বর এবং আচরণে যতটা সম্ভব গুরুত্ব প্রকাশ করে তিনি ঘোষণা করলেন- মিলিটারিরা ইকবাল হলে একটা লিস্ট পেয়েছে, কোন সন্দেহ নেই যে সেখানে তাঁর নামও আছে। সুতরাং তাঁর খোঁজে তাদের এখানে চলে আসাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এমতাবস্থায় এই মুহূর্তে তাঁর ঢাকা ত্যাগ করা উচিৎ, এবং এই মুহূর্তেই তিনি ঢাকা ত্যাগ করে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে যাচ্ছেন। তাঁর দুলাভাই সে সময় বাসায় ছিলেন না, থাকলে হয়ত তাঁর এই অপূর্ব মিথ্যাচার ধরা পড়ে যেত। তাই অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ভাই এবং বোনের কাছ থেকে সাকুল্যে একটি একশ টাকার নোট এবং কয়েকটি খুচরা টাকা নিয়ে তাড়াহুড়া করে এক কাপড়ে বাসা থেকে বের হয়ে এলেন, গেলেন তাঁর বন্ধু মানিকের কাছে। এই বন্ধুটি ছিলেন একজন অগ্রসর ভাবনাসম্পন্ন স্থিতধী ও বাকপটু তরুন, ভেবেছিলেন তাঁর সহযাত্রী হবেন। কিন্তু উল্টো তাঁকে এ ধরনের পাগলামি থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিলেন। মনে মনে অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ ও বিরক্ত হয়ে তিনি একাই গুলিস্তানগামী একটি বাসে চড়ে বসলেন, উদ্দেশ্য, সেখান থেকে যাবেন নরসিংদী। নরসিংদী যাবার কারন হল- বছরখানেক আগে এক উপলক্ষে নরসিংদী গিয়ে জেনেছিলেন যে সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়া যায়। নরসিংদীগামী বাসটি ডেমরার কাছাকাছি পৌঁছলে উদ্বিগ্ন একদল লোক বাসটি থামিয়ে জানালেন- ডেমরা ফেরিঘাটের কাছে মিলিটারিরা প্রতিটা বাস চেক করে সন্দেহভাজনদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাসের সব যাত্রী সেখানেই নেমে মেঠো পথ বরাবর হাঁটা শুরু করলে তিনিও তাই করলেন। আধা ঘন্টার মত পর একটা নদীর পারে এসে একটা খেয়া নৌকা পার হয়ে পাকা রাস্তার দেখা পেলেন। নরসিংদিগামী একটা বেবিট্যাক্সিও পেলেন এবং তাতে জনাচারেক অপরিচিত লোকের সাথে উঠে বসলেন। যখন নরসিংদীর কাছাকাছি পৌঁছেছেন, বিকট শব্দে মাথার উপর দুটি জেট প্লেন দেখে ড্রাইভার গাড়ী থামিয়ে দিলেন দৌড়। প্লেন দুটি নরসিংদীর উপরে চক্কর দিতে দিতে বেশ কিছু গোলা বর্ষণ করলো, তারপর উড়ে চলে গেল। এর খানিকক্ষণ পর লঞ্চঘাটে পোঁছে দেখলেন ঘাট একেবারে ফাঁকা। অনেক বিলম্বে একটি লঞ্চ এলো, তারা বোধ হয় এয়ার এ্যাটাকের খবর জানতো না। ঘাটে ভেরা মাত্র সেই লঞ্চেই উঠে পড়লেন, শুনলেন সেটা যাবে নবীনগর। নবীনগর সম্পর্কে কোনই ধারনা নাই, তবে বেবিট্যাক্সির একজন পূর্বতন সহযাত্রী আশ্বস্ত করে জানালেন- সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাইলদশেক দূরে, হেঁটেই যাওয়া যাবে। লঞ্চে অপ্রত্যাশিতভাবে বেঙ্গল রেজিমেন্টের "ডগ শুটার" পরিচয়ধারী এক লোক তাঁকে পাকিস্তান আর্মির স্পাই হিসেবে শনাক্ত করে বেঁধে ফেলার উপক্রম করে। সহযাত্রীদের হস্তক্ষেপে সাময়িকভাবে রক্ষা পেলেও সহজে তার হাত থেকে মুক্তি মেলে না। অনেক ঘটনার পর একদল মুক্তিযোদ্ধা ঘটনার মীমাংসা কল্পে তাঁদের দুজনকেই নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন ক্যাপ্টেন সাহেবের সন্মুখে হাজির করেন। তিনি অবাক হয়ে আবিস্কার করেন সেই ক্যাপ্টেন মাহবুব তাঁদের দিনাজপুরের বাসার পড়শি। এভাবে অনেক নাটকীয়তার পর ভাগ্যক্রমে উটকো বিপদ থেকে রক্ষা পান, কিন্তু তরুন ক্যাপ্টেন তরুণতর শাহ জামানকে নির্দেশ দিলেন ঘরে ফিরে যেতে। অদম্য এক তরুনের অনমনীয়তার কাছে অবশ্য শেষ পর্যন্ত ক্যাপ্টেন মাহবুবকে হার মানতে হল। জনা পঞ্চাশেক লুঙ্গী পড়া গ্রাম্য তরুণের সাথে মাত্র ৫ ফুট উচ্চতার কৃশকায় শাহ জামানকেও ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হল মুক্তিযুদ্ধকালীন এক বিখ্যাত রণাঙ্গন, হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া অঞ্চলে। তাঁর সহযাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র, কৃষক, দোকানদার, দিনমজুর, বিভিন্ন পেশাজীবী এবং বেকার, তবে সবাই এসেছেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে, তাঁদের মধ্যে শাহ জামানই শুধু শহুরে। পরবর্তী সাত দিন একটানা হরেক রকম ট্রেনিং নিয়ে এপ্রিলের ১৫ তারিখে তিনি মুক্তিবাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে নিবন্ধিত হলেন। মুক্তিযুদ্ধের তিন নম্বর সেক্টরে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানিতে তাঁদের আত্মীকরন হয়, এই কোম্পানির অধিনায়ক ছিলেন অসমসাহসী যোদ্ধা লেঃ হেলাল মুরশেদ।


তেলিয়াপাড়া টি এস্টেট বাংলো। ঐতিহাসিক এই স্থানে মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে, ৪ এপ্রিল, ওসমানী, শফিউল্লাহ, জিয়া, খালেদ, নুরুজ্জামান প্রমুখ দিকপাল সমর নায়কেরা সর্বপ্রথম এক নীতিনির্ধারণী সভায় মিলিত হন।

এর পরের কয়েকটি সপ্তাহ কাটলো ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মধ্যে। যখন ঘর ছেড়ে বেড়িয়েছিলেন, তখন কোন দিক দিয়েই তিনি যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার উপযোগী ছিলেন না, না দৈহিক দিক থেকে, না প্রশিক্ষণের দিক থেকে। সম্বল ছিল শুধু তীব্র আবেগমন্ডিত দেশপ্রেম। ঢাকা থেকে সিলেটের সড়ক ও রেলপথ ভারত সীমান্তবর্তী তেলিয়াপাড়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারনে অঞ্চলটি ছিল সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই তাঁদের সেক্টর কমান্ডার মেজর সফিউল্লাহ এলাকাটি হানাদারমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। এ কাজে তাঁর সম্বল ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কিছু সৈন্য, কিছু ইপিআর সদস্য এবং তাঁর মত আনকোরা অদক্ষ কিছু সেনা। শাহজামান সেই যে একটি বেলবটম প্যান্ট এবং একটি চেক শার্ট পড়ে ঢাকা ছেড়েছিলেন, এক নাগাড়ে সেগুলোই পড়ে ছিলেন। কাদাপানিতে নষ্ট হয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর জুতোজোড়া বিষম বোঝা হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে, সুতরাং সেগুলো পরিত্যাগ করতে হয়। এরপর একবস্ত্রে, খালি পায়ে, অপর্যাপ্ত নিম্নমানের আহার, সীমিত পরিমান গোলাবারুদ আর স্বল্প প্রশিক্ষন সম্বল করে, শুধুমাত্র দৃঢ় মনোবল আর ভাগ্যের উপর নির্ভর করে সম্মিলিতভাবে তেলিয়াপাড়া রক্ষার সংগ্রাম করে যান। যুদ্ধের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে তাঁর কোন ধারনাই ছিল না, ফলে প্রথম যখন পাক সেনাদের তরফ থেকে আক্রমনের মুখোমুখি হলেন, তখন অপার্থিব ভয়াবহতার মধ্যে পড়ে কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে পড়লেন। তবে সহযোদ্ধা অনেকের, বিশেষত তাঁর প্লাটুন কমান্ডার সেলিম ভাই, কোম্পানি কমান্ডার হেলাল মুরশেদ, প্রমুখের মনোবল এবং দৃঢ়তা দেখে দু-এক দিনের মধ্যে অনেকটা সামলে উঠলেন। ক্রমাগত কয়েক সপ্তাহ পাক সেনাদের তীব্র আর্টিলারি এবং ইনফ্যান্ট্রি আক্রমন প্রতিহত করতে চেষ্টা করেন আট ফিট লম্বা, তিন ফিট চওড়া আর সাড়ে চার ফিট গভীরতা বিশিষ্ট একটি স্যাঁতস্যাঁতে ট্রেঞ্চে আরও ছয়জনের সাথে অবস্থান করে। আশেপাশের কোন কোন ট্রেঞ্চ থেকে সহযোদ্ধাদের হতাহতের ঘটনা ঘটতে থেকে, সরাসরি আক্রমন করতে এসে অনেক পাকিস্তানী পদাতিক সেনাও হতাহত হয়। এক নাগাড়ে বেশ কিছুদিন স্বল্প ও নিম্নমানের আহার, অপ্রতুল নিদ্রা এবং তীব্র মানসিক চাপের কারনে শরীর ভেঙ্গে পড়তে থাকে। হতাহতের কারনে সহযোদ্ধার সংখ্যা কমে আসে, অনেকে যুদ্ধের সার্বিক ধকল সইতে না পেরে পালিয়েও যায়। তাঁরা একসাথে যে পঞ্চাশ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ডজন খানেক মাত্র টিকে থাকেন। শারীরিক অবসাদের চূড়ান্ত অবস্থায় অবশেষে তাঁদের বিশ্রামের জন্য ভারতে মূল ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়, আর তাঁদের স্থান পূরণ করেন নবাগত অন্য মুক্তিযোদ্ধাগণ। তাঁর প্যান্ট ও শার্টের অনেক জায়গা তখন ছিঁড়ে গেছে, সেগুলো বিবর্ণও হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ভেজা মাটিতে খালি পায়ে থাকার ফলে পায়ের তালুতে ঘা হয়ে গেছে। তাঁর টিংটিঙ্গে শরীরের ওজনও কমে গেছে বেশ খানিকটা। শুধু গুরুতর কোন অসুখ বিসুখ যে কেন হয় নাই সেটাই আশ্চর্যের বিষয়। এর অল্প কিছু পরই তেলিয়াপাড়া মুক্তিবাহিনীর হাতছাড়া হয়ে যায়।


মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের প্রশিক্ষন

কর্তৃপক্ষ তখন পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রচলিত সন্মুখ যুদ্ধ পরিহার করে গেরিলা যুদ্ধের কৌশল, অর্থাৎ হিট এ্যান্ড রান পদ্ধতি অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেন। ইতিমধ্যে তিনি নতুন কোম্পানিতে যুক্ত হয়েছেন, যার অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মতিন। এখন তাঁদের কাজ হল তেলিয়াপাড়া ও এর আশেপাশে চোরাগুপ্তা হামলা করে শত্রুদলের জীবননাশ করা ও মনোবলে ধ্বস নামানো, সড়ক ও রেলপথে মাইন স্থাপন করে পাক সেনাদের জানমালের ক্ষতিসাধন করা এবং তাদের চলাচল কঠিন করে তোলা। এই কাজে তাঁরা অচিরেই বেশ দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং পাক বাহিনীর প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তোলেন। তাঁদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির জন্য পাক সেনারাও প্রায়শই এ্যান্টি পার্সোনাল মাইন স্থাপন করতো, কিন্তু স্থানীয় জনগণ এসে উৎসাহভরে সে খবর তাঁদের জানিয়ে দিত, ফলস্বরূপ তাঁদের হাতে বরং কিছু মাইন এসে যেত। অনেক সময় অতি উৎসাহী জনগণ নিজেরাই সে সব মাইন খুঁড়ে তুলে নিয়ে আসতো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। কয়েকমাস পর তিনি প্রথম বেতন পেলেন ৭০ টাকা, তার পঞ্চাশ টাকা দিয়ে আগরতলা থেকে একটি রেডিও কিনে আনলেন। তাঁর এই রেডিও সহযোদ্ধাদের কাছেও খুব প্রিয় হয়ে উঠলো, তাঁদের অনেক অভিযানের খবর তাঁরা স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে শুনে গর্ব ও আনন্দে আপ্লুত হতেন। অন্যান্য সেক্টরের যুদ্ধের খবরাখবরও তাঁরা রেডিওতে শুনতেন, আর নিজেদের বিজয়ের ব্যাপারে আস্থাশীল হয়ে উঠতেন। এর মধ্যে তাঁর বেশ কিছু সহযোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন, আরও অনেকে হয়েছেন আহত। পাহাড়ি জংলা এলাকায় মশা, জোঁক আর সাপের ভীতি অগ্রাহ বহু অভিযানে তিনি অংশগ্রহন করলেন এবং বেশ কয়েকবার নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে পরিত্রান পেলেন। এভাবে চললো অক্টোবর পর্যন্ত। এরপর তিনি মুক্তিবাহিনীর স্ট্রাটেজিতে পরিবর্তন লক্ষ করলেন। নতুন নতুন রেগুলার ব্যাটেলিয়ন গঠিত হতে থাকলো। পাক বাহিনীর সাথে সন্মুখযুদ্ধের জন্য মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা সার্বিক ভাবে প্রস্তুত হচ্ছিলেন।


তেলিয়াপাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মারক মনুমেন্ট

নভেম্বরের ২৯ তারিখে তাঁরা একটা বড় ধরনের অভিযানে বের হলেন। শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে নিঃশব্দে পাকিস্তানী সেনাদের খুব কাছাকাছি গিয়ে ট্রেঞ্চ খুঁড়ে অবস্থান গ্রহন করলেন তাঁরা। অধিনায়ক মেজর(ইতিমধ্যে পদন্নোতি হয়েছে) মতিন জানালেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ভারতীয় ফরমেশন আখাউরা আক্রমন করতে যাচ্ছে। রাত একটায় নিস্তব্ধতা ভেদ করে ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনীর ৭২ টি বিভিন্ন ক্যালিবারের কামান একসঙ্গে গর্জে উঠলো। যে ভয়াবহ শব্দের অবিরাম স্ফুরণ ঘটতে থাকলো, তা ভাষায় বর্ণনাতীত। এভাবে আধা ঘন্টার মত চলার পর থেমে গেল গোলাবর্ষণ। এরপর ১০ বিহার রেজিমেন্ট আখাউরা আক্রমন করলো। পাকিস্তানী বাহিনীও তাদের সর্বশক্তি দিয়ে পাল্টা আক্রমন শুরু করলো। সমস্ত যুদ্ধক্ষেত্র রাইফেল, মেশিনগান, গ্রেনেড, রকেট লঞ্চার ইত্যাদি হাল্কা অস্ত্রের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠলো। তাঁদের দিকেও খুব কাছ থেকে ধেয়ে আসতে থাকলো ঝাঁকে ঝাঁকে বুলেট। ইতমধ্যে ১০ বিহার রেজিমেন্ট আখাউরার দিকে ৩ কিলোমিটার এগিয়ে গেল, ও দিকে ভারতীয় ৪ গার্ড রেজিমেন্টও এসে তিতাস ব্রিজের কাছে অবস্থান গ্রহন করে পাকিস্থানি বাহিনীর সাথে আখাউরার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল। ৪ ভারতীয় গার্ড রেজিমেন্টের উদ্দেশ্য ছিল আখাউরা ব্রিজের দখল নেয়া, কিন্তু সেখানে রেল লাইনের ধার দিয়ে পাকিস্তানিদের এত শক্তিশালী বাঙ্কার ছিল যে সে উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে গেল। নভেম্বরের ৩০ তারিখে ২য় ইস্টবেঙ্গল সিঙ্গারবিল আক্রমন করে দখল করে নিল, একই দিনে ভারতীয় ৭৩ মাউন্টেইন ব্যাটেলিয়ন আখাউরার দক্ষিনে গঙ্গাসাগর দখল করে নিলে আখাউরা থেকে কসবা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। আখাউরার পাকিস্তানী ১২ এফ এফ রেজিমেন্টের সৈন্যরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে হাল্কা অস্ত্রের গোলাবর্ষণ করে চলল। বিকেলে ভারতীয় ৫৭ মাউন্টেইন ব্রিগেড ট্যাঙ্ক সাপোর্ট নিয়ে আখাউরা আক্রমন করলো। এরপর আবার শুরু হয়ে গেল গোলন্দাজ যুদ্ধ। পরবর্তী ৫ দিন ধরে আখাউরায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ভয়াবহ গোলন্দাজ যুদ্ধ অব্যাহত রইল। সমগ্র যুদ্ধক্ষেত্রের খুব কম এলাকাই কামানের গোলাবর্ষণ থেকে রক্ষা পেল। উভয় পক্ষের যুদ্ধ বিমানগুলোও এরই মধ্যে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ করে চলল। আর দুই পক্ষের সৈন্যদল মুখোমুখি অবস্থান করে অবিশ্রান্ত গুলি বিনিময় করে চলল। ট্রেঞ্চের স্বল্প পরিসরে থেকে অবিরত গোলাগুলি এবং কামানের ভারী গোলাবর্ষণের শব্দে অনেকেরই সাময়িক বধিরতা দেখা দিয়েছিল। এখানে ভারতীয় বিভিন্ন বাহিনীর সাথে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সরাসরি অংশগ্রহন করেছিল, এ ছাড়া ১১ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট এই যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন না করলেও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি অবস্থানে পজিশন নিয়ে শত্রুপক্ষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছিল। এর মধ্যে মেজর মতিন তথা শাহজামান'র কোম্পানির দায়িত্ব ছিল আজমপুর রেল স্টেশন দখল করা এবং সিঙ্গারবিল এ্যারোড্রামে(এখন আগরতলা এয়ারপোর্ট) পাকিস্তানীদের আগমন প্রতিহত করা, কারন এর পিছনেই ছিল ভারতীয় আর্টিলারির অবস্থান। ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সাফল্যের সাথে দায়িত্ব সম্পন্ন করে। যুদ্ধের ষষ্ঠ দিনে মিত্র বাহিনীর হাতে আখাউরার পতন ঘটে। পাকিস্তানীদের ১২ এফ এফ রেজিমেন্ট, ১২ আজাদ কাশ্মীর রেজিমেন্ট আর ৩৩ বালুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা বিশৃঙ্খলভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাদের কেউ কেউ এতে সফলও হয়, তবে অধিকাংশই ক্রুদ্ধ গ্রামবাসীর হাতে নিহত হয়। এই যুদ্ধে তাঁদের কোম্পানির ১৮ জন শহিদ হন, আর আহত হন ২৫ জন। ভারতীয় বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা অনেক। আখাউরা মুক্ত হওয়ার পর তাঁদের কোম্পানি এক লাইনে সার বেঁধে সিঙ্গারবিল এ্যারোড্রাম অতিক্রম করে আগরতলা শহরের উপকন্ঠে উপস্থিত হয়। সেখানে অগণিত জনতা তাঁদের অভাবনীয় সংবর্ধনা প্রদান করে। তাঁর মনে হচ্ছিল আগরতলার সব মানুষ যেন যে যা পেরেছে, যেমন- হরেক রকম খাবার, ফলমূল, পানি, ডাব, চা ইত্যাদি নিয়ে হাযির হয়েছে। তাঁরা নারী, পুরুষ, শিশু, যুবা, বৃদ্ধ, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, বাঙ্গালী, আদিবাসী নির্বিশেষে তাঁদের জড়িয়ে ধরে আনন্দাশ্রু বর্ষণ করেছেন, আর মুহুর্মুহু জয় বাংলা শ্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত করেছেন।

আখাউরার পতনের পর ১১ ইস্টবেঙ্গল ব্রাহ্মণবাড়িয়া অভিমুখে মার্চ করে, সেখানে এর অধিনায়ক মেজর নাসিম আহত হলে ৭ই ডিসেম্বর মেজর মতিনকে ১১ ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পরদিন শাহজামান মজুমদারও এসে যোগ দেন তাঁর প্রিয় অধিনায়কের বাহিনীতে। আখাউরার পতনের পর ভারতীয় বাহিনী আশুগঞ্জের দিকে অগ্রসর হয় মেঘনা সেতু অধিকারের জন্য, ১১ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টও তাদের সহগামী হয়। এর আগেই আশুগঞ্জ থেকে পাক সেনারা ভৈরবের দিকে চলে যায়। তবে কিছু পাক সেনা নিজেদের এমনভাবে লুকিয়ে রেখেছিল যাতে তাদের অবস্থান বোঝা না যায়। ফলে তাদের অতর্কিত আক্রমণে এখানে বহু ভারতীয় সেনা হতাহত হয়। পরে অবশ্য মিত্র বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে রাতের অন্ধকারে পাক সেনারা ভৈরবে পালিয়ে যায়। ডিসেম্বরের ১১ তারিখে আশুগঞ্জে এসে জীবিত কোন পাকিস্তানী সেনাকে আর পাওয়া যায় না, তবে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিল তাদের লাশ। কিছু গণকবরও পাওয়া যায়, যেখানে নিহত পাকিস্তানী সেনাদের হাত পা, কিংবা শরীরের কিছু অংশ চাপা দেয়া মাটি ভেদ করে বেড়িয়ে পড়েছিল। অনেকদিন আগে শাহজামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের দৃশ্য দেখে যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়েছিলেন, এখানে যেন সে দৃশ্যই আবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেখলেন, তবে এবার মনে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হল। আখাউরা এবং আশুগঞ্জের বিপুল প্রাণঘাতী যুদ্ধের পর মিত্র বাহিনী ভৈরবে পাকিস্তানীদের সুদৃঢ় অবস্থানে সরাসরি আক্রমন না করে তাদের ঘেরাও করে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখে ঢাকা অভিযানের কৌশল অবলম্বন করে। ভৈরবে পাকিস্তানী বাহিনীকে ঘেরাও করে রাখার দায়িত্ব নেয় ১১ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, ঘাটি গাড়ে নদীর অপর পাড়ে আশুগঞ্জে। আর ভৈরবকে বাইপাস করে ভারতীয় ইউনিটগুলো এগিয়ে যায় ঢাকার দিকে। ১৬ তারিখে ঢাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের সংবাদে ইউনিটের সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছাসে ফেটে পড়েন। আকাশে গুলি ছুঁড়ে, কোলাকুলি করে, নেচে গেয়ে, মুহুর্মুহু জয় বাংলা শ্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তাঁরা উদযাপন করেন পরম আকাঙ্খিত সেই ক্ষণটি। ডিসেম্বরের ২২ তারিখে ১১ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে তিনি ঢাকায় আসেন, এসে দেখেন স্বাধীনতার কৃতিত্বের ভাগিদার অসংখ্য। ঢাকা তখন অগণিত মুক্তিযোদ্ধায় ভরে গেছে, যদিও তাদের অধিকাংশই সিক্সটিন্থ ডিভিশনের মুক্তিযোদ্ধা, কোনভাবে একটি অস্ত্র যোগার করে তারা মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছে। মাথায় লাল ফেটি বেঁধে, হরেক রকম গাড়ী হাঁকিয়ে তারা রাস্তাঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর তাঁদের মত যারা জীবনবাজী রেখে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন, তাঁরা গুরুত্বহীন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে গেছেন। প্রবাসী সরকার তখনও ঢাকায় এসে পৌঁছে নি, বঙ্গবন্ধু অনিশ্চিত পরিণতি নিয়ে পাকিস্তানের কারাগারে। দেশের আসন্ন ভবিষ্যৎ কল্পনা করে নানা আশঙ্কায় তাঁর মন ভারী হয়ে ওঠে।


তেলিয়াপাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মারক মনুমেন্টের সামনে জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা শাহজামান মজুমদার বীরপ্রতীক

মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনী সম্পর্কে তিনি মূল্যায়ন করেছেন এভাবে- মুক্তিবাহিনীকে কোন মতেই একটা চৌকস বাহিনী বলা চলে না। এঁদের না ছিল পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, না ছিল পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের যে সকল সদস্য ২৫শে মার্চের পর স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাঁরা ছিলেন বাহিনীর মূল শক্তি। দ্বিতীয় স্তরে ছিলেন ইপিআর বাহিনীর সদস্যরা, তাঁরা যেহেতু রেগুলার সেনাবাহিনীর সদস্য নন, তাই তাদের ট্রেনিং ছিল হাল্কা অস্ত্রশস্ত্রের। এ ছাড়া ছিলেন পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ ইত্যাদি বাহিনীর সদস্যগন, সাধারন জনগণের সাথে তাদের পার্থক্য এটুকুই যে তাঁরা অন্তত রাইফেল চালাতে পারেন। এ ছাড়া ছিলেন তাঁদের মত শারীরিক ও মানসিকভাবে অদক্ষ সাধারন জনগণ, যাদের অনেকের পক্ষে যুদ্ধ করাই সম্ভব ছিল না। যুদ্ধের ময়দানে এঁদের অনেকেই বাহিনীর সম্পদ না হয়ে বোঝায় পরিণত হন, অনেকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গিয়ে অন্যদের মনোবল ধ্বংস করে দেন। সুতরাং মার্চের পরপরই মুক্তিবাহিনী যে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে প্রথাগত যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, অচিরেই সেটা ভুল বলে প্রমানিত হয়। এমতাবস্থায় মুক্তিবাহিনীর পক্ষে হিট এন্ড রান পদ্ধতি অবলম্বন করা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। আবার বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার এবং সৈন্যরা গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষিত ছিলেন না। ফলে গেরিলা যুদ্ধের কৌশলে অভ্যস্থ হতে তাঁদের বেগ পেতে হয়েছে। তবে এ সকল সীমাবদ্ধতা তাঁরা অতিক্রম করেছেন দেশপ্রেমের অটল মনোবল দিয়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাঁরা পরবর্তীতে স্মৃতিকথা লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে খুব কম জনই যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর ভূমিকা এবং অবদান যথাযথভাবে তুলে ধরেছেন, শাহজামান মজুমদার এ দিক থেকেও ব্যতিক্রম। তিনি লিখেছেন- প্রথম দিকে বিএসএফ বাহিনীই শুধু মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য সহযোগিতা করতো, ভূ-রাজনৈতিক কারনেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর এতে সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না। সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমিতভাবে আমাদের যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন শুরু করে, তা ছিল মূলত মুক্তিবাহিনীর পক্ষে পরোক্ষ আর্টিলারি সাপোর্ট। নভেম্বর থেকে তাঁদের বাংলাদেশ সীমান্তের দশ মেইল অভ্যন্তর পর্যন্ত অভিযানের অনুমতি দেয়া হয়। এটা ছিল ডিসেম্বরে সার্বিক যুদ্ধের প্রস্তুতি। ডিসেম্বরে যখন ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে, মুক্তিবাহিনী তখন যৌথ বাহিনীর দ্বিতীয় স্তরের বাহিনী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। উদাহরন হিসেবে আখাউরা এবং আশুগঞ্জের যুদ্ধের কথা তিনি উল্লেখ করে বলেছেন- আক্রমনের ক্ষেত্রে ভারতীয় বাহিনীই মূল ভূমিকা পালন করেছে, মুক্তিবাহিনীর ভূমিকা ছিল যুদ্ধকালীন সময়ে পাক বাহিনীকে একটি স্থানে আবদ্ধ করে রাখা। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর সম্পৃক্ততা ছাড়া এ বিজয় সম্ভবও ছিল না বলে তাঁর অভিমত, কারন মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে পাকিস্তানীদের মধ্যে সার্বিকভাবে এমন ভীতিকর একটা ধারনা বিরাজ করছিল যে মুক্তিবাহিনীর হাতে পড়ে নাকাল হওয়ার চেয়ে প্রথম সুযোগেই ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণই তাদের কাছে শ্রেয় মনে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জন্য যুদ্ধ করে এবং জীবন দিয়ে, তাঁদের সরকার আমাদের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় এবং খাদ্য প্রদান করে, এমনকি তাঁদের জনগণ তাঁদের সীমিত সামর্থ্যের সবটুকু উজার করে দিয়ে বাংলাদেশর জন্য যা করেছে, যে ভাবে করেছে, তার জন্য তিনি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

ডিসেম্বরের ২৪ তারিখে তাঁর অধিনায়ক মেজর মতিনের সাথে একটি জীপে চড়ে ঢাকায় কোথাও যাচ্ছিলেন, পথে কাকরাইলের কাছে ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যালে তাঁদের জীপ থেমে আছে। সে সময় অন্য একটি গাড়ী থেকে পরিচিত একজন তাঁর নাম ধরে চেঁচিয়ে ওঠেন, বলেন- তুমি কি জান যে তোমার দুলাভাই এখন পাকিস্তানে? তিনি কিছু বলার আগেই ভদ্রলোক আবার বললেন- তুমি কি দিনাজপুরে তোমার মা আর ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু জান? পাকিস্তানী মিলিটারীরা তাঁদের হত্যা করেছে! তিনি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন লোকটির দিকে, নির্বাক কিছুটা সময় কেটে যাবার পর সিগন্যাল থেকে ছাড়া পেয়ে গাড়িগুলো আবার চলতে শুরু করলো। গভীর শোক ও হতাশায় তিনি হতবুদ্ধি হয়ে বসে রইলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে সহযোদ্ধাদের মৃত্যুতে তিনি শিশুর মত কেঁদেছেন, কিন্তু এখন তাঁর চোখ থেকে একবিন্দু অশ্রুও বের হতে পারলো না। মা ও প্রিয় ভাইয়ের জন্য অপরিসীম বেদনা তাঁর বুকের মাঝে তীব্র অভিঘাত হেনে চললো, কিন্তু মুখে তিনি কিছুই বলতে পারলেন না। জানুয়ারির ২২ তারিখে তাঁদের ব্যাটেলিয়নকে খুলনায় যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগে যুদ্ধের মধ্যেই ৮ই ডিসেম্বর তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে ১১ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের নিয়মিত সৈন্য হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়, তিনি সিপাহী শাহজামান মজুমদার হিসেবে তিনি এই বাহিনীতে নিবন্ধন লাভ করেন। খুলনায় তাঁর ইউনিটের সাথে তিনি ৬ এপ্রিল(১৯৭২) পর্যন্ত ছিলেন, এরপর ডিসচার্জ নিয়ে অশ্রুসজল চোখে সবার কাছ থেকে বিদায় নেন। এপ্রিলের ১১ তারিখে তিনি দিনাজপুরে তাঁদের শূন্য গৃহে গিয়ে পৌঁছেন। পরদিন অনেককে তাঁর মা এবং ভাইয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন তাঁদের বাড়ীর সামনে কাঁঠাল গাছের পাশের ডোবায় তাঁদের লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এর পরদিন, তাঁদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পরে, কয়েকজনের সহায়তায় তিনি মাটি খুঁড়ে তাঁদের দেহাবশেষ উদ্ধার করতে সচেষ্ট হলেন। এতদিনে কিছু অস্থিগুচ্ছই শুধু অবশিষ্ট ছিল, সেগুলোর আকার দেখে তিনি তাঁদের পরিচয় অনুধাবন চেষ্টা করলেন এবং দুটি কাফনের কাপড়ে তাঁদের আবৃত করলেন। অতঃপর একজন মৌলভি ডেকে তিনি এবং স্বল্প সংখ্যক আরও কয়েকজন মিলে মা এবং ভাইয়ের আনুষ্ঠানিক সৎকার সম্পন্ন করে সেই কাঁঠাল গাছের নীচে তাঁদের চিরনিদ্রায় শায়িত করলেন। এমন নয় যে শাহজামান মজুমদারের মুক্তিবাহিনীতে যোগদানের অপরাধে তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল, বর্বর পাকিস্তানী মিলিটারী সারা বাংলাদেশে যে অসংখ্য হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল, এটাও ছিল তেমনি একটি হত্যার জন্য হত্যাকান্ড। তাঁর প্রবীণা বিধবা মাতা এবং সহজ সরল ও অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ভাইটি কোন দিক থেকেই পাকিস্তানী বাহিনীর জন্য বিপদের কারন ছিলেন না, আরও লক্ষ লক্ষ মানুষের মত তাঁদেরও একটাই অপরাধ ছিল, তাঁরা বাঙ্গালী ছিলেন।

শাহজামান মজুমদার বীরপ্রতীক, বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে, আপনাদের অবিস্মরণীয় অবদান আমরা চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করব।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পাদটীকাঃ ১৯৭১ সালে আমি বেশ ছোট, তবু সমসাময়িক বাস্তবতায় স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র প্রায় নিয়মিত শোনা হত। সে সময় তেলিয়াপাড়া যুদ্ধক্ষেত্রের বিজয়গাঁথা এত বেশীবার শুনেছি যে তেলিয়াপাড়া নামটা এখনও গেঁথে আছে মনে। এতদিন পর সেই রণাঙ্গনের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকথা নিয়ে কিছু লিখতে পেরে নিজেকে আমি ধন্য মনে করছি!


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পড়তে হবে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

অবশ্যই

হাসিব এর ছবি

এরকম পরিশ্রমী লেখা আরও আসুক। এবং প্রমাদ দেখলাম কিছু। নেক্সট টাইম ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ! আমি অভ্র স্পেল চেকার সহ লিখি, এতে একটি শব্দের কয়েক রকম ভার্সন স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলে এসে এবং এর একটা ভেজাল তৈরি করে। কয়েকটা ঠিক করলাম, আরও যদি থেকে থাকে, আমার মেইলবক্সে একটা নোট পাঠালে কৃতজ্ঞ থাকব।

অতিথি লেখক এর ছবি

বইটা মনে হচ্ছে সংগ্রহে রাখার মত একটা বই। আব্দুল্লাহ ভাইয়ের কাছে ঋনী হয়ে থাকলাম পড়ার আগেই বইটার ভেতরে একটা উকি দেবার সুযোগ করে দেবার জন্য।

সোহেল ইমাম

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ধন্যবাদ!

সত্যপীর এর ছবি

শাহজামান মজুমদার বীরপ্রতীক, বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে, আপনাদের অবিস্মরণীয় অবদান আমরা চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করব।

একশোবার।

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

জী, অবশ্যই!

অতিথি লেখক এর ছবি

গত বছর জুন মাসে অফিসের কাজে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছিলাম। কলিগের সাথে বাইকে করে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে যাব ঠিক করলাম। পথে হঠাত করেই তেলিয়াপাড়া দিকনির্দেশনা সম্বলিত একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়ল। কিছুটা আগ্রহী হয়েই ঘুরতে যাই এবং ছবিতে বর্ণিত স্মৃতিসৌধ আবিষ্কার করি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই তেলিয়াপাড়া সম্বন্ধে কিছুই জানতাম না। ঢাকায় ফিরে ইন্টারনেট ঘেঁটে তেলিয়াপাড়ার বিষয়ে জানতে পারি এবং ভীষণ লজ্জা অনুভব করি। নিজেদের গৌরবের ইতিহাস না জানার চেয়ে লজ্জার কিছুই নেই। ছবি তোলা আছে। আশা করছি দ্রুতই তেলিয়াপাড়া নিয়ে একটা লেখা দিতে পারব। আপনার লেখা পড়ে বইটা পড়তে ইচ্ছে করছে। কোথায় পাওয়া যাবে যদি বলতে পারেন খুব ভাল হত।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

এক লহমা এর ছবি

খুব ভালো আর দরকারী লেখা।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ধন্যবাদ!

মাসুদ সজীব এর ছবি

এমন অজনা, অ-জনপ্রিয় অথচ অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প উঠে আসুক সর্বদা। নতুন প্রজন্ম জানুক, বুঝতে শিখুক কতটা আত্নত্যাগ, কত রক্তের বিনিময়ে তারা একটি মানচিত্র পেয়েছে, নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছে। লেখায় পাঁচতারা চলুক

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ডা. মো. রুমী আলম  এর ছবি

অসাধারণ লেখা। বইটি কিভাবে এবং কোথায় পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে একটু ধারণা দিলে কৃতজ্ঞ থাকতাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।